স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #part_60 ( সমাপ্তি পার্ট )

0
1420

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#part_60 ( সমাপ্তি পার্ট )
#ফাতেমা_তুজ

” একবছর পর ”
রাত প্রায় বারোটা। ফারাবি বই হাতে এপাশ ওপাশ করছে। ফারহানের কড়া দৃষ্টি তে মেয়েটা ঘুমাতেই পারছে না।
সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অনু মানসিক হসপিটাল থেকে ফিরে এসেছে। নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত সে। সবার ইচ্ছায় ফরিদ চৌধুরী আর অনু বিডি তেই থাকছে। অনুর জন্য পাত্র ও দেখা হচ্ছে। মেয়েটার প্রথম শর্ত হলো ছেলে যেন পিউর সিঙ্গেল হয়। এমন ছেলে যে কখনো রিলেশন করে নি।
এই ছেলের চক্করে সবার বারোটা বেজে গেছে।
তবু ও চলছে খোঁজ। ফারহানের সাথে অনুর সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হলে ও অনু লজ্জায় সামনে আসে না।
তবে ফারাবির সাথে সম্পর্ক টা বেশ ভালো যাচ্ছে। পরিবারের সবাই কে নিয়ে বেশ ভালো সময় পার করছে।

ফারাবি গালে হাত দিয়ে পড়ছে।
এতো এতো পড়া সারা রাত পড়লে ওহ তো বোধহয় শেষ হবে না। ফারহান রুম থেকে বের হতেই ফারাবি সুযোগ পেয়ে গেল। প্রাপ্তির রেখা ফুটিয়ে কোল বালিশ টা কোলে টেনে নিলো। মাথা এলাতেই ফারহানের ঝাঁঝানো কন্ঠ
_ ঘুমানোর জন্য আমি বাইরে গিয়েছি ?

_ না মানে

_ চুপ। কফি আছে , কফি খেয়ে নে ঘুম কেঁটে যাবে।

_ লাস্ট এক্সাম ই তো। একট ঘুমাই না প্লিজ ?

_ থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো স্টুপিট। পড়া শোনার প্রতি আলসেমি আর গেল না। একটা বছর যে ড্রপ গেল সেই দিকে কোনো খেয়াল আছে ?

ফারাবি ঠোঁট উল্টে নিলো। ফারহানের হাত থেকে ছো মেরে কফি কাপ টা নিয়ে চুমুক দিলো।
প্রশান্তি তে শরীর শিরশির করে উঠলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফারহান বলল
_ একটা বছর আমার জন্য পড়াশোনায় পিছিয়ে গেলি। এবার ভালো করতে হবে তো জান ?

_ লাস্ট এক্সাম তো।

_ আচ্ছা শোন , সাধারনত সবাই তো এক বিষয়েই ফেল করে তাই না ?
এক বিষয়ের জন্য ই রেজাল্ট খারাপ হয়। শেষ পরীক্ষা বলে হেলায় বেলায় ফেলে রাখবি সেটা তো হবে না।
খুব ভালো করে পড়তে হবে।

ভদ্র মেয়ের মতো ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারাবি বলল
_ একটা শর্ত আছে।

_ কিই ?

_ আমাকে বুকে নিয়ে ঘুমাবেন আজ প্লিজ ।

ফারহান থম মেরে গেল। কয়েক মিনিট পর ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে সম্মতি জানালো। সম্মতি দেখে ফারাবির মুখে খুশি এসে ঝলকানি দিলো।
বিশ দিন ধরে বোর্ড এক্সাম হচ্ছে। আর তাই ফারহান ফারাবির থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। এমন কি ফারাবি কে একটু জড়িয়ে ওহ ধরে না।
কারন এতে মেয়েটার পড়াশোনা গোল্লায় যাবে। ফারাবির মনোযোগ দেখে ফারহান হাসলো।
ভালোবাসার কি ক্ষমতা।

প্রায় দু ঘন্টা পড়ে ফারাবি দম নিলো। আর পড়া সম্ভব নয়। ফারহান ফাইল হাতে কাজ করছিলো । রাত দুটো বাজে। মেয়েটাকে আর জাগানো ঠিক হবে না। লেপটপ টা অফ করে ফারাবির বাহু টেনে কাছে নিয়ে নিলো।
ক্লান্ত শরীরে ফারাবি নেতিয়ে গেল। ফারহান তার বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মেয়েটার চোখের নিচে একটু ঘষে দিলো।
বিশ দিন যাবত প্রচন্ড চাপ গেছে মেয়েটার উপর।
মুখ টা একদম শুকিয়ে গেছে । ফারাবির মাথায় হাত রেখে আলতো হাতে কয়েক টা চুল টেনে নিলো।
মাথা ব্যথার সময় হালকা চুল টেনে দিলে ফারাবির বেশ আরাম লাগে।
এক গাল হেসে ফারহানের বুকে মুখ লুকালো।
ফারহান নিঃশব্দে ফারাবির মাথায় ঠোঁট ছোয়ালো।
_ থ্যাংকস ।

_ কেন ?

_ এই যে মাথা ব্যথা করছিলো। আর আপনি তা বুঝে গেলেন।

ফারহান মৃদু হাসলো। আকাশে চাঁদ টা ঝলমল করছে। সুন্দর এক আবহাওয়া ও রয়েছে।
ব্যলকনিতে লাল নীল আলো গুলো মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন।
নিষ্পলক ভাবে সে দিকে চেয়ে রইলো ফারহান। বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু অভাব অনুভব হলো।
বিরক্তি নিয়ে ফারাবির দিকে তাকালো। মুহুর্তেই মনে শীতল তরল নেমে গেল। সর্বাঙ্গে শির শির অনুভূতি হতো। মেয়েটার গালে ঠান্ডা হাত টা ছুঁইয়ে দিলো।
ফারাবি আরেকটু জড়োসড়ো হয়ে ফারহানের বুকে মুখ লুকালো।
ফারাবির গরম নিশ্বাস ফারহানের মতিষ্ক কে এলোমেলো করে দিলো।
ফারাবিকে কাছে টেনে নিয়ে আবার দূরে সরিয়ে দিলো।
মেয়েটার রেস্ট এর প্রয়োজন। ফারাবি চোখ বন্ধ করে ফারহানের হৃদস্পন্দন গুনে চলেছে।
ধিম ধিম আওয়াজে সুর তুলেছে। কি সুন্দর এক অনুভূতি। হৃদস্পন্দন গুলো মানুষের অন্তরের টনক নাড়িয়ে দেয়।
ফারাবি মাথা উঁচু করে তাকালো। ফারহানের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দিলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মেয়েটা মুখ চেপে হাসলো।
_ বাজে লাগছে দেখতে ?

_ উহুহহ এভাবেই সুন্দর লাগে। তবে একটু ব্যথা পাওয়া যায়। একদম আমার গালের সাথে গাল ছোঁয়াবেন না।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো । ফারাবি চেপে রাখা হাসি টা দমিয়ে রাখতে পারলো না।
ফিক করে হেসে দিলো। ফারহান ও মৃদু হাসলো। মেয়েটাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল
_ রেস্ট নে।

_ চাঁদ দেখবো।

_ এখন ? কাল দেখি ?

_ উহহুহ আজ ই দেখবো।

_ তাহলে তো ঘুম হবে না।

_ কেন হবে না ? আমি আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো আর আপনি বসে থাকবেন।এটাই আপনার শাস্তি ।

_ শাস্তি ?

_ হুহহহ। এই যে এতোক্ষন আপনি মাস্টার এর মতো পড়িয়েছেন আমায়। তখন তো রিতি মতো আমি আপনার স্টুডেন্ট ছিলাম।
কিন্তু এখন তো বউ। আর এইবার বউ আপনাকে কঠোর শাস্তি দিবে।
আপনি মানবেন না ?

ফারহান কিছু বললো না। ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ আপনার জন্য সব সময় আমি প্রস্তুত ।

ফারাবির বুক কেঁপে উঠলো। ফারহান মেয়েটাকে কোলে করে নিয়ে ব্যলকনিতে চলে আসলো। ফারাবির কথা মতোই পা মেলে বসলো।
আর ফারাবি ওর বুকে মাথা রেখে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
চাঁদের দু একটা কলঙ্ক আছে বই কি। তবে চাঁদ সুন্দর।
ঠিক তেমনি প্রিয় মানুষের দু একটা ভুল আছে তবে মানুষ টা ও সুন্দর।

*

আজ শেষ পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েই ফারাবি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। যাক এবার তাহলে একটু শান্তি পাওয়া গেল।
অতিরিক্ত খুশি তে মানুষ চোখে সর্ষে ফুল দেখে এটাই তো জানতো ওহ।
এখানে এতো গোলাপ ফুল কেন ? তাও কালো গোলাপের ছড়াছড়ি। ফারাবি চোখ টা ঢলে নিয়ে তাকালো।
না ঠিক ই তো আছে কালো গোলাপ। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই থম মেরে আছে।
ফারাবি এক পা দু পা করে আগালো। ফারহান কোথায় ?
আশে পাশে চোখ বুলিয়ে ও ফারহান কে পেলো না।
বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো। হাতে থাকা ফাইল টা কখন পরে গেল ফারাবির খেয়াল ই নেই । উম্মাদের মতো ছুটতে লাগলো।

পাগল প্রায় অবস্থা মেয়েটার। রোডের শেষ প্রান্তে সাদা শুভ্র জ্যাকেটে ফারহানের অবয়ব দেখতে পেল।
এক সেকেন্ড দম নিয়ে সে দিকে ছুটে গেল। ফারহান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
প্রশান্তি তে ছেয়ে গেল সর্বাঙ্গ। ফারহান মৃদু হাসলো। এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো।
পুরো কলেজের অধ্যক্ষ সহ স্টুডেন্ট রা হাত তালি বাজাতে লাগলো।
সবাই ফোন হাতে ভিডিও করছে। ফারহান সে দিকে তাকালো না। কলেজের সামনে পুরো রোড জুড়ে কালো গোলাপ দিয়ে সাজানো।
ফারহানের হাতের লাল গোলাপ গুলো যেন ঝলঝল করছে। ফারাবি অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো।
ফুলের গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে ফারহান বলল
_ উইল ইউ বি দ্যা মাদার অফ মাই চাইল্ড ?

ফুলের গুচ্ছ নিয়ে ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো।এতো শত মানুষের মাঝে কি প্রশ্ন করছে ছেলেটা?
ফারহান উঠে দাঁড়ালো। ফারাবি কে জড়িয়ে ধরে ফিস ফিস করে বলল
_ এই দিন টা শুধু আমাদের হয়ে যাক। রেডি থাকুন মিসেস ফারহান চৌধুরী। আমাদের পিন্সেস আসবে।

_ উহুহহ পিন্স আসবে।

ফারহান মৃদু হাসলো। ফারাবি কে চোখ মেরে বলল
_ পিন্স আর পিন্সেস দুটো ই লাগবে।

ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফারহানের দুষ্টু চাহনি দেখে লজ্জা পেল। ফারহানের বুকে দুটো কিল বসিয়ে দিলো। সবাই কে উপেক্ষা করেই ফারহানের বুকে মুখ লুকালো।
এই বুকেই সমস্ত শান্তি , সমস্ত সুখ আর ভালোবাসা।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here