স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 42

0
867

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 42
____________________________

দেখতে দেখতে কেটে যায় তিন তিনটে মাস।
অনার্স ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা কিছু দিন পর , আর তাই শুরু হয়ে গেছে ফারহান ভাইয়ার অত্যাচার।
দিনে দশ বার বই নিয়ে না বসালে ওনার যেন পেটের ভাত হজম ই হয় না।
আজববব
এ কেমন নিষ্ঠুর ভালোবাসা, পড়াশুনা তে ভালোবাসা চাঁপা পড়ে যায়।
কি জানি, আমি তো আর ওনার মতো দশ বারো টা ভালোবাসি নি।
ইসসস ঢং দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায়।
মাথায় ঠাপ্পর পড়াতে হুরমুরিয়ে উঠলাম।
সামনের মানুষটাকে দেখে ভ্যাবলার মতো হাসি দিয়ে বললাম
– পড়ছি তো ।
ফারহান ভাইয়া আর কিছু বললেন না।
লেপটপ নিয়ে বের হয়ে
গেলেন, তারপর আবার চলে আসলেন।
কিছুক্ষণ পর ই রিমি চলে আসলো।
রিমির মুখ টা দেখেই বুঝলাম বেচারি খুব ঝারি খেয়েছে।
ফারহান ভাইয়া চোখ দিয়ে ইশারা করে পড়তে বললেন।
রিমি ঘুমু ঘুমু চোখে বলল
– ভাইয়া আজকে আমি না পড়লে হয় না।

ফারহান ভাইয়া ঝারি মেরে বললেন
– এখনি পড়তে বস।
তোকে তো একঘন্টা বেশি ঘুমোতে টাইম দিয়েছি।
তাহলে

রিমি আর কিছু না বলে আমার পাশে এসে বই নিয়ে বসে পড়ল।
দুজন ই যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ছি।
আড় চোখে ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম ব্ল্যাক টাওজার এর সাথে ব্লু টি শার্ট পড়ে আছেন।
ঘুম থেকেই উঠেই চলে এসেছেন বোধহয় ।
বেটা বজ্জাত হনুমান, কেন রে ভাই রোজ রোজ আমাকে না জ্বালালে হয় না তোর।
ফারহান ভাইয়া লেপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন।
ফারহান ভাইয়া বর্তমানে নিজের বিজনেস ই সামলাচ্ছেন।
অস্ট্রেলিয়া তে যাওয়ার পর পড়াশুনার পাশাপাশি একটা কোম্পানির সাথে সেয়ার বিজনেস শুরু করেন।
পরবর্তী তে নিজেই আলাদা বিজনেস শুরু করেছেন।
বিজনেস টা সম্পূর্ণ ইয়াং জেনারেশন দের নিয়ে শুরু করেছেন।
এই কয়েক বছরে সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে বেশ ভালো সাফল্য ও পেয়েছেন।
এক সপ্তাহ পর আমার আর রিমির পরীক্ষা বিধায় ওনি ঠিক করেছেন যে এই কয়েকদিন বাসাতেই কাজ করবেন , আর আমাদের পড়াবেন।
সকাল টা আমাদের
বাসাতে পড়ালে ও বিকেল টা ফারহান ভাইয়াদের বাসাতে পড়তে হয়।
কারন ফারহান ভাইয়ার অন্য কাজ গুলো বিকেলেই সারেন ওনি।
যা শুধু লেপটপের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।
এভাবেই রোজ আমাদের পড়াশুনা নিয়ে অত্যাচার করে যান ওনি।
দেখতে দেখতে ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা টা ও হয়ে গেল।
বেশ ভালো হয়েছে পরীক্ষা, অবশ্যই ভালো না হয়ে কি উপায় আছে , দেখতে হবে তো কে পড়িয়েছেন।
ফারহান চৌধুরী খান বলে কথা, পরীক্ষার ঘারে কি দশটা মাথা আছে নাকি, যে মাথা টা তুলে বলবে ফারহান সাহেব আপনি যা করার করুন আমি আপনার কথা মানতে নারাজ।
এহ্হহহ এই লোকটা পারে শুধু হনুমান গিরি করতে।
আমার মনে হয় , পড়াশুনা আর বজ্জাত গিরির জন্য এনাকে নোবেল দেওয়া উচিত।
আজববব
সারাদিন শুধু ঘেন ঘেন করবে , এই এখনি পড়তে বস ।
আমার ই ভাই ফাটা কপাল, শেষ মেষ কপালে এই বজ্জাত হনুমান ই জুটবে।
যত্তসব উফফফফফ আর ভাল্লাগেনা ।
ধ্যাত
______________________

ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিন থেকে ফারহান ভাইয়া আমাদের ড্রপ করেছেন আবার নিয়ে ও এসেছেন।
অবশেষে ফাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলো।
পরীক্ষার হল থেকে আমি আর রিমি বেশ হাসি মুখে বের হয়েছি।
কিন্তু ক্যাম্পাসে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ চরক গাছ হওয়ার উপক্রম।
ফারহান ভাইয়ার সামনে একটা মেয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
হাতে টকটকে লাল গোলাপ।
ইচ্ছে হচ্ছেলি দুজন কেই উগান্ডা পাঠাইয়া দেই।
পুরো ক্যাম্পাস ওদের দিকে তাকিয়ে ফ্রি তে হিন্দি মুভি দেখছিলো।
ফারহান ভাইয়া ও মেয়েটাকে কিছু না বলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন।
এই লোকটার মতলব একদম সুবিধার নয়।
ধরিবাজ , হনুমান , বজ্জাত, এ উপর দিয়ে দেখায় এক আর ভেতরে আরেক।
নাম্বার ওয়ান শয়তান, হুহহহ।
ওদের আরেক টু কাছে আসতেই শুনতে পেলাম।
মেয়েটি বলছে
– ফারহান আমি তোমাকে গত চার বছর ধরে ভালোবাসি।
আমি অনেক আগেই বলে দিতাম কিন্তু তুমি অস্ট্রেলিয়া তে চলে গিয়েছিলে ।
কত রাত তোমার ছবি পাশে রেখে না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি।
তোমাকে দেখার জন্য প্রথম দিকে তোমার কলেজের সামনে রোজ ঘুরঘুর করতাম, তুমি কবে সিলেট থেকে কলেজে আসবে।
অনেক ভালোবাসি তোমায়, উইল ইউ ম্যারি মি ?

মেয়েটির কথা শুনে আমার দু চোখে পানি টলমল করছিলো।
হঠাৎ ফারহান ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হওয়াতেই ক্যাম্পাস থেকে দ্রুত গতিতে বের হতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া এসে খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন।
আর চোখ মুছিয়ে দিলেন , তারপর ই বললেন
– এভাবে এসে পড়লি কেন?
আর তোর চোখে পানি কেন ?

আমি কিছু না বলেই ফারহান ভাইয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
তারপর হাউ মাও করে কেঁদে উঠলাম।
কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যাচ্ছে।
ফারহান ভাইয়া যেন থম হয়ে গেছেন।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমি বলেছি তোর চোখ থেকে পানি পড়তে দিবো না।
আর আজ তুই কাঁদছিস, তাহলে কি আমার কথার মূল্য থাকলো ।
কি হয়েছে বল আমায় ?
প্লিজ ফারাবি বল আমায়, ঐ মেয়েটা প্রপোজ করেছে বলে কষ্ট পেয়েছিস?

আমি কোনো মতে কান্না থামিয়ে বললাম
– ঐ আপু টা আপনাকে চার বছর ধরে ভালোবাসে, কত কষ্ট করেছে আপনাকে এক মুহূর্ত দেখার জন্য ।
আর আমি কি করেছি ?
কিছুই না , উল্টো আপনাকে কষ্ট দিয়েছি , আপনাকে বুঝতে পারি নি।
আমি কতোটুকু আপনার যোগ্য?
ফারহান ভাইয়া আমায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে বললেন
– তুই কি জানিস নিশ্বাস কতোটা প্রয়োজনীয়?
নিশ্বাস আমাদের কতোটা আগলে রাখে?
তুই হলি আমার নিশ্বাস, তোকে ছাড়া আমি বাঁচার কথা ভাবতে ও পারবো না।
তুই আল্লাহর দেওয়া আমার জীবনের মূল্যবান সম্পদ।
তুই ছাড়া কেউ যোগ্য হতে পারে না।
তোর প্রতি টা নিশ্বাস আমার সাথে জড়িয়ে।
আর ঐ মেয়েটা আমায় ভালোবাসে ,কিন্তু তুই ভালোবাসার সুযোগ ই তো পাস নি।
আমি তো তোকে বুঝতেই দিই নি ।
উল্টো সব সময় শাসন করেছি।
এই শাসনের মাঝে তুই কি করে আমার প্রতি অনুভূতি জাগাতি?
মস্তিষ্ক তোর অনুভূতি কে জাগ্রত করতে দিতো না।
তাই এভাবে নিজেকে দোষারোপ করিস না প্লিজ।
তোর ভালো খারাপ সব টাই আমার, তাহলে তো আমি দোষী।
প্লিজ দোষারোপ করে আমায় আত্মগ্লানি তে ফেলে দিস না।
আর সামনে যে সময় টুকু আছে , আমরা হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবো।
দুজন দুজনার পরিপূরক হয়ে।

ফারহান ভাইয়ার কথায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
কতো সুন্দর করে নিজের উপর দোষ নিলেন।
তবু ও একটু অভিযোগ করলেন না।
এটাই বোধহয় ভালোবাসা ।

______________________

ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রিমি কে নিয়ে আমরা এক বিশাল বড় রেস্টুরেন্ট এ গেলাম।
যেহেতু লাস্ট এক্সাম ছিলো আজ তাই , যে করেই হোক রেস্টুরেন্ট এ তো যেতাম ই।
যাক বাবা ফারহান ভাইয়া ই বললেন রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার কথা।
এই কয়েকদিন এ রেস্টুরেন্ট এ তো যাওয়ার কথা বাদ ই দিলাম, একটা আইসক্রিম ও খেতে দেন নি।
সোজা পরীক্ষা দেও বাসায় গিয়ে পড়তে বসো আর বাসার খাবার খাও দেন আবার বইয়ের পাতায় ডুবে যাও।
আদারস নট এলাও, যাক বাবা আজ কত দিন পর রেসটুরেনট এর মুখ দেখলাম।
ভেবেছিলাম তো এই জীবনে আর রেস্টুরেন্ট এর মুখ দেখা হবে না।
ফারহান ভাইয়া আগে আগে হাঁটছেন আর আমরা পেছনে।
রেস্টুরেন্ট এর মেইন ডোর দিয়ে ঢুকতে যাবো ঠিক তখনি ফারহান ভাইয়া পেছনে বেক করলেন।
রিমি আর আমি অবাক হয়ে আছি, কি আজববব।
কোথাও চলে গেলেন ওনি , আর আমরা ঠায় রেস্টুরেন্টের বাইরে দাড়িয়ে রইলাম।
এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে আমরা দুজন এই রেস্টুরেন্ট এর ওয়েটার বা রিসিপশনিষ্ট।
সবাই আমাদের সামনে দিয়ে যাবে আর আমরা সবাইকে ওয়েলকাম জানাবো।
কি আজববব লোক ,বলা নেই কওয়া নেই কোথায় উধাও হয়ে গেলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া ফিরে এলেন সাথে 6 টা বাচ্চা।
আমি আর রিমি মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।
বাচ্চা গুলো র জামা কাপড় দেখেই বুঝতে পারলাম ওরা আশে পাশের বস্তির বাচ্চা।
ফারহান ভাইয়া আমাদের সামনে এসে বললেন
– চল এবার ,
আমরা ও কিছু না বলে চললাম।
বাচ্চা গুলো তো লাফিয়ে লাফিয়ে আগে আগে যাচ্ছে।
এদের জীবন নিয়ে এক্সপ্লেইন নাই বা করলাম।
যদি প্রতিটি মানুষ এদের কে একটু কেয়ার করতো , তাহলে আজ থেকে দশ বিশ বছর পর দেখা যেত এরাই আমাদের দেশের বড় বড় পদে চাকরি করছে।
কিন্তু হায় ওলি গলি তে ছড়িয়ে থাকা মেধা কে কেউ গুরুত্ব দেয় না।
বাচ্চা গুলো মেইন ডোর দিয়ে ঢুকতে গেলেই গার্ড বাঁধা দেয়।
আর বাচ্চা গুলো ও একদম চুপসে যায়।
পেছন থেকে ফারহান ভাইয়া কে দেখেই গার্ড সালাম জানিয়ে ওয়েলকাম জানায়।
ফারহান ভাইয়া সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললেন
– ওরা আমার সাথে এসেছে।

গার্ড ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বললেন
– ওহহ ওকে স্যার।

আসলে এটাই স্বাভাবিক, কোন বস্তির বাচ্চা কে নিয়ে এতো বড় রেস্টুরেন্ট এ কেউ আসবে সেটা ভাবা টা বোকামি ই বটে।
বাচ্চা গুলো অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।
ফারহান ভাইয়া বড় একটা টেবিল বুক করে।
সবাই আমরা এক সাথে বসি, তারপর খাবার অর্ডার করা হয়।
কিছুক্ষণের মাঝেই খাবার চলে আসে।
বাচ্চা গুলো এতো শত খাবার দেখে হা হয়ে যায়।
কিন্তু এরা চামচ এর ব্যবহার জানে না ।
যার ফলে চামচ নিয়ে হাতিয়ে যাচ্ছে, আমি বিষয়টা বুঝ তে পারলাম।
তাই আমি উঠে গিয়ে চামচ দিয়ে এদের খাওয়ানো শুরু করলাম ।
আশে পাশের সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছে আমি কোনো সিরিয়াল এর শুট করছি।
কিন্তু ছয় জন কে আমার একার পক্ষে খাওয়ানো সম্ভব না ।
তাই ফারহান ভাইয়া আর রিমি উঠে গিয়ে ওদের খাওয়াতে সাহায্য করলো।বাচ্চা গুলো খেয়ে দেয়ে পুরো টুইটুম্বর , দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঠিক কতো টা খুশি ওরা।
মনের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম সাথে ফারহান ভাইয়ার প্রতি হাজার গুন শ্রদ্ধা । এদের সবার হাতে আইসক্রিম দিয়ে আমরা খাবার খেতে লাগলাম।
খাওয়া শেষে দেখলাম
আইসক্রিম পুরো মুখে মাখিয়ে ফেলেছে।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলেন।
আর আমি লজ্জা পেলাম, কারন আমি ও আইক্রিম খেয়ে মুখ মাখিয়ে ফেলি।
কি ভয়ঙ্কর বিষয়।

ফারহান ভাইয়া বিল পে করার পর সবাই বের হয়ে আসলাম।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– ওদের ড্রেস কিনে দিলে কেমন হয়।
আমরা ও সম্মতি জানালাম, তারপর একটা সুপার সপ থেকে এদের সবাই কে জামাকাপড় কিনে দিলেন।
আর ওদের যাওয়ার আগে, এত্তো গুলো চকলেট কিনে দিলেন।
ওরা খুশি মনে আমাদের বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
এই দিকে আমি মুখ গোমড়া করে আছি।
রিমি বলল
– কি হয়েছে এমন করে আছিস কেন ?

আমি কিছু বললাম না।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একবার স্ক্যান করে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলেন।
আমি ব্রু কুঁচকে তাকাতেই বললেন
– আরে তোদের ও চকলেট কিনে দিবো।
বাচ্চা দের মতো মুখ ফুলিয়ে থাকিস কেন।

রিমি আর ফারহান ভাইয়া দুজন ই হাসা শুরু করলো।
আমি দুজনের দিকে ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম।
তারপর কিছুক্ষণ ঘুরে এক গাদা চকলেট নিয়ে , বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ।
______________________

পরীক্ষা শেষ হলে কয়েকদিন সম্পূর্ণ রেস্ট পেলাম।
ফারহান ভাইয়াই রেস্ট নিতে বলেছেন।
বিকেলে পা দেয়ালে ঠেকিয়ে মেঝেতে ওড়না ফেলে বেডে উপর হয়ে গেইম খেলছিলাম।
এটা আমার বড্ড বাজে অভ্যাস, কিন্তু কি করব হাজার হোক অভ্যাস তো।
হঠাৎ করেই কোথায় থেকে ফারহান ভাইয়া উদয় হলেন।
উনি রুমে ঢুকতেই হন্তদন্ত হয়ে উঠে ওড়না খুঁজছিলাম।
ফারহান ভাইয়া নিজে ও অপ্রস্তুত হয়ে গেছেন।
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়ে বললেন ছাদে চলে আছিস।
ধুর ওড়না ও খুঁজে পাই না।
আসলে দরকারের সময় কিছুই পাওয়া যায় না।
উঠে যেতেই দেখি মেঝেতে ওড়না পড়ে আছে।
ওড়না গলায় পেঁচিয়ে নিজে কেই গালি দিতে লাগলাম।
আসলেই আমি এক আস্ত গবেট।
ছাঁদে গিয়ে দেখি ফারহান ভাইয়া পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছেন।
ছাদে তো এসে পড়লাম কিন্তু এখন ওনার সামনে যেতে ভিষন লজ্জা লাগছে।
হঠাৎ পেছন থেকে ফারহান ভাইয়া ডাক দিলেন।
আমার চোখ তো বেরিয়ে যাবার উপক্রম।
উনি তো ঘুরে আছেন, আমায় দেখলেন কি করে?
ফারহান ভাইয়া আবার ডাকলেন কিন্তু আমি লজ্জায় কথা ও বলতে পারছিলাম না।
ফারহান ভাইয়া পেছন ঘুরতেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম।
কি করে তাকাবো আমি,সবসময় উল্টো পাল্টা কাজ করে ফেলি।
ফারহান ভাইয়া আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করালেন।
তারপর মৃদু হেসে বললেন
– লজ্জা পেতে হবে না আর।
এতো লজ্জা পেলে তো ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে।

কি আজববব, লজ্জা পেতে বারন করে এখন নিজেই লজ্জায় ফেলে দিচ্ছেন ।
উফফফ এই লোকটা এমন কেন ?
উনি কি আমায় লজ্জা দিয়েই মেরে ফেলবেন নাকি।
ফারহান ভাইয়ার চোখের দিকে কোনো কালেই আমি তাকাতেই পারি নি।
আজ তো আর ও পারবো না।
ওনার চোখের দিকে তাকালে চোখ জোড়া আপনা আপনি ই নজর সরিয়ে নেয়।
কি ভয়ঙ্কর বিষয় ।

ফারহান ভাইয়া আমার মুখে ফু দিয়ে বললেন
– আমার লজ্জাবতী এই টুকুতেই লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে এখনি, আর পরবতীর্তে কি করবে।
ওনার কথায় আমি ওনার শার্ট খামচে ধরলাম।
তারপর বললাম
– প্লিজ চুপ করুন।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে আমায় আলতো হাতে জড়িয়ে নিলেন।
মাথায় গভীর ভাবে চুমু দিয়ে বললেন
– আজ কে আমাদের একটা জায়গায় যেতে হবে।

আমি চমকে বললাম
– কোথায়?

ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– সব বলব আগে রেডি হয়ে আয়।
আমি ও মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম ।
তারপর রেডি হতে চলে গেলাম।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে গাড়িতে বসে আছি।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া এখনো বলেন নি আমরা কোথায় যাচ্ছি।
নিজের কৌতুহল কে এতোক্ষন দমিয়ে রাখলে ও এখন আর পারছি না।
তাই প্রশ্ন করেই ফেললাম
– আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ফারহান ভাইয়া একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলেন।
আজববব কোনো উত্তর ই দিলেন না।
যাহহহ যেখানে ইচ্ছে সেখানে নিয়ে যাহহহ আমি আর কিছুই বলব না।
তাই মুখ গোমড়া করে বসে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়িটা ব্রেক করালেন।
যেহেতু অন্য মনষ্ক ছিলাম তাই হঠাৎ ব্রেক করায় খানিকটা ঝুঁকে পড়েছিলাম।
কিন্তু ঝড়ের গতিতে একটা হাত আমায় আকরে ধরলো।
ফারহান ভাইয়া খানিকটা রেগে বললেন
– মন কোথায় আছে ?
এখনি তো কিছু একটা হতে পারতো?

আমি ভ্যাবলা মতো তাকিয়ে আছি।
উনি ওনার মতো বলেই যাচ্ছেন।
আমি আর কি বলবো, শুধু চুপচাপ বসে রইলাম।
ফারহান ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে নামিয়ে নিলেন।
আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমরা একটা ক্যাফে তে যাচ্ছি।
আমি খানিকটা অবাক ই হলাম, ক্যাফে তে যাবো এটা এমন আহামরি ব্যাপার কি ?
যার জন্য নাম টা ও বললেন না।
বেশি ঢং , কে জানে কোন মতলব এটেছেন।
একে আমার একটু ও বিশ্বাস হয় না।
যখন তখন বম ব্লাস্ট করে দেয় , আর আমি আহাম্মক বনে যাই।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে রাস্তা পার করাচ্ছেন ।
এই অবস্থা তে আমার মনে হচ্ছে, আমি কোনো পাঁচ বছরের বাচ্চা, যে গাড়ি দেখলে লাফিয়ে গিয়ে গাড়ির উপর পরবে।
কি ভয়ঙ্কর বিষয়, আশে পাশে আর ও অনেকেই অছে।
কেউ তো এভাবে কাউকে পাড় করাচ্ছেন না।
উনি ই হলেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের এক অন্যতম আশ্চর্য ।

কিছু দিন পর হয়তো এদের কাছে শুনতে হবে, পাঁচ বছরে বাচ্চা টাই বুড়ো আর আমি ই উনিশ বছরের বাচ্চা।
অবশ্য এখনো বাচ্চা উপাধিতে আছি।
এই মানুষ টা আসলেই হনুমান।
সাধারন মানুষের মতো কোনো আচরণ ই নেই।
আল্লাহহহ আমার বাচ্চা কাচ্চা , নাতি নাতনি গুলো কি শিম্পাঞ্জি হবে নাকি।
ফারহান ভাইয়া আমার মাথায় হালকা করে গাট্টা মেরে বললেন
– কি ভাবছিস এতো।
আমি টাল সামলাতে না পেরে বলে দিলাম শিম্পাঞ্জি।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে ব্রু কুঁচকে বললেন
– মানে।

আমি তো এবার পরলাম যাতাকলে।
মেকি হাসি দিয়ে বললাম
– নাহহ নাহহ তেমন না।
আসলে

ফারহান ভাইয়া মাথায় আবার গাট্টা দিয়ে থামিয়ে বললেন
– সমস্ত আজিব ভাবনা বাদ দিয়ে এবার আমার সাথে চলুন ম্যাডাম ।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।
তারপর ওনি আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
ভেতরে গিয়ে যাহহহ দেখলাম তাতে ভয়ে আমার যায় যায় অবস্থা।
আজকে নিঃসেন্দহে ফারহান ভাইয়া আমাকে ঠাটিয়ে ঠাপ্পর দিবেন।
রিমি রে আজকে আমরা শেষ, উগান্ডা যাওয়ার জন্য তৈরি হ।

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here