#স্পর্শ
#পর্ব_০৯,১০
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
০৯
বাসায় পৌঁছে নিহান প্রায় ঘন্টা দেড় হবে।এসেই জানতে পারলো খালমণি খালু তার উকিল বাপের বাড়ি গেছে।নিহান দুদিন পর এসেছে তাও কাউকে জানায়নি যে আসবে।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়েছে একা একাই।টেবিলে খাবার বাড়া ছিলো তার উপর ইরা খেয়ে নিয়েছে আগেই।শরীরটাও ভালো নেই নাকি।
নিহান এসেই ইরাকে দেখে ভিমড়ি খেলো।গালচাপা ভেঙে গেছে।শরীর শুকিয়ে গেছে।কালো হয়ে গেছে একদম মনে হয় কত কাল ধরে খায় না ঘুমোয় না।নিহান দেখে খুব রাগ করছে মন খারাপ ও করছে।ও চলে গেছে দেখেই হয়ত এতো অনিয়ম করে চলেছে ইরা।যার ফলে এরকম হয়েছে।
নিহান খেয়ে নিজের ঘরে এলো।তারপর কি যেন ভেবেই ইরার ঘরে গেলো।ইরা টেবিলের উপর পায়ে পা রেখে পড়ছে।এ অবেলায় কখনো ইরাকে পড়তে দেখে নি নিহান।এসে কিছু না বলে কাঁথা মেলে গায়ে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।ইরা একটু শব্দ করে হাত থাকা পেন্সিল টা বইয়ের উপর ফেলে বলল নিহান ভাই..
হু
নেক্সট টাইম আমার রুমে এলে নক করে আসবে। আর যখন তখন হুটহাট আসবে না।দেখো আমি বড় হয়েছি আর সেই বাচ্চা ইরা নই।এভাবে যখন তখন আমার রুমে এসে সময় কাটালে বাবা মা খারাপ ভাবতে পারে।আর আমরা যেহেতু সমাজে বাস করি সেহেতু পাড়াপ্রতিবেশি ও আসে।
নিহান ইরার কথায় একটু অবাক হলো।এতো জ্ঞানী জ্ঞানী কথা আগে কখনো বলে নি ইরা।আজ কি হলো তাছাড়া ভুল ও বলে নি।
আচ্ছা ঠিক আছে বলে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো নিহান।ইরা আগের মতই পড়তে বসলো।
রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে ঘুম ভাঙল নিহানের। হাই তুলে উঠে বসল।ইরা কারো সাথে খুব হেসে কথা বলছে।নিহান একমিনিট ইরাকে দেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইরা এখনো ফোনে কথা বলছে।মাথা টোকা দেয় নিহান।ইরা বিরক্ত নিয়ে তাকায় নিহানের দিকে।
একটু চা করে দিবি?
দিচ্ছি একটু পর বলেই কথায় মনোযোগ দেয় ইরা।নিহান সোফার ঘরে চলে যায়। টিভি দেখতে দেখতে প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গেছে।ইরার ঘরে যেয়ে দেখে এখনো ফোনে কথা বলছে ইরা।নিহান এবার আর কিছু না বলে অভিমান করেই নিজের ঘরে চলে গেলো।
একটু পর কলিং বেল বাজল।কয়েকবার বাজতেই নিহান উঠে যেয়ে দরজা খুলে দিলো।
সালমা বেগম নিহানকে দেখে খুশি হয়ে গেলো।ঘরে ডুকতে ডুকতে বললেন কখন এলি?
এই তো দুপুরে।এসেই শুনলাম তোমরা বেড়াতে গেছো।
ইকবাল সাহেব হালকা পিঠ চাপড়ে দিয়ে জিগ্যেস করলো কেমন আছিস বাবা?
খালুর কথাবার্তা বেশ ভালো লাগে নিহানের।হাসিমুখে বলল আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো খালু?
নিহানের মুখে তুমি শুনে সালমা বেগম ইকবাল সাহেব মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। এতে বেশ লজ্জা পেলো আর ঘাবড়ে গেলো নিহান।মনে করতে লাগলো আগে তুমি করে ডাকতো নাকি আপনি করে?
সালমা বেগম উচ্চস্বরে হেসে বললেন তুই কি ভুলে গেছিস আগে যে আপনি করে ডাকতি?
ইকবাল সাহেব হো হো করে হেসে বললেন ভালো আছি বাবা।
নিহান দাত দিয়ে নখ কাটতে সোফায় বসল।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসি বলেই দুজন তাদের ঘরের দিকে চলে গেলো।
নিহান ইরার ঘরে উঁকি দিতেই দেখল ইরা খুব হেসে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে।নিহান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল খালামণি খালু এসেছে টেবিলে খাবার দে।
ইরা কান থেকে ফোন সরিয়ে বলল খাবার দেয়াই আছে আর গরম ও করতে হবে না।তোমরা খেয়ে নাও আমি খাবো না।নিহান তেড়ে গিয়ে ইরার হাত টেনে উঠিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে সামনে দাঁড় করালো।খাবি না মানে..?শরীরের কি হাল করেছিস দেখেছিস আয়নায়? চুল রুক্ষ হয়ে গেছে গালচাপা ভেঙে কঙ্কাল! ডং না করে চল খেতে চল আর সন্ধ্যা থেকে দেখছি কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছিস এত কিসের কথা শুনি?পড়তে তো দেখলাম না…
ইরা নিহানের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো।দেখো এত অধিকার ফলাতে এসো না।ফল ভালো হবে না।এতদিন পর বাড়ি এসেছো আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য কোরো না।যাও ইচ্ছে হলে খেয়ে নাও না হলে খেও না।আমায় বিরক্ত করো না তো।যাও এখন আমার ঘর থেকে আমি ঘুমাবো আর ফাইনালি একটা কথা শুনে রাখো নক না করে ঘরে ডুকবে না আর যখন তখন এভাবে হাত ধরবে না।নিহান ইরার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।পরক্ষণেই ভাবলো হয়ত এতোদিন ঠিকভাবে কল দিতে পারে নি বলে অভিমান করে আছে।নিহান মুচকি হেসে ইরার দুগালে হাত রাখলো আর বলল ইরা রাগ করে আছিস?সরি রে বিজি ছিলাম তাই কল করতে পারি নি ঠিকঠাক।
ইরা এবার বেশ রেগে গেলো।রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো নিহানকে।তুমি কল করো নি বলে কি আমি মরে গেছি?তোমার কল দেয়া না দেয়াতে কি আসে যায়।
দেখো আমি এখন ম্যাচিউর!বাচ্চা নেই যে অভিমান করে থাকবো।এখন রুম থেকে বেরিয়ে গেলে খুশি হবো আমার খুব ঘুম পেয়েছে।
নিহানের চোখে পানি ছলছল করছে।এই বুঝি টুপ করে পরবে।কিছু না বলেই দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাতে আর খেতে পারলো না নিহান।গুটিসুটি মেরে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়লো।
সাথে একরাশ চাপা কষ্ট আর প্রশ্ন এই ১৪ দিনে কি এমন হয়ে গেলো কি?এতোটা পরিবর্তন কি করে?
এরকম করেই পেরিয়ে গেলো দুই সপ্তাহ।নিহান আর আগের মত ইরার ঘরে আসতে পারে না।ইরার বারণ।এক সপ্তাহ ধরে তো ঘরে যায়ই না।তবে খেয়াল করে সত্যিই ইরা আর আগের ইরা নেই।স্বভাব চালচলন কথাবার্তা ব্যবহার আচরণ সব পরিবর্তন হয়ে গেছে।কোচিং থেকে আনতে যেতেও নিষেধ করেছে বান্ধবীরা নাকি টিটকারী করে..!এসে থেকেই দেখছে প্রতিদিন বেশ সময় ইরা ফোনে কথা বলে।আগের মত বাড়ির কারো সাথে তেমন কথাও বলে না একসাথে বসে খায় ও না।এককথায় ঘর বন্ধী হয়ে থাকে সারাদিন।ইচ্ছে করেই ঘর থেকে বের হয় না।ছাদে যায় না মাস খানিক হলো।গাছগুলোর কথা হয়ত ভুলেই গেছে কিন্তু নিহান ভোলে নি।রোজ দুবার করে পরিচর্যা করে।সাথে নিয়মিত চাকরী খোঁজের রুটিন তো আছেই।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
রাতে নিহান ডিনার করে এসে ইরার রুমের দরজায় নক করলো।এসো বলেই বইয়ে মনযোগ দিলো ইরা।আর চারদিন পর মেডিকেল এক্সাম..!বেশ পড়ছে।
নিহান আস্তে করে বললো কেমন আছিস ইরা।
ইরা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল এটা বলতে এলে?ভালো না থাকলে কি পড়তে বসেছি
এটা কি সেই ভালো থাকা?
কোন ভালো থাকার কথা বলছো বলোতো আমি তো শারীরিক মানসিক সবদিক দিয়েই ভালো আছি।
একটা কথা না চাইতেও বলে ফেলে নিহান.. তুই কি আমাকে আর ভালোবাসিস না ইরা?তোর জীবনে কি অন্য কেউ এসেছে?
খেপে যায় ইরা।অন্য কেউ এসেছে মানে?কি বলতে চাও তুমি আমি অন্য কারো সাথে প্রেম করি?প্রেম করলে পড়ালেখা হবে আমার?আমি মেডিকেলের স্টুডেন্ট! শোনো এসব ফালতু কথা বলার মুডে আমি নেই।
ইরার উত্তরে বেশ খুশিই হলো নিহান।তবুও মনের খচখচানিটা যাচ্ছে না তার..!কেন এত পরিবর্তন তবে?
ইরা
আবার কি
আমি একমাসের জন্য শহরের বাহিরে যাচ্ছি। কাল সকালে বের হবো
ওহ আচ্ছা। সাবধানে যেও
হুম।তোর মনে আছে আগের বার যাবো শুনে কত কেঁদেছিলি
এবার ও কি কাঁদতে হবে?
না তা বলি নি..
ত..আর কিছু বলার আগেই ইরার ফোন বেজে উঠল।ইরা নিহান দুজনের দৃষ্টি ই ফোনের দিকে।
ইরা একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে একবার নিহানের দিকে। নিহান মুচকি হেসে বলল ফোনটা বাজছে ধর।
ইরা ফোনটা হাতে নিলো।নিহান ম্লান হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।ইরা ফোনে রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেলো।
চলবে_
#স্পর্শ
#পর্ব_১০
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
ক্যাফেতে বসে আছে ইরা তুবা আসিফ।আসিফ ইরার পাশে বসে আছে।খুব হাসাহাসি চলছে তিনজনের মধ্যে কোনো একটা কথা নিয়ে।
পেছনের দুই টেবিল পরের একটা টেবিলে বসে আছে জোবায়ের।ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিলো।ব্যাপক হাসাহাসির শব্দ পেয়ে কপাল কুঁচকে দু টেবিল সামনের টেবিলে তাকালো।
ইরাকে দেখে একটুও চিনতে দেরী হলো না।কিন্তু এ ক্যাফেতে তো প্রায় প্রতিদিনই আসে জোবায়ের ইরাকে তো আগে কখনো দেখে নি।সাথের ছেলেটাকে চেনাচেনা লাগলেও পরিচিত নয় বুঝতে পেরেছে।তবে ইরার হাবভাবে খুব অবাক হলো জোবায়ের।কি শান্তশিষ্ট লাজুক মেয়ে।নিহানের সাথে তো এরকমই দেখেছে।
আর আজ সে মেয়েই কি না হাসতে হাসতে আরেক ছেলের গায়ে পড়ছে।ব্যাপারটা অবাক করার বিষয়ই।
জোবায়েরের খুব রাগ হচ্ছে তবে ও সিনক্রিয়েট করতে চায় না আর ইরাকে কিছু বলা বা শাসন করাও সাজে না তার।দুটো ছবি তুলে নিলো।
তারপর খাবার ছেড়ে উঠে বিল দিয়ে বেরিয়ে গেলো সাথে নিয়ে গেলো ইরার প্রতি জন্ম নেওয়া একটা বাজে ধারণা।
.
.
.
.
আসিফ চেষ্টা করছে ইরার হাত স্পর্শ করতে।তবে পারছে না।ইরা দূরে সরে থাকছে।ইরার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ।অতিরিক্ত ড্রাংক সে।আসিফ তুবা ভয়ে শেষ। এখানে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসলে মস্ত বড় সমস্যা হবে।ফেসে যাবে খুব।
.
.
.
.
জোবায়ের ক্যাফে থেকে বেরিয়ে সামনে মাঠে গিয়ে কল করলো নিহানকে।সবটা খুলে বলাতে খুব রাগ করলো নিহান উল্টো পাল্টা দু একটা কথাও শুনিয়ে দিলো।
ছবি দুটো পাঠিয়ে দিলো জোবায়ের প্রুথ স্বরুপ।ছবি দেখে রাগে ফুসতে থাকে নিহান।এটা তো ওইদিন রিকশায় থাকা ছেলেটা।নিহান উবারে কল দিলো।এখনি বাসায় ব্যাক করবে সে।
.
.
.
.
বিকেলে ইরা বাসায় গেলো।শরীর খুব দুর্বল লাগছে। মাথাও ভারী ভারী লাগছে।
এত দেরী করে বাড়ি ফেরায় খুব চেচামেচি করে সালমা বেগম।ইরা মায়ের কথা কানে না নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।গিয়েই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।সালমা বেগমের কাছে মেয়ের হাঁটাচলা সুবিধের মনে হলো না।পিছু পিছু যেয়ে দেখে বিছনায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ইরা।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
চিন্তিত হয়ে নিজের ঘরে চলে এলেন তিনি..!মেয়েটার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার।হঠাৎ কেমন শুকিয়ে গেছে। দুদিন পর আবার এক্সাম।
.
.
.
.
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরল নিহান।এসেই ইরার ঘরে গেলো হন্তদন্ত হয়ে।যেয়ে দেখে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে।কাঁথাটা টেনে দিয়ে গলা অবধি ঢেকে দিলো।বেরিয়ে সোজা গেলো খালামনির ঘরে।
ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে আছে সালমা বেগম।নিহান গুটিগুটি পায়ে যেয়ে খালামনির পায়ের পাশে বসল।নিহানকে দেখে অবাক হলেন তিনি।তুই চলে এলি যে?
ইরার কি হয়েছে খালামণি..??ছলছল চোখে ধরা গলায় বললো নিহান।
নিহানের মাথায় হাত রেখে সালমা বেগম এক প্রকার কেঁদেই দিলেন।জানি না রে কি হয়েছে আমার পুতুলের মত মেয়েটার।কারো সাথে কথা বলে না একা একা থাকে।শুকিয়ে কি অবস্থা! ঠিকমতো খায় না ঘুমোয় ও না।যে মেয়ের সব কিছু টাইমলি চলতো এখন কিছুই ঠিক নেই।হাসতেও যেন ভুলে গেছে।ঘরে গেলেই দেখি হয় পড়ায় নয় ফোনে ডুবে আছে।আমি আর নিতে পারছি না এত চিন্তা।জিগ্যেস করলে কিছু বলেও না।কথায় কথায় রেগে যায় চিৎকার করে ক্ষেপে যায়।ও তো কখনো এরকম ছিলো না এখন কেন এমন হলো বল তো।
বলেই কেঁদে দেয় সালমা বেগম।তারপর আঁচলে চোখ মুছে বিকেলের কথা খুলে বলল।নিহান এবার সিউর ইরার এ অবস্থার জন্য ওই দুই ছেলে মেয়ে দায়ী।নিহান সালমা বেগমকে শান্তনা দিয়ে বলল আমি সব ঠিক করে দিবো খালামণি একটু ভরসা রাখো।
বেরিয়ে গেলো নিহান।নিজের ঘরে যেয়ে জোবায়েরকে কল করলো।দুবার মিস হবার পর তিনবারের বেলা ফোন রিসিভ করলো জোবায়ের
রিসিভ করেই বললো শালা কল দিছোস ক্যান?আমি খারাপ আমার মেন্টালিটি খারাপ তো কল দিছোস ক্যা
জোবায়ের সকালে দেখা ছেলে মেয়েটার সব ডিটেইলস বের কর।ইমিডিয়েটলি।নয়ত খুব দেরী হয়ে যাবে।
জোবায়ের নিহানের কথায় সিরিয়াসনেস পায়।আচ্ছা দোস্ত আমি যথাসম্ভব দ্রুত বের করবো।ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।
নিহান কল কেটে দেয়।ফ্রেশ হয়ে ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে থাকে।
.
.
.
.
ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল ইরা।শরীর অনবরত কাঁপছে।উঠে ব্যাগ খুলে দিটো ঔষধ মুখে পুরে ঢকঢক করে পাশে থাকা জগ থেকে পানি খেয়ে নেয়।কতক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়।লম্বা শাওয়ার নেয়।চেঞ্জ হয়ে এসে বেরোতেই কেউ খুব শক্ত করে ইরার বাহু চেপে ধরে।
হাতের দিকে তাকিয়ে মুখ তুলে তাকায় ইরা।নিহানকে দেখে বেশ খানিকটা চমকে যায়।তুমি?
যাও নি?
চলে গেলে বুঝি খুব খুশি থাকিস তুই?
সেটা বলি নি..
কি বলিছিস তবে
লাগছে ছাড়ো
আরো শক্ত করে বাহুতে ধরে নিহান।কি হয়েছে তোর?কি করিস সারাদিন?কাদের সাথে মিশিশ?ফেসবুক খুলেছিস কার কথায়?কার অনুমতি নিয়ে?কারা সাথে কথা বলিস সারাদিন?
চোখমুখ শক্ত করে ইরাকে আরেকটু কাছে এনে বলে নিহান।ইরা এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন একটুও ব্যাথা পাচ্ছে না।উল্টো ক্ষেপে গিয়ে বলল সব কিছুতে তোমার অনুমতি আমি প্রয়োজন মনে করি না।আমার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে ইচ্ছে আছে..আমার সম্পর্কে এত খবরদারি করবে না বলে দিলাম।
নিহানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।ঠাসস করে এক চড় বসায় ইরার গালে।মেরে হাত পা ভেঙে বসিয়ে রাখবো ফাজিল মেয়ে।কতবড় সাহস মুখে মুখে তর্ক করছে।
ইরা খুব জোড়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় নিহানকে ।আমি কি করি না করি তা তোকে বলতে বাধ্য নই।কে তুই হ্যা কে তুই?আমাদের বাড়িতে থাকিস খাস আবার আমার গায়েই হাত তুলিস?অধিকার খাটাতে আসছে…
ইরার বলা কথাগুলোয় বাকরুদ্ধ হয়ে যায় নিহান।চোখ দিয়ে না চাইতেও পানি গড়িয়ে পরে। ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে ইরাকে।এ কি সত্যি ই তার ইরা?তার সেই হাসিখুশি বাচ্চা ইরাটা??
নিহান বা হাতে চোখ মুছে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।সামনে খালু খালামনিকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না,যে তারাও সবটা শুনেছে।আর কিছু বলতে পারে নি নিহান সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। সালমা বেগম বাঁধা দিতে পারে নি।তেড়ে গেলো ইরার ঘরের দিকে।বিরক্তি নিয়ে তাদের মুখের উপর ঠাসস করে দরজাটা আটকে দেয় ইরা।শত ডাকাডাকির পরও দরজা খোলে নি।হতাশ হয়ে সালমা বেগম ইকবাল সাহেব সোফায় এসে বসলেন।সালমা বেগম কেঁদেই চলেছেন।মাথা নিচু করে বসে আছে ইকবাল সাহেব।
.
.
.
.
সকাল ৬ টা..
বাহিরে চেঁচামেচি হট্টগোল শুনে সোফা ছেড়ে উঠে গেলো সালমা বেগম।সারারাত স্বামী স্ত্রী এখানেই কাটিয়েছেন।দুচোখের পাতা এক করতে পারেন নি।ইকবাল সাহেব পায়চারি করেই চলেছেন।সালমা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল।ওগো আমার নিহানের কিছু হলো না তো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
ইকবাল সাহেব স্ত্রীর উপর বিরক্ত হয়ে বললেন নিহান তোমার মেয়ের মত যা-তা নয়।ও যথেষ্ট ভালো আর শান্ত মনের ছেলে।ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ।বাহিরে ডেকোরেশনের লোক এসেছে_