হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৮} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
818

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৮}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

মেডিকেলের মাঠে রাখা ছোট ছোট বেঞ্চের একটিতে বসে আছে রূপ।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু ধারা।সে জানে না এটা খুশির কান্না নাকি দুঃখের কান্না?সবকিছু তো শেষ হয়েই গিয়েছে।তাহলে এখন তার আগমন কিসের টানে?কি করবে রূপ এখন কিছু বুঝতে পারছে না।শুধু বুকের সাথে একটা ফাইল চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে সে।তার কি করা উচিত এখন?অনিলকে বলবে?অনিলকে বললে যদি সে তার বাচ্চাকে নিয়ে যায় তার কাছ থেকে তাহলে কি হবে?রূপ নতুন করে আবার সব সাজানোর স্বপ্ন দেখছে।যে সাজানো পৃথিবীতে শুধু সে আর তার বাচ্চা ছাড়া আর কেউ থাকবে না।অনিলকে বললে যদি অনিল তার বাচ্চার দাবি করে তখন সে কি নিয়ে তার নতুন পৃথিবী গড়বে?এতোকিছুর মাঝে রূপ কুঞ্জের কথা ভুলেই গিয়েছে।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো কুঞ্জের থেকে তার অসংখ্য ফোন কল এসেছে।তা দেখে রূপ কুঞ্জকে কল করলো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না।কয়েকবার কল করার পর রূপ তনয়কে ফোন দিলো।তনয় ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো।রূপ সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
—আব..তনয় কুঞ্জ ফোন ধরছে না কেন?

তনয় অবাক হয়ে বললো,
—তাই নাকি?কাল না আপনারা ঘুরতে গেলেন?তারপর তো আমার ভাইয়ের সাথে আর কথা হয়নি।

রূপ ভ্রু কুঁচকে বললো,
—কই না তো কাল তো আমরা ঘুরতে যায়নি।

তনয় চিন্তিত স্বরে বললো,
—কেন ভাই যে সুন্দর করে সেজেগুজে বের হলো।আপনারা ঘুরতে বের হননি?তাহলে?

রূপ বললো,
—না আমরা ঘুরতে যায়নি।

তনয় বললো,
—আচ্ছা আমি দেখছি।ভাইয়ের খোঁজ পেলে আপনাকে জানাবো।

রূপ ছোট করে “ঠিক আছে” বলে ফোন কেটে দিলো।রূপ ফাইলটা খুলে আবারও দেখলো। চোখ দিয়ে আবারও পানি গড়িয়ে পড়লো।ঠোঁটে ফুটে উঠলো প্রাপ্তির হাসি।এই কয়েক মুহুর্তে হাজারো নতুন স্বপ্ন সাজাচ্ছে মেয়েটা।রূপ পেটে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
—স্বাগতম তোমাকে এই পৃথিবীতে। আমার পৃথিবীতে।

ব্যাগ পত্র নিয়ে উঠে পড়লো রূপ। বাড়িতে যেতে হবে।সকাল সকাল কেউকে কিছু না জানিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছে সে।না জানি বাড়ির সবাই কেমন প্রতিক্রিয়া করবে এটা জানলে?খুশি হবে নাকি অনিলের বাচ্চা বলে রেগে যাবে?এসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটছে রূপ যদিও রাস্তা অনেক হেঁটে বাড়ি পৌঁছানো সম্ভব না তবু সে হাঁটছে।

এদিকে সকাল থেকে বাড়িতে রূপকে না দেখতে পেয়ে ইমামা বেগম আর রেজা সাহেবের চিন্তার শেষ নেই।ইমামা বেগম কেঁদে দিলো। তা দেখে রেজা বললেন,
—কাঁদছো কেন তুমি?বলেছি না ও কখনো শুঁধরাবে না।দেখ বিয়ে করবে না বলে আবার পালিয়েছে।

ইমামা বেগম নিজের স্বামীর কথায় ঘোর বিরোধ জানিয়ে বললেন,
—না না আমার মেয়ে আর এমন কাজ করবে না।তুমি ওকে একটা ফোন দেও।

রেজা সাহেব ঘরে চলে গেলেন।তারও চিন্তা হচ্ছে, সেও অসম্ভব ভালোবাসে তার মেয়েকে কিন্তু ঐ যে বাঙালি বাবারা তো নিজেদের ভালোবাসা সবার সামনে প্রকাশ করতে অভস্ত্য নয়।তাই সেও নিজের জায়গা থেকে ঠিকই চিন্তা করছেন।আর তা লুকাতে সে নিজের ঘরে চলে গেলেন।যাওয়ার আগে বললেন,
—তোমার এতো দরকার হলে তুমি দাও।আমি গেলাম।

মিলনকে ফোনটা আনতে বললেন ইমামা বেগম।মিলন দৌড়ে গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসলো।ইমামা বেগম সাথে সাথে রাপকে কল করলো।
রূপ মায়ের কল দেখে দেরি না করে রিসিভ করে বললো,
—হ্যালো মা।

ইমামা বেগম উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন,
—রূপ কোথায় তুই?তুই আবার পালিয়েছিস?

রূপ মাকে থামিয়ে বললো,
—মা এসব কি বলছো? আমি কেন পালাবো?আমি একটা কাজে এসেছি।অনেক সকালে বের হয়েছি তোমরা ঘুমিয়ে ছিলে তাই তোমাদের বলে আসতে পারিনি।

রূপের মা স্বস্তি পেলেন।সে রূপকে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলে ফোন কেটে দিলেন।রূপ বাড়িতে কেউকে কিছু বলেনি।কাল অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর একা একাই আবার জ্ঞান ফিরে আসে তার।জ্ঞান ফিরতেই দূর্বল অবুভব করে সে।কোনো মতে কষ্ট করে উঠে খাটের উপর গিয়ে শুয়েছিল। তারপর এক ঘুমে বিকেল হয়ে যায়।এর মধ্যে তার মা আর তার ভাই কয়েকবার ডেকে গেলেও সে সাড়া দেওয়ার মতো বল পায়নি।সে কিছুটা ধারনা করতে পেরেছিল তার কি হয়েছে?তাই সে আর কেউকে কিছু জানায়নি।সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছে সন্দেহ দূর করতে।আর এখানে এসে দেখলো সে যা ভেবেছিল তাই-ই হলো।এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রূপ।এখনো অনেক দূর বাড়ি তাও সে হেঁটে চলেছে।হঠাৎ তার কনুইয়ের একটু উপরে ধরে একটানে তাকে ধরে কেউ পিছন দিকে ঘুরিয়ে দিলো।আচমকা এমন হওয়ায় রূপ ভয় পেয়ে গেল।সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,
—তুমি?

সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি তাকে পা থেকে মাথা অবদি দেখে বললো,
—স্বামীর থেকে আলাদা হয়েছো এক সপ্তাহও হয়নি এর মধ্যে আরও একটা গুছিয়ে ফেললে?

রূপ ফাইলটাকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরলো।কোনো ভাবে যদি এটা এই লোকটা দেখে ফেলে তাহলে তার নতুন পৃথিবী গড়ার আগেই ভেঙে যাবে।রূপ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—কি বলছো এসব অনিল?

অনিল বাঁকা হেসে বললো,
—কেন বুঝতে পারছো না?তোমার হবু স্বামীর কথা বলছি।যায়হোক কেমন আছো তুমি?দেখতে তো আগের থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছো।

রূপ নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো,
—ভালো আছি।

অনিল আবারো হাসলো।বললো,
—ভালো থাকারই কথা।তা তোমার হবু স্বামী এটা জানে যে তুমি কখনো মা হতে পারবে না?

রূপ অনিলের দিকে তাকালো।অনিল দেখতে বরাবরই সুন্দর।ফর্সা গায়ে নীল শার্ট আর সাদা পাজামায় তাকে আরও সুন্দর লাগছে।চুলগুলো একটু বড় বড় কোঁকড়া।ফর্সা মুখে কুচকুচে কালো চাপ দাঁড়ি। রূপ ঢোক গিললো আবার চোখ নামিয়ে বললো,
—তোমাকে কি কখনো কোনো ডাক্তার বলেছে?যে আমি মা হতে পারবো না?এসব আল্লাহর হাতে সে যখন যা চায়বে তখন তাই হবে।তার আগে কিছুই হবে না।

অনিলের হাসি চলে গেল মুখের থেকে।চুলগুলো পিছনে ঠেলে বললো,
—দেখো রূপ আমি আমাদের সম্পর্কটাকে বিষাক্ত করে ফেলতে চাই না।আমি চাই না আমাদের সম্পর্কটা এমন হয়ে যায় যাতে একে অপরকে দেখলে আমরা এড়িয়ে যায়।

রূপ অনিলকে বললো,
—আর আমি চাই না আমার সাথে কখনো তোমার দেখা হোক।

বলেই রূপ হাঁটা ধরলো সামনে।অনিলও আসছে তার পিছন পিছন।তা দেখে রূপ পিছনে তাকিয়ে বললো,
—কি সমস্যা?

অনিল ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,
—কই কোনো সমস্যা নেই তো।

রূপ আবার সামনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
—তাহলে আমার পিছন পিছন কেন আসছো?

অনিল হেসে বললো,
—জানি না কিন্তু কেন জানি না তোমার পিছন পিছন হাঁটতে ভালো লাগছে।

রূপের হাঁটা থেমে গেল।চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো।পেটে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে এ সময় পেটে ব্যাথা স্বাভাবিক এটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এদিকে সে অনিলকে দেখলে এমনিতেই দূর্বল হয়ে যায় তার উপর এই ছেলেটা তার পিছু নিয়েছে।রূপ পিছনে ফিরে শক্ত স্বরে বললো,
—আমার পিছন পিছন আর আসবে না বলে দিচ্ছি।

অনিল আবারও হাসলো।রূপের এমন বাচ্চামো সে প্রথম দেখছে না।তার ভালোই লাগে রূপের এসব পাগলামো।রূপের কথা মতো অনিল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।দাড়িয়ে দাড়িয়ে রূপের হেটে যাওয়া দেখছে।হঠাৎ রূপের পিছনে কিছু দেখে অনিল ভ্রু কুঁচকালো। রূপ হেঁটে কিছুদূর যেতেই শাঁই করে একটা কালো গাড়ি তার সামনে থামে।একটুর জন্য তার গায়ে মেরে দেয়নি গাড়িটা।রূপ ভয়ে গুটিয়ে গেল। অনিলও রূপের দিকে এগিয়ে আসতে গিয়েও থেমে গেল।কার তার আগেই কুঞ্জ নেমে এলো গাড়ি থেকে উষ্কখুষ্ক চেহারা নিয়ে এগিয়ে এলো রূপের দিকে।রূপ আঁতকে উঠলো কুঞ্জকে দেখে।কুঞ্জ অদূরে গাড়িয়ে থাকা অনিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো একবার।অনিল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে কুঞ্জ আর রূপের দিকে।কুঞ্জ রক্তিম চাহনি দিতেই অনিল কয়েক কদম দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। কুঞ্জ কোনো কথা না বলে রূপের হাতটা খুব জোরে চেপে ধরলো।সে অনাবরত জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে চলেছে।রূপকে টানতে লাগলো কুঞ্জ তা দেখে রূপ বললো,
—আরে কি করছেন আপনি?কাল থেকে কোথায় ছিলেন আপনি?আরে টানছেন কেন?

কুঞ্জ কোনো কথা শুনলো না।রূপকে টানতে টানতে নিয়ে প্রচন্ড জোরে ছুঁড়ে ফেললো গাড়ি সিটে।সাথে রক্তাক্ত হয়ে গেল রূপের সিটটা।পেটে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছে সে।কুঞ্জ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রূপের দিকে।সে বুঝতে পরছে না কি হচ্ছে?রূপ কেঁদে উঠলো শব্দ করে।কুঞ্জ কাঁপা কাঁপা গলায় রূপকে ডাক দিলো,
—রূপ?

রূপ কোনো সাড়া দিলো না।কুঞ্জ রূকে ধরতে গেলেই রূপ ঝটকা দিয়ে কুঞ্জের হাত সরিয়ে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো,
—ছুঁবেন না আপনি আমাকে।আপনি একটা খুনি আপনি আমার বাচ্চাকে খুন করেছেন।

কুঞ্জ যেন পাথরের মূর্তি হয়ে গেল।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—কিহ্?বাচ্চা? আম..আমি?

ভয়ে গলা শুঁকিয়ে যাচ্ছে কুঞ্জের। কুঞ্জ যতবার রূপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ততবারই রূপ এক কথায় বলে যাচ্ছে “আপনি খুনি।আপনি আমার সদ্য সাজানো স্বপ্নগুলোকে খুন করেছেন।আপনি আমার কাছে আসবেন না।”

কুঞ্জ কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।সে তো ইমামার কল পেয়ে রূপের নম্বার ট্রেস করে এখানে এসেছিল।এখানে এসে এমন কিছু হয়ে যাবে সে ভাবতেও পারিনি।সে কি করবে না করবে বুঝতে না পেরে তনয়কে কল করলো।তনয়কে সব খুলে বলে ওকে আসতে বললো।তনয় এসে রূপকে নিয়ে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

চলবে…

(রিচেক করিনি।কিছু বানান ভুল থাকতে পারে।আরও একটা পার্ট দিলাম এখন অন্তত দুই লাইন লিখে যান।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here