স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,#part_1,02

0
2172

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2,#part_1,02
#ফাতেমা_তুজ
#সূচনা_পর্ব
#part_1

ভোর পাঁচ টা কুম্ভকর্নের মতো ঘুমোচ্ছে বাড়ির একমাত্র শেহেজাদী।
কিন্তু শেহজাদীর সুন্দর ঘুমটা দীর্ঘ হতে দিলেন নাহহ মিসেস রহমান।
কয়েক বার ডাকার পর ও বাড়ীর শেহজাদী যখন উঠলো না মিসেস রহমান চুপচাপ জানালার পর্দা মেলে দিলেন।
সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে পরতেই চোখ মুখ কুঁচকে নিলো ফারাবি।
মিসেস রহমান তীক্ষ্ম কন্ঠে ডাকলেন
_ এই ফারাবি আর কতো ঘুমাবি ?
কাল তো নয়টায় ঘুমিয়েছিলি এখন উঠ তাড়াতাড়ি।

ফারাবি পিট পিট করে তাকালো , ভোর বেলা তে মায়ের তীক্ষ্ম কন্ঠস্বর ওর কাছে বিরক্তিকর মাইক এর আওয়াজ মনে হচ্ছে।
যাহ প্রয়োজন ছাড়াই বহুদূর থেকে এসে কানের কাছে ঢং ঢং করে বেজে চলে।

মিসেস রহমান ফারাবির হাত ধরে বেড থেকে নামিয়ে দিলেন।
ফারাবি হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে বলল
_বাজে কয়টা ?
এই সাত সকালে কোন মহাযুদ্ধের জন্য ডাকলে আমায় ?

মিসেস রহমান বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন
_ কোনো খেয়াল আছে তোর ?
আজকাল কোন ধ্যানে থাকিস তুই ?

_ আম্মু কি হইছে ? সকাল সকাল কান টা খাচ্ছো কেন ?
সোজা সুজি বলো না হলে ঘুমাতে দাও।
ধ্যাত
এই বলেই ফারাবি সোফা তে পা তুলে বসে পড়লো।
কুশন নিয়ে বুকে জড়িয়ে আবার চোখ বুঝলো।
মিসেস রহমান বিছানা ঝাড়া শেষ করে ফারাবি কি আবার টেনে তুললেন।
ফারাবি আবেদনের সুরে বলল
_প্লিজ আম্মু। একটু ঘুমাবো , মাত্র সাড়ে পাঁচ টা বাজে।
_ কোনো বাজে কথা নাহ।
তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয় , এখনি রিমি দের বাড়িতে যেতে হবে।
উফফ কতো কাজ আর ওনি এখন ঘুমাবে।

ফারাবি সামান্য চমকে গেল। এই অসময়ে রিমিদের বাড়ি তে গিয়ে কি হবে?
মুখ টা মলিন করে ফারাবি হাই তুলল।
ঘুমটা কাঁটে নি তার , সকাল সকাল উঠার একদম ই অভ্যাস নেই।

_ তাড়াতাড়ি আয় না মা। সবাই ফ্রেস হয়ে গেছে , তোর জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।

_ উফফ আম্মু তোমাদের জন্য আর পারি নাহ।
এই ভোর সকালে রিমি দের বাসা তে যাওয়ার কি প্রয়োজন ?
আর এমন ও নয় রিমি দের বাসা দশ মাইল দূরে।
রাস্তার এপার ওপার বাসা , এখন কোন প্রয়োজন যাবো আমরা ?

_ প্রয়োজন না থাকলে বলি নাকি।
কথা কম বল , বড্ড বেশি কথা বলিস।
তাড়াতাড়ি আয়

মিসেস রহমান রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।
ফারাবি থম মেরে রইলো তারপর হাতের কুশন টা ফেলে বেডে যেতে নিলো , মিসেস রহমান ফিরে এসে ধমক দিলেন।
ফারাবি মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ যাচ্ছি তোহহ

মিসেস রহমান দরজার কাছে ই দাড়িয়ে রইলেন।
ফারাবি একা একা ই বির বির করতে করতে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো।
মিসেস রহমান হালকা শ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
তার মেয়েটা কেন যে এইরকম কে জানে।

*

প্রায় আধ ঘন্টা রিমি দের বাসার ডয়িং রুমে বসে আছে ফারাবি।
সমস্ত কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
জীবন টা ত্যানা ত্যানা মনে হচ্ছে।
বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ফারাবি।
পুরো বাড়ি কে বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো হচ্ছে।
নানান রঙের ফুলের ছোঁয়ায় বাড়ি টা কে রাজপ্রাসাদ মনে হচ্ছে।
অবশ্য রাজপ্রাসাদ ই বটে , ডুপ্লেক্স বিশাল বড় বাড়ি, আধুনিকতার কোনো ছোঁয়াই বাদ নেই।

রিমি কে দেখা যাচ্ছে নাহহ মনে হচ্ছে অতি ব্যস্ত সে।
ফারাবির ইচ্ছে হচ্ছে সবাই কে ধুম ধাম মেরে দিতে।
সবাই এতো ব্যস্ত যে কাউ কে কোনো কিছু জিঙেস করার ও উপায় নেই।

বাড়ির মেইন ডোর দিয়ে রিফাত কে ঢুকতে দেখে চকচক করে উঠলো ফারাবির দু চোখ।
ফারাবি দৌড়ে গিয়ে রিফাতের পথ আটকালো।
রিফাত কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত।
ফারাবি সড়ু চোখে তাকিয়ে আছে রিফাত এক পলক তাকিয়ে আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
মিনিট পাঁচেক পর ফোন রেখে রিফাত ভ্রু নাচালো।
ফারাবি ক্লান্ত নিশ্বাস ফেলে বলল
_ আজকে কিসের অনুষ্ঠান বলো তো ?
এই সাজ সকাল বেলা টেনে নিয়ে আসলো আমায় ?

রিফাত নিজের চুল গুলো এক হাতে ঠিক করতে করতে বলল
_ তুই কোন ধ্যানে থাকিস ?

ফারাবি মলিন স্বরে বলল
_ কেন ?

রিফাত ফারাবির মাথায় গাট্টা মেরে বলল
_ আজ কতো তারিখ ?

ফারাবি মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_ 17 ই জুন।
তো কি হয়েছে?

_ আজ কে ফারহান আসবে ভুলে গেলি ?
তুই কবে থেকে যে ভুলো মনের হয়ে গেলি ?
এখন যাহহহ অনেক কাজ আছে।

রিফাত কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পা বাড়ালো, প্রচুর কাজ আছে তার মাথায়।

ফারাবি কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো।
নাম টা ঠিক ঠাক মাথায় ঢুকলো নাহহ।
নাম টা শুনেছে বলে ও মনে হচ্ছে নাহহ।
কয়েক সেকেন্ড বাদে ফারাবির শরীর শিউরে উঠলো।
শরীরে প্রতি টা নিউরন জানান দিচ্ছে ফারহান আসছে।
চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো , ঠোঁট দুটো বিরতীহীন কাঁপতে লাগলো।
চোখে ভেসে উঠলো ভয়ঙ্কর অতীত।
যে অতীতের জন্য প্রায় এক বছর ফারাবি নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছিলো।
কারো সাথে স্বাভাবিক আচারন করতে পারে নি।
আবার কেন ফিরে আসছে তার অতীত ?
কি হতে চলেছে এবার ওর সাথে ?
ফারাবির পা দুটো কাঁপছে।
মাথা টা ও কেমন ঘুর ঘুর করছে।
ফারাবি ছুটে উপরে উঠে গেল।
এই ভয়ানক অতীত ঘনিয়ে আসছে তার জীবনে , এবার নিশ্চিত মৃত্যু , কোনো উপায় নেই বাঁচার ।

*

অন্ধকার রুমে Everlast pro 2 – station Gym
এর পাঞ্চিং ব্যাগে একের পর এক পাঞ্চ মেরে যাচ্ছে ফারহান।
এসি রুমের ভেতরে থেকে ও শরীর থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে ঘাম বের হচ্ছে।
মুখে নেই কোনো ক্লান্তি , ঠোঁটের কোনে লেগে আছে রহস্য মাখা হাসি।
যাহহ সব সময় ই তার মুখে বিদ্যমান থাকে।
একটু দূরেই একজন লোক দাড়িয়ে আছে ,হাতে পাঁচ রকমের ড্রিংক, মুগ্ধ নয়নে ফারহান কে দেখে যাচ্ছে ।
ঘড়ির কাঁটা টং টং করে বেজে উঠতেই ফারহান নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পাঞ্চিং ব্যাগ টাকে পাঞ্চ মারলো।
পাঞ্চিং ব্যাগ টা অনেক বেশি গতিতে দুলতে লাগলো।
ফারহান সামান্য শ্বাস ফেলে পেছন ঘুরলো।
পেছন ফিরে সামান্য ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকালো।
লোকটা সামান্য ভয় পেয়ে ড্রিংক গুলো টেবিলে রেখে চলে গেল।
ফারহান বাঁকা হেসে
ট্রাওয়াল নিয়ে ঘাম মুছে নিলো।
একটা গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে তরল পানীয় টা মুহুর্তে ই গিলে নিলো।

মিনিট কয়েকের মধ্যে আবার দুটো লোক এসে হাজির হলো।
ফারহান ছোট্ট করে বলল
_ come with me.

লোক দুটো বিনাবাক্যে ফারহানের পিছু পিছু যেতে লাগলো।
ফারহান নিজের রুমে এসে বেডের উপর পা তুলে শিথিল ভঙ্গিতে বসে রইলো।
লোক দুটো চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান এক হাতে ফোন স্ক্রল করতে করতে বলল
_ ফ্লাইট রেডি ?

_ ইয়েস স্যার।

_ ওকে।
এবার যেতে পারো।

লোক দুটো চলে যেতে নিলেই ফারহান আবার ডাক দিলো।
লোক দুটো শুকনো ঢোক গিলে দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ বি ডি তে বিজনেস সেট করতে বলেছিলাম।
ডিলার দের সাথে কথা বলেছো ?

লোক দুটো ঘামতে শুরু করলো।
মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছে নাহহ।
ফারহান বিরক্তি নিয়ে বলল
_ এভাবে চুপ করে আছো কেন ?

_ এক্সচেলি স্যার দুজন শেয়ার হোল্ডার দেশে নেই।
বিজনেস এর কারনে কানাডা গিয়েছেন।
আমরা তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারি নি।

এই টুকু বলেই লোক দুটো চোখ খিচে বন্ধ করে রইলো।
কারন এখন তাদের আশ পাশ দিয়ে সাইক্লোন যাবে।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ড যাওয়ার পর ও যখন কোনো কিছুর আওয়াজ পেল না লোক দুটো চোখ খুলে নিলো।
ফারহান সবাই কে অবাক করে দিয়ে বুকে হাত গুঁজে তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে।

লোক দুটো একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ফারহানের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো।
ফারহান নিঃশব্দে হাসতে লাগলো।

লোক দুটো এক যোগে বলল
_ স্যার উই আর সরি।

ফারহান হু হু করে হেসে উঠলো।
লোক দুটো অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান দুজনের কাঁধে হাত রেখে বলল
_ ইটস ওকে।
আমাকে এতো ভয় পাও যা বলার বাইরে।
আমি অতো টা ও খারাপ মানুষ নই।
তবে একটা কথা বলতেই হয় তোমাদের দুজন কে ছাড়িয়ে ও আরেক জন আমাকে ভয় পায়।
তাকে টপকানোর সাধ্য তোমাদের নেই।

লোক দুটো প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান মৃদু হেসে বলল

_ ডোন্ট ওরি।
তোরা দুজন হলি আমার ভারসিটির জুনিয়র ছেলে পুলে। আর আমি জানি তোরা কতোটা গুনী।
সো এতো ভয় পেতে হবে নাহহ।

ছেলে দুটো উজ্বল হাসলো।
ফারহান পকেট থেকে দুটো কার্ড বের করে বলল
_ সব ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি।
আর একটা কথা রাফি তুই আজ ই কানাডায় চলে যাহ।
দুজন কে খুজে বের করে সমস্ত ডিল এ সাইন করিয়ে আনবি।
আর রায়হান তুই আমার সাথে বিডি তে যাবি।
কয়েক দিন সব কিছু তোকেই সামলাতে হবে।
আর প্লিজ ডোন্ট কল্ড মি স্যার।

রায়হান আর রাফি প্রশস্ত হাসলো।
দুজন ফারহান কে জমের মতো ভয় পায়।
অথচ ফারহান ওদের সাথে কতো সহজ ভাবে কথা বলে।

রাফি আর রায়হান কিছু ফাইল নিয়ে চলে গেল।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাওয়ার নিতে গেল।
সাওয়ার কমপ্লিট করে রেডি হয়ে নিলো।
হালকা পারফিউম মেখে বেড সাইট টেবিল থেকে ছবির ফ্রেম নিয়ে আলতো হাত বুলালো।
বাঁকা হেসে বলল
_ অনেক উড়েছিস।
পাখি কে আর উড়তে দেওয়া যাবে নাহহ।
এখন কলিজায় আটকে রাখার সময় হয়েছে।
যে ভুল তুই করতে চেয়েছিলি দ্বিতীয় বার তা আর করতে পারবি নাহহ।
জ্বালিয়ে দিবো , জ্বলন্ত দাবানলে জ্বলবি তুই।
যতোটা আমি পুরেছি তার থেকে দ্বিগুন পুরবি তুই।
আর সেই আগুনে হাত বাড়াবো আমি শুধু আমি।
সমস্ত কষ্ট দূর করে দিবো জান।
আসছি আমি , রেডি থাকিস।

এই টুকু বলেই ফারহান বাঁকা হাসলো।
এ হাসির মানে টা কতোটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

[ স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন 1 এ আমার অনেক বানান ভুল হয়েছে। বাংলা এমন একটা লেখা যেটা আমাদের মাতৃভাষা হলে ও আমরা বেশি ভুল করে থাকি। সে ক্ষেত্রে ইংরেজি লিখাতে ভুল কম হয়। যাই হোক আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ]

হ্যাপি রিডিং

চলবে

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_2

ঝুম দুপুর , বাইরে জুন মাসের তপ্ত রোদ্দুর তবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে ও ঘামছে ফারাবি।
মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি হতে চলেছে এবার ?
বাইরের গুমোট পরিবেশ টা যেন আর ও বেশি অসহায় করে তুলেছে ফারাবি কে।
ঝড় হওয়ার আগে যেমন নিঠাল পরিবেশ ঠিক তেমনি অবস্থা এখন।
দরজায় একের পর এক ঠক ঠক করেই যাচ্ছে রিমি।
দরজা ভেদ করে ফারাবির কর্নপাতে সে আওয়াজ পৌছাতে পারছে নাহহ।

পাশে থাকা ফোন টা বেজে চলছে অনড়গল।
ফোনের অপর পাশের ব্যাক্তি টি চরম বিরক্ত তবু ও ফারাবির ভাবনার কোনো নড়চড় হচ্ছে নাহহ।
হাঁটু তে মুখ গুঁজে আছে ফারাবি।
বুক টা ধুকপুক করছে , সব কেমন উলোট পালোট লাগছে।
সব ই তো ঠিক ছিলো হঠাৎ কেন তার আগমন হচ্ছে ?
সময় কেন এতো তাড়াতাড়ি প্রবহমান ।

ফারাবি থমথমে পায়ে হেঁটে দরজার লক খুলে দিলো।
সঙ্গে সঙ্গে হুরমুরিয়ে ঢুকে পরলো রিমি।
ফারাবির দু বাহুতে হাত রেখে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে রিমি।
কিন্তু ফারাবির ধ্যান আদৌ কি আছে তাতে ?

রিমি সামান্য ভ্রু কুঁচকে ফারাবির মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই ফারাবি চমকে তাকালো।
ঠিক যেন পাক্কা ক্রিমিনাল।

আশে পাশে তাকিয়ে কাঙ্খিত ব্যক্তি টি কে খুঁজে হতাশ হলো ফারাবি।
অথচ তার ই মুখের সামনে দাড়িয়ে আছে রিমি।

রিমি ছোট্ট করে উচ্চারন করলো
_ এই ফারাবি।

রিমির কন্ঠস্বর ফারাবির কান অব্দি যেতেই ফারাবি মৃদুকম্পন স্বরে বলল
_ হুমম

রিমি বেশ কিছুক্ষণ ফারাবির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।
মেয়েটার মুখে চোখে স্পষ্ট ভয়।
যেন ক্ষুধার্ত বাঘ তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

রিমি ফারাবির মুখে দু হাত গুঁজে দিয়ে বলল
_ কি হয়েছে তোর ? মুখ টা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন ?

_ এমনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি তো তাই এমন দেখাচ্ছে।

_ মিথ্যে কেন বলছিস ?

_ মিথ্যে কেন বলবো ?
হয়তো শরীর টা খারাপ লাগছে তাই।
চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে।

রিমি মলিন হেসে বলল
_ সিউর ?

_ ড্যাম সিউর।

রিমি হালকা হাসলো সাথে ফারাবি ও।
রিমি আর ফারাবি ডিবাইনে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলো।
ফারাবি বার বার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে যার ফলে বিরক্ত হচ্ছে রিমি।
গসিপের সময় একজন অন্যমনস্ক সঙ্গি সব থেকে বেশি পীড়াদায়ক।

রিমি রগরগা কন্ঠে বলল
_ বোঝা শেষ, আজ আর তোর সাথে আড্ডা জমবে না আমার।

ফারাবি মলিন হাসলো। রিমি আবেগী গলা তে বলল

_ নিজের খেয়াল রাখিস জানু।
হঠাৎ ই কেন এমন বিহেভ করছিস তুই ?
ভাইয়া আসবে এতো বড় করে পার্টি হবে আর তুই কি না অসুস্থ হয়ে বসে আছিস।

ফারহানের কথা স্মরণে আসতে ই মৃদু কেঁপে উঠলো ফারাবি।
ভয় যেন গলায় এসে আটকে রয়েছে।
বহু কষ্টে ছোট্ট করে উচ্চারন করলো

_ একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবো।

রিমি মিষ্টি হেসে ফারাবির দু বাহু টেনে নিলো।
ফারাবি মুচকি হাসলো , মেয়েটা পাগল পুরো।

রিমির ফোন বাজতেই রিমি চলে গেল।
ফারাবি দরজা লক করে বসে রইলো।
হঠাৎ ই তার ফোনে ম্যাসেজ এর টুং করে আওয়াজ হলো।
ফারাবি সামান্য চমকে ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো।
এই অসময়ে কারো সমাগম ই ভালো লাগছে না তার।
তবুও একবার দেখা উচিত তাই অনিচ্ছা থাকা সত্যে ও ফারাবি ফোন অন করলো।
আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ দেখেই ফারাবির বুক চমকে উঠলো।
আননোন হলে ও এই নাম্বার বড্ড চেনা তার।
কারন প্রতি বছর নিয়ম করে ম্যাসেজ আসে এই নাম্বার থেকে।
কিন্তু গত নয় মাস যাবত কোনো ম্যাসেজ আসে নি এই নাম্বার থেকে।
ফারাবির বুক ধুকপুকানি বেড়ে গেল।
হাত দুটো কাঁপছে, ফোন হাতে নিলে ও লক খুলতে পারছে না সে।
কি আশ্চর্য নিজের ফোনের লক নাম্বার ই ভুলে গেছে সে।
ফোনটা বেডের উপর ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে বাথরুমে চলে গেল ফারাবি।
মুখে অনবরত পানির ছিটে দিতে লাগলো।
চোখ দুটো কেমন ঘোলাটে দেখাচ্ছে।
ফারাবি দু হাতে চুল খামচে ধরে বসে পরলো।
কষ্টের পাহাড় ভারী হচ্ছে, বেশ তো ছিলো সে তাহলে কেন ফিরে আসছে ফারহান ?
কোন জ্বলন্ত শিখায় জ্বালাতে চায় তাকে ?

ফারাবি নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বাথরুম থেকে রুমে চলে আসলো।
ফোনের লক খুলে ম্যাসেজ চেইক করতেই দু চোখ বেয়ে অঝোরে বর্ষন নেমে গেল।

কয়েক ওয়ার্ড এর ছোট্ট ম্যাসেজ টা ফারাবির চিত্ত কাঁপিয়ে তুলেছে।

ফারাবির হাত থেকে ধুম করে ফোন পরে গেল।
বেডের কাছে হাঁটু ভেঙ্গে বসে পরলো ফারাবি।

ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে আননোন নাম্বার থেকে ফারহানের সেই ম্যাসেজ

” Be prepared for punishment ”

*

দুপুর তিনটের সময় সিঙ্গাপুর টু বাংলাদেশের স্পেশাল ফ্লাইট ল্যান্ড হয়েছে।
এয়ারপোর্ট এর কাছে দাঁড়িয়ে আছে ক্রস ব্ল্যাক রঙের 5 টি গাড়ি সাথে নেভি ব্লু রঙের একটি গাড়ি।
হোয়াইট রঙের ফরমাল ড্রেস আপ এ পাঁচ জন লোক ঝুঁকে আছে তাদের কাঙ্খিত ব্যক্তি টির জন্য।
3’20 মিনিট হতেই এয়ারপোর্ট এর মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে আসলো ফারহান।
ব্ল্যাক শার্ট এর ওপরে ব্লু সুট সাথে ব্যান্ড এর ব্লু প্যান্ট চোখে রোদ চশমা হাতে Rolex submariner ওয়াচ।
ঠিক যেন কোনো দেশের রাজকুমার।
চুল গুলো এক সাইট করে জেল দিয়ে সেট করা।
ফারহান কে বের হতে দেখেই পাঁচ জন লোক ই দৌড়ে ফারহানের কাছে গেল।
ফারহান বাঁকা হাসলো , এই ঘায়েল করা হাসি তে মুগ্ধ হয়েছে আশে পাশের শত নারী।
ড্যাপ ড্যাপ করে চেয়ে আছে ফারহানের দিকে।
লোক গুলো এসে ফারহান কে ওয়েলকাম জানালো।
ফারহান কে ঘিরেই সবাই হেঁটে চলেছে।
পার্কিং এর সামনে আসতেই একজন লোক বলল
_ স্যার আমি ড্রাইভ করবো ?

ফারহান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
_ নো। তোমরা বাড়ি ফিরে যাও।
তার আগে এয়ারপোর্ট থেকে সমস্ত কিছু কালেক্ট করে নিও।

_ ওকে স্যার। কিন্তু আপনি যাবেন নাহহ ?

ফারহান রহস্য ময় হাসি দিয়ে বলল
_ obviously .
বাট এখন নাহহ সন্ধ্যা তে।
এতো জাঁক জমক করে আসলাম এভাবে যাওয়ার জন্য নাকি।
তোমরা যাও কাউকে বলার দরকার নেই আমি যে এখনি এসেছি।
সবাই জানে 7 টায় ফ্লাইট ল্যান্ড করবে।

_ ওকে স্যার।

ফারহান ব্লু কার টাতে উঠে বসলো।
লোক গুলো চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান পকেট থেকে একটা চেক বের করে দিয়ে কার স্টার্ট করলো।
মুহুর্তেই ধুলো উড়িয়ে কার চক্ষু দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল।

ফারহান মুখে রহস্যময় হাসি টানিয়ে কার ড্রাইভ করতে লাগলো।
একটা ফ্লাওয়ারের দোকানে এসে ব্রেক কষলো।
অর্কিড ফুল আর ব্ল্যাক রোজ কিনে নিজ হাতে সাজালো।
এই ফুল গুলো শুধু মাত্র তার প্রেয়সীর জন্য স্পেশাল তো হতেই হবে।
ফারহান বাঁকা হেসে আবার গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।
আপন মনে আওরাতে লাগলো
_ খুব বড় ভুল করেছিলি তুই তার জন্য ও কিচ্ছু বলি নি।
কিন্তু এবার যে ভুল করতে চাইছিস সেটা ভুল নাহহ অন্যায়।
আর এই অন্যায়ের জন্য পানিসম্যান্ট তো পেতেই হবে জান।
সবাই দেখবে ফারহান তার ভালোবাসার জন্য কতো দূর যেতে পারে।

এই সব ভাবতে ভাবতেই ডেভিল স্মাইল দিলো ফারহান।

*

বিকেল থেকে রিমি বসে আছে ফারাবির কাছে।
এখন সন্ধ্যা হতে চললো , কিন্তু ফারাবি রেডি হওয়া তো দূরে থাক রুমের বাইরে যেতে ও নারাজ।
ফারাবির এমন উদ্ভট কান্ডের কারন কারোই বোধগম্য হচ্ছে নাহহহ।

রিমি বিরক্তি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ফারাবির কোনো হেলদোল হলো না তাতে।
মিনিট পাঁচেক পর রিমির সাথে মনিকা আসলো ।
মনিকা কে দেখে সামান্য হাসলো ফারাবি।
কিন্তু মনিকা গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ এই সব কি ফারাবি?
এমন করছিস কেন ? সকাল থেকে নিজেকে ঘর বন্দী করে রেখেছিস। এখন আবার পার্টি তে যেতে চাইছিস নাহহ।

_ ভালো লাগছে না আপু। তোমরা যাও নাহহ আমি ঘরেই থাকি ।

মনিকা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
_ এখনি রেডি হবি তুই। না হলে ভাববো আমাকে ভাবি হিসেবে পছন্দ নয় তোর।

ফারাবি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইলো।
এরা কেন বুঝতে চাইছে নাহহ বাইরে বেরোলেই বিপদ।
এই মহাবিপদের সম্মুখীন হতে চায় নাহহ ফারাবি।

মনিকা ফারাবির দু বাহু তে হাত গুঁজে বলল
_ লক্ষ্মী বোন টি আমার , তোকে ছাড়া ভালো লাগছে না রে।

ফারাবি মলিন হাসলো।
মনিকা আর রিমি প্রশস্ত হাসতেই ফারাবি বলল
_ যাও তোমরা আমি রেডি হয়ে আসছি।

রিমি নাছোড় বান্দা কারন সে জানে ফারাবি আসবে নাহহ।

ফারাবি গোমড়া মুখ করে বলল
_ পাক্কা প্রমিস আসবো আমি।

_ পাক্কা তো ?

_ আরে হ্যাঁ এবার যা প্লিজ চেন্স করতে হবে তো।

_ ওকে কিউটি, সাজ গোঁজ টা কম করিস প্লিজ না হলে তো আজকের পার্টির মেইন আকর্ষণ ফারহান ভাইয়া কে ছেড়ে সবাই তোকেই দেখবে।

ফারহানের নাম শুনেই ফারাবির মুখ টা ছোট হয়ে গেল।
ফারাবি মুখ গোমড়া করে এক প্রকার টেনে ই দুজন কে বের করে দিয়ে ডোর লক করে দিলো।
সব কিছু অসহ্য লাগছে ওর।
না পারছে গিলতে আর না পারছে উপ্পরে ফেলতে।
বিষাক্ত এ জীবনে ফারহান নামের অভিশাপ থেকে কখনো কি মুক্তি পাবে না ও ?

ফারাবির ভীষন কান্না পাচ্ছে , কেউ ওর পরিস্থিতি বুঝতে পারছে নাহহ।
কেউ নেই তার পাশে সব কেমন ধোঁয়াশা লাগছে।

#বোনাস_পার্ট

কালো হুডি পরে আপাদমস্তক ঢেকে বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে ঢুকছে ফারহান।
মেইন গেটের কাছে মানুষে ভরপুর তারউপর চেকিং গার্ড ও বসানো হয়েছে।
বাসার সামনে দিয়ে যাওয়া এক প্রকার ইমপসিবল।
ফারহান ব্লু টুথ অন করে একজন কে কল করে বলল
_ ফাস্ট পেছনের সিঁড়ি টার লক খুলে দাও।
আমি ডান বলার সাথে সাথেই আবার অফ করে দিবে।

_ ওকে স্যার।

মুহূর্তেই বাসার পেছনের সিঁড়ির লক খুলে গেল।
ফারহান যথাসম্ভব দ্রুত উঠে গিয়ে ডান বলে দিলো।
সঙ্গে সঙ্গে আবার লক হয়ে গেল।
ফারহান সস্তির নিশ্বাস ফেলল।
বাঁকা হেসে এগিয়ে যেতে লাগলো।

ব্ল্যাক রঙের সিফন জর্জেট এর উপর পুতি বসানো শাড়ি লেহেঙ্গা পরেছে ফারাবি।
যার দরুন চিক চিক করছে পুরো শরীরে।
দুপুরের দিকে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছেন ফারনাহের মা মিসেস রোমা চৌধুরী।
হালকা মেইক আপ করে চুল গুলো ডিজাইন করে খোঁপা করে নিয়েছে ।
পায়ের স্লিপার খুলে হিল পরতে যেতেই রুমের লাইট অফ হয়ে গেল।
ফারাবি সামান্য চমকে উঠলো।
তিনটে লাইন অন করা ছিলো , সব গুলো এক সঙ্গে ই কি করে কেঁটে যেতে পারে।
তাছাড়া বারান্দার লাইট টা ঠিক ই জ্বলছে তার মানে লাইনে কোনো সমস্যা হয় নি।
ফারাবি মাথা থেকে সমস্ত চিন্তা ঝেরে নিয়ে ডিবাইন থেকে ফোন নিতে যেতেই লম্বা শক্ত পোক্ত এক টা হাত পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
আচমকা কেউ একজন ফারাবি কে এভাবে জড়িয়ে ধরায় ফারাবি চিৎকার করে উঠলো।
কিন্তু সাউন্ড প্রুফ রুম হওয়ায় সে আওয়াজ চার দেওয়ালেই আটকে গেল।

ফারাবির বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।
শক্ত হাতের সপর্শ গাঢ় হতেই ফারাবি চমকে উঠলো।
কড়া পারফিউম এর গ্রান নাকে আসতেই ফারাবি গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
ফারাবির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে তাকে জড়িয়ে আছে ফারহান।
চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইছে কিন্তু কি আশ্চর্য চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ও পরছে নাহহ ওর।

ফারহানের হাত ফারাবির পেটের ডান সাইটে লাগতেই কেঁপে উঠলো ফারাবির সমস্ত শরীর।
ফারাবি নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করতে লাগলো।
কিন্তু ফারহানের এক হাতের কাছেই ফারাবির সমস্ত শক্তি নুইয়ে গেল।

ফারাবির অর্ধ উন্মুক্ত পিঠের দিকে হাত বাড়ালো ফারহান।
হালকা স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠলো ফারাবি।
ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ই ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে ফারহান বলল
_ ওয়েলকাম জানাবি না আমায় ?

ফারাবির গলায় সমস্ত কথা আটকে গেছে।
ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আজ ও একি রকম ভয় পায় ফারহান কে ,গত তিন বছরে ও কোনো পরিবর্তন আনতে পারে নি সে।

ফারাবির শরীর কাঁপতে লাগলো।
ফারহান বাঁকা হেসে আলতো হাতে ফারাবি কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
বারান্দায় থাকা লাইটের আলো আঁচড়ে পরছে ওদের দিকে।
মৃদু আলো তে ও দুজন দুজন কে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।
ফারাবির চোখের সাথে ফারহানের চোখের চোখাচোখি হতেই ফারাবি চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
ফারহান আলতো হাসলো আজ ও তার প্রেয়সী সরাসরি তার দিকে তাকাতে অক্ষম।
ফারহান এক হাতে ফারাবির কোমর জড়িয়ে ধরে খানিকটা নিজের কাছে টেনে নিলো।
ফারহানের বুকের সাথে স্পর্শ লাগতেই শিউরে উঠলো ফারাবি।

ফারাবির নাকের সাথে নাক ঘষতে ঘষতে ফারহান বলল
_ ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্ল্ড জান।
যে যন্ত্রণা আমাকে দিয়েছিস এর শাস্তি তো তোকেই পেতেই হবে।
তিন বছর আগে ছোট ছিলি ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এখনো কি করে একি ভুল করতে যাচ্ছিস তুই ?

ফারাবি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
_ ছাড়ুন আমায়।

_ এতো সহজে তো তোর মুক্তি নেই জান।

ফারাবির ঠোঁট দুটো কাঁপতে লাগলো।
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে, শরীর ও অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে।

ফারহান ধীর গতিতে ফারাবির ঠোঁটের দিকে আগাতে লাগলো।
সেটা ফারাবি স্পষ্ট অনুভব করতেই, চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
ফারাবির চোখের পানি দেখে ফারহানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো।
ফারাবি কে শাস্তি দেওয়ার কথা বললে ও কোনো ভাবেই যে তা সম্ভব না তা খুব ভালো ভাবেই জানে ওহ।
ফারহান আবেদনের স্বরে বলল
_ কাঁদছিস তুই তাও আমি স্পর্শ করতে যাওয়ায় ?
আমার অধিকার নেই এতে ?

ফারাবি চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
অধিকার কিসের অধিকার দেখাতে আসছেন ওনি ?

ফারাবি কে ছেড়ে খানিক টা দূরে সরে গেল ফারহান।
চোখ মুখ খিচে নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করে ফোস করে শ্বাস ফেলে বলল
_ কতোটা ঘৃনা করিস আমায় ?

_ জানি নাহ।

_ কথা বলার সাহস হয়েছে দেখছি।
আগে তো মাথা নিচু করে থাকতি , চোখ তুলে তাকানোর সাহস ও পেতি নাহহ।

_ সময় বদলে গেছে।

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ আচ্ছা। এডাল্ট না হয়েই সাহস বেড়ে গেছে।
তো একটা পরীক্ষা হয়েই যাক।
বয়স কতো যেন 17+, জানিস তো কতো বছরের বড়ো আমি ?
পুরো আট বছরের, আমার চোখে চোখ রাখার সাহস নেই।
পুঁচকে মেয়ে সে আবার আমার কথার উপরে কথা বলে।

ফারহান এক পা এক পা করে ফারাবির দিকে এগোতে লাগলো আর ফারাবি শুকনো ঢোক গিলে পিছাতে লাগলো।
ফারাবি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
_ ভয় পাই না আপনাকে।

ফারহান ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি টানিয়ে বলল
_ দেখা যাক।

ফারাবির পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
পেছনে যাওয়ার জন্য আর এক চুল ও জায়গা নেই।
ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবি কে টেনে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
ফারাবি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।
ফারহানের চোখ দুটো ফারাবির দিকে ঘোর লাগিয়ে টানছে।
ফারহানের এক হাত ফারাবির কোমরে স্পর্শ করলো।
মুহুর্তেই ফারাবির সমস্ত শরীর জুড়ে শিহরন জেগে উঠলো।
রন্ধে রন্ধে শীতল তরল নেমে গেল ।
ফারাবির হাত ফারহানের বুকে আবদ্ধ আছে।
দুজনের মাঝে এক চুল ও ফাঁক নেই। অথচ ফারাবি দু হাত দিয়ে দুজনের মাঝে দুরুত্ব সৃষ্টি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে ।
আর ফারহানের হাত ধীর গতিতে ফারাবির কোমর পেরিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
ফারাবির শরীর কাঁপছে, ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির ব্লাউজের জিপ খুলে দিলো।
ফারাবি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল
_ ফারহান ভাইয়া প্লিজ।

ফারহান তাচ্ছিল্য হেসে জিপ লাগিয়ে দিলো।
ফারাবি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।
ফারহান তাচ্ছিল্যর স্বরে বলল
_ ভুল কিছু করছিলাম আমি ?
আছে তোর কাছে কোনো উত্তর ?
অধিকার পেরিয়ে যাচ্ছি কি আমি?
নেই তো কোনো উত্তর , আমাকে যত ই ঘৃনা করিস না কেন আমার থেকে তোর মুক্তি নেই।
ফারহান ভালো করেই জানে তার অধিকারের দিকে কেউ হাত বাড়ালে তার কি অবস্থা করতে হয়।
গট ইট খুব খারাপ হয়ে যাবে।

ফারহান দরজার লক খুলে গটগট করে চলে গেল।
ফারাবি মেঝে তে বসে পড়লো।
ছলছল নয়নে ফারহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিসের অধিকার দেখাচ্ছেন ওনি ?
কেন ফিরে আসলেন ওনি , সব ই তো ঠিক ছিলো তাহলে কেন বিষাক্ততা নিয়ে আবার ফিরে এলেন।
ফারাবি চিৎকার করে উঠলো।
সমস্ত কিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
নিজেকে যতটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে ঠিক ততোটাই অস্বাভাবিক হয়ে পরছে।
এভাবে আর কতোদিন চলবে ?

[ আগের সিজন এ কিছু অভিযোগ ছিলো সিজন 2 এ সেগুলো কমপ্লিট করবো ইনশআল্লাহ ।
ফারাবি ফারহানের ভালোবাসা বুঝে না কেন ? তারপর ফারহান কে ভলো না বাসলে ফারাবি কেন ফারহানের হুটহাট জড়িয়ে ধরা মেনে নিতো। এ সিজন এ সব পাল্টে দিবো। তবে ফারহান কে জমের মতো এখনো ভয় পাবে। ]

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here