#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {১৪}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
কুঞ্জ ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে একজন মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।সে কুঞ্জকে বলে,
—আপনাদের পেশেন্টকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।
কুঞ্জ অবাক হয়ে যায়।বিস্মিত কন্ঠে বলে,
—পাওয়া যাচ্ছে না মানে?ওর তো হাত পা ভাঙা ও একা একা কোথায় যাবে?
মেয়েটা বললো,
—সেটা আমরা জানি না।আমরা এসে তাকে দেখতে পাইনি।আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।আমরা অনেক খুঁজেছি পাইনি।
কুঞ্জ বের হতে হতে বললো,
—আচ্ছা আমি এখনই আসছি।
রূপকে কোনো কিছু না বলেই চলে যায় কুঞ্জ। রূপও কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে না আড় চোখে শুধু একবার কুঞ্জের যাওয়ার দিকে তাকালো।কুঞ্জ বের হয়ে যেতেই দৌড়ে ঘরে গিয়ে কুঞ্জের নম্বারে ডায়াল করলো।কুঞ্জ ফোন না রিসিভ করে একটা ভয়েস মেসেজ পাঠালো রূপকে।যেটাতে ছিল,
—আমি একটু হাসপাতালে যাচ্ছি রূপ।আজ আসতেও না পারি তুমি ঘুমিয়ে যেও।
কুঞ্জ তড়িঘড়ি হাসপাতালে ঢুকে তনয়ের কেবিনে গেল।সেখানে কেউ নেই।কুঞ্জ সেখান থেকে তনয়ের জন্য যে ডাক্তার রাখা হয়েছিল।তার ফোনে কল করলো।সে ডাক্তার বললেন সে কিছুই জানেন না।তনয়ের নম্বারে কয়েকবার ফোন করা হলো।কিন্তু সেই কল রিসিভ হলো না।কুঞ্জ টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে কুঞ্জ সেখানের দায়িত্ব রত সকল গার্ড,নার্স,আর স্টাফদের উপর চিল্লাতে শুরু করলো।এতক্ষণে সারা শহরে জানাজানি হয়ে গিয়েছে।চিত্র শিল্পী কুঞ্জ দেওয়ানের সেক্রেটারি মেডিকেল থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে।মেডিকেলের নামে একটা মামলাও করা হলো।প্রাইভেট মেডিকেল হওয়ায় এই মামলাটা তাদের উপর খুব বাজে প্রভাব ফেলবে।বেশ খোঁজ খবর পাওয়ার পর জানা গেল।সেই নার্সটাও নেই।যে সকালে তনয়ের রুমে ডিউটি করতো।তার নাম রিফা।সে নতুন এসেছে এই হাসপালে।কোনো এক ডা. এর রেফারেন্সে ঢুকেছে এই হাসপাতালে।
রাত তিনটা দশ বেজে গিয়েছে এখনো কুঞ্জ বাসায় আসেনি।রূপ এখনও জেগে কি হয়েছে?হঠাৎ কুঞ্জ কেন বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল ও কিছুই বুঝতে পারছে না।অনিলের সাথে ওর ডিভোর্সের কিছুদিন আগে অনিলও এমন গভীর রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত।আর রূপ বসে বসে চোখের পানি ফেলতো।কুঞ্জের সাথে আছে মাত্র একদিন এখনি এতো রাতে ওকে রেখে চলে যাওয়াটা বেশ অপমান জনক।দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেল।কিন্তু কুঞ্জ এলো না।ভোরের দিকে রূপের একটু ঘুম ঘুম এলো।ঘুমিয়েই গিয়েছিল প্রায় তখনই মিলন দৌড়ে এসে জোরে জোরে ডাকতে থাকে তাকে।হাতে তার টেলিভিশনের রিমোট। মিলনের ডাকে রূপ বেশ বিরক্ত হয়।ধরফর করে উঠে বসে মিলনকে বলে,
—আরে কি হয়েছে?এমন করে কেউ ডাকে?
মিলন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
—আপু দেখ টিভিতে কি দেখাচ্ছে।
রূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কি?
মিলন রূপকে টানতে টানতে বসার ঘরে টিভির সামনে এনে দাঁড় করালো।তারপর বললো,
—দেখো।বলছে তনয় ভাই নাকি ঐ নার্সকে নিয়ে ভেগেছে।
টিভিতে তনয় আর রিফার ছবি দেখা যাচ্ছে। টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে তনয় আর রিফার নাকি প্রেমে সম্পর্ক ছিল। তাই তারা পালিয়ে গিয়েছে। রূপ হা করে দেখছে খবরটা।এর মধ্যে কুঞ্জ বাড়িতে প্রবেশ করে আড় চোখে একবার টিভি আর রূপের দিকে তাকিয়ে রূপের ঘরে চলে যায়।রূপও কুঞ্জের পিছন পিছন যায়।রুমে গিয়ে দেখে কুঞ্জ ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে। কুঞ্জের মুখ গম্ভীর। মনে হচ্ছে মুড অফ।তাই রূপ ভাবলো এক কাপ চা খাওয়ালে হয়তো ভালো করে কথা বলবে।তাই সে চলে গেল চা বানাতে।কুঞ্জ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রূপকে চা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।রূপের চোখমুখ ফোলা ফোলা লাগছে।কুঞ্জ বুঝতে পারলো যে মেয়েটা সারারাত ঘুমায়নি।কুঞ্জ কোনো কথা না বলে রূপের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে একটা চুমুক দিলো।চায়ে চুমুক দিয়ে কোনো মন্তব্য করলো না সে।রূপ আমতা আমতা করে বললো,
—তনয় কোথায় গিয়েছে কিছু জানেন?
কুঞ্জ মোবাইলে কেউকে কল করতে করতে বললো,
—না।
রূপ আবারও অামতা আমতা করে বললো,
—তনয় কি সত্যিই পালিয়ে গিয়েছে?
কুঞ্জ ফোন করলো কেউকে কিন্তু সে ধরলো না।আসলে কুঞ্জ এখনও তনয়কেই ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু একবারও ফোন রিসিভ হচ্ছে না।একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গেল কুঞ্জ। এদিকে রূপ এখনও উত্তরের আসায় কুঞ্জের দিকে তাকিয়ে আছে।কুঞ্জ রূপের দিকে তাকিয়ে বললো,
—আমার মনে হয় না। ঐ মেয়েটায় তনয়কে উস্কেছে।
সাথে সাথে রূপ প্রশ্ন করে,
—আপনি কি করে জানলেন?
রূপের আগ্রহ দেখে কুঞ্জ ভ্রু কুঁচকে বলে,
—তুমি এতো কিছু জেনে কি করবে?সিসি ক্যামেরায় দেখেছি মেয়েটা কিসব বলে যেন তনয়কে উস্কাচ্ছিল।উস্কে কোথাও নিয়ে গিয়েছে উইলচেয়ারে করে।
রূপ ভাবুক হয়ে বললো,
—হতেও তো পারে তনয়ও যেতে ইচ্ছুক ছিল?
কুঞ্জ রূপের চোখে চোখ রেখে বলে,
—আমি যদি এখন তোমাকে কোথাও নিয়ে যেতে চায় তুমি আমার সাথে যাবে না?
রূপ কোনো কিছু না ভেবে বলে দেয়,
—হ্যাঁ যাবো।যাবো না কেন?
কুঞ্জ বললো,
—তাহলে তনয় কেন যাবে না?হয়তো তনয় মেয়েটাকে বিশ্বাস করে গিয়েছে তারপর বিপদে পড়ে গেছে।
রূপ ভয়ে বলে উঠলো,
—তাহলে এখন কি হবে?
কুঞ্জ বিছানায় বসে বললো,
—মেয়েটাকে খোঁজা হচ্ছে। ওকে খুঁজে পেলে সব জানা যাবে।
রূপ আবার ভীত কন্ঠে বললো,
—আর যদি মেয়েটাকেই খুঁজে না পাওয়া যায় তখন?
কুঞ্জ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
—সবসময় নেগেটিভ কথা কেন বলো তুমি?এমনিতেই টেনশনে আছি তর উপর তুমি আবার নেগেটিভ কথা বলে টেনশন দিও না তো।
রূপ কাচুমাচু মুখ করে বললো,
—সরি সরি।মনে হলো তাই বললাম আর কি।
রূপও গিয়ে কুঞ্জের পাশে বসলো।সারারাত না ঘুমানোর কারণে ছেলেটাকে কেমন মলিন দেখাচ্ছে।রূপ পাশে বসতেই কুঞ্জের ফোন বেজে ওঠে।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে,
—স্যার মেয়েটার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।কিন্তু মেয়েটা কোনোভাবেই মুখ খুলছেনা।
কুঞ্জ তাড়াতাড়ি উঠে রূপকে চোখের ইশারা করে বোঝালো যে সে বের হচ্ছে। আর কলে থাকা ব্যক্তিকে বললো,
—তোমরা ওকে বেঁধে রাখো।আর জেরা করতে থাকো আমি আসছি।
(রিচেক করিনি বানান ভুল হতে পারে।)