#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,35,36
#ফাতেমা_তুজ
#part_35
একটা দোতলা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো ফারহান।
ঝকঝকে সাদা রঙের বাড়িটা নানা রঙের আলো তে সজ্জিত।
উচ্চ শব্দে গান ও বেজে চলেছে। বাড়ির মেইন ফটক টা তে আর্টিফিশিয়াল ফুলের বাহার। দেখে মনে হচ্ছে স্বচ্ছ কোনো ফুলের বাগান। ফারাবি চমৎকার হাসলো , কেন জানি অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে । ফারহান তার উষ্ণ হাত টা ফারাবির হাতে রাখলো।
ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহান গলায় রসিকতা এনে বলল
_ আমাদের ও বিয়ে হবে।
ফারহানের কথা তে ফারাবি ভ্রু কুঁচকালো। ফারহান নিঃশব্দে হেসে বলল
_ আমরা আবার বিয়ে করবো। পুরো দুনিয়ার সামনে আবার কবুল বলবো।
ফারাবি চমকালো , সাথে মিষ্টি হাসলো।
বাসার মেইন ফটকে যাওয়ার সাথে সাথে এক দল হায়নার মতো দুটো মেয়ে ওদের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
ফারহান ফারাবি কে আড়াল করে বলল
_ আরে ধীরে , পিচ্ছি বউ আমার ব্যাথা পাবে।
পুষ্পি মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ ঢং করিস না তো। কলেজে তো বিয়ের নাম নিলেই রেগে যেতি।
এখন বউ পাগলা হয়ে গেছিস।
পুষ্পি কে থামিয়ে দিয়ে রিতা বলল
_ থাম তো তুই। এই বাদরের কথা ছাড় আগে এই পিচ্ছি কে দেখতে দে।
এই টুকু বলেই রিতা ফারাবির কাছে চলে আসলো। ফারাবি সামান্য ভরকে গেল। ফারহান চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। ফারাবি বুঝলো এরা ফারহানের বান্ধবী । রিতা দারুন হেসে বলল
_ একদম রাজকুমারীর মতো দেখতে তুমি। ফারহানের চয়েজ বরাবর ই অসাধারন। তবে মনে হয়েছিলো ওর কপালে বউ জুটবে ই না।
এখন দেখি সবার আগে ওনিই কাজ সেড়ে নিয়েছেন।
রিতার কথা তে ফারাবি লজ্জা হাসলো। পুষ্পি এসে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি মুচকি হাসলো।
_ তুমি জানো না এর আগে ফারহান আমাদের কখনো তোমার কথা বলে নি।
আমরা ওকে যত গুলো মেয়ে দেখিয়েছি ওহ বলেছে পছন্দ নয়।
ইনফেক্ট মেয়েদের কথা তে সব সময় গম্ভীর থাকতো।
কোনো মেয়ের দিকে ফিরে ও তাকাতো না। কলেজের সেরা সুন্দরী কেও রিজেক্ট করেছে।
বেচারি রাগে কষ্টে কলেজ ই বদলে ফেলেছে।
এই টুকু বলেই সবাই হাসতে লাগলো। ফারাবি মাথা নিচু করে রইলো। ওর কেমন লজ্জা লাগছে। ফারহান চোখ রাঙাতেই পুষ্পী থেমে গেল।
ফারহান এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির ইচ্ছে হচ্ছে ফারহানের মাথা টা ফাটিয়ে দিতে। এতো মানুষের সামনে জড়িয়ে ধরার কি প্রয়োজন ?
ফারাবি লজ্জা তে কিছু বলতে ও পারছে না। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ তোদের বক বক শেষ হলে প্লিজ এবার যেতে দে।
রিতা কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ ট্রিটের টাকা না দিলে নো এন্ট্রি।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে নিয়ে পকেটে হাত দিলো।
টাকা বের করে দিয়ে বলল
_ তোরা শুধরোবি না। বিয়ে করেছিস দুদিন পর বাচ্চার মা হয়ে যাবি তা ও শুধরোলি না।
রিতা নাক কুঁচকে বলল
_ একদম বাজে কথা না। টাকার জন্য বয়স দেখতে হয় না।
_ আচ্ছা ছাড় তো এবার বল তোদের অন্য সঙ্গিনী কোথায় ?
_ রিদির কথা আর কি বলবো বেচারি বাচ্চা কোলে হয়রান।
বলেছিলাম আর কিছু দিন ওয়েট কর না। ওনি সেই বেবি নিয়েই নিলেন।
ফারহান ভেঙ্চি মেরে বলল
_ তদের মতো না ওহহ। তোরা তো শুধু নিজে কে নিয়ে ব্যস্ত।
ফারাবির হাত ধরে ভেতরে যেতে লাগলো। পেছন থেকে রিতা গলা উঁচিয়ে বলল
_ তিন বছর হয়েছে বিয়ে করেছিস। এখনো তো বাচ্চার বাপ হলি না।
_ আমার বউ পিচ্ছি। সময় হলে দেখবি ক্রিকেট টিম নিয়ে হাজির হবো।
ফারাবি বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো। ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ আচ্ছা বেশি না ছয় টা বেবি নিবো।
ফারাবির চোখ গুলো রসগোল্লা হয়ে গেল। ফারহান এক ফালি হেসে ফারাবির কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে দিলো।
*
জামান মহা খুশি হয়ে স্টেজে বসে আছে। হলুদের অনুষ্ঠান টা যার যার বাসাতেই হচ্ছে। অর্থাৎ হলুদ দেওয়ার জন্য কেউ কনের বাড়িতে যাচ্ছে না।
আর না কনে পক্ষ বরের বাড়িতে আসছে।
শুধু কয়েক জন গিয়ে হলুদের তত্ত্ব দিয়ে এসেছে।
ফারাবি কে নিয়ে একটা বেঞ্চে বসে আসে ফারহান।
হলুদের শাড়িতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে ওর। ফারহান ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ চেঞ্জ করে নিবি তাহলে ?
_ উহুহহ কিছু ক্ষণের ই তো ব্যাপার।
ফারহান লম্বা করে দম ফেললো।ফারাবির কেমন যেন লাগছে সব। বাড়ির লোকের জন্য মন খারাপ লাগছে।
ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ সব ঠিক করে দিবো জান। আর একটু কাজ বাকি আছে।
ফারাবি মলিন হাসলো। ফারহান ফোনে কারো সাথে কথা বলে নিলো ।
কথা বলার সময় খানিকটা রাগ দেখাচ্ছিল।
ফারাবি মুখ টা ছোট করে বলল
_ কি হয়েছে ? কোনো সমস্যা?
_ উহহু তেমন কিছু নয় । তবে রিকের বাচ্চা টা বড্ড বেড়েছে। ওর বাবা মা কে দিয়ে কাকির কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছে।
যাতে তোকে ফিরিয়ে এনে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।
ফারাবির বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো। অজানা ভয়ের আশঙ্কায় ভেতর টা দুমরে মুচরে যাচ্ছে। ফারহান বিষয় টা খেয়াল করলো।
ফারাবি কে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
ফারাবির শ্বাস বেড়ে গেছে। ফারহান লম্বা করে দম নিলো। মেয়েটা অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়।
_ এতো ভয় পাচ্ছিস কেন জান ? আমি থাকতে কেউ তোকে নিতে পারবে না।
তাছাড়া কাকি বারন করে দিয়েছে তো।
রেগে আছে ঠিক ই কিন্তু এটা ও তো বুঝে তার মেয়েটা বিবাহিত।
ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহানের গরম নিশ্বাস ফারাবির মুখে আঁচড়ে পরছে।
কাঁপা কাঁপা স্বরে ফারাবি বলল
_ আম্মু অনেক রেগে আছে। না হলে আমাকে ঐ ভাবে
_ কাকির রাগ টা ঠিক না জান। ভুল টা আমি করেছি কিন্তু সব রেশ এসে
ফারহান কে আটকে দিলো ফারাবি। ফারহান স্পষ্ট অনুভব করলো ফারাবির চোখ পানিতে ভরে গেছে। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ফারাবি চোখের পানি আটকে নিলো।
_ আপনি এমন কেন বলছেন ? কতো বার বলব আমি সে সবের জন্য আপনাকে দোষী ভাবি না।
আমি সেটার জন্য নিজেকে লাকি মনে করি।
আজ যদি আপনি আমার সাথে জোড় না করতেন। তাহলে আজ আমি আপনাকে পেতাম না।
আম্মু আমাকে না বলেই কথা দিয়েছিলো। আর পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আমি কিছু বলতে পারি নি।
আমি এমন এক পরিস্থিতি তে ই ছিলাম।
আর কেউ আমাকে আলাদা করে বিয়ের কথা ও বলে নি।
আমি সেদিন ই কেন মানা করলাম না। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে এখন। আপনি নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছেন।
এক নিশ্বাসে সমস্ত কথা বলে ফেলল ফারাবি।
ফারহান স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান নীরবতা ভেঙে বলল
_ একটা কথা বলবো জান ?
ফারাবি তাকালো। ফারহানের চোখে দুষ্টুমি। ফারাবি খানিক টা বিস্ময় নিয়ে তাকালো ।
ফারাবির গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফারহান বলল
_ আমাদের ভালোবাসার একটা বিশেষ পূর্নতা দিবি আজ।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে , তোকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে।
ফারাবি চমকালো। ভারী হয়ে গেছে ওর নিশ্বাস। ফারহান অনুনয়ের দৃষ্টি তে অপেক্ষা করলো। ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো । শাড়ি খামচে ধরে লম্বা শ্বাস নিলো।
ফারহান ছোট্ট করে উচ্চারন করলো
_ জান দিবি আজ সেই সুযোগ?
ফারাবির ভেতরে ভালোবাসার তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। মাথা কাত করে ফারাবি সম্মতি জানালো।
ফারহান মোহনীয় হাসলো। কিছু বলবে তখনি রানার ডাক।
ফারাবি কে নিয়ে স্টেজের কাছে চলে আসলো।
*
এক বছরের ফুটফুটে এক বাচ্চা মেয়ে কে কোলে নিয়ে ফারহানের দিকে এগিয়ে আসছে এক রমনী।
পরেনে হলুদের শাড়ি মুখে হালকা সাঁজ।
ফারাবি ফুটফুটে পিচ্চি কে দেখে যাচ্ছে।
ফারহান রানার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। একটু আগেই জামানের হলুদ শেষ হয়েছে।
( কাদের বাচ্চা ভাবছিলেন ? উত্তর টা দিয়ে যাবেন ? )
রিদি এগিয়ে এসে লম্বা হাসলো। ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল
_ বাহহ তুমি তো ভারী মিষ্টি মেয়ে।
ফারাবি লজ্জা হাসলো। ফারহান প্রশস্ত হেসে ভাবলো ওর প্রেয়সী যে। সেরা তো হতেই হবে।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে রিদি মলিন হাসলো।
_ কেমন আছিস ফারহান ?
_ ভালো তুই ?
_ আমি ও ভালো আছি।
_ এটা তোর ছেলে ?
_ হ্যাঁ ।
_ বাহহ খুব মিষ্টি দেখতে তো।
রিদি ঝরা হাসলো। ফারহান রিদির সাথে ফারাবির পরিচয় করে দিলো।
রিদির পুঁচকে ছেলে রাতিবের সাথে ফারাবির ভাব হয়ে গেছে।
ছেলেটা ফারাবির দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসছে।
ফারাবি রিদির কোল থেকে রাতিব কে কোলে তোলে নিলো।
রাতিবের দিকে গাল এগিয়ে দিতেই রাতিব ঠোঁট ছোয়ালো।
ফারাবি উজ্জল হাসলো। রাতিব একটু দূরে থাকা আর্টিফিশিয়াল ফুলের দিকে হাত বাড়াচ্ছে ফারাবি রাতিব কে সে দিকে নিয়ে গেল।
ফারহান অধরে হাসি রেখে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।
ধ্যান ভাঙ্গলো রিদির ডাকে। ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ কিছু বলছিলি ?
রিদি ছলছলে চোখে মলিন হাসলো। লম্বা করে দম নিলো।
_ খুব ভালোবাসিস ওকে ?
_ অনেক বেশি।
_ এর জন্য ই আমাকে মেনে নিস নি ?
ফারহান ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ তুই আমার বন্ধু রিদি। আমি তোকে বন্ধুর মতোই ভেবে এসেছি।
আমার জীবনে ফারাবি আসার অনেক আগেই প্রপোজ করেছিস তুই।
কিন্তু আমি তোকে সেই নজরে দেখি নি কোনোদিন । আর ফারাবি আমার জীবনে আসার পর তো কল্পনা ও করতে পারি না।
শুধু তুই না, আমি কাউকেই কল্পনা করতে পারবো না।
আমি স্বপ্নে এঁকে ছিলাম আমার প্রেয়সী কে। কিন্তু মুখ টা সবসময় ই আবছা ছিলো।
কোনো এক রঙের ছোঁয়াতে আমি দেখেছিলাম আমার প্রেয়সীর মুখ। শরীরের প্রতি টা নিউরন জেগে গিয়েছিলো। আমার স্বপ্নের প্রেয়সীর মুখ টা স্পষ্ট হলো।
ওহ ই যে আমার প্রেয়সী , আমার আত্মা , আমার জান , আমার পিচ্ছি বউ।
রিদির চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো । ফারহান ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলল
_ আমি জানি রিদি তুই আমাকে অনেক ভালোবেসেছিলি ইনফেক্ট এখনো কিছু টা ফিলিংস আছে ।
তবে এ ও জানি তোর অস্তিত্বের নব্বই শতাংশ তোর হাসবেন্ড এর জন্য ।
তুই তাকে খুব ভালোবাসিস ।
রিদি চোখের পানি মুছে নিয়ে লম্বা করে হাসলো । ফারহান ও ঝরা হাসলো।
ফারহানের প্রতি টা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আসলে প্রথম ভালোবাসার প্রতি মায়া কখনো ই কাঁটে না।
একটু হলে ও থেকে যায়। রিদি ও পারে নি তার প্রথম ফিলিংস কে পুরোপুরি মুছে দিতে।
ফারহান পকেট থেকে দুটো চকলেট বের করে নিলো ।
একটা রিদির দিকে বাড়িয়ে বলল
_ তোর প্রিয় কিটক্যাট।
রিদি এক গাল হেসে চকলেট টা নিলো।
ফারহান মুচকি হেসে ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল।
ফারাবি রাতিবের সাথে খেলছে। রাতিবের গালে চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো ফারহান।
রাতিব আদুরে গলা তে ঠোঁট ভেটকালো। ফারাবি তাড়াতাড়ি কোলে তোলে নিতেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো রাতিব।
ফারহান আর ফারাবি ঝরা হাসলো। রিদি এসে ওদের বিদায় জানিয়ে রাতিব কে নিয়ে চলে আসলো।
ফারাবি খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে।
ফারহান মুচকি হেসে বলল
_ এই রকম একটা পিচ্ছি বাবু চাই ?
ফারাবি লাজুক হাসলো। ফারহান ফারাবি কে কাছে টেনে নিয়ে বলল
_ আগে আমার এই পিচ্ছি টা বড় হোক। তারপর আরেকটা পিচ্ছি আনার ব্যবস্থা করবো।
ফারাবি লজ্জাতে ফারহানের বুকে মাথা রাখলো। ফারহান কিটক্যাট টা বের করে ফারাবির দিকে দিলো।
ফারাবির চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। ফারহান অনুনয় করে বলল
_ স্পেশাল শেয়ারিং প্লিজ।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকালো। ফারহান কিটক্যাট টা খুলে ফারাবি কে ইশারায় বাইট দিতে বলল।
ফারাবি বাইট দিলো, ফারহান মিষ্টি এক হাঁসি ফুটিয়ে ফারাবির ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা চকলেট টা ঠোঁট দিয়ে তুলে নিলো।
ফারাবির রন্ধে রন্ধে শিহরন জেগে গেল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফারহান বলল
_ আজ তুই শুধু আমার হবি জান , পুরোপুরি পরিপূর্ন ভাবে আমার।
আমার ভালোবাসার আরেক ধাপে নিয়ে যাবো তোকে।
ফারাবি চোখ বন্ধ করে নিলো। ফারহান মোহনীয় হাসলো।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_36
নিস্তব্ধ পরিবেশ। আকাশের চাঁদ টা কে ও দেখা যাচ্ছে না। বোধহয় মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। কারন আজ ওদের ভালোবাসায় চাঁদ টা ও ভীষন ভাবে লজ্জা পেয়েছে। ফারহানের বুকে লেপ্টে শুইয়ে আছে ফারাবি। মৃদু বাতাসে চুল গুলো সব ফারহানের মুখে এসে পরেছে। ফারহান তাতে বিন্দু মাত্র বিরক্ত হচ্ছে হচ্ছে না। বরং ফারাবির চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতে ব্যস্ত সে।
আজ প্রেয়সীর ভালোবাসার স্বাদ নিয়েছে। ফারহানের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি। ফারাবি ফারহানের হৃদস্পন্দন গুনতে ব্যস্ত। ফারহানের দিকে তাকাতে পারছে না ওহ। ফারহানের কথা মনে পরতেই লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে যাচ্ছে।
ফারহান তার ঠান্ডা হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবির সর্বাঙ্গে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল।
অথচ একটু আগে ও ওরা এর থেকে বেশি কাছাকাছি ছিলো। বোধহয় প্রিয় মানুষের প্রতি টা স্পর্শ ই নতুন রঙ দিয়ে যায়।
ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিলো। ফারহান ছন্দ তুলে কোনো এক গানের লাইন আওড়ালো।
ফারাবির বুকের ভেতর ধীম ধীম করছে। ফারহান নীরবতার সুতো কেঁটে বলল
_ আমাকে এমন ভালোবাসা তে রাঙানোর জন্য আমি তোর প্রতি কৃতঙ্গ জান।
ফারাবি চমকালো সাথে লজ্জা তে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।
ফারহান তার শক্ত পোক্ত হাত দুটি দিয়ে ফারাবির মুখ তুলে নিলো।
ফারাবির শ্বাস শত গুন বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি দম টা বন্ধ হয়ে যাবে। ফারহানের চোখে নেশা লেগে আছে। প্রেয়সীর শরীরের ঘ্রানে মক্ত সে। ফারাবির লজ্জায় লাল টুকটুক হয়ে যাওয়া গাল দুটি তে সময় নিয়ে অধর ছোয়ালো ফারহান।
ফারাবির অবাধ্য হাত দুটো ফারহানের উন্মুখ পিঠ খামচে ধরলো।
এতো টাই জোড়ে ধরেছে যে ফারাবির নখের দাগ ফারহানের পিঠে বসে গেছে।
তাতে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ফারহানের।বরং দারুন এক সুখ লেগে গেছে হৃদয়ে। ফারাবি কে লজ্জায় লাল হতে দেখে ফারহান হাসলো।
নিঃশব্দে হাসি টা শেষ করে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে নিলো।
ফারহান তার সরু নাক ফারাবির কানের একটু নিচে ঘষতে লাগলো।
ফারাবির বুক ধুকপুকানি বেড়ে গেল। সে শব্দ ফারহান স্পষ্ট অনুভব করলো।
বিগলিত হেসে বলল
_ এই টুকু তে নিশ্বাস বন্ধ করে নিচ্ছিস। অথচ একটু আগে কতো টা
ফারহানের লাগামহীন মুখে হাত দিয়ে আটকে দিলো ফারাবি । ফারহান মোহনীয় হাসলো।
ফারাবি কে আরেকটু কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো ফারাবি।
ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আমার ভালোবাসার গভীরতা অনেক জান। কিন্তু আমি তোকে একটু ও কষ্ট দেই নি। জেনে শুনে একটা আঁচড় ওহ কাঁটি নি।
পরম যত্নে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।
ফারাবি চোখ বন্ধ করে বলল
_ কিন্তু আমি তো
ফারাবি কে আটকে দিলো ফারহান। ফারাবির ঠোঁটে আঙুল স্লাইড করতে করতে বলল
_ উহহু একদম না। তোর ভালোবাসার কাছে এই ছোট ছোট নখের আঁচড় তুচ্ছ জান।
ফারহান একটু থেমে বলল
_ একটা কথা দিবি জান ?
_ হুমম
_ সারাজীবন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবি ?
তুই আমার বুকে থাকলে আমি একটু শান্তি তে ঘুমাতে পারবো।
একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই জান।
ফারাবির চোখ ছলছল করে উঠলো। ফারহানের অনুনয়ের স্বর ফারাবির বুকে ঝড় তুলে দিয়েছে।
ফারাবির ছলছল চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে। দু হাতে আবদ্ধ করে নিলো ফারহান তার প্রেয়সী কে।
ফারাবি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আমি আপনার ভালোবাসার স্বাদ নিতে সারাজীবন আপনার বুকে মাথা রাখতে চাই।
পৃথিবীর সমস্ত সুখের সেরা সুখ দেওয়ার জন্য আমি ও আপনার কাছে কৃতঙ্গ।
কথা দিন জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি এভাবে আগলে রাখবেন আমায়।
কখনো ছেড়ে যাবেন না। আমি আপনার ভালোবাসার স্বাদ নিতে চাই ফারহান।
প্রতি মুহুর্ত আমি আপনাতে হারাতে চাই।
ফারহান অধর কোনে মৃদু হাসি ফুটিয়ে নিলো। ফারাবির কপালে ভালোবাসার পরস দিয়ে বলল
_ কথা দিলাম আমি কখনো ছাড়বো না তোকে।
ফারাবি ঝরা হাসলো। ফারহান তার প্রেয়সী কে বুকে টেনে নিয়ে নিদ্রার দেশে পারি জমালো।
পূর্নতা পেয়েছে ওদের ভালোবাসার সম্পর্ক। যে সম্পর্ক স্বয়ং আল্লাহ তায়লা হালাল করে দিয়েছেন।
তাই বোধহয় চাঁদ টা ও লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে আছে।
ওদের ভালোবাসা দেখার মতো শক্তি চাঁদ টার যে নেই।
দুটো হৃদয় শুধু দুজনার। কেউ এতে ভাগ বসাতে পারবে না।
স্বয়ং আল্লাহ তায়লা এই সম্পর্ক বেঁধে দিয়েছেন।
*
ফারাবি ট্রাওয়াল দিয়ে চুল মুছে যাচ্ছে। ফারহান তাড়া দিচ্ছে বার বার।
জামান কয়েক বার ফোন করেছে ওদের।
সকালে ঘুম থেকে দেরি তে উঠার জন্য জামানের বাসায় যেতে ও লেট হচ্ছে। বরযাত্রী যাবে যোহরের নামাজের পর। ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে ঝটকা মেরে ট্রাওয়াল টা নিয়ে নিলো।
ফারাবির ভ্রু যুগল বেঁকে গেল।
_ কি করছেন টা কি ? তাড়াতাড়ি দিন , পরে দেরি হওয়ার জন্য আমাকেই বকা দিবেন ?
ফারহান নিরুত্তর মুখে ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছে। ফারাবি দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ আপনার মতলব তো দেখছি ভালো ঠেকছে না। তাড়াতাড়ি দিন আমি রেডি হবো ?
_ আমার মতলব ভালো না মানে? বউ কে আদর করলে সেটা কে খারাপ বলছিস তুই ?
_ আরে এখন দিন না ।
_ উহুহহ আমি মুছিয়ে দিচ্ছি। যেভাবে চুল মুছছিলি এক বছর হলে ও চুলের পানি ঝরবে না।
ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে নিলো। ফারহান অতি যত্নে চুল মুছিয়ে দিলো। এমন ভাবে চুলের পানি ঝরাচ্ছে মনে হচ্ছে চুল ব্যথা পাবে।
আজব
_ এভাবে চুল মুছে কেউ ?
_ এভাবেই মুছে। তুই নিজের প্রতি বড্ড অবহেলা করিস। চুল গুলো কে এমন ভাবে মোচড়ানো শুরু করেছিলি ,যে দু দিনেই টাক হয়ে যাবি।
_ কিছু ই হতো না। আপনি এই সব ঢং বন্ধ করুন।
আর তাড়াতাড়ি করুন।
_ হুমম করছি তো বাবা । একটু শান্ত হ এবার। আমি একটু ঢং তো তোর সাথেই করবো।
ফারহান মুখ টিপে হাসলো। তারপর মলিন মুখে বলল
_ আচ্ছা ফারহান ভাইয়া
_ হোয়াট
_ ইয়ে না মানে শুনুন একটু।
_ বল ।
_ কালকে হলুদে রিফাত ভাইয়া আসলো না কেন ?
ভাইয়া ও কি আমার উপর
_ উহুহহ রিফাতের সাথে আমার কথা হয়েছে। রিফাত কাল আসে নি কারন রিকের মা বাবা এসেছিলো।
_ ওহহ আজ আসবে তো ?
_ হুমমম সবাই আসবে। রিমি আর ভাইয়া ও আসছে। বড় রা কেউ আসবে না , বুঝিস তো।
ফারাবি মলিন হাসলো। ফারহান ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
_ মন খারাপ করে না জান। আমি খোঁজ লাগিয়েছি তো।
মেয়ে গুলো কে বাঁচাতে পারলেই আমরা প্রপার্লি শান্তি তে থাকবো।
সবার সঙ্গে থাকবো।
ফারাবি ছোট করে হাসলো। ফারহান কাবাড থেকে একটা প্যাকেট বের করে দিলো।
ফারাবি প্যাকেট টা খুলে দেখলো একটা কটন কাপড়ের বেবি পিংক কালারের শাড়ি লেহেঙ্গা ।
ফারহান লম্বা হেসে বলল
_ জর্জেট এ তোর অস্বস্তি হবে তাই এটা অর্ডার করে বানিয়েছি।
ফারাবি মুচকি হাসলো। ফারহান একটা শার্ট আর ব্লেজার বের করে পরে নিলো।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আপনি ম্যাচিং করে ড্রেস এনেছেন ?
_ ইয়াপ। কাপল রা সব সময় ম্যাচিং করেই পরে।
_ ইসস। কি আমার কাপল রে।
ফারহান ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল
_ কিছু বললি ?
_ নাহহ নাহহ । এমনি বলছিলাম আর কি তাড়াতাড়ি রেডি হোন।
ফারহান মুচকি হেসে ফারাবির গালে চুমু খেয়ে চলে গেল।
ফারাবি তাজ্জব বনে গেল। এই যখন তখন চুমু খাওয়া টা ফারাবি বুঝে উঠতে পারে না।
ফারহান দরজার কাছ থেকে উঁকি দিয়ে বলল
_ এই যে মিসেস আজ থেকে সকালে আর রাতে আপনি চুমু দিবেন।
আর বাকি সময় গুলো আমি।
ফারাবি কিছু বলবে তার আগেই ফারহান নিচে চলে গেল।ফারাবি থম মেরে থেকে হো হো করে হেসে উঠলো।
এটাই হলো প্রিয় মানুষ, তার একান্ত প্রিয় মানুষ ।
*
রিফাত আর মনিকা কে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে ফারাবি দৌড়ে গেল।
রিফাতের কাছে আসতেই ফারাবির চোখ ভরে উঠলো। রিফাত নাক কুচকে বলল
_ একদম না। একটু ও যেন চোখ থেকে পানি না পরে।
তাহলে ধুম করে মেরে দিবো।
রিফাতের কথাতে ফারাবি ঝরা হাসলো। রিফাত বোন কে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বলল
_ একদম মন খারাপ করবি না।
ছোট আম্মু আর আব্বু খুব তাড়াতাড়ি সব বুঝে যাবে ।
আর আঙ্কেল ও দেখবি ফারহান কে নিয়ে প্রাউড ফিল করবে।
ওরা সবাই একটু রেগে আছে শুধু।
ফারাবি মলিন হেসে বলল
_ সবাই কেমন আছে ?
_ ভালো। তবে তোকে ছাড়া কষ্টে আছে রে। কেউ ই তোকে দূরে সরাতে চায় না যে।
কিন্তু
_ কিন্তু ঐ হারামি রিকের জন্য সবার অতি দরদ হচ্ছে।
যখন সবাই জানবে ওর আসল মুখ টা তখন দেখতে পারবি কতো বড় জালিম ঐ হারামি।
রিফাত লম্বা হেসে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো। ফারহান রিফাতের পিঠ চাপরে বলল
_ দুদিন দেখি নি অথচ মনে হচ্ছে কতো জনম টর দেখা।
_ তুই বড্ড বেইমান রে ভাই। আমার বোন কে বিয়ে করলি আর আমাকেই জানালি না।
_ টপ সিক্রেট এটা। আপনি কি আপনার বোন কে জোর করে বিয়ে করতে দিতেন মিস্টার রিফাত?
রিফাত সরস হেসে বলল
_ উহহুহহ।তবে যদি জানতাম আমার বোন টা এভাবে তোর প্রেমে পাগল হয়ে যাবে তাহলে আমি ধরে বেঁধে নিয়ে বিয়ে দিতাম।
ফারাবি ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
_ ভাইয়া।
সবাই খিল খিল করে হাসলো। মনিকা এসে ফারাবি কে বুকে জড়িয়ে নিলো।
মনিকার সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে গেল ফারাবি।
ফারহান এক পলক তাকিয়ে বলল
_ জানি না কি হতে চলেছে। আমি তিনটে মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না।
_ চিন্তা করিস না ইয়ার। রিকের সব খবর তো আমরা পেয়েই যাচ্ছি।
কতো গুলো প্রুভ পেয়েছি যেগুলো দেখালেই ওর গেম ওভার।
কিন্তু ভিডিও গুলো ডিলিট করাতে হবে এই যাহ।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ হ্যাঁ । রায়হান কে ওর পিছে লাগিয়েছি। ওর সাথে রিকের একটা বন্ধুত্ব ও হয়ে গেছে।
তবে আমি চাইছিলাম এই বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই কিছু একটা করতে।
আমি রিক্স নিতে চাচ্ছি না। রিক পাগলা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছে।
কাল দুপুরে তো
রিফাত ভ্রু কুঁচকে নিলো। ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ কাল দুপুরে ট্রাক দিয়ে আমার কার এক্সিডেন করতে চেয়েছিলো।
ভাগ্যিস তখন ফারাবি ছিলো না। কোনো মতে বেঁচে গেছি।
_ এই ব্যাথা পাস নি তো ?
_ উহুহ ব্যথা পেলে তো ফারাবি বাসা থেকেই বের হতে দিতো না।
ওকে কিছু জানতেই দেই নি আমি।
রিফাত লম্বা করে দম নিয়ে বলল
_ যা করার ফাস্ট করতে হবে।
না হলে বড় কিছু ঘটে যাবে। ওকে জেলে বন্দি না করা অব্দি শান্তি মিলছে না।
ফারহান ও রিফাতের কথায় সায় জানালো। চাইলেই রিক কে মেরে ফেলতে পারে ওহ। কিন্তু মারবে না , কারন ওহ হাজার হলে ও ফারাবির পরিবারের একজন।
তবে কোনো ছাড় ও দিবে না , জেলের ভাত না খাওয়ানো অব্দি শান্তি নেই।
চলবে