#স্পাইসি_লাভ
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
মুখোশধারী লোকটি এক টানে নিজের মুখোশ খুলে ফেলে৷ সিংহের হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“আর বসে থাকবো না৷ এখন ডেবিল কুইনের মুখোমুখি আমি হবো৷ চিরতরে তাকে বিদায় করবো দুনিয়া থেকে৷ তার মৃ’ত্যু’তে আমি শান্ত হবো৷
বিশস্ত কর্মী অভ্র এগিয়ে এসে,
“আমাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হবে হিসাব করে৷ আমরা যে মেয়ে দু’টোকে আটকিয়ে রেখেছি তাদের দিয়েই পরবর্তী চাল চালবো৷ বাধ্য হবে ডেবিল কুইন আমাদের সামনে আসতে৷ তখন আমাদের হিসাব পরিপূর্ণ হবে৷”
.
মুচকি হেঁসে,
“নিরবের নিরবতা থেকে বাঁচাতে পারবে না ডেবিল কুইন৷ তার জন্য স্বর্গের টিকেট কেটে রাখা হয়েছে৷ এখন দিনকাল ঠিক করা বাকি।”
.
কথার মাঝেই একজন প্রবেশ করে বলে উঠে,
“স্যার প্রথম মেয়েটা এখান থেকে পালিয়েছে৷ শুধু পালিয়ে যায়নি আমাদের একজনকে হ’ত্যা করেছে।”
.
আহত কন্ঠে আশ্চার্য হয়ে নিরব বলে উঠে,
“কি! আমার লোকদের হ’ত্যা করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়েছে। আমি এক ঘন্টার মাঝে ওই মেয়েকে দেখতে পাই৷ জীবিত নাহল মৃ’ত।”
_______
“নিধি তুই পরিবার পরিজন ছেড়ে হলে থাকিস মানা যায়৷ কেন অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়েছিস? তোকে এখন সবাই ডেবিল কুইন নামে চিনে৷ তোর পরিবারের কথা একবারও ভাবলি না৷ তারা যদি জানতে পারে তাদের একমাত্র আদরের মেয়ে নিধি অন্ধকার জগতের কুইন৷ কতটা কষ্ট পাবে, ভাবতে পারিস!” অর্পি বিনয় স্বরে বলে উঠে৷
.
অর্পির কাঁধে হাত রেখে নিধি বলে উঠে,
“তুই জানিস আমি অন্যায় সহ্য করতে পারি না৷ আমি এসবের মোকাবেলা না করলে কে করতো? দেশের সরকার করবে? নাকি দেশের পুলিশ করবে?”
.
অর্পি কঠোর স্বরে বলে উঠে,
“হ্যাঁ৷ এসবের মোকাবেলা কেবল মাত্র তারাই করবে৷ তুই মেয়ে হয়ে এসব করতে পারিস না৷ তোর একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে৷”
.
অর্পিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
“আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হলো দারিদ্র্য মানুষগুলো৷ তাদের মুখে দুই বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেওয়৷ কিভাবে মানুষ তাদেরকে পায়ে পিষে মারছে? তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিচ্ছে৷ তাদেরকে বাধ্য করতে খারাপ কাজে জড়িয়ে ফেলতে৷”
.
আমি মানলাম তুই এসের প্রতিবাদ করছিস৷ কিন্তু ঘটনাস্থলে যদি তোর কিছু হয়ে যায়৷ যদিও তুই যে অন্ধকার জগতের কুইন সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না৷ তবুও তোকে নিয়ে আমার খুব ভয় লাগে৷ তোর কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচবো? মা বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তোকে আঁটকে ধরে বেঁচে আছি৷ তোর কিছু হলে আমি কাকে আঁটকে ধরে বাঁচবো?
.
মন খারাপ করিস না৷ আমার কিছু হলে আমার মা বাবার কাছে তুই থাকবি৷ তাছাড়া তোকে বিয়ে দেওয়া হবে রাজপুত্রের সাথে৷ তোদের প্রথমে একটা রাজকন্যা হবে৷ আমাকে খালামুনি বলে ডাকবে৷
.
রাজকন্যা বলার পরই নিধি থেমে যায়৷ নিধি আরও কিছু বলতে নিতো৷ হঠাৎ করে থেমে যাওয়াতে অর্পি খুব ভয় পেলো৷ ঝড়ের আগে যেমন প্রকৃতি শান্ত হয়৷ তেমনই নিধি শান্ত হলেই কারো সর্বনা’শ কারো মুখে হাসি৷ অর্পি নিধিকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে,
“কোথায় হারিয়ে গেলি? কি হলো তোর? এভাবে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
.
নিধি অর্পির কোন কথা না বলে সেলুলার কামিজ ছেড়ে জিন্স আর টপস পড়ে নিল৷ জিন্সের পকেটে গুঁজে নিল তার স্পেশাল বন্দুক। অর্পি পথ আটকালে নিধি বলে উঠে,
“আমাকে আকটাতে আসবি না৷ আমি এখন নিষ্পাপ এক মেয়েকে উদ্ধার করবো। তনু হলো পুলিশ কমিশনারের মেয়ে৷ ডেবিল কিং কমিশনার সাহেবের মেয়েকে নিজের কাছে আটকে রাখে। কমিশনার সাহেবের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে হিরা দেশের বাহিরে প্রাচার করতে দিতে চায়৷ আমও তাদের স্বপ্নের বারোটা বাজিয়েছি৷ এখন মেয়েকে উদ্ধার করতে হবে৷”.
.
তুই একা তাদের সাথে লড়াই করতে যাবি৷ তুই একা এতগুলো লোকের সাথে পেরে উঠতে পারবি না৷
.
আমি একা নয়৷ আমার পুরো দল আমার সাথে যাবে৷ চিন্তা করিস না৷ আজ ডেবিল কিং এর সন্ধান নিয়েই ফিরবো৷ তার হাত থেকে আমাদের এই দেশকে বাঁচাবো৷
_____
নিরব তার দলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে ফেলে৷ প্রায় সবাই তাদের ক্যাম্প থেকে চলে যায়৷ রয়ে যায় কিছু পাহারাদার ব্যক্তিবর্গ৷ তারা কমিশনার সাহেবের মেয়েকে পাহারা দিচ্ছে৷ নিধির দল নিরবের ক্যাম্প চারদিন থেকে ঘেরা করে ফেলে৷ সুযোগ বুঝে সবাই দলে দলে প্রবেশ করে৷ তাদের দেখে ভয়ে ভয়ে তনুকে ডেবিল কুইন এর হাতে তুলে দেয়৷ তনুকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়৷ তারপর নিধি বলে উঠে,
” এদের হাত পা বেঁধে গাড়িতে তুলো।”
.
নিধির কথামতো নিরবের লোকদের গাড়িতে তুলে৷ নিধি নিরবের গোডাউন বোম মে’রে উঠিয়ে দেয়৷ নিধি কিছুটা তৃপ্তি পায়। নিধির শুধু মন বলছে এভাবে ডেবিল কিং কে দুনিয়া থেকে নিঃশেষ করে দিতে পারলে আমার আত্মা একটু শান্ত পাবে৷
.
নিরবের চারজন লোককে আলাদা আলাদা রুমে হাত পা বেঁধে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। নিধির হুকুমে সবাইকে এক রুমে জড়ো করা হলো৷ নিধি তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“তোদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই৷ তোদের আমি ছেড়ে দিবো৷ যদি তোরা আমার কথামতো কাজ করিস৷”
.
চার জোড়া চোখ একে অপরের দিকে তাকায়। চার জোড়া চোখ কি বলবে বুঝতে পারছে না? চোখের ইশারার মুখের স্কচটেপ খুলে দিতে বলে৷ নিধি তার দলের লোকদের ইশারায় মুখের স্কচটেপ খুলে দিতে বলে৷ নিধির পারমিশন পেয়ে স্কচটেপ খুলে দেয়৷ তাদের মাঝখানে থেকে একজন বলে উঠে,
“আমাদের কিছু করবেন না৷ আমরা আপনার সব কাজ করে দিবো৷”
.
নিধি লোকটির মাথা উঁচু করে বলে উঠে,
“তোদের কিছু বলতে হবে না৷ তোরা শুধু তোদের লিডারের নাম বলতে হবে৷ তারপর তোদের মুক্তি।”
.
শুকনো ঢোক গিলে বলে উঠে,
“আমরা কখনও আমাদের স্যারের নাম শুনি নাই৷ তিনি সব সময় মুখে মুখোশ পড়ে থাকতেন৷”
.
নিধি মুচকি হেঁসে,
“তোদের মতো সৎ লোককে আমার দলে রাখা উচিত৷ তোদের মনে কোন সংকোচ নেই৷ অতি সহজেই বলে দিলি৷”
.
খুশিতে আত্মহারা হয়ে,
“আমাদের আপনার দলে রাখেন। কথা দিচ্ছি দেহের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে আপনার হয়ে কাজ করবো।”
.
কথাটা শেষ করতে দেরি হলেও মুখে কষিয়ে থাপ্পড় পড়তে দেরি হয়নি৷ নিধি হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“এদের থ্রাড ডিগ্রির ব্যবস্থা করো”
.
নিধির কথামতো প্রত্যেকের একটা করে আঙুলের নখ তুলে ফেলা হয়৷ তাদের চিৎকারে সমস্ত ভবন কেঁপে উঠে৷ নিধি মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“তোদের হাতে এখনও সময় আছে সত্য কথা বল। সত্য কথা বললে তোদের কোন ক্ষতি করবো না৷”
.
অন্য একজন বলে উঠে,
“জীবন দিয়ে দিবো তবুও স্যারের নাম তোকে বলবো না৷ শুধু জেনে রাখ তোর আয়ুষ্কাল খুব অল্প। আমাদের চিন্তা না করে তোর চিন্তা কর।”
.
নিধি অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠে,
“আমার চিন্তা আমি করিনা৷ আমি মারা গেলে আমার মতো হাজার হাজার ডেবিল কুইন আমার তৈরি হবে৷ তোদের মতো দুষ্টু লোকদের শাস্তি দিতে বর্তমানে আমি একাই যথেষ্ট।”
.
নিধি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে,
“কাঁটারি টা আমার কাছে দেও৷ এদের সাথে একটু প্রেমের আলোচনা করি৷”
.
“তুই আমাদের মেরে ফেললেও কিছুতেই তুই আমাদের স্যারের কাছে পৌঁছাতে পারবি না৷ তুই আমাদের মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারবি না৷”
.
নিধি লোকটার চুল খাম’চি দিয়ে ধরে,
“তোদের আমি মারবো, কে বলল? তোদের মারলে তো আমার একটা গুলির যথেষ্ট। আমি তোদের বাঁচিয়ে রাখবো৷ তোরা মরার জন্য আমার পায়ের কাছে আসবি৷ মৃ”ত্যু’কে উৎসর্গ করার জন্য আকুল আবেদন করবি৷”
.
নিধি ইশারা দিয়ে সকলের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে বলে৷ নিধির ইশারা পেয়ে সকলের মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ নিধি সবার একটা করে আঙুল কেটে দেয়৷ প্রথম লোকের মুখের স্কচটেপ খুলে দেয়৷ নিধি চোখ পাকিয়ে বলে উঠে,
“তোদের সাহস দেখে আমি খুব খুশি। তোদের সাহসের প্রশংসা করতে হয়৷ তুই বেশি কথা বলতি৷ তোর মুখ থেকেই আমি তোদের অন্ধকার জগতের ডেবিল কিং এর সন্ধান জেনে ছাড়বো৷”
.
নিধি লোকটির প্রতিটি আঙুল দিয়ে গরম সুচ ঢুকাতে থাকে৷ উনার চিৎকারে সমস্ত রুম কেঁপে উঠে৷ চিৎকারে প্রকৃতিও কেঁপে উঠছে। চোখ থেকে অনবরত রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না৷ ওয়াদা করেছে কখনও নিরবের নাম বলবে না। লোকটি হাসতে হাসতে বলে উঠে,
“সামান্য টর্চারে আমি সব বলে দিবো৷ তবে মানতে বাধ্য তুই অন্ধকার জগতে ডেবিল কুইন।”
.
নিধি কর্কশ কন্ঠে উচ্চ গলায় বলে উঠে,
“মুখ খোলা না অব্ধি এক ফোঁটা জলও দিবে না৷ দেখি মুখ না খুলে কতোদিন বাঁচতে পারে৷”
।
আকাশের দিকে তাকিয়ে নিরব বলে উঠে,
“ডেবিল কুইন আমি তোকে কিছুতেই ছাড়বো না৷ আমি তোর সাথে সরাসরি মোকাবেলা করতে আসছি৷ তোর প্রতিটি কাজের জন্য তোকে শাস্তি দিবো৷ চিৎকার করে তুই আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবি৷ কিন্তু তোর কোন ক্ষমা নেই৷”
.
কমিশনার সাহেব নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে থাকেন৷ মা হারানো মেয়ের দিকে তাকাতেই বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করে৷ আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“মামুনি তুমি ঠিক আছো! তোমার কোন ক্ষতি করেনি৷ সৃষ্টি কর্তাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমার মেয়েকে একদম ঠিক রেখেছেন।
চলবে….