স্বামীর_বিয়ে১৪
#সাখেরীন
রুহীনিঃ(এতোক্ষনে ভালো করে খেয়াল করে দেখি অভ্র নেই ওদের সাথে। চোখ বড় বড় হয়ে এলো)আচ্ছা অভ্র আসেনি আনভি ভাইয়া??
আনভিঃ( হেসে হেসে) আরে রুহী অভ্র কি আমার সাথে ছিলো নাকি যে ও আমার সাথে আসবে….?
রুহীনিঃ ওহ। তুমি বসো আমি কিচেন থেকে আসছি। ( এর মানে অভ্র আনভি ভাইয়ার সাথে ছিলো না। আনভি ভাইয়াকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চলে এলাম কিচেনে)
অভ্রঃ ইলাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি আবার ড্রাইভ করে বাসার দিকে রওনা হলাম।
রুহীনিঃ আনভি ভাইয়াকে চা নাস্তা দিলাম।
আনভিঃ সরি রুহী আমি খাবো না।
নূরঃরুহীনির হাত থেকে নিয়ে ভাব দেখিয়ে খেতে লাগলাম।
আনভিঃ এই জন্যই বলি এটা মোটা হয়েছে কি করে??
নূরঃচাটা মুখেই দিচ্ছিলাম আনভির এই কথা শুনে আর মুখে তুলতে পারলাম না । রেগে তাকিয়ে রইলাম আনভির দিকে।
আনভিঃহুহ
নূরঃ( এবার রাগ বেশিই উঠে গেলো । তাই আনভির চুল টেনে ধরলাম।।) কি বললি আমি মোটা হয়েছি???
আনভিঃতোকে বলছি তোর এতে জ্বলে কেনো?? আর আমাকে ছাড় বলছি…।
নূরঃ আনভিকে ছেড়ে দিয়ে এখন বল কাকে বলছিস??
আনভিঃতোকে…( বলেই দৌড়াতে লাগলাম)
নূরঃতোকে তো আজ ছাড়ছি না। দাড়া বলছি।
আনভিঃ হ আমাকে তোর বদল মনে হয়।
নূর আর আনভি পুরো বাড়ি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো।
ওদের এসব কান্ড দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
রুহীনিঃ যতই হাসি না কেনো অভ্রকে নিয়ে চিন্তা ঠিকই হচ্ছে।
অভ্রঃসবে মাএই বাসায় ডুকলাম আর ওমনি আনভি আমার পিছনে গিয়ে লুকালো।
রুহীনিঃ দেখলাম অভ্র আসছে।
আনভিঃ ভাই বাচঁা আমাকে পেত্নীর থেকে।
নূরঃ আনভি তুই আমাকে পেত্নী বললি?? আর অভ্র কি তোকে বাঁচাবে আর অভ্রেরও বিচার আছে।
অভ্রঃযা বাবা আমি আবার কি করলাম??
নিহালঃমাএ এনাউন্সমেন্ট হলো ফ্লাইটের। সিট বেল বেধে নিলাম। আমি সিঙ্গেল সিটেই বসেছি। তাই খুব ভালো ফিল হচ্ছে।
নূরঃতুই এতোক্ষণে কই ছিলি???
রুহীনিঃ ( নূরের সাথে তাল মিলিয়ে আমিও বললাম) হুম কই ছিলা তুমি?? আনভি ভাইয়াতো আমাদের বাসায়….।
অভ্রের এতোক্ষণে খেয়াল হলো আনভি তাদের বাসায়।
অভ্র রীতিমতো ঘামতে শুরু করলো।
অভ্র কি উওর দিবে বুঝেই উঠতে পারছে না কি বলবে সে….।
নূরঃকি হলো বল??
আনভিঃ( অভ্রের থেকে দূরে সরে) হুম বল কই ছিলি??
রুহীনিঃ বল কই ছিলা??
অভ্রের আরো ঘামতে লাগলো পা কাঁপতে লাগলো।
অভ্রের মাঃ হয়েছে হয়েছে আমার ছেলেকে তোরা আর জেরা করিস্ নাহ।
অভ্রঃউফফ আমার মা টা বাচিঁয়ে দিলো। মা টা কতো ভালো।( মনে মনে)
অভ্রের মাঃযা ফ্রেশ হয়ে আয়।
অভ্রঃআচ্ছা মা।
রুহীনিঃআমিও অভ্রের সাথে সাথে গেলাম রুমে।
অভ্র রুহীনিকে কথার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
রুহীনিঃ এটা কি হলো??আলমারি থেকে অভ্রে শার্ট বের করে বেডে রাখলাম।তারপর বারান্দায় চলে গেলাম।
অভ্রঃ(ওয়াশরুম থেকে এসে দেখি বেডে শার্ট রাখা। তাই মুচকি এক চিলতি হাসি ফুটলো। ) রুহীনি রুহীনি….।
রুহীনিঃ( বারান্দায় থেকে এসে) কি হয়েছে??
অভ্রঃতুমি বারান্দায় ছিলা??
রুহীনিঃ আমিতো বারান্দায় ছিলাম। তুমি কোথায় ছিলা??
অভ্রঃবলেই তো গেছি এক ফ্রেন্ড প্রবলেমে পরেছে তার হেল্প করতে।
রুহীনিঃ ( অভ্রের শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে) আনভি ভাইয়া তো আমাদের বাসায় তুমি কোন ফ্রেন্ডের হেল্প করতে গেছো??
অভ্রঃরুহীনি সবাই কি জানে তুমি কানে কম শুনো??( মজা করে কথা ঘোরানোর চেষ্টা)
রুহীনিঃ মানে??
অভ্রঃ তো নয়তো কি?? আমি আনভি বলিনি সানভি বলছি।
রুহীনিঃ ওহ। ( অভ্রকে শার্ট পরানো শেষ তাই চলে আসছিলাম)
অভ্রঃ( রুহীনি চলে যাচ্ছিলো তাই ওর হাতটা টান দিয়ে নিজের বুকে সাথে মিশিয়ে নিলাম) কি হলো?? চলে যাচ্ছো যে??
রুহীনিঃ ( অভ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম) শার্ট পরানো শেষ আর নিচে সবাই ওয়েট করছে তাই নিচে যাচ্ছি। ( বলেই কয়েক পা বাড়ালাম নিচে যাওয়ার জন্য)
অভ্রঃ সন্দেহ করছো মনে হয় আমায়??
রুহীনিঃ অভ্রের কথা থেমে গেলাম। পিছনে একবার অভ্রের দিকে চেয়ে নিচে চলে গেলাম।
অভ্রও রুহীনির পিছনে পিছনে নিচে গেলো।
রুহীনি রুমে থাকতেই অভ্রকে বলে দিয়ে ছিলো রাতের ডিনারটা সবাই বাহিরে করবে এতে অভ্র খুশি হলো।
নিচে নেমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। অভ্র বারবার রুহীনির দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু রুহীনি একবারও তাকাচ্ছে না।
রুহীনি সব সময় অভ্রের পাশে বসে কিন্তু আড্ডা দেওয়ার সাথে নূর আর আনভির মাঝে বসেছিলো।
রাত আটটার দিকে সবাই রেডি হয়ে রেস্টুরেন্টে যাবার জন্য রওনা হলো।
আজ আর অভ্র ড্রাইভ করেনি রুহীনির সাথে পিছনেই বসেছে। মোট দুইটা গাড়ি নিয়ে রওনা হলো।
অভ্রঃ রুহীনির হাত চেপে ধরলাম।
রুহীনিঃ অভ্র হাতটা ধরায় খুব বিরক্তি লাগছে তাই ছাড়িয়ে নিলাম।
অভ্র মুখটা কালো হয়ে এলো।
অভ্রঃরুহীনির এমন ব্যাবহার আমাকে খুব ভাবাচ্ছে……!
রুহীনিঃ দেখলাম অভ্র মুখটা কালো হয়ে আছে… দেখেয়েও না দেখার ভান করে বসে রইলাম।
প্রায় নয়টার পর পৌঁছে গেলাম রেস্টুরেন্টে।
রুহীনিঃ অভ্র ভেবেছিল আমি তার পাশে বসবো। কিন্তু আমি বসিনি মার সাথে গিয়ে বসলাম।
অভ্রঃআমি ভেবেছিলাম ও আমার পাশে বসবে কিন্তু বসলো না। তাহলে কি রুহীনি আমাকে সন্দেহের চোখে দেখছে??
অভ্র এই ভেবেই তেমন কিছুই খায়নি। রুহীনিও তেমন কিছুই খায়নি। বাকি সবাই খেয়েছে ঠিকই।
রেস্টুরেন্টেও নূর
আর আনভি ঝগড়া শুরে করে দিয়েছিলো। এটা নিয়ে মমসি অনেক বকা দিলো।
রেস্টুরেন্টে থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় ১২ টার ওপরে বেজে উঠলো।
সবাই খুব ক্লান্ত তাই যে যার রুমে চলে গেলো।
আনভি নিজেদের বাসায় চলে গেলো।
রুহীনিঃঅভ্রকে কথার সুযোগ না দিয়েওয়াশরুমে চলে এলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
অভ্রঃ রুহীনি আমার সাথে কথা বলছে না কেনো??
অভ্র রুহীনির জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।
অন্যদিকে রুহীনি কান্না করতে লাগলো। কান্না শেষে লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হলো।
রুহীনিঃ দেখলাম অভ্র ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ভিতরে অভ্রের চেহারাটা নিষ্পাপ লাগছে।
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বারান্দায় চলে এলাম।
কিছু কিছু সম্পর্ক মাঝেমধ্যে এমন
পর্যায়ে পৌছে যায় যে দুজনেই কথার
অভাবে ভুগে। যেখানে একসময় দুজনের
রাত দিনের সমস্ত গল্প হতো সেটাও
একসময় আর বলা হয়না… বলা হয়না, ‘আজ
বৃষ্টিতে ভিজে কাক হয়েছি’ টাইপ
কথাবার্তা কিংবা কারো বিবৃতিমূলক
বাক্যের প্রতিউত্তরে ওপাশ থেকে
কেউ কোন প্রশ্ন করেনা…
কখনো কারো গল্প শুনে অস্ফুটস্বরে
মুখদিয়ে হয়তো বেরিয়ে আসে একটা শব্দ
“ও…” ।
তারপর দায়িত্বপালনের মতো কিংবা
সৌজন্যবোধের মতো সম্পর্কগুলো আটকে
যায় কেমন আছো থেকে ভালো আছি’র
মধ্যে। ভুল করেও দুজনের কারো কখনো
জানা হয়না, ‘কেমন আছো’ যে
জিজ্ঞেস করে সে ভালো নেই কেন?
কিংবা যে ‘ভালো আছি’ উত্তর দেয়
সেও ভালো নেই কেন!
কেউ কাউকে পাল্টা প্রশ্ন করেনা,
“আসলেই ভালো আছো?” … কারণ
উত্তরটা জানা, সত্যি উত্তরটা কেউ
দেবেনা, দিতে চায় না! দুজনেই
দুজনকে “কেমন আছো” প্রশ্নটা করে
“ভালো আছি” উত্তরটা শোনার জন্যই
হয়তো!
তারপর তারা দুজনেই আস্তে আস্তে
অভ্যস্ত হয় সম্পর্কে… আর “কিছু মানুষ
ভালোবাসে, কিছু মানুষ সম্পর্কে অভ্যস্থ
হয়… ” কথাটাকে ভীষণভাবে সত্যি করে
তোলে!
রহীনিঃদোলনায় বসে আছি আর রাতে আকাশ তারা গুলো গুনার বিথ্যা চেষ্টা করছি।
অভ্রঃরুহীনির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে নেই ওয়াশরুমে গিয়ে দেখি রুহীনি নেই। তাই বারান্দায় আসলাম।চাঁদের আলোতে রুহীনির মায়াবী মুখখানা দেখা যাচ্ছে।
রুহীনির পাশে গিয়ে বসলাম।
রুহীনিঃচোখ অফ করে ছিলাম। অভ্রের শরীরের স্মেল আমার নাকে এসেছে এতেই বুঝে গেলাম আমার পাশে অভ্র বসা।
অভ্র আর রুহীনি দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো।
রুহীনিঃ( নিরবতা ভেঙ্গে) মেয়েটা কে অভ্র????
চলবে…
[কোন এক কারনে গল্প টা একদিন পর পর দিবো। আর হ্যা গল্প জলদিই শেষ করে দিবো।( ইনশাআল্লাহ) ]