স্পর্শ #পর্ব_৮

0
694

#স্পর্শ
#পর্ব_৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

নারায়ণগন্ঞ্জ পৌঁছেই ইরাকে কল করে নিহান।
সেন্টারের পেছনের বাগানে বসে ছিলো ইরা তুবা আসিফ।খুব ঠেলেঠুলে নিয়ে এসেছে দুজন।কি যেন জরুরী কাজ..!
কল বাজতেই দ্রুত ফোন বের করে রিসিভ করে ইরা।
আসিফ তুবা আগ্রহ নিয়ে কান পাতে
হ্যালো নিহান ভাই
হ্যা কেমন আছিস
ভালো..তুমি পৌঁছেছো ভালো ভাবে?
হ্যা কি করিস
ইরা এবার দুজনের দিকে তাকালো তারপর আমতা আমতা করে বলল কোচিং এ আছি
কোচিং এ তাহলে এরকম তোতলাচ্ছিস ক্যান
তুবা ইশারায় বলে বল স্যার সামনে
ইরা বলে স্যা স্যার সামনে
ওহ তাহলে রাখ।পরে কল দিবো নি। আমি ব্যস্ত থাকতে পারি।সময় হলে কল দিবো
আচ্ছা বলেই দ্রুত ফোন কেটে দিয়ে শ্বাস নিলো জোড়ে জোড়ে।
তুবা জানা সত্ত্বেও কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করে কেরে ইরা?
নিহান ভাই..
তোর ভাই?(আসিফ)
হু খালাতো ভাই(ইরা)
তা এ সময়ে কল?কোথাও গেছে বুঝি(তুবা)
হুমম নারায়ণগঞ্জ শহরে গেছে কাজে..জানিস তোদের তো বলাই হয়নি নিহান ভাই আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমিও।মেডিকেলে চান্স পেলে আর ওর একটা চাকরী হলেই আমাদের বিয়ে!
আসিফ মনে মনে ঠুনকো হাসি হেসে বলল তা আর হচ্ছে না ইরাবতী।তুমি তো শেষ কিন্তু তোমার নিহানভাইয়ের দোস না থাকলেও আছে!আর তার সাজা তুমিই।তুমি শেষ হয়ে গেলেই সে শাস্তি পাবে।পৈশাচিক হাসি হাসে আসিফ।
তুবা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলল কবে ফিরবে?
১২ দিন পর(ইরা)
আসিফ তুবা দুজনেই মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
মোক্ষম সুযোগ এটাই।তুবা চেচিয়ে বলল ও গ্রেট।ইরা বিস্মিত হয়ে জিগ্যেস করলো কেন রে?
তুবা হকচকিয়ে গেল। কথা ঘুরিয়ে বলল এমনই মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে ও কিছু না।চল তোকে ফেসবুক আইডি খুলে দিই।
ইরা চমকে উঠে তাকালো তুবার দিকে।কি ফেসবুক না বোন বাবা বা নিহান ভাই জানতে পারলে খুব বকবে।
ইরা তুই কি বোকারে!তুই কি জনে জনে গিয়ে বলবি আমি ফেসবুক খুলেছি আমি ফেসবুক চালাই..!আসিফ রাগী মুড নিয়ে বলল।
তবুও তো..!
তবুও কিছু না দেখ ইরা ফোনে কথা বললে আমাদের কথা শেষই হয় না!অনেক টাকাও কাটে মিনিট ও লাগে।ম্যাসেন্জারে কথা বললে ফ্রিতে কথা বলতে পারবি।তাছাড়া ইনকাম ও করতে পারবি।
ইনকাম কিভাবে?আরেকটু অবাক হয়ে বলল ইরা।
সেটা পরে বলছি আগে দে খুলে দিই।তোর ছবি দিয়ে খুলবো না দে..!
দাঁড়া অনুমতি নিয়ে নি!
আরে ইরা…..
দাঁড়া দাঁড়া.. ইরা নিহানের নাম্বারে কল দিলো..দুবার ফোন বাজলেও রিসিভ করলো না।নিরাশ হয়ে ইরা ফোনটা তুবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল নে..!
ইরা হাসিমুখে ফোন নিলো।
দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। তুবা কাজ শেষ করে বলল নে ডান!ইরা ফোন নিয়ে টিপতে লাগলো।
কিসের ইনকাম শুনবি এবার??আসিফ বলে উঠল।
হু বল।ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল ইরা।
আমরা একটা পন্যের ছবি বিজ্ঞাপন দিবো।যারা নেবে ওর্ডার করে বিকাশে পেমেন্ট করবে।আসিফ মাল পাঠিয়ে দেবে কাস্টমারের কাছে।তুই আমি অর্ডার নিবো।তুবার কথা শেষ হতেই ইরা ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে বলল এসব করে কি লাভ?অযথা পড়ালেখার ক্ষতি।
ওলে আমাল বিদ্যান লে..!শোন ইরা আমরা সেইম ক্লাস। পড়ালেখাও সেইম।আমরাও কাজটা করি।তাছাড়া ফ্রীতে টাকা ইনকাম হলে ক্ষতি কি?তুই বরং সাবলম্বি হবি।কারো কাছে হাত পাততে হবে না।
আমরা কি তোর খারাপ চাইবো বল?
ইরা ভেবে দেখলো তুবার কথাটা ফেলে দেয়ার মত না।লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে করবে।আর তখন চাইলেই নিহান ভাইকে সে গিফট দিতে পারবে।আনন্দে উৎফুলিত হয়ে ইরা বলল ওকে করবো যাহ!আসিফ আর তুবার মুখটা খুশিতে ভরে গেলো।ইরা বোকা এটা তারা জনত বিশ্বাস করতো কিন্তু এতোটা বোকা বোঝে নি ভাবতেও পারে নি।কিন্তু জিনিসটা কি?ড্রেস কালেকশন নাকি অন্য কিছু।আসিফ ব্যাগ তেকে সাদা পাউডার জাতীয় কিছুর ব্যাগ ইরার সামনে ধরলো।ইরা হাতে নিয়ে জিগ্যেস করলো কি এটা।এটার ই বিজনেস!
ইরা আরো সামনে এনে বললো কোথায় যেন দেখেছি টিভিতেই তো মনে হয় কিন্তু কি করবে এটা দিয়ে।আসিফ বলো শুকে দেখ
ইরা নাকের কাছে নিয়ে কয়েকবার শুকতেই জ্ঞান হারালো।তুবা ইরা বলে চিৎকার করে উঠল।
আসিফ অভয় দিয়ে বলল প্রথমবার তাই।ভয় পেও না।

খুব সাহস করে দুজন মিলে ইরাকে তুবাদের বাসায় নিয়ে গেলো।তুবার মা বাবা বাসায় নেই।খুব সহজেই বাসায় পৌঁছে যায়।ইরাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে আসিফ অন্য ঘরে চলে আসে। তুবা কিছু এলোমেলো ছবি তুলে ইরার।
দুজন মিলে লাঞ্চ সেরে নেয়।ইরার সেন্স এলেই দুজন মিলে ইরাকে ওদের বাসায় নিয়ে যায়।সালমা বেগম দরজা খুলে ইরাকে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলো ইরা কি হয়েছে ওর এই ইরা..
আন্টি ঘাবড়ানোর কিছু হয় নি ও একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।তুবা মাথা নামিয়ে বলল।
হঠাৎ কি হলো চিন্তিত হয়ে পড়লেন সালমা বেগম
সালমা বেগম ইরাকে ধরে ওর ঘরে নিয়ে গেল।আসিফ তুবা সোফায় বসে আছে।সালমা বেগম ওদের সাথে এসে বসল।নাস্তা দিয়ে কথা বার্তা বলল।কিছু সময় কথা বার্তা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো আসিফ তুবা।

পরদিন কোচিংয়ে যেতে পারে না ইরা।সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায়।দুদিনপর কোচিংয়ে যায়।আর নানা ছলছুতা তৈরী করে ইরার মন ভালো করে বিশ্বাস স্থাপন করে নেয় আসিফ তুবা।সেদিনের পর থেকে এভাবেই শুরু হয় আড্ডা। তিলে তিলে জীবনঝুঁকিতে পরে ইরা।নিহানও কাজের চাপে কল করে না ইরাকে।সে সুযোগে আসিফ তুবাও ইরাকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দেয়।দিন যেতে থাকে এভাবেই।।
কখনো কখনো বন্ধু বান্ধবীরাও জীবন নাশের কারণ হয়।সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ..! এটাই ঘটেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here