#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৬}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি
কুঞ্জের চাহনিতে রূপ অস্বস্তি বোধ করলো।গলা ঝেড়ে খাবার টেবিলে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।তনয় কুঞ্জের কানে কানে বললো,
—ভাই ভাবির কিন্তু নজর লেগে যাবে…
বলেই তনয় হেসে দিলো।কুঞ্জ আর তনয় গিয়ে রূপের সামনে চেয়ার টেনে বসলো।রূপের পাশে মিলন বসেছে।ইমামা বেগম পরিবেশন করছেন।রেজা সাহেব ডান পাশের একটা চেয়ারে বসেছে।কুঞ্জ খেতে খেতে বললো,
—আঙ্কেল তাহলে শুক্রবারে কাজটা সেরে ফেললে কেমন হয়?
রূপ ভ্রু কুঁচকালো কি বিষয়ে কথা বলছে সেটা বোঝার চেষ্টা করলো।সবাই রেজা সাহেবের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রেজা সাহেব গলা পরিষ্কার করে বললেন,
—করলে তো ভালোই হয়। এখন রূপ কি বলে সেটা ভাবার বিষয়!
রূপ এবার ওর বাবার দিকে তাকালো।ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কি বিষয়ে কথা হচ্ছে?
ইমামা বেগম ঝটপট বললেন,
—আমি তোকে পরে বলবো রূপ এখন খেয়ে রুমে যা। আমি এসে বলছি।
রূপ মায়ের কথা শুনলো না উল্টো আরও জেদ নিয়ে বললো,
—এখন বলতে কি সমস্যা?
কুঞ্জ এতোক্ষণ নিজের মতো মাথা নিচু করে খাচ্ছিল।রূপের কথার উত্তর দিলো সে তবে মাথা তুললো না,
—তোমার আর আমার বিয়ের বিষয়ে কথা হচ্ছে শুক্রবার আমাদের বিয়ে।তুমি কি বলো?
রূপের চোখমুখ মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল।খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালো চেঁচিয়ে বললো,
—কিহ্?বাবা কি বলছে উনি?
রেজা সাহেব স্বাভাবিকভাবেই বললেন,
—ঠিকই বলছে।
রূপের রাগ আরও বেড়ে গেল।সে আরও দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো,
—ঠিক বলছে মানে? বাবা তোমরা বুঝতে পারছো কি বলছো তোমরা?আমার ডিভোর্স হয়েছে এক সপ্তাহও হয়নি। আর আমি আবারও বিয়ে করবো সেটা ভাবলে কি করে তোমরা?মা তুমি তো সব জানো তাহলে তুমি কেন মত দিলে?
রূপের চিৎকার শুনে কুঞ্জ চুপ করে বসে থাকতে পারলো না।রূপকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—বাবার সাথে কিভাবে কথা বলছো রূপ?বাবার কাছে ক্ষমা চাও।
কুঞ্জের কথায় রূপের রাগ আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল।কুঞ্জের দিকে আঙুল তুলে বললো,
—আপনি একদম চুপ করে থাকবেন।মেহমান মেহমানের মতো থাকবেন।একদম আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে ঢুকতে যাবেন না।আমি আমার বাবার সাথে কিভাবে কথা বলবো সেটা আমি বুঝবো আপনি না।
রূপের কথায় রেজা সাহেব আর ইমামা বেগম ইতস্তত বোধ করলেন।রেজা সাহেব কঠিন স্বরে রূপকে বললেন,
—রূপ এখনই তুমি রুমে যাবে। তোমার সাথে আমি রুমে কথা বলবো।
রূপ রুমে গেল না।আবার উচ্চ স্বরে বললো,
—আমি কেন রুমে যাবো?তুমি আগে বলো কেন তুমি আমার থেকে মতামত না নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিলে?
রেজা সাহেব গরম চোখে রূপের দিকে তাকালেন।কাট কাট গলায় বললেন,
—তোমার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।কারণ তুমি যে মতামতই নেও তা ভুলই হবে।
রূপের চোখ ছলছল করছে। কুঞ্জ রূপের দিকে তাকিয়ে আছে এক পলকে।সে রূপকে এই রূপে প্রথম দেখলো।সে ভাবতেই পারছে না রূপ রেগে গেলে এতোটা ভয়ংকর হয়ে যায়।মিলন ভয়ে কাঁপছে।ও এইসব ঝগড়াঝাঁটি দেখতে পারে না।ইমামা বেগ সমানে রূপকে ঘরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।কিন্তু রূপ তো জেদি মেয়ে সে দাঁড়িয়ে তার বাবার সাথে তর্ক করে যাচ্ছে।
রূপ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—বাবা!আমি তো ক্ষমা চেয়েছি আমার ভুলের জন্য।আমি আবারও ক্ষমা চাইছি।তাও আমার সাথে এমন করো না।
রেজা সাহেব সোজাসাপ্টা বললেন,
—ক্ষমা চায়লেই ভুল শুধরে যায় না।একবার তো করলে নিজের পছন্দে বিয়ে।আমরা হাজার বার নিষেধ করার পরও তুমি তোমার মন মর্জি অনুযায়ী চললে।এখন কোথায় তোমার সেই পছন্দের মানুষ?
রূপ কেঁদে দিলো।ভেজা কন্ঠে বললো,
—বাবা এখানে দোষটা অনিলের না দোষটা আমার।তাই আজকে ও আমার সাথে নেই।
কুঞ্জ শক্ত করে কাঁটা চামচটা মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।আসলে সে নিজের রাগকে দমানো চেষ্টা করছে।অনিলের পক্ষে রূপের ছাফায় গাওয়া কুঞ্জের একদম পছন্দ হচ্ছে না।রেজা সাহেব উঠে দাঁড়ালেন খাবার টেবিল থেকে।রূপ অনেক আগেই দাঁড়িয়ে গিয়েছে।রেজা সাহেব বললেন,
—দোষটা যারই হোক শুক্রবার তোমার আর কুঞ্জের বিয়ে এটাই ফাইনাল।আমাদের সাথে যদি তুমি তোমার সম্পর্ক আবার ছিন্ন করতে চাও তাহলে এবারও পালিয়ে যেতে পারো।তবে মনে রেখো এবার ফিরে এলে আমাদের তোমার পাশে আর কোনো দিন পাবে না।
রেজা সাহেবের কথায় কুঞ্জের মুখে হাসি ফুটলো।রেজা সাহেব কুঞ্জকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—চলো কুঞ্জ আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলি।মাফ করবে এমন সিন ক্রিয়েট হবে বুঝিনি।
কুঞ্জ টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো বিনয়ী স্বরে জবাব দিলো,
—না ঠিক আছে আঙ্কেল আমি কিছু মনে করিনি।চলেন বাইরে যায়।
রূপের দিকে একবার তাকিয়ে বেরিয়ে গেল কুঞ্জ। সাথে তনয় আর রেজা সাহেবও গেলেন।রূপ তব্দা মেরে বসে আছে।ইমামা বেগম রূপের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
—দেখ মা সব তোর ভালোর জন্যই হচ্ছে। সবটা চুপচাপ মেনে নে না।
রূপ এক দৌড়ে নিজে ঘরে চলে গেল।ঘরে গিয়ে দেখলো পেইন্টিংটা ওর বিছানার মাথার কাছের দেয়ালে টানানো।দেখে রাগ হলো রূপের পেইন্টিংটা নষ্ট করতে গিয়েও কি একটা ভেবে থেমে গেল।মেঝেতে বসে হাটু মুড়ে কাঁদতে লাগলো।ও পারবে না অনিল ছাড়া অন্য কেউকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে।এদিকে বাবাকেও আবার কষ্ট দিতে পারবে না।তাহলে এখন ও কি করবে?সব কিছু এভাবে চুপ করে মেনে নিবে?
কুঞ্জ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। তনয় বিরক্তির চাহনিতে তাকিয়ে আছে কুঞ্জের দিকে।রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে এভাবে হাসার কোনো মানে আছে?তনয় না পেরে এবার কুঞ্জকে বললো,
—ভাই বাড়ি চলেন এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাগলের মতো আর কতক্ষণ হাসবেন?
কুঞ্জ এবার শব্দ করে হেসে দিলো।তনয়ও হাসলো।কতদিন পর কুঞ্জকে এভাবে হাসতে দেখছে সে।কুঞ্জ হাসতে হাসতে বললো,
—তনয় তুমি ভাবতে পারছো আমার বিয়ে তাও রূপের সাথে।মানে রূপের সাথে।
তনয় হা হুতাশ করে বললো,
—না সেটাই তো ভাবতে পারছি না।বিয়ে তো আমার সাথে হওয়ার কথা ছিল।আপনার সাথে কিভাবে হচ্ছে সেটাই ভাবতে পারছি না।
কুঞ্জ শক্ত গলায় বললো,
—কি বললে?
তনয় থতমত খেয়ে বললো,
—কই কিছু না তো!
কুঞ্জ ভাবুক হয়ে বললো,
—বুঝেছি তোমার একটা ব্যবস্থার করা লাগবে তুমি অনেক বেড়ে গিয়েছো।
তনয় ঠোঁট উল্টিয়ে নিজের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,
—কই বেড়ে গিয়েছি?আমি তো পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চিই আছি!
কুঞ্জ তনয়কে ধমক দিয়ে বললো,
—ফাজলামো করো আমার সাথে?
তনয় কিছু বলতে পারলো না তার আগেই কুঞ্জের ফোন বেজে উঠলো।কুঞ্জ একটু অবাক হলো।কারণ রূপ তাকে নিজে থেকে কখনো ফোন দিবে তা সে কল্পনাতেও ভাবেনি।তনয় কুঞ্জের ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে কুঞ্জের দিকে তকালো।অস্পষ্ট ভাবে বললো,
—ভাবি?!
চলবে..