স্পাইসি_লাভ #পর্ব_০৪

0
229

#স্পাইসি_লাভ
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

“আমরা কেউ তাদের হ’ত্যা করিনি৷ তাদের উপর কে এভাবে হামলা চালাবে, ভাবতেই পারিনি? তাছাড়া আমাদের গোডাউনের চারপাশে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে৷ আমরা সবাই বরং সিসি ক্যামেরাতে সেই কাল সা’পের চরিত্র সম্পর্কে জানতে পারবো৷ কে আমাদের খেয়ে আমাদের পিছন থেকে ছুরি মারছে?”
মিরা ক্ষেপে বলে উঠে।
.
নিধি হাত তুলে বলে উঠে,
“এমন কোন কিছু করতে হবে না৷ আমি আমাদের লোকদের নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করি৷ এটা হইতো ডেভিল কিং এর কাজ৷ তাদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার মূল কারণ হলো তাদের মুখ বন্ধ করা৷ আমি চাইনা এই নিয়ে নিজেদের মাঝে বিষাদ ঘটে তুলতে৷”

নিধির বিশস্ত কর্মী মিরা বলে উঠে,
“ম্যাম আপনার ধারণা ভুল৷ গতকাল রাতে আমি সব সময় গেইটের আশেপাশে ছিলাম৷ একটা পিঁপড়া ঢুকলেও জানতে পারতাম। যেখানে জল জ্যান্ত কেউ ঢুকবে এবং বের হবে আমার চোখে পড়বে না৷”
.
নিধি অন্য আরেকজন বিশস্ত কর্মী নিয়ন বলে উঠে,
“ম্যাম আপনি আবারও ভুল করছেন৷ কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক নয়৷ এই জগতে আমি নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারিনা। আর আপনি গোটা ট্রিমকে বিশ্বাস করে ফেলছেন৷”
.
নিধি মুচকি হেঁসে জবাব দেয়,
“বিশ্বাস অর্জন করতে হয়৷ আমাদের এখানে সকল লোক আমার কাছে বিশ্বাস অর্জন করেছে৷ আমি চাইনা সে বিশ্বাসের অমর্যাদা করুক৷ আর হ্যাঁ এ কাজ কে করেছে আমি জানি?”
.
মিরা এবং নিয়ন দু’জনে এক সাথে চকিত হয়ে বলে উঠে,
“কি! আপনি জানেন তাহলে শাস্তি দিচ্ছেন না কেন? কে এই কাজ করেছে? আমাকে বলেন আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিবো৷ তাকে বুঝিয়ে দিবো পিছন থেকে ছুরি মারলে মৃ’ত্যু অবধারিত।”
.
নিধি মিরার দিকে চোখ টিপল দিয়ে বলে উঠে,
“গতকালের সমস্ত সিসি টিভির রেকর্ড রিমুভ করে দাও৷ আমি চাইনা এ কথা সবার জেনে যাক৷”
.
মিরা চোখ টিপলের অর্থ বুঝতে পারে৷ যার অর্থ হলো সিসি টিভির রেকর্ড আগে ফোনে সেভ করার পর সেখান থেকে রিমুভ করতে বলা৷ মিরা চোখের ইশারায় বলে, ‘কাজ হয়ে যাবে৷ কোন চিন্তা করতে হবে না।’
.
নিয়ন ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠল,
“ম্যাম আপনি এমন ভুল করবেন না৷ আপনাকে অনেক প্রস্তাতে হবে৷”
.
নিধি নিয়নের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না৷ তুমি মেয়েগুলোকে তাদের বাসায় পৌঁছে দাও৷ তাদের মা বাবা তাদের নিয়ে অনেক চিন্তা করছে৷ প্রত্যেক মা বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকন্যা। তাদের মা বাবার হাতে বিশ হাজার টাকা দিয়ে আসবে৷ আর মেয়েদের ভালোভাবে দেখাশোনা করতে বলবে?
.
নিয়ন মাথা নিচু করে বলে উঠে,
“আপনি যেমনটা বলবেন তেমনই হবে৷ আপনার কথা অমান্য করবো না৷ কিন্তু আমার কথা মাথায় রাখবেন৷ আপনি সিসি ক্যামেরার রেকর্ড রিমুভ করে ভুল করলেন।”
.
নিয়ন চলে যেতেই মিরা এসে বলে উঠে,
“কাজ হয়ে গেছে ম্যাম৷ আপনার ফোন চেক করতে পারেন৷”
.
নিধি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আজ রাতে আমাদের একটা বড় মিশনে বের হতে হবে৷ সবাই প্রস্তুত থাকবে৷”
.
নিধি কোন কথা না বলে ভার্সিটিতে চলে আসে৷ মাঝে মাঝে ভাবতেই অবাক লাগে। তার ভয়ে পুরো দুর্নীতি বাজ ভয়ে কাঁপে। নিধি মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে,
“আমি এতো অল্প সময়ের মাঝে কিভাবে অন্ধকার জগতকে আপন করে নিলাম? আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা কিভাবে ভুলে গেলাম? এইতো তিন বছর আগেও আমি একজন সাধারণ মানুষ ছিলাম৷ আজ হয়ে উঠেছি ডেভিল কুইন। যার বুকে ছিল মানুষের জন্য অন্ধ ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস। আজ সেই বুকে মানুষের প্রতি ঘৃণা৷ কি থেকে কি হয়ে গেছে?”
টুপ করেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। শিক্ষকের ধমকের শব্দে ঘুর কাটে নিধির। নিধি ধর ফুরিয়ে উঠে দাঁড়ায়৷ আমতা আমতা করে বলে উঠে,

“আসলে স্যার বাসার কথা খুব মনে পড়ছিল৷ তাই অন্য মনস্ক হয়ে গেছিলাম৷ এমন আর হবে না৷”
.
স্যার কিছু না বলে চলে আসেন৷ ক্লাস শেষ করে বকুলতলায় বসে কানে ইয়ারফুন গুছে মন দিয়ে সিসি ক্যামেরার রেকর্ড দেখতে থাকে৷ কে এমন বিশ্বাস ঘাতক করতে পারে? অর্পি নিধির ঘা ঘেঁষে বসে৷ নিধিকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে,
“এতো মনোযোগ সহকারে কি দেখছিস? তোকে নার্ভাস দেখাচ্ছে কেন?”
.
নিধি অর্পিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়৷ অর্পি কিছুই বুঝতে পারলো না৷ অর্পি নিধির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে৷ কান্না করতে বাঁধা দিচ্ছে না৷ নিধির মনে অনেক কষ্ট৷ কান্না করলে একটু কষ্ট কমে যাবে৷ অনেকক্ষণ পর নিধি নিজে থেকেই বলে উঠে,
“অর্পি তুই সাবধানে থাকিস৷ আমার খুব ভয় হচ্ছে তোকে নিয়ে৷”
.
অর্পি মুচকি হেঁসে,
“তুই বিপদজনক কাজ করিস৷ আর ক্ষতি আমার হবে৷ আমার চিন্তা হয় তোর জন্য৷ তুই এসব কাজ ছেড়ে আমাদের কাছে আবার চলে আয়৷ আবার এক সাথে আমরা মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবো৷”
.
নিধি অর্পির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসে৷ কথা ঘুরিয়ে বলে উঠে,
“আজ রাতে আর ফিরবো না৷ বেঁচে থাকলে কাল দেখা হবে৷”
.
অর্পিকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিধি সরাসরি গোডাউনে চলে আসে৷ নিধি জয়কে ঢেকে আলাদা রুমে নিয়ে আসে৷ জয়কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
“কবে থেকে ডিভিল কিং এর হয়ে কাজ করছো?”
.
নিধির কথা শুনে চকিত হয়ে উঠে জয়৷ ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে ঘামতে শুরু করে৷ নিধি জয়ের চারিপাশে একবার রাউন্ড করে বলে উঠে,
“কি হলো মি. জয়৷ কবে থেকে ডেভিল কিং এর হয়ে কাজ করছো? কোন জবাব দিচ্ছো না কেন?”
.
জয় মুচকি হেঁসে,
“ম্যাম আপনি এসব কি বলেন? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না৷ আমাদের চির শত্রু ডেভিল কিং এর সাথে কাজ করতে যাবো৷ আপনি কিভাবে ভাবতে পারবেন?”
.
জয় তুমি ভালো করেই জানো৷ আমি মিথ্যা সহ্য করতে পারিনা৷ আমার কাছে প্রমাণ আছে৷ তুমি নিজের হাতে লোক চারটিকে খু’ন করেছো৷
.
আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন।
জয় কথা শেষ করতে পারলো না৷ তার আগেই জয়ের গালে ঠাস করে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ জয়ের সামনে সিসি ক্যামেরার রেকর্ড তুলে ধরে৷ জয় নিধির পা ধরে জবাব দেয়,
“আমাকে ক্ষমা করে দেন ম্যাম৷ আমি টাকার লোভে এসব কাজ করিনি৷ ডেভিল কিং আমার ছেলে, স্ত্রীকে আটকিয়ে রেখেছে৷ আমি যদি এমন কাজ না করতাম তাহলে আমার ছেলে, স্ত্রীকে সে মেরে ফেলতো৷”

নিধি জয়ের শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে৷ হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“তুমি এ কথা আমাকে একবারের জন্য জানিয়েছিলে? আর হ্যাঁ তোমার খবর ডেভিল কিং কিভাবে জানলো?”

ম্যাম গতকাল রাতে জঙ্গলে আমার আইডি কার্ড পড়ে যায়৷ সেখান থেকেই আমার খবর জানতে পারে৷ তাই রাতে বাধ্য হয়ে আমি এমন কাজ করেছি৷

তোমাকে এখন ডেভিল কিং এর হয়ে কাজ করতে হবে৷ আমাকে তার সমস্ত চাল চলনের খরব দিবে৷ চালাকি করার চেষ্টা করলেও তোমার জীবনের ইতি টেনে আনবো৷ কারণ ডেভিল কিং এর দলে আমার আরও সাতজন লোক আছে৷ তাদের কাছে তোমার জানাবো৷ কোন কিছুতে ভিন্ন দেখলে.. বুঝতেই পারছো।
.
জয় কাঁদু কাঁদু চোখে বলে উঠে,
“আপনি যেমনটা বলবেন তাই হবে৷ আপনার লোক তাদের দলে সাতজন আছে এটা আমি বলবো না৷ আমার ছেলে স্ত্রীকে তার হাত থেকে বাঁচান৷

সে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি ঠিক সময় ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো৷

অভ্র নিরবের সামনে এসে বলে উঠে,
“ডেভিল কুইন আমাদের চিঠির কোন রিপ্লাই দিল না তো৷ সে তো ধীরে ধীরে আমাদের সব কিছু দখল করে নিচ্ছে ।”

মুচকি হেঁসে,।
ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই৷ আমার জানা মতে ভেডিল কুইন এখনও অনেক ছোট৷ সে আমাদের কাছ থেকে দুইটা ব্যবসা কেঁড়ে নিয়েছে৷ এখনও অনেক ব্যবসা আছে৷ আমার সাথে কুটনীতিতে পেরে উঠবে না৷”

অভ্র চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠে,
“আমার ভয় হচ্ছে৷ আমাদের কাঠ চুরাচালির কথা ডেভিল কুইন জেনে গেছে৷ জয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছি আজ রাতে ডেভিল কুইন একটা বড় মিশনে যাবে৷ কিন্তু মিশন সম্পর্কে কাউকে কিছু বলেনি।”

কাঠের কথা জেনে গেছে৷ আজ কাঠ কাটা হবে না৷ আজ শুধু দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো হবে৷ ডেভিল কুইনকে নিজ হাতে হ’ত্যা করার পর আর এই দেশে থাকবো না৷ বিদেশ থেকে সকল নির্দেশনা দিবো।
.
ওকে স্যার আজ রাতে কাঠ কাটা বন্ধ। আজ আমরা কাট কাটার মিশনে যাবো না৷ আজ শুধু বাহিরের দেশে টাকা পাঠাবো৷ এই দেশটাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বো৷


রাতের আঁধারে এয়ারপোর্টের কাছে আসতেই নিরবের গাড়ি ঘিরে ফেলে৷ নিরব সুযোগ বুঝে নিজের প্রাণ নিয়ে কোন রকম পালিয়ে আসে৷ আবারও তাদের মিশনে জল ঠেলে দেয় ডেভিল কুইন। নিরবের কোটি কোটি টাকা এখন সরকারের হাতে৷ নিরব খুব ক্ষেপে আছে ডেভিল কুইনের উপর৷ ডেভিল কুইনকে তার খরব দিচ্ছে কে? নিরব তার লোকদের সবাইকে এক জড়ো করে৷ সাথে জয়কেও৷ যদিও জয় তাদের তাদের টাকা প্রচার করার সম্পর্কে কিছুই জানে না৷
.
সকলের নিরবের সামনে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ ডেভিল কুইন কথায় কথায় কাউকে দুনিয়া থেকে না সরালেও ডেভিল কিং কথায় কথায় তার লোকদের গুলি করে৷ তার কাছে মানুষের জীবন যেন পুতুল খেলা৷ ভালো না লাগলেই গুলি করে মেরে ফেলে। যার জন্য সকলের ভয়টা অনেক বেশি৷
.
নিরব হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“আমাদের এখানকার খবর ডেভিল কুইনকে কে দিচ্ছে? আজ আমার মাথা একদম নষ্ট। কোন জবাব না পেলে সবাইকে এক এক করে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবো৷”
.
সবাইক এক সাথে বলে উঠে,
“আমরা কখনও আপনার দেওয়া শপথ ভাঙতে পারবো না৷ আমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে ডেভিল কুইন কে চিনে? আপনার টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলে৷ আমরা এমন কোন কাজ করবো না যে আমাদের সংসারের অধপতন হোক৷”
.
নিরব মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে৷ কে এমন কাজ করতে পারে? সবাই জীবনের মায়া করে৷ কেউ নিজের ইচ্ছাতে জীবন ত্যাগ করতে চাইনা৷ তাহলে কে?
.
নিরবের ভাবনার মাঝে অভ্র এসে বলে উঠে,
“স্যার ডেভিল কুইন আমাদের সাথে দেখা করতে চাই৷ ২৪ তারিখ রাত ১২ টা নিউমার্কেট পার্কে দেখা করবে?”
.
নিরব মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“ডেভিল কুইনের শেষ রাত হবে ২৪ তারিখের রাত। সকল ধরনের কাজের হিসাব নিবো৷ এতোটা শাস্তি দিয়ে হ’ত্যা করবো সারা পৃথিবী কেপে উঠবে৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here