? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 41
_______________________________
ঘুম নেই চোখে এপাশ ওপাশ করতে করতেই রাত তিনটে বেজে গেল।
বড্ড অস্থির লাগছে , কিন্তু কেন ?
এই কেন টাই আমার জীবনের সব থেকে বড় বাঁধা।
এই কেনোর উত্তর আমি কিছুতেই পাই না।
আচ্ছা ওনি যদি অন্য কাউ কে পছন্দ করেই থাকেন , তাতে আমার কি ?
আমার তো কোনো কালেই মাথা ব্যাথা ছিল না।
তাহলে আজ এমন কেন লাগছে ?
বড্ড বেশি ই অস্বস্তি হচ্ছে।
বেড থেকে উঠে গেলাম, শরীর ক্লান্ত কিন্তু চোখে ঘুম নেই।
ব্যালকনিতে গিয়ে কিছুক্ষণ হাটলাম, তারপর থম মেরে বসে রইলাম।
বাইরে জোনাকি পোকা রা খেলা করছে।
কতো সুখ ওদের , প্রকৃতি কতো সুন্দর ওদের আপন করে নিয়েছে।
ব্যালকনিতে বসে বসে জোছনা ম্লান করছিলাম।
তাছাড়া আর কি করার, এই মুহূর্তে আমি আর কিছু ভাবতে চাচ্ছি না।
তাই ঐ ভাবেই বসে রইলাম।
_______________________
অন্য দিকে ফারহান ও জেগে আছে।
তার এই জেগে থাকা টা অস্বাভাবিক নয় , বরং ঘুমিয়ে পড়া টাই বড্ড অস্বাভাবিক।
গত তিন টে বছর কতো শত
রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে তার হিসেব করা হয় নি।
আজকাল মনটা বড্ড পুরছে , সাথে জন্মেছে কিছু বাজে অভ্যাস।
ফারহান পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে নিয়ে, ব্যালকনিতে চলে গেল।
নিকটিনের ধোঁয়া তার কখনোই পছন্দ ছিল না।
কিন্তু তার প্রেয়সী কে দেখার রোজকার অভ্যাস কে দমিয়ে রাখতে এই নিকটিন কে সঙ্গি করেছে।
সব সময় না, শুধুমাত্র মন টা যখন পুরে তখন ই।
ফারহান একটা সিগারেট শেষ করে আরেক টা সিগারেট ধরালো।
তারপর ই ডুবে গেল স্মৃতির পাতায়।
যেখানে সবাই গার্লফেন্ড, ব্রেকআপ, আবার রিলেশন নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ফারহানের জীবনে প্রেমের ছিটে ফুটো ও নেই।
কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ফারহানের মনে ও জাগে কারো স্নিগ্ধ তা তে মুগ্ধ হতে।
কিন্তু চারপাশের দু ইঞ্চি মেকআপ করা মুখের মাঝে ফারহান কোনো কালেই স্নিগ্ধতা খুজে পায় না।
দিন শেষে এদের মাঝে বিষাক্ততাই চলে আসে।
কারো প্রতি ভালো লাগা আসে না , ভালোবাসা তো বহুদূর।
কিন্তু যৌবনের এক বাজে অভ্যাস, বড্ড চাইছে কারো স্নিগ্ধতা তে মুগ্ধ হতে।
এই চারপাশের মেকআপের মুখোশ পড়া মানুষ গুলো তে বিরক্ত সে।
জীবনে কারো ভালোবাসা সত্যিই খুব প্রয়োজন।
ফারহানের যৌবনে র জীবনটাতে তিক্ততা চলে আসছে।
বিরক্ত সে তার জীবন নিয়ে , মনে হয় তার বাঁচার বিশেষ মাধ্যম নেই , কোনো গেইন নেই ।
যেখানে সব কিছুই বিষাক্ত ।
বিরক্তি নিয়ে ফারাবি দের বাসার ছাঁদে রিফাতের জন্য অপেক্ষা করছিলো।
হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে কান্না করতে থাকে।
কান্নার শব্দে ফারহান বুঝে যায় এটা কে।
কিন্তু হঠাৎ এভাবে কেন কান্না করছে, তা দেখার জন্য পেছন ফিরতেই ফারহানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে।
ফারাবির ঘাম লাগানো মুখ, চোখের অশ্রু সব মিলিয়ে অদ্ভুত লাগছিলো।
কখনো এতো কাছ থেকে কোনো মেয়ে কে এভাবে খুটিয়ে দেখে নি।
অদ্ভুত অনুভূতি মনের ভেতর তাড়া করছিলো।
হঠাৎ খেয়াল করলো ফারাবির গায়ে উড়না নেই , ফারাবির কান্না রত মুখ বুঝিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছু।
ফারহানের রাগ উঠে যায়, কিন্তু এই মুহূর্তে রাগ উঠলে চলবে না।
নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে ফারাবির থেকে সব শুনে সেদিন আকাশদের ইচ্ছে মতো মেরেছিলো ।
এভাবেই ফারহানের যৌবনের বিরক্তি কর সময়ে, মনে উথাল পাথাল প্রেম নিয়ে যায় ফারাবি।
এই সব ভাবতে ভাবতে ফারহানের ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠলো।
_______________________
সকাল বেলা আমার ঘুম ভাঙলো রিমির ডাকে।
কালকে ব্যালকনিতে বসে বসে জোছনা ম্লান করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কে জানে।
আরমোরা ভাঙতেই রিমি বলল
– কি রে এখানে কখন ঘুমালি ?
আমি চেয়ার থেকে উঠে বললাম
– রাতে ঘুম আসছিল না তাই এখানে এসেছিলাম, তার পর ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
রিমি বলল
– আচ্ছা বাদ দে আন্টি নাস্তার জন্য ডেকে গেছে।
আমি মাথা দোলালাম তারপর
আমি ফ্রেস হয়ে রিমির সাথে নাস্তা করতে চলে গেলাম।
নাস্তার টেবিলে বসে আরেক কান্ড, রিতি আপু তো ফারহান ভাইয়া কে জামাই আদর করতে ব্যস্ত।
কি আজববব আর কেউ কি নেই ?
সবাই বিষয় টি বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করছে।কিন্তু এই মুহূর্তে এতো কিউট ছেলের সাথে কোনো মেয়ে লিপ্টে থাকা টা খুব বেশি অস্বাভাবিক নয়।
তারপর বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
মুখ ঘুরিয়ে বিরক্তি নিয়ে নাস্তা করতে লাগলাম।
রিতি আপুর এমন কান্ডে রিমি উঠে গিয়ে খাবার টা নিল।
রিতি আপুকে বলল
– আপু তুমি গিয়ে বসো।
আমি নাস্তা দিচ্ছি,
রিতি আপু খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল
– আরে তুমি ছোট পারবে না।
আমি ই দিচ্ছি
রিমি এবার একটু কঠোর গলাতেই বলল
– আমি অনেক বার খাবার দিয়েছি কখনো তো সমস্যা হয় নি, আজ কেন হবে।
রিতি আপু চমকে বলল
– তুমি অনেক বার খাবার দিয়েছো মানে?
রিমি বিরক্তি ঝেরে বলল
– অবাক হওয়ার কি আছে ?
আমার ভাইয়া কে আমি খাবার দিতে পারি না ?
রিতি আপু তো অবাকের শেষ পর্যায় সাথে অন্য আপুরা ও বেশ অবাক।
অবশ্য অবাক হওয়ার ই কথা।
রিতি আপু বলল
– তোমার ভাই ?
রিমি ভাবলেশহীন ভাবে বলল
– হ্যা আমার ভাই।
এদের কান্ডে আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছেন ।
মনে হচ্ছে বিনা টিকিটে হলিউডের মুভি দেখছে।
আর আমি মুখ চেপে হেসে যাচ্ছি ।
ফারহান ভাইয়া পড়েছে যাতাকলে।
ফারহান ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল
– রিমি খিদে পেয়েছে খাবার টা কি দিবি?
রিমি মাথা ঝাঁকিয়ে, রিতি আপু কে পাশ কাটিয়ে খাবার দিলো ।
আর রিতি আপু চামচ হাতে হা হয়ে আছে।
আসলে এরা কেউ ই জানে না , ফারহান ভাইয়া যে রিমির ভাই।
খাওয়া কমপ্লিট করে চলে গেলাম ছাঁদে।
দোলনা তে বসে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত।
এমন সময় রিতি আপু হনহনিয়ে আসলো তারপর আমার পাশে বসে বলল
– ফারাবি তুমি তখন বললে না কেন ফারহান রিমির ভাই।
আমি খানিকটা চমকে ইয়ারফোন খুলে বললাম
– আপু আমি কি জানতাম নাকি , তোমরা জানো না।
আর তাছাড়া এতে আমার কি দোষ ?
রিতি আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– তাহলে তখন যে পরিচিত হচ্ছিলে।
আমি ভাবলেশহীন ভাবেই বললাম
– ওনি ও তো বলেন নি।
তাহলে আমি কেন বলব ?
কথায় আছে না , শয়তানের নাম নিলেই শয়তান হাজির হয়।
ঠিক তেমনি হনুমান ফারহান ভাইয়া এসে হাজির।
আমাদের বরাবর চেয়ার টেনে বসে রিতি আপুর উদ্দেশ্যে হায় বলল।
রীতি আপু খুশিতে গদগদ হয়ে কুশল বিনিময় করলো।
আমি আড় চোখে সব দেখছিলাম।
হঠাৎ করেই ফারহান ভাইয়া আমায় পিন্স
মেরে বলল
– বুঝেছো রিতি আজকাল একটা গার্লফেন্ড এর বড্ড প্রয়োজন।
কিন্তু হচ্ছে ই না, তোমার কেউ চেনা জানা আছে নাকি ।
রীতি আপু খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল
– আরে অভাব আছে নাকি , তুমি বললে তো
পরের লাইন গুলো শোনার কোনো ইচ্ছে নেই আমার তাই গটগট পায়ে নিচে নেমে গেলাম।
আর বির বির করতে লাগলাম, বাজে ছেলে, বজ্জাত হনুমান যা ইচ্ছে কর আমার কি ?
তুই প্রেম কর না হলে 100 টা বিয়ে কর। হু কেয়ারস?
রুমে ঢুকে ফোনটা ছুঁড়ে ফেললাম।
আজিব আমার কেন রাগ হচ্ছে?
ধ্যাত
মাথা টা জিম মেরে আছে। তাই কিছুক্ষণ মাথা চেপে বসে রইলাম ।
আর তারপর ই লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে চলে আসলাম।
এভাবেই নানান আনন্দ উল্লাসে হলুদ সন্ধ্যা ও পার হয়ে গেল ।
বিয়ের দিন সন্ধ্যা বেলা, বাসার বাইরে সবাই মিলে যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছিলাম।
ফারহান ভাইয়া ও আমার একদম পাশেই ছিলেন, আমি ঐ দিকে মন না দিয়ে ফোন ঘাটতে ব্যস্ত ।
হঠাৎ একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা এসে বলল
– তোমার নাম কি মা।
আমি সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললাম
– ফারাবি আফনান
– বাহহ খুব মিষ্টি নাম।
হঠাৎ করেই ফারহান ভাইয়া বলল
– ফারাবি তোকে আম্মু ডাকছে।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– কেন ?
ফারহান ভাইয়া বলল
– আমি জানি না আয় ,বলেই হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন।
কিন্তু ঐ আন্টি ও ছাড়তে নারাজ আন্টি ফারহান ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলল
– তোমার নাম।
ফারহান ভাইয়া হালকা বিরক্তি নিয়ে বলল
– ফারহান।
ভদ্র মহিলার চোখ যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
উনি হেসে বললেন
– বাহহ । শোন বাবা তোমার কাছেই একটা প্রস্তাব দিচ্ছি তোমার বাবা মা কে জানিয়ো।
ফারহান ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন
– কেন ?
আর কিসের প্রস্তাব?
ভদ্র মহিলা মৃদু হেসে বললেন
– তোমার বোন কে আমার ছেলে বেশ পছন্দ করেছে।
আর আমার ও বেশ ভালো লেগেছে, তাই আমার ছেলের বউ করতে চাই।
আমি হা হয়ে ওনাদের কথা শুনছি।
ফারহান ভাইয়া বলল
– কার কথা বলছেন ?
ভদ্র মহিলা আমার দিকে ইশারা করে বলল
– এই যে তোমার বোন ফারাবি ।
ভদ্র মহিলার কথায় আমার চোখ গুলো গোল হয়ে গেল।
ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনি ও বেশ বড় সড় ঝটকা খেয়েছেন।
ফারহান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– ওও বাগদত্তা ।
ফারহান ভাইয়ার এই কথায় আমি আবার ঝটকা খেলাম।
আমি বাগদত্তা, কবে কার ?
মহিলা সন্দিহান চোখে বলল
– তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে নিয়ে চলো।
ফারহান ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল
– ওও আমার বোন না , আমার উডবি।
মহিলা তবু ও মানতে নারাজ আর আমি হতবাক হয়ে আছি ।
আমি ওনার উডবি হলাম কবে ?
ফারহান ভাইয়া টেনে ওখান থেকে আমায় নিয়ে চললেন।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
কারন আমার ঠাপ্পর খাওয়ার শখ নেই।
_______________________
আজকে বউভাত , সবাই মিলে বেশ হৈ হুল্লর করছি।
আজকের সেরা আকর্ষণ নাচ, সবাই মিলে সেই দিকেই ফোকাস দিচ্ছি।
কালকের পর থেকে একটি বারের জন্য ও ফারহান ভাইয়া আমার সাথে কথা বলেন নি।
এতো দিন অস্বস্তি তে পরতাম কথা বললে, আর আজ অস্বস্তি লাগছে কথা না বলাতে ।
বড্ড বেশি অস্বস্তি লাগছে, ফারহান ভাইয়ার আশ পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করতে লাগলাম।
কিন্তু রিতি মতো ওনি আমায় ইগনোর করছেন।
এখন তো আমার কান্না পাচ্ছে, মানি আর না মানি ওনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন ।
বড্ড বাজে অভ্যাস, নাচের জন্য ঘোষনা করা হলো।
মনে স্বস্তি পেলাম , নিশ্চয়ই ওনি আমার সাথে ই নাচবেন।
কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমান করে ওনি রিতি আপুর সাথে নাচতে চলে গেলেন।
এই মূহুর্তে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে, রিতি আপুর হাত স্পর্শ করে আছেন ওনি।
মনে হচ্ছে কেউ আমাকে একটু একটু করে আগুনে পুড়ছে।
না চাইতে ও চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
উনি রিতি আপুর সাথে নাচতে ব্যস্ত।
এতোক্ষন সহ্য হলে ও নাচের জন্য রিতি আপুর কোমর জড়িয়ে ধরায় আর আমার সহ্য হলো না।
মুখ চেপে কান্না আটকিয়ে দৌড়ে ছাঁদে চলে আসলাম।
আজ আমি অনেক অনেক কান্না করবো।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার, আমি কি তাহলে ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ভালোবাসি ওনাকে , খুব খুব ভালোবাসি।
উনি কেন বুঝেন না আমায়।
কাঁদতে কাঁদতে আমার ঘাড়ে এক ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেলাম।
এই স্পর্শ আমার চেনা , বড্ড চেনা , আর সেই মাতাল করা পারফিউম ।
নিজেকে সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে ফারহান ভাইয়ার শার্ট খামচে জড়িয়ে ধরলাম।
ফারহান ভাইয়া ও আমায় আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলেন।
বেশ অনেকক্ষণ ওনাকে জড়িয়ে কাঁদলাম।
মনে হচ্ছে কেঁদে ওনার শার্ট সম্পূর্ণ ভিজিয়ে ফেলেছি।
যখন আমার ধ্যান ফিরল , তখন আমি নিজেকে শান্ত করে নিয়ে ওনাকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ালাম।
ইসসস এটা আমি কি করলাম, ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম এভাবে।
বড্ড লজ্জা লাগছে, লজ্জা য় ওনার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।
লজ্জায় ইচ্ছে করছে এখনি মাটির সাথে মিশে যাই।
ফারহান ভাইয়া আর আমার মাঝে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো।
হঠাৎ করে ফারহান ভাইয়া তার ফোন টা আমার মুখের সামনে দেখালো।
দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে ।
এটা তো আমার ই ফেক আইডি, যেটা দিয়ে ওনার সাথে কথা বলতাম । ওনি হঠাৎ এটা আমাকে দেখাচ্ছেন কেন?
যদি জানতে পারেন তাহলে বোধহয় ঠাপ্পর লাগিয়ে দিবেন ।
ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
তারপর বললাম
– এটা কি ?
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– এটা আমার গার্লফেন্ড এর আইডি।
এবার গেল মেজাজ টা চরে, এটা ওনার গার্লফেন্ডের আইডি।
হোয়াট এই লোকটা কি আমার সাথে তামাশা করছে।
আমার সাথে তো ওনার কখনো রিলেশন হয় নি।
তাহলে কি ভূত এসে আমার আইডিতে ওনার সাথে প্রেম করেছে ।
আজববব লোক
কিন্তু মুখে কিছু বলে উঠতে পারলাম না।
কারন তিন বছর পার হয়ে গেলে ও ইনি তো ফারহান ভাইয়াই তাই না।
আমার এখন ঠাপ্পর খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।
তাই মুখে শুধু বললাম
– ওহহ
ফারহান ভাইয়া ফোন টা পকেট এ পুরে নিয়ে আমাকে সামনে ঘোরালেন।
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালেই ফারহান ভাইয়া হাসলেন।
তারপর বললেন
– তো পিচ্ছি ফারাবি আজকাল নিজেকে খুব চালাক ভাবছেন বোধহয়।
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
ফারহান ভাইয়া আমার দু হাত ওনার দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে আবার বললেন
– তাই তো সে ফেসবুকের দুটো ফেক আইডি খুলে একটা দিয়ে ওর বজ্জাত হনুমান কে টেক্সট দেয়।
আমি তো এবার আকাশ থেকে পড়লাম।
উনি কিভাবে জানলেন, ভয়ে ঢোক গিললাম।
তারপর তুতলিয়ে বললাম
– মোটেট ও না।
আর কিসের আইডি কোন আইডি।
ফারহান ভাইয়া এবার জোড়ে শব্দ করে হাসলেন।
তারপর আমাকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে বললেন
– তুই কি আমাকে সেই টাইপের মানুষ ভাবিস যে তার কলিজা কে বিডিতে রেখে তার কোনো খোঁজ ই নিবে না।
এটা কিন্তু তোর ভাবা একদম ই ঠিক হয় নি।
ওনার মুখে কলিজা শব্দ টা শুনি বুকের ভেতর ধুপ করে উঠলো।
ইসসস কি লজ্জা, এই লোকটা যখন তখন লজ্জা দেন।
ফারহান ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– এই লজ্জা মাখা মুখ টা যে বড্ড প্রিয়।
জানিস তুই আমি নিজেকে কতোটা সংযত রেখেছি।
তুই যদি জানতি আমার কথা তাহলে সারাক্ষণ এই সব নিয়েই ভাবতি।
এতে তোর পড়াশোনা তে বড্ড ক্ষতি হতো।
আর তাছাড়া তোর এই ছোট্ট মন টা আমায় কেরেকটারলেস ভাবতে দু বার সময় নিতো না।
সারা জীবন ই তো ফারহান ভাইয়া বলে এসেছিস, তখন যদি আমি তোর প্রতি হঠাৎ করে অন্য রকম অধিকার খাটাতাম , তাহলে আমার জন্য তোর মনে বিষ তৈরি হতো।
আর আমি কখনোই চাই নি , তোর মনে কোনো ধরনের এফেক্ট পরুক।
কিন্তু না চাইতে ও সেটা হয়ে ই যেত।
তোকে স্যার বলতে বলতাম কারন তুই যদি স্যার বলতি তাহলে আমি হয়তো নিজে কে আর ও বেশি সংযত রাখতে পারবো।
কিন্তু কোন লাভ ই হলো না।
বার বার তোকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে নিতাম।
যখন বুঝতে পারতাম, তখন ছেড়ে দিয়ে বাজে বিহেভ করতাম।
কিন্তু তাতে ও লাভ হয় নি, তোর ভয় পাওয়া ফেস টা দেখলে সব আবার কেমন যেন হয়ে যেত।
জানিস তুই তোকে রেখে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর কতোটা কষ্টে ছিলাম আমি।
কতো রাত নির্ঘুম কেটেছে তার হিসেব নেই।
আমি ফারহান ভাইয়ার কথার কোনো প্রতি উত্তর দিতে পারছিলাম না।
আসলেই তো একটা মানুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসলে
এতো টা সেক্রিফাইজ করতে পারে।
যাতে তার ভালোবাসার মানুষটার মনে কষ্ট না লাগে তার জন্য সবসময় নিজে কে সংযত রেখেছে।
মুখ বুজে সমস্ত কষ্ট একা সহ্য করেছে।
সত্যি ই খুব কষ্ট লাগছে আমার, আপসোস হচ্ছে কেন আমি ওনার ভালোবাসা টা বুঝতে পারি নি।
ফারহান ভাইয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই ফারহান ভাইয়া মুখে ফু দিলেন।
আর তারপর ই গভীরভাবে চোখের পাতাতে চুমু দিয়ে বললেন
– আজকের পর থেকে কখনো তোকে কাঁদতে দিবো না।
সমস্ত চোখের পানি শুষে নিবো।
ফারহান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– কেন এতো ভালোবাসেন আমায়।
আমি কি আপনাকে এর পাপ্য মর্যাদা দিতে পারবো ?
ফারহান ভাইয়া আমায় আর ও শক্ত করে জড়িয়ে বললেন
– তুই অনেক আগেই আমাকে আমার পাপ্যর চেয়ে বেশি দিয়ে দিয়েছিস।
আমার বাঁচার আশা হচ্ছিস তুই।
ফারহান ভাইয়া পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টা ছুড়ে ফেলে বললেন
– আমার কলিজা যখন আমার কাছে আছে, তখন এই নিকোটিন দিয়ে কলিজা কে কেন পুরাবো?
ভালোবাসা দিয়ে পুরাবো।
ওনার কথাতে বেশ লজ্জা পেলাম।
এই লোকটা আসলেই বজ্জাত হনুমান।
ধ্যাততত
চলবে
ফাতেমা তুজ