? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 19,20
ফাতেমা তুজ
19
ওনার সুরে গান শুনতে শুনতে কখন যে ওনার কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছি তা আমার সম্পূর্ণ অজানা।ঘুম ভাঙ্গলো ভোর পাঁচ টার ফজরের আজানের সময়।ঘুম ভাঙতেই দেখি আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি!
আমি আমার ডান হাত টা নাড়াতে পারছি না।মনে হচ্ছে কেউ বেঁধে রেখেছে।কেন হাত টা নাড়াতে পাড়ছি না তা দেখার জন্য ডান পাশে তাকাতেই দেখি ফারহান ভাইয়া বেডের পাশে রাখা ঢুল টাতে বসে আমার ডান হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন।
বুঝলাম গান শুনতে শুনতে যখন ওনার কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তখন ওনি ই আমাকে কোলে করে নিচে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন। ধ্যাত আজকাল এই ফারহান ভাইয়ার কোলে চড়তে ও হচ্ছে আমায়।এই সব ভাবতে ভাবতে ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।কত শান্তি তে ঘুমিয়ে আছেন ওনি , কিন্তু হাত টা যে ব্যথায় নাড়াতে ও পারছি না। আমায় যাতনা দিয়ে নিজে ঘুমাচ্ছো দেখো! আসলেই বদ লোক। তবে এই সুন্দর ঘুম টা আমায় শান্তি ও দিচ্ছে।ওনাকে ঘুম থেকে জেগে তুলতে ও ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে এভাবেই থেমে যাক সময়। অদ্ভুত হয়ে যাক প্রহর। আচানাক এমন ভাবনায় ভরকে গেলাম। নিজেকে ধাতস্থ করে শুয়ে রইলাম সেভাবেই।
অগত্যা আমাকে ওনার ঘুম ভাঙা অব্দি অপেক্ষা করতে হবে।এভাবেই আপাদমস্তক চিন্তা করতে করতে সকাল ৬ টার দিকে ওনার ঘুম ভেঙে গেল।
আমাকে জেগে থাকতে দেখে প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করলে ও কয়েক সেকেন্ড বাদেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফোটালেন। স্বচ্ছ আর অদ্ভুত সে হাসি। আমি ভ্যাবলার মতো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। ফারহান ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে আড়মোড়া দিয়ে ঘুমের রেশ কাটালেন।তারপর শার্টের হাতা ঠিক করতে করতে আমার দিকে না তাকিয়ে ই বললেন “কখন ঘুম ভেঙেছে?”
আমি কোনো সংকোচ না করেই বললাম
” ভোর ৫ টার দিকে।”
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে খানিকটা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালেন তারপর বললেন
– 6:03 অলরেডি এক ঘন্টা ধরে জেগেছিস।আমাকে ডেকে দিস নি কেন?
আমি ওনার কথায় বিষম খেলাম তারপর তুতলিয়ে বললাম
– আসসললে আমমমি তোতততত
ফারহান ভাইয়া আমার একদম কাছে এসে বললেন
– কি হলো তুতলাচ্ছিস কেন?
ওনি আমার এতো কাছে চলে আসাতে আমি চোখ খিচে নিয়েছি।ফারহান ভাইয়া এবার একটু জোড়ে ই বললেন
– কি হলো। ভয় পাচ্ছিস?
আমি ওনার ধমক খেয়ে চোখ খিচা অবস্থাতেই বলা শুরু করলাম
– আসলে আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই আমার আপনাকে ঘুম থেকে জেগে তুলতে ইচ্ছে করছিলো না।
তাই জাগিয়ে দেই নি আপনার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করছিলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার এহেম আচারনে খানিকটা দূরে সরে গেলেন, তারপর মিটমিটে হাসলেন। আমি চোখ খুলে দেখলাম ওনি সরে গেছেন , তাই হাত টা নাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু পারছি না, তাই একটু জোড়েই নাড়ালাম যার ফলে বেশ ব্যথা পেলাম। আর উহহ করে উঠলাম।
ফারহান ভাইয়া হতচকিয়ে উঠলেন , তারপর আমার পাশে বসে বললেন
– কোথায় কষ্ট হচ্ছে ফারাবি। বল আমায়। কোথায় যন্ত্রণা হচ্ছে?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে হাতের দিকে ইশারা করলাম।ওনি আমার হাত ধরে বললেন
– উফফফ শিট।আমি জোড়ে হাত ধরে ছিলাম বিধায় হাতে চোট লেগেছে তাই না?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– ইটস ওকে।আপনি তো ভালোর জন্য ই ধরেছিলেন।
ফারহান ভাইয়া আমার কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন
– বড় হয়ে গেছিস?বেশি বুঝিস আজকাল , বলেছি না আমার থেকে বেশি তুই নিজের খেয়াল নিজে ও রাখতে পারবি না। তুই এখনো সেই পিচ্ছি ই রয়ে গেছিস বুঝেছিস?
আমি ওনার কথায় শুধু মাথা ঝাকালাম।আদৌ কি বুঝেছি সেটাই বুঝিনি আমি।ফারহান ভাইয়া আমার হাতটা ধরে হালকা করে নাড়াতে লাগলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর ব্যথাটা কম মনে হলো আর তারপর চলে গেলো কোথাও।বড় আশ্চর্য!
ফারহান ভাইয়া বললেন
– এবার হাতটা নাড়িয়ে দেখ তো।
আমি ওনার কথা মতো হাত টা নাড়ানোর চেষ্টা করলাম।বাহহহ হাতের ব্যথা তো একদম ই নেই।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে প্রশ্নবোচক ভঙ্গিতে তাকালেন।আমি হালকা হেসে মাথা নাড়ালাম। আর
তারপর বললাম
– একটু ও ব্যথা অনুভব করছি না।
ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– ফ্রেস হওয়া লাগবে তো?
আমি মাথা নাড়ালাম।ওনি বললেন
– আমি নিয়ে যাবো?
আমি ভীত কন্ঠে বললাম
– নাহহ না। আপনি নার্স কে পাঠান।
ওনি আমার একদম কাছে এসে বললেন
– আমি নিয়ে গেলে সমস্যা কোথায়?
উনি আমার এতো টাই কাছে যে আমার নিশ্বাস ওনার বুকে গিয়ে পরছে। শার্টের দুটো বোতাম খোলা হওয়া তে বুকের এক অংশ দেখা যাচ্ছে। মানুষ টা কে গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে আমার কেমন কেমন যেন লাগে। কখনো খুব শান্তি লাগে আবার কখনো যন্ত্রণা। দুয়ে মিলে যেন এক অদৃশ্য অনুভূতি!
আমি কোনো মতে বললাম
– আসলে অনেক কিছুই তো আছে যা আপনি পারবেন না।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললেন
– এমন কোনো কিছুই নেই তোর যা আমি পারবো না।
আমি ওনার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে তাকালাম।
ওনি আমার দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে বললেন
– ইটস ওকে। এখনি তোকে অস্বস্তি তে পরতে হবে না।
তারপর ই বোকা বোকা হেসে বললেন
– সময় হলেই অস্বস্তি তে ফেলবো।চিন্তার কোনো কারন নেই। এখন উড়ে নে।
আমি ওনার এই কথা গুলোর মানেই বুজলাম না যেন। অনেক কিছুই মাথায় আসে তবে মস্তিষ্ক বলে সেসব ভুল। শুধুই ভুল। তবে এটা সত্য উনি প্রতি টা কথার সাথে এমন কিছু কথা যোগ করে যার আগা মাথা আমি অন্তত বুঝতে পারি না।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে বললেন
– আমি নার্স কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ফ্রেস হয়ে নিবি , ভুল যেন না হয়।
আমি মাথা নাড়ালাম।ফারহান ভাইয়া চলে গেলেন।
এক মিনিটের মাথায় একজন নার্স এলেন। আজব ব্যপার হলে ও সত্যি আমাকে সাহায্য করতে একেক সময়ে একেক নার্স আসেন।এর কারণটা কি?
নার্স এসে হাঁসি মুখে বললেন
– গুড মর্নিং ম্যাম।
আমি ও হাসি মুখে উত্তর দিলাম
– গুড মর্নিং।
ওনি আমার কাছে এসে কপালে হাত রাখলেন।
তারপর একটা থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে নিলেন।
আমি কৌতুহল হয়ে বললাম যে
– জ্বর কতটুকু?
নার্স হেসে বললেন
– ডোন্ট ওরি ম্যাম, অল ইজ ওয়েল।
আমি বললাম
– ওহহ।
নার্স আমাকে উঠালেন।বাহএখন তো শরীরের ব্যথা টা ও কমে গেছে দেখছি।নার্স আমাকে নিয়ে ওয়াসরুমে গেলেন।
আজকে ও সেম ফারহান ভাইয়ার হাইজিন মেন্টেন করা সবকিছু ।ফ্রেস হয়ে চলে আসলাম।নার্স আমাকে বেডে না বসিয়ে বেডের পাশে থাকা সুন্দর ব্যালকনিতে নিয়ে গেলেন তারপর ব্যালকনিতে রাখা একটি সোভা তে বসালেন।তারপর আমার চুলের বিনুনি খুলে দিয়ে মাথায় ঝুঁটি বেঁধে দিলেন। যেন আমি কোনো পার্লারে হেয়ার কেয়ার করতে এসেছি!
এতোক্ষন আমি বারান্দার বাইরের দিকটাতে তাকাই নি।এখন চোখ গেল বাইরের দিকটাতে ,এতো সুন্দর বাইরের দিক টা যা বলার বাইরে।
হালকা হালকা কুয়াশাতে পাহাড়গুলো কে আরো সুন্দর করে দিয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া ফিরে আসলেন।নার্স ফারহান ভাইয়া কে দেখে কুশল বিনিময় করলেন।
ফারহান ভাইয়া আমাকে রুমে নিয়ে আসলেন।তারপর বেডে হাফ শোয়া অবস্থা তে বসালেন। নার্স পাশেই দাড়িয়ে আছেন।ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন।
“নার্স আপনার বাবা অসুস্থ তাই না?”
নার্স দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– ইয়েস স্যার ।
ফারহান ভাইয়া এবার ওনার দিকে ঘুরে বললেন
– আপনার বাবার ট্রিটমেন্ট করাতে কতো টাকা লাগবে?
নার্স চোখের কার্নিশ থেকে পানি মুছে বললেন
– ২ লাখ স্যার।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– লোন দিচ্ছে না কোথাও থেকে?
নার্স বললেন
– স্যার হসপিটাল অথরিটির কথা অনুযায়ী হসপিটাল থেকে ১ লাখ টাকা লোন নিতে পারবো।তা ও আর ও এক লাখ টাকা লাগবে।সেই লোন টা কোথাও পাচ্ছি না।ফারহান ভাইয়া পকেট থেকে একটা চেক বের করে কিছু লিখে নার্স কে দিলেন।নার্স হাতে নিয়ে অবাক হয়ে ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকালেন। ফারহান ভাইয়া ওনাকে উদ্বিগ্ন না হতে দিয়ে বললেন
– এতে এক লাখ টাকা আছে।বাকিটা হসপিটাল থেকে লোন নিয়ে আপনার বাবার ট্রিটমেন্ট করাবেন।
ফারহান ভাইয়ার কথায় নার্সের চোখ উজ্জল হয়ে উঠেছে।ফারহান ভাইয়া আবার বললেন
– এটা লোন নয়।এটা আপনার প্রাপ্য সম্মান।
নার্স ফারহান ভাইয়ার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালেন।
ফারহান ভাইয়া ওনার বিস্ময় কাটাতে বললেন
– এই যে আপনি আপনার ম্যাম কে এতো যত্ন সহকারে ট্রিট করলেন এটা তার জন্য ই।
নার্স ফারহান ভাইয়ার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে
তাকালেন।ফারহান ভাইয়া ওনাকে বললেন
– আপনি ফাস্ট আপনার বাবার ট্রিটমেন্ট করান।
নার্স ফারহান ভাইয়া আর আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন। আমি ফারহান ভাইয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।ফারহান ভাইয়া আমার মাথায় হালকা করে গাট্টা মেরে বললেন
– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
ফারহান ভাইয়া আবার বললেন
– কি ভাবছিস?
আমি বললাম
– একটা কনফিউশনে আছি সেটা সলভ করে দিবেন ?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুমম বল।
আমি বললাম
– আপনি নার্স কে টাকা দিলেন । আপনি তো এমনিতে ও দিতে পারতেন কিন্তু তা না করে
আমার কথা শেষ করার আগেই ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– আমি যদি ওনাদের এমনি টাকা দিতাম।তাহলে ওনারা সেটাকে দান ভেবে নিতেন।যা আমি চাই নি , তার জন্য ই ওনাদের এভাবে দিলাম।যাতে ওনারা নিজেদের ছোট না মনে করে।
ওনার কথা শুনে আমার মনে প্রশান্তি বয়ে গেল।কতো ভালো ওনি , সবাই কে কতো সুন্দর করে ট্রিট করেন।
আর আমাকে একেক সময় একেক নার্স ট্রিট করার কারন ও এটা তবে।
এই সব ভাবনার ছেদ কাটলো ফারহান ভাইয়ার ডাকে।
ফারহান ভাইয়া বলল
– এই যে খাবার খেয়ে নে।
তারপর কিছু একটা ভেবে আবার বললেন
– আমি খাইয়ে দিবো?
ওনার কথাতে বারন করলাম না আর। ওনি আমার সম্মতি পেয়ে খাইয়ে দিলেন। ফারহান ভাইয়ার দিকে আমি অপলক দৃষ্টি তে চেয়ে আছি।আসলেই মানুষটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।খাওয়া শেষ হলে ফারহান ভাইয়া আমাকে শুয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে চেইক করে গেলেন।নার্স আবার স্যালাইন বেঁধে দিলেন।
বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল কিন্তু আজকে বাসা থেকে কেউ আসছে না কেন?
অস্বস্তি ও লাগছে।ফারহান ভাইয়া আমাকে অস্বস্তি বোধ করতে দেখে বললেন
– দাবা খেলবি?
আমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আমি খুশি মনে বললাম
– হুমম খেলবো।
তারপর ফারহান ভাইয়া দাবা নিয়ে আসলেন। দুজন বেশ কিছুক্ষণ খেললাম।কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমাকে বেশি গেইম দিয়েছেন। ধ্যাত তারপর একটা মুভি ও দেখা হলো।
এর মাঝে ফারহান ভাইয়া একটা নতুন গেইম ডাউনলোড করে নিয়ে আসলেন।তারপর ওনার ফোনে দুজোন বাজি ধরে খেলতে লাগলাম।যে হেরে যাবে সে কান ধরবে।আমরা দুজন ই বেশ কয়েকবার হেরে গেলাম।দুজন কেই কান ধরতে হলো।ফারহান ভাইয়াকে কান ধরতে দেখে আমি তো হাসতে হাসতে গলে যাই।
এভাবেই দুপুর হয়ে গেলো।দুটো বেজে গেছে কিন্তু বাসা থেকে কেউ এলো না।মন খারাপ করে বসে রইলাম ।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমার সাথে বসে লাঞ্চ ও করে নিলেন। এভাবেই দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেল।কিন্তু কারো আসার নাম ই নেই । মন খারাপ করে বসে আছি দেখে। ফারহান ভাইয়া আমাকে ঘুমাতে বললেন।ঘুম ও আসছে না ধ্যাত।ফারহান ভাইয়া আমাকে একটা কিটক্যাট দিয়ে গেলেন।
কিটক্যাট দেখে মন টা ভালো হয়ে গেল ।
কিটক্যাট খেতে খেতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম কে জানে।
আর ফারহান ভাইয়া আমার পাশে বসে বসেই ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে থাকলেন।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 20
____________________________
সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙলো আমার।চোখ মেলতে না মেলতে দেখলাম সমস্ত টা অন্ধকার।একদম বিদঘুটে অন্ধকার যাকে বলে।মনের ভেতর অজানা সব ভয় জেকে বসলো।চিৎকার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে না হতে ঘরের এক পাশে মোম জ্বলে উঠলো।মনে হচ্ছে মোম টা ভাসছে , ধীরে ধীরে মোম টা আমার দিকে আগাতে লাগলো!ভয়ে আমার বুক ধুপ ধুপ করছে।
মোম টা আমার অনেকটা কাছে এসে আবার নিভে গেল।তারপর আর ও দুইটা মোম জ্বলে উঠলো এভাবে তিন টা চারটে, পাঁচ টা মোম জ্বলে আবার নিভে গেল।
এই শীতের মধ্যে ও আমি আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আবিষ্কার করলাম! ভয়ে রীতিমতো হাত পা কাঁপছে। শরীরে যতটা শক্তি সঞ্চয় হয়েছিল, মনে হচ্ছে এক নিমেষে সব উবে গেছে হাওয়া হয়ে।
এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত আমি ভুলে গেছি।
হঠাৎ এক পাশে হালকা বাজির আওয়াজ হলো। আর আওয়াজ টা ব্যালকনির দিক থেকে এসেছে।তাই সেটা দেখার জন্য সেই দিকে তাকালাম। তাকাতেই পেছন থেকে কতো গুলো আলো জ্বলে আবার নিভে গেল।
প্রচন্ড ভয় হচ্ছে আমার, ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কোনো রকম শক্তি সঞ্চয় করে উঠার জন্য প্রস্তুত হলাম।হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে আসলো এক রক্তাক্ত চেহারা যা দেখে আমি জোরে আহহ বলে চিৎকার দিলাম।আমি চোখ খিচে চিৎকার দেওয়ায় পরে কি হলো বুঝতে পারলাম না।
হঠাৎ চারদিক থেকে আওয়াজ শুনতে পেলাম।’ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ডিয়ার ফারাবি, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’
চিরচেনা কন্ঠস্বর গুলো চিন্তে আমার বিন্দু মাত্র অসুবিধা হলো না। মুখের মধ্যে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এতোক্ষন পাওয়া সমস্ত ভয় নিমেষেই কেটে গেল।
চারদিকে আলো জ্বলে উঠলো।মনিকা আপু এসেই আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর একটা পাপ্পি দিয়ে বলল ‘ হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার। ‘
আমি মনিকা আপু কে বললাম
‘ থ্যাংকস আপু।’
রিফাত ভাইয়া এসে আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
‘কিরে পেত্নি। পয়দা দিবসের শুভেচ্ছা প্রীতি ও এক বালতি ভালুপাসা। ”
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম ‘ তাহলে তো তুমি একটা পেত্নির ভাইয়া পেত।’
এই বলেই হি হি করে হেসে দিলাম। আমার কথা শুনে সবাই উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো। তখন রিফাত ভাইয়ার মুখ টা দেখার মতো ছিলো।
ফারহান ভাইয়া কে একটু দূরে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম।আমার দিকে একবারের জন্য তাকালো ও না।
খানিকটা খারাপ লাগলো।
মনি আন্টি,আরিফ চাচ্চু, আর রাজিব চাচ্চু একসাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন ” হ্যাপি বার্থডে আওয়ার আম্মিজান। ”
আমি হেসে বললাম “ধন্যবাদ বাচ্চা রা।”
আমার কথায় আবার সবাই হেসে উঠলো। বেশ কিছুক্ষণ এদের সাথে গল্প গুজব চললো।কয়েক মিনিট পর আম্মু, বড় মা , বড় আব্বু আর আব্বু আসলেন।
এসেই সবাই একে একে আমায় আদর করতে লাগলেন আর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। আমি সবাই কে গোমড়া মুখ করে বললাম ” সারাদিন কেউ দেখা করতে আসো নি। এখন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে।
” সরিইই। ” এক সাথে বললো সবাই। আমি কানে হাত চেপে বললাম ” আরেররর সবাই এক সাথে বলছো কেন।আর আশে পাশের মানুষদের অসুবিধা হচ্ছে তো। এটা তো হসপিটাল। ”
তখন ই ফারহান ভাইয়া একটু কাছে এসে বলল ” জী না। এটা সাউন্ডপ্রুফ রুম সো কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা কি অবুঝ? ”
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম “ওহহ ”
ওনি আমার কাছে এসে বললেন ” হ্যাপি বার্থডে ফারাবি। ”
আমি খানিকটা চমকে বললাম ” ধন্যবাদ। ”
রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়ার পিঠ চাপরে বলল
” আরে বেটা এই সব প্লেন করে, তুই ই উইস এখন করলি। ”
ফারহান ভাইয়া উত্তরে শুধু হাসলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু লোক এসে বলে গেলেন ” অল ইজ রেডি। ”
ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া চলে গেলেন।
আমি শুধু চেয়ে আছি। সবার সাথে আমি বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম।
ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া এসে মনিকা আপুকে হাত দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলেন।
তারপর রিফাত ভাইয়া বললেন ” ফারাবি চোখ অফ কর। ”
আমি বললাম
” কেন? ”
ফারহান ভাইয়া বলল
” বন্ধ করতে বলছি যখন বন্ধ করবি। এতো কথা বলিস কেন? ”
ফারহান ভাইয়ার কথায় আমি চুপসে গেলাম। রিফাত ভাইয়া আমার চোখ বেঁধে দিলেন।তারপর মনি আন্টি আর মনিকা আপু আমাকে হাত ধরে ধরে কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগলো। আমি বললাম
” আমরা কোথায় যাচ্ছি। ”
মনিকা আপু বলল
” আহা গেলেই বুঝতে পারবি। ”
বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে কোথাও একটা নিয়ে বসানো হলো। শরীরের ব্যথা টা এখন কমেছে কিন্তু হাঁটার জন্য এখনো কারো সাহায্য প্রয়োজন হয়।
তারপর আমার চোখ খুলে দেওয়া হলো। সামনে তাকাতেই দেখলাম একটা সুন্দর ঘরে আমাকে বসানো হয়েছে। চারিদিক টা বেশ সুন্দর করে সাজানো।সামনে একটা সুন্দর টেবিল।টেবিলে আর্টিফিশিয়াল ফুলের সাথে কয়েকটি আসল ফুল ও দেখতে পেলাম। বাহহহ চারদিকটা কে বেশ সুন্দর লাগছে। মনটা স্বচ্ছ হয়ে উঠলো , বেশ ভালো লাগছে। রিফাত ভাইয়া কাউন্ড করা শুরু করলেন
১০
৯
৮
৭
৬
৫
৪
৩
২
১
সাথে সাথে চারদিক থেকে ফুল আর জরির বন্যা হয়ে গেলো। পার্টি পপার এর আওয়াজে কানে হাত চেপে ধরলাম।সাথে সাথে টেবিল টা চিরে একটা কেক উঠে আসলো।মনে হচ্ছে আমার সামনে টেবিল চিরে কেক বের করার ম্যাজিক চলছে। বাহ সেই লাগছে তো।
কেক টা অসাধারণ দেখতে বেশ বড় আর উঁচু।কেকের উপরের দিকটাতে একটি মেয়ে থুতনিতে হাত দিয়ে বসে আছে।
মেয়ে টি আবার পিঠ ঠেকিয়ে আছে একটি লেটার এর সাথে।লেটারটি হলো ১৬ , এর অর্থ বুঝতে আমার বিন্দু মাত্র অসুবিধা হলো না। মেয়েটি হলাম আমি আর ১৬ লেটার টি হলো আমার বয়স।যার দরুন খুব সুন্দর করে বোঝানো হচ্ছে যে আমি আমার জীবনের ১৬ টি বছর পার করে দিয়েছি।
বাহহ সব কিছুই চমৎকার লাগছে তো। কেকের ডেকোরেশন টা চোখে পরার মতো। আমার ফেবরেট চকলেট ফ্লেবার এর সাথে বিভিন্ন কালার দিয়ে ডিজাইন করা।কেক টা ভীষন সুন্দর, মনটা তে এক অদ্ভুত শান্তি দিচ্ছে।
কেক টা সম্পূর্ণ উঠে আসতেই মনি আন্টি আমার হাতে নাইফ ধরিয়ে দিলেন। আমি নাইফ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই আছি।কারন আমি সব কিছুর সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত।
আমাকে এভাবে দেখে রিফাত ভাইয়া কাছে আসলো ।
আর সাথে সাথে একটা গাট্টা মেরে দিলো। তারপর ই বলা শুরু করল যে ” কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন।কেক কাঁটার বদলে আবার আমাদের কাঁটার প্ল্যান করছিস না তো! ”
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম ” ভাইয়া! ”
রাজিব চাচ্চু কাছে এসে বললেন ” আহা ভাতিজা।
মেয়ে টাকে রাঙাচ্ছিস কেন? ”
আমি ও অভিমানি সুরে বললাম ” হিংসে করছে।
সবাই আমায় এতো ভালোবাসে যে তাই। ”
ফারহান ভাইয়া বললেন ” একদম। কিরে ভাই আজকাল ফারাবি কে ও হিংসে করছিস। ”
রিফাত ভাইয়া অসহায় দৃষ্টি তে বলল
” শেষ মেষ তুই ও। ”
সবাই এক সাথে হেসে উঠলাম। হসপিটাল অথরিটির বেশ কিছু লোক দেখতে পেলাম সাথে নার্স আর ডাক্টর রা তো আছেন ই। মনিকা আপু এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন সাথে রিফাত ভাইয়া ও।
আমি কেক কাঁটা শুরু করলাম কিন্তু এবার ও মোম নিভালাম না। সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালেন।
আমি বললাম “আমার জীবনের আলো কেন নেভাবো।”
ফারহান ভাইয়া হাসলেন। নিশব্দের সেই হাসি আমার চোখ এড়ালো না। এর অর্থ অনেক কিছু তবু ও আমায় অবুঝ করে দেয় বার বার। কনফিউশনে পরে যাই বহু হাজার বার।
আমার কথায় সবাই হেসে উঠলো তারপর বলল
” বাহ আমাদের ফারাবি তো বেশ বড় হয়ে গেছে দেখছি। সুইট সিক্সটিন।”
যেই না একটু ভাব নিলাম , ফারহান ভাইয়া মাঝে ফোঁরন কাটলেন ” হ্যাঁ।ফারাবি আজকাল অনেক কিছুই বুঝে গেছে। কার থেকে যে শিখলো তা খোঁজ লাগাতে হবে। ”
আমি চেয়ে রইলাম ভ্যাবলার মতো। কেক কেঁটে রিফাত ভাইয়ার মুখের দিকে দিলাম।রিফাত ভাইয়া খেতে যাবে তখন ই কেক টাকে পাশ কাটিয়ে মনিকা আপুর মুখে দিয়ে দিলাম।সবাই হেসে উঠলো আর রিফাত ভাইয়া থ হয়ে মুখ গোমড়া করে রইলেন। তারপর রিফাত ভাইয়া কে খাওয়ালাম একে একে সবাই কে খাওয়াতে লাগলাম। ফারহান ভাইয়ার কাছে গিয়েই কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম কালকের কথা ভেবে।ফারহান ভাইয়া কেক টা নিচু হয়ে খেয়ে বললেন
” অস্বস্তির কি আছে। আড়ালে খাওয়াতে চাচ্ছিস নাকি?”
আমি শুকনো ঢোক গিলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
আর ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে উঠলেন।এভাবে ই সবাই কে কেক খাওয়ানোর পর্ব শেষ হলো। আর প্রচুর গিফ্ট পেলাম আমি, সেই মজা লাগছে।ফারহান ভাইয়া আবার গিফট দিলেন।বক্স টা খুলতেই দেখলাম এতো গুলো চকলেট সাথে একটা ফারমিউম , আর হ্যান্ড ওয়াচ। ঘড়ি টা অনেক অনেক সুন্দর।ঘড়ি টার কালার ডিজাইন সাইজ মডেল সব কিছু চেঞ্জ করা যায়।
সবাই একসাথে ডিনার করলাম। ছোট্ট একটা গানের আসর ও বসলো। সবাই গান গাইতে শুরু করলেন।
প্রথমে মনি আন্টি আর চাচ্চু গাইলেন
Tu Jo kehde agar to main jeena chorr du
Bin Soche ik pal saans lena chorr du
তারপর আম্মু আব্বু বড় মা বড় আব্বু সবার জোড়াজোড়ি তে এক সাথে গান ধরলেন। আগের যুগের গান , খানিকটা বরিং লাগলে ও সবাই হাত তালি দিলাম।
আমাকে অনেক জোড়াজোড়ি করলেন সবাই। আমি বলে দিলাম আমি শুধু শুনবো আজকে কারন আমি বার্থডে গার্ল আর তা ছাড়া আমি অসুস্থ।তাই আর কেউ জোড়াজোড়ি করলেন না।
এবার রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু গাওয়া শুরু করলেন
Kehte hain khuda ne is jahan
Mein sabhi ke liye
Kisi na Kisi ko hai banaya har Kisi ke liya
Tera milna hai us Rab ka ishara maano
Mujhko banaya tere Jaise hi Kisi ke liye
ফারহান ভাইয়া হালকা কেশে বললেন
” এহেম ভাই। পাশে বড় রা ও আছে। ”
রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু লজ্জা পেলেন।
রিফাত ভাইয়া কথা কাঁটাতে বললেন
” এই বার রাজিব চাচ্চুর পালা। ”
রাজিব চাচ্চু মানা করলেন। বললেন ” আরে আমার বউ তো নাই রে এখানে। ”
কিন্তু রিফাত ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়া ছাড়তে নারাজ। তাই রাজিব চাচ্চু কে গাইতেই হলো।রাজিব চাচ্চু গলা ছেড়ে সুর তুললেন।
চারিদিকে শুধু তোমার স্মৃতি আজ,
নেই শুধু তুমি কাছে
হয় যদি একবার যেতো গো জানানো ,
আমার ও যে হৃদয় আছে
জীবনের একটি ভুল,
ঝড়ানো কত ফুল
জানি না ওহ হো হো ওহ
জানি না
রাজিব চাচ্চু র এই দুঃখের গান শুনতে শুনতে আমরা পাবনা চলে গেছি। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি সবাই।
রাজিব চাচ্চু বলল “চুপ কর। আমার বউ এর জন্য প্রান যায় যায় আর তোরা মজা নেওয়া শুরু করছিস। ”
ফারহান ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে
” থাক চাচ্চু আর কান্না করো না। ”
রিফাত ভাইয়া রাজিব চাচ্চু কে জ্বালাতে বলল
” চাচ্চু গো তোমার জন্য আমার পরান ডা খা খা করে জ্বলতেছে গো। ”
মনিকা আপু এসে রিফাত ভাইয়া রে বলল
“এই তুমি চুপ করবা। তোমার এই ড্রামা দুই বছরের বাচ্চা ও বুঝতে পারবে। ”
রিফাত ভাইয়া মনিকা আপুর কথায় চুপসে গেলো।
আর এই দিকে আমি তো হাসতে হাসতে গলে যাচ্ছি।
সবাই এইবার ফারহান ভাইয়া কে ধরলেন।ওনার গলার স্বর অসম্ভব সুন্দর, কলেজের প্রতি টা ফাংশনে ওনার গান হওয়া চাই ই চাই। কিন্তু ওনি সব সময় গায় না।
খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া।কলেজ বনাম কলেজ গানের আসরে গান গেয়ে সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
সেরা গানের আসরের পুরস্কার টা ওনার জন্য ই ওনাদের কলেজ পেয়েছিলো। সবাই জোড়াজোড়ি করায় ওনি উঠে গেলেন তারপর গিটার নিয়ে সুর তুলতে তুলতে সবার চারদিকে ঘুরতে থাকলেন।বেশি টা সময় আমার কাছে কাছে থাকলেন।তার পর গিটারের দিকে চেয়ে আর মাঝে মাঝে আমার দিকে আর চোখে চেয়ে গাওয়া শুরু করলেন
Chal diya
Dil tere peeche peeche
Dekhta main rah gaya
Kuch toh hai
tera mere darmiyan
Jo ankaha sa reh gaya
Main jo Kabhi keh na saka
Aaja kehta hoon pehli dafa
Dil mein ho tum
Aankhon mein tum
Pehli nazar se hi yaara
Dil mein ho tum
Aankhon mein tum
Pehli nazar se hi yaara
Yeh Ishq ki Hain saazishein
Lo aa mile hum dobara
Dil mein ho tum
Aankhon mein tum
Pehli nazar se hi yaara
Pehli nazar se hi yaara…
চলবে