স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,56,57

0
727

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,56,57
#ফাতেমা_তুজ
#part_56

ফারহানের ছবির দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে ফারাবি। বুকের ভেতর টা দহনে পুরে ঝলছে গেছে। এতো এতো কষ্ট কি করে সইবে ওহ ?
ওর কাছে ফারহান নেই আজ নয় মাস হতে চললো। জীবনের বিষাক্ততা ছেয়ে গেছে সর্বাঙ্গে। আচ্ছা এমন না হলে ও তো পারতো ?
ফারহান কেন তাঁর কাছে নেই ? এই এতো এতো ভালোবাসার পর কেন ছেড়ে চলে গেলো ? এই গুলো কি অভিনয় হতে পারে ?
বড্ড আপসোস হচ্ছে নিজের প্রতি। ফারহান যদি না তাঁর থেকে প্রতিশ্রুতি নিতো তাহলে কবেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতো। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়ে আজ দগ্ধে মরছে ওহ।

_ ফারাবি ।

রিমির ডাকে ঘুরে তাকালো মেয়েটা। চোখের অবস্থা নাজেহাল। অনড়গল কাঁদতে থাকলে যা হয় আর কি। চোখ দুটো কোটরে গেধে গেছে। শরীর শুকিয়ে কাঠ। চুলে ঝটলা পাকিয়েছে বেশ অনেক দিন। ঝটলা ছাড়ানোর ইচ্ছে হয় নি কখনো। চুলে শ্যাম্পু করা হয় নি বহু দিন হতে চললো। মুখের যত্ন নেওয়া হয় না মাসেক নয়। ফারাবি হাসার চেষ্টা করলো। তবে হাসি লুকিয়ে অসহায়ত্ব টাই ফুটে উঠলো। দীর্ঘশ্বাসে ছেয়ে গেল পুরো রুম। উঁচু পেট টায় হাত রেখে রিমি ধীর পায়ে এগিয়ে এলো।
_ একি হাল হয়েছে তোর ? একবার নিজের অবস্থা দেখেছিস ?

ফারাবি উত্তল দিলো না।

_ কিছু তো বল ?

_ তোর ভাই আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেল ? নয় নয় টা মাস কোনো খোঁজ নেই। আদৌ কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটা ও জানি না আমি।

_ ফারাবি

রিমির চিৎকারে ফারাবির কোনো হের ফের হলো না। তাচ্ছিল্যর স্বরে বলল
_ কেন সে আমাকে ফেলে চলে গেল ?

_ ভাইয়ার খোঁজ আমরা নিশ্চয়ই পাবো। তুই দেখিছ ভাইয়া কে খুব তাড়াতাড়ি আমরা ফিরে পাবো।

_ যে হারিয়ে যায় তাকে ফিরে পাওয়া যায় কিন্তু যে নিজ থেকে হারায় তাঁকে কি খুঁজে পাওয়া যায় ?

রিফাতের কন্ঠে পেছন ফিরে তাকালো রিমি। ফারাবির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। রিফাত মায়া ভরা নয়নে ফারাবির দিকে তাকিয়ে রইলো।

_ রিফাত ভাইয়া তুমি ভুল বুঝসো আমার ভাইয়া নিজ থেকে লুকায় নি। এর মাঝে নিশ্চয়ই কিছু আছে।

রিফাত কোনো জবাব দিলো না। ফারাবির পাশে এসে নিঃশব্দে বসলো। বোনের হাত টা মুঠো বন্দি করে বলল
_ বাসায় চল ফুপি এসেছে । পিচ্ছি দুটো বার বার তোকে দেখতে চাইছে ।

_ ওদের এখানে নিয়ে আসো।

_ না তুই বাসায় চল।

_ আমি যাবো না।

_ ফারাবি

রিফাতের ধমক গাঁয়ে মাখলো না। বেডে উল্টো করে রাখা ফ্রেম টা হাতে নিলো । আলতো হাতে ছুঁইয়ে দিলো ফারহানের হাস্য উজ্জল ছবি। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি। রিফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল । চোখ দুটো ছলছল করছে। আর কত আর কত কষ্ট পাবে মেয়েটা ?
বুক চিরে আর্তনাদ আসছে। হৃদয় হাহা কার বেদনা গুলো বলতে চাইছে কেন ফারহান কেন এমন টা করলি তুই।
কেন আমার বোন কে ছেড়ে চলে গেলি।

*

_ ফাহিম একটু শুনবে ?

_ আরে তুমি কেন নিচে এসেছো । এই অবস্থায় কেউ এতো দূর আসে ?

_ ফাহিম প্লিজ। আমি ঘরে বসে থাকতে থাকতে পঙ্গু হয়ে যাবো। তুমি এমন কেন করছো বলো তো ?

ফাহিম উত্তর দিলো না। রিমির হাত টা ধরে সোফায় বসালো । ছয় দিন ধরে রিমি কে নিয়ে রিমিদের বাসায় থাকছে। যদি ও ফাহিমের ইচ্ছে ছিলো না।
পা টা ধরতে যেতেই রিমি বাঁধা দিলো ।

_ উফ রিমি প্লিজ। দেখো আমি তোমার জন্য কিছু করছি না। আমার বেবি তোমার পেটের মধ্যে না থাকলে একদম ই যত্ন করতাম না তোমার । কিন্তু হায় আমার রাজ কুমারী টা তোমার পেটের মধ্যে ই লুকিয়ে আছে।

রিমি নিশব্দে হাসলো। ছেলেটা পুরো পাগল। এই নয় মাসে কি না করেছে।এতো এতো কেয়ার রিমি ভাবতেই পারছে না আর। বুকের ভেতর ঠান্ডা শিরশির বাতাস অনুভব হলো। ভাগ্যিস মানুষটা তাঁর জীবনে এসেছিলো।

_ এতো ভালোবাসো কেন ফাহিম ?

_ ভালোবাসার কোনো কারন হয় না রিমি।

_ আমি তো তোমাকে পুরোপুরি ভালোবাসা দিতে পারি নি ।

ফাহিম হাসলো। রিমির ফুলে যাওয়া পায়ে চুমু খেয়ে পাশে এসে বসলো। খানিকটা ঝুঁকে রিমির পেটের কাছে কান রেখে বলল
_ বেবি শুনতে পাচ্ছো তুমি ? তোমার মাম্মা নাকি আমাকে পুরোপুরি ভালোবাসতে পারে নি। আচ্ছা বলো এই কথার কোনো মানে হয় ?

_ আমি সিরিয়াস ফাহিম।

_ আমি ও সিরিয়াস । তুমি আমার ভালোবাসা । তোমার থেকে আমার একটু খানি ভালোবাসাই যথেষ্ট । এই যে তুমি আমাকে আমার বেবি কে গিফ্ট করছো এটা কম কিসের ?
আমি জানি তুমি তোমার অতীত কে এখনো কেয়ার করো।
বিশ্বাস করো আমি তাঁতে একটু ও ব্যথিত নই।

হুমরি খেয়ে ফাহিমের বুকে এসে পরলো রিমি। ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো ।কান্না জড়িত কন্ঠে বলল
_ এতো ভালোবেসো না প্লিজ। আমার খুব ভয় হয়। অতি ভালোবাসা কেন হারিয়ে যায় বলো তো ? আমি ফারাবির মতো শক্ত নই। আমি তোমাকে হারালে এক মুহূর্ত বাঁচতে পারবো না ফাহিম ।
ভাইয়া কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেল ?

রিমির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ফাহিম বলল
_ মন খারাপ করো না রিমি। আমি জানি না ফারহান ভাইয়া কেন চলে গেল এভাবে। এতো ভালোবাসার পর কেন ঐ চিঠি টাই জীবন কে শেষ করে দিলো।
এই ভালোবাসা গুলো সব মিথ্যে , আমি তা মানতে পারছি না রিমি।

রিমি উত্তর দিতে পারলো না। কিচেন থেকে রোমা চৌধুরীর কন্ঠ ভেসে আসলো। রিমি চোখ মুছে নিয়ে বলল
_ স্যুপ টা একটু এনে দাও না প্লিজ। ফারাবি সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে তুলে নি।

ফাহিম সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। ফারহানের বিষয় টা সবার মন কে বিষিয়ে দিয়েছে। এ বাজে অনুভূতি তে ও একটা সুখের খবর রিমির বেবি। সবাই যখন ভেঙে চুরে একাকার তখনি রিমির কনসিভ করার রিপোর্ট আসে।
সেই থেকে ফারহানের ব্যথা ভুলে সবাই নতুন অতিথির দিকে ঝুকেছে।
তবে কেউ ই ফারহানের কথা পুরোপুরি ভুলতে পারে নি। আর ফারাবি তো ফারহান কে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না।

নয় মাস আগে ফারহান একটা চিঠি রেখে গিয়েছিলো। যেটা সবাই কে একদম নুইয়ে দিয়েছিলো। কেউ বিশ্বাস করতে পারে নি। ফারাবি তো মাটি তে বসে হাউ মাউ করে কেঁদে ছিলো। আর তারপর থেকেই নিজেকে ফারহানের ঘরে রেখেছে বন্দির মতো। নয় নয় টি মাস চার দেয়ালের মাঝেই তাঁর বসবাস। এই নয় মাসে কখনো রুম থেকে বের হয় নি।
ফারহানের শার্ট , জিনিস পত্র সারাক্ষণ জড়িয়ে থাকে। আর রাত বাড়লে বেলকনিতে ছুটে চলে।
ওর বিশ্বাস ফারহান আসবে। আগের মতো পাঁচিল টপকে ব্যলকনি দিয়েই আসবে।
কিন্তু আসে নি । তবু ও ফারাবি হাল ছাড়ে নি ।

ভর সন্ধ্যা, এখনো ফারাবি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয় চাঁদ টাকে আজকাল দেখা হয় না।
দেখা হয় না চাঁদের আলো তে প্রিয় মানুষ টার সাথে সময় কাটানোর সেই দৃশ্য গুলো।
শুধু অন্ধকারে চেয়ে থাকে একজনের আশায়।

উড়নায় টান অনুভব করায় পেছন ফিরে তাকালো ফারাবি। ছোট ফুপির ছেলে টিনটিন কে দেখে একটু হাসলো । ছেলেটার বয়স বছর ছয়েক। তবে ফারাবি বলতেই অজ্ঞান। বড্ড সুন্দর পিচ্ছি টা। সুইট , কিউট সব রকম কমেন্টের জন্য একদম উপযুক্ত।

_ আপি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?

_ সোনা তুমি কখন এলে ?

_ এখনি।

_ আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার জন্য লজেন্স নিয়ে আসি।

টিনটিন মাথা ঝাঁকালো। ফারাবি নিশব্দে এসে কাবাড থেকে চকলেট বক্স টা খুললো । সর্বশেষ একটি মাত্র চকলেট ই বেঁচে আছে। ফারহানের দেওয়া লাস্ট গিফ্ট চকলেট এটা।
সেই সব স্মৃতি ভেবে ফারাবি আনমনেই হাসলো। মানুষ কাউকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ও চকলেট গিফ্ট করে তা জানা ছিলো না ওর।
বক্স টা রেখে চকলেট নিয়ে টিনটিন কে দিলো। টিনটিন ভারী খুশি। চকলেট মুখে দিতে গিয়ে ও দিলো না।
ফারাবি জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকালো। টিনটিন চকলেট টা সমান ভাগে ভাগ করে ফারাবির দিকে এগিয়ে দিলো।
ফারাবির দু চোখ ভরে উঠলো। ফারহান ও এমন টাই করতো।
টিনটিন কে বুকে জড়িয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। ছোট্ট ছেলেটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
ফারাবির কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো।
মাথায় হঠাৎ কারো স্পষ্ট পেয়ে ফারাবি পেছন ঘুরে তাকালো।
চোখ মুছে বলল
_ আম্মু তুমি এখানে ?

_ আর কতো কাঁদবি মা ? আমার কুলঙ্গার ছেলেটা তোকে এতো কষ্ট রেখে হারিয়ে গেল। জানি না কোন পাপ করেছিলাম। না হলে এমন কলঙ্ক

_ আম্মু ।

ছলছল নয়নের পানি টুকু আঁচল দিয়ে মুছলেন ওনি। ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_ এবার তো ওকে ভুলে যাহ ?

_ সম্ভব না আম্মু। আমি ওনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারবো না।

_ আর কতো দিন থাকবি এভাবে ?

ফারাবি ডুকরে কেঁদে উঠলো। রোমা চৌধুরীর পা জড়িয়ে বলল
_ আমাকে তাড়িয়ে দিও না আম্মু।
আমি শুধু ওনার ঘরটাতেই থাকতে চাই। না হলে আমি যে মরে যাবো। আমাকে তাড়িয়ে দিও না আম্মু।

আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদলেন ওনি। কি বলে সান্ত্বনা দিবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। ছেলেটা এমন কেন করলো ? নয় নয় টা মাস ধরে কোনো খোঁজ নেই। চিঠির কথা গুলো ও অস্পষ্ট।

চলবে

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_57

” আপনি ভুল করেছেন মিস্টার রহমান। নিজের স্বার্থের জন্য অন্য কে ব্যবহার করেছেন। তাঁর সুযোগ নিয়ে আপনি ঠিক করেন নি মিস্টার রহমান। বড্ড বেশি খেলে ফেলেছেন এবার তাঁর শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। ”

কাঁচের গ্লাসের ঝনঝন আওয়াজে দুটো লোক ছুটে আসলো। ফারহান সে দিকে তাকালো না। লোক দুটো কাঁপতে কাঁপতে বলল
_ স্যার আপনার হাত রক্তে মেখে গেছে।

_ লিভ মি এলোন।

লোক দুটো বিনা বাক্য প্রস্থান করলো। ফারহানের দু চোখে পানি চিক চিক করছে। নয় নয় টা মাস কেঁটে গেছে। নিজেকে লুকাতে কতোটা কষ্ট করতে হয়েছে ওকে।
মানুষ থেকে অমানুষ এ পরিনত হতে হয়েছে। অসহায়ত্ব ফুঁটিয়ে তুলেছে প্রতি টা পদে।
চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলো ফারহান। কাঁপা হাতে ফারাবির জন্য মিথ্যা চিঠি লিখেছিলো । সবার গেট টুগেদার ছিলো সেদিন। এক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয় তাকে। শর্ত দেওয়া হয় নির্দেশনা মতো চিঠি লিখতে।
চিঠি তে লিখতে হয়েছিলো

” আমি তোকে ভালোবাসি না ফারাবি। শুধু মাত্র তোর শরীরের প্রতি মোহ ছিলো আমার। ছোট থেকেই তোর বাড়ন্ত বয়স কে আমি অনুভব করেছি। তখন থেকেই লোভ জাগে তোর প্রতি। আর তার জন্য এতো নাটক করতে হয়। আমি তো তোকে পেয়েই গেছি। এখন আর তোকে প্রয়োজন নেই। আমি চলে যাচ্ছি । মনে হলো সত্যি টা জানানো দরকার তাই বলে দিলাম। কি করবি না করবি তোর ইচ্ছা ”

দু চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরে পরলো। বুকের ভেতর যন্ত্রনা হচ্ছে খুব। এই তিতা কথা গুলো বাধ্য হয়ে লিখেছে সে। নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসে তাঁর প্রেয়সীকে। আর তাই নিজেকে আড়াল করতে হয়েছে।
জীবনের কঠিন তম লড়াই এ আজ একা ওহ।
কাউকে পাশে রাখার সুযোগ হয় নি। মেয়েটার কথা ভাবতেই বুক চিড়ে হৃদপিন্ড বেরিয়ে আসতে চায়।

*

_ কেনো করলেন এমন ? আমি কি এটার ই যোগ্য ? কেন আমায় ভালোবাসলেন না ? আদৌ কি ভালোবেসেছেন কখনো ? সত্যি কি মোহ ছিলো সব ?

ফারহানের ছবিতে হাত বুলাতে বুলাতে নানান কথা বলছে ফারাবি। কষ্টের দুনিয়া টা লাঘব হচ্ছে না।
যত দিন যাচ্ছে যন্ত্রনা তো উল্লাসে বেড়ে যাচ্ছে। সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল টেস্ট পরীক্ষা হয়ে গেছে। ফারাবির ইচ্ছে হয় নি । পড়াশোনার প্রতি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা নেই। সব ভালোবাসা তো একজন ই শুষে নিয়েছে। তীরে এসে ডুবিয়ে দিয়েছে।
মাঝি ছাড়া কি নৌকা চলে ?
উহুহ চলে না। ঠিক তেমনি ফারাবির জীবন ও চলছে না।
ছেলেটার গাঁয়ের মিষ্টি গন্ধ এখনো শরীরে লেগে আছে। অথচ মানুষটাই নেই।

হঠাৎ ভয়ঙ্কর গর্জনে পরিবেশ ভারী হয়ে গেল। কোথা থেকে এক ফালি মেঘ এসে আকাশের রঙ বদলে দিলো। বছরের শেষ বৃষ্টি বোধহয়। বৃষ্টির সাথে ভালোবাসা জড়িয়ে আছে।
ফারহানের সাথে কতো দিন বৃষ্টিতে ভিজেছে।
অথচ আজ একা।
তবে ফারাবির ইচ্ছে হলো না গাঁয়ে বৃষ্টি মাখতে।
হেলানো তলের মতো শার্ট টার দিকে ঝুঁকে চেয়ে রইলো।
বাইরের ঝুম ঝুম বৃষ্টি গানের সুর তুলেছে। ইচ্ছে হলো চিৎকার করে আর্তনাদ করার। কিন্তু মরে যাওয়া মনের ভেতর থেকে কোনো আর্তনাদ আসলো না।
এক ফালি হেসে ফারহানের শার্ট বুকে জড়িয়ে নিলো।
প্রেম মাখা অনুভূতি গুলো আওড়াতে লাগলো। দেখে বোঝার উপায় নেই মেয়েটার বুক ফেঁটে যাচ্ছে।
বজ্র পাতের শব্দে ফারাবি নড়ে চড়ে বসলো। খানিকটা ভয় কাজ করছে। চারিদিক কেমন অন্ধকার হয়ে গেছে। এ মেঘ কি থামার নয় ?
কি ইঙ্গিত এই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির? সুখ নাকি দুখ ?

*

” ডেড আমার সাথে এমন কেন হলো ? কেন ওহ আমাকে ভালোবাসে না ? কেন তুমি পারছো না কিছু করতে ? এতো ভালোবাসার পর ও আমার দিকে ফিরে তাকালো না ? আর কতো সহ্য করবো আমি ? দশ বছর, দশ দশ টা বছর আমি অপেক্ষা করেছি। আমি আর পারছি না ডেড। প্লিজ কিছু করো । ”

ঝাঁপসা চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন মিস্টার হামিদ রহমান। ওনার আরেক নাম ফরিদ চৌধুরী। কোনো এক বিশেষ কারনে নামের পরিবর্তন করতে হয়েছিল।

_ অনু শান্ত হ মা। আমি প্রমিস করেছি তো ?

_ নো ডেড তুমি ব্যর্থ । দশ দশ টা বছর ধরে তুমি ব্যর্থ । পারো নি আমার ভালোবাসা কে এনে দিতে।
আট মাস হয়ে গেছে পারলে না খুঁজে দিতে ? কেন পারলে না তুমি ?
কোথায় গেল তোমার ক্ষমতা ? ঐ মেয়েটার বিরুদ্ধে এতো প্ল্যান , এতো প্রুফ কোথায় গেল ?

_ অনু

_ ডোন্ট কলড মি অনু। অনু মরে গেছে। ঐ মেয়েটার জন্য সব হয়েছে ওকে আমি মেরে ফেলবো। আমি আজ ই বিডি তে যাবো । এখনি যাবো। আমার ফারহান ওর কাছেই আছে।
ওহহ লুকিয়ে রেখেছে আমার ফারহান কে।

মেয়ের চেঁচামেচি তে ওনি অসহায় মুখ করে নিলেন। ফারহান বিডি তে নেই। আর না আছে ফারাবির কাছে।
এই সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন ওনি। কিন্তু মেয়েটাকে কিছুতেই বুঝাতে পারছেন না।
একটা নামেই আটকে আছে। ফারহান ফারহান আর ফারহান।

হাতে থাকা ওয়াইন এর গ্লাস টা মিররে ছুড়তেই মিরর ভেঙে গেল। অনু চিৎকার করে বলল
_ লিভ মি এলোন। আমার ফারহান কে না এনে দিতে পারলে আমার সামনে আসবে না তুমি।

মিস্টার রহমান চলে গেলেন। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।
ফারহান কে এখনো খুঁজে পেলেন না ওনি। অস্ট্রেলিয়া থেকে গেল কোথায় ? এতো সিকিউরিটির পর ও বাসা থেকে পালিয়ে গেল।
আট টা মাস চিড়ুনি তল্লাশি চালিয়ে ও লাভ হলো না।
ওনার দীর্ঘশ্বাসে পরিবেশ ভারী হয়ে গেল। ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে কল লাগালেন।

*

_ ইমিটিয়েট লি টাকা ট্রান্সফার করো। কোনো ভাবেই যেন অন্য কেউ না জানতে পারে। রিফাত কে ও বুঝতে দিলে হবে না। রায়হানের সাথে আমার কন্ট্রাক করিয়ে দাও।

_ ওকে স্যার। আমি দেখছি কি করা যায়।

ফারহান ফোন টা রেখে দিলো। এখন তাঁর অনেক টাকার প্রয়োজন। কোম্পানির কাজ টা স্থগিত হয়ে আছে। রিফাত ঠিক ঠাক সামলাতে পারছে না।
এভাবে চললে লস হয়ে যাবে। প্রজেক্ট টা ও মাঝা মাঝি হয়ে আছে। সব দিক সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত ফারহান। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে টাকা ছাড়া কেউ এক পা ও নড়ে না।
আট টা মাস লুকিয়ে আছে বিষাক্ত হায়নার থেকে এখন তো কিছু করতেই হবে।
ফারাবির দেখা মিলে নি মাস খানেক হলো। মাস খানেক আগে ভিডিও তে দেখেছিলো মেয়ে টা কে।
কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি ওহ। একজনের সাহায্যে ফারাবির দেখা মিলেছিলো।
মেয়েটার চোখ মুখ দেখেই ফারহানের বুক ভারী হয়ে গেছে। কি হাল ই না হয়েছে মেয়েটার। সেই সময় টাতে ওর মাথা ঠিক ছিলো না।
তাই চরম ভুল করে ফেলেছে। মেয়েটাকে এভাবে একলা ছাড়া উচিত হয় নি।
অবশ্য ওর কাছে কোনো স্কোপ ও ছিলো না।
হাল চাল না বুঝে আগানো উচিত ও নয়। তবে মনে হচ্ছে এই সব কিছুর আগে মেয়েটার সাথে অন্যায় করে ফেলেছে । একটা টেক্সট দিতে পারলে ও মেয়েটা শান্তি পেত।
পরক্ষণেই নিজের ভাবনার যুক্তি পাল্টে ফেললো।
মাথার চুল খামচে ধরলো। ফারাবি কিছুতেই শান্ত হতে পারতো না। এই সব জানলে আর বেশি পাগল হয়ে যেত।
মেয়ে টা এখনো বিপদের মুখে আছে।

অসহায় মুখে বাইরের দিকে তাকালো। খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করতে হবে।
এভাবে লুকিয়ে আর কতো ? যত টুকু ইনফর্মেশন আছে তাঁতে কিছুই হবে না।
ফারহান ল্যাপটপ হাতে বসলো। মনিটরে অনুর হাস্য উজ্জল মুখ টা ভেসে উঠতেই গা গুলিয়ে আসলো।
মেয়েটা ওর জীবন কে এলোমেলো করে দিলো। সব শেষ করে দিলো।
ফ্লাসবেক

” বিশাল আয়োজন করে গেট টুগেদার করা হয়েছিলো। পার্টি শেষে ফারহানের কাছে একটা চিঠি আসে। সাথে একটা ভিডিও। ফারহানের মনে সন্দেহের বাস জেগে উঠে। দ্রুত ভিডিও টা চেইক করে। যা দেখে তাঁতে ওর মাথা ঠিক থাকে না। ছুঁড়ে ফেলে দেয় ভিডিও টা।
ভিডি ও তে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ফারাবি ওহ তাঁর বান্ধবীরা একটা রেসট্রন এ যাচ্ছে। যেই রেসট্রনে ড্রাগ সেলিং করা হয়। কেউ কায়দা করে ফারাবির কাছে ড্রাগ ও রেখে দেয়। তবে ফারাবি তা বুঝতে পারে না। প্যাকেট টা নাড়াচাড়া করে ম্যানেজার এর কাছে জমা দেয়।
আর ম্যানেজার কে ফারাবি কিছু টাকা দেয়। মূলত টাকা টা ছিলো খাবারের বিল। পথ শিশু দের জন্য অনেক খাবার কিনেছিলো সেদিন ।
আর তাই টাকার পরিমান টা ছিলো বেশি। এই ভিডি ও টাকে এডিট করে নানান ছলছাতুড়ি করে ফারাবি কে ড্রাগ সেলার বানিয়ে দেয়।

ফারহান চিঠি খুলে দেখে একটা ঠিকানা দেওয়া যেখানে ওকে একা যেতে বলা হয়েছে। আর না হলে ফারাবি কে পুলিশে দেওয়া হবে । মেয়েটাকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চায় নি ওহ।
আর তাই একাই চলে যায়। যা ছিলো চরম বোকামি ।
ঠিকানা অনুযায়ী ফারহান সেখানে যায়। তবে কাঙ্খিত ব্যাক্তির সাথে তাঁর দেখা হয় না। তবে একজন এসে কিছু অডিও দিয়ে যায়। অডিও তো বলা হয় ফারাবির থেকে তাঁকে দূরে সরে যেতে হবে।
ফারহানের মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। সুযোগ পায় না কাউকে কিছু বলার। তাঁর আগেই চিঠি লিখে পাঠাতে হয় ফারাবির কাছে। আর ওকে নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়া।

বর্তমান

ফারহান আর ভাবতে পারছে না। ল্যাপটপ টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
অনু মেয়েটাকে এর আগে কখনো দেখে নি ওহ। কিন্তু মেয়েটার আচরন বলে দিয়েছে ফারহান কে অনেক দিন ধরে চিনে।
আর তাঁর ই সাথে ওকে পছন্দ করে। যার পাগলামির সায় দিয়েছে ওর বাবা। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর মেয়েটার জঘন্য তম আচারন গুলোর কথা ভাবতেই ফারহানের গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে দিলো।
কি বিদঘুটে কাজ গুলোই না করেছে মেয়েটা। ফারহানের ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটাকে খুন করার। কিন্তু কিছু করার সুযোগ ছিলো না।

ফ্ল্যাশব্যাক

ফারহান কে চোখ বেঁধে একটা ঘরের মধ্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বাইরে থেকে লক করে দেওয়া হয়। ফারহান বুঝতে পারে এখানে আর ও কারো উপস্থিতি রয়েছে। তখনি সচেতন হয়ে যায়। তবে কোনো মেয়ে হবে তা আশা করে নি ওহ।
চোখ টা যখন খুলে ফেলে তখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনু কে। এমন তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে ছিলো যে ফারহানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে।
কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ করে মেয়েটা ,,,,

**ফারহান কেন চলে গেছে বিষয়টা তো ক্লিয়ার তাই না ? এখন অনু ও তাঁর বাবার সম্পর্কে ক্লিয়ার হওয়া বাকি। নেক্সট পার্ট এ সেটা ও ক্লিয়ার হবে ইনশআল্লাহ ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here