স্নিগ্ধ_অনুভব #পার্ট:১৯

0
350

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:১৯
#পিচ্চি_লেখিকা

সবাই মিলে হাঁসতে হাঁসতে রুমে ঢুকতেই দেখি তিশা আপু নিরবে কাঁদছে আর অনুভব তার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। একটা স্বস্থির শ্বাস নিয়ে আপুর কাছে এগোলাম। তন্নি, তামিম, মেঘলা সবাই এসে রুমে থাকা সোফার উপর বসলো। আর তুষার ভাইয়া অনুভবের ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়ে ছলছল দৃষ্টি নিয়ে বিছানায় বসলো। আমি তিশা আপুর দিকে এগিয়ে ওর মাথায় হাত রাখতেই জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। আমি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,,
“কান্না কেন করছো আপু? দেখো অনুভব তোমার সামনে আছে।”
তিশা আপু কান্নার জন্য কথায় বলতে পারছে না। কোনো রকম ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,,,
“কেন এভাবে সব এলোমেলো হয়ে গেলে বলবি স্নিগ্ধু? আমি তো চায়নি এমন ভাইয়াকে! জানিস ছোট থেকেই ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি আমি। ভাইয়া তো সব সময়ই আমাকে আগলে রেখেছে। কখনো কোনো ইছা অপূর্ণ রাখেনি,কখনো একটা ধমক দিয়েও কথা বলেনি। আর আজ আমার সেই ভাইয়ার এ কি অবস্থা?”
“আপু শান্ত হও। অনুভব সুস্থ হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।”
তিশা আপুকে অনেক কষ্টে শান্ত করে বসিয়েছি। কান্নার আওয়াজে অনুভবের ঘুম ভেঙে গেছে। পিটপিট করে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
“ও এভাবে কাঁদছে কেন?”
তিশা আপু এবার অনুভবকে শক্ত করে আরো জোড়ে কেঁদে উঠলো। ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,,
“এই ভাইয়া ভাইয়া রে,,তোর কি মনে পড়ে না আমাকে? তোর এই ছোট বোনের সব ইচ্ছা তুই পূরণ করেছিস একটা লাস্ট ইচ্ছা পূরণ কর না রে! তুই একবার সুস্থ হয়ে যা প্লিজ। আমি আর কখনো তোকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবো না। কখনো কিছু চাইবো না।”
তিশা আপুর কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। তবুও নিজের ভাইকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। রুমের সবার মাঝেই পিনপতন নিরবতা। সোফায় বসে ৩ টা ব্যাক্তি কাঁদছে মাথা নিচু করে। এদিকে তুষার ভাইয়াও মাথা নিচু করে আছে। তুষার ভাইয়া যথেষ্ট শক্ত তবুও এই পরিস্থিতিতে যে কাঁদছে তা ঢের বুঝতে পারছি। পৃথিবীর সব থেকে মধুর সম্পর্কই হয় নাকি ভাই বোনের। ভাই বোনের ঝগড়া খুনসুটিময় দিনগুলো যত আনন্দের তেমনই কারো কোনো বিপদ হলে সব থেকে বেশি কষ্ট পায় এই ভাই বোনই। তাই তো আজ ৩ ভাই বোনই কাঁদছে। অনুভব কি বুঝেছে জানি না। তবুও তিশার কান্না দেখে সে নিজেও কাঁদছে। চোখের কুর্নিশ বেয়ে পড়া পানি গুলো মুছে তিশা আপুকে টেনে সোজা করে বসিয়ে কোনো রকম শান্ত করালাম। কিন্তু তুষার ভাইয়া আর বসে থাকলো না। উঠে বারান্দার চলে গেছে। ওর পিছে তন্নিও গেছে।
“আপু এভাবে কান্না করলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে বলো? আমাদের শক্ত থাকতে হবে। নয়তো অনুভবের সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের কিভাবে শাস্তি দিবো বলো? আর তাছাড়া তোমরা এভাবে ভেঙে পড়লে আমিও দুর্বল হয়ে পড়বো অনুভবও তোমাদের কান্নায় মন খারাপ করে থাকবে। ডক্টর বলেছে ওকে সব সময় খুশি রাখতে হবে। প্রোপার কেয়ার করতে হবে। তুমি তোমার ভাইকে সুস্থ করতে সাহায্য করবে না??”
তিশা আপু মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে সাহায্য করবে। তিশা আপু শান্ত হয়ে বসে আছে। অনুভব এখনো নাক টেনে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে। ওর এমন কান্না দেখে যেমন হাঁসি পাচ্ছে তেমনই অবাক লাগছে। আমি অনুভবের কাছে গিয়ে বসে বললাম,,
“এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন কেন?”
অনুভব নাক টেনে টেনে বললো,,
“আপুটা কান্না করছে যে তাই। আমার আবার কারো কান্না দেখলে কান্না পায়।”
বলেই আবার কান্নায় মনোযোগ দিলো। অনুভবের কথা শুনে আমার প্রচুর হাঁসি পাচ্ছে। মেঘু, তিশা আপু, তামিম ৩ জনই একাবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে তো অনুভবের দিকে তাকাচ্ছে। ফট করেই ৪ জন এক সাথে হেঁসে উঠলাম। তিশা আপু চোখে পানি রেখেও হাঁসছে। তার ভাই যে এমন বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছে সে যেন মানতেই পারছে না। আমাদের হাঁসি দেখে অনুভব এবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে শব্দ করে কান্না করে দিলো। এবার আমি ধমক দিয়ে বললাম,,
“ওই চুপ। কান্না করছেন কেন হুদাই?”
“এ্যাাাাাা আপনি আমাকে বকলেন? আমি থাকবো না আপনার কাছে!”
“লে এবার বলে থাকবো না। এই আপু এইটা তো ওই বাড়িতেই ভালো ছিলো। সারাদিন সিফাতের সাথে খেলতোআর হাসাহাসি করতো। এখানে এসে মেয়েদের মতো কাঁদুনি হয়ে গেছে।”
“ওই একদম আমার ভাইকে কাঁদুনি বলবি না। আর ওই বাড়ি মানে?”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,,
“দাঁড়াও বলছি।”
এটুকু বলেই দরজা লক করার জন্য এগিয়ে গেলাম। ওদেরও সবটা জানা জরুরি। ওরাও আমাকে সাহায্য করবে জানি। দরজা লক করে আসতে গিয়ে চোখ যায় বারান্দার দিকে। তুষার ভাইয়া তন্নিকে জাপটে ধরে কাঁদছে। অপর পাশে তন্নিও কাঁদছে। ওদের এমন দৃশ্য দেখে আপনা আপনি মুখের কোণে হাঁসি ফুটে উঠলো। বেচারি তন্নি এবার হয়তো তুষার ভাইয়ার ভালোবাসা পাবে। আমি তিশা আপুদের কাছে এগিয়ে গিয়ে আরাম করে বসে সবটা বলতে লাগলাম।

সব শুনে সবাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তন্নি আর তুষার ভাইয়াও এসে বসেছে সবার সাথে। তন্নির সাথে আমার আগেও দেখা বা কথা হয়েছে শুনে সবাই ক্ষিপ্ত চোখে তন্নির দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে এখনি চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে। তন্নি সবাইকে এমন ভাবে৷ তাকাতে দেখে বললো,
“কি? সবাই এভাবে দেখছো কেন? তোমরা তোমাদের সাধের স্নিগ্ধুরে জিগাও সে কেন আমারে কিছু বলতে নিষেধ করছে!”
“তোরে তো….
মেঘলা কে থামিয়ে তিশা আপু বললো,,
” ওই থামো তোমরা। সারাদিন ঝগড়া না করে কি কেউই শান্তি পাও না হুম? তোমরা পরে ঝগড়া করো। তার আগে স্নিগ্ধু তুই বল তোর এক্সিডেন্ট কি করে হলো?”
“রাস্তায় আনমনে হাঁটছিলাম তখন কেউ পাশ থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার মাঝে ফেলেছিলো যার ফলে এক্সিডেন্ট হয়।”
“ধাক্কা কে দিয়েছে? দেখেছিস?”
আমি বাঁকা হেঁসে বললাম,,
“সময় আসুক জানতে পারবে। তার আগে আমাদের অনুভবকে সুস্থ করতে হবে। ওকে হাসি খুশি রাখতে হবে। আর অবশ্যই অনেকের থেকে দুরে রাখতে হবে। এখন কেউ ওকে অ্যাটাক করলেও ও তার থেকে বাঁচতে পারবে না। কিন্তু সুস্থ হয়ে গেলে ও নিজেই সব হ্যান্ডেল করতে পারবে আর ডক্টর বলেছে ওর সেই বাজে স্মৃতি গুলো ভুলাতে হবে নয়তো ও সুস্থ হতে পারবে না।”
“হুম সব তো বুঝলাম বাট কে আছে এসবের পিছে?” (তুষার ভাইয়া)
“হুম আমিও সেটাই বুঝতেছি না কে ভাইয়ার শত্রু?” (তিশা আপু)
“আচ্ছা স্নিগ্ধু যে ক্যামেরা গুলো দিয়েছিলি তা থেকে কিছু পেয়েছিস?” (তন্নি)
রহস্যময় হাঁসি দিয়ে বললাম,,
“পেয়েছি তো অনেক কিছু।”
“কি পেয়েছিস দেখা!” (তিশা আপু)
“দাঁড়াও”
এটুকু বলেই ব্যাগ থেকে একটা পেনড্রাইভ আর ল্যাপটপ বের করে রাখলাম। পেনড্রাইভ দিয়ে ল্যাপটপ অন করতেই একটা ভিডিও চালু হলো। ভিডিওটা দেখে সবাই যেমন অবাক হয়েছে তেমনই তিশা আপু আর তুষার ভাইয়া রাগে ফুঁসছে।
“ওদের এতো সাহস? এত নোংরা মন মানসিকতা কি করে হয় কারো? ছিঃ” (তিশা আপু)
“ওদের তো আমি আজই” (তুষার ভাইয়া)
তুষার ভাইয়া উঠে চলে যেতে নিলে আমি আটকে দিলাম।
“ভাইয়া শান্ত হও। যা করার মাথা ঠান্ডা করে করতে হবে। আর এখনই কিছু করতে গেলে অপরাধী পালাবে। আমি তো চায় সে একটু ভুল করুক৷ যাাতে তাকে ধরা সহজ হয়ে যায়। তোমরা এমন করলে কিছু হবে না ভাইয়া।”
“হুম স্নিগ্ধু একদম ঠিক বলেছে। ভাইয়া তুমি বসো।” (তিশা আপু)
তুষার ভাইয়া রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করেই বসে পড়লো। তিশা আপু বললো,,
“রাগের মাথায় কিছু করলে আমরাই হেরে যাবো ভাইয়া। যে যা করছে করতে দাও। তারা শেয়ানা হলে আমরাও ডাবল শেয়ানাহয়ে দেখাবো। এবার স্নিগ্ধু বল তোর কি প্ল্যান?”
” হুম,,মেঘু তোরও হেল্প লাগবে,,তোদের সবার হেল্প লাগবে!”
“বলই না কি হেল্প?”
“মেঘু তুই তোর বাড়িতে নজর রাখবি। কে কি করছে? কখন কোথায় যাচ্ছে? এসব জানার চেষ্টা করবি। আর তুষার ভাইয়া তোমাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি তুমি ডিটেইলস আনতে পারবে কোনোভাবে?”
“হ্যাঁ পারবো।”
“ঠিক আছে। তিশা আপু আমি যেদিন যেদিন অনুভবকে নিয়ে বাহিরে যাবো সেদিন সেদিন তুমি আর তুষার ভাইয়া মিলে বাড়িতে সবাইকে ব্যস্ত রাখবে। তামিম আর তন্নি আমার সাথে যাবে।”
“ওকে ডান।”
“আর হ্যাঁ প্লিজ সবাই স্বাভাবিক থাকবে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। এমন ভাব নিবো আমরা যেন অনুভবের এই অবস্থাকে আমরা একান্তই একটা এক্সিডেন্ট মনে করছি। আর অবশ্যই আমাদের হাঁসি, মজা, আনন্দ করতে হবে। অনুভবও কিছুটা স্বাভাবিক হবে আর কেউ সন্দেহও করবে না।”
“আরে বাহ,,স্নিগ্ধু তোরে তো গোয়েন্দা বা এক্টিং এ দেওয়া ছিলো। তোর যা বুদ্ধি বাবাগো।”
“চুপ তামিম্ম্যা,,নিজের কাম কর হালা।”
“তোরা কি সারাদিন ঝগড়া ছাড়া কিছু পারিস না?”
“থাম তো তোরা। স্নিগ্ধু কার নাম্বার বললি না?”
বাঁকা হেঁসে বললাম,,
“আরে ভাইয়া কাল সকালে দেখবে সে আমাদের বাড়িতে হাজির। কিছুটা বুঝে নিও তোমরা। আর হ্যাঁ সবার দিকে খেয়াল রাখবে। কাউকে চোখের আড়াল করবে না। অনুভবকে নিজেদের থেকে আলাদা করা যাবে না।”
“হুম। আজ রাতে কি তুই একা থাকবি? না মানে রিস্ক নেওয়াটা কি ভালো হবে?”
“ভাবছি সেটাই।”
“আমি তোদের সাথে থাকলে কি খুব সমস্যা?”
“আরে না। ভালোই হবে। রাতে কিছু হলে আমি একা সামলাতে পারবো না। তুমি থাকলে তাও একটু নিশ্চিন্ত থাকবো।”
“স্নিগ্ধু কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?”
“হুম বলেন।”
“না মানে তোরা দুজনই তো মেয়ে তোরা রিস্ক নিতে পারবি না। তোরা না হয় তিশার রুমে ঘুমা আমি অনুভবের সাথে ঘুমাবো।”
“কিন্তু ভাইয়া অনুভব যদি…..
আমাকে থামিয়ে মেঘলা বলে,,
” আচ্ছা আজ সারারাত আমরা সবাই এক সাথে থাকলে কেমন হয়?? সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতেই সময় কেটে যাবে। কি বলো?”
“তা ঠিক আছে বাট ফাহিম ভাইয়া তোকে থাকতে দেবে??”
“কেন দেবে না! দাঁড়া আমি ওকে ফোন দিয়ে বলে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা যা।”

মেঘলা কথা বলার জন্য চলে গেলো। আর আমরা সবাই আড্ডায় মেতে উঠলাম। এত কিছুর মাঝেও হাঁসি মজা করা উচিত। তবে একটু হলেও মনটা শান্ত হয় নয়তো দেখা যাবে অতিরক্ত চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়বো। আর তাছাড়াও এখন আমাদের সবার সামনে হাঁসি খুশি থাকতে হবে………

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️ দেরীতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত,,অসুস্থ তাই লিখতে পারিনি। অনেকেই কাল অপেক্ষা করেছেন তাদেরকে কিছু বলতে পারিনি দুঃখিত)
হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here