হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১৩} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
792

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১৩}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

কুঞ্জ সকাল সকাল উঠে রেডি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে যাবে সে।হাসপাতাল থেকে ফোন কল এসেছিল তনয় নাকি এক্সিডেন্ট করেছে।রূপ এখনো ঘুমাচ্ছে।তবে গভীর ঘুমে নেয় সে। সকালে যেমন কাটা কাটা ঘুম হয় তেমন ঘুম।কুঞ্জ রেডি হচ্ছে আর বার বার রূপের দিকে তাকচ্ছে।ঘরের মধ্যে ঠুকঠাক শব্দ হওয়ায় রূপের ঘুমটা ছেড়ে গেল।সে উঠে বসলো।কুঞ্জের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
—এতো সকালে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

কুঞ্জ ঘুরে রূপের দিকে তাকালো।হেসে বললো,
—উঠে গিয়েছো তুমি?আমি একটু হাসপাতালে যাচ্ছি।

রূপ অবাক হয়ে বললো,
—হাসপাতালে কেন?

কুঞ্জ রূপের সামনে এসে দাঁড়ালো মুখের উপর পরা চুল গলো সরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসি দিলো।বললো,
—হাসপাতাল থেকে কল এসেছিল তনয় এক্সিডেন্ট করেছে।

রূপ বললো,
—কি বলেন?আমিও যাবো।

কুঞ্জ ঘর থেকে বের হতে হতে বললো,
—তোমার যাওয়া লাগবে না।তুমি বরং উঠে ফ্রেশ হয়ে আমার কিছু স্পেশাল রান্না করো।এসে একসাথে খাবো।

বলে কুঞ্জ বেরিয়ে যেতে গেল।রূপ পিছন থেকে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে উঠলো,
—বাসায় যাবো না আমরা?

কুঞ্জ পিছন ফিরে বাঁকা হেসে বললো,
—তো এখন কি আমরা রাস্তায় আছি?

রূপ বিরক্ত হয়ে বললো,
—ধূর বিরক্ত করবেন না তো।বলেন না আমরা আজকে বাসায় যাবো না?আজকে তো আমাদের যাওয়ার কথা ছিল।

কুঞ্জ বের হতে হতে বললো,
—আচ্ছা এসে যদি সময় পাই তাহলে যাবো।ঠিক আছে?

কুঞ্জ রূপের উত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করলো না তার আগেই বেরিয়ে গেল।রূপ বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ভাবতে লাগলো কি রান্না করা যায়?অনেক ভেবে রোস্ট আর পোলাও রান্নার সিদ্ধান্ত নিল রূপ।রান্না করতে যাওয়ার আগে নিজের মাকে ফোন করলো সে।কিছুক্ষণ ফোন হতেই অপর পাশ দিয়ে ইমামা বেগম ফোন রিসিভ করলেন,
—হ্যালো, তোরা কি রওনা দিয়ে দিয়েছিস?

রূপ আমতা আমতা করে বললো,
—আসলে মা আমরা সন্ধ্যার দিকে আসবো।

ইমামা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
—কি বলছিস?তাহলে আমি যে এতো আয়োজন করলাম তার কি হবে?

রূপ মাকে আস্থা দিয়ে বললো,
—আহ্ মা! আমরা তো রাতে আসছি। তখনই না হয় এসে খাবো।

ইমামা বেগম মুখ গোমড়া করে বললেন,
—ঠিক আছে।জামাই কি করে?

রূপ একটু লজ্জা পেল।একদিনের ব্যবধানে কেমন জামাই জামাই করছে তার মা-বাবা।রূপ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—সে বাইরে গিয়েছে।

ইমামা বেগম অবাক কন্ঠে বললেন,
—কি বলছিস?বিয়ের পরদিনই বাইরে?

রূপ বিরক্ত হয়ে বললো,
—উফ্ মা কাজ আছে তাই গিয়েছে। তুমি বলো বাড়িতে সবাই কেমন আছে?

ইমামা বেগম হেসে বললেন,
—হ্যাঁ সবাই ভালো আছে।তোরা তাড়াতাড়ি চলে আয়।

রূপ বললো,
—আচ্ছা,এখন রাখি। রান্না করবো।

ইমামা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—কি বলিস?বিয়ের পরদিনই রান্না? শ্বাশুড়ি করতে বলেছে নাকি?

রূপ বললো,
—না তাকে তো এখনো দেখিনি।সে নেই।কুঞ্জ বললো আমার হাতের রান্না খাবে তাই রান্না করবো।

ইমামা বেগম বললেন,
—শ্বাশুরি নেই মানে?

রূপ বিরক্তি কন্ঠে বললো,
—উফ্ এতো কথা ফোনে বলা যায় না।আমি এসে কথা বলবো।

ফোন কল কেটে রূপ কাজে লেগে পরে।বাড়িতে অনেক মানুষ কিন্তু তারা সবাই যেন রোবট। তাদের যা শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা শুধু সেটাই করে।কেউ কোনো কথা বলে না।রূপের এই বিষয়টা বেশ একঘেয়ে লাগলো।এতো বড় বাড়ি এতো মানুষ কিন্তু তার সাথে কথা বলার কেউ নেই।

তনয় হাসপাতালের বেডে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।হাতে ব্যান্ডেজ আবার দড়ি দিয়ে ঝুলানো।পায়েরও একই অবস্থা। শরীরের অধিকাংশ ব্যান্ডেজে পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে।তনয় শুয়ে শুয়ে নিজের অবস্থা দেখছে আর ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে।এর মধ্যে একজন নার্স এলো তাকে সকালের ঔষধ খাওয়াতে। বেশ সুন্দরী এক যুবতী সে।বিবাহিত বলে মনে হচ্ছে না।তাকে দেখে তনয়ের মুখে হাসি ফুটলো।মেয়েটা কোনো কথা বলছে না।নিজের কাজ করছে।কখনো স্যালাইন চেক করছে তো কখনো ঔষধগুলো হাতিয়ে দেখছে।আর ডাব ডাব করে তাকে দেখছে তনয়।মেয়েটি একটা ইঞ্জেকশন নিয়ে এলো তনয়ের কাছে।আড় চোখে বারবার তনয়কে দেখছে মেয়েটি।ইঞ্জেকশনটা হাতের কাছে নিতে তনয় চিৎকার করে ওঠে,
—আহ্ মরে গেলাম। বাঁচাও! বাঁচাও!

নার্স অবাক হয়ে বললো,
—এখনো তো দিইনি ইঞ্জেকশন।

তনয় হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি এখন সুঁইটা ফোটায়নি।দাঁত কেলিয়ে বললো,
—ওহ্ এখনও দেননি?

নার্স এবার সু্ঁইটা ফুটিয়ে ইঞ্জেকশনটা পুশ করে দিলো।তনয় মৃদু কেঁপে উঠলো।মেয়েটির স্পর্শে নাকি ইঞ্জেকশনের জন্য তা বোঝা গেল না।মেয়েটি ইঞ্জেকশন দিয়ে সরে গেল।তনয় দাঁত বের হেসে করে বললো,
—আচ্ছা আপনি কোন দেশের মেয়ে?

নার্স ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কেন? বাংলাদেশের মেয়ে।

তনয় মাথা নাড়িয়ে বললো,
—আরে তা তো জানি মানে বাংলাদেশের কোন অঞ্চলের মেয়ে?

মেয়েটি হেসে বললো,
—বরিশাল।

তনয় বেডে হাত দিয়ে বারি দিয়ে বললো,
—এই জন্যই তো বলি এতো সুন্দরী কেন?

মেয়েটির ভ্রু আবার কুঁচকে এলো। বললো,
—মানে?

তনয় একটু উঠে ঠিক হয়ে বসে বললো,
—বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরী সুন্দরী মেয়েরা থাকে বরিশালে।দেখেন না সব সুন্দরী নায়িকারা বরিশালের!

মেয়েটি হাসলো।ছিপছিপে গড়নের সে।চুলগুলো খোঁপা করা তাই লম্বা মাপা যাচ্ছে না।গায়ের রং তনয়ের থেকে একটু চাপা।চোখে গোল গোল ফ্রেমের চশমা।ক্ষণে ক্ষণেই সেই চশমাটা উপরে ঠেলে দিচ্ছে। গায়ে নীল সাদার মিশ্রণে একটি কামিজ পরেছে তার উপর গোলাপি এপ্রন। তনয়ের কথায় মুচকি হেসে চলে গেল সে।তনয়ও মিট মিট করে হাসছে।

—কি তনয়?মনে হচ্ছে ডাক্তার পটিয়ে ফেলেছো?

তনয় আনমনে বললো,
—তেমনি। যা সুন্দর না দেখতে।

কুঞ্জ ঠোঁট টিপে হেসে বললো,
—নাম কি তার?

তনয় ফট করে ভালো হাতটা মাথায় দিয়ে বললো,
—আয়হায় নামই তো জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি।

বলে সামনে তাকিয়ে দেখে কুঞ্জ তার পাশে বসে আছে।টেবিলের উপর বিভিন্ন ফলের সমাহার।তনয় দাঁত দিয়ে ভিজ কেটে বললো,
—ভাই আপনি?

কুঞ্জ ভ্রু নাচিয়ে বললো,
—কেমন আছো?

তনয় মাথা নিচু করে বললো,
—জ্বী ভাই এখন একটু ভালো আছি।

কুঞ্জ তনয়কে একটা কমলা ছিলে খেতে দিলো।কমলার কোয়া তনয়কে দিতে দিতে বললো,
—এসব কিভাবে হলো?

তনয় বললো,
—আসলে ভাই অনেক পুরোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল।সে বাইক নিয়ে এসেছিল।অনেক দিন পর বাইক চালাতে গিয়ে বাইক নিয়ে পরে গিয়েছি।

কুঞ্জ হা হা করে হেসে দিলো।তারপর তনয়কে কাজ আছে বলে উঠে গেল।হাসপাতাল থেকে বের হতেই সব সাংবাদিকরা জেঁকে বসলো কুঞ্জকে।একেক জন একেক প্রশ্ন করছে। যেমন:”আপনার স্ত্রীর নাকি আরও একটা বিয়ে ছিল?সেই ঘরে থাকতেই কি আপনাদের সম্পর্ক ছিল?আপনাদের কি প্রণয় ছিল?আপনি এতো বড় চিত্র শিল্পী হয়ে কেন ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করেছেন?”
কুঞ্জ শুধু একটা কথা বলে সেখান থেকে চলে এসেছে আর তা হলো,
—হ্যাঁ আমার স্ত্রী একটি পাস্ট ছিল।আমি আমার স্ত্রীর পাস্টকে সম্মান করি এবং তার পাস্টকে মেনে নিয়েই তাকে বিয়ে করেছি।

বাড়িতে এসে দেখে সারা ঘরময় রোস্ট আর পোলাও এর গন্ধে মোঁ মোঁ করছে।কুঞ্জ জোরে একটা শ্বাস টেনে ফ্রেশ হতে চলে যায়।রূপ রান্না ঘরে সব গোছাচ্ছে। সে টের পেয়েছে কুঞ্জ বাড়িতে এসেছে।কিন্তু কাজ শেষ না করে বের হতে পারছে না।কুঞ্জ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে রূপকে ডাক দিলো,
—রূপ কি রান্না করছো?গন্ধে তো খিদে বেড়ে গেল।

রূপ হেসে দিলো কুঞ্জের কথায় বললো,
—এখনি আনছি দাড়াঁন।

কুঞ্জ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
—বসলে হবে না?

রূপ পোলাও আর রোস্টের বাটি নিয়ে আসতে আসতে বললো,
—হ্যাঁ হবে না কেন?

কুঞ্জ বাটির দিকে উঁকি দিয়ে বললো,
—কি রান্না করেছো?

রূপ কুঞ্জের প্লেটে পোলাও দিতে দিতে বললো,
—পোলাও আর রোস্ট।

কুঞ্জ বললো,
—বাহ্!বাহ্!দারুণ গন্ধ বের হচ্ছে। তুমিও বসে পড়ো।

রূপ চেয়ার টেনে কুঞ্জের পাশে বসলো। বললো,
—তনয় কেমন আছে?

কুঞ্জ খেতে খেতে বললো,
—হ্যাঁ।ভালো আছে।

রূপ আমতা আমতা করে বললো,
—আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

কুঞ্জ ভ্রু উঁচু করে তাকালো রূপের দিকে বললো,
—বলো।

রূপ আবারও আমতা আমতা করে বললো,
—আপনার মা-বাবা?

কুঞ্জ চোখ নামিয়ে আবার খেতে লাগলো।গম্ভীরভাবে জবাব দিলো,
—মা আজকে আমেরিকার চলে গিয়েছে।ফোন করেছিল।মা আমেরিকায় কাজ করে তাই কাজের সুত্রে তাকে আমেরিকায় থাকতে হয়।আমি ছোট থেকেই মা আমেরিকা থাকে। আর বাবা..

রূপ উৎসাহী কন্ঠে বললো,
—বাবা?

কুঞ্জ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—আমি যখন ছোট ছিলাম তখন মা আর বাবা সিপারেট হয়ে যায়।তারপর থেকে বাবা আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি।তার আমাদের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না।তাই আমরাও তার কোনো খোঁজ নেইনি।আসলে তার কোনো খোঁজ পাইনি।চেষ্টা করেছিলাম কয়েকবার তাকে খুঁজে বের করার কিন্তু পাইনি।

কিছু টুকটাক কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ হয়ে যায়। তারপর তারা বেরিয়ে গেল রূপের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।সেখানে যেতেই ইমামা বেগম আর রেজা সাহেব নিজের জামাইকে জামাই আদর করতে ব্যস্ত।রূপ চুপচাপ এককোণায় দাঁড়িয়ে নিজে বাবা মায়ে পাগলামি দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।আর তার হাসি দেখে কুঞ্জ মাঝে মাঝেই চোখ গরম করে তাকাচ্ছে। অনেক আদর টাদরের পর কুঞ্জ রূপের রুমে যাওয়ার সুযোগ পায়।তখন রাত দশটা।তনয় যে হাসপাতালে ভর্তি সেখান থেকে কল আসে কুঞ্জের ফোনে।কুঞ্জ ভ্রু কুঁচকায়।এ সময় হাসপাতাল থেকে ফোন এলো?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here