স্পাইসি_লাভ #পর্ব_০১

0
1896

#স্পাইসি_লাভ
#পর্ব_০১
#অধির_রায়

রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জন লোককে দেখে হাত পা কাঁপতে থাকে নিধির৷ নিধি কথা বলার জন্য বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি সব হারিয়ে ফেলেছে যেন৷ কোন কিছুই বুঝতে পারছে না৷ নিধি ভাবতেই পারেনি তার সামনে দু’জন লোক মারা যাবে৷ নিধি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ঘটনাস্থলে।
.
টিউশনি শেষ করে হলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়৷ নিধি রাস্তার দৈর্ঘ্য কমানোর জন্য বস্তুি গলির ভিতর দিয়ে চলতে থাকে৷ ল্যাম্বপোস্টের আলো নিভু নিভু করছে৷ অবহেলীত সরকারের এদিকে কোন খেয়াল নেই৷ নিধি ভয়ে ভয়ে দ্রুত গতিতে হলে ফিরছিল৷
.
নিধি চোখ মেলে নিজেকে একটা নির্জন ঘরে আবিষ্কার করে৷ হাত পা বেঁধে ফ্লোরে অনাদরে ফেলে রাখা হয়েছে নিধিকে৷ সমস্ত রুম অন্ধকার। ভয়ে ভয়ে আহত কন্ঠে বলে উঠে,
“এখানে কেউ আছেন? দয়া করে রুমের লাইট অন করেন৷”
.
রুমের লাইট অন করে পিছন থেকে পুরুষের গলা ভেসে আসে। নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“অবশেষে আপনার ঘুম ভাঙলো৷ মামুর বাড়িতে ঘুম কেমন হলো?”
.
নিধি কষ্ট করে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমি এখানে কিভাবে আসলাম? আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেন?”
.
তুমি এখানে কিভাবে এসেছো আমি জানি না? আমার দায়িত্ব হলো আপনার দেখাশোনা করা৷
.
কর্কশ গলায়,
“আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন৷ আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে না দিলে ফল ভালো হবে না৷”
.
মুচকি হেঁসে জবাব দিল,
“তুমি এখানেই নিজেই বন্দী হয়ে আছো৷ তোমার নিজের চিন্তা না করে আমার চিন্তা করছো৷”
.
নিধি চিৎকার দিয়ে,
“আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন৷ আমি হলে যাবো৷ আমার জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড চিন্তা করছে৷ আমার ফোন কোথায়?”
.
এটা তোমার এক প্রকার মামুর বাড়ি৷ এখানে তোমাকে কোন ফোন দেওয়া হবে না৷ আর আওয়াজ নিচে। বেশি শব্দ করলে পরবর্তীতে কথা বলার সুযোগ পাবে না৷
.
নিধির রাগ সপ্ত আসমানে পৌঁছে যায়৷ মন বলছে এই লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে৷ চোখ পাকিয়ে শেষ বারের মতো বলে উঠে,
“আমার কি করবি তুই? আমার হাত পায়ের বাঁধন একবার খুলে দে। তোর কি অবস্থা করবো? তুই নিজেই জানবি না৷”
.
ছেলেটি পকেট থেকে গুলি বের করে নিধির কপালে রাখে৷ নিধি গুলি দেখে বাঁচার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে। নিধি সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে মিহি কন্ঠে বলে উঠে,
“ভাইয়া আমি বাচ্চা মানুষ। আমাকে হ’ত্যা করলে আপনার পাপ হবে৷ আমি বাচ্চা মানুষ হয়ে কোন দোষ করতে পারি৷ আমি জানতে চেয়েছিলাম ❝কবে আমাকে মুক্ত করে দিবেন।❞’
.
লোকটি পকেটে গুলি রেখে,
” আমি বলতে পারবো না৷ আমাদের স্যার যখন তোমাকে যাওয়ার পারশিমন দিবে তখন তুমি যেতে পারবে৷”
.
লোকটি আর কোন কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে চলে যায়৷ নিধি ভাবতে থাকে সে কি অপরাধ করেছে? যান জন্য তাকে এভাবে বন্ধী করে রেখেছে৷
______
থরথর করে কেঁপে যাচ্ছে সবাই৷ মুখোশ পড়া লোকটার হাতে গুলি৷ কেউ কোন কথা বললেই তাকে দুনিয়া থেকে স্বর্গে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ হুংকার দিয়ে মুখোশধারী লোকটি বলে উঠে,
“তোমাদের দিয়ে কোন কাজই হবে না৷ এখন দেখছি আমাকেই মিশনে নামতে হবে৷ ছোট একটা বাচ্চাকে তুলে আনতে পারলে না৷ তোমাদের মাসে মাসে এতো টাকা দিচ্ছি কিসের জন্য৷”
.
একজন ভয়ে ভয়ে বলল,
“স্যার আমরা তাকে আজ তুলে নিয়ে আসতাম৷ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাকে অন্য জায়গায় নিয়ে আসি৷ তাকে তুলে নিয়ে আসবো তখনই তাকে নিয়ে দু’জন লোক তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে৷ লোক দুইজনকে মে’রে ফেললেও মেয়েটি পালিয়ে যায়৷”
.
কথা সম্পুর্ন করার আগেই ঠাস করে লোকটির গালে কষিয়ে থাপ্পড় দেয়৷ লোকটি গালে হাত দিয়ে পিছিয়ে আসে৷ মুখোশধারী লোকটি বলে উঠে,
“তিনজন মানুষ তোমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে পালিয়ে যেতে পারে? এতোগুলো লোক সেখানে বসে বসে নৃত্য দেখছিলে।”
.
মিশমিচে কালো একটা লোক বলে উঠে,
“স্যার আমাদের কাল সকাল দশটা পর্যন্ত সময় দেন৷ দশটার আগে আমরা সেই মেয়েকে আপনার সামনে হাজির করবো৷”
.
মুখোশধারী লোকটি জোরে চেয়ারে লা’থি দেয়। চেয়ারটি কিছুটা দূর ছিঁটকে পড়ে৷ হুংকার দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,
“কাল সকাল দশটা৷ এবার কোন রকম অজুহাত দেখালে তোমাদের কারো হাত থাকবে না৷ সবার হাত কেটে রাখবো৷”
.
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়৷ সকলেই হাফ ছেড়ে বাঁ’চে৷
____

নিধির আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে তার জন্য খাবার নিয়ে আসে অন্যজন৷ প্রথম যে লোকের সাথে নিধি কথা বলেছে সে আসেনি৷ নিধি এখান থেকে পালানোর উপায় খুঁজতে লাগল৷ নিধি বলে উঠল,
“আমি খাবার খাবো না৷ এসব খাবার আপনাদের লিডারকে খাওয়ান৷”
.
মাক্স পড়া লোকটি বলে উঠে,
“না খেলে সমস্যা নেই৷ খাবার নিয়ে চলে যাচ্ছি৷ তোমার যখন ক্ষুধা লাগবে, তখন নিজেই খাবার চেয়ে নিবে৷”
.
নিধি লোকটির কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ে৷ ক্ষুধার জন্য পেটে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে৷ এখান খাবার নিয়ে চলে গেলে মারাই যাবে৷ নিধি কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে বলে উঠে,
“আমি কখন বললাম খাবার খাবো না৷ আমি বলতে চেয়েছি হাত বাঁধা থাকলে খাবো কিভাবে? আপনি এটা ভাবছেন না তো আমাকে তুলে খাওয়াবেন৷”
.
লোকটি চেয়ারে বসতে বসতে বলে উঠে,
“আমি তোমাকে তুলে খাওয়ানোর জন্য আসিনি৷ তোমাকে তুলে খাওয়াতে পারি একমাত্র বিষ৷ আমি মানুষের মুখে বিষ তুলে দিতে পটু৷”
.
নিধি শুকনো ঢুক গিলে নরম স্বরে বলে উঠে,
“আমি খাবো কিভাবে? আমার হাত পা বাঁধা। আমার হাত খুলে দিলে তো খেতে পারবো৷”
.
লোকটি নিধির হাত খুলে দিলো। নিধি খাবার দেখে লোভ সামলাতে পারলো না৷ খাবারে হাত দিতে নিবে তখনই মনে পড়ে তাকে পালাতে হবে৷ নিধি একটু বুদ্ধি খাঁটিয়ে বলে উঠে,
“আমি হাত না ধূয়ে খাবো! হাত পরিষ্কার না করে খাবার খেলে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবো৷ রোগে ভোগতে ভোগতে এক সময় মারা যাবো৷”
.
লোকটি বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,
“এই রুমেই ওয়াসরুম আছে৷ তুমি ওয়াসরুমে যেতে পারো৷ আমি বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি খাবার খেয়ে নাও৷”
.
লোকটি নিধির কথা না শুনেই হনহন করে বেরিয়ে যায়৷ নিধি হাফ ছেড়ে বাঁচল। হাত পা একদম লাল হয়ে গেছে৷ হাতে জল পড়তেই একটু ঠান্ডা অনুভব করবো৷ যেন জলন্ত হাতে কেউ ভালোবাসার পরশ দিয়ে গেল৷
________
স্যার আপনার কথামতো মেয়েটাকে তুলে এনেছি৷ তাকে আমাদের স্পেশাল রুমে আটকিয়ে রেখেছি৷ আপনি বললে তাকে আরও খারাপ রুমে রাখবো৷ আপনি যদি….
.
আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই মুখোশধারী লোকটি কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“আমার অনুমতি না নিয়ে তাকে ওই রুমে রাখছো কেন? বাচ্চা মেয়ে সে এমনিতেই ভয় পাচ্ছে৷ তাকে আমার পাশের রুমে রাখো৷ হাত মুখে বেঁধে পাশের রুমে রেখে যাও৷ দ্বার লাগাতে ভুলে যেও না৷”
.
মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে চলে যায়৷ মুখোশধারী লোকটি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়৷ মনে মনে বলে উঠে,
“কালো জগতে আমার সাথে প্রতিযোগিতা করার মতো আর কেউ থাকবে না৷ আমি সমস্ত বাংলাদেশে রাজত্ব করবো৷ সবাই আমার হুকুম মেনে চলছে৷ শুধু টাকা আর টাকা৷”
___

নিধি খাবারের পর একটা মোটা লাঠি সংগ্রহ করে৷ লাঠি হাতে নিয়ে বলে উঠে,
“আপনারা ভুলবশত আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন আমাদের অবস্থা নাজেহাল করবো আমি৷ আমি অনেক একশন মুভি দেখেছি কিভাবে বিপদ থেকে বাঁচতে হয়? যে রুমে আসবে তার মাথায় আঘাত করবো৷ সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে৷ আমি তার পোশাক পড়ে এখান থেকে পালাবো৷”
.
নিধি দ্বারের দেয়াল বেয়ে বসে আছে৷ দ্বার খুলে রুমে ঢুকতেই যেন নিধি তাকে আঘাত করতে পারে৷ অনেকক্ষণ পর একজন লোক প্রবেশ করে রুমে৷ নিধি পিছন থেকে আঘাত করে৷ লোকটি মাটিতে লুটে পড়ে৷ লোকটি চিৎকার করলে নিলেই নিধি লোকটির মাথায় আরও একটা আঘাত করে৷ লোকটির মাথা ফেঁটে যায়৷ লোকটি মাথায় হাত দিয়ে রক্ত চেপে ধরার চেষ্টা করে৷ রক্ত আটকাতে ব্যর্থ হয়৷ লোকটি কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কথা বলতে পারছে না৷ লোকটির এমন অবস্থা দেখে নিধির ভয় হতে লাগলো। নিধি কোন উপায় না পেয়ে নিজের ওড়না দিয়ে লোকটির মাথা বেঁধে দেয়৷ অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ফলে কিছু সময় পর সেখানেই মারা যায়৷ নিধির হাত পা অবশ হয়ে আসে৷ কি থেকে কি হলো কিছুই বুঝতে পারছেনা? নিধি নিজেকে শক্ত করে ভাবতে থাকে, এখানে বসে থাকলে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না৷ কিন্তু নিধি কিভাবে এখান থেকে পালিয়ে যাবে৷ অবশেষে অনেক কষ্ট করে নিধি সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷
.
মুখোশধারী লোক মেয়েটির সামনে বসে বলে উঠে,
“তোমার নাম কি?”
.
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
“আমার নাম তনু৷ আমাকে যেতে দেন। আমাকে কেন তুলে এনেছেন? আমি আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি তো৷”
.
“তোমার ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই৷ তোমাকে আমরা আগামীকালই যেতে দিবো৷ তোমার কেউ কোন ক্ষতি করবে না৷ তোমাকে আমাদের একটা কাজ করে দিতে হবে৷”
.
“আমি কি কাজ করে দিবো? আমি বাসায় কোন কাজই করি না৷”
.
“তোমাকে তেমন কোন কাজ করতে হবে না৷ শুধু তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলবে৷”
.
ওকে। আপনি ফোন দেন৷ আমি কথা বলছি৷
.
তনু তার বাবার সাথে কিছু কথা বলার পর ফোন নিয়ে নেওয়া হয়৷ মুখোশধারী লোক বলে উঠে,
“আপনার মেয়েকে জীবিত দেখতে চাইলে আমার ট্রাকগুলো ছেড়ে দিবেন আদিত্য চৌধুরী।”
.
ফোনের অপর পাশ থেকে বলে উঠে,
“আপনি আমার মেয়ের কোন ক্ষতি করবেন না৷ আমি আপনার ট্রাক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেড়ে দিবো৷”
.
ধন্যবাদ আদিত্য চৌধুরী।


স্যার ডেভিল কুইন এবারও আমাদের সব ট্রাক এবারও লোড করে নিয়েছেন৷ ডেভিল কুইন আমাদের সব কাজে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে। উনাকে উপরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন…
.
মুখোশধারী লোক চেয়ারে লাথি দিয়ে দুইটা গুলি ইয়াসের বুকে মা’রে। সেখানেই ইয়াস মারা যায়৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here