স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 5,06

0
1488

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 5,06
ফাতেমা তুজ
05

স্কুলের প্রাক্তম ছাত্র আকাশ ভাইয়া আজকে আমাকে প্রপোজ করেছে। ছেলেটা সম্পূর্ণ বখাটে, রাস্তা ঘাট মানুষ শিক্ষক মানে না যেখানে সেখানে সিগারেট মদ খাওয়া শুরু করে। বড়দের সম্মান তো কখনোই না। আর মেয়ে দের সাথে ফ্লাট করা তো নিত্য দিনের ব্যাপার।প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিলাম। আমি রাত্রি, শিলা , বৈশাখী একই কোচিং এ পড়ি। রাত্রি আর বৈশাখীর বাসা অন্য গলির মোড়ে।
আর শিলা আর আমার বাসার প্রথম গলিটা একই ।
আর এই প্রথম গলির মোড়ের চায়ের দোকানের পাশে ক্যারাম স্টলেই বখাটে আকাশ ভাইয়া দের প্রধান আড্ডা মহল।
রোজ হানিফ কাকার চায়ের দোকান টা খোলা থাকে কিন্তু আজ নেই। আর শিলার জ্বর হওয়ায় শিলা ও নেই খানিকটা ভয় হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই এই গলি দিয়েই বাসায় ফিরতে হবে।
কারন অন্য দিক দিয়ে ফিরতে গেলে আমায় আরো তিনটে গলি টপকাতে হবে, কেউ কি চায় সহজ পথ থাকতে অধিক পরিশ্রম করতে?
আমি ও তেমনি সহজ পথ টাই বেছে নিলাম আর নিরুপায় হয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে খানিকটা সাহস জোগালাম।

মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছিলাম আকাশ ভাইয়া দের আড্ডা মহল থেকে পেরোতে না পেরোতো পেছন থেকে বখাটে আকাশ ভাইয়ার চেলা সিহাব এর ডাক
– এই পিচ্ছি।

কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।ভয়ে ঢোক গিললাম। ডাক টা শুনতে পেয়ে ও আমি না শোনার ভান ধরলাম। আমি কিছু না ভেবে আর ও তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করলাম। জনশূন্য রাস্তা, ভয়ে পা কাঁপছে মনে হচ্ছে কেউ পা টেনে ধরে আছে। রাস্তা যেন ফুরুচ্ছেই না , তবুও আমি চেষ্টার শীর্ষে নিজেকে আগাতে লাগলাম।

কিন্তু এ চেষ্টার সুফল পেলাম না আর। দৌড়ে এসে আকাশ ভাইয়া আমার সামনে দাড়ালো। আমি পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় খপ করে আমার হাত ধরে ফেললো।ভয়ে আমি কিছু বলতে ও পারছিলাম না।
হঠাৎ আকাশ ভাইয়া চেলা সিহাব কে বলল ‘মেয়ে টা জোস তাই না রে। তোর ভাবি বানালে কেমন হয়?’

সিহাব ভাইয়া এক বিশ্রী হাসি দিয়ে বলল
– মামা মেয়ে তো জোস , কিন্তু পিচ্ছি।

আকাশ ভাইয়া এক বিশ্রী শব্দ করে বলল
– আরে পিচ্ছি হলে কি হবে এখনই দেখ কতো জোস।

আরও কিছু ভাষার অপব্যবহারের মাধ্যমে নোংরা মানুষিকতার পরিচয় দিল আর বলল
– এটাকেই লাগবে আমার।

দুজনে অট্টহাসির সাথে পৈশাচিক চাহনি তে মেতে উঠলো।আমার চোখ ছলছল করছে নিজেকে খুব দূর্বল মনে হচ্ছে। আমি হাতটা ঝটকা মেরে ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম তখনই আকাশ ভাইয়া আমার পথ আটকে বলল ,
– আরে বেবি যাচ্ছো কোথায়? এখনই চলে যাবে ?

কিছু অশব্র উক্তি করল যার ফলে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম দৌড় দিতে যাবো তখনই আমার ওড়না ধরে টান দিল।

নিজেকে আড়াল করতে দ্রুত নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলাম। হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ার কারনে আকাশ ভাইয়া খানিকটা পিছিয়ে গেল। সেই সুযোগে নিজের বেস্ট দিয়ে দৌড়াতে থাকলাম। আমি যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছি। বাসায় ফিরে ব্যাগ কাঁধে নিয়েই ছাদে চলে আসলাম।পেছন থেকে রিফাত ভাইয়া কে দেখে চোখের পানি অবাধ্য হয়ে গেল।
চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছিলো, চোখের পানি লাগামহীন হয়ে গেছে। দুঃখ কষ্ট রাগ দূর্বলতা সব চোখের পানি হয়ে ঝরছিলো।

[ রিফাত ভাইয়া আমার চাচাতো ভাই হলে ও কোনো মতেই আপন ভাইয়ের থেকে কম নয়। রিফাত ভাইয়া আর আমি একে অপরের জন্য জান। ছোট থেকেই ভাইয়ার কাছে এটা ঐটা আবদার করতাম, ভাইয়া বলতো সে নাকি এনে দেবে না। তাই আমি গোমড়া মুখ করে বসে থাকতাম আর বলতাম ভাইয়ার সাথে কথাই বলবো না। পরক্ষণেই দেখতাম ভাইয়া সেটা ড্রাবল এনে দিয়েছে ।
আর আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে ভাইয়া কে বলতাম আমার বেস্ট ভাইয়া।আমাদের ভাই বোনের সম্পর্ক অসাধারণ। কখনো মনে হয় নি আমরা চাচাতো ভাই বোন। আর আমাকে যখন স্কুলে বা আশে পাশের কেউ জিজ্ঞাসা করতো ,তোমরা কয় ভাই বোন আমি বলতাম আমরা দুই ভাই বোন। আমি আর আমার রিফাত ভাইয়া।রিফাত ভাইয়া আর আমি দুজনেই একা হলে ও কখনো আমরা নিজেদের একা ভাবি নি , আব্বু আম্মু বড় মা আর বড় আব্বু ও তেমনি ,তাদের দুই সন্তান বলেই ভাবে। তাই তো আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন বিশেষ কারনে আব্বুর ট্রান্সফার হয় ঢাকা টু সিলেট।
আর আমরা পুরো পরিবার সিলেটে দুই বছরের জন্য সিফট হই।
সিলেটে ও আমাদের নিজস্ব বাড়ি আছে। আমার দাদু করেছিলেন সেই সুবাদে আমাদের এই খানে কোনো এক্সটা অসুবিধা হলো না। দাদু প্রচন্ড ভ্রমন পিপাসু ছিলেন মানে পাহাড়ি অঞ্চল বলতেই অজ্ঞান। আর সেই কারণেই এখানে একটি বাড়ি করে ছিলেন। যাতে অবসরে পাহাড়ের ঠান্ডা হাওয়ার স্বাদ নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের জন্মস্থান ঢাকা, ঢাকাতেই বসবাস আত্মীয় স্বজন ।]

ভাইয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। আমার সাথে কখনো কেউ এই ধরনের বাজে বিহেব করে নি কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেল।

আমার কান্নার শব্দ শুনে রিফাত ভাইয়া পেছন ফিরে তাকালো। আমি ভাইয়া কে ধরে কেঁদেই যাচ্ছি আমার কোনো হুস জ্ঞান নেই। কারো শান্ত মৃদু কন্ঠস্বরে আমার হুস ফিরলো।
– ফারাবি কি হয়েছে। এভাবে কাঁদছিস কেন?

তাকাতেই দেখলাম আমি রিফাত ভাইয়া কে নয় ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে আছি। একই ডিজাইনের টি শার্ট হওয়ায় পেছন থেকে বুঝতে পারি নি ।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 6
__________________

ভয়ে দুইদিন আমি স্কুল এবং কোচিং করতে যাই নি।
আমার এক কথা শিলা সুস্থ হলেই যাবো। বাসার সবাই আমার এহেন আচারনে হতবাক! সবার মুখে এক বুলি যে মেয়ে নিজের জ্বর হলে ও স্কুল কোচিং বন্ধ করে না সে বান্ধবীর জ্বরের জন্য এপসেন করছে। ব্যাপারটা কেমন যেন সন্দিহান তাই নয় কি।
উফফফফ বুঝি না যেহেতু আমি একা যেতে চাচ্ছি না নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু এরা কেউ তো বুঝতেই চাচ্ছে না। কি মহা ঝামেলা তে পরলাম!
তাই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলালাম, রুমে গিয়ে চট করে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম। আর তার আগে একটা কাগজে বড় বড় করে লিখলাম যে ফারাবি ততক্ষণ পর্যন্ত দরজা খুলবে না , যতক্ষণ না সবাই স্কুল আর কোচিং এর কথা বলা বন্ধ করছে। এই সুন্দর লেখাটা রুমের পাশের দেওয়ালে টানিয়ে দিলাম। সবাই এই ব্যাপারে চমকে উঠলো এই টুকু ব্যপারে কেউ এমন করে জানা ছিল না।
রিফাত ভাইয়া দরজার কাছে এসে অনেকক্ষন ডেকে গেল কিন্তু আমি বলে দিলাম তোমাদের কথা বিশ্বাস করি না। তারপর একে একে আম্মু, বড় মা, বড় আব্বু ডেকে গেলেন। আব্বু বাসায় নেই আজ দুদিন অফিসের কাজে কক্সবাজার গেছেন, না হলে হয় তো তিনি এসে ও ডাকতেন। আব্বুর কথা ভাবতেই মন টা খারাপ হয়ে গেল। নিজের মন কে নিজেই সান্ত্বনা দিলাম তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ চাপ পা ছড়িয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম।
ফ্যানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি। কালকের কথা মনে পড়তেই মন টা বিষিয়ে উঠলো। আবার খানিকটা লজ্জা পেলাম ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরার কথা ভেবে।
সে যাই হোক ভাইয়াই তো হয়। কিন্তু ফারহান ভাইয়া কাল এতো ঠান্ডা মেজাজে কথা বলছিলো কেন, হয়তো আমাকে কাঁদতে দেখে। এই সব চিন্তা করছিলাম এমন সময় রিফাত ভাইয়া ডাক দিলো আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল ‘ ফারাবি তুই বোধহয় আর কিটক্যাট খেতে পছন্দ করিস না। আচ্ছা থাক আমি ই খেয়ে নেই ,আমি চললাম রে। ‘

এই যে রিফাত ভাইয়া সব সময় আমার কলিজা তে টান মারে। ধ্যাত কি যে করি ভাল্লাগেনা। রুমের মধ্যেই পায়চারি করছি আর নিজেই নিজেকে বলছি যাই হয়ে যাক কিটক্যাট এর সাথে রাগ করা যাবে না। দরজা খুলে দিলাম এক দৌড়, দেখি রিফাত ভাইয়া করিডোরেই আছে। হাত থেকে হ্যাঁচকা টান মেরে চকলেট নিয়ে নিলাম বললাম তোমরা কিন্তু বলেছো আমাকে আর স্কুল কোচিং মিস নিয়ে কিছু বলবে না ।
রিফাত ভাইয়া বলল ,
– চকলেট নিয়েছিস না এখন যেতেই হবে। কোনো অজুহাত চলবে না।

কিন্তু আমি তো আমি ই যা বলেছি তাই শিলা সুস্থ হলেই যাবো। মুখ ভেঙচিয়ে চলে আসছিলাম ওমন সময় ফারহান ভাইয়া কে দেখে চমকে গেলাম। ফারহান ভাইয়া এতক্ষণ এখানেই ছিল হায় হায় কোথায় যাই আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ,তাই চুপ চাপ পাশ কাটিয়ে যেতে নিলাম ।
তখনই ফারহান ভাইয়ার ডাক পড়ল ,
– স্কুল যেতে চাচ্ছিস না নাকি?
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম
– শিলা অসুস্থ তো তাই ।
– আচ্ছা। শিলা সুস্থ হলেই কিন্তু আর মিস দিবি না বুঝেছিস।
মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসলাম ।
অতঃপর কেউ আমাকে আর জোড় করে নি। কারন তারা ও জানে আমি নাম্বার ওয়ান ঘাড় ত্যাড়া ।

______________

শিলা কে নিয়ে স্কুল যাচ্ছি।তিন দিনের মাথায় সুস্থ হয়েছে শিলা।
শিলা পাশে থাকা সত্যে ও মন কিছু তেই সায় দিচ্ছে না।
তিন তিনটে দিন স্কুল , কোচিং মিস হয়েছে আমার ,মন সায় না দিলে ও যেতেই হবে।আমি যে নিরুপায়,হতাশা, দূর্বলতা, আর চিন্তা সব কিছু দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসলো।

ধীরে ধীরে হেঁটে চলছি।মনের ভেতর অজানা সব ভয় কাজ করছে।নিজেকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আমায়।অসহায় এর মতো হেঁটে চলছি আর সেইদিনের নরকীয় ঘটনা গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাকে ভাবলীলাস হীন ভাবে হাঁটতে দেখে শিলা কয়েক বার ডাকলো।শিলার কন্ঠস্বর যেন আমার মস্তিষ্ক কে সাড়া দিলো না।
শিলা আমার এমন মতিভ্রম দেখে হালকা করে কয়েক টা ধাক্কা দিলো।এবার বোধহয় আমার শরীররের প্রতি টা কোষ সংকুচিত হয়ে শিলার দিকে মনোযোগ দিলো ।
শিলার দিকে হালকা করে তাকিয়ে বললাম
– হুম।
শিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো ‘কিরে এতোক্ষন ধরে ডাকছি কোনো সাড়া নেই যে?কোন জগতে আছিস হুম?’
– না তেমন কিছুই না।
– আচ্ছা শরীর খারাপ হলো না তো।

আমার কপালে শিলা আলতো ভাবে হাত ছোঁয়ালো তারপরই বলা শুরু করলো
– উমমম না,জ্বর তো না। টেম্পারেচার তো একদম ঠিক তাহলে? ফারাবি অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?বাসায় বেক করি তাহলে?’

শিলার হাত ধরে হালকা হেসে বললাম
– আরে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। অতিরিক্ত গরমের কারনে হয়তো অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।

শিলা আমার গাল টেনে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে চল তাহলে।

ধীরে ধীরে আগাচ্ছি যতো, মনের ভেতর অজানা সব ভয় বাড়ছে ততো। সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়া দের আড্ডা মহল দেখা যাচ্ছে। এবার যেন পা চলছেই না। কোনো রখম হেঁটে চলছি আর সেইদিনের ঘটনা সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
আকাশ ভাইয়া দের আড্ডা মহলের কাছাকাছি চলে এসেছি তখন দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়া রা
আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি স্থির হয়ে গেলাম।
শিলা সামনের দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে। বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে কিন্তু ওর কিছুই বোধগম্য হলো না বোধহয়।
আকাশ ভাইয়া আমাদের একদম কাছে চলে এসেছে মাঝে দুহাতের দূরত্ব হবে। মনের ভেতর অজানা সব আশংকা ঝড় তুলছে।তবে কি আজও সেদিনের মতো?
না না মাথা কাজ করছে না।
আমার ভাবনাকে অগ্রসর করতে না দিয়ে হঠাৎ আকাশ ভাইয়া আমার পা ধরে বসে পড়ল।
আকাশ ভাইয়া দের মতো এমন নরপিশাস বখাটের এমন অপ্রত্যাশিত কান্ডে আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম।
মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি এ কি হচ্ছে আমার সাথে?
আমার ভাবনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যে করে দিয়ে আকাশ ভাইয়া পা জড়িয়েই বলা শুরু করলো,
– বোন আমারে মাফ করে দেও। আমি অন্যায় করে ফেলেছি।আর কখনো এমন হবে না।প্লিজ বোন প্লিজ লাস্ট বারের মতো মাফ করো আমায়। এই যে কান ধরছি , কখনো কারো সাথে এমন করবো না, প্লিজ বোন প্লিজ।

আকাশ ভাইয়ার এমন বিহেভ এ আমি হতবুদ্ধি না হারিয়ে পারলাম না।

শরীরের প্রতি টা নিউরন স্তব্ধ হয়ে গেছে।আমার কি করা উচিত তা মতিভ্রম হলো না।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো রখমে বললাম
‘ঠিকাছে আমি মাপ করে দিয়েছি।’

এই বলেই পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম। কোনো ভাবেই এই নরপিশাস দের এক মুহূর্ত দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
কিন্তু এটা কি হয়ে গেল আমার সাথে সে বিষয়ে আমি সন্দিহান!

আমি একটু আগে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় ঘটনায় হতভম্ব! মনের সকল কার্যক্রম স্থির হয়ে শুধু একটা কথাই জানান দিচ্ছে কি হলো এটা।
খানিকটা পথ চলে আসার পর শিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো
‘ ফারাবি সব কিছু বুঝিয়ে বল তো।আকাশ ভাইয়া দের মতো এমন নরপিশাস বখাটে হঠাৎ পথ আটকিয়ে এভাবে তোর কাছে ক্ষমা কেন চাইলো। কিছু কি হয়েছে?আর ওদের অবস্থায় দেখেছিস?’

শিলার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো।আসলেই তো। আমি আমার চিন্তা তে এতোই বিভোর ছিলাম যে আমি খেয়াল ই করি নি আকাশ ভাইয়া দের করুন অবস্থা।

শিলাকে সেইদিনের সব ঘটনা খুলে বললাম। শিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো ,
– ও মাই গড।এতো কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে জানালি ও না।

আমার পতিউওরের প্রত্যাশা না করে শিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
– আম সরি ফারাবি। আমি থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।

আমি শিলা কে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাথায় গাট্টা মেরে বললাম
– ধুর বোকা।এতে তুই কেন আপসেট হচ্ছিস। তোর কি দোষ আর নরপিশাস রা ওদের নরকীয় আচারন তো দেখাবেই। তাই বলে আমরা কেন নিজেদের দোষারোপ করবো। আর তাছাড়া দেখলি না কেমন শাস্তি পেয়েছে ওরা। আল্লাহ্ যা করেন নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই করেন।
এর জন্য আপসেট হবি না প্লিজ।

স্কুলের কাছাকাছি চলে এসেছি তখনই শিলা আমাকে বলল
– ফারাবি আকাশ ভাইয়া দের এই অবস্থা কে করলো বল তো?তুই কি বাসায় কাউকে বলেছিস?

আমি নিজে ও এই বিষয়ে চিন্তিত কে করল এমন।
শিলার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো।
– না রে।আমি তো বাসায় বলি নি। জানি না কি হলো এসব।

আমাকে কাছে ঘুরিয়ে শিলা বলল
– সে যাই হোক। যা হয়েছে ভালো ই হয়েছে শয়তান গুলোর উচিত শিক্ষা হয়েছে। চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।
না হলে ম্যাথ স্যার আজকে কান ধরে দাড়া করিয়ে রাখবেন।

– হুম চল।

বলেই তাড়াতাড়ি স্কুলে চলে গেলাম।

_____________________

স্কুল থেকে ফিরছিলাম। প্রচন্ড গরমে মাথা কাজ করছে না। তাই শিলা আর আমি একটা শপ থেকে আমার প্রিয় লেমন ফ্লেবার এর আইসক্রিম কিনে নিলাম সাথে নিলাম আমার দুর্বলতা কিটক্যাট আর ড্রাক চকলেট।

দুজনে আয়েসে আইসক্রিম খেতে খেতে আসছিলাম।
খাওয়া প্রায় শেষ তখনি দেখা হলো শিলার আব্বু আম্মুর সাথে। সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম।
শিলার আব্বু আম্মু সুপারসপ এ যাচ্ছিলো কেনাকাটার জন্য তাই সাথে করে শিলা কে ও নিয়ে গেল। মেয়েটা বাসায় একা একা থাকার থেকে ওনাদের সাথে গেলেই ভালো হবে এতে ওনাদের সাহায্য ও হবে আর ওনারা যথেষ্ট সময় নিয়ে কেনাকাটা ও করতে পারবেন। তাই ওনারা শিলা কে নিয়েই চললেন।বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।

হাঁটছি ঠিকই কিন্তু মাথা কাজ করছে না। সকালে কি হয়ে গেলে, এক ধ্যানে হেঁটে চলছি , ভাবনা গুলো কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here