স্নিগ্ধ_অনুভব #পার্ট:৫

0
569

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#পার্ট:৫
#পিচ্চি_লেখিকা

অনুভব ভাইয়া হুট করেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। উনার এই কাজে তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। থ মেরে চুপটি করে উনার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছি।
“স্নিগ্ধবতীর মুখে হাসিটাই ভালো মানায় কান্না নয়। স্নিগ্ধবতীর হাসিতে বারং বার মরতে রাজি কিন্তু তার চোখের পানি মোটেও সহ্য হয় না।”
উনার কাজে তো এমনিই আমি থ মেরে গেছি তার উপর এসব কথার কোনোটাই মাথাতে নিতে পারলাম না। কে স্নিগ্ধবতী? কার চোখের পানি তার সহ্য হয় না? কার হাসিতে উনি বারং বার মরতেও রাজি? আমার? না! উনি আমাকে সহ্যই করতে পারে না উনি কি না আমাকে তার স্নিগ্ধবতী ভাববে? এটা ভাবাও হয়তো আমার জন্য বোকামি। আমি মুখটা উনার বুকের মাঝে নিয়ে চুপটি করে তার ঘ্রাণ নিচ্ছি।

কয়েক মিনিট যেতেই অনুভব ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। ধাক্কা মারার জন্য মাথায় একটু ব্যাথা পাইছি। তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছি উনার ব্যবহারে। কয়েক সেকেন্ড ভাবতে লাগলাম কি হলো এতক্ষণ আর কেনই বা কাছে টেনে আবার দুরে সরিয়ে দিলো? কয়েক সেকেন্ড লাগলো সবটা বুঝতে। নিজের প্রতিই নিজের তাচ্ছিল্যের হাসি আসতেছে। কেন করছে উনি এমন জানি না! যদি দুরে ঠেলে দেওয়ারই হয় তবে কাছে আসা কেন? আর যদি কাছে আসার হয় তবে দুরত্ব কেন? সে কি বোঝে আমার এই দুরত্ব মোটেও ভালো লাগে না আমার যে তার গভীরত্ব দরকার। তার ভালোবাসায় নিজেকে মুড়িয়ে রাখতে চায়। হয়তো সে বোঝে না।
অনুভব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো ওপাশ ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটু দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,,
“যদি দুরত্ব ধরে রাখার হয় তবে সেটা যেন দুরত্বই থাকে..একবার কাছে টেনে আবার দুরত্ব দেওয়া মোটেও সহ্য হয় না। পোড়ায় খুব!”
এটুকু বলেই আর দাঁড়ায় নি। সোজা ছাদে এসে চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

কেটে গেছে আরো ২ দিন আজকেই আমরা ওই ফ্ল্যাটে শিফট করবো। মন খারাপ করে কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি এমন সময় হন্ত দন্ত করে রুমে ঢুকলো অনুভব ভাইয়া। ঢুকে সোজা ওয়াশরুম। আজব লোক!☹️ কখন কি করে কে জানে? আমি আমার মতো কাপড় গুচাচ্ছি। মনটা একদম ভালো না আজ মামুনি কে ছেড়ে যেতে হবে।
“এমন পিপড়ার মতো আস্তে আস্তে কি করিস?”
অনুভব ভাইয়ার কথা শুনে পিছনে তাকালাম। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললাম,,
“কি আর করবো? আপনার তো বড় বড় আদেশ আজকেই চলে যেতে হবে তাই সব গুছিয়ে নিচ্ছি।”
“তোর যা যা লাগবে নে! বই গুলো আমি কালকে নিয়ে গিয়ে দেবো তুই আজ দরকারী গুলো নে।”
“আচ্ছা! একটা কথা বলবো ভাইয়া?”
“বল!”
“ইয়ে মানে..বলছি যে আমরা না গেলে হয় না? কি এমন দরকার যে…
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,
” না গেলে হয় না। আর তাছাড়া ওই বাড়িতে গেলে অনেক সারপ্রাইজ পাবি তুই।”
অনুভব ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে গালে স্লাইড করতে করতে বললো,,
“অনেক হিসাব বাকি তোর সাথে বউ! তুই শুধু রেডি থাক।”
উনি আমাকে ছেড়ে সোফার ওপর লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো। উনার শান্ত গলার হুমকি খুব ভালো ভাবেই বুঝলাম। কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য কে জানে? সব কাপড় গুছিয়ে রেখে একটু ছাদে গেলাম। ছাদের এক কোণায় বসে একবার আকাশ দেখছি তো আরেকবার নিচে তাকাচ্ছি। আজকে রোদ নাই আকাশে মেঘ জমেছে খুব হয়তো বৃষ্টি আসবে!
“কি রে একা একা এখানে কি করিস?”
তিশা আপুর কন্ঠ শুনে একবার ওদের দিকে তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে নিলাম। তিশা আপু আর তুষার ভাইয়া আসছে। আমার উত্তর না পেয়ে তিশা আপু আবার বললো,,
“কি রে কথা বলছিস না কেন? মন খারাপ? নাকি শরীর খারাপ?”
তখনো কোনে উত্তর না দিয়ে বসে আছি। তুষার ভাইয়া বললো,,
“এই তিশু এই স্নিগ্ধুরে কি বোবাই ধরলো নাকি?”
“ধুর ভাইয়া কি যে বলো না! এই স্নিগ্ধু কিছু তো বল! অনুভব ভাইয়া কিছু বলছে তোকে? নাকি এই বাড়ি থেকে যাবি বলে মন খারাপ কোনটা?”
“আমি যাবো না আপু🥺..”
“তাহলে অনুভব ভাইয়াকে গিয়ে বল!”
“তোমার এ….দাড়াও আগে দেখো আশে পাশে কেউ নেই তো নাকি?”
“কেন বল তো?”
“ধুর আগে দেখোই না!”
“কেউ নেই এবার বল..”
“তোমার ওই এলিয়েন ভাই আমাকে জোড় করে নিয়ে যাচ্ছে। খচ্চর একটা! অভিশাপ দিলাম তোমার ভাইয়ের কপালে শাঁকচুন্নি বউ জুটবে।”
“কি বলিস তুই? তুই ই তো ভাইয়ার বউ। তাহলে কি তুই শাঁকচুন্নি?”
“এহহহ না না..আমি তো ভুলেই গেছিলাম অনুভব ভাইয়ার সাথে বিয়ে হয়ছে আমার। আচ্ছা যাও এই অভিশাপ কেন্সেল।”
“আরে চিল তুই ঠিকই বলেছিস। ভাইয়া একটা শাঁকচুন্নি বউ পাবে..পাবে কি রে পেয়েও গেছে! তুই তো শাঁকচুন্নির চেয়ে কোনো অংশে কম না।”
এটুকু বলেই তুষার ভাইয়া আর তিশা আপু হাসতে লাগলো।
“ওই ধুর হাসি থামাও..অনুভব ভাইয়াকে বলো না যেন না যায়!”
তুষার ভাইয়া আমাকে থামিয়ে বললো,,
“এই থাম থাম! আচ্ছা তিশু অনুভব কে স্নিগ্ধু ভাইয়া বললো?”
“হুম তাই তো শুনলাম!”
“আচ্ছা স্নিগ্ধু তোদের বাচ্চা হলে অনুভব কে কি ডাকতে বলবি? মামা নাকি বাবা? আর তোকে কি ডাকতে বলবি মামি নাকি মা?
বলেই হো হো করে হেসে দিলো দুজনে। আমি থতমত খেয়ে বললাম,,
“ইয়ে মামা ডাকও শিখাবো না বাবা ডাকও শিখাবো না আঙ্কেল ডাক শিখাবো,,হুহ।
আমার কথা শুনে দুজনেই কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আবারও হাসতে শুরু করলো। আমি আর না থেকে সোজা রুমে চলে এলাম। ভালো লাগে না! এলিয়েন টা রুমেই আছে। এনাকন্ডা একটা। টিকটিকির বড় ভাই। মনে মনে হাজারটা গালি দিতে দিতে রুমে ঢুকতে যাবো তখনই হোচট খেয়ে পড়তে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। হোচট কেমনে খায়লাম আজব!
” মনে মনে আমাকে গালি না দিয়ে আল্লাহ চোখ দিছে সেগুলো কাজে লাগা।”
অনুভব ভাইয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। আমি যে বকেছি এটা উনি কিভাবে বুঝলেন?
“আমি মোটেও আপনাকে বকি নি। সব সময় অদ্ভুত কথা বলেন।”
আমার কথা গুলো একটু জোড়ে হয়ে গেছে। রাগে আছি খুব তাই বুঝতে পারিনি। আমার জোড়ে বলা কথা গুলো শুনে উনি এসে আমার গাল সজোড়ে চেপে ধরলো। আমি তো হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
“সব সময় গলা নামিয়ে কথা বলবি নয়তো…”
অনুভব ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলো। ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়লাম। এতো রুপ কেন এই লোকের? গিরগিটির মতো রুপ পাল্টায় সব সময়! এক বার আঘাত করে তো আরকবার কাছে টেনে নেয়। উনার তো ভিলেন হলে ভালো হতো হুহ।

বিকালবেলা__________

চলে যাবো একটু পরই। মামুনি কান্না করেই যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও কেউ থামাতে পারছে না। কতবার যে বললাম ২ দিন পর আবার আসবো দেখা করতে এছাড়াও মাঝে মাঝেই আসবো কিন্তু কে শোনে কার কথা? সেই কেঁদেই যাচ্ছে। যদিও আমারও অনেক কান্না পাচ্ছে কিন্তু ওই যে আমার ভিলেন নাম্বার 1 বর আছে না উনি বলে দিয়েছে,,
“তোর চোখে এক ফোটা পানি দেখলেও ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো আর নয়তো চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেবো।”
উনার এত বড় কথা শোনার পর আর সাহস হয়নি কান্না করার। অনুভব ভাইয়া এসে বললো,,
“আম্মু তুমি এখনো কান্না করতেছো? তুমি এভাবে কাঁদলে আর আসবো না আমরা এই বাড়ি!”
এই কথা শুনে মামুনি আরো জোড়ে কান্না জুড়ে দিলো। অনুভব ভাইয়া কাছে গিয়ে আদুরে গলায় বললো,,
“আম্মু আমি প্রতিদিন আসবো তোমার কাছে প্লিজ আর কেঁদো না।”
অনেক কষ্টে মামুনি কে শান্ত করে গাড়ির দিকে এগোচ্ছি আমরা। কিছুতেই যেতে ইচ্ছা করছে না। মনে হচ্ছে আমার জিবনে অনেক বড় ঝড় আসতে যাচ্ছে। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। অনুভব ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এগোতে গেলেই হাতে টান পড়লো। পিছনে তাকিয়ে দেখি তিশা আপু।
“কি গো আপু?
আপু কিছু না বলে আমাকে একটু সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বললো,,
” তোরা চলে যাচ্ছিস অনেক খারাপ লাগতেছে। কিন্তু তোকে কিছু বলার আছে!”
“হ্যা বলো!”
“দেখ আমি জানি অনুভব ভাইয়া তোকে অনেক মেরেছে এতদিনে। কিন্তু ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে স্নিগ্ধু। তোর প্রতি ভাইয়ার অনেক রাগ! কেন এত রাগ জানা নেই আমার। তবে এই রাগের কারন আর তোর প্রতি ভালোবাসা ২ টাই তোর খুজে নিতে হবে স্নিগ্ধু। আর হ্যাঁ এসব ভাইয়া টাইয়া ডাকা বাদ দে। তোর অধিকার তুই বুঝে নে। বুঝতে শিখ অনুভব ভাইয়া কে। তোর জানা অজানায় অনেক কিছু আছে তা তোরই বের করতে হবে। আর সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট যেটা সেইটা হলো অনুভব ভাইয়া তোর স্বামী তাই তোর আর অনুভব ভাইয়ার মাঝে কাউকে আসতে দিবি না হুম।”
তিশা আপুর সব কথা মাথার ৪ হাত উপর দিয়ে গেলো। সব ভাবা বাদ দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। অনুভব ভাইয়া নিজের মতো করে গাড়ি চাালাচ্ছে আর আমি আপুর বলা কথা গুলো ভাবছি। কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছি না।

ফ্ল্যাটে এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। এ বাড়িতে শুধু কয়েকজন সার্ভেন্ট আছে। এর মাঝে একটা মেয়ে আছে অনা আমার বয়সী অনেক ভালো একটা মেয়ে। এই বাড়ি দেখলেও কেউ বলবে না এটা একটা ছোট ফ্ল্যাট। অনেক বড় । অনুভব ভাইয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি অনেক ভেবে ঠিক করে নিয়েছি অনুভবের সবটা আমি জানবো বুঝবো। কেন দুরত্ব? কেন কাছে টেনে নেওয়া? কিসের এত রাগ উনার আমার প্রতি? সব জানতে চাই। নিজের ধ্যানে মগ্ন আছি। এমন সময় অনুভব ভাইয়া বলে উঠলো,,
“এখানে এমন সঙ সেজে বসে আছিস কেন? কিসের এত ভাবনা তোর?”
“যে ভাবনায় থাকুক আপনাকে কেন বলবো?”
“কেন বলবি মানে?”
“হুম কেন বলবো? কে হন আপনি?”
অনুভব ভাইয়া সাথে সাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আমার দিকে রাগী চোখ নিয়ে তাকালো। ভয় করছে অনেক তবুও আমি দমবো না।
“ওভাবে তাকানোর কি আছে? আজব!
” তোর সাহস একটু বেশি বেড়ে গেছে!”(দাতে দাত চেপে)
“সাহস বাড়ার কি আছে? সত্যি তো বলেছি! কে হন আমার? কেন আমি আপনাকে বলবো আমি কি ভাবছি? কোন অধিকারে জানতে চান? বিয়েটা তো ছেলে খেলা। যখন খুশি ভেঙে দিবেন। তাই কেউ হন ন….
আর কিছু বলতে পারিনি। উনি সাথে সাথে এক থাপ্পড় দিয়ে গলা চেঁপে ধরেছে। রাগে বেশ জোড়েই ধরেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। কোনো রকম উনার শার্টের দিকে হাত বাড়িয়ে বুকে ধাক্কা দিচ্ছি। উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে আঘাত করলো। আমার তো কাশতেই কাশতেই জান বের হয়ে যাচ্ছিলো। উনিই এক গ্লাস পানি বাড়িয়ে দিলো সাথে সাথে ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করে কয়েকটা বড় বড় শ্বাস নিয়ে বললাম,,
” যে বিয়েটা আপনি মানেনই না সেইটার জন্য মারলেন আমাকে!কেন? যাকে বউ বলেই মানেন না তার ওপর কিসের এত অধিকার আপনার?”
“চুপ একদম চুপ। আর একটা কথা বললেও তোকে আমি সত্যি সত্যি মেরে ফেলবো। ভেবেছিলাম তোকে এখানে একটু ভালো থাকার সুযোগ দিবো! না আর না। শুরু হয়ে গেছে তোর জাহান্নামের জিবন। ওয়েলকাম টু হেল!”

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ❤️❤️

হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here