#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:২১
#পিচ্চি_লেখিকা
আপনজন সেজেও অনেকে থাকে যারা আপনজন নয়। যারা পাশে আছি বলেও পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। নাম মাত্রই আপন তারা। আসলে তো মুখোশ পড়া শত্রু তারা।
অনুভবকে ছোট একটা নাইফ দিয়ে আঘাত করতে গেলেই অনুভব তা ধরে ফেলে। তখনই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ি আমরা। তুষার ভাইয়া, তন্নি, তিশা আপু, আমি সবাই রুমে ঢুকলাম। আমাদের দেখে মামুনি আর কাকির চোখ কপালে উঠে গেছে। অনুভব ঝটকা মেড়ে নাইফ নিয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকাতেই কাকি আর মামুনি ভয়ে ২ পা পিছিয়ে যায়। অনুভব শুধু রাগে ফোস ফোস করছে। তুষার ভাইয়া আর তিশা আপুও নিজেদের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি বাঁকা হেঁসে মামুনি আর কাকির পাশে গিয়ে বললাম,,
“এমা তোমরা বুঝি অনুভবকে মারতে এসেছিলে? আহারে পারলে না।”
“ত..তুই এসব কি বলছিস?” (মামুনি)
“থাক থাক তুতলিয়ে লাভ নাই মিসেস আতিয়া আফরা(মামুনি)। আপনাদের সব রহস্য আমরা জানি।”
আমার কথা শুনে কাকি একটা ঢোক গিলে তেজ নিয়ে আঙুল তুলে বলতে আসলো,,
“ক.কি জানিস তুই? একদম বড় বড় কথা বলবি না।”
আমি কাকির আঙুল ধরে মুচড়ে বললাম,,
“একদম আঙুল তুলে কথা বলবে না। অপরাধ করেও এত বড় বড় কথা কিভাবে বলো? সাহস কত তোমাদের? চলো নিচে চলো। আজ হিসেব মিটাবো।”
মামুনি আর কাকি কে নিয়ে লিভিং রুমে আসলাম৷ তুষার ভাইয়া বাবাই আর কাকা কে নিয়ে আসলো। সবাই সোফা তে বসে আছে। অনুভব হাত মুঠো করে মাথা নিচু করে সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। তুষার ভাইয়া এক কোণায় দেওয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়েছে। ভাইয়াও রেগে আছে। তিশা আপু কে নিয়ে তন্নি আরেক সোফায় বসে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতে দেখি অনার হাত ধরে মেঘু দাঁড়িয়ে আছে। রাহাত আর ফাহিম ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে। আমি অনাকে দেখে বললাম,,
“আরে বাহ্ চলে এসেছো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। মেঘু তোর একমাত্র জা- এর কোনো সমস্যা হয়নি তো আসার।”
মেঘু দাতে দাত চেপে বললো,,
“আরে আসতে একদম সমস্যা হয়নি। আমি আমার জা-এর সমস্যা হতেই দেয়নি। তাই না অনা?”
অনা মাথা নিচু করে আছে। মেঘু অনাকে নিয়ে গিয়ে সোজা কাকি আর মামুনির দিকে ধাক্কা মারলো৷ আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,,
“তো এখনো তোমাদের সঙ্গী বাকি আছে তাই না? আচ্ছা সে আসতে আসতে তোমরা বলো তোমরা কি কি কুকর্ম করেছো?”
“আ.আমরা কিছু করিনি। তুই মিথ্যা বলছিস!” (মামুনি)
“আরে মামুনি..উফফস তোমাদের মতো মানুষকে তো মামুনি ডাকতেও লজ্জা লাগে আরে আমি না হয় তোমার মেয়ে নয় কিন্তু মা বলে তো ডেকেছি। জন্মের পর কখনো নিজেীর মা কে পায়নি তাই তোমাকে মা ডেকেছি,এই লোকটা কে বাবা বলেছি তোমাদেরকেই নিজের পরিবার মনে করেছি আর তোমরা? ছিঃ আমার ভাবতেও লজ্জা লাগে তোমরা এতোটা নিচ।”
কেউ কোনো কথা বলছে না। সবাই চুপ। আমি অনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
“তোমাকে তো ওই বাড়িতে নিজের বোনের মতো দেখেছি। অনুভব ছোট বোনের মতো তোমার সব দায়িত্ব পালন করে গেছে। তোমাকে খাওয়ানো, পড়ানো সবটা ও নিজে দায়িত্ব নিয়ে করেছে আর তুমি? কতটা নিচ তোমরা? তুমি তো আমাকে ভাবি ডাকতে এটাও জানতে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি বোন হিসেবে তাহলে? এই তোমার হাত কাঁপলো না আমাকে রাস্তার মাঝে ধাক্কা দিতে?”
আমার কথা শুনে চট করে অনুভব, তন্নি, তুষার ভাইয়া, তিশা আপু, মেঘু, ফাহিম ভাইয়া, রাহাত সবাই তাকালো। আমি ওদের বলিনি যে সেদিন কে ধাক্কা দিয়েছিলো তাই ওরা এভাবে তাকালো। তিশা আপু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,
“তোকে সেদিন অনা ধাক্কা দিয়েছিলো? কই আমাদের তো বলিস নাই।”
“ভেবেছিলাম আজ বলবো তাই কাউকে কিছু বলিনি। সেদিন যখন আমাকে কেউ ধাক্কা দেয় তখন আমি তাকিয়েছিলাম সেখানে অনাকে দেখেই একটা ধাক্কা খেয়েছি। তখনই একটা গাড়ি এসে মেরে দেয়। ভাগ্য বশত বেঁচে যায়। ভেবেছিলাম আগে অনুভবের সাথে দেখা করে সবটা বলবো তাই চুপ ছিলাম। পরে তো জানলাম ওর কি অবস্থা।”
“কাকি, মামুনি তোমরা কি এখনো চুপ করে থাকবে? কেন করেছো এসব বলো? অন্তত নিজেদের মাঝে একটু তো অপরাধবোধ আনো।”
একটু চেঁচিয়েই বললাম। আমার চেঁচানোতে মামুনি ক্রোধে জোড়ে বলে উঠলো,,
“যা করেছি বেশ করেছি। কিসের অপরাধ হ্যাঁ?”
“আরে বাহ। যাক গলা খুলেছে আপনার। তো বলুন অনুভবের বাবা আর মা কে তো আপনারা ৪ জন মিলেই মারছেন তাই না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ মেরেছি্।”
অনুভব এবার তেতে উঠে এগোতে নিলে তুষার ভাইয়া আর ফাহিম ভাইয়া আটকে দেয়।
“কত বড় সাহস এদের? আমার বাবা কে মার্ডার করে এখন বড় গলায় কথা বলছে! যদি ওদের বাবা আর মা না ডাকতাম তো আজকেই পর জিভ কেটে ফেলতাম আমি।”(অনুভব)
” শান্ত হ ভাই শান্ত হ। এরা মানুষ না জানোয়ার। ওদের মেরে নিজের হাত নোংরা করে কি লাভ?”(তুষার ভাইয়া)
“আম্মু আব্বু তোমরা এসব কেন করেছো? আচ্ছা আদৌও কি আমি তোমাদের মেয়ে?” (তিশা আপু)
“এভাবে কেন বলছিস মা? তুই আমার মেয়ে। ১০ মাস ১০ দিন তোকে গর্ভে রেখেছি।” (মামুনি)
“আমার তো আফসোস এখানেই যে আমি তোমার মতো মানুষের গর্ভে জন্ম নিয়েছি। এই স্বার্থপর লোক গুলো আমার বাবা আর মা।”(তিশা আপু)
” তিশা!”(মামুনি)
“কি তিশা হ্যাঁ? কি? এই মানুষটা নিজের ভাই না তবুও কত আগলে রাখে আমাকে। আর তোমরা? ওরই বাবা মা কে মার্ডার করেছো। কেন বলো?”
মামুনি করুন চোখে তিশা আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
“তোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে এত কিছু করলাম আর তুই এই কথা বলছিস?”
“হাহাহাহা হাউ ফানি। তোমরা আমাদের ভালোর জন্য ভবিষ্যতের জন্য এত কিছু করেছো? তোমরা শুধু নিজেদের স্বার্থ বোঝো আর তা আমরা সবাই জানি। কিভাবে আর কেন মেরেছো আঙ্কেল আন্টিকে তা বলো?”
উনাদের চুপ থাকতে দেখে আমি বললাম,,
“উনারা তো চুপ হয়ে আছে। তাহলে না হয় আমিই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বলি। তো,,
অনুভবের বয়স যখন ৩ বছর তখন বাবাই,কাকাই জব করতো অনুভবদের অফিসে। কিন্তু এই জব দিয়ে উনাদের হতো না। উনারা বরাবরই ছিলো লোভী। লোভ উনাদের খুব খারাপ ভাবে আকৃষ্ট করেছিলো। উনারা আসলে ছিলো বড়লোক। বাবাই আর কাকাই নেশা করতো, একদম বাজে হয়ে গেছিলো। উনাদের এই অবস্থা দেখে দাদাভাই উনাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন+ সব প্রোপার্টি একজন ছেলের নামে করে দেয়। এটা উনাদের সহ্য হয়নি। বাসা ছেড়ে চলে আসার সময় নিজেরই বড় ভাইয়ের হাজার ক্ষতি করেছে। এখানে আসার পর যখন দেখলো এভাবে তাদের চলবে না। আরম আয়েশ লাগবে তখন প্ল্যান করলেন অনুভবের বাবা আর মা কে কিভাবে মেরে সব প্রোপার্টি নিজেদের নামে করা যায়। প্ল্যান মতো উনারা স্যারদের এক্সিডেন্ট করিয়ে দেয়। কিন্তু সেদিন অনুভব ছিলো না গাড়িতে। বাড়িতে ছিলো। একজন আয়ার কাছে। অনুভবের বাবা মা মারা যাওয়ার পর বাবাইরা যায় লয়ারের কাছে যান এবং জানতে পারেন সব প্রোপার্টি আঙ্কেল অনুভবের নামে করে দিয়েছিলেন। ব্যাস এবার উনারা বাড়িতে আসেন। অনুভবকে রেখে আয়াকে বের করে দেয়। যত্ন সহকারে অনুভবকে বড় করে। কিন্তু বড় করার পর সব প্রোপার্টি কিভাবে নিবে অনুভবের থেকে? তাই উনারা ওকে মারার প্ল্যান করে্ আমি থাকলে তো আর পারবে না কিছু করতে তাই আগে আমাকে সরিয়ে দিয়েছে। তারপর অনুভবকে পাগল করার জন্য ওই হসপিটালে রেখে আসে। পুরোপুরি পাগল হলে সাইন করিয়ে বা টিপ ছাফ দিয়ে নিতো। ঠিক বলেছি তো মামুনি? ভুল থাকলে ধরিয়ে দাও!”
“তুই এসব কিভাবে জানলি? ”
আমি রহস্যময় হাসি দিয়ে বাবাই আর কাকার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,,
“তোমাদের দাদাভাই বের করে দিছিলো মানে ওই বাড়ির কাহিনি আমি আমার বোনের থেকে জেনেছি। আচ্ছা বাবাই কাকা আমি তো তোমাদের নিজের ভাইয়ের মেয়ে তাই না? তাহলে আমার সাথে তোমরা এমন করতে পারলে? মায়া লাগলো না তোমাদের? হয়তো লেগেছিলো। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন জানতাম আমার জন্মের সময় আমার মা মারা গেছে আর যার কাছে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত থেকেছি তাকে আমার বাবা জানতাম আসলে এসব ছিলো তোমাদের conspiracy..আমি তো তোমাদের রক্ত নিয়ে জন্মেছি হাজার হলেও তোমার ভাইয়ের মেয়ে তাই জন্মের পর মার্ডার করার জন্য নিয়ে আসলেও সেদিন মারতে পারো নি। মায়া হয়েছিলো। তাই অন্য একটা লোককে দিয়ে আমাকে মানুষ করিয়েছো কিন্তু সেই লোকটাও মারা যায় এক্সিডেন্টে। তাই তোমরা আমাকে নিয়ে আসলে। এবার আমাকে আর অনুভবকে এক সাথে মারতে চেয়েছিলে। কতটা স্বার্থপর আর নিচ মনের তোমরা! আরে একটা কুকুর কে যদি নিজেদের কাছে কয়েকদিন রাখা হয় তাহলেই তার প্রতি আমাদের মায়া পড়ে যায় আর আমরা? আমরা তো মানুষ আমাকে তোমরা ১২ বছর ধরে বড় করছো অনুভবকে তো ছোট থেকে লালন পালন করছো তাও তোমাদের মনে আমাদের জন্য মায়া জন্মায় নি। কতটা লোভ তোমাদের ঘিরে রেখেছে ছিঃ। অনুভব তো তিশা আপু, তুষার ভাইয়া, তুবা ৩ জনকেই নিজের ভাই বোনের মতো দেখেছে ওদের ভাগ ওদের ঠিকই দিয়ে দিতো। একটা বার বলে তো দেখতে!”
“ছেড়ে দে স্নিগ্ধু!কাকে কি বলছুস? ওরা মানুষ যে ওদের কানে এসব কথা যাবে?” (তুষার ভাইয়া)
“তুষার!” (কাকা)
“কি তুষার? আজকে তোমাদের জন্য আমরা ওদের কাছে ছোট হয়ে গেছি। অনুভব হয়তো আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ না তবুও ওকে ভাই বলেই ভালোবেসেছি আজও তাই বাসি। কিন্তু তোমাদের জন্য ওর কাছে মুখ দেখাতেও আমাদের লজ্জা করে। ভাগ্যিস আজ তুবা নেই। নয়তো বেচারি এত বড় শকড সহ্যই করতে পারতো না।”
তুষার ভাইয়ার কথা শুনে কাকা চুপ হয়ে যায়। বাবাই এই পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। কেন বলেনি? জানি না! সবাই এত কিছু শুনে শকড হয়ে গেছে। অনুভব মাথা নিচু করে আছে। হয়তো কান্না লুকাচ্ছে। যাদের নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতো তারাই তো ঠকালো। শত্রুর দেওয়া কষ্ট সাদরে গ্রহণ করা যায় কিন্তু আপনজন সেজে থাকা মানুষগুলোর দেওয়া কষ্ট মেনে নেওয়া বড্ড কঠিন। এরা তো আমার কাকাই কাকিয়া তবুও আমাকে নিয়ে নোংরা খেলা খেলেছে আর অনুভবকে কত বড় শাস্তি দিয়েছে। সবার মাঝেই বিরাজ করছে পিনপতন নিরবতা। এমন সময় তামিম মিরা কে নিয়ে বাড়ির ভেতর আসলো। মিরাকে দেখেই অনা চমকে উঠলো। মেঘা মিরাকে নিয়ে অনার পাশে বসিয়ে দিলো। এবার অনা আর মিরার পালা।
“ওয়েল ওদের তো কর্মকান্ড ধরাছোয়ার বাহিরে। এবার তোমরা বলো তোমাদের এতো কিসের রাগ? যে অনুভব তোমার জন্য এতকিছু করেছে তার প্রতি এতো অকৃতজ্ঞ কেন তোমরা?”
“কি করেছে উনি আমাদের জন্য? উনার জন্য শুধুমাত্র উনার জন্য আমার মা আর বোন মারা গেছে। খুনি উনি। উনার কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার। আমার তো সেদিনই ইচ্ছা করছিলো ওকে খুন করে দিতে শুধুমাত্র এই এদের জন্য ওকে মারতে পারিনি তাই জন্যই এত কিছু হচ্ছে। সব তো সবাই জেনেই গেছে কিন্তু আমি ওকে মেরেই মরবো।”
অনা এটুকু বলেই সোফা ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে অনুভবের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে…………
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️অনেক কিছু হয়তো সাজিয়ে লিখতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত)
হ্যাপি রিডিং