স্বামী
পর্ব-২২
#Nirzana(Tanima_Anam)
-অনু যদি তোমাকে তোমার স্বামী বা প্রাক্তনের মধ্যে যেকোনো একজনকে বাছতে হয় তুমি কাকে বাছবে??
-মানে?
-হয় সায়ন নয় আমাকে দুজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে তোমায় বাছতে হবে অনু আর অপর জনকে সারা জীবনের মতো ভূলে যেতে হবে !!!
মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো নির্ঝর।তারপর ফোনটা অনুর দিকে ছুড়ে মেরে উঠে গেল।।।
অনু চোখ বড় বড় করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।।
নির্ঝরের এমন ব্যবহারের কোনো মানেই খুজে পাচ্ছে না অনু।লোকটা তো একটু আগেই ভালো ছিলো।ঠিক ভাল বলা যায় না বলা যায় বেশ রোমান্টিক মুডে ছিলো।
অনুকে কোলে করে ছাদে নিয়ে এলো।ঠিক তার পর পর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসলো তারপর হুট করে কি হলো কে জানে….
“আচ্ছা মি.চৌধূরী কি এই কথাগুলো বলবে বলেই আমাকে ছাদে আনলো?
কি জানি বাবা লোকটার মতিগতি বোঝা বড় দায় এই রোদ্দুর তো এই মেঘলা আকাশ।যেমন ওনার মনের আকাশে মেঘ জমতেও সময় লাগে না তেমন মেঘ সরে যেতেও সময় লাগে না”
অনু মনে মনে কথাগুলো বলে একাই হেসে ওঠে।তারপর সিড়ি বেয়ে গুটি গুটি পায়ে নির্ঝরের কাছে যায়।
অনু ঘরে এসে দেখে নির্ঝর দু হাতে মুখ ঢেকে বসে আসে।
অনু ধীর পায়ে নির্ঝরের কাছে এসে নির্ঝরের গা ঘেষে বসে পড়ে
-আপনার কি কিছু হয়েছে মি.চৌধূরী??
-(…)
-কি হলো বলুন না!!
-(….)
-উফ্ফ
নির্ঝর অনুর দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করে
-আনিকা আপুর বেবি সওয়ারে তো সায়নের আসার কথা ছিলো না তুমিই সায়নকে ওখানে ডেকেছিলে তাই না??
নির্ঝরের এমন প্রশ্নে অনু বোকার মতো তাকিয়ে আছে।নির্ঝর অনুর থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বসে।অনু এক দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে
নির্ঝর নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করে
-কেন ডেকেছিলে সায়নকে??চলে যেতে চেয়েছিলে বুঝি??
-কি??আমি….আমি ডাকি…
-আচ্ছা তুমি সায়নকে এতোটাই ভালোবাসো যে আমার এতো ভালোবাসা তোমার চোখেই পড়ে না??
-আমি সায়নকে ডাকি নি!!
-তাই বুঝি???
-হ্যা আর….
-আর এতো দিনপর এক্স বফকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারো নি তাই না!! সোজা গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পরলে????
-মানে….
নির্ঝর বসা থেকে উঠে গিয়ে ফোনে মেসেন্জার লগ ইন করে অনুর সামনে ফোনটা ছুড়ে মারে।
-দেখো
অনু ফোনটা হাতে তুলতেই চমকে যায়।
এগুলো তো ছবি সায়ন আর অনুর ছবি।সব কটা ছবিতে সায়ন অনু বেশ কাছাকাছি ছিলো।
একটা ছবিতে অনুকে সায়ন জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আরো বেশ কিছু মুহূর্তের ছবি!!
-মি.চৌধূরী এই ছবিগুলো আজকে সন্ধ্যের আমি আপনাকে বলছি সব কিছু…আজকে হটাৎ করেই
অনুকে থামিয়ে দিয়ে..
-থাক আমি তোমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা চাইবো না।জানোতো অনু দুইটা জিনিস ব্যাখ্যাহীন হয় এক ভালোবাসা আর এক প্রতারনা।তবে তুমি ভেবো না আমি তোমায় প্রতারক বলছি।তুমি কিছু ভুল করো নি ভুল তো আমি করেছি কি ভূল করেছি জানো??
-(…)
-তোমার জোড় করে বিয়ে করে।তোমায় ভালোবাসার জন্য জোড় করে।আমি জানি তুমি আমাকে বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলে কিন্তু….আমি অন্ধ ছিলাম তোমায় ভালোবেসে।সব ভুল আমার!!আমি হয়তো তোমায় ভালো রাখতে পারি নি তাই তো তুমি
থাক সেসব কথা তুমি যদি চাও সায়নের কাছে চলে যেতে পারো আমি বাঁধা দেবো না। সত্যি তো জোড় করে ভালোবাসা হয় না!!
কথাগুলো বলেই নির্ঝর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।অনু সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।নির্ঝরের কথাগুলো অনুর বুকে গিয়ে বিঁধছিলো।
ছবিগুলোর যেমন ব্যাখ্যা নির্ঝর সাজিয়েছে তেমন কিছুই তো ঘটেনি।
” তখন সায়নই তো হুট করে কোথা থেকে চলে এলো,সায়নই তো বার বার কাছে আসছিলো।সায়নই তো জোড় করছিলো তার সাথে যাবার জন্য আমি গেছি!! যাই নি তো,যাওয়ার হলে তো কোবেই চলেলে যেতাম আবার কি আপনার বাড়িতে থাকতাম না কি ফিরে আসতাম”
অনু ফোপাতে ফোপাতে তোতা পাখির মতো একা একা বুলি গুলো আওরাচ্ছে তবে সেগুলো শোনার জন্য নির্ঝর নেই।।।
সে তো কখন রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে!!
আকাশটাতে একটু একটু করে মেঘ জমতে শুরু করেছে।একটু আগের সেই ঝলমলে চাঁদটা মেঘের আড়ালে ঢাকা পরেছে।একটু পরই বৃষ্টির দু এক ফোটা পড়তে শুরু করে।এদিকে অনুর গাল বেয়েও নোনা জ্বলের বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিছু সম্পর্ক বড্ড জটিল হয়।সম্পর্কগুলোর মাড় প্যাচ বোঝা কঠিন।সম্পর্কের ভিত্তিগুলোও বড্ড নড়বড়ে।সেখানে পাহাড় সমান ভালোবাসার থাকলেও সেই পাহাড়ের ভিত্তি গড়া নরম কাঁদা মাটি দিয়ে।কখন যে সব ধসে পড়বে কে জানে, য়েমন আমাদের সম্পর্কটা….।।এখানে ভালোবাসা থাকলেও সেই ভালোবাসা ঘিরে কোনো সুখ নেই।।আসলে সম্পর্কের মাঝে জটিলতা রাখতে নেই!!
অনু কথাগুলো ভাবছিলো আর তার দুচোখ বেয়ে পানি পরছে!!
“এক সায়ন যে কি না হুট হাট করেই জীবনের মাঝ রাস্তায় এসে একা দড় করিয়ে চলে গিয়েছিলো।চলে গিয়েছিলো না কি পালিয়ে গিয়েছিলো কে জানে।সেই মাঝ রাস্তায় একা আমি হুট করেই কেউ একজন হাতটা টেনে ধরলো।সেই একজন হলো নির্ঝর।আর এতোদিন পর সায়ন আবার ফিরে এসেছে সব কিছু এলোমেলো করে দিতে!!
কিন্তু ঐ ছবিগুলো কে পাঠালো??
সায়ন??না কি অন্য কেউ??কেন পাঠালো?? কি চায় সে??”
কথাগুলো অনুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর ভীষন কান্না পাচ্ছে।বৃষ্টির সাথে প্রতিযোগিতা করে সমান তালে অনুর চোখ বেয়ে নোনা জলের বন্যা বইছে।
“সত্যিই মায়া জিনিসটা কেমন স্বার্থপর।একবার হৃদয়ে গেথে গেলে ঠিক ভুল বন্ধু শত্রু কিছু মানে না শুধু নিজের কথা ভাবে আর রাত দিন তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।সত্যিই মায়া যে বড্ড স্বার্থপর”
অনু ঘরে এসে ফোনটা হাতে তুলে নেই…
নির্ঝরকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু নির্ঝর ফোন তুলছে না।বার দুয়েক ফোন দিওয়ার পর তৃতীয়বারের বেলায় নির্ঝরের ফোনটা সুইচট ওফ বলে!!
অনু কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরে।
আজকে নির্ঝরের জন্য বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে। নির্ঝরের কথাগুলো বিষের মতো শুনাচ্ছিলো।
এটা কি ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু!!
বেশ কিছুক্ষন পর বাড়ির কলিং বেলটা বেজে ওঠে অনু ছুট লাগায় দরজা খুলতে…!!
হয়তো নির্ঝর এসেছে….
দরজা খুলতেই অনু অবাক সিমি নির্ঝরকে ধরে রেখেছে আর নির্ঝর কেমন টলমল করছে।দুজনেই ভিজে একাকার।
অনু গিয়ে নির্ঝরকে ধরতে গেলেই সিমি থামিয়ে দেয়
-তোমাকে ধরতে হবে না আমি পারবো তুমি দরজাটা বন্ধ করে দাও!!না আসলে নিরতো ভীজে গেছে ওকে ধরলে তুমিও ভিজে যাবে তাই বললাম আর কি!!
-হুম্ম…(ভ্রু কুচকে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে)
অনু দ্রুত গিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে নির্ঝরকে ধরে।
ঘরে নিয়ে গিয়ে নির্ঝরকে বসিয়ে দেয়।নির্ঝরের হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে।
-আচ্ছা অনু তোমাদের মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে??
-জ্বি মানে!!
-বুঝতে পেরেছি।জানো তো নিরের ছেলেবেলার স্বভাব যখন ও রেগে যায় তখন কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রাস্তায় হাটতে থাকে।ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, দিন, রাত কিছুই মানে না।আগে তো আমার সাথে ঝগড়া হলেই…দিন কি রাত কি বেরিয়ে যেতো!!
অনু কৌতুহলী দষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে
-অনু তুমি বরং নিরের কাছে বসো আমি চেন্জ করেই আসছি…
অনু নির্ঝরের কাছে গিয়ে নির্ঝরকে ধরতেই
-লাগবে না
-চলুন চেন্জ করে নিবেন
নির্ঝর উঠে দাড়াতেই টলমল করছে…অনু ধরতে গেলেই
-বললাম তো ধরতে হবে না পারবো!!
-এতো ক্ষন জাস্ট ফ্রেন্ড ধরেছিলো তখন তো এতো সমস্যা হয় নি যতো সমস্যা আমি ধরলেই নাকি।।
-???
(কথাগুলো বেশ জোড় দিয়ে বললো অনু)
অনু গিয়ে নির্ঝরকে ধরে ওয়াশরুৃমে নিয়ে গিয়ে চেন্জ করিয়ে শুয়ে দিলো।
নির্ঝরের জ্বর আসছে গা কাপিয়ে জ্বর আসছে।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
একটু একটু জ্বর বেরেই চলেছে
অনু কি করবে বুঝতে পারছে না।উঠে গিয়ে নির্ঝরের মাথায় পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দেয়।বার বার মাথায় ভেজা কাপড় দিয়ে মিছিয়ে দিচ্ছে…
-অনু তুমি সায়নের কাছে চলে যাও!!
হটাৎ সিমির কথায় অনু একরকম চমকে যায়।
-জ্বি মানে??
-ভাবছো সায়নের কথা কি করে জানলাম??
-হু
-তুমি আমায় চিন্তে পারো নি আমি সায়নের বন্ধু সৌমিতা।তোমার সাথে তো বার কয়েক ভিডিও কলে কথা হয়েছিলো মনে নেই
-হুম।
-অনু তুমি শুধু শুধু নির্ঝরকে কষ্ট দিচ্ছো।ওকে এভাবে ঠকিয়ো না সায়ন যেমন তোমায় ভালোবাসে নির্ঝরও তোমায় ভালোবাসে।আর তুমি তো সায়নকে ভালোবাসো তাহল শুধু শুধু নির্ঝরের জীবনে থেকে ওকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো কেন??
-আমি সায়নকে ভালো
-ভালোবাসো তাই তো।বেশ তুমি চলে যাও আমি নিরকে বোঝাবো শুধু শুধু এভাবে চারটে জীবন নষ্ট করো না!!
-চারটে
-হুম্ম সায়নের বিয়ের কথা হচ্ছে।কিন্তু বলেছে তোমাকে ছাড়া কাউকে জীবনে জায়গা দিবে না অনু তুমি ভেবে দেখো কি করবে!!আমার মনে হয়!!
ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও..
সিমি কথাগুলো বলেই চলে যায়….
অনু ধীর পায়ে নির্ঝরের কাছে চলে যায়। জ্বরটা বোধয় বেরেছে।অনু নির্ঝরের কপালে হাত দিতেই নির্ঝর হাতটা সরিয়ে নেয়।
-চলেই যখন যাবে তখন শুধু শুধু মায়া বারাচ্ছো কেন??তোমার মায়া আমায় বড্ড পোড়াবে।যে মায়ার বাধন রাখতে পরবে না সে বাধনে জড়িও না আমায়!!!
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
নির্ঝর চোখ বন্ধকরেই কথাগুলো বলে।অনুর হাত এখনো নির্ঝরের হাতের মধ্যে।নির্ঝর নিজের হাতটা আলগা করতেই অনু আরেক হাত দিয়ে নির্ঝরের হাতটা শক্ত করে ধরে।
নির্ঝর কি বুঝলো কে জানে সেও অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে নেয়।
তাদের এইটুকু মুহূর্ত জানান দিচ্ছে এই সম্পর্ক বৈধ সম্পর্ক এই বন্ধন বৈধ ভালোবাসার বন্ধন এই সম্পর্ক ভাঙ্গা এতো সহজ নয়।
হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেজে উঠে
অনু দেখে আননোন নাম্বার।
অনু ফোনটা কানে ধরতেই
অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে….
চলবে…..
(কেমন হলো জানাবেন)