#স্পর্শ
#পর্ব_৫
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
সকালে রেডি হয়ে নিহানের ঘরে আসে ইরা।নিহান উপুড় হয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ইরা মুচকি হেসে নিহানকে ডেকে তুললো।উঠে বসেও আবার শুয়ে পড়লো নিহান।কোনো রকম টেনে তুলে ওয়াশরুমে পাঠালো।তারপর নিজে চলে গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে।
এদিকে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে চেঞ্জ করে নিলো নিহান।ইরাকে বারান্দায় ও দেখতে পেলো না।ডাইনিং টেবিলে এসে দেখলো নাস্তা সাজাচ্ছে ইরা।হা হয়ে তাকিয়ে বলল তুই তো..?
তোমার ঘরে ছিলাম।এতসব করলাম কখন তাই?
হু দুই মিনিটে এলি কি করে?
দুই মিনিট..!আমি তোমাকে বিশ মিনিট আগে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে তবে এসেছি
নিহান আস্তে করে বলল ওহ
তারমানে তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছিলে নিহান ভাই?
নিহান কাশতে লাগলো।তারপর মাথা চুলকাতে চুলকাতে আমতা আমতা করে বলল বড্ড বেশি কথা বলিস।দে খেতে দে।
ইরার মিটিমিটি হেসে খাবার এগিয়ে দিলো।
কোচিং সেন্টারের সামনে নামিয়ে দিয়ে সেই রিকশা করেই আরদে চলে গেলো নিহান।
ইরা ক্লাস রুমে ডুকতেই তুবা পেছন থেকে ডেকে উঠল।পেছনের বেঞ্চে সবাইকে ঝটলা বেঁধে বসে থাকতে দেখে সেখানে গেলো ইরা।তুবা ইরার বেস্ট ফ্রেন্ড।খুব অল্প সময়েই।কারন পরিচয়টা সেন্টারে এসেই।স্কুল বা কলেজ লাইফের তেমন কারো সাথেই যোগাযোগ নেই ইরার।ফাস্ট গার্ল হওয়ায় আর রেজাল্ট ভালো হওয়ায় মেডিকেলে চান্স পাওয়ার আশা-চেষ্টা।
আরাফ,তুবা,রিমা,অনিতার সাথে কালকের ওই ছেলেটাকে দেখে বেশ চমকালো ইরা।এগিয়ে গিয়ে বলল ওনাকে চিনিস তোরা?
ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল ওদের সাথে আজই বন্ধুত্ব।আর আমি তেমারই ক্লাসমেট।
নতুন?ইরা জিগ্যেস করল।
হ্যা নতুন।আর বায় দ্যা ওয়ে কালকের ব্যাপারে আর ভেবো না।ওটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।তবে আমি কিন্তু বেশ ব্যাথা পেয়েছি।তোমার হাতের হাড় খুব শক্ত আর মাংস নেই বললেই চলে বলেই হোহো করে হেসে দিলো আসিফ।
ইরা ম্লান হাসল।
এখন তো আমি তোমার ক্লাসমেট। এখন তো পরিচয় হতে সমস্যা নেই।হাত বাড়িয়ে বলল হায় আমি আসিফ।হাসনাইন ইবনাত আসিফ।
ইরা হাত বাড়িয়ে ও বাড়াচ্ছে না।
পাশ থেকে আরাফ রিমা তুবা বলল আরে কালকের ঘটনা আমরা শুনেছি।এটা নিয়ে এত ভাবনার কিছু নেই।
সবার কথায় ইরা হাত মিলিয়ে বলল আমি ইরা ইকবাল নূহা।
নাইস টু মিট ইউ।পকেটে হাত ডুকিয়ে বলল আসিফ।
আবার ম্লান হাসলো ইরা।তবে খুব তীক্ষ্ণ ভাবে এক নজর দেখলো ছেলেটাকে।কেনো জেনো চেনা চেনা লাগে।কিন্তু ছেলেটার সামনে এলেই কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ও।ভয় ভয় লাগে।
আসিফের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ল।তুমি কি ম্যারিড?
ইরা মুচকি হসে বলল না।তবে খুব শিগগিরই হবো।আচ্ছা এখন আসি।বলেই রিমাকে নিয়ে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আসিফ সেখান থেকে সরে এসে জানালা দিয়ে ইরার চলে যাওয়া দেখছে।চোখ থেকে চশমাটা খুলে এক চাপ দিয়ে ধরল।আমি তোমায় সুখে থাকতে দেবে না ইরাবতী।সব তছনছ করে দেবো।পাঠিয়ে দেবো আমার ভাইয়ের কাছে।
তুবা পেছন থেকে আসিফের কাঁধে হাত রেখে বলল সব হবে মাই জান।সব হবে।
কোচিং শেষে মেইন গেইটে এসে বাহিরে দেখে ইরা।নিহান আসে নি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। নাহ তবুও নিহান এলো না।কিছুটা অভিমান আর রাগ করে হাঁটা শুরু করল ইরার।রাস্তার পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে আর এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে। যদি নিহান আসে।অনেকটা পথ পখর রোদেই হেঁটে এলো।কিন্তু এবার মনে হচ্ছে কেউ তাকে ফলো করছে।আবারও এদিক ওদিক তাকাল নাহ কেউ তো নেই।একটু দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরল ইরা। কিছুসময় হাঁটতেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো_এত রোদে হেঁটে যাচ্ছো কেন?
ইরা ঘাড় গুরিয়ে দেখলো রিকশায় আসিফ।কিছু না বলে আবারও হাঁটতে লাগলো।
উঠে এসো রিকশায়।ইরা তবুও কিছু বললো না হাঁটছে তো হাঁটছেই।এবার রিকশা থেকে নেমে এলো আসিফ।ইরার সামনে দাঁড়িয়ে বলল তুমি কি আমায় ফ্রেন্ড বানাতে চাও না ভাবতে পারছ না?তাহলে আমি সরি ইরা।তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য। আসলে আমি তো এ শহরে নতুন এসেছি।তাই তোমাদের দেখেই ফ্রেন্ড ভেবেছি।আচ্ছা সরি আসছি।অনেক আবেগ আপ্লূত হয়ে বলল আসিফ।
ইরারও এবার খারাপ লাগতে শুরু করলো।শুধু ফ্রেন্ডই তো হতে৷ চেয়েছে।দোষের তো কিছু না।তাছাড়া নতুন এসেছে।আর আরাফের মত ওকেও ফ্রেন্ড বানানোই যায়।আর এত কড়া রোদে হেঁটে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।ইরা রিকশায় উঠে বসল।মনে শয়তানি হাসি হেসে আসিফ ও উঠে বসল।যাক অন্তত এক ধাপ এগুতে পেরেছে।ইরার চোখে ভালো হতে অনেকটা দুরুত্ব বজায় রেখে বসল আসিফ।
আসিফের গুটিসুটি মেরে বসা দেখে ইরা ভাবল নাহ ছেলেটা খারাপ না যতটা ওকে দেখলে মনে হয়।হয়ত সবই আমার ভুল ধারনা।অযথাই ওকে দেখে আনইজি ফিল করি আমি।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
ব্যাগ থেকে পানির পট আর টিস্যু বের করে ইরার দিকে এগিয়ে দিলো আসিফ। ইরা পানিটা খেয়ে ধন্যবাদ জানালো।
আসিফ মুখ ফুলিয়ে বলল ফ্রেন্ডশীপে নো সরি নো থ্যাংক্স।ইজ ইট ক্লিয়ার?
ইরা হেসে বললো ওকে..!
পুরো রাস্তা এটা সেটা বলে ইরাকে খুব হাসিয়েছে আসিফ।ইরাও হেসে হেসে ক্লান্ত।বাড়ির সামনে আসতেই ইরা বলল রাখুন রাখুন।
এটাই তোমাদের বাসা?
হুম
যাক চিনে গেলাম। মাঝে মাঝে এসে খেয়ে যাবো।
একটু হাসলো ইরা।তারপর বিদায় জানিয়ে ঘরের দিকে চলে এলো।
ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো নিহান।ফোনে কথা বলতেই ছাদে এসেছিলো।আর যাওয়ার সময় দেখতে পেলো ইরা কারো সাথে রিকশা থেকে নেমে হাসছে।ছেলেটার মুখটা দেখতে পেলো না নিহান।ঘরে চলে এলো দ্রুত পায়।
ইরা ডাইনীং টেবিল থেকে পানি খাচ্ছে। নিহান এসে পাশে দাঁড়ালো।যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি ইরা মুখ কালো করে রাগীরাগী মুড নিয়ে নিহানের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো।
সামান্য আনতে যাবে তাই পারো না..?এত ব্যস্ত থাকো তুমি? নাকি আমার উপর তুমি বিরক্ত নিহান ভাই?আমাকে আর ভালো লাগে না?থাক আর আনতে যেতে হবে না তোমায়।আমার আসা আমি একাই আসতে পারবো।বলেই চলে গেলো ইরা।
আবার ফিরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল রিকশার ছেলেটা কোচিং সেন্টারে নতুন এসেছে।আজ আমার সাথে এবং আমার সব ফ্রেন্ডদের সথে ফ্রেন্ডশীপ করেছে।আসতে চাই নি।নাছোড়বান্দা তাই আসতেই হলো।বলেই হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলো ইরা।
নিহান সেখানেই বেকুবের মত দাঁড়িয়ে রইলো।চেয়ে রইলো ইরার যাবার পানে।
চলবে_