স্নিগ্ধ_অনুভব #বোনাস_পার্ট #পিচ্চি_লেখিকা

0
387

#স্নিগ্ধ_অনুভব
#বোনাস_পার্ট
#পিচ্চি_লেখিকা

সারাবাড়িতে খুজেও অনুভবের খোজ পাচ্ছি না। গেলো কোথায় লোকটা তাই আমার বোধগম্য হচ্ছে না। উনি তো এখানকার কিছুই চেনে না। যদি আবর কোনো বিপদে পড়ে! উফফ উনার চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাবো। উনাকে খুঁজতে খুঁজতে লিভিং রুমে এসে দেখি আন্টি, ভাবি বসে টিভি দেখেতেছে। আমাকে হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে আন্টি বললো,,
“এত দৌড়ে আসছিস কেন? কিছু কি হয়ছে?”
“আন্টি অনুভবকে দেখেছো? ওকে কোথাও পেলাম না। রুমে, বারান্দায়, ছাদে অন্যান্য জায়গায়ও দেখেছি কোথাও নেই। উনি এখানকার কিছু চেনে না। বিপদে পড়লে কি হবে?”
“আরে নিঃশ্বাস নে মা। অনুভব বাগানে!”
আন্টির কথায় একটু অবাক হলাম। উনি একা একা বাগানে চলে গেলো। তাও আমাকে না জানিয়ে!
“আন্টি উনি একা একা গেলো কি করে? আমাকেও তো জানিয়ে যায়নি!”
“আরে আর বলিস না। সিফাত বাগানে খেলবে বলে বায়না ধরেছে। তুই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিলি তাই তোকে ডাকিনি। তুই চিন্তা করিস না আইদা, সিফাত ওদের সাথেই বাগানে খেলছে অনুভব।”
আইদা সাথে আছে শুনেই যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। সিফাতের সাথে একা থাকলে চিন্তা হতো ২ জনেই বাচ্চা। অনুভব তো বড় হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছে। শান্ত হয়ে আন্টির পাশে বসতেই আন্টি বললো,,
“অনুভবকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছিস তাই না?”
“হুম আন্টি। উনি একদম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করে। সব কিছু যেনো উনার ধারণার বাইরে। চিন্তায় আমার মাথা ঘুরায়। উনাকে কেউ স্নিগ্ধবতীর কথা বললেই বোকার মতো তার সাথেই চলে যাবে। বুঝতে পারছো কতটা ছেলেমানুষ। বাচ্চাদের যেমন কেউ চকলেট দিয়ে ডাকলেই চলে যায় উনি ঠিক তেমন।”
আন্টি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,
“এমন অবস্থা কে করলো ছেলেটার? কি নিষ্পাপ চেহারা। ওর মুখ দেখলেই তো মায়া কাজ করবে তাহলে ওর এমন অবস্থা কিভাবে করলো?”
“কে করছে? কেন করছে? সবটা খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবো। অপেক্ষা শুধু প্রমাণের। তোমাদেরও অনেক বিরক্ত করছি আর ২ টা দিন পর তোমাদেরও আর বিরক্ত করবো না।”
“এই মেয়ে তুই এখন মার খাবি। বিরক্ত কি রে? আমি তো তোদের ছেলে মেয়েই ভাবি। তুই সারাজীবন এখানে থাকলেও কেউ কিছু বলবে না।”
পাশ থেকে ভাবি বললো,,
“মা ও বেশি পেকে গেছে। ওর হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে দিতে হবে।”
“ঠিক বলেছিস,,ওকে ইচ্ছা মতো পিটানি দিলে ও বুঝবে।”
“ওরে বাবা থাক আমি আর মার খেতে চায় না। তোমরা টিভি দেখো আমি অনুভবকে নিয়ে আসি।”
“আচ্ছা যা।”
আন্টিদের কাছে থেকে উঠে গিয়ে বাগানে গেলাম। সেখানে আইদা, সিফাত আর অনুভব বল দিয়ে খেলছে। ৩ টাই বাচ্চা পুরা। সিফাতের থেকে তো আইদা আর অনুভবকেই আমার বাচ্চা মনে হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,,
“সিফাত বাবা টা কি খেলছে?”
“বল খেলতি। তুমি খেলবে?”
“না বাবা তুমি আর ফুপি মনি খেলো আমি তোমার আঙ্কেলকে নিয়ে যায়। উনার এই পাগলু লুক টা বদলাতে হবে নয়তো উনাকে দেখলে পাগল কমিটির সদস্য ভেবে উনাকে নিয়ে চলে যাবে বুঝছো।”
আমার কথা শুনে সিফাত খিলখিল করে হেঁসে বললো,,
“আত্তা নিয়ে যাও।”
আমি অনুভবের কাছে যেতেই দেখি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখন আবার কি হলো? আজব!
“এভাবে গাল ফুলিয়ে রাখছেন কেন?”
“আপনি আমাকে পাগলু বললেন কেন?”
“কখন বললাম?”
“শুনেছি আমি।”
“আরে আমি তো আপনাকে পাগলু বলিনি। এই যে আপনার লুক দেখছেন না? ইয়া বড় বড় দাড়ি,, এত উস্কো খুস্কো চুল এগুলোকে পাগলু লুক বলেছি বুঝছেন?”
“ওই হলো একই কথা।”
“আগের মতো পেঁচাইলা রয়ে গেছেন আপনি। এই আপনি আদৌ পাগল তো?”
“আপনি আমাকে আবারও পাগল বললেন? যাবো না আমি আপনার সাথে!”
এই বলে অনুভব মাটিতেই বসে পড়লো।
“আরে আরে উঠুন।”
“না উঠবো না। উঠলে আপনি আপনার সাথে নিয়ে যাবেন। আমি তো যাবো না!”
“আরে মেরি মা,,নে মাফ কর আমারে। সরি তো আর বলবো না এসব। প্লিজ উঠুন। আপনার দাড়ি চুল কেটে পরিষ্কার করিয়ে গোসল করাতে হবে!”
“না আমি কিছু করবো না।”
এ কি ঘাড়ত্যাড়া লোক রে বাবা? এইটা সুস্থ থাকতেও জ্বালাইছে এখন পাগল হয়েও জ্বালাচ্ছে🥺
“আপনি যাবেন না তো? ঠিক আছে আমিও আপনাকে স্নিগ্ধবতীর কাাছে নিয়ে যাবো না। খেলনাও দেবো না। চকলেটও দেবো না।”
অনুভব এক লাফে উঠে বললো,,
“চলুন আমি আপনার সাথে যাবো।”
মুচকি হেঁসে অনুভবকে নিয়ে আসতে গিয়ে দেখি সিফাত আর আইদা অনুভবের কান্ড দেখে হাঁসছে। আমি অনুভবকে নিয়ে উপড়ে এসে চুপচাপ বসিয়ে চুল আর দাড়ি কেটে ছোট করে দিলাম। উনিও ভদ্র ছেলের মতো বসে রইলেন। কাটা শেষ করে গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে বসিয়ে রেখে আমিও গোসল করে বের হলাম। এসে দেখি যেভাবে রেখে গেছি সেভাবেই আছে। এত পরিবর্তন কয়েক মিনিটে? কেমনে হয়লো? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,,
“এত ভালো ভদ্র কবে হইলেন?”
“আমি তো আগে থেকেই ভদ্র।”
“একটু আগে বাগানে ঘাড়ত্যাড়ামো করলেন এখন যা বলছি তাই করছেন ব্যাপার কি?”
অনুভব চোখ ছোট ছোট করে বাচ্চাদের মতো করে বললো,,
“আপনি যদি আমাকে স্নিগ্ধবতীর কাছে না নিয়ে যান, চকলেট না দেন, খেলনা না দেন, তাই! আর আপনার কথা না শুনলে যদি ওদের মতো আপনিও আমাকে মারেন তাই।”
অনুভবের কথা শুনেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। না জানি কতটা কষ্ট দিছে ওকে ওরা। সব গুলোকে যদি শাস্তি না দিতে পারি তাহলে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেবো। আর আমার নিজের প্রতি এতটুকু কনফিডেন্স তো আছেই যে ওদের আমি শাস্তি দিতে পারবো। হয় অনুভব দেবে নয়তো আইন। তবে প্রত্যেককে আমি অনুভবের মতো কষ্ট দেবো। ভয়ংকর কষ্ট। যে কষ্টে অনুভব দাপড়াচ্ছে প্রত্যেকটা কষ্ট ওরাও পাবে। অনুভবকে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখে ওকে বললাম,,
“আজকে বেড়াতে যাবেন?”
অনুভবের চোখ চকচক করে উঠলো। ও মুহূর্তেই মাথা নাড়িয়ে বললো,,
“হুম যাবো। আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন?”
“হুম তার আগে আপনার খেয়ে নিতে হবে। নয়তো আমি নিয়ে যাবো না।”
“আচ্ছা খাবো।”
“ঠিক আছে বসেন আমি খাবার নিয়ে আসছি। আমাকে না বলে কোথাও যাবেন না কেমন!”
“আচ্ছা।”
অনুভবকে রেখে আসতে যাবো তখনই ফোনে টুং করে একটা ম্যাসেজ আসলো৷ ফোন টা হাতে নিতেই দেখি তন্নির মেসেজ।
“একটা মিশন কমপ্লিট। বাকি ২ টাও হয়ে যাবে!”
আমি রিপ্লাই করলাম,,
“কার বাাড়িতে লাগিয়েছিস?”
“তোদের বাড়িতে। বাপরে কি ডেঞ্জারাস? অনেক ভয় পাইছি বা**। ভাগ্যিস সাথে তামিম ছিলো ওই সবটা ম্যানেজ করেছে। যায় হোক আমি ভাবছি আজকেই মেঘুর বাড়ি যাবো। ওকেও দেখা হবে কাজও করা হবে!”
“ঠিক আছে। তুই আজকেই সব করে ফেল। ২ দিন পর আমি আসছি।”
“সত্যি?”
“হুম। এখন বাই পরে কথা হবে।”
“ওকে বাই।”
ফোনটা রেখে অনুভবের দিকে তাকিয়ে দেখি বাচ্চাদের মতো হাটু মুড়ে বাবু হয়ে বসে রুমে চোখ বুলাচ্ছে। আমি আর না দাঁড়িয়ে নিচে গেলাম খাবার আনতে।

অনুভবকে খাইয়ে নিজে খেয়ে আগে অনুভবকে রেডি করলাম। বেচারারও দরকার একটু বাহিরে যাওয়ার। খোলা পরিবেশে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে। অনুভবকে রেডি করিয়ে বললাম,,
“আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক আছে বাট আপনার আমাকে একটা কথা দিতে হবে & সেই কথা মানতে হবে।”
অনুভব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বললো,,
“কি কথা?”
“আমি ছাড়া আপনি কারো কাছে যাবেন না। কেউ স্নিগ্ধবতীর কথা বললেও যাবেন না। ওরা কিন্তু নিয়ে গেলে এবার আর আপনাকে বাঁচতে দেবে না।”
“কেন?”
“এত প্রশ্ন করেন কেন? আপনি কি আমার কথা শুনবেন না?”
অনুভব চুপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আলতো করে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম,,
“বিশ্বাস করেন না আমাকে?”
অনুভব মাথা উপর নিচ করে বোঝালো “হ্যা করে”
“তাহলে আমার কথাটা মানেন। সময় হলে আপনি আপনার স্নিগ্ধবতীকে পেয়ে যাবেন। তার আগে কাউকে বিশ্বাস করবেন না। সবাই কিন্তু স্বার্থপর।”
অনুভব কি বুঝেছে জানি না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ করলো। আমি ওকে রেখে নিজেও রেডি হয়ে নিলাম। কোনো রিস্ক নেওয়া যাবে না এখানে। তাই অনুভবকে মাস্ক পড়িয়ে আমি নিজেও মুখ আটকে নিলাম। এই লোক তো প্রথমে পড়বেই না। কত জোড় করে পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একা যাওয়া ঠিক হবে না। তাই আইদা, সিফাত আমি আর অনুভব যাচ্ছি। ওরা থাকলে তাও কেউ সন্দেহ করবে না।

৪ জনে মিলে চলে আসলাম একটা পার্কে। এখানে অনেক বাচ্চারা খেলছে। সিফাত আর অনুভবও বাচ্চাদের সাথে মেতে আছে। আইদা আর আমি ওদের দুজনকে চোখে চোখে রাখছি। আশে পাশে তাকাতেই হঠাৎ……………

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন❤️❤️ পার্ট ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না😐বোনাস পার্ট তাই ছোট করেই লিখলাম😊)
হ্যাপি রিডিং😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here