স্বামী পর্ব-২৬

0
4317

স্বামী
পর্ব-২৬
#Nirzana(Tanima_Anam)

-সায়ন তুমি নীরাকে বিয়ে করে নাও
-কি বলছো এসব??
-ঠিকই বলছি।আমাকে ভুলে যাও আর নীরাকে বিয়ে করে নাও নীরা যে তোমায় খুব ভালোবাসে।
-অনু প্লিজ ফিরে এসো!!
-সব দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকে না।
-তোমার জন্য আমার মনের দরজা সব সময় খোলা অনু।
-জানো তো সায়ন যে পথ আমার নয় সে পথে বার বার গিয়ে ফিরে আসতে হয়।সায়ন তোমার আর আমার পথ আলাদা হয়ে গেছে অবশ্য আমাদের পথ এক ছিলোই বা কবে যে নতুন করে আলাদা হবে।যা হয়েছে ভুলে যাও ভুলে যাও অনু নামের কেউ ছিলো তোমার জীবনে।
-শুধু শুধু নির্ঝরের ভুলের শাস্তি আমাকে দিচ্ছো কেন??
-ভুল যে নির্ঝর একা করেছে তা তো নয় ভুল আমি ও করেছি বার বার করেছি।ভুল করে ঠকেছি।বার বার ঠকেছি!
যাই হোক ভালো থেকো।আর নীরাকে ভালো রেখো
-অনু
-বিয়েটা করে নাও
-অ….
-টুট টুট টুট….

বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনু শুধু একবার সায়নকে ফোন করে কথাগুলো বলে ফোন অফ করে দেয়।
সায়ন বার কয়েক অনুকে ফোন করলেও লাইন পায় নি।ফোনটা সুইচট অফ বলছে।।।

এখন পর্যন্ত অনুর কোনো খবর নেই।নির্ঝর সারা রাত অনুকে খুজেও কোথাও পায় না।

অনু বাবার কাছে যায় নি।নির্ঝর খবর নিয়েছিলো কিন্তু অনুর বাবার বাড়ির কেউ জানে না অনু কোথায়।নির্ঝর অনেক খোজা খুজি করে ভোরের দিকে বাড়ি চলে আসে।

নির্ঝর ঢুলু ঢুলু চোখে ক্লান্ত শরীরে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখে অন্ধকারে কেউ একজন সোফায় উল্টো দিকে ফিরে বসে আছে।
নির্ঝর হালকা আলো আধারে পেছন ফিরে থাকা মেয়েটাকে দেখছে।সেই হালকা গোলাপি কালারের শাড়িটা নির্ঝর স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে।কাল রাতেও অনু এই শাড়িটাই পড়ে ছিলো।

-অনু??
-(…)

নির্ঝর একছুটে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অনুর ঘারে মুখ গুজে বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে।এতোক্ষন পর যেন নির্ঝরের বুকের খাচায় প্রান ফিরে এলো।

অনুকে শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে..

-কোই গিয়েছিলে??এভাবে কেউ হুট হাট করে চলে যায়?জানো কতো চিন্তা হচ্ছিলো!!তুমি কেন বঝোনা আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি??
-(…)
-কি হলো চুপ করে আছে কেন??
-(..)
-অনু…

নির্ঝর অনুকে এপাশ ফেরাতেই দেখে।এতো অনু নয়।
-সিমি???

সিমি অনুর সেই হালকা গোলাপী রঙ্গের শাড়িটা পরেছে।অনুর মতো করে হাত খোপা করে পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে। খোপায় সদ্য মালা করা বেলী ফুল পরেছে।

নির্ঝর সিমিকে দেখে দূরে সরিয়ে দেয়।সিমি আবার নির্ঝকে কাছে টেনে নেয়।
-নির দেখো আমি শাড়ি পরেছি এই রংটা তোমার অনেক পছন্দের তাই না!!আমি জানি….দেখো নির আমাকে অনুর মতো লাগছে তাই না….এবার আমায় ভালোবাসো!!

কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
নির্ঝর সিমিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
-তোর মাথা কি আবার খারাপ হলো?
-নীর দেখ না আমাকে অনুর মতো লাগছে তো?তাহলে আমাকে অনুর মতো ভালোবাস না প্লিজ।দেখ ধরে নে না আমিই অনু
-সিমি??? ছাড় আমায়
-নির প্লিজ একটু ভালোবাস না প্লিজ একটু
কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গিয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে।

-সিমি প্লিজ ছাড়
-এই নির এই একটু ভালোবাসলে কি হয় বল না??কেন এমন করিস আমার সাথে? আমি ভুল করেছি নির প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে
-সিমি সব কিছুর একটা সীমা আছে।আমার সহ্যেরও একটা সীমা আছে প্লিজ!
-নির কেন করিস এমন হুম্ম।কার জন্য করিস তোর বউ তো তার পুরানো প্রেমিকের সাথে ভেগেছে একটিবার ও তো তোর কথা ভাবে নি।তোকে কাঁচ কলা দেখিয়ে পালিয়েছে।শুধু শুধু কেন আমার সাথে এমন করছিস ভুলে যা না।অনু সুখে বাঁচার জন্য সায়নকে বেছে নিয়েছে তুই ও আমাকে নিয়ে নে না তোর করে। প্লিজ একটু ভালোবাস না আমাকে..আমাকে ভালোবেসে তোর করে নে।
ঐ চরিত্রহীন মেয়ের জন্য আর কতো কষ্ট দিবি আমাকে…???(চেঁচিয়ে)

নির্ঝর সিমিকে সরিয়ে দিয়ে ঠাটিয়ে থাপ্পর মেরে দেয়।সিমি ছিটকে গিয়ে সোফায় বসে পরে।

-আর একবার অনুর নামে কোনো বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
কি ভেবেছিস তুই বার বার আমার সামনে অনুকে খারাপ প্রমান করলেই অনু খারাপ হয়ে যাবে।সেদিন তুই সায়নকে সপিং মলে ডেকে অনুর নাম দিয়েছিলি তোর জন্যই আমি সেদিন অনুকে….
ছি…মেয়েটা কষ্টে ছটপট করেছে বেল্টের আঘাতে রক্তাত্ত হয়েছে তবে মুখ দিয়েয়ে টু শব্দ করে নি।

কথাগুলো বলেই নির্ঝর দেয়ালে ঘুষ মারে….

তুই সেদিন আনিকা আপু বেবি সওয়ারে সায়নকে ডেকেছিলি।ভেবেছিলো অনু আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!!
সায়ন সেদিন অনুকে জোড় করেছিলো সায়নের সাথে যাবার জন্য কিন্তু অনু যায় নি।কারণ কি জানিস? অনু আমাকে ভালোবেসেছে।তবে সেদিন তুই আড়াল থেকে ছবি তুলেছিলিস আরর আমাকে পাঠিয়েছিলিস যাতে আমি অনুকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিই।
-মা….মানে কি বলছিস এসব?
-বুঝতে পারছিস না তাই না…(সিমির দুই হাত ধরে ঝাকিয়ে)
আমি ঐ ছবিগুলো দেখে অনুকে হয়তো ভূলই বুঝতাম। বুঝতাম কেন তুইই তো আমাকে যা বুঝিয়েছিলিস তাই বুঝে অনুকে….
যাই হোক….থ্যাকস্ টু আল্লাহ সেদিন সঠিক সময় আনিকা আপু আমাকে বলে দিয়েছিলো অনু আর সায়নের মাঝে কি কি কথা হয়েছিলো!!
-নির প্লিজ আমি তোকে খুব ভালোবাসি!!
সিমিকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে
-তোর অনেক কিছু পাও না আছে সৌমিতা খান আমার থেকে অনুর থেকে সব হিসেব মিলিয়ে দিয়ে তারপর তোর ছুটি
-নির

নির্ঝর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

একটা ঘর তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন সে ঘরে ভালোবাসা থাকে।আর সেই ভালোবাসা যত্ন করে সাজিয়ে রাখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।সেই মানুষগুলো যখন থাকে না তখন না থাকে ভালোবাসা না থাকে ভালোলাগা।ভালোবাসা ছাড়া সব কিছুই কেমন অগোছালো ছন্নছাড়া।মায়াহীন…..

নির্ঝর খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।
মাথা ভর্তি চিন্তা।অনু কোথায় কেমন আছে সে??অনুও কি তবে হারিয়ে গেলো???
আচ্ছা আমার কপাল এমন কেন?একটু তো ভালোবাসাই চেয়েছি বেশি কিছু তো চাই নি!!
অনু কি সায়নের কাছে গেছে??
অসম্ভব…

নির্ঝর কি মনে করে সায়ন কে ফোন দেয়…
-হ্যালো সায়ন?
-হু
-অনু কোই?অনু কি তোর সাথে??
-লিসেন মি.নির্ঝর চৌধূরী আমার অনুর যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়বো না!!
-টুট…টুট….টুট

সায়ন হুট করে ফোন রেখে দেয়।অনু কোই সেটা সায়ন জানে না।
নির্ঝর দুঃখের মুখে হেসে দেয়

“আমি ও না কতো বোকা বার বার তোমায় অবিশ্বাস করি।আজ ও করলাম।অনু তুমি কোই??একটিবার ফিরবা প্লিজ শুধু একবার ছরি বলবো”

নির্ঝরের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে…
বুকের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে।অনুকে ফিরে পাবো তো??

চলবে…..

(ছোট করে দেওয়ার জন্য সরি।কালকে এক সাথে দুই পার্ট দিবো ইনশাল্লাহ্)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here