স্পর্শ #পর্ব_০৬

0
836

#স্পর্শ
#পর্ব_০৬
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

দুপুরে শত ডাকাডাকির পরও দরজা খোলে নি ইরা।নিহানেরও খাওয়া হয় নি।খালামনি খালু অনেকবার জিগ্যেস করছে কি হয়েছে…নিহান বারবারই এড়িয়ে গেছে।সন্ধ্যে হয়ে এসেছে।প্রায় ১ঘন্টা ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নিহান।ইরার বের হওয়ার অপেক্ষায়..!

খুব খিদে পেয়েছে ইরার।আর মাথা ব্যাথাও করছে প্রচন্ড।সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে।আর সারাদিনে একটু দানা পানিও পরে নি।আর টিকতে না পেরে চোখ মুখ মুছে ঘর থেকে বের হয় ইরা।পণ করেছে নিহানের সাথে আর নিজে গিয়ে যেচে কথা বলবে না।নাক টেনে বেসিংয়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নেয় ইরা।তারপর টেবিলে এসে দেখে সব খাবার বাটি খালি।রাগ যেন মাথায় চড়ে গেছে ইরার।ঢকঢক করে দুগ্লাস পানি খেয়ে আবার ঘরের দিকে এগোয় ইরা।
নিহান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ইরার কান্ড দেখছিলো।যেই না ঘরের দরজার সামনে এলো পেছনে থেকে খপ করে ইরার কোমড় জড়িয়ে ধরল নিহান।দ্রুত ঘরে ডুকে পরে।একহাতে ইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে আরেকহাতে দরজা আটকে দেয় নিহান।
ইরার নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে।আর নিরবে কাঁদছে মুখে কোনো কথা বলছি না।
নিহান ইরাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখ মুখ মুছে দেয়। আলতো করে কপালে চুমু খেতেই শান্ত হয়ে যায় ইরা।
আস্তে করে বিছানায় বসায় নিহান।মুখেমুখি সে-ও বসে।ইরার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।চোখ ঠোঁট ফুলে একাকার।ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে আনমনে।নিহান দুহাত ইরার গালে রাখে।আমার দিকে তাকা..!
তাকা না..!
ইরা নিহানের দিকে মুখ করে বসে তবে তাকায় না।
আমি সত্যিই খুব ব্যস্ত ছিলাম রে।সরি..!
এই ইরা সরি তো..!
ইরা এবার খুব রেগে যায়।কিসের ব্যস্ততা তোমার?সারাদিন ওই তো এক ফাইল হাতে বের হও।আর কি কাজ?তুমি ভেবেছো আমি কিছু জানি না?তোমার কাগজপত্রে যে রেজাল্ট এপ্লাই করে ইন্টারভিউ দিলে চাকুরী হবেই।অথচ তুমি?শুধু বের-ই হও।এটাকে ব্যস্ততা বলে?শেখাও আমাকে?হ্যা।আমাকে আর ভালোলাগে না সেটা বলো!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিহান। ইরা…
আজকালকার যুগে চাকুরী সোনার হরিণ রে।চাচা মামা ছাড়া চাকরি হয় না।নয়ত মোটা অংকের ঘুষ চায়।চাইলেই আজকাল মেধার দ্বারা চাকুরী পাওয়া যায় না।আমি তেমন কোম্পানিই পাচ্ছি না মন মতো।
ইরা কিছুই বললো না।নিহান বেশ বুঝতে পারছে এ উত্তরে সন্তুষ্ট নয় ইরা।
ইরা আজ তোকে কিছু বলতে চাই।যা তুই জানিস না..!
ইরা একটু অবাক ই হলো বটে।নিহানের চোখের দিলো তাকালো ঘুরে।
বলতে শুরু করলো নিহান_ইরা-ইরা আমি শুধুই চাকরির খুঁজতে যাই না।আসলে বাবা মারা যাওয়ার আগে একটা মাছের আরদ বাবার এক লোক
বন্ধু বলা চলে রহমত আংকেলকে দিয়ে যায়। আর রহমত আংকেল এসব কাউকে বলে নি।এমনকি খালুকেও জানায়নি।তিনি এসব চালিয়েই টাকা নিতো।সংসার চালাতো।তার কোনো সন্তানও নেই যে সন্তানের নামে করে দিবে।তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সেও হার্ট অ্যাটাক করে।পরে গত বছর আংকেল আমাকে খুঁজে বের করে।সবটা খুলে বলে আমায়।আমি বিশ্বাস করি নি।তখন তিনি সকল ডকুমেন্টস্ দেখায়।বাবা সেসব আমার নামে করে দিয়ে গেছেন তার দলিল তিনি আমার হাতে তুলে দেন।তার সপ্তাহ খানিক পর আংকেল ও মারা যান।তখন থেকেই আমি চালাই।দম নিয়ে আবারও বলতে শুরু করে নিহান।
খুব শখ ছিলো ছেট বেলা থেকে দুঃস্থ বেকার নারী-পুরুষদের জন্য একটা কমসংস্থানের সুযোগ করে দেবো।তাই আরদ আর চালের ব্যবসা থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই একটা ছোট বুটিকসের কম্পানি খুলেছিলাম।আল্লাহর অশেষ রহমতে ৯ মাসেই তা অনেক বড় হয়।সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ইরা এবার মুগ্ধ হয়ে বলল তার মানে নূহা বুটিকস্ কম্পোজিটের মালিক তুমিই নিহান ভাই।
নিহান আস্তে করে বলল “হু”
আসলে গত কয়েকদিন থেকে কম্পানির কাজে একটু ব্যস্ত।এর একটা শাখা নারায়ণগঞ্জ শহরে স্থাপিত হবে।তাই খুব ব্যস্ত সময় কাটছে।
তবে কাল থেকে সব কাজ শেষ করে আমি তোকে আনতে যাবো।আর একা আসতে হবে না।কাজ রেখে হলেও যাবো।তবুও আর রাগ করিস না। প্লিজ।চল খেয়ে নিবি।
ইরার এবার নিজের উপর রাগ হচ্ছে সাথে খুব জোড়া কান্নাও পাচ্ছে।আলতো করে নিহানের বুকে মাথা রাখে ইরা।
~আমি তোমাকে কেন বুঝতে পারি না নিহান ভাই..!তুমি তো আমায় সব সময় বুঝতে পারো।
নিহান টের পায় ইরা কাঁদছে।মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলে আরেকটু বড়ো হয়ে নে।ঠিক বুঝবি।
আরে কত বড় হতে হবে বলো তো..!
যেদিন খেয়াল করবি তোর কথায় বাচ্চামো স্বভাব প্রকাশ পায় না,বোকা বোকা কথা আসে না সেদিন.!
কি আমি বোকা?গাল ফুলিয়ে বলল ইরা।
আর নাহ বলেই মিটিমিটি হাসে নিহান।ইরা হেসে দিয়ে নিহানের বুকে দুতিনটে কিলঘুষি দিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মুচকি হাসে নিহান।

ইরাকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিলো নিহান নিজেও খেলো।খাওয়া শেষ করে এসে ইরার পাশে বসল।ইরার শুয়ে আছে।প্রায় ৮ টা বাজে।খুব জলদিই সময় পার হচ্ছে..!
ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো।নিহান বেরিয়ে দরজা চাপিয়ে।সামনে খালামনি পড়তেই জিগ্যেস করলো রাতে খাবি না?
না খালামণি খাবো না।
ইরা কি করে
ও তো ঘুমায়
কিই ঘুমায়…?দুদিন পর এক্সাম আর ও কি না..দাঁড়া বার করছি ওর ঘুম
খালামনি যেও না…
নিহানের কন্ঠস্বর কেমন যেনো শোনাচ্ছে সালমা বেগমের কাছে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলল হে রে বাবা কিছু হয়েছে?
আসলে খালামনি…ইরাকে যে সবটা বলে দিয়েছে তা খুলে বলে নিহান।
সালমা বেগম মাথায় হাত বুলিয়েই বলেন একদিন না একদিন তো জানতোই।ভালোই করেছিস বলে।কিন্তু চাকরির আশা ছাড়িস না ভাবা…!
নিহান মাথা নাড়ায়।সালমা বেগম নিজের ঘরে চলে যান।নিহান আরেকবার দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে নেয় ইরাকে।

কে জানে আজ হয়ত ওদের কাছে আসার গল্প থেমে যাবে….!

সকালে প্রতিদিনকার মতন দুজন নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়।ইরা মাথায় কাপড় দিয়ে আগে হাঁটছে নিহান পিছু পিছু।
সেন্টার গেইটের কাছে এসে ইরাকে পিছু ডাকে নিহান।ইরা পিছু ফিরে চোখে ইশারায় জিগ্যেস করলো কি?
নিহান হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।আজ আর ফাইল হাতে বের হয় নি নিহান।
নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।যত দূর পর্যন্ত দেখা যায় দেখে।তারপর গেইটে ডুকে পরে ইরা।দূর থেকে আরো দুজন প্রাণী ওদের দেখছিলো।আসিফ-তুবা।
ইরাকে আসতে দেখে এগিয়ে যায় আসিফ।
হাই
হাই
কেমন আছো
ভালো আপনি?
আপনি? এটা কিন্তু ঠিক না ইরা।একই ক্লাসে পড়ি অথচ আপনি?
ওহ তু-তুমি
ফ্রেন্ডদের মাঝে তুমি আপনি না তুই থাকে
ইরা হাসল।
তুবা এসে নানা কথা বলে সহজ করতে চাইছে দুজনকে।তুবা জানে ইরা তেমন ছেলেদের সাথে কথাই বলে না।একমাত্র আরাফ ছাড়া।আরাফ তো অনেক আগেকার ফ্রেন্ড।
তাই ইরার জড়তা কাটাতে চেষ্টা করছে তুবা।অবশেষে একসময় সফল ও হয়েছে।ইরা আসিফকে তুই বলে ডাকতে পারছে।এখন আর তেমন জড়তাও নেই।
ইরা তুই ক্লাসে যা আমরা আসছি।ইরা এগুতে থাকে।
তুবা আসিফের সাথে হাত মেলায়…!
এবার শুধু ড্রাগসের প্রতি আসক্ত করতে হবে।বাকি টা….
আর না বলেই দুজন অট্ট হাসিতে ফেটে পরে।

“””তুবা আসিফের গার্লফ্রেন্ড।আসিফের বড় ভাই আতিফ ইরাকে পছন্দ করতো।কলেজে থাকা কালীন অনেক আজেবাজে ইঙ্গিতে ডিস্টার্ব করতো।জ্বালাতো।একদিন ইরা কেঁদে কেঁদে নিহানের কাছে যেয়ে বিচার দেয়।নিহানের এখানেই বড় হওয়া বেড়ে ওঠা।প্রায় সবার সাথেই চেনাপরিচয়। এলাকার গুন্ডা টাইপের ছেলেদের সাথে খাতির একটু বেশিই।ইরাকে সাথে করে নিয়ে একবার আতিফকে যেয়ে থ্রেড করে নিহান।এতে আতিফ আরো ক্ষেপে যায়।পরদিন ইরার ওড়নায় ধরে টান দেয়।আর সাথেই সাথেই খবর যায় এলাকার বড় ভাই ওসমানের কাছে।ইরাকে সে ছোট বোনের মত কোলে পিঠে করে পেলেছে।বোনের অপমানের কথা শুনে সে তার দলবল নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে যায়।কেউ আতিফের গায়ে হাত তুলে নি।শুধু মুখে কালি মেখে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে এলাকা,কলেজ ক্যাম্পাস ঘুরায়..!তারপর ওসমান ইরাকে সামনে দাঁড় করিয়ে আতিফের এক পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দেয়।নিহান সবটা জানতে পেরে আতিফের চিকিৎসার খরচ সব দেয়। একমাসে সুস্থ হয়ে যায় আতিফ।এলাকায় ফিরে এলে সবাই তাকে অপদস্ত করে।অপমানে আত্মহত্যা করে আতিফ।আতিফের পরিবার ছিলো ঢাকায়।আসিফ আতিফের ছোট ভাই।সে-সব জানতে পেরে ক্ষোভে এসেছে ইরার উপর প্রতিশোধ নিতে।তার ধারনা ইরার জন্যই আত্মহত্যা করেছে তার ভাই।ওসমান গতবছরই স্টোকে মারা গেছে।আর নিহানের এখানে বাস্তবিক দোষ না থাকলেও দোষ অবশ্যই আছে।তাই ইরাকে শেষ করে দিলে সে আঘাত খুব করে নিহানেরও লাগবে..তাই রাজশাহীতে আসা আসিফের..বেশ-ভুসা পাল্টে ফেলেছে।কারন আতিফ আর আসিফের চেহারার অনেক মিল…!ইরাকে খুব কষ্ট আর তিলে তিলে শেষ করতে চায় আসিফ।আর এসবের মাস্টার প্ল্যানের মাথা তুবা”””

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here