? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 25,26
ফাতেমা তুজ
25
বিকেলে ক্যারাম কোর্ড নিয়ে বাগানে যাচ্ছি।
অনেক দিন পর ক্যারাম খেলবো।
মনিকা আপু রিফাত ভাইয়া কে কল করলো ।
রিফাত ভাইয়া বলল 5 মিনিটের মধ্যে আসছি।
মনিকা আপু স্ন্যাকস আনার জন্য কিচেনে চলে গেল।
ক্যারাম কোর্ড বাগানের টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসার আগেই ফারহান ভাইয়া এসে হাজির।
ওনাকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছি।
আমি চেয়ারে বসতে যাচ্ছি আর তখনি ফারহান ভাইয়া আমার চেয়ারে বসে পড়ল।
আর আমি টাল সামলাতে না পেরে সোজা ওনার কোলে বসে পড়েছি।
তাও ওনার গলা জড়িয়ে, ওনি আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।
আর আমি ও ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কি হলো তা বুঝতে পারলাম না।
বেশ কিছুক্ষণ পর যখন বুঝতে পারলাম বিষয় টা তখন বেশ লজ্জা লাগলো।
কিন্তু আমি উঠার আগেই ওনি আমাকে আর ও লজ্জায় ফেলে দিলেন।
উনি হালকা বাকা হেসে বললেন
– বলতেই পারতি কোলে উঠতে ইচ্ছে করছিলো।
সেই ছোট থেকেই তো কোলে নিচ্ছি।
দুদিন আগে ও নিয়েছি, এভাবে না পড়লে ও পারতি।
আমি এমনিতেই কোলে নিয়ে নিতাম।
ওনার কথায় বিষম খেলাম।
আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি নাকি। আর উনি ই তো আমার চেয়ারটা তে বসে পড়েছে।
এতে আমার কি দোষ , ওনি যে ইচ্ছে করে এমন করেছে সেটি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।
আমি ওনার গলা ছেড়ে কোল থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
ওড়না ঠিক করে হালকা বিরক্তি নিয়ে অন্য চেয়ার টা তে বসলাম।
আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছেন।
এই লোকটা নিশ্চয়ই আগের জন্মে আমার শত্রু ছিলেন।
আর এই জন্মে এভাবে যখন তখন লজ্জা দিয়ে শোধ নিচ্ছেন।
আজব মানুষ, আরে ভাই আগের জন্মে যদি ও আমি তোর শত্রু হয়ে থাকি তার জন্য কি এই জন্মে ও শোধ নিবি।
মনিকা আপু স্ন্যাকস নিয়ে এসে পড়ল।
ফারহান ভাইয়া কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
– আরের ভাইয়া তুমি ও এসে পড়েছো দেখছি ।
বাহহহ ভালো ই হলো তো
ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বলল
– কেন আর কারো আসার কথা আছে নাকি ?
মনিকা আপু স্ন্যাকস এর ট্রে টা সাইট টেবিল এ রেখে একটা চেয়ার টেনে বসল।
তারপর বলল
– হুমম আসার কথা ছিলো না অলরেডি এসে পড়েছে।
আমরা সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম রিফাত ভাইয়া আসছে।
ফারহান ভাইয়া কে দেখে রিফাত ভাইয়া হালকা হাসল।
তারপর পিঠ চাপরে বলল
– আরে তুই ও কি খেলছিস নাকি।
এরা তো আমাকে কিছু বলে নি তোর কথা।
ফারহান ভাইয়া কিছু বলার আগেই রিফাত ভাইয়া আবার বলা শুরু করলো
– আররে ফারাবি পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেন।
মনে হচ্ছে বর কে মিস করছিস।
আহারে বোন টি আমার, থাক আর মন খারাপ করিস না।
তোকে খুব তাড়াতাড়ি শশুর বাড়ি পাঠাবো।
এই কথা তে মনিকা আপু আর ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।
আর আমি শুধু রাগে ফুসছি।
ফারহান ভাইয়া ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালেন।
তারপর বললেন
– ফারাবি আসলেই তো এমন পেঁচা হয়ে আছিস কেন।
কারো উপর পড়ে গেছিলি নাকি ?
যখন তখন যেখানে সেখানে পড়া তো তোর নিত্যসঙ্গী ।
এবার মেজাজ টা গেলো চড়ে।
ইচ্ছে করছে মাথা টা ফাটিয়ে দিই ওনার।
কিন্তু ঐ যে আমার একটাই মাথা তাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলাম।
উফফফ এরা আমাকে পেয়েছে কি।
রিফাত ভাইয়া বলল
– তো খেলা শুরু করা যাক।
আমি এবার বিরক্তি ঝেরে বললাম
– অবশ্যই ।
ফারহান ভাইয়া আমার বরাবর বসলেন আর রিফাত ভাইয়া মনিকা আপুর বরাবর।
সিঙেল খেলবো আমরা , আর আমি ও বেশ ভালো ক্যারাম খেলি।
তাই একটু হলে ও কনফিডেন্স তো আছেই।
একটু ভাব নিয়ে ই বসলাম।
বেশ কয়েক বার খেলার পর রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু দুজন ই নিল হয়ে গেল।
মানে গোল্লা খেয়ে গেল।
মনিকা আপু রিফাত ভাইয়া কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
কারন মনিকা আপুর সুন্দর দান টা রিফাত ভাইয়া নষ্ট করে দিয়েছে।
আর তার সুযোগ নিয়েছি আমি।
রিফাত ভাইয়া হালকা কান ধরে মৃদু স্বরে বলল
– সরি।
কিন্তু মনিকা আপু রাগে ফুঁসছে।
এবার গেইম হবে আমার আর ফারহান ভাইয়ার মধ্যে ।
এই সুযোগ কিছু তেই হাতছাড়া করা যাবে না।
এই বেডা বজ্জাত হনুমান কে তো হাড়াতেই হবে।
রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়ার সাপোর্ট নিচ্ছে আর মনিকা আপু আমার।
গেইম শুরু করার আগে বলা হলো আমাদের মাঝে যে হারবে তাকে, বাকি সবাইকে ট্রিট দিতে হবে।
আমি প্রথমে না না করলে ও পরে রাজি হয়ে গেলাম।
আসলে আমি হেরে গেলে এদের কাঁচকলা দিব ।
ইসসস বয়েই গেছে এদের ট্রিট দিতে।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ওকে ডান।
আমি ও বললাম
– ডান।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হালকা চোখ মেরে দিয়ে বাঁকা হাসলেন।
আর আমি বরাবরের মতো ই হয়ে গেলাম আহাম্মক।
ফারহান ভাইয়া আমার সামনে হাত দিয়ে শব্দ করে বললেন
– খেলার আগেই কি হার মেনে নিলি নাকি।
ভয় পেয়ে গেছিস মনে হচ্ছে ।
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম
– আমার বয়েই গেছে।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– তো গেইম শুরু করা যাক।
আমি ও সম্মতি জানালাম।
টান টান উত্তেজনা নিয়ে খেলে যাচ্ছি।
আর অন্য দিকে রিফাত ভাইয়া ও মনিকা আপুর ঝগড়া তো আছেই।
50 মিনিট খেলা হয়ে গেল কিন্তু কেউ হারছিই না।
আমার অবস্থা দেখার মতো হাত টা ব্যাথা ও করছে।
আর অপর দিকে ফারহান ভাইয়ার কোনো হেল দুল ই নেই।
মনে হচ্ছে এই মাত্র খেলতে বসেছেন।
আর আমি ক্লান্ত হয়ে খেলে যাচ্ছি।
রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু ও ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত।
একবার বসছে তো উঠছে।
কিন্তু আমাদের খেলা শেষ ই হচ্ছে না।
ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ওনি বাকা হাসলেন আর তারপর আবার চোখ মেরে দিলেন।
আর আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
বেশ বিরক্ত লাগছে, আরো কিছুক্ষণ খেলার পর ফারহান ভাইয়া কে হাড়িয়ে দিলাম।
আমি বুঝতে পেরেছি যে ওনি ইচ্ছে করেই হেরেছে ।
তাতে আমার কি আমি জিতেছি এটাই আসল কথা।
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ই লাফিয়ে উঠলাম।
মনিকা আপু ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
দুজন ই আনন্দে মেতে উঠলাম , ফারহান ভাইয়া আমার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন।
কিন্তু আমি এতোই ব্যস্ত যে ওনার দিকে তাকাচ্ছি ই না।
আর রিফাত ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
রিফাত ভাইয়া একবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ফারহান ভাইয়ার দিকে।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বোকা হাসি দিলেন।
রিফাত ভাইয়া কে পচাতে মিস করলো না মনিকা আপু।
বেচারা রিফাত ভাইয়া, আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
রিফাত ভাইয়া মনিকা আপুর মাথায় হালকা করে গাট্টা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো।
আর মনিকা আপু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রিফাত ভাইয়ার পেছনে দৌড়াতে থাকল।
এদের কান্ড দেখে আমার যায় যায় অবস্থা।
হাসতে হাসতে যখন ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম ওনি আমার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন।
কি সূক্ষ্ম সে দৃষ্টি , নেই কোনো অপবিত্রতা ।
এতো পবিএ চাউনি খুব কম মানুষের ই আছে।
ওনার দিকে তাকিয়ে আমি অপ্রস্তুত বোধ করলাম।
ওড়নার কোনা মুরাতে থাকলাম।
বেশ লজ্জা লাগছিল, মনে হচ্ছে আমার গাল দুটো কমলা রঙ ধারন করে নিয়েছে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
আমি ওনার অপ্রত্যাশিত হাসিতে ব্রু কুঁচকে তাকালাম।
ফারহান ভাইয়া চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আগালেন।
তারপর কানের কাছে মুখ নিলেন।
ওনার নিশ্বাস আমার কানে এসে পড়ছে।
কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
তার পর একটু সরে গিয়ে বললেন
– কোলে চড়তে ইচ্ছে হলে বল।
কোলে নিয়ে যাচ্ছি, ঐ ভাবে পড়ে যাস না আর।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমি ইচ্ছে করে পড়ি নি।
ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।
আমি আবার বললাম
– আপনি ইচ্ছে করে হেরেছেন তাই না ?
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– কিছু হারে ও যে সুখ আছে।
যা জিতে গিয়ে ও পাওয়া যায় না।
আমি ওনার কথার মানে উদ্ধার করতে পারলাম না।
বরাবর ই ওনি এমন এমন কথা বলে যার মানে আমার এই ছোট্ট মস্তিষ্ক কোনো ভাবেই বুঝতে পারে না।
আমি জানি হাজার চেষ্টা করে ও কোনো লাভ নেই।
যার দরুন খুব বেশি চেষ্টা করি ও না।
আমার আবার পাগলা গারতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
তার থেকে ভালো চুপ করে থাকাই শ্রেয়।
উনি বলুক ওনার মতো , আমার কি।
আমি জিতেছি এটাই মূল বিষয় ।
ওনি যদি ইচ্ছে করে হেরে যায় তাতে আমার কি করার।
আমি কি ওনাকে হারতে বলেছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ভাবলীলাস হীন ভাবে ভাবতে দেখে খানিকটা হেসে আমার মুখে ফু দিলেন।
আর আমার চোখ দুটো আপনা আপনি ই বন্ধ হয়ে গেল।
বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকাতেই দেখি ফারহান ভাইয়া নেই।
পরক্ষণেই বেশ লজ্জা পেলাম , ধ্যাত আমি যে কি করি ।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 26
_________________________
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
বিকেল টা ক্যারাম খেলাতেই পেরিয়ে গেছে।
দুপুরে খাওয়ার পর ফারহান ভাইয়ার ফোনে অনলাইন ক্লাস করেছিলাম।
বেশ কিছু পড়া জমা হয়ে গেছে।
তাই এখন পড়তে বসতে হবে।
ব্যালকনিতে গিয়ে কালো গোলাপ গাছটা কে একটু স্প্রে করলাম।
গাছটা কে এখন হাস্যউজ্জল লাগছে।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে ব্যালকনি তে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি।
পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ বেশ ভালো লাগছে।
হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ আমায় হেচকা টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে।
পারফিউম এর ঘ্রাণ টা নাকে প্রবেশ করতেই বুঝতে পারলাম এটা কে।
হুমম ফারহান ভাইয়া,
ওনার দিকে তাকাতেই ওনি ঠোঁটে দাঁত চেপে বললেন
– এখন কি কোলে করে পড়তে বসাতে হবে।
পড়াশুনা তে তো একদম ই মন নেই।
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম।
এখন তো মাত্র 5’40 বাজে।
এখনো 20 মিনিট বাকি আছে।
সন্ধ্যা হলো কিছুক্ষণ পূর্বে, এখনো সন্ধ্যার রেশ কাটে নি।
আর ওনি আমাকে এভাবে বকছেন।
আমি ভাবনাতে মগ্ন হয়ে ওনার কথার উত্তর দিতে ই ভুলে গেছি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ফারহান ভাইয়া সোজা কোলে নিয়ে নিলেন।
আমি এখন ও অবাক হয়ে আছি।
কোলে করে সোজা বেডে বসিয়ে দিলেন।
আমি কোনোরকম সাহস জুগিয়ে বললাম
– এটা কি হলো।
উনি বাকা হেসে বললেন
– যা চাইছিলি তাই হলো।
তুই তো সোজা কথা শোনার বাচ্চা না।
ওনার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
আমি বাচ্চা, এই লোকটা আমাকে যখন তখন বাচ্চা বলে।
আমি কি আদৌ বাচ্চা?
আমি ওনার দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি।
ওনি আমার কাছে এসে বসলেন তারপর বললেন
– অনেকটা দেরি হয়ে গেছে ফারাবি।
পড়াশুনা করতে হবে তো।
এমন করলে চলে , দেখ প্লাস টা পেতেই হবে তোকে।
উনি এতো মিষ্টি করে বললেন।
সত্যিই কি ওনি বললেন এটা।
ওনার প্রতি টা কথা আমার কানে বেজে চলছে।
আমি আবার ভাবনা তে ডুবে গেলাম।
ধ্যান ভাঙ্গলো ফারহান ভাইয়া র কঠিন গলার স্বরে
– ফারাবিইই।
পড়াশুনা তে একদম মন নেই।
এখনি বই নিয়ে পড়তে বস।
এই বলেই ওনি ব্যস্ত পায়ে হেঁটে চলে গেলেন।
আজব তো , একটু আগে না কতো সুন্দর করে বললেন।
এখন আবার কি হলো , আসলে আমার ই ভুল ।
আমি ভুলেই গেছিলাম এই ব্যাটা বজ্জাত হনুমানের মুখ দিয়ে ফুলচন্দন পড়া ছাড়া আর কিছু পড়ে না।
ইচ্ছে করছে বেঁধে রেখে দেই।
এখন এই ভালো তো একটু পর ই বজ্জাত।
উফফফ মাথা টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার।
কেন যে ওনাকে বুঝতে যাই আমি।
এই হনুমান কে বুঝা আমার কর্ম নয়।
পরক্ষণেই মনে পড়ে গেল ফারহান ভাইয়ার বলা শেষ কথা এখনি পড়তে বস।
হুরমুরিয়ে পড়লাম বই আনার জন্য।
খান পাঁচেক বই নিয়ে বসে পড়লাম।
কিন্তু কোন টা রেখে কোনটা পড়ব কনফিউশন এ শেষ হয়ে আছি।
উফফফ পাগল হয়ে যাচ্ছি , ধ্যাত আর ভালো লাগে না ।
কোনো মতে কনফিউশন কাটিয়ে একটা বই নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
15 মিনিটের মাথায় ফারহান ভাইয়া আসলেন।
সাথে 2 মগ ধোঁয়া ওঠা কফি।
বাহহহ 2 মগ যেহেতু তো নিশ্চয়ই আমার জন্য একটা এনেছেন।
পড়া রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
ওনি আমার কাছে এসে ব্রু কুঁচকে তাকালেন।
যার অর্থ এমন করে তাকিয়ে আছি কেন।
আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
– নাহহ এমনি ।
ফারহান ভাইয়া ও হালকা হাসলেন।
হয়তো বুঝতে পেরেছেন তাই।
উনি আমার দিকে একটা কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বললেন
– ফাস্ট টেস্ট করে বল ।
কেমন হয়েছে ।
আমি ওনার কথায় হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।
কফি তো রোজ ই খাই , তাহলে এখানে এতো আহামরি করে বলার কি আছে।
কিন্তু ওনাকে কিছু বললাম না।
কি জানি কোন কথার জন্য আমাকে আবার কান ধরিয়ে রাখবেন।
উনি ব্রু কুঁচকে বললেন
– ফাস্ট ।
আমি ও কিছু না বলে কফি কাপে একটি চুমুক দিলাম।
কিছুক্ষণ পর ই অদ্ভুত স্বাদ পেলাম ।
উমম না , রোজ ই তো কফি খাই কিন্তু আজকের টেস্ট টা ভিন্ন।
কিন্তু এর আগে ও আমি এটার স্বাদ নিয়েছি।
ঠিক ধরতে পারছি না।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন।
যেন আমি কেমন হয়েছে জানাতেই ওনার বুক থেকে পাথর নেমে যাবে ।
আমি ওনাকে বললাম
– আজকের কফির স্বাদ ভিন্ন।
কিন্তু আমি এর স্বাদ আগে ও নিয়েছি ।
ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কখন আর কবে । মানে কনফিউশন এ আছি।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– কেমন খেতে ?
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– অসাধারণ।
কিন্তু রোজ তো এমন হয় না।
কোথায় থেকে এনেছেন এটা ?
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
– উমমম আমার টা তো ভালো লাগছে না।
কেমন বিস্বাদ লাগছে।
তোর টা ভালো হয়েছে?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– আরে অসাধারণ হয়েছে।
তারপর কফির মগ টা এগিয়ে দিয়ে বললাম
– খেয়ে দেখুন একটু।
জাস্ট ওয়াও
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে কফি টা নিলেন।
তারপর আমার দিকে দৃষ্টি রেখে কফি কাপে একটি চুমুক দিলেন।
তারপর বললেন
– হুমম তাই তো।
এটা তো অসাধারণ , আমার টা একদম ই ভালো না ।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– কই দেখি ।
আপনারটা কেমন বিস্বাদ খেতে।
ফারহান ভাইয়া মুখে হাসির রেখা টানিয়ে ই কফি টা আমাকে দিলেন।
আমি ওনার দিকে ব্রু সংকুচিত করে কফি কাপে চুমুক বসালাম ।
কই নাহহ তো , এটা তো একদম পারফেক্ট।
ওনি তাহলে কেন এমন বলছেন ।
আজববব
ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– এটা তো একদম পারফেক্ট ।
তাহলে মিথ্যে কেন বললেন?
ফারহান ভাইয়া চোখ ছোট করে বললেন
– দেখি তো কেমন ঠিক ঠাক।
আমি ওনার দিকে কফি টা এগিয়ে দিলাম।
ওনি কফি কাপে অতি যত্নে দীর্ঘ একটা চুমুক দিলেন।
তারপর বললেন
– আহহহ এখন একদম পারফেক্ট।
তখন ঠিক ছিলো না।
আমি ওনার কথার মানে না বুঝ তে পেরে।
উত্তরে কিছু বললাম না।
কফি টা একদম শেষের দিকে , তখন ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– বললেন না তো কোথায় থেকে এনেছেন ।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসি নিয়ে বললেন
– পিচ্ছি একটা।
আমি ব্রু কুঁচকে ফেললাম।
যার অর্থ আমি যেটা জিজ্ঞাসা করেছি সেটা জানতে চাচ্ছি।
ফারহান ভাইয়া আবার কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
– আমি বানিয়েছি ।
এই কথা শুনে আমি বোধহয় অষ্টম আকাশ থেকে পরলাম ।
ওনি কফি বানিয়েছেন ?
বাহহহ এতো মজা হয় ওনার বানানো কফি।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– কেন ভালো লাগে নি বুঝি।
আমি বললাম
– আরে নাহহ অসাধারণ হয়েছে ।
আমি কফি টা শেষ করে বললাম
– কিন্তু এর আগে ও আমি এই স্বাদ পেয়েছি ।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে আমাকে বললেন
– তোকে হসপিটালের ছাদে বানিয়ে খাইয়েছিলাম।
আমি মনে পড়তেই বললাম
– ড্যাম।
তখন জ্বর টা বেশি হওয়াতে তেমন মনে করতে পারছিলাম না।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন।
ওনার হাসিতে সেই দিনের সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গেল।
ইসসস ওনি আমাকে কোলে করে ছাদ থেকে নামিয়েছিলেন ।
আর আমি ওনার গান শুনতে শুনতে কখন যে ওনার কাঁধে ঘুমিয়ে পড়েছি লাম ।
ইসসস কি লজ্জা ।
সেই সব কথা মনে পড়তেই বেশ লজ্জা লাগছে।
ফারহান ভাইয়া বোধহয় বুঝতে পেরেছেন। তাই মুখে হাসি রেখেই পড়া দিয়ে চলে গেলেন।
বললেন সকালে যেন সব কমপ্লিট পান।
তারপর আর উনি আসেন নি।
ইসসস কি শান্তি, এতোক্ষন মনে হচ্ছিল লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাই।
পড়াশুনা 50 % কমপ্লিট করে 9’00 বাজে ডিনার করতে গেলাম।
ডিনার শেষে করিডরে বসলাম হালকা আড্ডা দেওয়ার জন্য ।
যেহেতু ফারহান ভাইয়া হেরেছেন তাই কালকে ওনি আমাদের ট্রিট দিবেন।
সবার কথা মতো ঠিক হলো , সন্ধ্যা বেলা বের হবো আর ডিনার কমপ্লিট করে বাসায় ফিরব।
আড্ডা শেষ হলে মনের আনন্দে রুমে যাচ্ছিলাম।
তখনি ফারহান ভাইয়ার ডাকে থেমে গেলাম ।
ফারহান ভাইয়া ফোনে স্কল করতে করতে বললেন
– ফারাবি কতোটুকু কমপ্লিট হয়েছে ?
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললাম
– কি কমপ্লিট হবে ?
ফারহান ভাইয়া ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালেন।
তারপর আমার পা থেকে মাথা অব্দি একবার স্ক্যান করে নিলেন।
মুখে হালকা বিরক্তি ফুটিয়ে বললেন
– তোকে দেখতে এতো টা ও বাচ্চা না । অথচ কথা বলিস পাঁচ বছরের বাচ্চা দের মতো।
আমি পড়াশুনার কথা বলছি ।
আমি বোকা হাসি দিয়ে বললাম
– ওওও। আসলে আমি গুলিয়ে ফেলেছিলাম।
ফারহান ভাইয়া আবার ফোনে মনোযোগ দিয়ে বললেন
– তো কতোটুকু কমপ্লিট হয়েছে?
আমি মলিন মুখে বললাম
– 50%
ফারহান ভাইয়া তেমন কিছু না বলে, ফোন টা পকেটে নিয়ে নিলেন।
তার কিছুক্ষণ পর বললেন
– ইটস ওকে। 11’30 তে ঘুমিয়ে পড়বি।
সকাল বেলা মনিকা কে বলব জাগিয়ে দিতে।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম
– কেন। আজকে তো আপনি জাগিয়ে দিয়েছিলেন ।
ফারহান ভাইয়া কিছু না বলে চলে গেলেন।
আমি ও কিছু ভাবলাম না আর ,কারন ওনাকে বুঝতে গেলে আমার মাথা খুলে পড়ে যাবে।
তাই রুমে গিয়ে ওনার কথা মতো পড়তে বসলাম।
( অন্যদিকে ফারহান সোজা ছাদে চলে গেল। ছাদে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
কুয়াশা ভরা আকাশে চাঁদ টাকে দেখাই যাচ্ছে না ।
কোথাও একটা কষ্ট রয়ে গেছে । যা কেউ জানে না,বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর। তবু ও ফারাবি কে এই কষ্টের এক ফোটা ও পেতে দিবে না । প্রেয়সী কে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে না পারা ঠিক কতোটা যন্ত্রণা দায়ক ।
তা বলে বোঝানো সম্ভব না।)
ফারহানের ধ্যান কাটলো রিফাতের ডাকে ।
রিফাত বলল
– কি রে ঘুমাবি না ? অলমোস্ট 12 টা বাজতে চলল।
ফারহান বলল
– হুমম চল।
তারপর ওরা চলে গেল।
আমি পড়া শেষ করে বসে আছি ।
কিন্তু খানিকটা পড়া তো এখনো বাকী আছে।
থাক কালকেই পড়ব নে , সব ভাবনাকে কাটিয়ে তলিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে ।
চলবে