? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 29,30
ফাতেমা তুজ
29
ফুড কোড থেকে বেরিয়ে পড়া মাত্র আমাদের সামনে উপস্থিত হয় এক পাগল।
আমরা সবাই খানিকটা ভয় পেয়ে গেলে ও ভয় পান নি ফারহান ভাইয়া।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষণ ওনার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন।
পাগল টা কিছু বলছে , কিন্তু আমরা তার কিছুই বুঝতে পারছি না।
ফারহান ভাইয়া ওনার সামনে গিয়ে বললেন
– শান্ত হন।
আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি।
ফারহান ভাইয়ার কথায় লোকটা কেমন শান্ত হয়ে গেলেন।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে ওনাকে একটা বেঞ্চে বসালেন।
আর আমরা সব কিছু অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছি।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে ইশারা করে কিছু বললেন।
রিফাত ভাইয়া বুঝতে পেরে কোথাও একটা চলে গেলেন।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে লোকটাকে বললেন
– আপনার কোনো ভয় নেই।
আপনি আমাদের ভয় পাবেন না ।
ক্ষিদে পেয়েছে তাই না ।
লোকটা কিছু বলল না।
লোকটার বয়স 35-40 হবে , কিন্তু দাঁড়ি ,গোঁফ, চুল মিলে মনে হচ্ছে 50+।
কিছুক্ষণ পর রিফাত ভাইয়া চলে আসলেন।
হাতে আনলেন এক প্যাক বিরিয়ানি আর একটা ওয়াটার বোটল।
ফারহান ভাইয়া লোকটার সামনে খাবার টা রাখতেই লোকটা কোনো দিকে না তাকিয়ে গবগব করে খেতে লাগলেন।
মনে হচ্ছে কতো দিন খায় নি।
পাগল হোক বা অন্য কিছু ক্ষিদে তো সবার ই আছে তাই না।
বেশ কিছুটা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলেন।
কিন্তু লোকটার মুখে এক অদ্ভুত তৃপ্তি দেখা গেল।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষণ থেকে একটু দূরে সরে আসলেন।
তারপর কারো সাথে ফোনে কথা বলে আবার চলে আসলেন ।
লোকটার খাওয়া শেষ হলে , ফারহান ভাইয়া ওনার পাশে বসলেন।
তারপর বললেন
– আপনি কি জানেন আপনার ঠিকানা আপনার নাম ।
লোকটা কিছু বলল না ।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বলল
– আমি জানি।
ফারহান ভাইয়ার কথায় আমরা চমকে গেলাম কিন্তু কিছু বললাম না।
ফারহান ভাইয়ার এই কথায় লোকটা ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিক করে বসে রইলো।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আপনি একজন মানুষ । যার এ পৃথিবীতেই বাস।
আপনার ও একটা পরিবার আছে।
আছে সুন্দর এক সংসার ।
লোকটা চমকে তাকালেন, ফারহান ভাইয়া আবার বললেন
– আপনি অসুস্থ,তাই আপনাকে চিকিৎসা করাতে হবে।
তাহলে আপনার সমস্ত কষ্ট চলে যাবে।
বেশ কিছুক্ষন ধরে ফারহান ভাইয়া এমন হাজারো কথা বললেন ।
আর আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনে যাচ্ছি।
লোকটা কিছু সময় মনোযোগ দিয়ে শুনল , আবার কিছুটা সময় শুনল না।
এমন করতে করতে হঠাৎ একটা জিপ আমাদের সামনে উপস্থিত হলো।
জিপ থেকে দুটো লোক বের হয়ে এসে ফারহান ভাইয়ার সাথে কুশল বিনিময় করলো।
ওনাদের কথা তে বুঝতে পারলাম এরা মানসিক হসপিটালের লোক।
ওনারা দুজন যখন পাগল ব্যাক্তি কে ধরতে গেল তখন পাগল ব্যাক্তিটি গর্জে উঠল।
ফারহান ভাইয়া ওনার কাছে যেতেই থেমে গেল।
ফারহান ভাইয়া শান্ত স্বরে বলল
– আপনি ওনাদের সাথে যেতে পারেন।
ওনারা সমস্ত কষ্ট দূর করে দিবেন।
আর ওনাদের কথা মতো চলবেন, ওনারা অনেক ভালো।
আশ্চর্য হলে ও সত্যি যে লোকটা দমে গেল।
আর ওনাদের সাথে চলে গেল।
যাওয়ার সময় মুখে ছিল এক তৃপ্তির হাসি।
আমরা ওনাদের বিদায় দিয়ে খানিকটা দূরে চলে আসলাম ।
বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বললাম না।
আমি শুধু একটা কথাই ভাবছি একটা লোক কি ভাবে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে , একজন পাগলের প্রতি এতো সহানুভূতি ।
আর ও কিছুক্ষণ কেটে গেল । ফারহান ভাইয়া নীরবতা ভেঙে বললেন
– আমরা তো ঘুরতে এসেছি।
এভাবে চুপচাপ থাকলে চলে।
নানা রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতেই হবে।তাই বলে কি এভাবে গুটিয়ে থাকব।
নো নেভার।
এই ভাবেই কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেল।
আমরা লেকের ধারের বিভিন্ন স্ট্রিট ফুড ও খেলাম।
আমার কাছে তো বড় বড় রেস্টুরেন্ট এর থেকে স্ট্রিট ফুড ই ভালো লাগে।
কিন্তু এই যে আমার পাশে থাকা ফারহান সাহেব।
উনি হলেন বিশ্বের নাম্বার ওয়ান হাইজিন মেন্টেনকারী।
উফফফফফ
অনেক জোড়াজোড়ি করে খেয়েছি ।
শীতের দিন হওয়ায় পিঠার সাথে বাটা উফফফ অসাধারণ খেতে।
ভুট্টা পোড়া , ফলের আচার সব ই খেলাম কিন্তু অলপো অলপো।
কারন ডিনার তো করতে হবে তাই না।
যেহেতু পুরো লেক টাতেই হাঁটছি তাই যা খাচ্ছি সব ই হজম হয়ে যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পুরো লেকটার সৌন্দর্য উপভোগ করে একটা বড় রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।
রেস্টুরেন্ট টা হেব্বি, বিশাল বড়ো জায়গা নিয়ে করা।
রেস্টুরেন্ট এ ঢুকতেই কিছু লোক আমাদের ওয়েলকাম করলো।
আমরা একটা টেবিলে বসে অর্ডার দিলাম।
কিছুক্ষণ পর আমাদের ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস দিয়ে গেল।
ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস টা লেমন ফ্লেবারের বাহহ এরা জানালো কিভাবে লেমন ফ্লেবার আমার ফেবরেট।
ড্রিঙ্কস খেতে খেতে আমাদের খাবার ও চলে আসলো।
সবাই যে যার মতো অর্ডার করলে ও ফারহান বাবু আমাকে অর্ডার করতে দেন নি।
কারন আমি এখনো পুরোপুরি সেইফ নই।
আজব একদিনে কি এমন হবে।
আমার জন্য স্পেশাল আয়োজন ।
উফফফ দেখলেই গা জ্বলে যায়।
আমার খাবার টা দিতেই দেখলাম এক বাটি সুপ ,অবশ্য ই এটা
উইদাউট মাসরুম , বাট সুপ টা বেশ লাইট।
কেন এতো লাইট তা জানি না, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে মসলার উপর বেশ নজর দিয়েছে।
আমার জন্য সুপের সাথে একটা অনথন।কেন রে ভাই আর একটি দিলে কি হতো।
একদম সাদা ভাত যদি ও বাসমতী চালের , আজব ফ্রাইড রাইস এ কতোটুকুই বা তেল।
হালকা তেলে রান্না করা ফিস পকরা , ডোরি ফিস আর মিট বল।
সাথে একটা সাসলিক।
যাক আমার ফেবরেট সাসলিকটা আছে দেখছি।
শান্তি
ড্রেজাট এ আছে একটা জুস , আমের পুডিং আর মালাই চপ মিষ্টি ।
যাহহ এতো গুলো খাবার ভাবছেন তো।
আরে ভাই এতো খাবার হলে কি হবে পরিমান টা তো দেখবেন।
যাই হোক খাবার টা যতো টা খারাপ ভেবেছি ততো খারাপ না।
বরং বেশ ভালো খেতে, আর ডোরি ফিস টা ছিলো বেস্ট।
খাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্ট টা একটু ঘুরে সবার কিছু ছবি তুলে নিলাম।
সবাই বেশ মজাই করলাম।
ফারহান ভাইয়া ঘড়িতে দেখলেন 10 টা ছুঁই ছুঁই।
আমরা রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মাঝে একটা আইসক্রিম সেন্টার দেখে বায়না ধরলাম।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া কিছুতেই এই আইসক্রিম খেতে দিবেন না।
বুদ্ধি করে কান্না জুড়ে দিলাম , ফারহান ভাইয়া তো আমার এমন হঠাৎ কান্না তে বোকা হয়ে গেল।রিফাত ভাইয়া বিরক্তি ঝেরে বললেন
– উফফফ যাচ্ছি।
আর কাদিস না , ফারহান ভাইয়া ও আর কিছু বললেন না।
আমি মুখে জয়ের হাসি নিয়ে বসে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিফাত ভাইয়া সবার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসলেন।
ফারহান ভাইয়া আইসক্রিম খাবেন না বলতেই আমি খপ করে ওনার আইসক্রিম টা ও নিয়ে নিলাম।
এতে সবাই কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলো ।
আমি ভেংচি কেটে আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
দুটো আইসক্রিম খেয়ে বসে বসে ফোনে কিছুক্ষণ গেইম খেললাম।
খেলতে খেলতে বাসায় ও পৌছে গেলাম ।
বাসায় গিয়ে সোজা রুমে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম।
চোখে প্রচন্ড ঘুম , কিন্তু ফ্রেস তো হতেই হবে।
কোনো মতে নিজেকে সামলিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে বেডে শুতেই ঘুম আমাকে নিজের মধ্যে জড়িয়ে নিলো।
__________________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো রিফাত ভাইয়ার ডাকে।
10 মিনিট ধরে নাকি ডাকছে আমাকে মনিকা আপু কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আর ফারহান ভাইয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে স্কল করছে।
পিটপিট চোখে তাকিয়ে আছি সবার দিকে।
মনিকা আপু আমার ঘুম ভাঙতে দেখে বলল
– কি ঘুম রে তোর । পাক্কা দশ মিনিট ধরে ডাকছি সবাই।
কোনো পাত্তাই নেই।
আমি কিছু বললাম না
সোজা বাথরুমে চলে আসলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিং এ চলে গেলাম নাস্তা করার জন্য।
সবাই কে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
বড় আব্বু বলল
– আরে মা ।
শরীর ঠিক লাগছে তো।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– হুমম ঠিক আছি।
সবার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো খাবার শেষে রুমে যাবো।
তখন আম্মু বলল
– ব্যাগ গোছাতে পারবি নাকি , আমি আসব?
আমি বললাম
– একটু আসো।
আম্মু বিরক্তি নিয়ে বলল
– কবে যে বড় হবি।
আমি কিছু না বলে মুখে হাসি নিয়েই রুমে চলে আসলাম।
আম্মু ব্যাগ গুছাচ্ছে আর বকা দিচ্ছে।
দুদিন বাদে যাবে শশুর বাড়ি এখন ও বাচ্চা মো গেল না।
বর কি তোকে গড়ে পিঠে নিবে, নাকি তোর সমস্ত কিছু করে দিবে।
আমি কানে ইয়ারফোন গুঁজে দিলাম।
বড় মা ও এসে সমস্তটা গোছাতে সাহায্য করলো।
সব কিছু প্রায় কমপ্লিট তখন ফারহান ভাইয়া আসলো।
আম্মু কে আর বড় মা কে বলল
– কাকি তোমাদের কি ফারাবি কে লাগবে এখন।
ওর অনলাইন ক্লাস আছে।
বড় মা আর আম্মু আমাকে ফারহান ভাইয়ার সাথে পাঠিয়ে দিলো।
অনলাইন ক্লাস শেষ করে সোজা মনিকা আপুর কাছে চলে আসলাম।
দেখলাম মনি আন্টি ও আছে।
মনি আন্টি কে বললাম
– কাকিমা তুমি দেখি এখনিই ব্লাস্ করছো।
বাহহহবা
মনি আন্টি বলল
– ধ্যাত। কি সব বলিস , বড্ড পেকে গেছিস।
আমি মনি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– কতো দিন পর আবার এতো খুশি লাগছে বলো তো।
মনি আন্টি আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল।
একেই বলে ভাগ্য।
মনিকা আপু আর মনি আন্টির সাথে আড্ডা দিয়ে চলে আসলাম।
গোসল, আর খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে বারান্দার গাছ টাতে একটু স্প্রে করে রুমে আসলাম।
যেহেতু সন্ধ্যা বেলা ফ্লাইট তাই একটু ঘুমানো প্রয়োজন।
আর তাছাড়া কতো দিন পর ঢাকা যাচ্ছি।
কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে, আজকে রাতে তো ঘুমানোর সুযোগ ই পাবো না।
সব ভাবনাকে ছাড়িয়ে তলিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে ।
___________________________
?.
আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত আমার ফেবরেট একজন রিডার্স আপু অরিন নীল এর কাছে।
আসলে আমি গল্পের থিম টা আগেই ভেবে রেখেছি ।
আর তাছাড়া এই গল্প টা যেহেতু একদম পিচ্ছি সময় থেকে হয়ে গেছে তাই সংসার দেখাতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবে ।
উপন্যাস লিখব ইনশআল্লাহ একদিন।
আমি তোমাদের সকলের মতামত পরবতীর্তে যেসব গল্প লিখব সেগুলোতে রাখার চেষ্টা করব।
আমার বেশ কিছু রিডার্স আছে যারা নিয়মিত কমেন্ট করে।
তাদের সকলের নাম একদিন লিখার চেষ্টা করবো।
সবার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 30
____________________________
সন্ধ্যা 7 টায় ফ্লাইট হওয়ায় 6’30 তে এয়ারপোর্ট এ উপস্থিত হতে হবে।
যেহেতু ফ্লাইট দেশের মধ্যে ই তাই বেশি আগে যাওয়া লাগবে না।
সন্ধ্যার মধ্যে সমস্ত কিছু প্যাক করে রেডি হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হঠাৎ মনে পড়ল আমার কালো গোলাপ গাছটার কথা।
বাসার বাইরে নামিয়ে রেখেছিলাম।
গাড়ি থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।
গাছটাকে কোনো মতে টেনে নিয়ে আসলাম গাড়ির কাছে।
আমাকে দেখে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি মুখ কুঁচকে বললাম
– কি হয়েছে?
রিফাত ভাইয়া উচ্চ শব্দে হেসে উঠল, আর তার সাথে সাথে সবাই হেসে উঠলো।
আমি এদের হাসার কারন বুঝতে পারলাম না।
রিফাত ভাইয়ার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকাতেই রিফাত ভাইয়া কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলল
– এই গাছটিকে এখানে আনলি কেন?
আমি সাধারন ভাবেই উত্তর দিলাম
– কেন এটা তো আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো।
রিফাত ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে বলল
– আরে বোকা মেয়ে তুই কি এটা নিয়ে ককপিট দিয়ে উরে যাবি নাকি?
কিছুক্ষণ রিফাত ভাইয়ার দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থেকে যখন বুঝলাম বিষয় টা তখন লজ্জা তে কুকরে গেলাম।
আমি ও না ধ্যাত, কিন্তু এই গাছ টিকে এখানে রেখে যাওয়া যাবে না।
আমি রিফাত ভাইয়া কে বললাম
– আমি এই গাছটা কে রেখে যাবো না।
কিছুতেই না , রীতিমতো কান্না জুড়ে দিলাম ।
ফারহান ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে এসে বলল
– ওকে ওকে কান্না করিস না রে ভাই।
ভালো লাগে না , বাচ্চা দের মতো কান্না ।
আমি ওনার দিকে ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমি আপনার ভাই ?
ফারহান ভাইয়া কিছু না বলে শুধু আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন।
তারপর বললেন
– বেশি বুঝিস তুই।
এখন কান্না থামা , এই গাছ টা কে পিকাপের সাথে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
কাল সকালেই পৌছে যাবে।
আমি খুশি হয়ে গেলাম, মনের আনন্দে গাড়িতে উঠে বসলাম।
আসলে বেশ কিছু জিনিসপত্র ঢাকাতে নেওয়া লাগছে যার জন্য পিকআপ এর ব্যবস্থা ও করা হয়েছে।
ফারহান ভাইয়া গাছটিকে উঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভ করে সোজা এয়ারপোর্ট এ চলে আসলেন।
গাড়ি এয়ারপোর্ট এর বিশেষ পার্কিং সাইটে পার্ক করে নিলেন।
যাতে করে কোনো সমস্যা না হয়, আর গাড়ি ঠিক সময় ওনার কাছে পৌছে যায় ।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম আব্বু, আম্মু , বড় মা, বড় আব্বু, মনি আন্টি , রাজিব চাচ্চু আর আরিফ চাচ্চু এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই হাতে জুস ধরিয়ে দিলো ।
আমি আপন মনে জুস খেতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট এর জন্য ডাকা হলো আর আমরা সব ফরমালিটিস কমপ্লিট করে ককপিট এ উঠে গেলাম।
_____________________
ফ্লাইট লেন্ড করে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে 9 টা বেজে গেল।
মনিকা আপুর বাসা আমাদের বাসা থেকে একটু আগে হওয়ায় ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে এসেছি।
আমাদের বাসার অপজিটেই ফারহান ভাইয়া দের বাসা আর পাশের বাসাটা মনি আন্টি দের।
আমরা আসাতেই দেখলাম সবাই দাড়িয়ে আছে
আমাদের জন্য।
এদের সবাই কে দেখে মন যে কতোটা শান্তি অনুভব করছে তা বলে বোঝানো যাবে না।
ফারহান ভাইয়ার আব্বু, আম্মু , রিমি , মনি আন্টির আব্বু, আম্মু আর ওনার ভাবি ও আছে।
কতো দিন পর এদের দেখা।
রিমি আমাকে দেখা মাত্র ই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল।
জড়িয়ে ধরে তো ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদেই দিলো।
মেয়ে টা অনেক বেশি ইমোশনাল।
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললাম
– আমি এসেছি তাই খুশি হস নি বুঝি।
রিমি আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল
– কে বলল খুশি হই নি।
আমি ওর পিঠে আলতো হাত ছুঁইয়ে বললাম
– আরে বোকা মেয়ে তাহলে এভাবে কাঁদছিস কেন?
রিমি চোখ মুছে বলল
– আর কাদবো না।
আমি আর রিমি দুজোন ই হেসে দিলাম।
ফরহাদ চাচ্চু, রোমা আন্টি, মণি আন্টির পুরো পরিবারের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম।
সবাই আমাকে আদর করছে , এরা সবাই আমাকে বড্ড ভালোবাসা যে।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রিমির সাথে গল্প করতে করতে ফারহান ভাইয়াদের বাসায় চলে আসলাম।
আজকে আমরা সবাই এখানেই ডিনার করবো রিফাত ভাইয়া , আর আমি এখানেই থাকবো।
কারন বাসাটা তে কিছু কাজ ও আছে ।
শুধু শুধু আমরা কি করবো তার থেকে ভালো এখানেই থাকবো আজকে ।
3 ফ্যামিলির সবাই মিলে ডিনার সেরে গল্প করে সোজা রিমির রুমে চলে আসলাম।
রিমির সাথে বেডে শুয়ে আছি।
দুজোন ই সিলিং এর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।
রিমি কে ধ্যান ভেঙে বললাম
– এই তুই আমাকে সাত দিন পর পর কেন কল দিতি?
কি হয়েছে তোর আগের মতো নেই মনে হচ্ছে।
কেমন যেন পরিবর্তন এসেছে।
রিমি আমার কথায় বেশ ঘাবড়ে গেল।
তারপর তুতলিয়ে বলল
– তেমন কিছু না রে।
আমি উঠে বসে রিমি কে ও টেনে উঠালাম ।
তারপর বললাম
– আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তো।
রিমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।
এই মেয়েটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একদম মিথ্যে বলতে পারে না।
আমি রিমি কে আসস্ত করে বললাম
– আরে বোকা মেয়ে আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।
আমাকে বলতে দৃধা কিসের হুমম ।
রিমি খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
– আসলে একটা ছেলে আমাকে আট মাস ধরে পছন্দ করে।
কখনো বাজে কথা বলে নি, বা বাজে ব্যবহার ও করে নি।
আট মাস ধরে পেছনে পড়ে আছে।
আমি ওর দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললাম
– তুই কি বলেছিস ?
রিমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– আমি কিছু বলি নি।
আসলে
আমি রিমি কে সোজা করে বললাম
– আসলে কি ?
রিমি চোখ বন্ধ করে বলল
– আসলে আমি জানি না এই অনুভূতির নাম কি।
কিন্তু সারাক্ষণই ও আমার মাথার মধ্যে ঘুরে।
আমি কিছুই বুঝি না , কেন এমন হয়।
কোনো কিছুতে মন দিতে পারি না।
আমি জানি তোর সাথে বেশি কথা বললে তুই বুঝে যাবি তাই কম কথা বলতাম।
আমার সব কিছু তেই অস্বস্তি হয়।
কিছুই ভালো লাগে না ।
আমি ও খানিকটা অবাক হয়ে রইলাম।
কারন এই অনুভূতির সঙে আমি পরিচিত নই।
অনেক প্রপোজ এসেছে কখনো তাদের দিকে দ্বিতীয় বার ফিরে ও তাকাই নি।
আর মনের কোনে কখনো ভালোবাসা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ও জাগে নি।
সারাক্ষণ তো রিফাত ভাইয়ার সাথে ফাজলামি আর ফারহান ভাইয়ার ধমক খেয়ে ই কেটে গেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর রিমি আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল
– এই ফারাবি তোর কি হলো।
আমি একটু চমকে বললাম
– হুমম । শুনছি , আসলে এই অনুভূতির সাথে আমি পরিচিত নই।
কখনো প্রেম ভালোবাসা এই সব নিয়ে ভাবি নি।
রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– এখন বল তো কি করি আমি।
কিছুই বুঝতে পারছি না ।
আমি রিমির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম
– আরে এত চিন্তা করছিস কেন।
তুই আগে তোর অনুভূতির সাথে পরিচিত হ তারপর সিদ্ধান্ত নিবি।
আর ওনি যদি তোকে ভালোবেসে ই থাকে তো আর ও কয়েক বছর এমনি তেই অপেক্ষা করবেন।
এতো ভাবিস না , এই বলে রিমি কে জড়িয়ে নিলাম।
তারপর রিমির সাথে অনেকক্ষণ গল্প চালিয়ে গেলাম।
রাত বোধহয় দুটো বাজে তখন ফারহান ভাইয়া দরজায় নক করলেন।
রিমি দরজা খুলতেই দেখলাম সাথে রিফাত ভাইয়া ও আছে ।
ফারহান ভাইয়া রিমি কে বলল
– ফারাবি কে নিয়ে ছাদে আয়।
রিমি ব্রু কুঁচকে বলল
– এতো রাতে ভাইয়া ছাদে গিয়ে কি করবো।
ফারহান ভাইয়া কোমরে হাত গুঁজে দাড়ালেন ।
পেছন থেকে রিফাত ভাইয়া বলল
– রিমি তুই এই ফারাবির সাথে থাকতে থাকতে পুরো ওর মতো হয়ে গেছিস।
আমি বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম
– সব দোষ আমাকে দিতে পারলেই তোমার শান্তি ।
রিফাত ভাইয়া হালকা হাসলেন।
ফারহান ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে স্ক্যান করে নিয়ে বলল
– তাড়াতাড়ি চলে আয়।
আমি আর রিমি দুজোন এই এদের পেছন পেছন ছাদে চলে আসলাম ।
চলবে