? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 15,16
ফাতেমা তুজ
15
অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। কিন্তু আমার চোখ জোড়া যাকে খুঁজে চলেছে সেই মানুষটির দেখা নেই।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছি না।মন টা অস্থির লাগছে কিছুই ভালো লাগছে না।এর মাঝে কয়েকবার ডাক্তার এসে খবর নিয়ে গেছেন। কিছুক্ষণ আগে নার্স এসে আমার স্লাইন বদলিয়ে গেছেন। ফারহান ভাইয়ার করা নির্দেশ পেসেন্ট কে একা রাখা যাবে না।এক মুহূর্তের জন্য এরা আমাকে একা রেখে যায় নি।সেই কাল রাতে গোসল করেছি।
বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে গোসল করার , আমি যতো শীত হোক না কেন কখনো গোসল মিস করি না।গোসল না করলে শান্তি পাচ্ছি না।নার্স কে বললাম গোসল করবো কিন্তু নার্স মুখের উপর না করে দিলেন।ওনার ভাষ্য মতে
-ফারহান স্যার না আসা অব্দি ম্যাম কোনো ডিসিশন নেওয়া যাবে না।
( এই বিশাল মাপের নার্সিংহোম টা ফারহান ভাইয়ার বাবার। ফারহান ভাইয়ার বড় ভাইয়া ডক্টর হতে চান।
তিনি আমেরিকা তে এমবিবিএস পড়ছেন।যার জন্য বাংলাদেশে ছয়টা নারসিংহোম করেছেন ওনার বাবা।
ছেলে মেয়েদের অসম্ভব ভালো বাসেন। অল্প বয়সে বিয়ের পিরিতে বসেন ফারহান ভাইয়ার বাবা অর্থাৎ ফরহাদ চাচ্চু। ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি।তখন রোমা আন্টি অথার্ৎ ফারহান ভাইয়া আম্মু মাত্র দশম শ্রেণীর ছাত্রী বয়স সতেরো আর চাচ্চু অনার্স প্রথম বর্ষের বয়স একুশ। ফারহান ভাইয়ার নানা আন্টিকে তার ভাইয়ের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাওয়ায় তাদের এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের পিরিতে বসতে হয়। ফারহান ভাইয়ার নানা অসম্ভব ভালোমানুষ মেয়ের এক কথাতেই রাজি হয়ে যায়।কিন্তু শর্ত ছিলো এখনি বিয়ে করতে হবে।যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।
ওনাদের বিয়ের দু বছরের মাথায় রাফান ভাইয়া হন।
আর তারপর যখন রাফান ভাইয়ার তিন বছর তখন এই বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়ার আগমন হয়।
যাতে আমাকে জ্বালাতে পারেন।তবে ফারহান ভাইয়ার ছোট বোন রিমি অনেক ভালো। আমরা সমবয়সী রিমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ঢাকাতে আমাদের হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।কিন্তু ইদানিং এই রিমি টা না কেমন হয়ে গেছে।জানি না কেন এমন করছে ওও। আগে রোজ কথা বলতাম আর এখন সপ্তাহে একবার। ঢাকায় ব্যাক করে মেয়েটার সাথে কথা বলতে হবে আমায় ।)
এই সব ভাবতে ভাবতে প্রায় সন্ধ্যা ছয় টা বেজে গেছে ।
ফারহান ভাইয়ার দেখা নেই।বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর আরো ক্লান্ত লাগছে। নার্স কে ডাকলাম নার্স আমাকে বলল
– ইয়েস ম্যাম।কোনো সমস্যা হচ্ছে?
আমি বললাম ” না তেমন কিছু না।কিন্তু বেশ অস্বস্তি হচ্ছে একে তো গোসল করি নি আর তার উপর সেই কখন থেকে শুয়ে আছি। আপনাদের ফারহান স্যার না আসা অব্দি গোসল না করতে পারি একটু ব্যলকনিতে যেতে পারি কি?”
নার্স কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন।ওনি কি বলবেন ওনার স্যার তো পারমিশন দিয়ে যান নি তাই না।
ওনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আম সরি ম্যাম।এক্সচুয়ালি স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি আপনাকে ব্যলকনিতে ও নিতে পারবো না।
আমি ওনার কথায় মন খারাপ করে বসে রইলাম
তারপর বললাম
– ইটস ওকে। আপনি
আমার কথা শেষ হতে না দিয়ে কোথাও থেকে আগমন ঘটলো ফারহান ভাইয়ার। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
ফারহান ভাইয়া শার্টের হাতা গুজতে গুজতে বললেন
-থ্যাংকস নার্স।আপনি খুব ভালোভাবে আপনার ম্যামের খেয়াল রেখেছেন ।
নার্স হালকা হেসে বললেন
– ইটস মাই ডিউটি স্যার।
ফারহান ভাইয়া একটা খাম বের করে নার্স কে দিলেন।
নার্স আশ্চর্য হয়ে বললেন
– এটা কি স্যার?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আপনার হাসবেন্ডের অপারেশনের জন্য ষাট হাজার টাকা লাগবে তাই না?
নার্স দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– ইয়েস স্যার।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– এতে এক লাখ টাকা আছে।আপনার হাসবেন্ডের অপারেশন আর বাচ্চার পড়াশুনার জন্য।
নার্সের চোখের কার্নিশে পানি চলে আসলো। নার্স কি বলবে বুঝতে পারছে না।ওনি এই হসপিটালে এক মাস হলো চাকরি নিয়েছেন। এই মুহূর্তে হসপিটাল থেকে লোন নিতে পারবেন না ওনি। হসপিটাল অথরিটির কাছে কোনো স্টাফের চাকরির ছয় মাস না হওয়া অব্দি লোনের পারমিশন নেই। কিন্তু ওনার হাসবেন্ডের অবস্থা খুব ই খারাপ। ওনি অনেক জায়গায় লোন নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পায় নি।আজকে সকালে ফারহান ভাইয়া আমাকে হসপিটালে নিয়ে আসার সময় ওনাকে এইসব কথা কাউ কে ফোনে বলতে শুনেছেন।আর তাই ফারহান ভাইয়া আমাকে দেখে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে ওনাকে নিয়োগ করেন।আর উনি ওনার দায়িত্ব যথাসম্ভব খুব ভালো ভাবে পালন করেন ও।
নার্সের মধ্যে টাকাটা নিতে সংকোচ দেখা গেল।ফারহান ভাইয়া বললেন সংকোচ করবেন না আমি দয়া করছি না।আপনাকে আপনার পাপ্যটাই দিচ্ছি।এই যে আপনি আপনার ম্যাম কে নিজের ছোট বোনের মতো ট্রিট করলেন এটা তার সম্মান প্রদর্শন মাত্র , নিন। নার্স চোখের কার্নিশ থেকে পানি মুছে বললেন
– আম রিয়েলি রিয়েলি গ্রেটফুল স্যার।থ্যাংকস স্যার , থ্যাংকস আ লট।
তারপর নার্স টাকা টা গ্রহন করলেন।আমি শুধু চেয়ে আছি।
এতো অস্বস্তির মাঝে ও ভালো লাগা কাজ করছে।শান্তি লাগছে অনেক এই রকম কতো জনে পারে তাই না, মন টা নিমেষেই ভালো হয়ে গেলো।
নার্স আরো কিছুক্ষন থেকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।
নার্স চলে যাওয়ার পর ফারহান ভাইয়া রুমে রাখা টু সিটের সোফা টাতে পা উঠিয়ে আধ শোয়া হয়ে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর পর মাথায় হাত দিচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে মাথা ব্যথা করছে।আমার কেমন যেন খারাপ লাগলো।সবাইকে আমার জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল কিন্তু আমার অস্বস্তি কাটছে না। আমি বললাম
– স্যার মাথা ব্যথা করছে।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– নাহহ তেমন কিছু না।
তারপর আমার কাছে এসে বেডের পাশে রাখা ঢুল টাতে বসলেন আর বললেন
– ফারাবি শোন, আমাকে আর স্যার বলতে হবে না তোকে।
আমি হা হয়ে গেলাম আর তারপর ই বললাম
– আপনিই তো বলেছিলেন স্যার বলতে।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষন ভেবে বললেন
– এখন আর প্রয়োজন নেই।তুই এখন মন দিয়ে পড়ছিস তাই।
আমি বললাম
– ওও আচ্ছা তাহলে কি বলব?
এমন প্রশ্ন করে আমি বেক্কেল বনে গেলাম।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– কেন?শুধু ফারহান বলতে চাচ্ছিস?
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম
– নাহহ নাহ না।আমি তা বলতে চাই নি।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– শুধু ফারহান বললেও সমস্যা নেই। কিন্তু এখনো সবার সামনে ভাইয়া ই বলতে হবে। সবার আড়ালে ফারহান বলতেই পারিস।
আমার অনেকটা কাছে এসে এই কথা টা বলেই চোখ মারলেন।আমি বিব্রত হয়ে বললাম
– মানেন
ফারহান ভাইয়া আমার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বললেন
– মানে কিছু ই না, তুই একটা বাচ্চা এটা তার ই প্রমান।
আমি কিছুই বুঝলাম না আজব তো এখন আর কোনো প্রশ্ন করলে এই লোকটা আমাকে আর ও কি কি বলবে কে জানে। তাই চুপ হয়ে রইলাম। তারপর ই ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– একটা কথা বলব
ফারহান ভাইয়া বললো
– পরে বলিস।
আমি বললাম
– কেন?
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল
– ছি ফারাবি শরীর দিয়ে উগ্র গন্ধ বের হচ্ছে।
আমি ভ্রু কুচকালাম।ওনি ফিক করে হেসে বললেন
– আরের মজা করছিলাম। তুই তো গোসল করিস নি তাই এখন তোকে গোসল করাবো।
আমি চমকে গেলাম তারপর তুতলিয়ে বললাম
– আপপনিনন করাবেন মানে?
-আরে আমি করাবো না, তোর গোসলের ব্যবস্থা করাবো গাঁধা।
ওনি আমার কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
– আমার হাতে গোসল করতে চাচ্ছি নাকি?
আমি তুতলিয়ে বললাম
– নাহহ তোতত।
ওনি আবার হাসলেন।আজকাল এই লোকটা একটু বেশি ই হাসছেন।অবশ্য হাসলে ওনাকে খারাপ লাগে না উল্টো বেশ ভালো লাগে।স্নিগ্ধ হাসিতে যেন ওনাকে আর ও সুন্দর করে তুলে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে বললেন
– আমাকে তুই একটু বেশি ই ভয় পাস।বাট আই লাইক ইট।
ফারহান ভাইয়া কে একটা কিছু বলতে যাবো তখনি নার্স এসে বললেন
– স্যার অল কামপ্লিট।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– ওকে।
আমি হা হয়ে আছি। নার্স কি কামপ্লিট করার কথা বললেন তা আমার বোধগম্য হলো না।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 16
_________________________
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া সাথে করে দুই জন নার্স নিয়ে এসে বললেন।নার্স ওকে উঠিয়ে নিয়ে যান আর যা যা বলা হয়েছে মিস যেন না হয়।
নার্স দুটো আলতো হেসে বলল
– ডোন্ট ওরি স্যার। উই উইল মেনেজ।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ইয়া প্লিজ গো এন্ড ডু ফাস্ট।
আমি এদের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি।
এরা কেউ আমাকে কিছু বলছেই না।
নার্স দুটো আমাকে আলতে ভাবে উঠাতে আসলেন।
কিন্তু আমি উঠতে রাজি নই। কারন আমি জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ফারহান ভাইয়া কিছু টা বিরক্ত হয়ে বললেন
– ফারাবি টাইম নেই।এমন করছিস কেন?
আমি বললাম
– কিন্তু আমি কোথায় যাচ্ছেন সেটা তো বলুন।
ফারহান ভাইয়া আবার দুষ্ট বুদ্ধি চাপলেন।আমার কাছে এসে বলল
– জানতে চাস কোথায় নিয়ে যাচ্ছি তোকে?আমি ভেবলার মতো তাকিয়ে বললাম
– এতক্ষণ তো তাই বললাম।
ফারহান ভাইয়া দুষ্ট হাসি দিয়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– গোসল করাতে নিয়ে যাচ্ছি। আমি করিয়ে দিই?
তুই বোধহয় সেটাই চাচ্ছিস?আমার কিন্তু সমস্যা নেই। ছোট সময়ের মতো।
এই বলেই ভ্রু নাচালেন।আমি হতচকিয়ে বললাম
– এই নাহহ যাচ্ছি আমি।
কিন্তু নার্স দুটো এতক্ষণ বাইরে বেরিয়ে গেছে। আমি অসহায় দৃষ্টি তে ফারহান ভাইয়ার দিকে চেয়ে আছি।
ফারহান ভাইয়া ঠোঁটের কোনে হাসি লাগিয়ে বললেন
– আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।
তারপর ফারহান ভাইয়া আমাকে অতি যত্নে উঠালেন।
বেড থেকে নামতেই পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম।ফারহান ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেললেন।তারপর একটু মুখ টা শক্ত করে বললেন
– ফারাবি। কেয়ার লেস কেন এতো তুই।আমি না থাকলে কি হতো বল তো?
তারপর ই ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– ওওও শীট।সরি ফারাবি আমার খেয়াল ই ছিল না তুই যে হাঁটতে পারছিস না।
আমি চুপ হয়েই রইলাম।একটা কথা ও বললাম না,আর না ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমাকে শুধু শুধু বকা দিলেন।এবার আমার কোনো দোষ ছিলো ই না।ফারহান ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর নত সুরে বলল
– আম সরি।ভুল তো ফারহানের ও হতে পারে। তাই বলে এমন করবি?
একদম বাচ্চা দের মতো করে বললেন ওনি!না চাইতে ও ওনার দিকে চোখ চলে গেল।ওনার এমন অপরাধবোধ হওয়া মুখ টা দেখে নিমেষেই সব কিছু ভুলে গেলাম। তারপর হাসি মুখেই বললাম
– ইটস ওকে।
ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না।নার্স দুটো আবার চলে এসেছে ওনি আমাকে বাথরুম অব্দি পৌছে দিলেন।
তারপর নার্স দের বললেন “ওকে গোসল করিয়ে দিন।”
আমি ফারহান ভাইয়ার এমন কথায় অবাক হয়ে গেলাম।ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেছে।
ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন তারপর বললেন
– কি হয়েছে কি?
আমি বললাম
– ওনারা আমাকে গোসল করিয়ে দিবে?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হ্যাঁ তো কি হয়েছে কি?
আমি বললাম
– আমি একাই গোসল করব প্লিজ।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমার কথা শুনতে নারাজ।
তিনি তার কথাতেই অটল রইলেন।আমি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম
– আমি পারবো না।কারন আমার লজ্জা করে ওনারা আমার দিকে তাকিয়ে
এই কথা বলেই আর কিছু বলতে পারলাম না আমি।
ফারহান ভাইয়া বুঝতে পেরে নিঃশব্দে হাসলেন
তারপর বললেন
– আচ্ছা বুঝেছি।ওনারা তাকালেই তোর লজ্জা করছে?
তোকে নিয়ে তো ভবিষ্যতে বেশ সমস্যা তে পরতে হবে দেখছি।
ওনার শেষের কথা টা আমার বোধগম্য হলো না।আমি নিচু হয়েই আছি তারপর ফারহান ভাইয়া বললেন
– তোকে ওনারা হেল্প করবে।চেঞ্জ টা তুই করে নিস।
আমি নিচু হয়েই মাথা নারালাম।তারপর নার্সরা বাথরুমের ভেতর থেকে বললেন
– স্যার ম্যাম কে নিয়ে যাবো।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুম নিয়ে যান।
তারপর নার্স রা আমাকে নিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখলাম সম্পূর্ণ গরম পানির ব্যবস্থা।সাথে হাইজিন মেন্টেন করার মেডিসিন।আর সব কিছুই হাইজিন মেন্টেন করা।
তোয়ালে থেকে শুরু করে সাবান সব কিছুই স্পেশাল তাই তো বলি গোসলের জন্য এতো আহামরি কেন করছেন। আমি গোসল সেরে নিলাম। নার্স রা আমাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করলেন।ওনাদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি চেঞ্জ করে নিলাম। তারপর ওনাদের ডাকলাম কিন্তু ওনারা নেই।কারন ফারহান ভাইয়া ওনাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার ডাকলাম আমি, কারন উঠার মতো শক্তি আমার নেই।
ফারহান ভাইয়া বাইরেই দাড়িয়ে আছেন।তিনি বার বার ডাকতে শুনে বললেন
– আমি আসতে পারবো?
আমি হালকা স্বরে বললাম
– হ্যাঁ।
ফারহান ভাইয়া আমার অনুমতি পেয়ে চটজলদি আসলেন। এসে থমকে দাড়িয়ে রইলেন।আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম। ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে কানে কানে ফিসফিস করে বললেন
– ভেজা চুল নিয়ে কারো সামনে যেতে নেই। নাহলে, যা তা সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
আমি কিছু বলতে পারলাম না আর। আজকাল লোক টা কেমন যেন আচারণ করে। ফারহান ভাইয়া আমাকে উঠিয়ে আবার বেডে নিয়ে বসালেন। তারপর চুল গুলো মুছিয়ে দিলেন।যদি ও হীম লাগানো শীত তাতে ও শীত বস্ত্র প্রয়োজন হলো না। কারন পুরো হসপিটালে এসির ড্রাবল সিস্টেম আছে।অথার্ৎ ঠান্ডা বাতাসের পাশাপাশি গরম বাতাসের।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– এখন ঠিক লাগছে?
আমি বললাম
– হ্যাঁ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– কাকি এখনি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসবেন।
বারন করবি না, লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নিবি।
আমি উওরে মাথা ঝাকালাম। ফারহান ভাইয়া আমার চুল গুলো খুলে দিলেন যাতে শুকিয়ে যায়।তারপর দেখলাম নার্স আসছেন।ফারহান ভাইয়া নার্স কে বললেন
– ওকে আপনাদের ম্যাম কে দেখে রাখবেন। আমি আসছি
তারপর ফোন টা হাতে নিয়ে বললেন
– ফারাবি। ইটস 8’30 খেয়ে নিবি কিন্তু।
আমি মাথা ঝাঁকালাম।ফারহান ভাইয়া চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর আরেক জন নার্স এলেন। দুজোন নার্স আমার পাশে এসে বসলেন তারপর একজন নার্স হেসে হেসে বললেন
– ইউ আর সো লাকি ম্যাম। তাই তো এমন একজন হাসবেন্ড পেয়েছেন।আমি কখনো এমন জুনিয়র কাপল দের মধ্যে এতো কেয়ার দেখি নি।
আমি ওনার কথায় বিষম খেলাম সাথে কিছুটা লজ্জা ও পেলাম। তারপর অন্য একটা নার্স হেসে বললেন
– ইউ আর রং। ওনারা কাপল নয়।
প্রথম নার্স বললেন
– তাহলে?
দ্বিতীয় নার্স ঔষধ বেডের পাশের টেবিলে রেখে বললেন
– কাজিন বলতে পারো।ওনাদের দুজোনের বাবা খুব ভালো বন্ধু।
প্রথম নার্স বললেন
– ওওও। আম সরি।
আমি কিছু বলার আগেই দ্বিতীয় নার্স টি বললেন
– ভবিষ্যৎ বানী করতে পারছি না। তবে এদের কাপল হিসেবে বেশ মানাবে কিন্তু।
প্রথম নার্স আমার মুখে আলতো হাত ছুঁইয়ে বললেন
– যদি ও পিচ্ছি তবে মাশআল্লাহ।
আমি লজ্জা তে পরে গেলাম। এখন ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে। এরা কি সব ভাবছে যা কখনোই হবে না। ফারহান ভাইয়া আর আমি দুজোন না, না এটা আমি বা ওনি কেউ ভাবতে ও পারি নাহ।
এমন সময় আম্মু আর বড় মা কে দেখতে পেলাম। বড় মা এসেই আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। আমি আলতো হাসলাম। তারপর আম্মু বললেন
– এখন ঠিক লাগছে রে মা?
আমি বললাম
– চিন্তা করো না।আমি একদম ঠিক আছি।
তখনি দেখতে পেলাম রিফাত ভাইয়া, মনিকা আপু, চাচ্চু , বড় আব্বু আর আব্বু এসে হাজির।
সবাইকে একসাথে দেখে মনে প্রশান্তি জাগল। সবাই একে একে আমাকে আদর করে যাচ্ছে।কি মজা, আসলেই সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।
মনিকা আপু আর রিফাত ভাইয়া তো কথা কাটাকাটি তে পরে গেল।কারন তারা দুজোন ই আমাকে খাইয়ে দিতে চায় আমি ওদের কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসছি।
তখনি আমার ছোট চাচ্চু এসে প্লেট টা নিয়ে বললেন
– আমার আম্মি জান আমার হাতে খাবে।
এই কথাতে রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু দুজন ই চুপসে গেলেন। দুটোতে মুখ ফুলিয়ে রাখলো। হাহা এরা পারে ও বটে।
চাচ্চু আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।চাচ্চুর জন্য বেশ খারাপ লাগছে। ইসসস আজ যদি মনি আন্টি ও থাকতো।
আমার ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে আমি মনি আন্টিকে দেখতে পেলাম।পরক্ষণেই ভাবলাম ধুর মনি আন্টি আসবে কোথা থেকে!কিন্তু একি মনি আন্টি যে ক্রমশ আগাতে লাগলো। তার মানে মনি আন্টি এখানে আসছে। হাউ ইট পসিবল। ইটস ম্যাজিক? বাট এই ম্যাজিশিয়ান টা কে?উফফফ আমি আর ভাবতে পারছি না। মনি আন্টি একা নয় সাথে রাজিব চাচ্চু ও আছে।এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন!
আমার সকল ভাবনাকে অগ্রসর করতে না দিয়ে রাজিব চাচ্চু ছোট চাচ্চুর পিঠ চাপরে বলল
– কিরে বেটা। আমি থাকতে আমার আম্মি জান কে তুই খাইয়ে দিবি কাভি নেহি।টপারের সুযোগ পেয়েছিস ঠিক আছে কিন্তু আজকে আর তুই সুযোগ পাবি না।
এই বলে রাজিব চাচ্চু প্লেট নিয়ে আমাকে খাওয়াতে লাগলেন। রাজিব চাচ্চুর পুরো পরিবার আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। সবাই আমাকে খুব আপন করে নেয়। আজ কে অনেক বেশি স্নিগ্ধ লাগছে প্রশান্তি অনুভব করতে পারছি। কিন্তু এই সব ম্যাজিক করলো কোন ম্যাজিশিয়ান?
চলবে