#স্পর্শতায়_তুমি
#পব_০৯
#অধির_রায়
ছোঁয়া অফিসে আসবে না শোনার পর কোন কাজ ঋষি মন দিয়ে করতে পারছে না৷ মন পড়ে আছে প্রাণপ্রিয় ছোঁয়ার কাছে৷ ছোঁয়াকে একটা নজর দেখার জন্য মন উতলা হয়ে থাকে। যদিও ছোঁয়া আজ অন্য কারো৷ অন্যের স্ত্রীর দিকে তাকানো পাপ৷ অবুঝ মন শুধু ছোঁয়াকে খুঁজে। ছোঁয়ার জন্য এমন পাপ করতে রাজি। এক সাগর অভিমান নিয়ে কাজ করছে ঋষি৷
অজান্তা মায়াভরা নেত্রে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পারছে না কিভাবে ঋষি ছোঁয়ার কথা বলবে? মায়ের কাছ থেকে সদূরে দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে৷ হাত কাচুমাচু করছে৷ অজান্তার দিকে মায়ের আঁখি জোড়ার দৃষ্টি পড়ে৷ ফাইলে মুখ গুছে বললেন,
“ভিতরে আসো৷ ওখানে চো’রের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না৷”
অজান্তা ধীর পায়ে মায়ের কেবিনে প্রবেশ করে৷ চেযারে বসে এক গ্লাস জল পান করে৷ বুকে সাহস সঞ্চয় করে বলল,
“মা আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই৷ আশা করি তুমি আমার কথা ভেবে দেখবে৷”
মেয়ের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললেন,
“কি বলতে চাও? যার জন্য তোমাকে খুব হ্যারাস লাগছে৷ অন্যায় কোন ইচ্ছা পূরণ করতে পারব না৷”
“আমি অন্যায় কোন আবদার করব না৷ আমি তোমাকে যা বলব তুমি বিশ্বাস করতে পারবে না৷”
অজান্তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পারে৷ ভারী কন্ঠে বলল,
“তোমার দাদা বাসায় আসুক আমি চাইনা৷ আমাকে বললে আমি তার ভালোবাসার দাম দিতে পারব না৷ তার জন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। ছোঁয়ার মা বাবার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছি না৷”
“আমি দাদার বিষয়ে কিছু বলতে চাইনি৷ আমি ছোঁয়া বউদির বিষয়ে বলব।”
চকিত হয়ে ভারী গলায় বলল,
“ছোঁয়ার বিষয়! ছোঁয়ার বিষয়ে তুমি কি জানো? না জেনে ছোঁয়ার কোন কথা আমাকে বলবে না৷”
মনে মনে ভয় কাজ করতে লাগল৷ অজান্তা ছোঁয়ার ভালোবাসার কথা জেনে যায়নি তো৷ অজান্তার কাছে প্রেম ভালোবাসা বিষের সমতুল্য। অজান্তা তার মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“মা আমি প্রেম ভালোবাসা কখনও বিশ্বাস করতাম না৷ এসব আমার কাছে পুতুল খেলা মনে হয়৷ সংসারের কথা উঠলে নিজেকে পি’ষি’য়ে ফেলতে ইচ্ছা হতো। আজ আমি ভালোবাসার মানে বুঝি৷ ধরনীর বুকে ভালোবাসা আছেই বলে ধরনী আজ রঙিন। ভালোবাসা মানুষের মাঝে বিরাজ করে বলেই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে৷”
অজান্তার কথা শুনে রীতিমতো অবাক হচ্ছেন৷ ভালোবাসা শব্দটা অতি সহজে বলতে পারছে৷ কিভাবে অতি সহজে ভালোবাসার কথা বলতে পারছে? ছোঁয়া সাথে থাকতে থাকতে প্রেম ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে৷ উচ্ছাস নিয়ে বললেন,
“তুমি কাউকে ভালোবাসাে৷ তার সাথে ঘর বাঁধতে চাও৷”
মুচকি হেঁসে বলল,
“আমার ভালোবাসা ছোঁয়া৷ তুমি তাকে নতুন করে বিয়ে দাও৷ তার জীবনটা আবার গড়ে দাও৷ ছোঁয়া প্রতিনিয়ত দগ্ধে দগ্ধে মারা যাচ্ছে৷ ছোঁয়ার কষ্ট তোমার চোখে পড়ে না৷”
“ছোঁয়াকে বিয়ে করবে কে? ছোঁয়া একজন বিবাহিত নারী৷ মেয়েরা একবারই কনে সাজে৷ আমি তোমার অন্যায় আবদার মেনে নিতে পারব না৷”
“কেন মানতে পারবে না? আজ যদি ছোঁয়ার জায়গায় আমি হতাম৷ তুমি এক কথা বলতে৷ ছোঁয়াকে তো ভালোবাসার মুখ দেখাতে পারলে না৷ তুমি জানতে ছোঁয়াকে কাউকে ভালোবাসে৷ তবুও তোমার ছেলের বউ করে নিয়ে আনলে৷ কেন ছোঁয়ার জীবন তুমি আর তোমার ছেলে নষ্ট করলে? আমি ছোঁয়াকে কষ্ট পেতে দিব না৷ আমি ছোঁয়ার পাশে আছি৷ আমি ছোঁয়াকে তার ভালোবাসার মানুষের হাতে তুলে দিব৷”
“অজান্তা তুমি ভুল করছো? সমাজে আমাদের একটা মান সম্মান আছে৷ আমি এমন কাজ করতে পারব না৷ সমাজের সামনে আমার মাথা নিচু করো না৷”
“সমাজ মাই ফুট। সমাজ কি আমাকে সুখে রাখতে পারবে? সমাজ কি দিবে আমার বাঁচার অধিকার? যাকে আঁটকে ধরে বাঁচতে পারব সমাজ তাকে আমার কাছে এনে দিবে৷”
“তোমার এখনও বুঝতে পারছো না৷ বিবাহিত মেয়েদের দ্বিতীয় বার বিবাহ হয়না৷”
“ছোঁয়া বিবাহিত থাকবে না৷ আমি দাদার সাথে কথা বলেছি৷ দাদা ছোঁয়াকে ডিভোর্স দিবে৷ ছোঁয়ার ডিভোর্স হওয়ার পর আমি ছোঁয়াকে তার ভালোবাসার মানুষের হাতে তুলে দিব৷ তুমি বিষয়টা ভেবে দেখবে৷”
অজান্তা কথা না বাড়িয়ে চলে আসে৷ সোজা ঋষির ডেক্সের সামনে আসে। ঋষির হাত ধরে টানতে টানতে অফিসরে বাহিরে ক্যাফেডিয়ামে নিয়ে যায়৷ ঋষি অজান্তার এমন ব্যবহারে ঘাবড়ে যায়৷ অজান্তা কি করতে চাইছে ঋষির সাথে৷ অজান্তা ঋষির সামনে বসে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে৷ ঋষি কিছু বলতে নিলে থামিয়ে দেয়৷ অজান্তা বলল,
“আমি জানি আপনার মনে অজান্তা নামে কোন মানুষ নেই৷ আমি আপনার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিব৷ আপনার ভালোবাসার মানুষকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিব৷ ছোঁয়া আপনাকে ছাড়া ভালো নেই৷”
“ছোঁয়া নিজেকে মানিয়ে নিবে৷ ছোঁয়ার জীবন নষ্ট করবেন না৷ ছোঁয়ার সংসার ভাঙবেন না৷ ছোঁয়া এখন অন্য কারো৷ তাকে আমি অন্যের কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে পারব না৷”
“ছোঁয়া অন্য কারো কোনদিন ছিল না৷ অন্য কারো হতেও পারে না৷ ছোঁয়া আপনার ছিল আজও আপনার আছে৷ আমার কথা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করবেন৷ আমার কথা শেষ হওয়ার আগে কথা বলবেন না৷”
“ওকে আমি কোন কথা বলব না৷ তবে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করবেন। অনেক কাজ আজ।”
“আমি জানি আপনি ছোঁয়াকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসেন৷ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আপনি আর ছোঁয়া আলাদা হয়েছেন৷ ছোঁয়া আপনার সামনে যতই শক্ত থাকুক না কেন ; দিন শেষে সে ভেঙে পড়ে৷ আমি চাই আপনি ছোঁয়াকে আপনি বিয়ে করেন৷”
“হোয়াট! আমি এমন কাজ করতে পারব না৷ ছোঁয়ার সংসার আমি নষ্ট করব না৷”
“আমার কথার মাঝে কথা বলতে মানা করেছি৷”
“ওকে আর কোন কথা বলব না৷ মনোযোগ সহকারে কথা বুঝার চেষ্টা করব৷”
অজান্তা পুনরায় বলতে শুরু করল,
“ছোঁয়া সাথে আমার দাদার বিয়ে হয়। আমার দাদাও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ছোঁয়াকে নিজের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছে৷ বিয়ের পর বউদি আমাদের বাড়িতে আসে৷ দাদা বাড় থেকে বেরিয়ে যায় ৷ আর ফিরে আসেনি৷ দাদা তার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছে৷ সে জানিয়েছে ছোঁয়াকে নিজের জীবনে জড়াতে পারবে না৷ সে ছোঁয়াকে এই বাঁধন থেকে মুক্তি দিবে৷ ছোঁয়া এসব বিষয়ে কিছু জানে না৷ আমি চাই আপনি ছোঁয়াকে বিয়ে করেন৷ আমি আমার ভালোবাসা উৎসর্গ করলাম ছোঁয়ার জন্য। আমি আপনাদের বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই৷”
ঋষির মুখে কোন কথা নেই৷ নিরবে নিভৃতে বসে আছে৷ নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ঋষির মাঝে৷ আঁখি দ্বায় লাভার ন্যায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখ থেকে অশ্রুর বন্যা অনবরত বয়ে যাচ্ছে। কথা বলার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে শক্ত করে বলল,
“ছোঁয়ার জীবনে এতে বড় ঝড় বয়ে গেছে৷ আমি ছোঁয়াকে কখনও কষ্ট দিতে চাইনি৷ আমার ছোঁয়া আমার জন্য আজ এতো কষ্ট করছে৷ আমার সাথে সেদিন পালিয়ে গেলে আজ আমাদের মাঝে থাকত না কোন দূরত্ব। একে অপরের ভালোবাসায় মুগ্ধ থাকতাম৷ পরিবারের লোক সাময়িক সময়ের জন্য কষ্ট পেত৷ কিন্তু ঠিক সামলিয়ে নিতো৷ আমি কোন মানুষের মাঝে পড়িনা৷ না রাখতে পারলাম পরিবারের মুখে হাসি ফেরাতে৷ না পারলাম ছোঁয়াকে ভালো রাখতে৷ আজ নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে৷”
ঋষি আজ একদম ভেঙে পেড়েছে৷ কথা বলার শক্তিটুকু নেই৷ ফর্সা গালটা লালচে দানার মতো মলিন হয়ে গেছে। কাঁপা ভেজা গলায় বলল,
“ছোঁয়া কেমন আছে? ছোঁয়াকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে৷ দু’চোখ ভরে তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে৷ একটু দেখতে পেলেই নিজেকে ধন্য মনে করতাম৷
অর্পি মুখ কালো করে বলল,
” সবার বিয়ে হচ্ছে৷ আমাকে কেন বিয়ে দিচ্ছে না? আমি কেন কোন ছেলেদের চোখে পড়িনা?”
তিথি আহ্লাদী স্বরে বলল,
“কষ্ট পাওয়ার কোন দরকার নেই বোনু৷ আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, আমিও সিঙ্গেল। তবে আমার একটা মহৎ গুন আছে। আমি দিনে চার পাঁচ জনের উপর ক্রাশ খাই৷”
তিথির কথায় হাসিতে মেতে উঠল বন্ধ মহল৷ ছোঁয়ার মুখেও হাসির রেখা৷ অনেকদিন পর ছোঁয়া মন খুলে হাসছে৷ তিথির পরের কথা কানে আসতেই মুখ থেকে হাসির রেখা উড়ে গেল। তিথি হুট করেই বলে উঠল,
“আমার প্রথম ক্রাশ ছিল প্রকৃতির ভাই ঋষি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় তিনি আমাকে নয়৷ আমার বান্ধবী ছোঁয়াকে ভালোবাসে৷”
অর্পি বলল,
“এখন চান্স নিতে পারিস৷ একদম খালি আছে৷”
প্রকৃতি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকায়৷ ছোঁয়ার ফর্সা মুখটা মলিন হয়ে গেছি৷ প্রকৃতি রাগী গলায় বলল,
“থামবি তোরা৷ একটাও বা”জে কথা বলবি না৷ এখানে আমার ভাইয়ের নামে কেউ কথা বললে তাকে আমি জু’তা পি’টা করব।”
তিথি অট্টহাসি দিয়ে বলল,
“তোর আনরোমান্টিক ভাইকে আমি বিয়ে করতে যাব না৷ একদিন দেখা হয়েছিল আমার সাথে কথাও বলেনি৷ তাকে আমি বিয়ে করতে যাব কোন দুঃ’খে৷ আমার তো সালমান খান আছে৷”
ছোঁয়া নিরবে নিভৃতে সবার কথা শুনে যাচ্ছে। অর্পি তিথির জবাবে বলল,
“তোর সালমান খান একজন প্লে বয়। শেষে তুই কিনা একজন প্লে বয়কে বিয়ে করতে চাইলি৷ তার থেকে আমাদের বাসার আবুল চাচা অনেক ভালো। তুই.. ”
অর্পির কথার মাঝে ছোঁয়া বলল,
“তিথিকে ধরে বেঁধে আবুল চাচার সাথে বিয়ে দিতে হবে৷ আমার জানা মতে আবুল চাচা এখনও বিয়ে করেনি৷”
তিথি রাগী গলায় বলল,
“আমি জীবনেও বিয়ে করব না আবুল চাচাকে৷ লজ্জা নেই তোদের একটা ইনোসেন্ট বান্ধবীর সাথে এমন করতে৷”
প্রকৃতি মুচকি হেঁসে বলল,
“একটা কথা বললে সত্যি সত্যি আবুল চাচার কাছে বিয়ে দিব৷ চল আমরা একটু পার্কে থেকে ঘুরে আসি৷”
ছোঁয়া নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি যেতে পারব না৷ অলরেডি অনেক লেট৷”
চলবে…..