স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part- 17,18

0
959

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part- 17,18

17

সবার সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প হলো।কিন্তু আমার মনের কোনে জমে আছে একটাই প্রশ্ন ম্যাজিশিয়ান টা কে?আমার বড্ড বাজে একটা স্বভাব যদি মনের কোনে কোনো প্রশ্ন জাগে , তাহলে তা না জানা অব্দি শান্তি নেই। যেমন টা এখন অনুভব হচ্ছে, মনের ভেতর প্রশ্ন গুলো খচখচ করছে কিছু তেই শান্তি দিচ্ছে না। কি অশান্তি রে বাবা , আচ্ছা এখানে কাউকে প্রশ্ন করব?ধ্যাত কি সব বলছি আমি, সবাই কি ভাববে যে আমি এই ম্যাজিক এ খুশি হই নি নাকি।কিন্তু ম্যাজিকটা হলো কোন ম্যাজিশিয়ান দ্বারা মনটা আনচান করছে। এমন সময় ফারহান ভাইয়ার উপস্থিতি তে আমি শিউরে উঠলাম। এই লোকটা ইদানিং কেমন উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে আমাকে ঘাবরে দেয়।

ফারহান ভাইয়া এসেই রিফাত ভাইয়ার সাথে গলা জড়িয়ে ধরে বলল
– কিরে ভাবিজান কে পেয়ে আমাকে ভুলেই গেছিস মনে হচ্ছে।

মনিকা আপু লজ্জা পেলো তারপর ফারহান ভাইয়া কে বলল
– ভাইয়া তুমি বড়দের সামনে কি সব বলছো!

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে মনিকা আপু কে বললেন
– দুইদিন বাদে বিয়ের পিরিতে বসবি আর এখন লজ্জা পাচ্ছিস।

রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে হালকা ধাক্কা মেরে বলল
– আব্বু সামনে দেখতে পাচ্ছিস না নাকি।

এবার বড় আব্বু মনিকা আপুর মাথায় হাত রেখে রিফাত ভাইয়া কে বললেন
– লুকিয়ে কি হবে।বিয়ে তো তোকে আমার মনিকা মামুনি কেই করতে হবে।

রিফাত ভাইয়া চমকে উঠলেন।কারন বড় আব্বু ওদের বিয়ের জন্য রাজি ছিলেন না। কিন্তু এখন কথা শুনে মনে হচ্ছে বড় আব্বু ও রাজি।

বাহহহ তার মানে খুব তাড়াতাড়ি এদের এনগেজমেন্ট হবে আহা কি মজা।

ভাবতে না ভাবতে ছোট চাচ্চু বলে উঠলেন তাহলে এদের এনগেজমেন্ট কয়েক মাসের মধ্যেই হয়ে যাক।

এবার ছোট চাচ্চুর জন্য খারাপ লাগছে বেশ। ধ্যাত আমার চাচ্চু র কপাল টাই খারাপ। ভাবনাতে ছেদ কাটলো ফারহান ভাইয়ার কথায়।ফারহান ভাইয়া চাচ্চু কে জড়িয়ে বলল
– আরে আমার হ্যান্ডসাম চাচ্চু এবার কিন্তু তোমার ও বিয়ের ফুল ফুটবে।

চাচ্চুর সাথে সাথে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলাম।
আব্বু বলে উঠলো
– ফারহান ক্লিয়ার করে বল।

চাচ্চু ও জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
ফারহান ভাইয়া কিছু বলার আগেই রাজিব চাচ্চু বড় আব্বু কে বললো
– আরে ভাইয়া বুঝো নি।এই বার আমি আমার দুশমন কে কষ্ট থেকে মুক্ত করে দিবো।

ছোট চাচ্চু রাজিব চাচ্চু কে বলল
– দেখ ভাই গত চার বছর ধরে জ্বলছি আর জ্বালাস না।
হেঁয়ালি না করে ক্লিয়ার করে বল।

তখনি ফারহান ভাইয়া মনি আন্টি কে কাছে নিয়ে এসে রাজিব চাচ্চু কে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।

রাজিব চাচ্চু মনি আন্টির হাত ধরে নিয়ে এসে আরিফ চাচ্চুর হাত আর মনি আন্টির হাত এক করে দিল।
তারপর বলল
– এইবার আর তদের কষ্ট পেতে দিবো না। এই যে দুজোন কে এক করে দিলাম।

আরিফ চাচ্চু রাজিব চাচ্চু কে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল
– থ্যাংকস ভাই। আমার জীবনের বড় একটা প্রাপ্তি তুই আজ আমাকে উপহার দিলি।

রাজিব চাচ্চু আরিফ চাচ্চুর পিঠ চাপরে বলল
– ধুর কি সব বলসিস। উল্টো আমি তদের কাছে সরি।
আমার জন্য তদের এতো কষ্ট পেতে হয়েছে।

সবার মুখে হাসির রেখা দেখা গেল।বাহহহ কতো সুন্দর ই না পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছে কিন্তু।

মনি আন্টির মুখ টা দেখে ই মনে এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম। কারন মনে হলো বুকে গেঁথে থাকা কতো জনমের পাথরটা আজ নেমে গেছে।আরিফ চাচ্চু আর মনি আন্টির চোখে চোখে কথা হচ্ছে। কি অদ্ভুত শান্তি সে দৃশ্যে বলে বোঝানো যাবে না।

ঠিক তখনি ফারহান ভাইয়া ওদের দুজোনের মাঝে ফোরন কাটলো। ফারহান ভাইয়া হালকা কেশে বলল
– একটু সামলাও নিজেদের পাশে বড় আর ছোট রা ও তো আছে।

এই কথায় মনি আন্টি লজ্জা পেলো। তারপর ই বলল
– চুপ পুঁচকে তুই আমাকে ক্লাস টেন থেকে জ্বালাচ্ছিস।
এক মাসের জন্য আমাদের স্কুলে সিফট হয়ে পুরো হাড় মাশ কালি করে দিয়েছিলি।

ফারহান ভাইয়া অভিমানি সুরে বলল
– যাও তার জন্যে ই তো তোমাদের এক করে দিলাম।
সেই আমাকেই বকা দিচ্ছো।এই গুলো ঠিক না কিন্তু।
তোমার মেয়ে হলে তো আমাকেই বিয়ের জন্য ডাকবে।
যদি ও বুড়ো হয়ে যাবো তখন।

আমি এদের দিকে তাকিয়ে বললাম
– এই যে কেউ তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

সবাই এক যোগে বলল
– আহারের।

আমি ভ্যাবলা হয়ে গেলাম। রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে বলল
– আরে বেটা এইবার বল কাহিনী তে কি টুইস্ট করেছিস।

ফারহান ভাইয়া একটু ভাব নিয়ে বলল
– ইটস ম্যাজিক।

এই বার বুঝলাম আমি। এই সব যা যা হয়েছে সব এই হনুমানের ম্যাজিক।

রিফাত ভাইয়া বলল
– আরে সেটাই তো বল।

ফারহান ভাইয়া বলল
– আরে তেমন কিছু ই না। রাজিব চাচ্চু কে বুঝালাম যে শুধু শুধু দুটো আত্মা কে মরন যন্ত্রণা না দিয়ে এক করে দেও। দুজোনের সাথে সাথে দুটো পরিবার ও কষ্ট পাচ্ছে।

রাজিব চাচ্চু ও বললেন
– হ্যাঁ।আর ওদের কষ্ট দিবো না।

তাই চটপট চলে আসলো ফারাবি কে দেখে যাবে আর ওদের এক ও করে দিবে।এই যা।

আরিফ চাচ্চু ফারহান ভাইয়া কে বলল
” থ্যাংকস আব্বা জান। ”

ফারহান ভাইয়া একটু ভাব নিয়ে বলল
– আব্বা জান ছাড়ো।জামাই জান বলো তোমার মেয়ে হলে আমি ই কিন্তু বিয়ে করবো।

সবাই এক সাথে হেসে উঠলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বলল
– আচ্ছা তোমাদের কি ডিনার করার ইচ্ছে নেই?
অলরেডি 9’50, খাবে আবার বাসায় ও তো বেক করবে।

রিফাত ভাইয়া বলল
– হ্যাঁ বড্ড খিদে পেয়েছে। চল গিয়ে দেখি কোনো রেস্টুরেন্ট এ ভালো কিছু আছে নাকি।

ফারহান ভাইয়া বলল
– মহারাজ এতো ভাবতে হবে না।আপনাদের খাবার রেডি ই আছে। শুধু আপনাদের যাওয়াই বাকি।

আরিফ চাচ্চু বলল
– মানে?

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– আরে আমি তোমাদের জন্য রেস্টুরেন্ট বুক করে রেখেছি।তোমরা শুধু যাবে।

বড় মা বলল
– তুই এতো কষ্ট করতে গেলি কেন?

ফারহান ভাইয়া বড় মা কে হালকা জড়িয়ে ধরে বলল
– আরে কাকি।চিন্তা করো না তো তোমরা যাও।

পরক্ষণেই বড় আব্বু, বড় মা , আম্মু, আব্বু, রাজিব চাচ্চু, আরিফ চাচ্চু, মনি আন্টি , রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু আমাকে আর ফারহান ভাইয়া কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।

ফারহান ভাইয়া এই দুদিন এই হসপিটালেই থাকবেন।
হসপিটালে দুটো পারসোনাল বেড রুম আছে। যাতে কখনো হসপিটালে ফারহান ভাইয়ার পরিবার বা রাফান ভাইয়ার ইমার্জেন্সি থাকলে ওদের কোনো সমস্যা না হয়। ফারহান ভাইয়া ঐ রুমে ই থাকবেন।
আর তাছাড়া আমার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন হতে পারে যা ফারহান ভাইয়া ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে হবে না।

সবাই চলে যাওয়ার পর ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বসলেন।তারপর আলতো ভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন
– কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?

আমি বললাম
– উঁহু।

ফারহান ভাইয়া আমাকে বলল
– আচ্ছা তাহলে ঘুমিয়ে পড়।
আমি হতাশ কন্ঠে বললাম
– ঘুম আসছে না।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– ঘুম আসছে না।আচ্ছা চল তোকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
আমি বললাম
– কোথায়?
ফারহান ভাইয়া বলল
– উঁহু। এত প্রশ্ন করছিস কেন, গেলেই তো বুঝবি।

আমি তা ও বললাম
– বলেন না।

ফারহান ভাইয়া নিচু হয়ে বললেন
– আমাকে ভয় পাচ্ছিস?যদি কিছু করে দেই?

আমি ওনার কথায় চমকে গেলাম। হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠেছে। তারপর তুতলিয়ে বললাম
– নাহহ তোত।ভয় কেন পাবো?

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– উহু।ভয় পাওয়া উচিত। আমাকে দিয়ে ও ভরসা নেই।

এই বলেই ওনি ডেবিল হাসি দিলেন। আমি শুধু চেয়েই আছি।এই লোকটা ইদানিং কেমন হয়ে গেল। কি সব বলে যার অর্ধেক টাই আমার মস্তিষ্কে ঢুকে না।আজব তো!
_______________________

ফারহান ভাইয়া আমাকে ধীরে ধীরে উঠালেন। এখনো শরীরটা বেশ দুর্বল যে। আমাকে আস্তে আস্তে নিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ ই আমার পা যেন অবশ হয়ে গেল। ফারহান ভাইয়া আমার এমন অবস্থা দেখে অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন
– একটা কথা বলব?

আমি তো আকাশ থেকে পরলাম ওনি আবার কবে থেকে আমাকে কিছু বলার জন্য পারমিশন নেন।
এই লোকটা একটা যা তা!

ফারহান ভাইয়া অন্য দিকে ফিরে নিচু হয়ে আবার বললেন
– একটা কথা বলতে পারবো কি?

আমি হালকা স্বরে বললাম
– হুমম।

ফারহান ভাইয়া বললেন
– তোর এভাবে হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।তোর যদি কোনো সমস্যা না থাকে তো কোলে নিতে পারি।

আমার চোখ গুলো রসগোল্লার আকার ধারণ করেছে ।
ফারহান ভাইয়া আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আজব তো তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করার কি ছিল?আমাকে ব্যালেন্স করতে ফারহান ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরতে হলো।
কেমন যেন লাগছে , আর ফারহান ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে নিঃসংকোচে এগিয়ে যেতে লাগলো।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি যা ওনি দেখে ফেলেন।মৃদু হেসে ফারহান ভাইয়া বললেন
– ছোট সময়ে অনেক কোলে উঠেছিস। আহামরি কিছু না এটা।হা হয়ে তাকিয়ে আছিস কেন?

আমি ওনার কথার উত্তর দিতে পারলাম না উল্টো বেশ লজ্জা তে পরে গেলাম। ধ্যাত কেন যে তাকালাম ,এই সব কিছু আমি ভাবতে ভাবতে ফারহান ভাইয়া আমাকে কোথাও এক টা নিয়ে আসলেন।
আমি ভাবনাতে এতটাই বিভোর ছিলাম যে আমার খেয়াল ই নেই,যে আমাকে কোলে করে ফারহান ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।

আশে পাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম এটা কোথায়। আমার বোঝার পূর্বে ই ফারহান ভাইয়া বললেন
– অন্ধকুঠরি তে নিয়ে আসি নি।এটা নার্সিংহোম এর ছাদ।

আমি বুঝতে পেরে বললাম
– ওহহ। কিন্তু আমাকে এখানে আনলেন কেন?

ফারহান ভাইয়া কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– তোকে এই বারো তলার ছাদ থেকে ফেলে দিতে।

আমি ওনার কথায় বিষম খেলাম ওনারে দিয়ে বিশ্বাস নেই বাবা।যা খুশি করতে পারেন এমনকি আমাকে ফেলে দিতে ও। আতঙ্কে শিউরে উঠলাম, এই দেখে ফারহান ভাইয়া মুখ টিপে হাসলেন।
তারপর ই বললেন
– এতো ভয় পাস কেন আমায়?তোর মনে হয় আমি তোকে ফেলে দিবো?তবে হ্যাঁ অলোয়েজ ভয় পাবি আমাকে বুঝেছি। তোর ভয় পাওয়া ফেস টা খুব সুন্দর লাগে।

ওনার বলা শেষ উক্তি টিতে আমি লজ্জা পেলাম।
ফারহান ভাইয়া আমাকে লজ্জা পেতে দেখে বলল
– লজ্জা তে তোকে অন্য রকম লাগে। লজ্জা পাস না, এতে সমস্যা হয় আমার।

এবার আমি ওনার দিকে সন্দিহান চোখে তাকালাম
আজব তো আমি লজ্জা পেলে ওনার সমস্যা কি?
কিন্তু মুখে বললাম
– তো লজ্জা তে ফালান কেন?

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আজকাল তোকে পিচ্ছি ও লাগে আবার মনে হয় বড় হয়ে গেছিস।কনফিউশনে চলে যাই তাই লজ্জা দেই।

আজব লোক তো এর সাথে লজ্জা দেওয়ার ই বা কি সংযোগ।
আমি না বুঝার স্বরে বললাম ” কি বললেন? ”

ফারহান ভাইয়া বলল
– এই যে তুই বুঝতে পারলি না। এতে তোকে বাচ্চা বাচ্চা লাগে।আর যদি কখনো তোর দিকে গভীর ভাবে তাকাই তখন মনে হয় ,না অনেক ম্যাচুউর হয়েছিস। তো সব মিলিয়ে কনফিউশনে চলে যাই। আর বাচ্চা দের ভয় দেখাতে হয় আর বড় দের আতঙ্কে ফেলতে হয়।কিন্তু তোকে কোন টাতে ফেলবো বল?তাই কনফিউশনের জন্য তোকে লজ্জা দেই। কিন্তু তবু ও তোর মাথায় কোনো কিছু ঢুকে না।

আজব মানুষ। এটার সাথেই বা কোথায় কি সম্পর্ক।

ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– এভাবে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন?

ফারহান ভাইয়া বলল
– নাহহ। তবে তোর ইচ্ছে হলে থাকতেই পারি।

আমি আবার ক্যাবলা হয়ে গেলাম তারপর বললাম
– আমি কি বলেছি নাকি।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন।তারপর ছাদের এক পাশে রাখা একটি টুলে আমাকে বসালেন আর অন্য টিতে ওনি বসলেন।
_____________________

এই কুয়াশা ভরা শীতের রাতে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম দুজোন এর মাঝেই নীরবতা চলছে।
এখন খানিকটা শীত লাগছে , ফারহান ভাইয়া আমাকে কাঁচুমাচু হয়ে বসে থাকতে দেখে উঠে গিয়ে ছাদের মধ্যে থাকা ছোট্ট ঘরের মতো রুমটাতে গেল।

তারপর হাতে করে একটা চাদর নিয়ে আসল।চাদরটা আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো , আমি কিছু বললাম না।
কারন এই কুয়াশা ভরা শীতের রাতের সুন্দর দৃশ্য টুকু আমি অনুভব করতে চাই।ফারহান ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল , আমি বুঝতে পেরে ও ওনার দিকে তাকালাম না।ওনি আবার উঠে গেলেন, তারপর সেই ছোট্ট কুটিরের মধ্যে প্রবেশ করলেন।এবার কয়েক মিনিট পার হয়ে গেল কিন্তু ওনি আসছেন না।
কিন্তু এতে যেন আমার ধ্যান ই নেই। আমি এই সুন্দর রাতটি অনুভব করছি। প্রকৃতির এ রূপ আমি কখনো দেখি নি।

এই সময় টা বোধহয় একটু বেশি ই সুন্দর। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া ফিরে আসলেন , সাথে নিয়ে আসলো দু মগ কফি। একটি মগ আমার দিকে এগিয়ে দিলেন , আমি তাকাতেই চোখ দিয়ে ইশারা করলেন কফি টা নিতে। আমি আলতো হেসে কফি টা নিলাম।কফি কাপে একটি চুমুক দিলাম।অদ্ভুত সে প্রশান্তি , আবার কফি কাপে ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগে ফারহান ভাইয়ার একটি কথাটে আমি থমকে গেলাম।
ঘোর লাগানো চোখে তিনি বললেন
– জানিস না কেউ কোনো কিছু দিলে প্রথমে তাকে ভাগ দিতে হয়।

আমি আলতো হেসে আমার কফি টা এগিয়ে দিলাম।
ফারহান ভাইয়া চুমুক দিয়ে বলল
– কফিটার স্বাদ ই বদলে গেছে।আমি এটাই খাবো।

তারপর ওনি ওনার কফি টা আমার দিকে এগিয়ে
দিলেন।

আমি ভদ্রতার খাতিরে আলতো হেসে ওনার কফি টা নিলাম।চুমুক দিতেই অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভব করলাম। গাঁয়ে চাদর মুড়িয়ে কফি টা শেষ করলাম।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ধীরে ধীরে উঠিয়ে ছাঁদের অন্য পাশে নিয়ে গেলেন। অন্ধকার আর কুয়াশার কারনে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ছাদের একদম কর্নারের নিয়ে গেলেন ওনি। আমাকে পেছন থেকে ধরে আছেন ফারহান ভাইয়া। তারপর যা ঘটলো এতে আমার বাকশক্তি হারিয়ে গেল।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 18
__________________________

ফারহান ভাইয়া হেচকা টান মেরে আমাকে তার দিকে ঘুড়ালো।এতে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।ফারহান ভাইয়া হঠাৎ আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে মিনমিনিয়ে বলল
– হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার ফারাবি।
হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

আমি চমকে উঠলাম , আমার জন্মদিন আজ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।

ফারহান ভাইয়া আমার হাতের সাথে ওনার হাত মিলিয়ে টাইটানিক মুভির মতো দু হাত দুদিকে মেলে দিলেন।কিছুক্ষণ এই শীতের রাতের শিরশির ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করলাম তারপর হঠাৎ ওনি আমার একটি হাত উঁচু করে কুয়াশা ভেদ করে আসা খানিকটা চাঁদ বরাবর দেখালেন।আমি তাকালাম , আমার চোখ আটকে গেলো সেই দৃশ্যে মাঝে। আমি এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।আকাশের দিকে অসংখ্য গ্যাস বেলুন উড়ে যাচ্ছে।আবার কিছু বাজির মতো উড়ে গিয়ে হ্যাপি বার্থডে প্রিন্সসেন্স ফারাবি এই লেটার ধারন করছে।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমার হাত দিয়ে একটি ফানুস উড়ালেন।আমাদের ফানুস উড়ানো শেষ হতে না হতে আকাশে এক যোগে অসংখ্য ফানুস উড়তে লাগলো।চোখ গুলো যেন সেই দৃশ্যে থমকে গেছে।
আমি বুঝতে চেষ্টা করছি না এটা কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে বা কে করছে। আমি শুধু এই দৃশ্য উপভোগ করছি।
আমার জীবনে আমি কখনো এমন দৃশ্য দেখি নি।
অসম্ভব এক ভালোলাগা কাজ করছে।এই সমস্ত কিছু থেকে ধ্যান ভাঙ্গলো ফারহান ভাইয়ার ডাকে।ফারহান ভাইয়া আমার হাত দুটো নামিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলেন।যাতে আমি চমকে গেলাম অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেল শরীরে যা আগে কখনো হয় নি।উনি আমার খোপা করা এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে খুলে দিলেন।আমি বিহ্বল। মানুষ টা কেমন যেন কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি স্বপ্ন দেখছি বোধহয়! এটা আদৌ কি বাস্তব হতে পারে? আমার ভাবনার রেশ কাটাতে তিনি
বললেন
– যা উড়তে চায়। তাকে বাঁধা দিতে নেই। নতুবা তাঁর সাধারণ সৌন্দর্য্যের হ্রাস ঘটে।

এই মুহূর্তে ওনার বলা প্রতি টা কথা আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন কে জাগিয়ে তুলছে।
আমি ভাষাহীন ,একটি বাক্য ও আমি উচ্চারণ করতে পারলাম না।

আমি যেন হারিয়ে গেছি এক অন্য জগতে।সত্যি বলতে আমার এক মুহূর্তের জন্য ও মনে হচ্ছে না যে , এই জগত থেকে আমি ফিরে যাই।বরং মন বার বার শত বার হাজার বার চাইছে এই সুন্দর মুহূর্তটা কি থমকে গেলে পারে না?এই মুহূর্তটা থমকে গেলে কি খুব বেশি ই অসুবিধা হবে?আমার মনের কোনো জমে থাকা অবাধ্য সব চাওয়া আজকে ফুটে উঠছে।

মনে হচ্ছে যা সম্ভব না তাও যদি আজকে আমি চাই তাহলে সেই সকল অসম্ভব সম্ভব এ পরিনত হবে।কেন কেন কেন?
আমি কোথাও হারিয়ে গেছি , হ্যাঁ আমি এক অন্য জগতে হারিয়ে গেছি।মনের প্রতি টা কোনায় হাজারো কৌতুহল রা উঁকি দিচ্ছে।ইসসস যদি সত্যি থমকে যেতো এই সময়।

ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে ধীরে ধীরে ছাদের সেই ছোট্ট কুটিরের মতো ঘর টাতে নিয়ে গেলেন। হ্যাঁ এটা সত্যি কোনো রুম নয়।এটাকে ছোট খাটো এক সংসার বলা যেতে পারে।রুমটা বেশ বড় যার এক পাশে বিশাল মাপের বাথরুম আর আরেক পাশে খোলা এক বিশাল বারান্দা। রুমটা খুব পরিপাটি করে গোছানো।এক পাশে সুন্দর একটি বেড , কাবাট , আলমারি , সাইট টেবিল আর আরেক পাশে দু সেটের সোফা , টেবিল।
বেড বরাবর বিশাল মাপের একটা মিরর। মাঝে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা। ফারহান ভাইয়া আমাকে খোলা বারান্দাতে নিয়ে গেলেন।বারান্দা টা অসম্ভব সুন্দর , বারান্দার সাইটে কোনো রেলিং নেই।কিন্তু হাঁটু সমান দেয়াল দেওয়া যার মাঝে বসানো নানান রকমের ফুলের গাছ। এক পাশে টেবিল রাখা আর সাথে দুটো চেয়ার। টেবিলের পাশে জ্বলছে কিছু আর্টিফিশিয়াল ফুলের ল্যাম্প।যার আলো ফুল গুলো কে বাস্তবের মতো সুন্দর রূপ দিচ্ছে।কি সুন্দর সে দৃশ্য , চোখ ধাঁধানো সুন্দর সব।ফারহান ভাইয়া আমাকে টেবিলের কাছে নিয়ে একটি চেয়ারে বসালেন আর অন্য টিতে ওনি বসলেন।টেবিলে রাখা ছোট্ট একটা রেড ভেলভেট কেক।কেকের উপর একটি মেয়ে কে দেখা যাচ্ছে যে মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে।এটা দেখেই বুঝতে পারলাম এটা আমি।আর অন্য পাশে মেয়েটির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে একটি ছেলে।কিন্তু এই ছেলেটি কে সেই বিষয়ে আমার বোধগম্য হলো না।
হয়তো মিলের অনুরোধে ছেলেটিকে এখানে স্থান দেওয়া হয়েছে।ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে কেক টা কেটে নিলো কিন্তু মোম গুলো নিভাতে দিলো না। আমি বিস্মিত নয়নে তাকাতেই উনি বললেন
– আলো গুলো কে সব সময় উজ্জ্বল হয়ে ই থাকতে দিবি।কখনো নিভিয়ে দিবি না।

আমি ওনার কথা মতো আলো নিভালাম না।মমের আর ল্যাম্পের আলোতে সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
যদি আজ পূর্ণিমা হতো তাহলে হয়তো এই আলো গুলো কে এতো সুন্দর লাগতো না। মনে হচ্ছে কেউ ছবির মতো সবকিছু সাজিয়েছে। আল্লার সমস্ত সৃষ্টি ই যে অসাধারণ। ফারহান ভাইয়া কেক কাটা হলে কেকের একটা অংশ নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিলেন। আমি ও তালে তালে মিলিয়ে ওনাকে কেক খাইয়ে দিলাম। জানি না কেন এই কাজ করলাম তবে খুব করে মনে হলো এটা উচিত। মানুষ টা খুব কাছের গোছের। একান্ত কেউ। এক অদ্ভুত নেশা। যাকে প্রেমনেশা বলা যায় কি না আমার জানা নেই।

কেক খাওয়ার সময় খানিকটা কেক আমার ঠোঁটের কোণে লেগে গেলো। ফারহান ভাইয়ার চোখ পড়তেই ওনি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। আমি ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করছি।আমি দেখলাম ফারহান ভাইয়া পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলেন।রুমালটি চিন্তে আমার বিন্দু মাত্র অসুবিধা হলো না।
কারন রুমাল টার কোনে এখনো সেই চকলেটের দাগ টুকু দেখা যাচ্ছে। এটা সেই রুমাল টা যখন আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম তখন ফারহান ভাইয়া আমাকে সাহায্য করেছিলো বিধায় আমি ওনাকে চকলেট দিয়েছিলাম আর ফারহান ভাইয়া সেই চকলেট থেকে প্রথম বাইট টা আমাকে দিতে বলেছিলেন।সেই চকলেট খেতে গিয়েই মুখে চকলেট লাগিয়ে ফেলেছিলাম।ফারহান ভাইয়া এই রুমাল টা দিয়েই মুছিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আজব একটা লোক তিন চার বছর একটা রুমাল ই ইউস করছে? আর যদি এটা ধুয়েই দিতো তাহলে এর মধ্যে চকলেটের দাগ টা রয়ে গেল কিভাবে?তা ও এই চুজি হাইজিন মেন্টেন কারি ফারহান ভাইয়ার কাছে সেটা থাকতে। আমি ওনার দিকে সন্দিহান চোখে তাকালাম।
উনি বোধহয় বুঝতে পেরেছেন আমি কি ভাবছি তাই বললেন।
– সমস্যা নেই। এটা ধোয়া না হলে ও হাইজিন মেন্টেন স্প্রে করা হয়।
তারপর ই আমার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা কেক টুকু অতি যত্নে মুছে দিলেন। আর রুমাল টা পকেট এ পুরে নিলেন।ফারহান ভাইয়া হাঁটু গেড়ে বসে ছিলেন, উঠার সময় আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– তোর নিজের খেয়াল আমার থেকে ভালো তুই ও রাখতে পারবি না। বেশি বুঝতে যাস না তাহলে তো পাগল ই হয়ে যাবি।

আমি সত্যিই বুঝলাম না তাই ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলাম। ফারহান ভাইয়া একটি হাত বাড়িয়ে দিলেন।
আমি ওনার হাতে হাত রেখে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর ওনি আমাকে বারান্দা থেকে রুমে নিয়ে গেলেন।উনি আমাকে বললেন ” অনেকক্ষণ বসে আর হেঁটে কাটিয়েছিস।একটু শুয়ে থাক এখন।” আমি মাথা দোলালাম।ফারহান ভাইয়া আমাকে ধীরে ধীরে বেডের সামনে নিয়ে গেলেন। বেড টা যেহেতু একটু উঁচু তাই আমার উঠতে কষ্ট হবে। আদৌ ও কি উঠতে পারবো?
এইসব ভাবছিলাম , ঠিক তখনি ফারহান ভাইয়া বললেন
– বলেছি না। আমার থেকে বেশি তুই নিজের খেয়াল নিজে ও রাখতে পারবি না।

আমি নত হয়ে রইলাম ,এই লোকটা মন ও পড়তে পারে দেখছি। ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর বেডে শুইয়ে দিয়ে বাম পাশের দেয়ালের দিকে আগালেন। আমার লজ্জা লাগছে না কেন যেন। মানুষ টা কে অনুভব করতে ইচ্ছে করছে। আমার সেই রাক্ষুসে ফারহনা ভাই যেন হুট করেই কত সব অনুভূতি জাগিয়ে দিচ্ছেন। ঠিক ভুল সব কিছু কে তোয়াক্কা না করে আমার অবচেতন মন চাইছে আরেকটু স্পর্শ আরেকটু ভালোবাসা। আমি দেখলাম ফারহান ভাইয়া দেয়ালের কাছে। ভ্রু দুটি বেকে গেল।
আজব তো এই লোকটি দেয়ালের কাছে গিয়ে কি করবে?নিশ্চয়ই মাথাটা গেছে!
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ফারহান ভাইয়া দেয়ালের কাছে গিয়ে পর্দা গুলো খুলে দিলেন।পর্দা খুলতেই দেখতে পেলাম একটি দরজা। ফারহান ভাইয়া দরজা খুলে ভেতরে চলে গেলেন। আমি বোকা বনে গেলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া ফিরে এলেন। হাতে করে নিয়ে এলেন একটি প্লেট আর সাথে এক বোতল লেমন চকলেট ফ্লেবারের ড্রিঙ্কস।যার দরুন বুঝতে পারলাম ঐ পাশে একটা কিচেন রুম ও আছে।
ফারহান ভাইয়া বেডের কাছে এসে প্লেট আর ড্রিঙ্কস টা পাশে থাকা সাইট টেবিল টাতে রাখলেন।

ফারহান ভাইয়া আমার পাশে বসলেন।তারপর আমাকে শোয়া থেকে উঠালেন। আমি অবাক সুরে বললাম “এগুলো কি? ”
ফারহান ভাইয়া বললেন
– তেমন আহামরি কিছু না।অনেকক্ষণ আগে খেয়েছিস তুই তাই একটু কাবাব আছে আর সাসলিক।

আমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো উফফফফফ এগুলো যে আমার খুব ফেবরেট। আমি বললাম’ দিন দিন আমি এখনি খাবো।’
ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন তারপর বললেন
– দিবো তো। তার আগে আর এক টা জিনিস দেওয়ার বাকি আছে।

আমি চোখ নাচিয়ে বললাম
– কি?
ফারহান ভাইয়া বুক পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করলেন।তারপর বক্স টা খুলে এক জোড়া সুন্দর ছোট্ট কানের দুল বের করলেন, ডাইমন্ডের মনে হচ্ছে।ফারহান ভাইয়া আমার দুল বিহীন কানটাতে দুল টা অতি যত্নে পরিয়ে দিলেন।ওনার হাত যখন আমার কান কে স্পর্শ করেছিল , তখন যেন আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম এই পৃথিবী থেকে।কানে ওনার হাতের স্পর্শ পেতেই আমার শরীরে অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেল। আমি ওনাকে কিছু বলতে পারলাম না।ফারহান ভাইয়া বলল “বাচ্চা মেয়ের জন্য এই ছোট্ট বাচ্চা গিফট।”
আমি ওনার কথায় হালকা ভ্রু কুচকালাম।
তারপর কিছু বলতে যাবো তখনি ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুসসসস। তুই আমার কাছে সবসময় ই বাচ্চা।

আর কিছু বললাম না আমি।ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে প্লেটের ঢাকনা খুলে বললেন
– এখন খেয়ে নে।

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– আপনি খেয়েছেন?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমি পরে খেয়ে নিবো।

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম
– তাহলে আমি ও খাবো না।

ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন। তারপর বললেন
– ছোট ই রয়ে গেলি। শোন, খেতে পারি তবে একটা কন্ডিশন আছে।

আমি বললাম
– কি কন্ডিশন?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমাকে খাইয়ে দিতে হবে , তাহলেই খাবো।

আমি প্রথমে দ্বিধান্বিত ছিলাম। পরক্ষণেই মত বদলে বললাম
– ওহ,এই ব্যাপার এখনি দিচ্ছি।

একটু নানের সাথে কাবাব নিয়ে ওনার মুখের সামনে ধরলাম। ওনি আয়েস করে খেয়ে নিলেন। তারপর আমাকে ও খাইয়ে দিলেন।কাবাব আর নান শেষ করে আমাকে লেমন চকলেট সেক টা দিলেন। আমি মুখে দিতেই অদ্ভুত স্বাদ পেলাম। উফফফ সেই মজা!
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– চোখ টা অফ কর।
আমি বললাম
– কেন ?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আহা অফ করতে বলেছি অফ কর।আমি চোখ অফ করলাম, ফারহান ভাইয়া বললেন
– কোনো চিটিং করবি না কিন্তু।

আমি বললাম
– আচ্ছা।

ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষন পর চলে আসলেন।আমি এখনো চোখ অফ করে আছি।ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার চোখে হালকা করে ফু দিতে লাগলেন। অদ্ভুত শিহরন জাগল, কি যে প্রশান্তি তা বলে বোঝানো যাবে না।তারপর ফারহান ভাইয়া বললেন
– চোখ খোল।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
ফারহান ভাইয়া আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন।
সাথে আছে গিটার, আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ালেন তারপর গিটারে সুর তুলতে তুলতে একদম আমার গা ঘেঁষে বসলেন।আমার শরীর কেঁপে উঠলো।
তারপর ই গান শুরু করলেন।

Tera sang yaara,
Khushrang bahara
Tu raat deewani
Main zard sitaara

O karam khudaya hai
Tujhe mujhse milaya hai
Tujphe marke hi toh
Mujhe jeena aaya hai

O Tera sang yaara,
Khushrang bahara
Tu raat deewani
Main zard sitaara

O Tera sang yaara,
Khushrang bahara
Main tera ho jaaun
Jo Tu karde ishara

Kahin Kisi bih gali me jaaun main
Teri Khushboo Se takraaun main
Har raat jo aata hai mujhe woh khwaab tu

Tera mera milna dastoor hai
Tere hone Se mujhme noor hai
Main hoon soona Sa ek aasmaan mehtaab tu

O karam khudaya hai
Tujhe mujhse milaya hai
Tujphe marke hi toh
Mujhe jeena aaya hai

O Tera sang yaara,
Khushrang bahara
Tu raat deewani
Main zard sitaara……….

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here