হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১১} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
799

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১১}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

তনয় অনিলকে এভাবে কাঁপতে দেখে পৈশাচিক হাসি দিচ্ছে। অনিলকে আরও একটু ভয় দেখাতে ঠোঁট কামড়ে অনিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসলো।ফিসফিস করে বললো,
—আই লাইক ইওর মাসলস!ইউ লুক সো ইয়াম্মি…!

বলে জিহ্বা বের করলো তনয়।অনিলের অবস্থা এদিকে টাইট।সে আল্লাহ আল্লাহ করছে আর পালাবার পথ খুঁজছে। তনয়ের এধরনের কথা শুনে অনিল কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,
—তওবা তওবা। আল্লাহ তুমি মাফ করো।কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছো তুমি আমাকে?আমি আর কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবো না তুমি আজকের মতো আমাকে মাফ করে দাও।

তনয় এবার শব্দ করে হেসে দিলো।অনিল বোকা চোখে তাকিয়ে আছে তনয়ের দিকে।তনয় হাসি থামিয়ে নিজের মধ্যে গম্ভীরতা এনে বললো,
—সেদিন ভাবির সাথে কি করেছিস তুই?

অনিল অবাক হয়ে বললো,
—কোন ভাবি?মিতু ভাবি পাঠিয়েছে আপনাকে?দেখুন আমি কিছু জানি না সব দোষ ওনার।

তনয় টেবিলে বাড়ি দিয়ে বললো,
—চুপ ব্যাটা!ভাবিদেরও ছাড়িস না তুই?

অনিল কাচুমাচু করে বললো,
—আমার কোনো দোষ নেই।সবাই দোষ মিতু ভাবির।

তনয় আর কথা বাড়ালো না।সে আসল কথা বললো,
— সেদিন রূপ ভাবির সাথে দেখা হয়েছিল তোর?

অনিল ভেবে বললো,
—হ্যাঁ। দেখা হয়েছিল।কেন?

তনয় আবার টেবিলে বারি দিয়ে বললো,
—এ তোর সাহস তো কমে না..!আমাকে প্রশ্ন করিস?তোর ইজ্জত কেঁড়ে নিবো আমি।

অনিল ভয়ে গুটিয়ে গেল।বললো,
—মাফ করবেন ভাই।ভুল হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দেন।

তনয় পায়ের উপর পা তুলে বেস আয়েশ করে বসলো।তারপর বললো,
—এবার বল ঐদিন ভাবির সাথে তুই কি করেছিস?তোর সাথে দেখা হওয়ার পর ভাবি অসুস্থ হয়ে গেল কেন?

অনিল বললো,
—কি?রূপ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল?অবশ্য আমি ওর পিছনে ব্লাড দেখেছিলাম।ভেবেছি হয়তো মেয়েদের বিষয় তাই বলতেও যাচ্ছিলাম তখনই তো কথা থেকে শালা কুঞ্জ দেওয়ান এসে হিরোর মতো হাজির হলো।

তনয় নড়েচড়ে বসলো।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—মানে তোর সাথে কথা বলার সময় দেখেছিস?

অনিল মাথা নাড়িয়ে বললো,
—না কথা বলে চলে যাওয়ার সময়!আচ্ছা ওটা কি মেয়েলি সমস্যা ছিল না?

তনয় কোনো উত্তর দিলো না।উঠে চলে গেল।এদিকে অনিলের হাত পা এখনও বাঁধা। তনয় ওকে ওভাবে রেখেই চলে গিয়েছে।তা দেখে ও চিল্লাতে শুরু করলো,
—আরে আমাকে খুলে দিয়ে যান।ও ভাই…আরে ও ভাই আমাকে খুলে দিয়ে যান আমি বাড়ি যাবো।

তনয় এতক্ষণে চলে গিয়েছে।যাওয়ার সময় দুইজন স্টাফকে বলে দিয়ে গেছে অনিলকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসতে।তনয়ের কথা মতো দুইজন স্টাফ এলো রোবটের মতো এসে কোনো কথা না বলে অনিলকে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে বাইরে রেখে চলে আসলো।অনিল বেশ কিছু কথা বলেছে তবে তারা কোনো শব্দই বের করেনি মুখ থেকে।স্টাফরা চলে আসার সময় অনিল আবার চেঁচাতে লাগলো,
—আরে হাত পা তো খুলে দিয়ে যান। গর্ধবের দল সব।হাত পা না খুললে আমি বাড়ি যাবো কিভাবে?

অনিল চিৎকার করে যাচ্ছে কিন্তু দুঃখের বিষয় তার চিৎকার শোনার মতো আশেপাশে কেউ নেই।

একের পর এক শাড়ি দেখিয়ে যাচ্ছে দোকানদার রূপ এবং কুঞ্জকে। রূপ পুতুলের মতো বসে আছে।কোনো একটা শাড়িতে ভুল করেও একবার হাত দিচ্ছে না।এদিকে কুঞ্জ সবগুলো শাড়ি পরখ করে দেখছে। কিন্তু তার কোনোটাই মনে ধরছে না।কুঞ্জ বিরক্ত হয়ে বললো,
—আরে আজব তো একটা কোনো ভালো শাড়ি নেই?

দোকানদার মুখটা ভোঁতা করে ফেললো।এখনো পর্যন্ত মার্কেটের সবচেয়ে ভালো আর দামি শাড়িগুলো দেখিয়েছে সে।তাও কুঞ্জর পছন্দ হচ্ছে না।এদিকে রূপও দেখছে না।দোকানদার রূপের দিকে তাকিয়ে বললো,
—ম্যাডাম আপনি দেখেন না একটু।

রূপ কোনো কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল।কুঞ্জও হেসে বললো,
—হ্যাঁ তুমি দেখ না কোনটা ভালো লাগে।

রূপ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কুঞ্জের দিকে।কুঞ্জ তা দেখে বললো,
—আচ্ছা। আজ বরং থাক চলো তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসি।

রূপ যেন কুঞ্জের এই কথার অপেক্ষায় ছিল।যেই কুঞ্জ বাড়ি যাওয়ার কথা বললো ওমনি সে চট করে উঠে হাঁটতে শুরু করলো।কুঞ্জ মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—এতোক্ষণ তো কাঠের পুতুলের মতো ছিলে।এখন আবার সচল হলে কিভাবে?

রূপ কোনো কথা বললো না।দুইজন গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি কিছুদূর যেতেই রূপ অনিলকে দেখে গাড়ি থামাতে বললো।কুঞ্জ প্রথমে বুঝতে না পারলেও চোখ ঘুরিয়ে অনিলকে দেখে সে গাড়ি থামালো না বরং দ্বিগুণ জোরে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।রূপ রেগে চেঁচিয়ে বললো,
—এটা কি করলেন?আপনাকে না গাড়ি থামাতে বললাম?গাড়ি থামালেন না কেন?

কুঞ্জ কোনো উত্তর দিলো না।রূপ আবারও চেঁচিয়ে বললো,
—কি ভেবেছেন?আপনি এভাবে পার পেয়ে যাবেন?অনিল যদি জানতে পারে না ওর বাচ্চাকে আপনি খু’ন করেছেন তাহলে ও আপনাকে খু’ন করে ফেলবে।

কুঞ্জ ভ্রু উঁচু করে তাকালো রূপের দিকে।হেসে বললো,
—কে? ঐ ব’দলটা?কাকে মা’রবে?আমাকে?

রূপ খেপে গিয়ে বললো,
—অনিলকে একদম ব’লদ বলবেন না।

কুঞ্জ দাঁত বের করে হেসে বললো,
—কেন প্রাক্তনের জন্য মায়া লাগে?

রূপ দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা হজম করলো।তবে কোনো প্রতিত্তোর দিলো না।রূপকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে কুঞ্জ চলে গেল।রূপ বাড়িতে ডুকতেই ওর মা এসে রূপকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো উৎসাহী কন্ঠে বললো,
—কি কি কিনলি?তাড়াতাড়ি দেখা।

রূপ বিরক্ত হয়ে বললো,
—মা কিছু কেনা হয়নি।

ইমামা নেগম ঠোঁট উল্টিয়ে বললেন,
—কি?কিছু কিনিসনি?আচ্ছা তাহলে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নে।আমি যাই রান্না করবো।

কুঞ্জ পরিপাটি হচ্ছে। একটু পর সে ডিজাইনারের কাছে যাবে রূপের ড্রেস ডিজাইন করতে।বডি স্প্রেটা দ্বিতীয়বারের মতো লাগিয়ে নিলো সে।
লেউসি দেওয়ান হা হুতাশ করে বললেন,
—কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে থাকতে তোমার ঐ মেয়েকেই পছন্দ হলো?

কুঞ্জ বিরক্তির “চ্” শব্দ করলো মুখ দিয়ে।বললো,
—মাহ্! ঐ মেয়েটা বলো কেন?ওর একটা নাম আছে।

লেউসি দেওয়ান মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
—জানি।ঐ তো রূপ তার আবার নাম রূপ!

কুঞ্জ বললো,
—উফ্ সরো তো আমার তাড়া আছে।রূপের ড্রেস চুজ করতে হবে।

কুঞ্জ তনয়কে কল করতে করতে বেরিয়ে গেল।তনয় কল রিসিভ করে বললো,
—হ্যালো ভাই।অনিলের সাথে কথা বলে জানতে পারছি।অনিলের সাথে কথা বলার পরই ভাবির মিসকারেজ হয়ে গিয়েছিল।

কুঞ্জ হাসলো।বললো,
—আচ্ছা। বুঝেছি।তুমি এককাজ করো সরাসরি লারা ফ্যাশান হাউজে চলে এসো।রূপের ড্রেস ডিজাইন করতে হবে।

তনয় আসছি বলে রেখে দিলো।রূপের জন্য একটা সাদা গাউন নেটের সিলেক্ট করা হলো।এর সাথে আরও কিছু ডিজাইন এড করে দিলো কুঞ্জ। কুঞ্জ নিজের জন্য একদম ফরমাল লুক সিলেক্ট করলো।সাদা শার্ট আর কালো কোট প্যান্ট।ছেলেরা সবয়ই ফরলাম ড্রেস পরবে।মেয়েরা হালকা গোলাপি পরবে গাউন।শুধু মাত্র রূপ সাদা গাউন পরবে।কিছুটা ইউরোপীয় মুসলিমদের কালচার অনুসরণ করছে কুঞ্জ। সব মিলিয়ে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ একটা পরিবেশের সমাহার হবে শুক্রবার।
শুক্রবার আসার আগে রূপের সাথে কুঞ্জের তেমন কোনো কথা হয়নি।কুঞ্জ বারবার ফোন করেছে।একসময় রূপ সিম খুলে রেখেছে।সে কোনো বাড়তি কথা বলতে চায়না কুঞ্জের সাথে।
সাদা গাউনটা পরে বসে আছে রূপ হাতে তার ফোন আর সিম।সিমটা ফোনে ঢুকিয়ে কুঞ্জকে একটা মেসেজ পাঠালো রূপ,
—এরপর যা যা হবে সবকিছু ফেস করার জন্য তৈরি থাকবেন কুঞ্জ দেওয়ান।

মেসেজটা দিয়ে ফোন থেকে সিমটা খুলে আর একটা সিম ঢুকালো।অনিলের নম্বারে ডায়াল করলো।প্রথমবার রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।অনিল ফোন কল রিসিভ করে বললো,
—হ্যালো রূপ কেমন আছো?তুমি নাকি অসুস্থ তাই?

রূপ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—ভালো আছি।আচ্ছা তুমি যদি কখনো জানতে পারো তুমি নিজে বাবা হওয়ার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করেছো?

অনিল থতমত খেয়ে বললো,
—কি বলছো এসব?তুমি প্রেগন্যান্ট নাকি?

রূপ শ্বাস নিয়ে বললো,
—না।যদি এমন হতো তোমার ডিভোর্স দেওয়ার পর আমি প্রেগন্যান্ট হতাম তাহলে?তখন কি তুমি বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতে?

অনিল জোর গলায় বললো,
—অবশ্যই নিয়ে যেতাম।আমার ছেলে আমার কাছে থাকবে।

রূপ বললো,
—হুম…জানলে কি করে ছেলে হতো?

অনিল হেসে বললো,
—ছেলেই হতো।

রূপ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
—শোনো আজকে আমার বিয়ে কুঞ্জ দেওয়ানের সাথে।তোমাকে আগে ইনভাইট করা হয়নি তাই এখন বলছি তুমি চায়লে আসতে পারো।

অনিল মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—সরি আমার অনেক কাজ আছে আসতে পারবো না।

রূপ মন খারাপ করে বললো,
—হুম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here