স্বামী
পর্ব-৫
#Nirzana(Tanima_Anam)
নির্ঝর বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট ধরাচ্ছে।
অনু কাথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
নির্ঝরের পাশেই ছাই হয়ে পরে রয়েছে সায়ন আর অনুর চিঠিগুলো।।
তাদের মাঝের লিপিবদ্ধ কিছু ভালোবাসা!!!
অনু কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে হুস নেই।
মেয়েটা বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলো।কিন্তু নির্ঝরের চোখে ঘুম নেই।
ভালোবাসা নামক আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে নির্ঝরের হৃদয়!!!
সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই অনু ধরফরিয়ে ওঠে যায়।
বোধয় অনেক বেলা হয়ে গেছে।যা আজকে আর নামাজটাই আর হলো না।
বিছানার এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে নির্ঝর নেই।
কোনো রকমে ওড়না জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সে।
গোসল শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরের এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছিলো অনু।
নির্ঝরের ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড় বেলা পর্যন্ত সব ছবি দেয়ালে লাগানো।
কতো হাস্যজ্জল ছেলে অথচ অনুর সামনে এলেই যেন পৃথিবীর সকল গভীরতা ভর করে এই ছেলের মাঝে।।
“আচ্ছা সায়নও কি বিয়ের পর বদলে যেত।বিয়ের পর নাকি প্রেমিক প্রেমিক থাকে না স্বামীতে পরিবর্তন হয়।পরিবর্তন হয় তাদের আচরণের”
অনুর এই প্রশ্ন নিয়ে একবার সায়নের সাথে অনুর বেশ দ্বন্দ বেধে যায়।।।
সেবার অনু আর সায়নের প্রেমের তৃতীয় বছর চলছে।
তখন মোটামোটি দুই পরিবারের সবাই সায়ন-অনুর সম্পর্কের ব্যপারে জানে।তাদের সম্পর্কে দুই পরিবারের কারোর ই কোনো অমত ছিলো।।
রিতীমতো তাদের সম্পর্ক বিয়ে অব্দি পৌছে গিয়েছিলো।।দুই পরিবারের কথা বার্তাও হয়ে গিয়েছে।
সায়নে পরিক্ষা শেষ হলেই অনুকে ঘরে তুলবে সায়নের বউ করে!!
সায়ন তখন সিলেটে।ইন্জিনিয়ারিং থাির্ড সেমিস্টারে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিধায় অনুর সাথে কথা খুব কম হয়।
সায়ন বরাবরই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগি।।
একদিন মাঝরাতে অনু ফোনের পর ফোন করে সায়নকে….
সায়ন তখন মনোযোগ দিয়ে অংক কষছিলো।
এতো রাতে অনুর ফোনে বেশ বিরক্ত সে…..তবুও প্রিয়তমার ফোন বলে কথা!!
সায়ন ফোনটা কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে কোনো কথা নেই শুধু কান্নার আওয়াজ
অনুর কান্না শুনে সায়নের বুকটা ধক করে ওঠে।
কি জানি কি হলো!!
-অনু পাখি কি হয়েছে??
-????
-বলবে তো কি হয়েছে এমন কাঁদছো কেন??
কাঁদতে কাদতে অনু হেচকি তুলে ফেলেছে।
-বলবে তো কি হয়েছে???
-তুমি বদলে গেছো সান।আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না। বিয়ে হয়ে গেলে আরও ভালোবাসবে না তখন তুমি আমাকে ভুলেই যাবে।।
-কিহ্
-হুম্ম।তুমি এখুনি আর আমায় ভালোবাসো না বিয়ের পর কি করবে শুনি???
-কে বলেছে এগুলো??
-ভাবি বলেছে
-মানে কি এগুলোর??
-মানে বিয়ে করলে প্রেমিক আর প্রেমিক থাকে না বর হয়ে যায় তখন তুমিও আমার বর হয়ে যাবে।
-হুম্ম তো
-তখন তুমি আর আমায় ভালোবাসবে না!
-কেন বাসবো না
-কারন বিয়ে হয়ে গেলে নাকি মানুষ বদলে যায়।
এই যে দেখো সবে তো বিয়ের কথা হয়েছে তাতেই তুমি কেমন বদলে গেছো
সায়ন মুচকি হেসে অনুকে জবাব দেয়
-সব সম্পর্কে একটা আলাদা নাম আছে আলাদা টান আছে।যখন সম্পর্ক প্রেমের থাকে তখন তাতে নানা রকম বাধ্য বাধকতা থাকে আর থাকে হারানোর ভয়।আর বিয়ে হয়ে গেলে সম্পর্কের নাম পরিবর্তন হয়।পরিবর্তন হয় সেই বাধ্য বাধকতা গুলো।।।তবে ভালোবাসার ধরনেরও পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিমাণের কোনো পরিবর্তন হয় না বরং ভালোবাসা বেড়ে যায়।।
-ওওও তার মানে তুমি বদলাবে না??
-একদমই না
-তাহলে ঠিক আছে!!!
-অনু
-হুম্ম
-না কিছু না
-বলেই ফেলো
-কিছু কথা না হয় জমিয়ে রাখলাম।যখন আমাদের টোনাটুনির সংসার হবে তখন শুনাবো
-কখন??
-কোনো এক নিঝুম রাতে আকাশে পূর্ণ চন্দ্র থাকবে আর আমার বুকে তুমি!!!
-তাই??
-হুম্ম।আমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলে তুমি
আমি তোমাতেই আবদ্ধ থাকতে চাই
তোমাতেই করতে চাই বসবাস
অনু চুপ করে সায়নের কথাগুলো শুনছিলো
-অনু ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে
অনু দুম করে ফোনের লাইন কেঁটে দেয়।এই ছেলে একেবারে উচ্চ শ্রেনীর আনরোমান্টিক!!
রোমান্টিকতার কিছুই বোঝে না!!
অনু গাল ফুলিয়ে শুয়ে পড়ে।
তার চোকে এখন নতুম স্বপ্ন। আর মাত্র কয়দিন পর তার আর সায়নের আকদ!!
এতো শত স্বপ্ন নিয়ে অনু ঘুমিয়ে যায় সে রাতে…..
অতীতের কথাগুলো ভাবতেই অনুর চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে।
“কোথায় সায়নের দেখানো স্বপ্ন কোথায় সায়নের সেই টোনাটুনির সংসার”
সব তো সে নিয়ে গেল???
অনু দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো হটাৎই কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাসে অনুর হুস ফিরে। অনু কারেন্ট শক খাওয়ার মতো দূরে ছিলটকে পড়ে…..
নির্ঝর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে…..
অনু ছলছল চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আপনি কেন বোঝেন না আমি আপনাকে চাই না।আপনার প্রত্যেকটা স্পর্শ আমার কাছে বিষের মতো!!
নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে উওর দেয়
-সে তুমি চাও বা না চাও তুমি আমার শুধুই আমার!!
নির্ঝর হন হন করে ঘরে থেকে বিরিয়ে যায়। অনু চোখ মুখ মুছে নিচে নামে।
রান্না ঘরে অনুর শ্বাশুড়ি, চাচী শ্বাশুড়ি মোটা মোটি সবাই টুকটাক কাজ করছে।
অনু সেখানে যেতেই সবাই নতুন বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
সবাই অনুকে এটা ওটা সেখাচ্ছে শুধু অনুর শ্বাশুড়ি মুখ গোমড়া করে কাজ করেই যাচ্ছে।
অনু এবাড়িতে আসার পর থেকে লক্ষ করছে ভদ্র মহিলা অনুকে একেবারে নিতে পারছে না
অনু কৌতুহল বসত শ্বাশুড়ির পাশে গিয়ে দাড়ায়
-অ্যান্টি আপনাকে হেল্প করে দিই??
পাশ থেকে অনুর চাচী শ্বাশুড়ি বলে ওঠে
-অ্যান্টি কি বলছো মা বলো শ্বাশুড়ি তো মায়ের মতোই হয়
অনুর শ্বাশুড়ি ছোট চাচীকে থামিয়ে ঘাড় না ঘুড়িয়ে জবাব দেয়
-রাখো তো ওমন বউকে মেয়ে ভাবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।
তোমার মুখে অ্যান্টি ডাকই মানায়।
খবরদার আমাকে ঢং করে মা বলতে এসো না!!
অনু শ্বাশুড়ির কথা শুনে থমকে যায়।।।
সামান্য মা ডাকাতেই এতো সমস্যা???
কি করেছি আমি যে ওনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না!!!
-তুমি এখানে দাড়িয়ে কি করছো যাও নিজের ঘরে যাও।এখানে তোমার কোনো কাজ নেই!!
অনু কথা না বাড়িয়ে হন হন করে ঘরে চলে আসে…..
-আমারও বয়ে গেছে আপনার ছেলের বউ হয়ে থাকতে একবার সায়ন ফিরুক তারপর…….
(চলবে……)
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু…..ইয়ে তো ব্যাস Trailer থ্যা পিকচার আভিবি বাকি হেয়)
Osthir golpo