স্বপ্নের প্রেয়সী ? Riders special part 43

0
1260

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Riders special part 43
________________________

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলাম, হঠাৎ করেই পা পিছলে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু তার আগেই ফারহান ভাইয়া হাত ধরে নিলেন।
সবাই আমাদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।
এতে বেশ অস্বস্তি বোধ হলো , কিন্তু তার থেকে বেশি লজ্জা লাগছিল।
কারন ফারহান ভাইয়া আমাকে বকেই যাচ্ছেন।
ফারহান ভাইয়া হাত ধরেই বলছেন
– হোয়াট ননসেন্স ফারাবি।
দেখে হাঁটতে পারিস না , আর এই সব কি জুতো পরেছিস।
দশ ইঞ্চি লম্বা , তোকে কে বলেছে এটা পড়তে ?

আমি ফারহান ভাইয়ার কথাতে পায়ের দিকে তাকালাম।
কই দশ ইঞ্চি লম্বা, এটা তো দেড় ইঞ্চি লম্বা।
ব্রু কুঁচকে বললাম
– দশ ইঞ্চি লম্বা না তো, আপনি ভুল দেখছেন , এটা তোওও

ফারহান ভাইয়া জোড়ে ধমক দিলেন।
আমি চুপসে গেলাম, ভুল কি বলেছি।
আর ওনি আমাকে বকা শুরু করেছেন।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে নিচে নামিয়ে নিলেন।
মনে হচ্ছে আমি আসলেই বাচ্চা, ওনার এমন কান্ডে সবাই মুখ চেপে হাসছে।
কি লজ্জার ব্যাপার, নিজের তো কোনো লাজ লজ্জা নেই , আমাকে শুধু শুধু যাতাকলে ফেলে দেন।
ডাইনিং এ বসে নাস্তা করছিলাম, ফরহাদ চাচ্চু বললেন –
– সবাই মিলে তনিমাদের বাসায় যাচ্ছো যেহেতু তো আজকের পার্টিতে ওদের সবাই কে ইনভাইট দিতে ভুলো না।
সবার সাথে কিছু আলোচনা ও তো করতে হবে।
রাফাজ ভাইয়া সম্মতি
জানালেন।
তারপর আমরা সবাই কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
এক গাদা জিনিস পত্র নিয়ে তনি আপুদের বাসায় চলে আসলাম।
তনি আপু কে আমি কখনো দেখি নি, তাই খুব বেশি ই এক্সসাইটেট।
আমার এক্সসাইট মেন্ট দেখে সবাই হাসছেন।
অবশ্য আমি, ও দিকে পাত্তা দিচ্ছি না।
দু বার কলিং বেল চাপতেই একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দিলেন।
আমাদের বসতে বলে তনি আপু কে ডাকতে গেলেন।
কিছুক্ষণের মাঝেই তনি আপু চলে আসলো।
আমি তো তনি আপুর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
উজ্জ্বল ফর্সা গায়ের রঙ , ঘন চোখের পাপরি , স্বাস্থ্য মেডিয়াম।
পিং থ্রি পিস এ আপু কে বেশ সুন্দর লাগছে।
আমার সামনে 24 বছরের তরুনি যে দাড়িয়ে আছে তা আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছে না।
মনে হচ্ছে এই তো বিশ এ পা দিলো বুঝি ।
তনি আপু আমাদের দেখে তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
রাফাজ ভাইয়ার কাছে এসে বলল
– এভাবে সারপ্রাইজ দিলে , আর ওদের নিয়ে আসবে বলবে তো।
তনি আপুর আম্মু আব্বু বাহিরে গেছেন।
সবাই হালকা নাস্তা করে গল্প করতে লাগলাম।
তনি আপু যেমন সুন্দরী তেমনি মিশুক।
বেশ ভালো লাগলো কথা বলে, কিছুক্ষনের মাঝেই তনি আপুর আম্মু আব্বু চলে আসলেন।
তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে আজকের পার্ট কথা জানিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সবাই গল্প করলাম।
তারপর ওনাদের বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।

_______________________

সন্ধ্যায় বিশাল পার্টির আয়োজন করে হয়েছে।
ফরহাদ চাচ্চুর কম্পানির সমস্ত স্টাফ আর ইনভেস্টাররা ও এসেছেন।
এই পার্টির মুখ্য হলেন ফাহিম ভাইয়া।
আজকে সবার সাথে ফাহিম ভাইয়ার পরিচয় করানো হবে।
অনুষ্ঠান শুরু হতেই ফরহাদ চাচ্চু ঘোষনা করে দিলেন ফাহিম ভাইয়া কে তার আরেক ছেলে হিসেবে।
তারপর আর ও ঘোষনা করলেন
– ফাহিম ভাইয়ার সাথে রিমির আর রাফাজ ভাইয়ার সাথে তনি আপুর বিয়ে হচ্ছে।
ডেট এখনো ঠিক করা হয় নি , কিন্তু আজ ই ওদের এনগেন্সমেন করানো হবে।
তনি আপু তো অনেক খুশি, গত তিন বছর ধরে রাফাজ ভাইয়া কে বলে যাচ্ছে বিয়ের কথা কিন্তু রাফাজ ভাইয়ার ভাষ্য মতে তনি আপু অনেক ছোট।
তাই সঠিক সময় হলেই বিয়ে করবেন।
অবশেষে সমস্ত পতিক্ষা ওদের শেষ হলো।
এনগেন্সমেন শেষ হলে সবাই এক সঙ্গে ডিনার সেড়ে নিলাম তারপর বড় রা আলোচনায় বসলেন।
আর আমরা সবাই আড্ডা দিতে চললাম।
সবাই মিলে ফুচকা বাজি ধরেছি , কাপল v কাপল।
সবাই কাউন্ট করে ফুচকা খেতে শুরু করলাম।
ফুচকা র সাইজ বেশ বড়।
10 মিনিট পর ফুচকার বাজি শেষ হলো।
আমি 24 টা ফুচকা খেয়েছি আর ফারহান ভাইয়া 11 টা।
কিহহ আজব।
মোট 35 টা হয়েছে, অন্য দিকে সবাই তো আর ও কম।
কিন্তু রিমি 21 টা আর ফাহিম ভাইয়া 19 টা ফুচকা মোট 40 টা ফুচকা খেয়ে জিতে গেল।
আমি ফারহান ভাইয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি।
ফারহান ভাইয়া ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে ইশারায় সরি বলছেন।
কিন্তু আমার খুব রাগ হচ্ছে
সবাই কম হলে ও 15 টা + ফুচকা খেয়েছেন আর ওনি মাত্র 11 টা।
এর কোনো মানে হয় , 24 টা ফুচকা খেয়ে ভেবেই নিয়েছি আমরা উইন হবো।
কিন্তু আমার কপালে যে এমন হাবুল আছে, সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম।
ফুচকা বাজি জিতে নেওয়ার স্বপ্ন ছিল , আমার ছোট্ট মনের ছোট্ট স্বপ্ন টা কে ভেঙে দিলেন ওনি।
এই লোকটা আমায় একটু ও ভালোবাসেন না, সব লোক দেখানো ড্রামা।
সবাই মিলে বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম, আমি মন খারাপ করে হাঁটছি দেখে ফারহান ভাইয়া পেছন থেকে হেচকা টান মেরে বাইরে নিয়ে আসলেন।
আমি কিছুই বললাম না , কারন এই মুহূর্তে আমি ওনার উপর বিরক্ত।
উনি তো আর কয়েকটা খেতেই পারতেন।
ফারহান ভাইয়া আমার বাহু ধরে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললেন
– এমন করতে নেই ফারাবি।
একটুর জন্য কেউ এতো মন খারাপ করে ?

আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– সবাই খেতে পাড়লো আর আপনি পাড়লেন না ?
একটুর জন্য হেরে গিয়েছি।
ধ্যাততত

ফারহান ভাইয়া আমায় এক হাতে জড়িয়ে বললেন
– মন খারাপ করিস না।
আচ্ছা তোকে লং ড্রাইভ এ নিয়ে যাই চল।
রাতের বেলা লং
ড্রাইভ উফফফ সেই, কিন্তু ওনাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।
তাই কিছু বললাম না , ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।
জানালা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়া আসছে , বেশ মজা লাগছে।
চোখ বুঁজে প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করতে লাগলাম।
বেশ অনেকক্ষণ গাড়ি চলল কিন্তু আমি চোখ বুজে ই অনুভব করছিলাম।
হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করায় চোখ খুললাম।
সামনে তাকাতেই চোখ গুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
এটা তো শহর না, গ্রামের দিকটা হবে।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে নামিয়ে নিলেন।
কিছুক্ষণ হেঁটে বিশাল নদীর সামনে আসলাম।
চারিদিকে জোনাকিরা জোছনা ছড়াচ্ছে, যার কারনে পরিবেশ টা বেশ মনোমুগ্ধকর লাগছে।
নদীর ধারে বসে ফারহান ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে কিছুক্ষণ পি ভেজালাম।
মূহুর্তের মাঝেই সমস্ত অস্থিরতা কেটে গেল।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়ার সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

_______________________

আর মাত্র সাত দিন পর বিয়ে তাই সবাই বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে।
একটি নয় দুটো কাপল এর বিয়ে বলে কথা ।
রিমি তো পার্লার এ যেতে আর আসতে ব্যস্ত।
আমার মনে হচ্ছে, এই পৃথিবীতে ওর ই একমাত্র বিয়ে হচ্ছে।
কি আজববব মেয়ে, শুধু পারছে না সবার গলায় ঝুলে নাচতে।
যখন তখন হাত ধরে টেনে নাচানাচি করছে।
মনে হয় বিয়ের আগেই পাগল হয়ে গেছে।
বিয়ে হলে আর বাসায় টিকতে পারবে না, হানিমুনে সোজা পাবনা।
ফারহান ভাইয়া বেশ ব্যস্ত , এতো বড় ফাংশন নিজের হাতে সামলাতে হচ্ছে।
মাঝে অবশ্য আমার সাথে দুবার ফোনে কথা ও বলেছেন।
কিন্তু ওনার টিকি টি ও আজ দেখতে পাই নি।
সকালে উঠে দেখি ওনি নাকি ভোর বেলা বেরিয়েছেন, আর এখন রাত আট টা বাজে কিন্তু ওনি বাসায় ফিরেন নি।
সারাদিন আমি ও বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছি , কিন্তু এই ব্যস্ততার মাঝে ও ওনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো।
সারা টা দিন হাজারো ব্যস্ততায় ও বোরিং কেটেছে।
ওনি যে অভ্যাস হয়ে গেছেন, যখন কারো অভ্যাস এ ব্যাঘাত ঘটে তখন তার অস্বস্তি হয়।
আর রীতিমতো আমার তো মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।
এই মূহুর্তে আমার প্রয়োজন করা করে এক কাপ কফি।
আশে পাশে কোনো সার্ভেন্ট কে ও দেখতে পাচ্ছি না।
আর বাকি সবাই ও তো ব্যস্ত তাই নিজেই বানাবো বলে ঠিক করলাম। উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম।
নামার সময় চোখে পড়ল মেইন ডোর দিয়ে ঢোকা কিছু রিলেটিভসদের উপর।
দুটো মহিলা বয়স সাতচল্লিশ আর তেতাল্লিশ হবে।
সাথে দুজন লোক কে ও দেখতে পেলাম, ওনাদের হাসবেন্ড মনে হচ্ছে।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলাম কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই লক্ষ্য করলাম দুটো ছেলে আর তিনটে মেয়ে।
ছেলে দুটোর বয়স ছাব্বিশ আর বিশ হবে।
মেয়ে তিনটের বয়স তেইশ একুশ আর সতেরো মনে হচ্ছে।
একুশ বছর বয়সী মেয়েটা ছাব্বিশ বছর বয়সী ছেলেটার হাত ধরে লেপ্টে আছে।
দেখে তো মনে হচ্ছে হাসবেন্ড উয়াইফ।
আর বাকি দুটো মেয়ের মধ্যে বড় জন তো হেব্বি ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে আছে।
এদের সবাই কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা ফরেন কান্ট্রি তে থাকে।
এদের দিকে আর মনোযোগ না দিয়ে কিচেনে পা বাড়ালাম।
কিচেন থেকে করা করে এক কাপ কফি বানিয়ে নিলাম।
এক চুমুক দিতেই যেন মাথা ব্যাথা টা কমে গেল।
আহহহহহ

কফি কাপ হাতে নিয়ে কিচেন থেকে ফিরছিলাম।
ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলাম রোমা আন্টি ওনাদের সাথে গল্প করছেন।
আমাকে দেখেই ইশারায় কাছে আসতে বললেন।
আমি টেবিলে কফি টা রেখে আন্টির কাছে গেলাম।
আন্টি মিষ্টি হেসে বলল
– এরা হচ্ছে ফারহানের বড় ফুপি , ফুপা , আর ছোট ফুপি ফুপা।
আমি হালকা হেসে ওনাদের সালাম জানালাম।
তারপর আন্টি বাকিদের সাথে ও পরিচয় করিয়ে দিলেন।
বড় ফুপির ছেলে তানভীর আর তার বউ মাহি।
আর সতেরো বছরের মেয়েটা হলো তানভীর ভাইয়ার ছোট বোন তিন্নি।
আর বাকি দুজন হলো ছোট ফুপির মেয়ে ইশিতা, আর ছেলে ইশান।
সবার সাথে ই আমি হালকা হেসে কথা বললাম।
কিন্তু এদের মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলাম এরা আমার সাথে পরিচয় হয়ে খুশি না বরং বেশ বিরক্ত।
বিশেষ করে ইশিতা আপু তো মনে হচ্ছে সহ্য ই করতে পারছে না।
আন্টি বললেন
– ওও ফারাবি , আফাদ ভাইয়ার মেয়ে আর আমার ফারহানের হবু বউ।
আন্টির মুখে বউ কথা টা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।
ওনাদের দিকে তাকাতেই দেখলাম , ওনাদের মুখের বিরক্ত কয়েক গুন বেরে গেছে।
আমি সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে যেতে নিলাম।
কিন্তু বড় ফুপির কথায় থেমে গেলাম।
বড় ফুপি আন্টি কে বলছেন
– দেখো ভাবি আমি জানি না তোমরা কি দেখে এই মেয়ে কে পছন্দ করেছো।
হুমম জানি আফাদ ভাইয়া ,ভাইয়ার বন্ধু ।
তাই বলে এটা তো নয় যে তার মেয়ে কে আমাদের ফারহানের ঘাড়ে গচিয়ে দিবে।
আর যাই হোক পরিবারের একটা স্ট্যাটাস তো আছে তাই না ?
এই মেয়ে রূপ দিয়ে আমার ভাইপো কে বশ করেছে।
ফালতু মেয়ে আর কোনো ছেলে পায় নি।
আমাদের ফারহানের জন্য কি মেয়ের অভাব নাকি।
কতো বড় ঘর থেকে সমন্ধ আসে।
এই মেয়ে কি আমাদের ফারহানের যোগ্য।
আর তাছাড়া আমাদের ই বা কম কি আছে ?
আমরা তো চেয়েছিলাম ইশির সাথে জোড় বাঁধবো , কিন্তু তার আগেই কোথা থেকে এই উটকো মেয়ে টা চলে আসলো।
বেহায়া মেয়ে

বড় ফুপির কথা শুনে আমি আর কিছু ই বলতে পারলাম না।
এই মূহুর্তে আমি কি করবো তা আমার বোধগম্য হলো না।
শুধু বার বার বড় ফুপির কথা গুলো কানে বাজছে।
এই মেয়ে কি আমাদের ফারহানের যোগ্য ?

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here