হয়তো_তুমি_আসবে_বলে{৪} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
919

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে{৪}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

হাতে বত্রিশ হাজার টাকার রং নিয়ে গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তনয়।একটু পরই কলেজ ছুটি হবে।সে কি ভাব তার।পার্পেল কালারের শার্ট সাদা প্যান্ট সাদা স্নিকার্স।শার্টের উপরের দুই বোতাম খোলা।চুলগুলো ব্যাক ব্রাস করা।বার বার চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলছে।যখন সে এতোসব ভাব নিতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তার সামনে একটা কালো গাড়ি থামে।গাড়ির গ্লাস নিচে নামতেই দেখা যায় কুঞ্জের রাগি চাহনি।ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে।হঠাৎ কুঞ্জকে এইসময় এভাবে দেখবে আসা করেনি তনয়।কুঞ্জের চাহনিতে তার বুকটা আরও বেশি কেঁপে উঠলো। হাত থেকে রঙের বক্সটা পড়ে গেল।তড়িঘড়ি করে সেগুলো ওঠালো তনয়। কুঞ্জ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—তুমি এখানে কি করো?এই ভর দুপুরে তুমি মহিলা কলেজের সামনে কি করো?

তনয় আমতা আমতা করে বললো,
—আসলে ভাই আমার বোন…

আর বলতে পারলো না তনয় তার আগে কুঞ্জ ভ্রু উঁচু করে বললো,
—আচ্ছা তোমার বোনও আছে?জনতাম না তো?আমার জানা মতে তুমি তোমার এক বাপের এক ছেলে।

একবাপের এক ছেলে শুনে তনয়ের একটু গর্ব গর্ব হলো।সে চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে বললো,
—তা তো ঠিক!

পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে থতমত খেয়ে বললো,
—আসলে ভাই আমার মামাতো বোন আছে না ঐ ওকেই তো নিতে আসছিলাম।মামা বললো নিয়ে যেতে।

কুঞ্জ ভ্রু কুঁচকালো। ভাবুক হয়ে বললো,
—আচ্ছা মামাতো বোন।তা ভালো ভাইদের বনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা ভালো।এখন আমার রং টা দেও।

তনয় তড়িঘড়ি বক্সটা কুঞ্জের হাতে দিল।কুঞ্জ বক্সটা নিয়ে শাঁই করে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল।তনয় ভোঁতা মুখ করে তাকিয়ে থাকলো কুঞ্জের যাওয়া দিকে।তাকে একটু নিয়ে গেলে কি হতো?এখন আবার তাকে বাসে করে বাড়ি ফিরতে হবে।

বাবার রুমের সামনে চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে রূপ তার পিছনে তার মা আর তার ভাই মিলন। যারা অনবরত তাকে ঠেলে যাচ্ছে। কিন্তু রূপ ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।একপর্যায়ে তার মা ইমামা বেগম তাকে জোর করে ভিতরে ঠেলে দিলো।রেজা ঘরে বসে তার ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাস করছিলেন।কেউকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে মনে করেছেন হয়তো ইমামা বেগম হবে তাই যে এসেছে তার দিকে না তাকিয়েই সে বললো,
—ইমামা এককাপ চা দাও তো।

রূপ চায়ের কাপটা এগিয়ে দিল।রেজা সাহেব না দেখে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।ভালো হয়েছে দেখে প্রশংসা করার জন্য মুখ তুলে তাকাতে রূপকে দেখে বললেন,
—তুমি?

রূপ মাথা নিচু করে আছে।বাবার কথায় বললো,
—বাবা একটু কথা বলবো।

রেজা সাহেব চায়ের কাপটা পাশের টেবিলে রেখে রূপকে বসার জন্য ইশারা করলেন।রূপ বাবার সম্মতি পেয়ে বাবার সামনে বিছানার এককোণে বসে পড়লো।তারপর বলতে লাগলো,
—বাবা আমি জানি আমি ভুল করেছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।আমি তখন ছোট ছিলাম ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা ছিল না।বাবা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।

রেজা সাহেব কোনো উত্তর দিলেননা।সে রূপের দিকে ফিরে বললেন,
—শুনলাম অনিল তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছে? কেন?

রূপ উঠে দাঁড়ালো আহত স্বরে বললো,
—বলতে পারবো না বাবা।তোমাকে এই কথা আমি বলতে পারবো না।

কথাটা বলে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে গেল রূপ।ইমামা বেগম রুমে ঢুকলেন রেজা সাহেব ইমামাকে দেখে বললেন,
—কি এমন কথা?তুমি কি জানো?

ইমামা বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন,
—পরে একদিন বলবো তোমাকে এখন থাক।

বলে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলেন সে।চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে আবার নতুন করে বানাতে হবে।এদিকে রেজা সাহেব বসে ভাবতে লাগলেন কি কারন হতে পারে।মাথায় কিছু না আসায় সে আবার কাজে মন দিলেন।

লেউসি দেওয়ান একাধারে ফোন কল করে যাচ্ছে তার ছেলে কুঞ্জকে।কিন্তু নাহ্ ওপাশ থেকে ভুল করেও একবারও রিসিভ হচ্ছে না।বিশাল বড় অট্টালিকার ১৯ নম্বার তলার ৩২ নং ফ্লাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সে।এখান থেকে পুরো নিউইয়র্ক শহরটা দেখা যায়।নিউইয়র্কে আধুনিকতার ছোঁয়া চারিদিকে জ্বল জ্বল করছে।কুঞ্জকে কল দিয়ে ব্যর্থ হয়ে সে তনয়কে কল করলো।তনয় সাথে সাথে কল রিসিভ করে সালাম দিলো।তারপর বললো,
—কেমন আছেন ম্যাম?

লেউসি দেওয়ান খুব সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় উত্তর দিলেন,
—জ্বী ভালো তনয়।তুমি কেমন আছো?কুঞ্জ ফোন ধরছেনা কেন?

অপরপাশ থেকে তনয় বললো,
—আসলে ম্যাম এখানে তো এখন রাত আর ভাই মনে হয় ঘুম।

লেউসি দেওয়ান এবার কোনো ভণিতা ছাড়াই বললেন,
—শুনলাম রূপ নাকি আবার ফিরে এসেছে?কি চায় কি ও?আমার ছেলেটাকে তো শেষ করেছে।এখন আবার ফিরে এসেছে কেন?

অপর পাশ থেকে তনয় বললো,
—ম্যাম এখানে ভাবির তো কোনো দোষ নেই।সে তো আর জানতো না তাই না?

লেউসি দেওয়ান বললেন,
—ও জানলেও থাকতো না।হাহ্ প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাহ্!তা এখন কুঞ্জ কি করতে চায়?ও কি আবার এই বিবাহিত ডিভোর্সি মেয়েটাকে বিয়ে করবে নাকি?মানুষের ইউস করা জিনিস আমি কখনো আমার ছেলের আশেপাশে রাখিনি।আর এখন দেখো সেই সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসের উপরই ও আকর্ষন দেখাচ্ছে বেশি।

তনয় বললো,
—আমি জানি না ভাই কি করবে ভাই-ই ভালো জানে।

লেউসি দেওয়ান হতাশ কন্ঠে বললেন,
—হুম..আচ্ছা রাখছি তনয়।ভালো থেকো আর কুঞ্জকে বলো কলটা রিসিভ করতে।

তনয় আচ্ছা বলে রেখে দিল।লেউসি দেওয়ান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন।এমন কিছু সে কখনো চায়নি।সে চায়নি তার কুঞ্জকে ছেড়ে এতো দূরে পাড়ি জমাতে কিন্তু তার কাজের জন্য তাকে এতোদূর আসতেই হলো।কুঞ্জকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সে কিন্তু কুঞ্জ একঘেয়ে আপসহীন ছেলে।সে এলোই না তো এলোই না।

————
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একের পর এক নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে কুঞ্জ। তার প্রতিরাত এমন নিকোটিনের ধোঁয়ায় পুড়ে শেষ হয়।এটা বড় কিছু না।পাশে তার ফোনে লেউসি দেওয়ানের কল এসেছে কয়েকবার তবে সে তোলেনি কল।সিগারেট খেতে খেতে কুঞ্জ অনুভব করলো তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে। সে শান্ত স্বরে বললো,
—এখনও ঘুমাওনি?

তনয় তার সামনে এসে দাঁড়ালো। পকেট থেকে ফোন বের করে বললো,
—ভাই এই লোকেশনটা দেখেন।সুন্দর না?

কুঞ্জ ফোনের দিকে তাকালো তারপর বললো,
—হ্যাঁ।

তনয় বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো,
—ভাই একদিন এই লোকেশনে চলেন ছবি আঁকতে।

কুঞ্জ বললো,
—হুম!

কুঞ্জের থেকে তেমন কোনো রেসপন্স না পেয়ে তনয় হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছিল তখনই কুঞ্জ আবার ডাক দিয়ে বলে,
—রূপকে ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিলে?

তনয়ের চোখ মুখ চকচক করে উঠলো সে কয়েক পা এগিয়ে এসে বললো,
—হ্যাঁ ভাই।ভাবীর সাথে কথা বলবেন আমার কাছে নম্বার আছে।

কুঞ্জ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—আমার কাছেও আছে।তুমি এখন যাও।

তনয় চলে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই কুঞ্জ আবারও তাকে ডাক দেয়।এবার বেশ জোরে ডাক দেয়।তনয় কুঞ্জের কাছে আসতেই কুঞ্জ বলে,
—ফোন কই তোমার?

তনয় ফোন বের করে কুঞ্জের হাতে দিতেই সে কন্টাক্টে গিয়ে রূপের নম্বারটা বের করে।তারপর নম্বারটা ডিলিট করে দেয়।তনয় হা করে তাকিয়ে আছে কুঞ্জের দিকে।এটা কি করলো সে?কুঞ্জ রাগি কন্ঠে বললো,
—রূপের নম্বার তোমার কাছে কি করে হ্যাঁ?নেক্সট টাইম যদি দেখছি ওর নম্বার নিয়ে ঘুরছো তোমাকেও ডিলিট করে দিবো এই পৃথিবী থেকে গট ইট?

তনয় গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে কুঞ্জের দিকে।কুঞ্জ কথাগুলো বলেই হন হন করে চলে গেল।তনয় মুখ বাঁকিয়ে নিজে নিজেই বললো,
—ভাই সত্যিই আমাকে নিয়ে জেলাস?লাইক সিরিয়াসলি?! মানে ভাই?মানে কুঞ্জ ভাই জেলাস?তাও আমাকে নিয়ে?

চলবে..

(রিচেক করা হয়নি।কিছু বানান ভুল থাকতে পারে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here