স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 35,36

0
842

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 35,36
ফাতেমা তুজ
35

বাসা থেকে বেশ কিছুটা দূরে স্কুলের পাশের পার্ক টা তে ফারহান ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেলেন।
বেঞ্চে বসিয়ে পাশে থাকা আইসক্রিম স্টল থেকে দুটো লেমন ফ্লেবার এর আইসক্রিম নিয়ে আসলেন।
বরাবরের মতোই প্রথম বাইট টা আমাকে দিয়ে দেওয়ালেন।
আর আমি ও আমার আইসক্রিম থেকে ওনাকে বাইট দিতে বললাম।
এই বিষয়টা অভ্যাস হয়ে গেছে।
আমি ও কেন এই বিষয়টা মেনে নেই তা জানি না।
বিষয়টা আমার কাছে বেশ ভালো ই লাগে।
আইসক্রিম খেতে খেতে বললাম
– কিছু বলার জন্য এনেছেন?

ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিক ফিরে রইলেন।
আমি ও আর কিছু বললাম না।
আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলে ফারহান ভাইয়া আমাকে বললেন
– ফারাবি তুই মিরন এর থেকে দূরে থাকবি।
ইনফেক্ট সব ছেলেদের থেকে ই দূরে থাকবি।
আমি তোকে বলছিনা ঘরে বসে থাকতে , কিন্তু লিমিট যেন ক্রস না হয়।
সৌজন্য তা বজায় রাখতে যতটুকু দরকার ঠিক ততোটুকুই করবি।

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।
ফারহান ভাইয়া মুখের কোনে হাসি রেখে বলল
– গুড গার্ল।
আজকের পর থেকে কিন্তু বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।

আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম
– আচ্ছা।
তারপর কিছুক্ষণ পার্কে বসে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাড়ি পৌছে লম্বা সাওয়ার নিয়ে বিউটিশিয়ান আপুর কাছে সাজতে চলে গেলাম।
মেরুন কালারের গরজিয়াজ একটা থ্রি পিস পরলাম তার উপর মেরুন জর্জেট এর কোর্ট ।
কারন প্রচুর শীত , হাতে প্রার্স ঝুলিয়ে বের হয়ে আসলাম।
আমি আর রিমি সেইম কালেকশন আর সেম সাজ দিয়েছি।
তাই আমার কাছে দুজোন কে জমজ জমজ লাগছে।
দুজন একসাথে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
সবাই একসাথে হতেই ফারহান ভাইয়া এসে একটা প্লেন বলে গেলেন।
সবাই হো হো করে হাসতে লাগলাম।
সবাই মিলে কার নিয়ে বের হয়ে গেলাম।
বরাবরের মতোই ফারহান ভাইয়া, রিফাত ভাইয়া, আমি , রিমি আর মনিকা আপু এক সাথে যাচ্ছি।
আর ফারহান ভাইয়াদের বন্ধুরা আমার বান্ধবীরা আর মনিকা আপুর বান্ধবীরা অন্য দুটো কার এ করে যাচ্ছি।
আসলে অনেক স্প্রে ফুল , জরি মিষ্টি চকলেট, হাবিজাবি এই সব কেনার জন্য ই শপিং এ যাচ্ছি।
শপিং মল থেকে সবাই সব কিছু কেনা কমপ্লিট করে বাসায় ফিরে আসলাম।
আজকে কনে পক্ষ কে আমরা গোল খাইয়েই ছারবো।
বাসায় এসে সমস্ত টা গুছিয়ে ফেললাম।
বউ ভাতের অনুষ্ঠান বাসাতেই হচ্ছে।
গেটের সামনে সবাই দাড়িয়ে আছি, কনে পক্ষের সবাই কে হাতে চকলেট , ফুল দিয়ে বরন আর মিষ্টি খাইয়ে ভেতরে পাঠাচ্ছি।
আমাদের এমন কান্ডে কনে পক্ষের লোকে রা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সর্বশেষ কনে পক্ষের মিস্কা শয়তান গুলো আসতেই স্প্রের বর্ষন শুরু হলো।
প্রত্যেক এর হাতে বড় বড় দুইটা করে স্প্রে।
যার দরুন ওরা কেউ স্প্রে সামলে আগাতেই পারছে না।
সব থেকে দেখার মতো চেহারা ছিলো শ্রেয়া আপুর।
জামান ভাইয়া ইচ্ছে করে সমস্ত স্পে ওর মুখে মেরে দিয়েছে।
যার দরুন ওর মেকআপ সব গলে গলে পরছে।
বেচারি তো পারে না শুধু কাঁদতে, রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে যাচ্ছিলো।
মনিকা আপু আবার ফোরন কেটে পিছন থেকে দার করালো।
হাতে চকলেট ধরিয়ে দিলো, আর শ্রেয়া আপু কিছু বলবে তার আগেই মুখে মিষ্টি পুরে দিলো।
এই দেখে সবাই আবার হাসা শুরু করলো।
প্রত্যেকের যায় যায় অবস্থা, স্প্রের সাথে জরি ছিটিয়ে দেওয়ার কারনে সবাইকে ভুতের মতো লাগছে।
আসলে ওরা কেউ ভাবতে ও পারে নি এতো বড় কিছু করবো আমরা।
ভেবেছিলো স্প্রে দিতে পারি , কিন্তু আমাদের কান্ডে বেচারাদের নাস্তানাবুদ অবস্থা।
ওরা সবাই ভেতরে চলে গেলে আমরা সবাই একে একে হাই ফাইপ করতে ব্যস্ত ।
সর্বশেষ ফারহান ভাইয়ার সাথে হাই ফাইপ করতে যাবো তার আগেই ফারহান ভাইয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
– যা যা বলেছি মনে থাকে যেন।
কারো সাথে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই।
ওনার আলতো ছোয়াতে শরীর কেঁপে উঠলো।
বুঝলাম না ওনি হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরলো কেন।
মনের ভেতর কেমন ধুকধুক করছে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে ঝরের গতিতে চলে গেলেন।
আমি ও নিজেকে সামলে ভেতরে চলে আসলাম।
সবার সাথে লান্স সেরে নিলাম।
তারপর চলে গেলাম মনি আন্টির কাছে ।
মনি আন্টিকে গোলাপি রঙের লেহেঙা পড়ানো হয়েছে।
অসাধারণ লাগছে, আমি গিয়ে মনি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– আন্টি , বাহহহ তোমাকে তো বেশ লাগছে।
চাচ্চু তো আবার ক্রাশ খাবে।

মনি আন্টি আমার থুতনি উঁচু করে বলল
– মেয়ে পেকে গেছে দেখছি।
খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে।

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম
– এহহ আমি এতো তাড়াতাড়ি কোথাও যাচ্ছি না।

চাচ্চু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল
– মামনি এখনো আন্টি বলছিস কেন।
কাকিমা বলতে ভুলে গেলি নাকি ।

আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললাম
– অভ্যাস নেই যে।

চাচ্চুর পেছন পেছন রিফাত ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়া ও আসলেন।
ফারহান ভাইয়া হেসে মনি আন্টির উদ্দেশ্যে বললেন
– এহহ ঐ পুঁচকে মেয়ে কে , আমার বোনের সমান মনে হয়।
তাকে নাকি কাকি মা বলব।
এহহ পারবো না।

মনি আন্টি চোখ রাঙিয়ে বললেন
– তা বলবি কেন ?
তুই তো একটা পুঁচকে শয়তান ।
তোর কাছে আমার মেয়ে হলে , কোনো মতেই বিয়ে দিবো না যাহহহ।

ফারহান ভাইয়া ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললেন
– এমা এর জন্য এতো বড় শাস্তি ।
আচ্ছা কাকিমা ডান।

সবাই এক সঙে হেসে উঠলাম।
বেশ কিছুক্ষণ মজা করে চাচ্চু কে আর মনি আন্টি কে বিদায় দেওয়ার সময় হলো।
আমরা কেউ যেতে চাই নি , কারন এ বাড়ি ও বাড়ি ই তো।
এখান থেকে এখানে কি আর যাবো।
কিন্তু সবার জোড়াজোড়ি তে যেতে হলো।
ফারহান ভাইয়া একহাতে আমার হাত আরেক হাতে রিমির হাত ধরেই আছে।
মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমরা দুজন উড়ে যাবো।
অবশেষে আমরা সবাই মনি আন্টির বাসায় গেলাম।
মনি আন্টির বাসাতে একটা দিন বেশ ভালোই কাটল।
ওরা কেউ আর কোনো ঝামেলা করে নি ।
কারন বুঝে গেছে ইট ছুড়লে পাটকেল তো খেতেই হবে।
এর মাঝে মিরন ভাইয়া আমাকে এসে সরি ও বলল।
আমি কিছুই বুঝলাম না।
উনি বলে গেলেন এক্সচেলি তোমার বিষয়টা আমি জানতাম না।তাই সবার সামনে বলে দিয়েছি।
ইটস নট ফেক্ট তুমি আমাকে বড় ভাই হিসেবেই দেখতে পারো।
আমি শুধু মাথা ঝাকালাম।
উনি চলে যাওয়ার সময় ফারহান ভাইয়ার সাথে হাত মেলালো আর সরি বলল।
যার দরুন বুঝলাম নিশ্চয়ই এই বেটা বজ্জাত হনুমান কিছু বলেছে।
সে যাক গে আমার কি , আমার থেকে দূরে সরেছে এতেই শান্তি।

এভাবেই সবার সাথে হাসি মজা করে , তারপরের দিন
চলে আসলাম আমাদের বাসায় ।
আজকেই আমরা সিলেট বেক করবো।
কারন সামনে আমার এক্সাম।
বিকেলের এয়ার টিকেট কাটা হলো।
সমস্ত টা গুছিয়ে বিকেলে রওনা হলাম ঢাকা টু সিলেট এর উদ্দেশ্যে।
মনিকা আপু তার বাসায় চলে গেল।ছোট চাচ্চু আর কাকিমা বাদে সবাই চলে আসলাম ।
ফারহান ভাইয়া দুপুরের ফ্লাইট এই সিলেটে তার আন্টির বাসাতে চলে গেলেন।
তার নাকি কি কাজ আছে আর তাই আগে চলে গেলেন।
আর আমরা সিলেটের বাসাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
বাসায় ঢুকে কোনো রকম ফ্রেস হয়ে চলে আসলাম ডিনার করতে ।
কোনো মতে ডিনার কমপ্লিট করে রুমে এসে বেডে শুতেই চোখ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
এই কয়েকটা দিন একটু ও ঘুম হয় নি, আজ শরীর টা বেশ ক্লান্ত লাগছে।
তাই বেডে শোয়া মাত্র ই ঘুম।
___________________________

সকাল বেলা হালকা ঘুম ভাঙলো বড় মার ডাকে।
বড় মা আমায় ডেকেই যাচ্ছে , কিন্তু আমি উঠার নাম ই নেই।
অবশেষে আমার সাথে না পেরে বড় মা চলে গেলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর কারো ধমকে আমি হুরমুরিয়ে উঠলাম।
মনে হচ্ছে এখনি আমার এই ছোট্ট প্রান টা পাখির মতো ডানা মেলে উরে যাবে।
এতো জুড়ে কেউ ধমক দেয়।
আজববব

ঘুমের মধ্যে থাকায় ধমক টা কে দিয়েছেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।তাই কোনো মতে আরমোরা ভেঙে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই আরেক দফা ধাক্কা খেলাম।
ফারহান ভাইয়া, এহহ না না এটা ওনি হতেই পারেন না।
কালকে ও তো আমার সাথে কতো মিষ্টি ভাবে কথা বললেন।
নিজের চোখ কে ভুল প্রমান করার জন্য চোখ কচলে আবার তাকালাম।
কিন্তু একি , ফারহান ভাইয়া কে দেখাচ্ছে কেন।
আবার চোখ কচলাতে যাবো তার আগেই দিলেন আরেকটা ধমক।
যার ফলে 100% সিউর হয়ে গেলাম এটা সেই বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়া।

এই বেটার হলো টা কি ?
মাথা টা কি আবার নষ্ট হয়ে গেল নাকি।
এসব ভাবতে ভাবতেই ফারহান ভাইয়া আমার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে দিলেন।
যার ফলে ধ্যান কাটলো, আমি ওনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি।
ফারহান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– এতো দিন লাফালাফি করেছিস, পড়াশুনা ঠিক মতো হয় নি।
কিচ্ছুটি বলি নি , তাই সমস্ত ধ্যান ধারনা পড়াশুনা থেকে উঠে গেছে?
ফাস্ট ফ্রেস হয়ে এসে পড়তে বসবি।

আমি মাথা নিচু করে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
দশ মিনিট পর বের হয়ে দেখি বজ্জাত হনুমান টা নেই।
যাহহহ শান্তি, আয়নাতে নিজেকে দেখছি আর চুল বাঁধছি।
আপন মনেই বকে চললাম
– বেটা বজ্জাত হনুমান ।
কেন তুই আমার পেছনে লেগে আছিস।
ইচ্ছে করছে তোকে ধরেরররররর

আর কিছু বলতে পারলাম না।
তার আগেই আমার মুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল।
রুমে ওনাকে নাহ দেখে ভেবেছিলাম ওনি চলে গেছেন।
কিন্তু একটি বারের জন্য ও মাথায় আসে নি ব্যালকনিতে ওনি থাকতে পারেন।
উনি ব্যালকনির দরজা তে পিঠ ঠেকিয়ে বুকে হাত গুঁজে আমার সমস্ত কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন।
চুল বেঁধে পেছন ফিরে তাকাতেই ওনাকে ব্যালকনির দরজা তে দেখতে পেলাম।
ইসসস আমি এতো গাধা কেন।
এখন তো ওনি আমাকে কাঁচা ভাজবেন।
ভাবতে না ভাবতে ফারহান ভাইয়া ওনার গুঁজে রাখা হাত নামিয়ে দরজা থেকে পিঠ সরিয়ে আমার দিকে আগাতে লাগলেন।
ওনি এক পা করে এগোচ্ছেন আর আমি পেছনে যাচ্ছি।
উনি এগোতে এগোতে বললেন
– কিহহ জানি বলেছিলি ,আমি বেটা বজ্জাত হনুমান।
আচ্ছা এখন ভয় পাচ্ছিস কেন।

আমি ঢোক গিললাম তারপর তুতলিয়ে বললাম
– আমিইইই তো আসসসলে

ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে পরলেন।
আর আমি যে পেছনে যাবো তার জন্য এক ইঞ্চি জায়গা ও অবশিষ্ট নেই।

ফারহান ভাইয়া আমার একদম কাছে এসে চুলে হালকা করে টান মারলেন।
ব্যাথা পাচ্ছি কিন্তু কিছুই বললাম না।
ফারহান ভাইয়া হঠাৎ করে আমায় ছেড়ে দিয়ে বললেন
– মাত্র সুস্থ হয়ে ফিরেছিস তাই কিছু বললাম না।
তাহলে আজকে একটা না দুটো ঠাপ্পর পড়তো।

আমি ঢোক গিলে নিলাম।
যাক বাবা অল্পতে বেঁচে গেছি।

ফারহান ভাইয়া বুক স্লেফ থেকে এতো গুলো বই নামিয়ে নিলেন।
মনে হচ্ছে আজকে আমার কেল্লাফতে।
আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান ভাইয়া রাগি চোখে বললেন
– তোকে কি কোলে করে আনতে হবে।

আমি চুপচাপ এসে বসে পড়লাম।
একটা বই হাতে ধরিয়ে দিলেন।
আমি আমার মতো পড়তে লাগলাম আর ওনি প্রতি টা বই ঘেঁটে মার্ক করে দিলেন।
পাক্কা দুটো ঘন্টা পড়ালেন তারপর এতো গুলো পড়া দিলেন।
যেহেতু 9 টা বেজে গেছে আর কারোই নাস্তা করা হয় নি তাই ছাড়লেন।
কিন্তু সুন্দর মতো আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন বিকেলে অনলাইন ক্লাস আছে আর এই সব পড়া যেন বিকেলের মধ্যে কমপ্লিট করে ফেলি।
আমি ঢোক গিললাম, হায় রে এতো পড়া। রিফাত ভাইয়ার ডাকে ফারহান ভাইয়া নাস্তা করতে চলে গেলেন।
আর আমি একবার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছি আর একবার ফারহান ভাইয়া র যাওয়ার দিকে।
এভাবেই পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল আর আমি ঐ ভাবে ই বসে রইলাম।
দরজার দিকে তাকাতেই দেখি রিফাত ভাইয়া রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন।
আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
– হুমমম আসছি।
তারপর বই গুছিয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম।

? হ্যাপি রিডিং ?

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 36
______________________________

4 ঘন্টা পার হয়ে গেছে , নাওয়া খাওয়া সব ভুলে পড়তেই আছি, পড়তেই আছি।
কিন্তু পড়া তো শেষ ই হচ্ছে না।
ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজেই বারি মারতে।
কখন যে শেষ হবে , আর ভালো লাগে না।
একবার টেবিলে বই নিয়ে পড়ছি , একবার সোফায় , আবার বেডে।
বার বার পজিশন চেন্সজ করে পড়ছি।
হাত পা একে বারে ব্যাথা হয়ে গেল।
জীবন ডাই শেষ , আরে পড়া শেষ হয় না কেন।
কিছুক্ষণ পর আম্মু ব্যস্ত পায়ে রুমে ঢুকলো।
আমি রোগবিহীন রোগীর মতো করে চেয়ে আছি।
আম্মু হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল।
নিশ্চয়ই চুলাতে কিছু বসিয়ে দিয়ে এসেছে।
কিন্তু কে ফোন করলো আমায়।
ফোন টা কানের কাছে ধরে বললাম
– হ্যালো কে ?
– …………
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর পেলাম না।

এমনিতেই মেজাজ গরম হয়ে আছে তার উপর কথা বলছে না।
আজববব
তাই দিলাম এক ঝারি
– ঐ তুই কোন হনুমান রে।
এমনি তেই এক হনুমানের জ্বালায় বাঁচি না।
আবার তুই এসে হাজির।
বজ্জাত কোথাকার

হঠাৎ ওপাশ থেকে উচ্চ শব্দে হাসির শব্দ পেলাম।
হাসি টা আমার খুব চেনা নয়, কিন্তু এই হাসিটা আমি একবার শুনেছি।
হুমমম

আমি দমে গিয়ে শান্ত সুরে বললাম
– কে ?

ওপাশ থেকে হাসি থামিয়ে বলল
– তোর বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়া।

আমি ভয় পেলাম না, কারন ওনার সেই ভুবনভোলানো হাসি।
যা বড্ড বিরল, অনেক চেষ্টা করে পাওয়া যায়।
আর বিরল জিনিস আমার খুব প্রিয়।

আমি যেন ওনার হাসির মাঝে হারিয়ে গেলাম।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– শোন আমায় অনেক বকেছিস।
এবার সাওয়ার নিয়ে খেয়ে নে, তারপর পড়বি।
মিস যেন না হয়

আমি কিছু বলার আগেই ফারহান ভাইয়া ফোন রেখে দিলেন।
আমি ফোন টা বেডের সাইটে রেখে সোজা হয়ে শুয়ে পরলাম।
বার বার ওনার সেই হাসি কানে বেজে চলছে।
কিছু সময় এভাবেই পার হয়ে গেল।
তারপর উঠে গিয়ে আম্মু কে ফোন টা দিয়ে আসলাম।
আম্মু কে বললাম খাবার বারতে আর আমি সাওয়ার নিতে চলে গেলাম।
খুব ফাস্ট সাওয়ার শেষ করে চুলটা ভালোভাবে না মুছেই ট্রাওয়াল মুরিয়ে ডাইনিং এ চলে গেলাম।
বেশ তাড়াহুড়ো করে খেয়ে রুমে চলে আসলাম।
বই হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম, কিন্তু পড়তে মন বসছে না।
কারন রোজকার একটি অভ্যাস যে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
ছাদে গিয়ে রোদ পোহানো আর চুল শুকানো।
বই হাতে নিয়েই ছাদে চলে গেলাম।
কিছুক্ষণ দোলনা তে বসে পড়লাম আবার কিছুক্ষণ পুরো ছাঁদ ঘুরে ঘুরে পড়লাম।
এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল।
আমি আপন মনে পড়েই যাচ্ছি।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে নিয়ে সোজা দোলনা তে বসিয়ে দিলো।
সামনে তাকাতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া।
আমাকে দোলনা তে বসিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওনি আমার হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করলেন।
আমি ওনার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি ।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমার হাতে গভীর একটা চুমু খেলেন।
যার দরুন আমি চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।
ওনার হঠাৎ এমন করাটা আমাকে এক ঘোরের মধ্যে নিয়ে গেল।
হঠাৎ করেই মনে পড়ল কয়েক বছর আগের কথা।
এমনি ভাবে ওনি হাঁটু গেড়ে বসে হাতে চুমু খেয়েছিলেন।

তারপর ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– অনেকক্ষন পড়েছিস একটু পর আবার অনলাইন ক্লাস আছে।
এখন একটু রেস্ট নে, এই বলেই পকেট থেকে দুটো কিটক্যাট বের করে একটা আমাকে দিলেন।
আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– ঐ টা ও দিন।
ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– কেন কেন ?
এটা তো আমি খাবো।

উনি মানা করায় অন্য দিক ফিরে বসলাম।
উনি আমার পাশে বসে বললেন
– রাগ করিস না ।
আচ্ছা যা একটা বাইট নে।

আমি তড়িঘড়ি করে একটা বাইট নিলাম।
তারপর বললাম
– যা পাবো তাই লাভ।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন।
দুজন বসে বসে কিটক্যাট শেষ করলাম।
তারপর ফারহান ভাইয়া বললেন
– ফারাবি তোর জন্য যে বর খুজবো আমি, আমার তো জানা প্রয়োজন তোর কেমন বর পছন্দ।

আমি ওনার হঠাৎ এমন কথায় অবাক হলাম।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– বল না।

আমি নিজেকে সামলে বললাম
– অবশ্যই কেয়ারিং বকা দিবে না, আর কর্মঠ হতে হবে।
বাবার যত ই থাকুক না কেন যায় আসে না।
সে নিজে যা করবে সেটাই আসল।

ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না থম মেরে বসে রইলেন।

আমি ওনাকে হালকা ধাক্কা মেরে বললাম
– কি হলো ?

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– নাহহ কিছু না।
তোর ক্লাস এখনি শুরু হয়ে যাবে।
এই বলেই ফোন টা বের করে আমায় দিলেন।
আর আমি দোলনা তে দোল খেতে খেতে ক্লাস দেখছিলাম।

ফারহান ভাইয়া ছাদের এক কোনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলেন।
এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ ক্লাস করার পর ফারহান ভাইয়া পড়া দিয়ে চলে গেলেন।
____________________

সন্ধ্যা বেলা পড়ছিলাম তখনি রিফাত ভাইয়া এসে আমার বেডে হাত পা মেলে শুয়ে পরলো।
আমি ব্রু কুঁচকে তাকাতেই রিফাত ভাইয়া ভ্যাবলার মতো হাসি দিলো।
তারপর পর বলল
– কালকে নাকি স্কুল এ যেতে হবে।
আমি বললাম
– ঠিক আছে। কিন্তু কেন?
রিফাত ভাইয়া বলল
– কারন বলে দেয় নি।

আসলে আমাদের স্কুল এমনিতেই মর্নিং সিফট এর।
গত তিন মাস ধরে স্কুল এর বেশির ভাগ স্যার রা স্কুলের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।
যার কারনে আমাদের ক্লাস ঠিক মতো হতো না।
পরবর্তী কালে সব অভিভাবক দের নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হয় এস এস সি পরীক্ষার্থীরা বাসায় বসেই পড়াশুনা করবে।
যখন বিশেষ দরকার হবে তখন আমাদের ডেকে নেওয়া হবে।
এতে করে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার জন্য বেশি সময় ও পাবে আর ক্লাস না হওয়ার কারণে সময় নষ্ট ও হবে না ।

রিফাত ভাইয়া কিছুক্ষণ আমার পড়া ধরে তারপর চলে গেলো।

রাত 9 টার দিকে ডিনার কমপ্লিট করে আবার পড়তে আসলাম।
পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম কে জানে।
সকাল বেলা সূর্যের আলো পরতেই হালকা ঘুমটা ভাঙলো ।
কিন্তু তবু ও উঠলাম না।
বুকে বই নিয়েই শুয়ে আছি, আম্মু এসে আমাকে টেনে তুললো।
কারন আজকে 9 টায় স্কুল যেতে হবে।
আম্মু বেশ অনেকক্ষণ ধরে ডাকলো কিন্তু উঠলাম না।
যখন বলল
– সকাল 8 টা বেজে গেছে তখন ধরপর করে উঠলাম।

উঠে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম ।
ফ্রেস হয়ে এসে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।
কালো জিন্স প্যান্ট এর সাথে লং টপস আর তার উপর কালো সাদা কম্বিনেশন করা জিন্স এর লং কোর্ট।
গলায় ঝুলিয়ে নিলাম স্কুল কার্ড ।
মাথায় উঁচু করে ঝুটি করে চোখে সাদা কাজল লাগালাম আর ঠোঁটে হালকা করে নুড লিপস্টিক।
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে
হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে ডাইনিং এ চলে আসলাম।
বড় মা নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে, চটজলদি নাস্তা সেরে বের হয়ে গেলাম।
যেহেতু দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল তাই রিকশার জন্য ওয়েট না করে হাঁটা লাগালাম।
ফাস্ট হেঁটে চলছি, মাঝে রিকশা ও পেয়ে গেলাম।
আহহহ শান্তি ,

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কুলের গেটের কাছে রিকশা থেমে গেল ।
রিকশার ভাড়া মিটিয়ে সোজা স্কুল গেটের কাছে গেলাম।
গার্ড আমার স্কুল কার্ড চেইক করে ভেতরে ঢুকতে দিলেন।
তাড়াতাড়ি ঢুকে অডিটোরিয়ামে চলে গেলাম।
অডিটোরিয়ামের একটা চেয়ারে বসে পড়লাম।
সত্যি বলতে এখানে এসে আমার কোনো ভালো বন্ধু হয় নি ।
কিন্তু শত্রু তো অবশ্যই আছে, আমি বানাই নি।
ওরা শুধু শুধু আমার পেছনে লেগে থাকে।
কি আজববব

এখনো স্যার রা অডিটোরিয়ামে এসে পৌছান নি।
তাই আমি ফোন বের করে গেইম খেলা শুরু করলাম।

অন্য দিকে আমাকে শত্রু ভাবা আনিকা, নোরা , আর অনু আমার দিকে তাকিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে।
ওদের টিম লিডার হলো আনিকা ।

এমন আজব কেন এই মেয়েটা। সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকে ।
আমি ওদের কে পাত্তা না দিয়ে আমার মতো গেইম এ মনোযোগ দিলাম।
কিছুক্ষণের মাঝেই স্যার রা অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হলেন।
সবাই উঠে দাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালাম।
শুধু স্যার রা না সাথে আর ও কয়েকজন ও আছেন।
আমি তাদের দিকে আর মনোযোগ দিলাম না।
একে একে স্যার রা এসে বক্তব্য দিয়ে গেলেন।

আমার হোস্ট টিচার বললেন
– সো স্টুডেন্ট।
আজকে আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন ইংলিশ এ ন্যাশনাল গোল্ড মেডেল্ট পাপ্ত স্টুডেন্ট ফারহান চৌধুরী খান।
এই নামটা শুনে আমি অডিটোরিয়ামের মঞ্চে তাকালাম।
তাকিয়ে আমার চোখ জোড়া রসগোল্লা হয়ে গেল।

ফারহান ভাইয়া এখানে, ও মাই গড ।
আমাকে তো কিছু বলেন নি আজকে যে ওনি আমার স্কুলে আসবেন।

সকলের করতালির মাধ্যমে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো।

আনিকা নোরা কে বলল
– আরের বাসসস। দেখ ছেলেটা দেখতে কি হ্যান্ডসাম।
উফফফ পুরো হিরো ।
যে করেই হোক না কেন এর নাম্বার টা তো আজকে নিতেই হবে।

ওদের কথা শুনে আমার হাসে পাচ্ছে।
এর একটা থাপ্পর খেলে না তদের শিক্ষা হয়ে যাবে।

ওরা আবার বলল
– লুক টা দেখেছিস। উফফফ

আমি ওদের কথাতে ফারহান ভাইয়া র দিকে মনোযোগ দিলাম ।
অফ হোয়াইট কালারের কোর্ট এর সাথে কালো জিন্স আর কালো টি শার্ট ।
হাতে কালো ওয়াচ, আর পায়ে কালো সু।
বরাবরের মতোই কিছু চুল কপালে এসে পড়েছে।

আজব এতো ফরমাল লুকে আসার কি দরকার ।

ফারহান ভাইয়া কে স্পিচ দেওয়ার জন্য ডাকা হলো।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে মাইক্রোফোন এর কাছে গেল।
ফারহান ভাইয়া দাঁড়াতেই সবাই করতালি দিলো।
ফারহান ভাইয়া বলা শুরু করলেন
– হ্যালো স্টুডেন্ট।
আই হোপ তোমরা সবাই মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছো।
……………………………………………………………………
…………….

ফারহান ভাইয়ার বক্তব্য শেষ হলে সবাই আবার করতালি দিলো।
আরো কিছুক্ষণ আমাদের সাথে ফরমালিটিস কমপ্লিট করে অনুষ্ঠান শেষ হলো।

অনুষ্ঠান শেষ হলে অডিটোরিয়াম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।
বাইরে বেরিয়ে দেখি ফারহান ভাইয়া দাড়িয়ে ফোনে স্কল করছেন।

আমি ওনাকে দেখে ও না দেখার ভান করে যেতে লাগলাম ।
কিন্তু তার আগেই দেখতে পেলাম আনিকা ফারহান ভাইয়ার কাছে যাচ্ছে।
তাই পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে ও দাড়িয়ে পড়লাম।

আনিকা বেশ ভাব নিয়ে ফারহান ভাইয়ার কাছে গেল।
ফারহান ভাইয়া একবার চোখের পলকে আনিকা কে দেখে ফোনে স্কল করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।

আনিকা ফারহান ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলল
– এক্সকিউজ মি ।

ফারহান ভাইয়া সামনে তাকিয়ে ফোন পকেটে পুরে বলল
– ইয়েস।
আনিকা হাত বাড়িয়ে বলল
– আম আনিকা।
ফারহান ভাইয়া আনিকা র হাতের দিকে তাকিয়ে হ্যান্ড সেক না করে ই বলল
– দ্যান।

আনিকা একটু বিব্রত হয়ে হাত টা নামিয়ে নিলো।
তারপর একটা হাসি ঝুলিয়ে বলল
– এক্সলি আম ইউর বিগ ফ্যান।
যখন আপনি স্পিচ দিচ্ছিলেন তখন আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– ঠ্যাংস।

আনিকা মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলল
– আপনার নাম্বার।

ফারহান ভাইয়া সামনে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেলেন।
আমি চোখ সরিয়ে নিতেই ফারহান ভাইয়া বললেন
– হে ইউ।

আমি শুনে ও না শোনার
ভান ধরলাম।
আনিকা পেছন ফিরে তাকাতেই এক প্রকার ঝটকা খেল।
ওর চোখে মুখে কৌতুহল দেখা যাচ্ছে।
আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম ।
ফারহান ভাইয়া একটু দৌড়িয়ে এসে আমার হাত ধরলেন।
আনিকা র দিকে তাকাতেই দেখলাম রাগে গজগজ করছে।

ফারহান ভাইয়া আমাকে দার করিয়ে কতোগুলো বকা দিলেন।

আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছে।
আর আনিকা তো বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।
আনিকা আমাদের পাশেই দাড়িয়ে ছিলো।

ফারহান ভাইয়া বললেন
– স্টুপিট, ননসেন্স, কোনো জ্ঞান নেই নাকি।
এতো বার করে ডেকে চলেছি।

আনিকা বলল
– আরে বলবেন না আর।
ওও এমন ই , ননসেন্স, আর বিগ স্টুপিট আপনি ডোকেছেন ভেবে পাত্তা দিচ্ছিলো না।
আসলে আপনাকে হাত করতে চাইছিল।
নিজেকে অনেক রেয়ার প্রুফ করতে চাইছিল।
আপনার মতো হ্যান্ডসাম কে দেখে তো ওও এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো ।
লজ্জা নেই না

আমি কিছু বললাম না, চুপচাপ ওর কথা শুনলাম।
চাইলেই অনেক কিছু শুনিয়ে দিতে পারতাম।
কিন্তু এই মুহূর্তে আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।

ফারহান ভাইয়া বেশ আগ্রহ নিয়ে আনিকা র কথা শুনলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– এগুলো ঠিক নাকি ?

বড় বড় চোখ করে দেখা হচ্ছিল আমায়?

আমি কিছুই বললাম না, শুধু ভ্যাবলার মতো ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আনিকা তো মহা খুশি, তাই ফারহান ভাইয়া কে বলল
– নাম্বার টা।

ফারহান ভাইয়া আমাকে উপর থেকে নিচ অব্দি স্ক্যান করে বলল
– নাম্বার টা ওকে জিজ্ঞাসা করে নিও।

এই বলেই হাসা শুরু করলো।
এখন আমার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়লো ।
ওনি এভাবে আমাকে ইনস্লাট করছেন।

আনিকা বলল
– মানে ?

ফারহানভাইয়া ওকে কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে বললেন
– আরে আরে এখনি চোখ থেকে পানি বেরিয়ে যাবে।

ওনি এই কথা বলাতে সত্যিই চোখ থেকে পানি বেরিয়ে গেল।
গড়িয়ে পড়ার আগেই ফারহান ভাইয়া হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিলেন।
তারপর আমাকে এক হাতে হালকা জড়িয়ে বললেন
– কতোবার বারন করবো ফারাবি।
এভাবে কাঁদবি না, তোকে কান্না করলে মানায় না।
একদম পিচ্ছি পিচ্ছি লাগে, তুই কি এখনো পিচ্ছি আছিস।
আচ্ছা আর কাঁদে না আইসক্রিম খাওয়াবো প্রমিস আর কিটক্যাট ও দিবো।
কাঁদে নাহহ

আমি কিছু না বলে কান্না টা চেপে নিলাম।

আনিকা তো হা হয়ে আছে।
এসব কি হচ্ছে, আশে পাশের অনেকেই তাকিয়ে আছে।

ফারহান ভাইয়া আনিকা র দিকে ফিরে বলল
– লিসেন আমি গাঁয়ে পরা মেয়ে একদম ই পছন্দ করি না।
আর কী যেন বলছিলে ফারাবি বিগ স্টুপিট, ও আমাকে হাত করতে চাইছিলো।

আচ্ছা কখনো শুনেছে নিজের জিনিস কেউ হাত করতে চায়।
যা ওর , তা ও কোন দুঃখে হাত করতে চাইবে।
আর আমার নাম্বার প্রয়োজন তোমার, ফারাবি কে সরি বলে তারপর ওর থেকে নিয়ে নিয়ো।
তোমাকে ভালো মতো গল্প শুনিয়ে দিবো।
ফারাবি কে কিছু বলার আগে দু বার ভেবে নিবে।
ওর দিকে যে আঙুল তুলে , তাকে ভেঙে গুরিয়ে দিতে দু মিনিট ও লাগে না আমার।
গট ইট আর হ্যাঁ ফারাবি কেমন তা তোমার থেকে শুনতে হবে না আমায়।

ওর বিষয়ে ওর নিজের থেকে বেশি ভালো আমি জানি।
ফারদার যেন এমন না হয়।

এই বলেই আমায় এক হাতে জড়িয়ে ওখান থেকে নিয়ে আসলেন।
যদি ও ওনার অনেক কথাই আমি বুঝি নি, তাতে আমার যায় আসে না , আনিকা জব্দ হয়েছে এটাই অনেক।
ফারহান ভাইয়ার সাথে স্কুল গ্রাউন থেকে বের হয়ে আসলাম।

স্কুল থেকে বেরিয়ে ফারহান ভাইয়া এক টা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে বসালেন আমায়।
যেহেতু লান্স বাসায় গিয়ে করবো তাই বারবিও কিউ পাস্তা অর্ডার দিলেন।
পাস্তা খেয়ে , আইসক্রিম পার্লার থেকে মিনি সাইজের দু বক্স আইসক্রিম নিলেন।
এগুলো রেয়ার আইসক্রিম, ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি নেই।
তাই তো বলি ফারহান ভাইয়া আইসক্রিম খাওয়াচ্ছেন তা ও শীতের মাঝে।
আইসক্রিম শেষ করে , এক বক্স কিটক্যাট কিনে আনলেন। ফারহান ভাইয়া বিল পে করে আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলেন।
যেহেতু আশে পাশের মধ্যে এটাই সব থেকে বড় রেস্টুরেন্ট তাই প্রচুর মানুষ।
যার কারনে ওনি আমার হাত ধরে নিয়ে এসেছেন আর হাত ধরে ই বের করে নিচ্ছেন ।
নিজেকে আসলেই বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে গাড়ি তে উঠিয়ে শিট বেল্ট বেঁধে দিলেন।

আমি বললাম
– আমি তো সিট বেল্ট বেঁধে নিতে পারতাম তাহলে?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– এতো কথা কেন বলিস।একে তো কান্না করে দিয়ে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিস, এতো বোকা কেন।
তোর মনে হয়েছিলো আমি ওকে ছেড়ে দিবো।

আমি নিচু হয়ে বললাম
– আপনি তো ওর সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত তাহলে আমি কী ভাববো?
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে আমায় জড়িয়ে বললেন
– আম সরি। আর কখনো হবে না, কিন্তু তুই কিহ জানিস তোকে ফাস্ট হতে হবে।
এতো গুলো স্টুডেন্ট এর মাঝে আমি বলেছি একজন সিক্রেট স্টুডেন্ট কে আমি পুরো শহরে ফাস্ট করেই ছাড়বো।
রাখবি না আমার কথা?

আমার কি হলো জানি না।
আমি ওনাকে হালকা জড়িয়ে বললাম
– প্রমিস আমি আপনার কথা নষ্ট হতে দিবো না।
কিন্তু তার বদলে আমাকে কথা বলা তোতা পাখি এনে দিতে হবে।

ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– আচ্ছা তুই যদি পারিস তো এনে দেবো।

আমি আমার হাত বারিয়ে বললাম
– প্রমিস

ফারহান ভাইয়া আমার হাতে হাত রেখে বললেন
– প্রমিস ।

আমি খুশি মনে বসে চকলেট খেতে লাগলাম।
আর ফারহান ভাইয়া গাড়ি চালাতে লাগলেন।
_______________________

ফারহান ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ।
যাওয়ার আগে বলে গেলেন বিকেলে ক্লাস আছে , আর সাথে এতো গুলো পড়া ও আছে।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে ভেতরে চলে আসলাম।
আমি যেহেতু ওনাকে প্রমিস করেছি তো আমি আমার প্রমিস রাখবোই ।
তাই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে লান্স করেই পড়তে বসলাম।
মাথা ঠান্ডা রেখে এক এক করে পড়ে যাচ্ছি ।
কারন আমি আমার প্রমিস কিছু তেই ব্রেক হতে দিবো না।
তাই প্রান পন চেষ্টা করছি মনোযোগ দিয়ে পড়ার।
এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল।
আর ফারহান ভাইয়া ও এসে পরলেন।
আমাকে সিরিয়াস দেখে ফারহান ভাইয়ার মুখে এক চিলতে হাসির রেখা দেখা দিলো।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ফোনে ক্লাস বের করে দিলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর ক্লাস শেষ হলো , তারপর আমাকে নিয়ে অনলাইন ক্লাসে বুঝিনি যেগুলো সেগুলো নিয়ে ডিসকাস করে বুঝিয়ে দিলেন।
বেশ ভালো ভাবেই পড়া গুলো বুজে নিলাম ।
ফারহান ভাইয়া এর বাইরে ও অনেক কিছু পাড়লেন আর এক গাদা পড়া দিয়ে গেলেন।
যাওয়ার আগে বার বার বলে এলেন 11 টায় যেন ঘুমিয়ে পড়ি।
তারপর সকাল ছয়টা বাজে উঠে আবার পড়তে।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– আচ্ছা ।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে চলে গেলেন।
আমি সন্ধ্যায় কিছু সময় বিরতি নিয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম।
আর তারপর আবার বইয়ের পাতাতে মুখ গুঁজে দিলাম।
পড়তে পড়তে ডিনার এর টাইম ও হয়ে গেল।
ডিনার করতে গিয়ে খানিকটা চমকে উঠলাম।একি ফারহান ভাইয়া, বলেন নি তো আজকে এখানে থাকবেন।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বলল
– সব পড়া কমপ্লিট।

আমি ক্লান্ত চোখে বললাম
– নাহহ অনেক কিছু বাকি।

রিফাত ভাইয়া খেতে খেতে বলল
– রিলাক্স, মাথা ঠান্ডা রেখে পড়বি।
আর অন্য কোথাও মনোযোগ দিবি না, তাহলেই হবে।

আমি মুচকি হেসে বললাম
– আচ্ছা।

ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে বলল
– রিফাত মাঝে মাঝে তোর উচিত ওকে পড়ানোর।

রিফাত ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
– আরে এমনিতেই আমি পড়াতে পারি না।
আর তার উপর ওকে পড়াতে গেলে আমি নাই হয়ে যাবো।
ওর জন্য তুই ই একদম পারফেক্ট টিচার।
ফারহান ভাইয়া হাসলেন, তারপর সবাই আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে এলো।
আমি 11 টা অব্দি পড়ে ফারহান ভাইয়ার কথা মতো ঘুমাতে গেলাম। আবার সেই ঘুম আমাকে ভাসিয়ে নিলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here