#স্পর্শ
#পর্ব_১৯
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
আমি বিয়ে করব!তোদের সাথেই…
নিহান একটু অবাক হলো বটে তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।তবে ইরা হা হলো তো হলোই…মুখ আর বন্ধ হচ্ছে না তার…।
মেয়ে কে?
এলিনা
হোয়াট কি বলিস ?(নিহান)
দেখ কেমনে কি করবি জানি না।হয় ভালোয় ভালোয় ওর বাবা মাকে রাজি করিয়ে ওকে আমার হাতে তুলে দে।নয়ত আমি তুলে নিয়ে বিয়ে করে
নিবো।(শান্ত)
তুই কি কোনোভাবে ওর প্রেমেটেমে পড়েছিস নাকি(ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল নিহান)
হুমমমম..
হো হো হো…তুই প্রেমে পড়েছিস এটা বিশ্বাস করতে হবে আমায়?(নিহান)
নিহান মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে তোর শালিকা!এখন তুই প্লিজ শুরু করিস না..(শান্ত)
ইরা অবাক হয়ে ওদের কথোপোকথন শুনছিলো।
একলাফে উঠে পড়লো নিহানের কোল থেকে।ইরার মাথা যেয়ে ঠুকলো নিহানের থুতনিতে। উহহ করে উঠলো নিহান..
ইরা কোনোদিকে কান না দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো ফুপির ঘরে।
নিহান আর শান্ত বোকা বনে তাকিয়ে রইলো ইরার যাওয়ার দিকে!
.
.
.
.
.
.
হাওয়া বেগম আর শহিদুল সাহেব একসাথে বসে টিভি দেখছে!
এলিনা পাশেই বসে নক কাটছে।এলিনা তাদের একমাত্র মেয়ে!
ইরা দরজার কাছে এসেই খুব জোড়ে চিৎকার করলো।
শহিদুল ইসলাম দাঁড়িয়ে পড়লেন!হাওয়া বেগম চমকে উঠলেন।তবে এলিনার কোনো ভাবান্তর হলো না।সে আগের মতই চুপটি করে বসে আছে।
কি রে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলি কেন?
তোমার মেয়েকে কাল দেখতে আসছে ফুপিম্মা।
কি সব বলছিস!
জ্বি ফুপাই!ঠিকই বলছি।বিয়ের বয়স তো হলোই।দিবে কিনা তাই বলো।তাহলে কালকেই তারা ফাইনাল কথা বলে যাবে।
হাওয়া বেগম আর শহিদুল সাহেব চোখাচোখি করে এলিনার দিকে তাকালো।দুজনেই অবাক আর বিস্মিত!
এলিনা উঠে দাঁড়ালো। বাবা মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ইরার উদ্দেশ্যে বলল যারা আসবে তাদের বল কাল সকালেই আসতে।জানি আমাকে দেখে পছন্দ হবে না তবুও যদি হয়!তাহলে তোদের সাথেই বিয়ের আসরে বসবো!আর কত বোঝা হয়ে থাকবো বল!
বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো এলিনা।
শহিদুল সাহেব চেয়ারে বসতে বসতে বললেন দেখ যা ভালো মনে করিস
হাওয়া বেগম মুখটা ছোট করে বিছানার এক কোণায় গম্ভীর হয়ে বসল।
মেয়েটা কষ্ট পেয়েই আজ একথা বলেছে বুঝতে স্বামী-স্ত্রী কারোই সমস্যা হলো না!
ইরা ছুটতে ছুটতে চলে এলো নিজের।নিহান বসে নিজের নখ কাটছিলো।শান্ত চুপ করে বসেছিলো।
ইরা ঘরে ডুকতেই দুজন আশা নিয়ে ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরা নিহানের পাশে গিয়ে বসল।শান্ত ভাই কাল আংকেল আন্টিকে আসতে বলো।সকালেই।ওনারা পছন্দ করলেই বিয়ে ফাইনাল।
মানে কি ইরা_ নিহান অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো।
মানে হলো আমি যেয়ে ফুপিম্মা আর ফুপাইকে বলেছি কাল এলিনাকে দেখতে আসবে।ওনারে বলল দেখ যা ভালো বুজিস।আর এলিনা একটু মন খারাপ করে বলল আমায় দেখে কারোই পছন্দ হবে না জানি।তবুও যদি হয় তোর সাথেই বিয়ের আসরে বসবো।
শেষ কথাটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো শান্ত।মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
পুরো ব্যাপারটা নিহানের মাথা উপর দিয়ে দেয়াল টপকে বেরিয়ে গেলো।ইরা তো পারছে শুধু নাচতে!
.
.
.
.
.
.
এদিক ওদিক এলিনাকে খুঁজল শান্ত।না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। বাসায় যেতে হবে। বাবা মাকে সবটা বুঝিয়ে বলতে হবে।যদিও মা ছাড়া আর কারো রাজি না হওয়াতে শান্তর কিছু আসে যায় না।কারন বিয়ে ও এলিনাকেই করবে।তবে মায়ের সন্তুষ্টি ও অনুমতিতে।মাকে বড্ড ভালোবাসে শান্ত।তার কাছে তার মা ই দুনিয়ায় প্রথম।আর এখন দ্বিতীয় যোগ হলো এলিনা।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বাইকের কাছে এসে দাঁড়ালো।
ওমনি চোখ পড়লো ছাঁদে। এলিনা দাঁড়িয়ে আছে ওরদিকে মুখ করে।সিল্কি চুলগুলো বেসামাল ভাবে উড়ছে। হঠাৎ হঠাৎ ধমকা হাওয়া আসতেই চোখ বন্ধ করে খুলছে এলিনা।সাথে অনেকেই আছে।ওর বোন ভাইয়েরা!
শান্ত মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিলো।আর আস্তে করে বলল কে বলেছে ও সুন্দর না।আমার কাছে ও সব থেকে সুন্দর নারী!অনেক স্পেশাল ট্যালেন্ট আছে এ মেয়ের নয়ত যেখানে বড়লোক সাদা চামড়ার মেয়ে গুলো আমাকে মুগ্ধ বিমোহিত করতে পারলো না সেখানে ও এক দেখাতেই….!
.
.
.
.
.
সোফায় বসে আছে কাদের সাহেব।সাথে সাজেদা বেগম!
অপর পাশে শ্রাবন্তি!শান্ত তাদেরকে নিয়ে বসেছে ড্রয়িংরুমে।একটা কথা বলবে!গুরুত্বপূর্ণ কথা!
প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে। তবুও তার মুখ থেকে একটা কথাও বেরুলো না।কখনো এইরকম করেনি শান্ত। তাই তারাও চিন্তিত আর বেশ আগ্রীহ হয়ে বসে আছে।
সাজেদা বেগম উঠে শান্তর পাশে বসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল বল না বাবা কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?খুলে বল!
শান্ত আরো মিনিট পাঁচেক চুপ থেকে বলল _
কাল সকাল দশটায় তোমরা মেয়ে দেখতে যাচ্ছো!আমি বিয়ে করবো মা!
এক মিনিট শুনশান নিরবতা চলল ড্রয়িং রুম জুড়ে।
রহিমা খালার হাত থেকে পানের বাটা পরে ঝনঝন শব্দ হতেই সবার হুশ এলো।মনে হয় এতক্ষণ বোবা কালা হয়ে গিয়েছিলো সকলে!
এক সেকেন্ডের মধ্যেই চিৎকার করে উঠলো শ্রাবন্তি..
রহিমাআআআ খালাআআআ মিষ্টিইইই আনোওও..
বলেই লাফিয়ে উঠলো শ্রাবন্তি!
উচ্চ আওয়াজে হেসে উঠলেন কাদের সাহেব ও সাজেদা বেগম!
শান্ত ভ্রুকুটি করে সবার দিকে একনজর তাকিয়ে দেখলো।
কি হচ্ছে এসব?আমি কি কথা শেষ করেছি?
সবাই আবারও চুপ!সাজেদা বেগম মুখে আঁচল চেপে হাসছেন।কাদের সাহেব গলা পরিষ্কার করে গম্ভীর হওয়ার বৃথা চেষ্টা করলো।
শ্রাবন্তিও মিটিমিটি হাসছে।
শান্ত গম্ভীর হয়ে বলল মেয়ে পছন্দ হোক বা না হোক উত্তর যেন হ্যা হয়!মানে পছন্দ হয়েছে।আর কালই ডেট ফিক্সড করে ফেলবে।কারন বিয়ে দুদিন পরেই করবো!
আর মেয়ে যেমনি হোক কালো হোক প্রতিবন্ধী হোক বোবা হোক যেমনি হোক উত্তর যেন হ্যা হয়!
বলেই উঠে দাঁড়ালো শান্ত..
পেছন থেকে কাদের সাহেব বললেন আলহামদুলিল্লাহ! অবশেষে আল্লাহ আমার ছেলেটার দিকে মুখ তুলে চাইলেন!এক সময় আমি দাদু হবো। বংশধর আসবে… আহ ভাবতেই কি ভালো লাগছে।
শান্ত বিরক্তি নিয়ে বাবার সামনে এসে মায়ের কাছে দাঁড়ালো। বাবার কথায় বেশ লজ্জা পেলেও তা কাটিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো মি.কাদের সাহেব আপনি বড়ই উতলা স্বভাবের লোক।যার কারনে জীবনে উন্নতি করতে পারেন নি!যেটুকু পেরেছেন আমার মায়ের জন্য। গাছে কাঠাল গোঁফে তেল!বাক্যের মতন কথা কেন বলছেন।আগে পুত্র বধুর গহনার অর্ডার করুন। বাড়ি ঘর সাজান।আত্নীয় স্বজন ডাকুন বিয়ে দিন।তারপর বছর খানেক গেলে এসব কথা বলুন। তা না করে…এখনি কি যা-তা বলা শুরু করলেন।বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে পেয়েছে!
আর মা মেয়ে খুব শান্তশিষ্ট। এককথায় অসাধারণ। তোমার সাথে খুব বনবে..
তাহলে বাসায় জানালি কেন?ভাইয়া।বিয়ে করে নিয়ে এলেই পারতি!সব যেহেতু শিখিয়ে দিচ্ছিস।
শান্ত কিছু বলার আগেই কাদের সাহেব ধমকে উঠলো।আমার একটা মাত্র ছেলে ওভাবে বিয়ে করে আনবে কেন?জানিস কতা সাধনার পর ও তোর মায়ের কোল জুড়ে এসেছে।কত আল্লাহর কাছে কান্না কাটি করার পর।ও যদি এখন মুখ দিয়ে বলে আজই সব সাজিয়ে অনুষ্ঠান করে বউ আনতে আমি আজ রাতেই করবো।আর তুই বলিস বউ নিয়ে এসে পড়তে।বলেছে এ তো তোর চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য রে!
শান্ত বাবার মুখের দিকে তাকালো একবার।বাবা তাকে এত ভালোবাসে কখনো ফিল করে নি শান্ত তবে আজ খুব করে করছে।মায়ের ভালোবাসাটা চোখে দেখা যায় বলেই মাকে এত ভালোবাসত শান্ত।কিন্তু ছেলেদের জন্য বাবার ভালোবাসা তো দেখা যায় না তাই ওইরকম ভাবে কখনো ফিল করে নি।
বাবাকে খুব করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল।
কাদের সাহেব থমকে গেলেন।মেয়েদের বিয়ের কথা শুনলে নাকি বাবারা কাঁদে।কিন্তু এখানে তো উল্টো!
অবশ্য মেয়েদের জন্য বাবারা কষ্টে কাঁদে ছেড়ে যাবে বলে।আর আমি তো কাঁদছি খুশিতে।গত তিন বছর ধরে বলছি বাবা আমরা আর ক দিন।বিয়ে কর বিয়ে কর।নাতিনাতনির মুখ দেখে যেন মরতে পারি।কে শুনে কার কথা!আর আজ সে ছেলে নিজেই বলছে বিয়ের কথা!এর চেয়ে খুশির আর কিছু আছে নাকি।
বেশ সময় ধরে বাবাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত।না বলা অনুভূতিগুলো একে একে প্রকাশ পাচ্ছে।
বাবার থেকে সরে এসে মাকেও জড়িয়ে ধরল শান্ত।তারপর বাবার হাতে একটা ঠিকনা দিলো।
কাদের সাহেব বললেন এটা তো নিহানদের বাড়ির ঠিকানা!
হুম ইরার ফুপাতো বোন!
মেয়ের নাম কি ভাইয়া?
সম্পর্কে তোর ভাবি হবে তুই বলছিস মেয়ের নাম কি?
ওই তো ভাবির নাম কি?
এলিনা আফসানা!
দারুন নাম তো!সাজেদা বেগম মুচকি হেসে বললেন
শান্তও ম্লান হেসে বলল সব ব্যবস্থা করো বাবা!শপিংটা আমি শ্রাবন্তি আর ও মিলে করে নিবো!
আর তোমার বড় মেয়েকে জানিও!যদি আসে!
শান্তির কথা তুলতেই সবার মন খারাপ হয়ে গেলো।সবাই চুপচাপ হয়ে গেলো।শান্তও আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।
সাজেদা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।কত আদরের মেয়ে!কত ভালোবাসতো তারা! অথচ মুখে চুলকানি মাখাবে এভাবে ভাবে নি!প্রেম করেছিস ভালো কথা জানালেই তো পারতি।মেনে নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম!কিন্তু কি করলি পালিয়ে গেলি!আর খোঁজ খবর ও রাখলি না।এমনটা আশা করি নি!হয়ত আমার ই ভুল।সঠিক শিক্ষা দিতে পারি নি।মানুষ ও করতে পারি নি।এসবই মনে মনে আওড়াচ্ছেন সাজেদা বেগম।
এমন সময় কল এলো কাদের সাহেবের ফোনে।
বড় বড় করে লেখা ইকবাল সাহেব!
সালাম দিলেন!ওপাশ থেকে জানানো হলো তার একমাত্র মেয়ের বিয়ের রিসেপশন!তিনি যেনো সপরিবারে আসেন।তাছাড়া শান্তকে তো স্পেশাল ভাবে বলেছেনই!যতই হোক তার মেয়ে জামাইয়ের ছোটবেলাকার বন্ধু!
তিনি ও আশ্বাস দিয়ে বলল আমরা তো কাল সকালে এমনিই আসছি!এতে ইকবাল সাহেব একটু ঘাবড়ে গেলেন!সকালে কেন?বিয়ে তো তিনদিন পর!কোনো সমস্যা হলো না তো?তবে মুখে বলল না। হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল ভালো থাকবেন। রাখি তাহলে!অনেককেই ফোন করতে হবে!আসলে আমি আমার পক্ষ থেকে বললাম!নিহান অবশ্য যাবে আপনাদের বাসায়!আসলে আমি সময় করে উঠতে পারি নি।বোঝেনই তো একমাত্র মেয়ের বিয়ে।
কাদের সাহেব হেসে বললেন বুঝতে পেরেছি!সমস্যা নেই!এখন ডিজিটাল যুগ!ফোনে ফোনে দাওয়াত দেওয়ারই সময়!
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলেন তিনি!
ইকবাল সাহেব সোফায় বসলেন কিছুটা গম্ভীর হয়ে ভাবতে লাগলেন কাল সকালে কেন আসবে?কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
চলবে_