#স্বপ্ন_কেনার_দামে,১০,১১ শেষ
#রুকসাত জাহান
#পর্ব১০
“ঢং এর কান্না রাখো অরণী। রিদমের জন্য তোমার কান্না করা মানায় না।”
“এইসব কী বলেন ভাইয়া, আপনি জানেন না আমি রিদমকে কত ভালোবাসি?”
“ভালোবাসলে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে যেতে? তোমার জন্য রিদম আজ সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে। আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম, আমি জানতাম তোমার মতো আব্বুর লক্ষী মেয়েরা প্রেমিকা হওয়ার যোগ্য না। তোমরা প্রথমে কমবয়সী ছেলেদের নাচিয়ে মজা পাও এরপর ভালো মেয়ে সেজে আব্বুর পছন্দ করা ছেলে বিয়ে করে নাও।”
“ভাইয়া এইভাবে অপবাদ দিয়েন না। বিশ্বাস করেন একদম হঠাৎ করে সব হইছে। আমি রিদমকে জানাতাম, কিন্তু ভাবছি ওর সামনে পরীক্ষা, এইসময় ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে জানিয়ে ওকে টেনশন না দেই। আর গতকাল রেস্টুরেন্টে শুধু দুই পরিবারের কথাবার্তা হয়েছে, আমি এখন বিয়ে করবো না সেটা বলছি আম্মুকে।”
“আর তোমার আম্মু তাতে রাজি হয়েছে? আব্বু রাজি হয়েছে? রিদমের কথা বলছো বাসায়, ওনারা মেনে নিয়েছে?”
“ফয়সাল ভাইয়া, রিদম তো এখনো ইনকাম করছে না, ওর কথা বাসায় কিভাবে জানাবো? ও কিছুকরা শুরু করলেই বলে দেব।”
“তারমানে টাকাটাই সব। টাকা ইনকাম না করলে টাটা বাই বাই।”
“ভাইয়া, আমি আগে রিদমের সাথে দেখা করবো, তারপর আমাকে যা বলার বলেন।” ফয়সালেকে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে যায় অরণী।
গতকাল রেস্টুরেন্টে দুই পরিবারের দেখা করার পর্ব সমাপ্ত হয়েছিল। দুই পরিবারই বিয়ের ব্যাপারে পজেটিভ। হবু বর কর্পোরেট জব করে, ভালো স্যালারি, জব সিকিউরিটি আছে, জবের গ্রোথও ভালো। বড়ো বোন আছে যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাবা মা আর ছেলে নিয়ে ছিমছাম পরিবার।
অরণী ডাক্তার হচ্ছে, সামনে নিজের ডেন্টাল চেম্বার দিতে চাইলে তাদের কোন আপত্তি নেই, বরং তারা এই বিষয়ে বেশ আগ্রহ দেখালেন। সবমিলিয়ে ভালো সমন্ধ। অরণী মাকে আবার বলেছে এখন বিয়ে করবে না, এখন বিয়ে করলে ফাইলান প্রফে মন দিতে পারবে না, ফেল করবে। তিনমাস পর অরণীর ফাইনাল প্রফ, ঠিক করা হয় তাহলে প্রফের পর বিয়ের ডেট ফেলা হবে। আপাততঃ বিয়েটা আটকানো গেলেও অরণী কারও সাথে ঘটানাটা শেয়ার করার জন্য আকুপাকু করছিল, শেষ পর্যন্ত রিক্তার সাথে শেয়ার করে। যদিও রিদমকে জানাতে নিষেধ করেছে। কিন্তু নতুন নতুন প্রেমে মত্ত রিক্তা, ফয়সালের কাছে কথা লুকাতে পারে না। আর জানতে পারা মাত্র ফয়সাল রিদমকে জানিয়ে দেয়।
এই মুহূর্তে অরণী আছে ফয়সালের মেসে। সকালে অরণী কলেজে এসে রিদমের খোঁজ করে, গতকাল রাত থেকে রিদমের ফোন বন্ধ। সকালে এসে আউটডোরেও রিদমকে না দেখে টেনশনে পড়ে যায়। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, রিদমের দেখা নেই। এরমাঝে খবর আসে রিদম সকালে ফয়সালের মেসে গিয়ে অনেকগুলো ঘুমের ঔষধ খেয়েছে, ওর বন্ধুরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। এখন পেট ওয়াশ করা শেষে আবার মেসে নিয়ে এসেছে।
খবর পাওয়া মাত্র অরণী ছুটে এসেছে, এমন কিছুরই ভয় পাচ্ছিল অরণী, তাই তো রিদমকে জানাতে চায়নি।
ফয়সালের বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে রিদম, ঘুমের ঔষধ ও খেয়েছে, তবে দুটো। বুদ্ধিটা অবশ্য ফয়সালের, একদিকে অরণীকে শিক্ষা দেওয়া হবে, আরেক দিকে ওকে ইমোশনাল ট্রাপে ফেলা যাবে। আর তাই হলো, তীর একদম জায়গামতো। দুটা ঘুমের ঔষধে রিদমের প্রচন্ড ঘুম আর ক্লান্তির চেহারা হয়েছে, তবে কোন ক্ষতি হয়নি, পেট ওয়াশের তো প্রশ্নই আসে না। ওদের এক বন্ধু সরকারি মেডিকেলে ইন্টার্নি করছে, রিদমকে তারা সেখানেই নিয়ে গিয়েছে, বন্ধুর হেল্প নিয়ে একটা স্লিপও জোগাড় করা হয়েছে। বাকিটা রিক্তা করেছে, অরণী সহ বাকিদের কানে কথা পৌঁছে দিয়েছে। ফয়সাল রিদমকে বুঝিয়েছে অরণীকে ধরে রাখতে হলে এই খেলার বিকল্প নেই।
রিদমের মুখটা দেখে অরণীর বুকটা ধক করে ওঠে। “রিদম, আমার রিদম সোনা। প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ধোঁকা দেইনি। রিদম, জান প্লিজ কিছু বলো, আমাকে বকা দাও, গালি দাও, অপমন করো, যা মন চায় করো। কিন্তু কথা বলো প্লিজ।”
“অরণী, কেন বাঁচাতে চাইছো আমাকে? তুমি না থাকলে আমার বেঁচে থাকা অর্থহীন। তুমি অন্য কারও হবে তা দেখার চেয়ে আমার মারা যাওয়া ভালো। হয় তুমি আমার হবে, আর না হয় এই জীবন আমি রাখবো না।”
“কী পাগলের মতো কথা বলো রিদম। আমিই কী সব। তুমি না পরিবারের বড়ো ছেলে, তোমার না মা, বাবা, বোন সবার দায়িত্ব নিতে হবে? সেই তুমি এভাবে জীবন শেষ করতে চাইছো আমার জন্য? আমি কে রিদম? আমার মতো একজন গেলে, আরেকজন মেয়ে তোমার জীবনে আসবে। কিন্তু তুমি গেলে কী তোমার মায়ের আরেকটা ছেলে আসবে?”
“তোমার মতো কেউ আসবে না অরু। আমার অরু, এই জীবন, জীবন শেষে মৃত্যুর ওপারে, সবসময় আমি শুধু অরু কে চাই। শুধু অরু কে। আমি চোখ খুললে আমার পাশে অরু থাকবে, আমি শ্বাস নিলে অরুর চুলের গন্ধ পাবো, আমি হাত বাড়ালে অরুর স্পর্শ আমাকে ছুঁয়ে যাবে। আর তা না হলে আমি রিদম শুধু জীবন্ত লাশ হয়ে থাকবো।। সবসময় জীবনের সব পর্যায়ে, আমি শুধু আমার অরুকে চাই, তারজন্য মরতে পারি, মারতেও পারি। অরু চলো বিয়ে করি, তাহলে আর কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না। প্লিজ অরু আমাকে ফিরিয়ে দিও না, প্লিজ অরু।”
দুপুর দুইটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট, একহাজার এক টাকা কাবিনে অরণী আর রিদমের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে শেষে সাড়ে তিনটে বাজে রিদম বসিলার দিকে, আর অরণী ইস্কাটনের পথে রওনা দেয়, ঠিক আর অন্য দশটা দিনের মতোই যেন সবকিছু। কিন্তু অরণী টের পায় কী বিশাল পরিবর্তন চলে এসেছে ওর জীবনে। এখন আর ও মিস নয়, বরং মিসেস অরণী।
অরু রিকশায় শক্ত হয়ে বসে থাকে, হাতের মুঠোয় একহাজার টাকার নোট, আর একটা একটাকার কয়েন। রিদমকে সালাম করা মাত্র রিদম কপালে চুমু এঁকে দিয়ে কাবিনের টাকাটা অরণীর মুঠোয় দিয়ে দিয়েছে। অরণী না করতে পারেনি। কী এক অচেনা আবেশে যেন আচ্ছন্ন অরণী, সবকিছু চলছে, আর সে যেন থেমে আছে এই অনাদি অনন্তকালে।
#স্বপ্ন_কেনার_দামে
#শেষপর্ব
এই মেয়ে এমন হাসিস কেন?
হাত বাড়িয়ে ডাকিস কেন?
জানিস কি তোর মুখের হাসি,
বড্ড আমি ভালোবাসি।
চুলেতে তোর মেঘ নেমেছে,
কাজল চোখে বৃষ্টি।
শ্যামল মেয়ে তোর মুখখানি,
খোদার অপরূপ সৃষ্টি।
এই মেয়েটা শুধুই আমার,
কী আচানক ব্যাপার স্যাপার।
অরু, অরু এই অরণী,
আমার বৌ, লক্ষী ঘরণী।
সকাল সকাল রিদমের এমন পাগলামি ভরা ম্যাসেজে অরুর মনটা নেচে ওঠে। “রিদমের বৌ” এই কথাটা মনে হতেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে। গতকাল বিয়ে পড়ানোর সময় ফয়সাল, রিক্তা আর রিদমের দুজন কলেজ ফ্রেন্ড ছিল। যদিও সবাই কথা দিয়েছে, এখন কোন কিছু প্রকাশ করবে না, রিদমের ইন্টার্নশিপ প্রায় শেষ, আর অল্প কিছুদিন পর এফসিপিএস এর জন্য বসবে। অরণী ফাইনাল প্রফেশনাল এক্সাম দিবে। এইসব ঝামেলা শেষে নিজ নিজ বাসায় জানাবে।
অরণীর ভয় রিক্তাকে নিয়ে, এই মেয়ে তার কলিজা বান্ধবী কিন্তু কোন কথা পেটে রাখতে পারে না। অবশ্য ফয়সাল রিক্তাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে কাউকে না বলতে এখন। আশা করা যায় বয়ফ্রেন্ডকে রিক্তা রাগাবে না। কাল সবকিছুই যেন একটা ঘোরের মতো ছিল। অরণী বাসায় এসে চোরের মতো পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে, মনে হচ্ছিল ওর চোখ দেখলে সবাই সবকিছু জেনে যাবে। রাতেও ভাত নেড়েচেড়ে উঠে গিয়েছে, বাবার সামনে খাবার গলা দিয়ে নামেনি। মাকে মিথ্যা বলেছে যে পরীক্ষার টেনশনে খাওয়া দাওয়া করতে পারছে না।
“অরণী, এই অবস্থা কেন চেহারার? কেমন উষ্কখুষ্ক লাগছে। নাতনি, সামনে বিয়া হবে তোর, এখন কোথায় পরিপাটি হইয়া থাকবি।”
অরণী দাদীর কথায় সতর্ক হয়ে যায়, “কার বিয়ে দাদী?”
“কার বিয়া আবার। তোর বিয়া, পরীক্ষা শেষ হোক, তারপরই তোরে বিদায় করবো। আচ্ছা এই নাত জামাই তোরে ফোন দেয় নাকি রে?”
হুমায়রা রান্নাঘর থেকে এগিয়ে আসেন, “কী বলেন আম্মা। এখন এগুলো বইলেন না। মেয়েটার সামনে পরীক্ষা, ওর আব্বু এখন বিয়েশাদির আলাপ করতে নিষেধ করছে। পরীক্ষা ঠান্ডা মাথায় দেক, তারপর এসব আলোচনা হবে।”
“হইছে তোমার আর পন্ডিতি করা লাগব না। আমার নাতনির সাথে তোমার অনুমতি নিয়া কথা বলবো। পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিব, এরপর বিয়া হইবো। এত ঢং এর কী আছে। আর তাইলে রাতে কার সাথে কুটকুট কথা বললি অরণী?”
“কার সাথে বলবো দাদী, বান্ধবীর সাথে বলছি।”
হুমায়রা ইশারায় অরণীকে উঠে যেতে বলে। অরণীর বাবা এমনি যতই রগচটা হোন, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় ভেদাভেদ করেননি। অমিয়র মতো অরণীর লেখাপড়ার জন্য একই রকম মনোযোগ দিয়েছেন। আর তাই চান মেয়েটা ভালোয় ভালোয় ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তার হোক। বিয়ের সকল আয়োজন তারপরই হবে। আর তাই তিনি এই মুহূর্তে অরণী পাত্রের সাথে ফোনে কথা বলুক তাও তিনি চান না। তাছাড়া ওনার মতে কোন কিছু ফাইনাল হওয়ার আগে ছেলেমেয়েকে খুব একটা মেলামেশা করুক তা ভালোও নয়। সামনে বিয়ে তো হবেই, এই ধারণা মাথায় থাকলে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে তাদের সীমা কতটুকু তা ভুলে যেতে পারে। আকদের আগে তাই তিনি এত ঘনিষ্ঠতা পছন্দ করেন না। অবশ্য বাবার এই রক্ষণশীল মনোভাব বরং অরণীর জন্য শাপেবর হয়েছে। পরিবারের ঠিক করা হবু পাত্রের সাথে ফোনে কথা বলাটা একটা বিব্রতকর অনুভূতি হতো, তাছাড়া রিদম জানলে একটা পাগলামি করতো।
আজ কলেজে পা দিয়ে কেমন শিরশিরে অনুভূতি হয় অরণীর। মনে হচ্ছে যেন সবাই ওকেই দেখছে। আচ্ছা রিক্তা সব বলে দেয়নি তো! দুরদুর বুকে ক্লাসে ঢুকে অরণী। সবকিছু স্বাভাবিক দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে। এখন ক্লাসগুলো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, পরীক্ষা আগে প্র্যাকটিকাল আর ক্লাসের চাপে দম ফালানোর সময় নেই। রিদমের ম্যাসেজের জবাবে “ভালিবাসি” লিখেই তাই ক্লাসে মন দিয়েছে। প্র্যাকটিকালের সময় আউটডোরে যাবে, তখন দেখা হবে। তার আগে সময় নেই। অবশ্য ব্যাগের ভেতর ফোনের একটু পরপর ভাইব্রেশন বলে দিচ্ছে রিদমের তর সইছে না।
“পাগল একটা” স্মিত হেসে ক্লাসে মন দেওয়ার চেষ্টা করে অরণী।
প্র্যাকটিকাল প্লেসমেন্ট আজ কনজার্ভেটিভ এন্ড এন্ডোডন্টিকস ডিপার্টমেন্টে। খাতা সাইন করতে হবে, কাজ প্রায় গুছানো শেষ, কিছু এক্সরে বসাবে প্রিন্ট করে, ছবি আঁকা ঠিক আছে কিনা দেখিয়ে নিতে হবে। ডেডলাইনের আগে সবকিছু শেষ না করলে খাতা সাইন করলে পরে ম্যামের পেছন পেছন ঘুরতে হবে, সাথে বকা তো ফ্রি।
“এই বৌ, একটামাত্র পতি পরমেশ্বরকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?”
অরণী চমকে ওঠে, “আস্তে বলো, কেউ শুনলে? আমি তো সার্জারিতে ঘুরে আসলাম তোমাকে পাইনি সেখানে।”
“লাইব্রেরিতে পড়ছিলাম। আমার তো সব ডিপার্টমেন্ট প্রায় শেষ, এখন শুধু এক্সটেনশনের গুলো করছি। পরীক্ষার দেরি নেই। এরমধ্যে বাসায় অশান্তি, পড়ার পরিবেশ নাই। হাউকাউ লেগেই আছে। আপা এসেছে দুই বাচ্চা নিয়ে। আপার চোখের কোণে রেডিই থাকে, একটু কিছু বললেই হলো, টপাটপ ঝরা শুরু। বাসায় আসবে খুশি খুশি, দু’দিন যেতে না যেতে মায়ের সাথে লেগে যায়। মাও দুটো কথা শুনিয়ে দেয়, এরপর কান্নাকাটি, উফ্ বিরক্তিকর।”
“বেচারি, কয়দিনের জন্য বেড়াতে আসে বাবার বাড়ি, এমন করো কেন?”
“হুম, এখন খুব দরদ। যখন আমাদের বাসায় যাবে, তখন এই ননদ ননাসের নালিশই করতে আসবে। তবে শুনো ভাই আমার এসব ক্যাচাল ভালো লাগে না। আমি বাসায় রাতে ফিরি, খাই, টুপ করে ঘুমিয়ে যাই।”
“আচ্ছা এখন আমাকে এই খাতা ঠিক করতে দাও। আজ সাইন করাবো।”
“কাজ শেষে চলো ঘরোয়া খাবারঘরে যাই। তোমাকো গরম ভাত, পাবদা মাছের ঝোল দিয়ে লাঞ্চ করাবো। বেতন পেয়েছি।”
“থাক টাকাটা হাতে রাখো। ইন্টার্নি শেষে ভাতা কোথায় পাবে। পরীক্ষা দিবে খরচ আছে না। আমার মনে হয় তুমি কোচিং এ মডেল টেস্ট দেওয়া শুরু করো। কোচিং না করলেও পরীক্ষা দেওয়া দরকার, প্রাকটিস হবে।”
“অরু, তোমাকে বলা হয়নি। চেম্বারে জয়েন করছি। জানো তো আব্বু এখন কিছু করে না। শুধু দুটো বাসা ভাড়া দিয়ে ঢাকায় চলা কত কষ্ট এখন। তার উপর বসিলায় আমাদের এই পুরানো বাসার ভাড়াও বেশি না, দুইটা ইউনিট থেকে আর কতই বা আসে।”
“পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জয়েন করতে। আর তো কয়টা দিন।”
“সমস্যা নেই ভাইকে বলেছি পরীক্ষার সময়টা ছাড় পাব। কিন্তু ইন্টার্নি ভাতা বন্ধ হয়ে গেলে আমার হাতে টাকাই থাকবে না। পোস্ট গ্রাজুয়েশনের ব্যাপারটা বাসায় সেভাবে কেউ বোঝে না।”
“আচ্ছা, বাদ দাও তুমি চাপ নিও না। একটু অপেক্ষা করো, আমি কাজ শেষে আসি।”
ঘরোয়া খাবারঘর এই ভর দুপুরে জমজমাট। অল্প টাকায় গরম গরম সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় বলে শিক্ষার্থীদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। রিদম যখন ভাতে মাছ মাখিয়ে অরণীর মুখে তুলে দেয়, কেন জানি অরণীর চোখজোড়া পানিতে ভিজে ওঠে। কান্নাটুকু গিলে নিয়ে রিদমকে বলে, “সারা দুনিয়ার সবকিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে চেয়েছি রিদম। প্লিজ কখনো বদলে যেও না, প্লিজ।”
End