হতে পারি বৃষ্টি ❤️,পর্ব-৫
লেখনীতে- মৌশ্রী রায়
“হায় হায়!কি বলিস!তুই সায়াহ্নর খাবারে জোলাপ মিশিয়ে দিয়েছিলি??”
মিসেস রহমানের চোখে-মুখে বিস্ময়। তার ছেলেকে কেউ এভাবে প্যাঁচে ফেলে দেবে তা তিনি কল্পনাও করেননি!!
এতক্ষণ গতকাল রাত্রের সব ঘটনাই নিজের শশুর -শাশুড়িকে বর্ণনা করছিল ঐশী।কিভাবে কাল রাতে সায়াহ্নকে জব্দ করেছে সেসব শুনে তার শশুর -শাশুড়ি অবধি হাসতে হাসতে কুপোকাত।
তবে সবটা শুনে যখন মিসেস রহমান ঐশীকে প্রশ্ন করলেন,
“সায়াহ্ন খাবার খেয়ে উঠেই বাথরুমে ছুটলো কেন?ওর কি সত্যি সত্যি পেটে এলার্জি হয়েছিল? ”
ওনার প্রশ্নে ঐশী বিশাল লম্বা একটা আড়মোড়া ভেঙে বলে উঠল,
“আরে না!পেটে কি আর এলার্জি হয় নাকি?আসলে আমি আন্দাজ করেছিলাম উনি রাতে আসবেন। সে অনুযায়ী সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম আগে থেকেই।আর বাঁচা খাবার গুলোয় তো আমি জোলাপ মিশিয়ে দিয়েছিলাম। ”
মিস্টার আর মিসেস রহমানের হাসি এবার অটোমেটিক থেমে গেল!বড় বড় অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন ঐশীর দিকে। তবে এতে ঐশীর তেমন হেলদোল নেই।সে এতটাই স্বাভাবিক যেন কিছুই হয়নি।অথচ কাল রাতেই সে সায়াহ্নকে রীতিমতো তুর্কি নাচ নাচিয়েছে।
অবাক কন্ঠে মিসেস রহমান পুর্বোল্লিখিত প্রশ্নটি ঐশীকে করা মাত্রই সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়।যার অর্থ,হ্যাঁ,সে মিশিয়েছে সায়াহ্নর খাবারে জোলাপ।
রহমান দম্পতি এখনো অবাক।তারা ভাবতেন ঐশী অতিশয় শান্ত-শিষ্ট একটি মেয়ে।
কিন্তু তার যে এমন নিদারুণ একটা খচ্চর রুপ আছে তা তারা ভাবতে পারেন নি।
ওদিকে দাদা,দাদীমা আর মায়ের এত জোড়ে হাসির আওয়াজে রায়ার ঘুম ছুটে গেছে।
সে নিজের ঘর থেকে মিস্টার রহমানের ঘরের সামনে এসেই শুনতে পেল জোলাপ নামক কোন এক বস্তুর কথা।
রায়া খানিক চিন্তা করল,জোলাপ কি জিনিস?সে তো গোলাপ শুনেছে তবে জোলাপ তো শোনেনি!
এ শব্দটা একদমই নতুন তার কাছে।তবে কি জোলাপও কোন ফুলের নাম?গোলাপের মতোই? নিজের মস্তিষ্কের নিকট এই প্রশ্নের কোন উপযুক্ত জবাব না পেয়ে রায়া ভেজানো দরজাটা ফাঁক করে ঢুকে পড়লো তার দাদানের রুমে। কোনরকম সঙ্কোচ ছাড়াই সে ঐশীকে জিজ্ঞেস করলো,
“হোয়াট ইজ জোলাপ মা?ইস ইট এনি কাইন্ড অফ ফ্লাওয়ার?”
আচমকা রায়ার কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে রহমান দম্পতি সহ ঐশী পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো রায়া কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
তার করা প্রশ্নের উত্তর দিতে মুখ খুলল ঐশী। ভীষণই পান্ডিত্যের সাথে এক্সপ্লেইন করতে লাগলো হোয়াট জোলাপ এক্সাক্টলি ইজ!
“রায়া মামণি,জোলাপ ইজ এ টাইপস অফ মেডিসেন হুইচ হেল্পস পিপল টু ডাইজেস্ট পারফেক্টলি।অ্যাকচুয়ালি ইট ইজ ইউজড বাই দা কন্সটিপেশন পেশেইন্ট!”
রায়া অত্যন্ত মনোযোগের সাথে ঐশীর কথা শুনলো। তারপর চোখ পিটপিট করে বলে উঠল,
“মিস বলেছিল কন্সটিপেশন মানে কোষ্ঠকাঠিন্য! মা,ইভিনিং স্টারের কি কন্সটিপেশন আছে? ”
রায়ার কথায় ঐশী হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়লো। পেটে হাত চেপে হেসে নিয়ে সে রায়াকে বললো,
“না মা।তবে তোমার ইভিনিং স্টারের প্রচুর রাগ তো!এত রাগে তার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ঠিকঠাক কাজ করছিল না।তাই তার পেট মাথা সব ঠান্ডা করতেই ওনাকে জোলাপ খাইয়েছি আমি মা।”
রায়া ঐশীর কথা শুনে একগাল হাসে।তাদের মা-মেয়ের কথার মাঝেই ফের জিজ্ঞেস করে মিসেস রহমান,
“আচ্ছা, এখন এটা বল তো,তুই সায়াহ্ন কে কি এমন বললি যাতে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো?”
ঐশী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
“আমি ঠিক জানিনা উনি আমার কথা শুনেই জ্ঞান হারিয়েছেন কিনা!এটাও হতে পারে সারাদিন হাঁটা পায়ে ঘুরে বেরিয়ে শরীর ক্লান্ত ছিল, তার ওপর জোলাপ,সব মিলিয়ে উইকনেস থেকে জ্ঞান হারিয়েছেন উনি!তবে আমি কি বলেছি সেটা তোমাদের ছেলে ঘুম থেকে উঠুক না,তারপর সে নিজের মুখেই বলবে!”
ঐশীর কথায় রহমান দম্পতি তার দিকে অপলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপরে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চোখের ইশারা করে কিছু একটা বললেন।
অগত্যা অপেক্ষা করতে লাগলেন,সায়াহ্নর ঘুম ভাঙার কখন সে উঠে, আর কখন তারা জানতে পারে ঐশীর বলা কথাটা!
.
জানালার হালকা বেগুনি রঙা পর্দা গুলো সকালের নরম বাতাসে হালকা কেঁপে উঠছে। বিছানার পাশ ঘেষে সে জানালার অবস্থান হওয়ায় থেকে থেকে কেঁপে উঠছে ঘুমন্ত সায়াহ্নর বন্ধ চোখের পাপড়ি,কপালে ছড়িয়ে থাকা চুল।
দরজা খানিকটা ফাঁক করে তার এই ঘুমন্ত শান্ত মুখশ্রীর পানেই তাকিয়ে আছে ঐশী। কিছুতেই যেন চোখের পলক পড়ছে না তার।এই এত সুন্দর ছেলেটা তার বর!এটা ভেবেই মন পুলকিত হচ্ছে।
গতকাল সায়াহ্ন জ্ঞান হারাবার পর ঐশীই সব ঠিকঠাক করে তাকে সেখানে শুইয়ে দিয়ে গেছে।মিস্টার রহমানকে ডেকে চেঞ্জ করিয়েও দিয়েছে তাকে।
রাতেই কাঁদায় মাখামাখি হওয়া জামা কাপড় গুলো নিজের হাতে ধুঁয়েও দিয়েছে ঐশী।
এত সব কিছু করে রাতে আর দুচোখের পাতা এক করার সময় হয়নি তার।কখন যে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারেনি।অতঃপর ওযু করে ফজরের নামাজ পড়ে নিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে গেছে শশুর শাশুড়ির জন্য।
আর সেখানে গিয়েই শাশুড়ি মায়ের জিজ্ঞাসার মুখে পড়ে গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাক্রম বর্ণনা করতে হয়েছে তাকে।
কিন্তু এতকিছুর মাঝে তারো মন ভালো নেই।বাইরে থেকে ভীষণ মজা পাচ্ছে এমন ভাব দেখালেও আসলে তার বিন্দুমাত্র মজা হচ্ছে না।বরং মারাত্মক কান্না পাচ্ছে। সে নিজেও জানে সায়াহ্নর সাথে সে বেশি বেশি করে ফেলেছে। এতটা করা তার মোটেও উচিত হয়নি।একরাতেই বেচারার চেহারার কি হাল হয়ে গেছে!আহা রে!আর এ সবটাই তার বদৌলতে।সুস্থ শরীরে জোলাপের প্রভাব যে কতখানি তা তো সে জানে।
তাদের কলেজের বায়োলজি প্রাকটিকালের দিন,যখন মজিদ স্যার তাদের দিয়ে কেঁচোর পৌষ্টিকতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদ করাতে চেয়েছিল,তখন তো তারা সব বন্ধুরা মিলে স্যারের শরবতে জোলাপ মিশিয়ে খাইয়ে ছিল।আহা!বেচারা স্যার।কেঁচোর পৌষ্টিকতন্ত্র কেটে দেখার আগে তার নিজের পৌষ্টিকতন্ত্রেই মোচড় দিয়ে দিল।তারপর তো বাকিটা ইতিহাস! টানা তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারেননি উনি!
যদিও সেবারে ভুলে তারা একের জায়গায় তিন চামচ জোলাপ মেশানোয় প্রতিক্রিয়া খানিক দীর্ঘ স্থায়ী ছিল, সায়াহ্ন কে সে দিয়েছে আধ চামচ জোলাপ।সে মতো আজই তার ফিট হবার কথা। তবুও তার বেচারা বরটার কষ্ট তো হয়েইছে।
ঐশী মনে মনে বহুবার সে কারণে সায়াহ্নর কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছে।সায়াহ্ন যদি মানুষের মনের কথা শোনার মতো অলৌকিক কোন ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতো তবে সে শুনতে পেত হার্টের প্রতিটা বিটের সাথে দুবার করে তার থেকে ক্ষমা চাইছে ঐশী।
তবে সবটাই মনে মনে। বাইরে থেকে সে স্বাভাবিক। যেন তার মনে এসব নিয়ে কোন ভাবাবেগই নেই।
ঐশীর অপলক দৃষ্টির মাঝেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো সায়াহ্ন। জানালার স্বচ্ছ কাচ পর্দায় আড়াল করা বলেই সারা ঘরে হালকা বেগুনি আভার ছড়াছড়ি দেখতে পেল সে।
দুহাতে বিছানার ওপর ভর দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো।শরীরে একদমই বল পাচ্ছে না সে।দুহাতে কপাল চেপে ধরে গতরাতের ঘটনাসমূহ মনে পড়তেই টনক নড়লো তার।গায়ের ওপর থাকা পাতলা কাঁথাটা সরিয়ে দিয়ে নিজের শরীরে আবিষ্কার করলো তার বাবার পাঞ্জাবি, পায়জামা।
মাথা ঘুরে উঠল সায়াহ্নর।সে তো গতরাতে শাওয়ার নিয়ে কোমড়ে তোয়ালা পেঁচিয়ে ছিল।তার সব পোশাকাদি ঐশী কাঁদায় মাখিয়ে রেখেছিল বলে।তবে এখন তার গায়ে তার বাবার পোশাক কোথা থেকে এল?তাকে চেঞ্জ কে করালো??
সায়াহ্ন মাথায় অনেক চাপ দিল কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না।তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে এলো ঐশী। সে একটা ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে বলে উঠল,
“গুডি গুডি মর্নিং!”
সায়াহ্নর কপাল কুচকে এলো।এ মেয়ে আবার কেন এলো!এ আশেপাশে থাকা মানেই ১৪ নাম্বার বিপদ সংকেত কাধে ঝুলিয়ে ঘোরা।ডেঞ্জারাস লেডি।
তবুও উপায় না পেয়ে সে ঐশীকে জিজ্ঞেস করলো,
“আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করিয়েছে?বাবা?”
সহজ প্রশ্ন,উত্তরটা তার চাইতেও সহজ।তবুও ঐশী সে সহজ উত্তর টা দিলনা।বরং সায়াহ্নর গোলমেলে মাথা আরো গোলমেলে করে দিতেই সে বলে উঠল,
“না তো!আপনাকে তো আমি চেঞ্জ করিয়েছি।বাবা তো ঘুমোচ্ছিলো।”
ঐশীর এ কথা শোনামাত্র সায়াহ্নর চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেল। বিস্মযে সে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“হোয়াট!”
ঐশী আবার হেসে বলে উঠল,
“জ্বি! ”
এরপর শাড়ির আঁচল আঙুলে পেচিয়ে পেচিয়ে মুখে লাজুক ভাব এনে বলে উঠল,
“শুধু তাই না।চেঞ্জ করানোর সময়ে বিভিন্ন পোজে আপনার সাথে ছবিও তুলেছি আমি।সেই ছবিগুলো যে কেউ দেখেই বলে দিবে আমরা কত্ত রোমান্টিক একটা কাপল!”
সায়াহ্ন বিরক্তিকর দৃষ্টিতে ঐশীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তো যে কাউকে সেসব ছবি দেখিয়ে আমাদের মধ্যকার মিথ্যে রোমান্টিসিজম দেখিয়ে কি লাভ হবে তোমার?সবাই জানে আমি কেমন।রিধি ছাড়া আর কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া তো দুর তাদের ছুঁয়েও দেখবোনা আমি!তাই তোমার ওসব ফাল্তু ছবিতে কেউ বিলিভ করবেনা!”
ঐশী আবার হাসিমুখে বললো,
“সবাই যেটাই জানুক,আইন জাস্ট প্রমাণ জানে সায়াহ্ন। আর আমার কাছে থাকা ছবি গুলো সেই প্রমাণ।কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক,আইন ঠিকই তাতে বিশ্বাস করবে!”
সায়াহ্ন কপাল কুচকে তাকিয়ে বললো,
“মানে!”
ঐশী আবার পুর্ববৎ স্বাভাবিক স্বরে মুখে হাসি টেনেই বললো,
“মানে আমি তো আর গাঁধা না।গতকাল আমি আপনার সাথে যা যা করেছি তাতে আপনি যে যেকোন মুহূর্তে আমার মুখের ওপর ডিভোর্স পেপার ছুড়ে দিতে পারেন আই নো দ্যাট।যেহেতু বিয়েটা আপনি মানেন না,তাই এটা করা তো আপনার কাছে খুব অস্বাভাবিক কিছু না তাইনা?তাই আমাকে যাতে আপনি কোন ভাবেই আপনার জীবন থেকে চাইলেও না সরাতে পারেন তার জন্যই আমি ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছবি গুলো আমার কাছে রেকে দিয়েছি।এখন আপনি যদি আমাকে ডিভোর্স দিতে চান তো আমি বলব আমাদের দাম্পত্য জীবনে কোন সমস্যা নেই।কিন্তু আপনি নতুন করে কাউকে পেয়ে যাওয়ায় আমাকে ছেড়ে দিতে চাইছেন।জানি এটা মিথ্যে,তবে ঐ যে ল ইজ ব্লাইন্ড।সে তো প্রমাণেই বিশ্বাস করবে আর সেটা আমার কাছে আছে।এতে করে আমার কিন্তু কিছুই হবেনা।যা হবার তা আপনারই হবে।সমাজের চোখে আপনি নিচে নেমে যাবেন,আপনার ও আপনার ফ্যামিলির রেপুটেশন মাটিতে মিশে যাবে!এটা কি আপনি চাইবেন?”
সায়াহ্ন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।তারপর বললো,
“তোমার মতো মেয়েদের থেকে তো এসবই আশা করা যায়। ছোট থেকে অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছ শুনেছি। এ বাড়ির মতো এত বৈভব কখনো দুচোখেও তো দেখনি।এখন বড়লোক বাড়ির বউ হয়ে এত সহজে কি আর এই যশ-সম্পত্তি ছেড়ে যেতে চাইবে?টাকার জন্য তোমার মতো মেয়েরা অনেক নিচে নামতে পারে তা শুনেছিলাম, আজ চাক্ষুষ দেখেও নিলাম।টাকার লোভে অন্যের সন্তানের মা সাজতেও তোমরা রাজি হয়ে যাও।লেইম পিপল!”
সায়াহ্নর বলা প্রতিটা শব্দ ঐশীর বুকে তীরের মতো বিঁধলো।কষ্টে তার ভেতরটা ক্ষত বিক্ষত হল।তবুও তা সে প্রকাশ করলো না।বাইরে বরাবরের মতো ঠোঁটজুড়ে বিস্তর হাসি খেলা করতেই দেখা গেল তার।হাসিমুখে সে আবার বলে উঠল,
“এই তো এতদম ঠিক চিনেছেন আমাকে আপনি।তো আমার আসল রুপটা যকন আপনার সামনে প্রকাশ পেয়েই গেল,তখন আর এত ভনিতার দরকার নেই!সোজা কাজের কথায় আসি!”
সায়াহ্ন আবার একই রকম তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
“কি চাই তোমার?”
ঐশী আগের মতো স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠল,
“কাল যা যা বলেছিলাম তাই তাই করতে আপনি রাজি হয়ে যান।রায়াকে আর বোর্ডিংয়ে যেতে দেবেন না আপনি।সবার সামনে নিজের মুখে এ কথা টা বলবেন! ব্যাস্!”
সায়াহ্ন ঐশীর দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,
“এসব তুমি রায়ার জন্য করছো?এটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!সত্যি করে বলতো রায়াকে বাড়িতে রাখলে কি লাভ তোমার?”
ঐশী বিস্তর হেসে জবাব দিল,
“গুড কোয়েশ্চেন।দেখুন রায়া যাতে নতুন মা পায়,সেজন্যই আমাকে আপনার স্ত্রী করে নিয়ে আসা হয়েছে এ বাড়িতে। রায়াই যদি এ বাড়িতে না থাকে তো আমাকে তো এ বাড়িতে কোন দরকার নেই।তাই রায়া যতদিন এ বাড়িতে থাকবে,ততদিন আপনার বাবা-মা আমাকে মাথায় তুলে রাখবে।আর আপনি আপনার বাবা-মার অমতে গিয়ে আমায় এ বাড়ি থেকে বের করতে পারবেন না!সো রায়া এ বাড়িতে থাকলে আমিও আরামসে আয়েশ করে এই এত বড় বাড়িতে রাজ করে যাব।এটা কি কম বড় লাভ!”
সায়াহ্ন এবারে ঘৃণাভরা কন্ঠে বলে উঠল,
“ঠিক কতটা নিচ তুমি তা ভেবেই ঘৃণা হচ্ছে আমার।একটা বাচ্চা মেয়েকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছ ঐশ্বর্যের লোভে!ছিঃতবে তুমি চিন্তা করো না।এতদিন যা হয়েছে সবটা ভুলে যাও।আমি তোমার কাছে প্রমিস করছি আমার মেয়েকে আমি তোমার লালসা চরিতার্থ করার রাস্তা হতে আমি কিছুতেই দেবনা।নেভার।রায়াকে গুটি করে এ বাড়িতে রাজ করার স্বপ্ন দেখছ তুমি তাইনা?আই প্রমিস ইউ রায়া নিজে তোমাকে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলবে।আর সেদিন তোমার এই মুখোশের আড়ালে থাকা লোভী চেহারাটা সবাই জেনে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে এ বাড়ি থেকে। দেখে নিও।”
উত্তরে কেবল একটা চাঁপা হাসি ফেরত দিয়ে ঐশী বেরিয়ে এলো সায়াহ্নর রুম থেকে।
বাইরে বেরোতেই বুকের ভেতর উথলে উঠলো টালমাটাল কষ্ট।তাকে নিয়ে কারো মনে এত নিচ,এত ঘৃণ্য ধারণা আছে তা ভেবেই চোখ ভিজে উঠতে চাইলো।তবুও সে কাঁদলো না।নিজেকে শক্ত করে নিল।তাকে এমন আরো অপমান সহ্য করার সাহস রাখতে হবে।সে যে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে রায়ার কাছে সে তার বাবাকে ফিরিয়ে দেবে।যে জীবনটা সে বেঁচেছে তা সে রায়াকে বাঁচতে দেবেনা।আর এ জন্য তাকে যত অপমানই সইতে হোক সে সইবে,যত ঘৃণা কুড়াতে হোক সে কুড়াবে।তবুও রায়ার মুখে সবসময়ের জন্য বাবাকে কাছে পাওয়ার আনন্দের ছটা সে ফুটিয়েই ছাড়বে!
.
সেদিন সকালেই এক অভুতপুর্ব ঘটনা ঘটে গেল।যা দেখে বাড়ির প্রতিটা মানুষের চোখে ভীড় জমালো জল।চোখের সামনে ঘটা ঘটনাকে বিশ্বাস করে নিতে একটু সময় লেগে গেল সবারই।আর তারপর!তারপর শুরু হল আস্তে আস্তে সবটা পাল্টানো।সবটা!
চলবে