স্পর্শ #পর্ব_৩

0
843

#স্পর্শ
#পর্ব_৩
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

প্রতিদিনকার মত আজও ইরা কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে আর নিহান চাকরি খোঁজে বেরিয়ে গেলো।

আরদে বসে আছে নিহান।সাথে বন্ধুরা ও দলবল।বিষাদ বলে উঠল_নিহান কতদিন এভাবে চাকরির জন্য ঘুরবি যেখানে তোর নিজেরই এতকিছুর বিশাল ব্যবসা আছে।মাছের আরদ,চালের ব্যবসা,বুটিকসের কম্পানি।
নিহান ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বলল_যতদিন খালামণি চায় ততদিন।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন??জুবায়ের প্রায় ধমকে বলল।
নিহান আর কিছু না বলে পকেট থেকে ১০০০ টাকার নোট বের করে চন্দুকে দিয়ে বলল_চন্দু যাহ তোরা সাতজন দুপুরে বিরিয়ানি খেয়ে নে।১০০০ টাকায় হবে তো??
কালো রোগাপাতলা গড়নের ছেলে চন্দু। নিহানের আরদে কাজ করে।সবকটি দাঁত বের করে হেসে বলল খুব চলবে ওস্তাদ।বলেই বেরিয়ে গেলো।
নিহান ম্লান হেসে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে রইল।শান্ত সিগারেট ধরিয়ে দুটান দিয়ে নিহানের দিকে এগিয়ে দিলো।নিহান সিগারেটটা হাতে নিতেই ইরার মুখটা ভেসে উঠল।
নিহান ভাই তুমি যদি সিগারেট খাও তাহলে আমি কক্ষনো তোমার ঠোঁটে চুমু খাবো না। ছাদে দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কথাটা বলেছিলো ইরা।মনে হতেই হেসে ফেললো নিহান।আর খেতে পারলো না।সিগারেটটা শান্তর হাতে দিয়ে ফাইলটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।উপস্থিত সবাই বোকা বনে চেয়ে রইলো নিহানের যাওয়ার দিকে।

বই-খাতা হাতে করে নিয়ে কোচিং সেন্টারের এক ক্লাস হতে আরেক ক্লাসে যাচ্ছে ইরা।বিস্তর মাঠের একপাশ থেকে অপরপাশে যেতেই মাঠের মধ্যে কারো সাথে ধাক্কা খেলো। ছেলেটার চশমা পরে গেছে।ইরার বই খাতা না পরলেও খুব জোর লেগেছে হাতে।ডান হাত দিয়ে বা হাতের কনুই ডলতে ডলতে রাগী চোখে তাকালো ছেলেটার দিকে।ছেলেটা চশমাটা তুলে পড়ে নিলো।আর বলল আমি খুব দুঃখিত। আসলে দেখতে পাই নি।
খুব চেনা চেনা লাগছে ছেলেটাকে।অনেকটা বখাটে আশিকের মতন।কিন্তু আশিককে তো নিহান ভাই শহর ছাড়া করেছিলো আর একপা ও ভেঙে দিয়েছিলো তাহলে??আবার ছেলেটার বেশ-ভূষাও তা বলছে না।কিন্তু দুজনের চেহারার খুব মিল।
ছেলেটার কথায় ধ্যান ভাঙল ইরার।হ্যালো আমি আসিফ।ইরা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল দেখে চলতে পারেন না।
বলেই আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না ইরা।দ্রুত হেঁটে স্থান ত্যাগ করলো।একবার ও পিছু ফিরে তাকালো না।
চলে যাওয়া ইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল আসিফ।খেলা তো সবে শুরু ইরামনি।আমার ভাইয়ের প্রতিশোধ নিতেই ফিরেছি আমি।একহাত শক্ত করে মুঠ করে আরেক হাতে ফোন বের করে কাউকে কল করলো আসিফ।

ইরার ক্লাস শেষ হলো তিনটায়।আজ একটু দেরীতেই শেষ হলো।অন্যদিন একটায় বাড়ি থাকে।সেন্টার থেকে ইরাদের বাসা বেশি দূরে না।হেঁটে ও যাওয়া যায়। ১০ টাকা টাকা রিকশা ভাড়ায় ও।
মাথায় ওড়না টেনে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মেইন গেইট থেকে বেরিয়ে গেলো ইরা।বের হতেই আড়চোখে দেখতে পেলো নিহানকে।আর ভালো ভাবে তাকালো না সোজা হাঁটা ধরল।নিহান ইরাকে দেখতে পেয়ে দ্রুত এগিয়ে ইরার পাশাপাশি এলো।
~কি হলো এরকম উদ্ভ্রান্তের মত হেঁটে যাচ্ছিস কেন?আমাকে কি চোখে পড়ে নি।দাঁড়াবি তো নাকি…ইরার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল নিহান।
~তোমাকে না বলেছি এলাকার এসব নেতাখেতাদের সাথে মিশবে না।গাল ফুলিয়ে বলল ইরা।
~প্রথমত আমি এসব নেতাদের সাথে মিশি না।ওরা আমার সাথে কথা বলতে আসলে কথা তো বলতেই হয়।আর দ্বিতীয়ত খেতাদের সাথে কি মিশা যায় বল?ওটা তো গায়ে দিয়ে শুতে হয়।
~নিহান ভাই প্লিজ….একটু জোরেই বলল ইরা।
~ওকে সরি।আর ঠাট্টা করবো না এবার চল রিকশায় ওঠ।
নিহান রিকশায় উঠে হাত বাড়িয়ে দিতেই নিহানের হাত হাত রেখে রিকশায় উঠে বসল ইরা।রিকশা তার আপন গতিতে চলতে লাগলো।
ইরা চোখ বন্ধ করে নিহানের কাঁধে মাথা রাখল।
শক্ত করে হাতটা ধরে বলল…
নিহান ভাই…
হু..
তুমি ছাড়তে চাইলেও আমি কক্ষনো তোমায় ছেড়ে যাবো না।খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখবো।
আমি জানি তো বলেই ইরার হাতটা শক্ত করে ধরল নিহান।কিছু সময়ের মধ্যেই বাসায় চলে এলো নিহান-ইরা।

রাতে বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আছে নিহান।আকাশ থেমে থেমে চমকাচ্ছে। কোনো গর্জনের শব্দ নেই।বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে নিহান।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা চাকরি পেতে হবে তাকে হোক সেটা ঘুষ দিয়ে।আজকাল ইরাকে বউ বেশে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে।সত্যিকারের বউ রুপে।আবার বেশ কাছে পেতেও ইচ্ছে করে।এ ব্যাপারটা মাথায় চেপে বসলে তো বিপদ।খালামণিকে বললে হয়ত বিয়ে দিতে দ্বিমত করবে না কিন্তু কিছুতেই বলতে পারবে না।আবার বিশাল ব্যবসা আছে এটাও বলতে পারছে না।যা দিয়ে খুব ভালোভাবেই চলবে ইরা-নিহানের।খালামনির চাওয়াটাকে খুব সম্মাণ করে নিহান।

আকাশ চমকাতে দেখে খুশি হয়ে যায় ইরা।বিছানায় পড়তে বসেছিলো।বই খাতা বন্ধ করে একলাফে বিছানা থেকে নেমে যায়।তারপর গুটিগুটি পায়ে নিহানের ঘরে যায়।ঘরে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে আনমনা হয়ে বসে আছে নিহান।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দাঁত দিয়ে ডান হাতের তর্জনীর নখ কাটল।কিছু একটা ভেবেই নিজের ঘরে চলে আসে ইরা।

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here