হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৫} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
865

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৫}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

রূপ রুমে বসে বসে গল্পের বই পড়ছে।ঠিক তখনই তার রুমে মিলন এলো।রূপ বই বন্ধ করে ভাইয়ের দিকে তাকালো।হেসে বললো,
—কি ভাই স্কুল নেই?সকাল সকাল এখানে?

মিলন রূপের হাত থেকে বইটা নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে বললো,
—আজকে স্কুলে যাবো না।

রূপ বললো,
—আব্বু বকা দিবে না?

মিলন দাঁত বের করা একটা হাসি দিয়ে বললো,
—নাহ্ কারণ আজকে একজন আসবে।গেস কে আসবে?

রূপ কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো,
—ছোট খালামনিরা?

মিলন না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,
—নাহ্। সামওয়ান ভেরি স্পেশাল!

রূপ ভেবে পেল না এমন কোন স্পেশাল মানুষ আসবে তাদের বাড়িতে।মিলন আবার বললো,
—আচ্ছা আপু অনিল ভাইয়া কি অনেক সুন্দর?

রূপ চমকালো।এমুহূর্তে অনিলের কথা উঠবে সে ভাবিনি।আর এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে সে?তার কাছে তো একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুর্দশন পুরুষ মনে হতো অনিলকে।কিন্তু এখন কি জবাব দিবে সে।রূপ ভাবুক হয়েই বললো,
—হুম।

মিলন ভ্রু কুঁচকে বললো,
—আমার থেকেও সুন্দর?

রূপ মিলনের দিকে তাকালো।হেসে জবাব দিল,
—একটু!

মিলন এবার মুখ ভোঁতা করে বললো,
—কুঞ্জ ভাইয়ের থেকেও কি সুন্দর নাকি?

রূপ চমকালো কুঞ্জ নামটা শুনতেই।হৃৎপিণ্ড ঢিপঢিপ করতে শুরু করলো।এদিকে মিলন তার দিকে বেশ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রূপ ভেবে পাচ্ছে না সে কি বলবে?কারণ কুঞ্জর বদমেজাজের কারণে তার দিকে তেমন দেখা হয়নি।আর তাছাড়া সে কেনই বা কুঞ্জকে দেখবে?রূপ আনমনা হয়ে বললো,
—জানি না।

মিলন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—তার মানে কুঞ্জ ভাইয়ের থেকে সুন্দর না।আমি জানতাম কুঞ্জ ভাই সবদিক থেকে বেস্ট এবং পারফেক্ট।

রূপ মিলনের কথার প্রেক্ষিতে কোনো উত্তর দিচ্ছে না।শুধু শুনে যাচ্ছে।মিলন তার কথা শেষ করে বললো,
—আচ্ছা আপু তুমি বরং সুন্দর করে রেডি হয়ে নাও।স্পেশাল ব্যক্তি এখনই চলে আসবে।

রূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—তোদের স্পেশাল মানুষ আসবে তাতে আমাকে কেন সুন্দর করে রেডি হতে হবে?

মিলন কিছু না বলে চোখ মেরে একটা হাসি দিলো।তা দেখে রূপ নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
—আজব তো!

রূপ নিজের মতো ঘরের ভিতর ঘোরা ফেরা করছে।এর মধ্যে দরজার কলিং বেল বাজালো কেউ।রূপ একবার দরজার দিকে তাকিয়ে সোফায় বসা মিলনের দিকে তাকালো।মিলন সোফায় বসে টেলিভিশন দেখছে।কলিং বেল বাজায় তার কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।রূপ ভ্রুকুটি করে মিলনকে বললো,
—দেখ তো কে এসেছে?

মিলন বুঝি শুনেও শুনলো না এমন একটা ভাব নিয়ে বসে থাকলো।রূপ বিরক্ত হয়ে আবার বললো,
—কিরে দরজাটা খোল তাড়াতাড়ি?

মিলন এবার টিভির দিকে তাকিয়েই বিরক্তিকর কন্ঠে উত্তর দিলো,
—তুমি খুলো না একটু।

রূপ মুখ বাঁকিয়ে চলে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলতেই দেখে কুঞ্জর বাড়িতে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা সেই বিশাল চোখ জোড়ার পেইন্টিং। রূপের মুখ থেকে অস্পষ্টভাবে বেরিয়ে আসে,
—এটা?

পরমুহূর্তেই বুঝতে পারে পেইন্টিং এর পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে।তাই রূপ জিজ্ঞেস করলো,
—কে?

রূপের কে শুনে পেইন্টিং এর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে তনয়।দাঁত বের করে হেসে ভ্রু জোড়া নাচালো কয়েকবার।তনয় বললো,
—আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছেন?

রূপ অবাক হয়ে বললো,
—তুমি?

তনয় মুখে হাসি নিয়েই বললো,
—হ্যাঁ, আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম।

রূপ এবার পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়ে বললো,
—এটা?

তনয় পেইন্টিং এর দিকে একবার তাকিয়ে আবার রূপের দিকে তাকালো দাঁত গুলো বের করে বললো,
—এটা তো ভাইয়ের ঐখান থেকে খুলে এনেছি।

রূপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—তোমার ভাই পাঠিয়েছে?

তনয় না বোধক মাথা নাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বললো,
—আরে নাহ্।এটা তো আমি চুরি করে এনেছি। ঐদিন দেখছিলাম আপনি কত মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন এটা তাই ভাবলাম আপনার জন্য এটা নিয়ে আসলে কেমন হয়?এখন ভিতরে ঢুকতে দেন হাতে ব্যাথা হয়ে গেল।

রূপ সরে গেল।বিস্মিত হয়ে একটু আওয়াজ করেই বলে উঠলো,
—কিহ্ চুরি করে এনেছেন?আপনার ভাই জানলে কি হবে জানেন উনি যে রাগি আপনাকে তো মেরেই ফেলবে।

তনয় পেইন্টিংটা মিলনের পাশে রেখে রূপের দিকে ফিরে তাকালো।চোখে চোখ রেখে বললো,
—এতো তাড়াতাড়ি ভাইকে চিনে ফেললেন?

রূপ বিব্রত হলো মাথানিচু করে ফেললো।পরমুহূর্তে কিছু একটা ভেবে আবার মাথা তুলে ঝাঁজালো সুরে বললো,
—তুমি ভাবলে কি করে তোমার চোরাই জিনিস আমি নিবো?

তনয় মিলনের সাথে কুশল বিনিময় করছিল।রূপের কথা শুনে হাসলো কিছু বললো না।মিলন বললো,
—আপু তোর নেওয়া লাগবে না। আমি নিবো।এখন চুপ যা।আচ্ছা ভাই কুঞ্জ ভাই কখন আসবে?

রূপ চমকালো। কিহ্?কুঞ্জ আসবে?কেন আসবে?কুঞ্জ আসবে শুনেই ওর বুক কাঁপলো।মনে হচ্ছে হৃৎপিণ্ড একশো চল্লিশ গতিতে বিট করছে।সে দৌড়ে রুমে চলে গেল।গিয়েই দরজাটা ভালোভাবে আটকে দিলো।আজকে আর বাইরে যাবে না সে।

কিছুক্ষণ পর কুঞ্জও এলো।হালকা বেগুনি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে কুঞ্জ সাথে সাদা পাজামা।প্রতিদিনের মতো আজও তাকে অমায়িক লাগছে দেখতে। সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর্ব শেষ করে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল কুঞ্জকে আপ্যায়ন করতে।কুঞ্জ সোফায় বসে আছে আর তার সামনে রাখা বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার। কুঞ্জ খাবারের দিকে একবার তাকিয়ে আশে পাশে তাকালো।না রূপকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

বাইরের শোরগোল আর তোড় ঝরে বোঝা যাচ্ছে কুঞ্জ এসেছে।সে যে অনেক এসেছে তা রূপ বন্ধ দরজার ভিতর থেকে টের পাচ্ছে। কুঞ্জ আসার সারাটা সময় ঘরের ভিতর কাটালেও খাওয়ার সময় ঠিকই তাকে বের হতে হবে যা বোঝা যাচ্ছে। তার মা এসে এর আগেও ডাকাডাকি করে গিয়েছে কিন্তু রূপ বের হয়নি।তাই এবার ওর বাবা এলো ডাকতে।

রূপ বসে বসে ওর আর অনিলের বিয়ের ছবিগুলো দেখছে।চোখ দিয়ে না চায়তেও কিছু অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। খুবই সাদামাটা ভাবে হয়েছিল তাদের বিয়ে।অনিলের কয়েকজন বন্ধু আর রূপের বেস্ট ফ্রেন্ড শান্তি এদের স্বাক্ষী রেখে তারা তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা দেয়।অনিলের খুশির সীমা ছিলনা সেদিন।রূপের কাছে বিয়ের থেকেও বেশি ভালো লাগছিল অনিলের খুশি।কি নজর কাড়া সেই হাসি।বিয়ের পর চোখ ঝলসানো সেই হাসি না দেখলে যেন রূপের দিনই কাটতো না।অনিলের করা হাজারো পাগলামোতে যেন রূপ অভ্যাস্ত হয়ে গিয়েছিল।আস্তে আস্তে সেই পাগলামো কমতে শুরু করে।বিয়ের একবছর পর থেকে তার পাগলামো কমতে থাকে।দেড় বছরের মাথায় তার পাগলামো গুলো বিলীন হয়ে যায়।দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রূপ।এতো তাড়াতাড়ি তার জীবনে উপসংহার চলে আসবে সে ভাবতেও পারেনি।এসব ভাবনাতে বিভর রূপ শুনতেও পারছে না যে তার বাবা তাকে ডাকছে।

রূপের বাবা সেই কখন থেকে একাধারে দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে। রূপের বাবা রেজা সাহেব এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,
—রূপ দরজা আটকে বসে আছো কেন বাইরে এসো।সবাই এখন খেতে বসবে তুমিও আসো।

রূপ চোখ মুছে জবাব দিলো,
—আসছি।

রেজা সাহেব চলে গেলেন।রূপ বের হয়ে ডাইনিং-এ গেল।রূপ বের হতেই কুঞ্জ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তা দেখে তনয় হাসলো।কুঞ্জ হা করে রূপকে পা থেকে মাথা অবদি মেপে যাচ্ছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here