? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
part – 44 প্রথাংশ
_____________________________
আজকের এই মুহূর্তে খুব করে মনে হচ্ছে সত্যি ই তো আমি তো ওনার যোগ্য নই।
ওনি তো অনেক ভালো কাউ কে ডিজার্ভ করেন তাই না।
এতো ভালো ভালো সমন্ধ আসে, আমি তো তাদের কাছে তুচ্ছ।
বড্ড অভিমান হচ্ছে নিজের প্রতি , আমি ওনার প্রতি অন্যায় করে ফেলছি না তো?
মাথায় এই সমস্ত কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আন্টির কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।
আন্টি ফুপিদের উদ্দেশ্যে বললেন
– দেখো আপা , ফারাবি যথেষ্ট নম্র ভদ্র।
আর সব কিছু টাকা পয়সা দিয়ে মাপা যায় না।
আমার ছেলে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
আর আমরা ও ওকে খুব ভালোবাসি।
নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে এসেছি , আর আজ ও নিজের মেয়েই ভাবি।
আন্টির কথায় চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
এনারা আমায় কতোটা ভালোবাসে আর আমি এদের যোগ্য তো নই।
এদের ভালোবাসার কোনো মর্যাদা ই তো দিতে পারছি না।
কি ভয়ঙ্কর এই দুনিয়া , কেন অযোগ্যর সাথে মায়ায় জড়িয়ে দেয় ?
প্রকৃতি কেন বুঝে না, সব কিছুর ই একটা মাপ ঝোঁক আছে।
নিজের কান্নাটা কোনো রকম চেপে উপরে উঠে যাচ্ছিলাম।
তখনি চোখ পড়লো মেইন ডোর দিয়ে ফারহান ভাইয়া ঢুকছেন।
ওনাকে দেখে এখন নিজে কে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন আমি এতো অযোগ্য?
খুব বেশি ই খারাপ লাগছে, ইচ্ছে করছে ওনার বুকে মাথা গুঁজে সমস্ত অস্থিরতা কাঁটিয়ে দিই।
কিন্তু এই মুহূর্তে সব থেকে বড় প্রশ্ন মনে হচ্ছে
আমি কি ওনার যোগ্য?
যোগ্যতা অযোগ্যতার খেলা আমি আর নিতে পারছিলাম না।
তাই উপরে উঠার জন্য পা বাড়ালাম, কিন্তু পা যেন আটকে গেল একটি ঘটনাতে।
ফারহান ভাইয়াকে দেখে ইশি আপু ছুটে গেলেন।
আর তারপর ই ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলেন।
আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছেন।
এই মূহুর্তের উপযুক্ত রিয়্যাকশন আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
তাই মুখে এক চিলতে হাসি কেই আপন করে নিলাম।
ফারহান ভাইয়া ইশি আপু কে এক হাতে ছাড়িয়ে নিলেন।
কোনো দিকে না তাকিয়ে ই সিঁড়ি বেয়ে আমার কাছে চলে আসলেন।
আমি মুখের কোনে জোড়পূর্বক হাসি টেনে বললাম
– আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি কফি বানিয়ে পাঠিয়ে দিবো ।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমায় কোনো উত্তর দিলেন না বরং আমার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন।
আমি হালকা মাথা নিচু করে আছি ।
বেশ কিছুক্ষণ পর চমকে উঠলাম ফারহান ভাইয়ার ধমকে।
রাগি চোখে বললেন
– চোখ থেকে পানি পড়েছে কেন ?
আমি কিছু বলেছি ?
বল আমি কি বলেছি ?
আমি নিচু হয়েই মাথা ঝাঁকিয়ে না বললাম।
ফারহান ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু কন্ঠে বললেন
– তাহলে কেন কাঁদছিস?
কে এরা ?
আমার সাথে সমস্ত কিছু জুড়ে আছে তোর ।
অন্য কারো সাথে না , ফারদার যদি একফোঁটা চোখের পানি পড়ে তো খারাপি হয়ে যাবে।
গট ইট
এইটুকু বলেই আমায় এক হাতে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
আশে পাশে কে দেখছেন তাতে আমার ধ্যান নেই ।
কারন এই মুহূর্তে আমি সব থেকে শান্তির জাড়গাতে আছি।
( কিছুক্ষণ আগে রিমির সাথে ফারহান ভাইয়া কথা বলছিলেন ।
রিমি এই ঘটনা দেখতে পায় আর ফারহান ভাইয়া কে ভিডিও কলে সব লাইভ দেখিয়ে দেয়।
যার ফলে ফারহান ভাইয়া প্রমথ থেকে শেষ অব্দি সমস্ত টা দেখে নেয় )
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমায় উপর থেকে নিচে নামিয়ে আনলেন।
বড় ফুপিরা ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
ফারহান ভাইয়া বড় ফুপির উদ্দেশ্যে বললেন
– ফুপি কি যেন বলছিলে ফারাবি আমার যোগ্য কি না ?
এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ই মনে করছি না।
কিন্তু এই যে পিচ্ছি মেয়ে টা, এর মাথায় বার বার এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাবে।
আমি কোন ভাবেই আমার হবু স্ত্রীর অসম্মান টলারেট করবো না।
ফারাবি আমার যোগ্য নয় তাই নি , ও তো আমার অংশ।
যার সাথে আমার নিশ্বাস জড়িয়ে আছে।
আর নিশ্বাসের গতি ভালো হোক কিংবা খারাপ , সেটা ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি না।
আর ফারাবি কে ছাড়া আমি বাঁচার কথা ভাবতে ও পারি না।
ওও ফালতু?
ফালতুর বড় রকম উদাহরণ এখানে অবশ্যই আছে , কিন্তু সেটা ফারাবি নয়।
এই মূহুর্তে এতো গুলো গেস্ট এর সামনে তোমাদের মান সম্মান প্রদর্শন করতে চাচ্ছি না।
আর আমার বউ আমাকে জাদু করে থাকলে ও আমার বউ ই তো করেছে।
আমার যেহেতু প্রবলেম নেই , আই হোপ তোমাদের প্রবলেম থাকার কোনো প্রশ্ন ই নেই।
আর ও আমাকে রুপ দিয়ে ফাঁসিয়ে ছে তাই না ?
তো তুমি জানলে কি করে , আমাদের বেড রুমে ও কি ওকি ঝুঁকি মারার প্লেন করছো নাকি।
আই হোপ ফারদার আমার হবু স্ত্রী কে কেউ কিছু বলার পূর্বে নিজের অবস্থান টা ভেবে নিবে।
এই বলেই ফারহান ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে আবদ্ধ করে নিলেন।
তারপর চোখের কুর্নিশে জমে থাকা পানি টুকু মুছে দিলেন।
_______________________
সেই কখন ফারহান ভাইয়া ওনার রুমে বসিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু ওনার আসার নাম ই নেই।
বেশ বিরক্ত লাগছে , তাই রিমোট নিয়ে টিভি অন করে দিলাম।
টিভিতে চ্যানেল ঘোরাতেই চোখে পড়ল ডোরেমন কার্টুন।
আমারে আর পায় কে , আমি এক ধ্যানে ডোরেমন কার্টুন দেখতে লাগলাম।
বেশকিছুক্ষন পর ফারহান ভাইয়ার ডাক শুনলাম, ওনার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার কার্টুন দেখায় মন দিলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বসলেন , কিন্তু আমি কার্টুন দেখায় ব্যস্ত।
ওনি বেশ কয়েকবার ডাকলেন , কিন্তু আমি সাফ সাফ বলে দিলাম
– এই মূহুর্তে আমায় ডিসটার্ব করবেন না।
আমার কার্টুন এর এড আসলে কথা বলবেন।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে তাকিয়ে রইলেন।
প্রায় দশ মিনিট পর এড আসলো, ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে ওনার দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।
এতোক্ষন পর আমার ধ্যান ভাঙ্গলো যে আমি দ্যা গ্রেট ফারহানের সামনে আছি।
ওনাকে দেখে ঘাবরেই গেলাম।
ওনি আমার অবস্থা দেখে মুচকি হাসলেন।
তারপর আমার কপালে ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে দিলেন।
আমি কেঁপে উঠলাম, ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– এইটুকু তেই কাঁপাকাঁপি ?
তো আমি কি বিয়ের পর আপনাকে বড় করবো আর নিরামিষ থেকে যাবো ?
ওনার শান্ত স্বরে মারাত্মক কথা গুলো আমায় বার বার কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– ফারাবি ঐ দিকে তাকা ।
আমি চোখ বন্ধ রেখেই বললাম
– উহুহহ
ফারহান ভাইয়া অনুরোধের স্বরে বললেন
– একটু তাকা।
আমি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম সেন্টি টেবিলের উপর রাখা চিকেন পাস্তা উইথ সুইট কর্ন আর পেন কেক।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকে বললাম
– এখন এগুলো কোথায় থেকে আনলেন ?
আমার কথাতে ফারহান ভাইয়ার ভঙি যেমন হলো তাতে মনে হচ্ছে আমি কোনো জোক শোনাচ্ছি।
আমি চোখ ছোট করে তাকাতেই ফারহান ভাইয়া বললেন
– এগুলো আমি বানিয়েছি আর তুই রেস্টুরেন্ট কে ক্রেডিট দিচ্ছিস।
দিস ইজ নট ফেয়ার।
আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর বললাম
– আপনি বানিয়েছেন ?
ফারহান ভাইয়ার মাথা ঝাঁকালেন।
মাই গডডড আপনার আর কিহহ কিহহ গুন আছে।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– যেই গুনটা তোর কাছে আছে , সেটা আমার কাছে নেই ।
তাই তো বলি আমরা দুজন একে অন্যের পরিপূরক।
ফারহান ভাইয়ার কথায় খুশিতে চোখের কোনে কিঞ্চিত পানি চলে আসলো।
কিন্তু সেটা সামলে নিয়ে বললাম
– তো না খাইয়ে বসিয়ে রাখবেন নাকি?
ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।
তারপর আমায় নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন আর ওনি ও খেয়ে নিলেন।
এতো স্নিগ্ধ কেন ওনি?
আমি তো ওনাকে ওনার মতো করে ভালোবাসতে পারব না।
ওনি আমায় এতো কেন ভালোবাসেন?
ফারহান ভাইয়া আমাকে রিমির রূমে দিয়ে মৃদু হেসে বললেন
– সমস্ত আজিব ভাবনা বাদ দিয়ে এখন সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়বি।
তা না হলে কিন্তু আমি চলে আসবো।
ওনার কথাতে আমি হালকা হাসলাম।
তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসলাম।
____________________
মেহেন্দির দিন সকালে বাসায় যে পরিমানে গেস্ট আসছেন।
তা দেখে আমি মাথায় হাত দিয়ে সোফাতে বসে আছি।
মনে হচ্ছে, আজ কে ফারহান ভাইয়াদের প্রকান্ড বাড়িটার এক কোনে ও ঘুমানোর জন্য জায়গা পাবো না।
ভীষন রকমের চিন্তা তে পড়ে গেলাম।
রিমি পার্লার এ যাওয়ার জন্য নাচতে নাচতে সিঁড়ি
বেয়ে নিচে নামছিলো।
আমায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে ,রিমি আমার কাছে এসে ব্রু কুঁচকালো।
আমি ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার ভাবনাতে মজে গেলাম।
রিমি আমাকে ধাক্কা মেরে বলল
– কিহহ ভাবছিস ?
আমি রিমির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম
– আজকে মনে হয় এই বাসাতে ঘুমানোর জন্য কোনো স্পেস ই পাবো না।
রিমি মলিন মুখে বলল
– আমার তো মাথাতেই আসে নি।
পুরো বাসা তো টুইটুম্বর করে ফেলেছে।
আমাদের না উঠিয়ে ফেলে দেয়।
বলতে না বলতে রিমির খালামনিরা ও এসে পড়লো।
ওর বোন গুলো রিমির রুম দখল করে নিল।
রিমি আর আমি ভ্যবলার মতো তাকিয়ে রইলাম।
গেস্ট দের জন্য সমস্ত গেস্ট হাউস ও ফুল।
এখন বাকি আছে ফারহান ভাইয়ার রুম।
কারন ঐ রুমে ঢোকার সাহস কারো নেই।
বেশ কিছুক্ষণ আমি আর রিমি চিন্তা তে পড়ে গেলাম।
রিমি তো ওর বোনদের সাথে টানাটানি শুরু করে দিয়েছে।
কারন যে করেই হোক ওকে ওর রুমে থাকতেই হবে।
সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যে ঐ খানেই।
আমি বাবা এর মধ্যে নেই , কারন আমি গুজাগোজি করে থাকতে পারি না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক কাপ কফি বানাতে কিচেনে চলে গেলাম।
পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরলো, না ঘুরেই বুঝে গিয়েছি কে এটা।
তাই হালকা স্বরে বললাম
– ছাড়ুন , কেউ এসে পড়বে।
ফারহান ভাইয়া ছাড়ার বদলে উল্টো আরো জোড়ে চেপে ধরলেন।
এই মূহুর্তে আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ওনার নিশ্বাস আমার ঘাড়ে এসে পড়ছে।
শরীর যেন হিম শীতল হয়ে গেছে।
হঠাৎ করে ই তিন্নি কিচেনে এসে পড়লো।
আমি তো বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম, মেয়ে টা প্রথম দিকে কথা না বললে ও এখন বেশ মিশে গেছে আমার সাথে ।
মেয়েটার কথার স্টাইল বেশ সুন্দর।
তিন্নি চোখ আটকিয়ে বলল
– আমি কিছু দেখি নি।
ফারহান ভাইয়া এখনো আমায় ধরে আছেন।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– দেখে না থাকলে দেখে নে, কাজে লাগবে ।
এই বলেই হাসতে লাগলেন।
আর আমি আমাকে ছাড়াতে ব্যস্ত।
ফারহান ভাইয়া তিন্নি কে বললেন
– বুঝেছিস তিন্নি , ওর হাত ধরলে ও ওর কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায়।
তো বিয়ের পর কি হবে।
কেমন জ্বালাতন বল, এ কবে বড় হবে বল তো।
আমার বাচ্চা কাচ্চা গুলো যে আসার জন্য উতখুচ করবে।
কিন্তু এ তো নিজেই একটা বাচ্চা।
তিন্নি হাসতে হাসতে চলে গেল।
আর যাওয়ার আগে ফারহান ভাইয়া কে বলে গেল
– কান্টিনিও ব্রো।
ফারহান ভাইয়া কে কোনো মতে ছাড়িয়ে বললাম
– কি হলো এটা।
ফারহান ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে বললেন
– কোথায় কি হলো ?
আমি মুখ গোমড়া করে রইলাম।
ফারহান ভাইয়া আমায় ঘুরিয়ে বললেন
– বাসায় অনেক গেস্ট, পুরো বাসা টুইটুম্বর।
রিমির রুমে হয়তো রিমিই ঢুকতে পারবে না।
আর আমি চাই না তুই এতো গাদাগাদি করে থাক, তাই এই কয়েকদিন তুই আমার রুমে থাকবি।
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম
– আপনার রুমে মানে।
ফারহান ভাইয়া বাঁকা হেসে বললেন
– এখনি আমার সঙ্গে থাকতে হবে না।
আমরা বন্ধুরা সবাই একসাথে ই থাকবো উপরে হল রুমে।
আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম
– আপনি তো কাউকে আপনার রুমে ঢুকতেই দিতে চান না।
তাহলে
ফারহান ভাইয়া আমার মাথায় হালকা করে গাট্টা মেরে দিলেন ।
তারপর বললেন
– তুই এতো পিচ্ছি।
সবাই আর তুই এক হলি নাকি ?
আর যার স্থান আমার কলিজায়, সে আমার সামান্য রুমে থাকবে এটা কি এমন আহামরি বিষয়।
আমি ওনার দিকে ভ্যাবলা র মতো তাকিয়ে রইলাম।
____________________
মেহেন্দি , হলুদ বেশ ভালো করেই কেটে গেল।
আনন্দ আর উল্লাসে মেতে উঠেছে পুরো পরিবার।
বিয়ের দিন মেচিং করে ফারহান ভাইয়া আর আমি ড্রেস পড়লাম।
ফারহান ভাইয়া যখন হাতা গুজতে গুজতে আসছিল , সেই মূহুর্তে আমি যেন কোন এক অজানা রাজ্যে হাড়িয়ে গিয়েছিলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে মুখটা নিচু করে বললেন
– কিহহ ম্যাডাম।
ক্রাশ খেয়ে গেলেন নাকি ?
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম
– মোটে ও না।
ফারহান ভাইয়া কিঞ্চিত হেসে বললেন
– আহহহ সব মেয়েই ক্রাশ খেলো শুধু এই মূল্যবান কলিজা কেই ক্রাশ খাওয়াতে পারলাম না।
আমি মুচকি হেসে বললাম
– ক্রাশ তো সবাই খায় , আমি না হয় মুগ্ধতাতেই রয়ে গেলাম।
দু একটা খামতি থাকলেই বা কি ?
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বললেন
– খুব কিউট লাগছে।
ইচ্ছে তো করছে এখনি
আমি মুখ আটকিয়ে দিলাম।
তারপর বললাম
– প্লিজজজ আমার কেমন যেন লাগে।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে আমায় এক হাতে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
কিছুক্ষণ পর বললেন
– তো যাওয়া যাক নাকি আজ এভাবে থাকতে চাস ?
আমি মুচকি হেসে বললাম
– নাহহ যেতেই চাচ্ছি।
কারন বেশিক্ষণ থাকলে আমি খুন হয়ে যাবো।
আর তখন আপনি স্বামী না হয়ে , হয়ে যাবেন আস্বামী।
ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– সুইটহার্ট আস্বামী তো আমি হবোই ।
ভালোবাসা দিয়ে খুন করে নিবো তোকে।
ফারহান ভাইয়ার কথায় লজ্জা পেলাম , কথা ঘুরিয়ে বললাম
– চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রাফাজ ভাইয়ার বিয়ে কমপ্লিট করে তো বাসায় এসে রিমির বিয়ে ও কমপ্লিট করতে হবে।
ফারহান ভাইয়া ঘড়ি দেখে বললেন
– হুমমম চল।
_______________________
বড় যাত্রী হয়ে বেরিয়ে পরছিলাম, কিন্তু মাঝে দুজন এসে পথ আটকালো।
আমরা সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।
রিমি আর ফাহিম ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন।
দুজন সেজে গুঁজে রেডি হয়ে আছে।
রাফাজ ভাইয়া বলল
– এই তোদের দুটোর মাথা গেছে নাকি ?
তোদের ও তো বিয়ে।
ফাহিম ভাইয়া মুখ গোমড়া করে বললেন
– দেখো ভাইয়া , আমরা কোনো ভাবেই তোমার বিয়ে মিস করবো না।
আর আমাদের বিয়ে তো সন্ধ্যা বেলাতে।
সবাই কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম, তারপর এক দমে হাসাহাসি শুরু করে দিলাম।
কি আজববব বিষয়
পরক্ষণেই ওদের দুজন কে নিয়ে ই রওনা হলাম
হৈ হুল্লর করতে করতে বড় যাত্রী উপস্থিত হলাম।
অবশেষে রাফাজ ভাইয়ার আর তনি আপুর বিয়ে টা সম্পূর্ণ হলো।
সবাই মিলে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে বউ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
_______________________
বাসায় এসে আড্ডা মজা করতে ব্যস্ত।
বিউটিশিয়ান এসে রিমি কে সাজাতে নিয়ে গেল।
অবশেষে সন্ধ্যা ও হয়ে গেল আর খুনসুটি, ভালোবাসার মাধ্যমে রিমির আর ফাহিম ভাইয়ার বিয়ে টা ও সম্পূর্ণ হয়ে গেল।
_______________________
রাতে ডান্স এর জন্য ঘোষনা দেওয়া হলো।
আমি রিমির সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
রিমি আমাকে ফারহান ভাইয়ার সাথে ডান্স করতে যেতে বলল।
আমি যেতে নিলেই দেখি ইশি আপু ছুটে ফারহান ভাইয়ার সামনে উপস্থিত হলো।
ইশি আপু ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে বলল
– ফারহান লেটস ডান্স।
ফারহান ভাইয়া ইশি আপু কে ছাড়িয়ে বললেন
– ইশি আমার হবু স্ত্রীর সাথে আমি ডান্স করবো।
ইশি আপু ফারহান ভাইয়া কে আবার জড়িয়ে বলল
– ফারহান অস্ট্রেলিয়া তে থাকতে তুমি এমন ছিলে না।
আমরা এক সাথে কতো ঘুরেছি , নাইট ক্লাবে ও গিয়েছি।
আর তাছাড়া ফারাবির মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই।
আমি তো তোমার সাথে রুম ডেট ও করতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু তুমি
ফারহান ভাইয়া তাৎছিল্যর হাসি দিয়ে বললেন
– এটাই প্রবলেম।
তুমি নিজেকে বিলিয়ে দেও, মূল্যহীন ভাবে।
আর ফারাবি হলো অমূল্য যাকে সহজে পাওয়া যায় না।
আর আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ওকে জয় করেছি।
আর তোমার মতো সবাই ফালতু না যে নিজের হাফ জামা খুলে অন্যর এটেনশন পেতে যাবে।
( দুই বছর আগে , ফারহান অস্ট্রেলিয়াতে ওর ফুপির বাসাতে থাকতো।
ফারহানের পড়াশুনা সম্পূর্ণ কমপ্লিট হয়ে গেছে।
এখন ওও নিজের বিজনেস নিয়ে বিজি।
একদিন একটু আগে কাজ কমপ্লিট হয়ে গেলে ইশি এসে বলে সে নাইট ক্লাবে যেতে চাচ্ছে।
ফারহান যেতে রাজি না হওয়াতে ইশি কান্না জুড়ে দেয়।
যার ফলে ফারহান ওকে নাইট ক্লাবে নিয়ে যায়।
ফারহান কখনোই ড্রিক্ করে না , তাই ও অরেন্স জুস নেয়।
কিন্তু অরেন্স জুস এ ইশি এলকোহল মিশিয়ে দেয়।
যার ফলে খানিকটা নেশা হয়ে গেলে ও ফারহান নিজেকে সামলাতে পেরেছিল।
ইশি এসে ফারহান কে ক্লাবের একটি রুমে নিয়ে যায় , আর ওও সেখানে নিজের হাফ জামা খুলে ফেলে।
এতোক্ষন পর ফারহানের মাথায় চরাও দিয়ে উঠে বিষয়টা।
তাই নিজেকে সামলিয়ে ইশি কে জোড়ে একটা ঠাপ্পর বসিয়ে দেয়।
আর চলে আসে ইশি কে ফেলে।
তারপর থেকে ফারহান ইশি
দের বাসা থেকে চলে আসে।
আর নিজের এপারটমেন্ট এ থাকতে শুরু করে । )
অপমানে ইশির মুখ টা ছোট হয়ে যায়।
কি আছে ঐ ফারাবির মাঝে।
ফারহান ভাইয়া ইশি আপু কে ছাড়িয়ে আমার কাছে চলে আসেন।
আমার চোখে কিঞ্চিত পানি চলে আসে।
ফারহান ভাইয়া আমার মুখে হাত দিয়ে বলেন
– এই ফারহান কে একমাত্র তুই ই বিট করতে পারিস।
আদারস কেউ না , কেউ না।
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম এই মানুষটা কেন আমায় এতো ভালোবাসেন ?
কেন ?
আমি পৃথিবীর সমস্ত ভাগ্যবতীর মধ্যে একজন।
মহান আল্লাহর কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া তিনি আমার জীবনে এমন একজন কে পাঠিয়েছেন।
চলবে
ফাতেমা তুজ