হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৯} #সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

0
770

#হয়তো_তুমি_আসবে_বলে {৯}
#সাদিয়া_আক্তার_জ্যোতি

হাসপাতালের গলিতে বসে আছে কুঞ্জ। তার মাথায় কিছু ঢুকছে না।কিভাবে কি হয়ে গেল?রূপ প্রেগন্যান্ট হলো কবে?রূপ প্রেগন্যান্ট তা জানার পরও অনিল কেন রূপকে ডিভোর্স দিলো?তার থেকেও বড় কথা সে রূপের মিসকারেজের জন্য দায়ী।কি করবে সে এখন?রূপের বাড়ির লোকদের এখনো কিছু জানানো হয়নি।তনয় করিডর দিয়ে পায়চারী করছে আর বার বার রূপের কেবিনের দিকে তাকাচ্ছে। তনয় এবার কুঞ্জের দিকে তাকিয়ে বললো,
—ভাই ভাবি প্রেগন্যান্ট তা আপনি আগে জানতেন?

কুঞ্জ থম মেরে বসে ছিল।তনয়ের কথা মাথা তুলে তাকালো তনয়ের দিকে।ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বললো,
—আমি জানতাম না।

তনয় এসে কুঞ্জের পাশে বসে বললো,
—কাল আপনারা ঘুরতে যাননি?

কুঞ্জ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—না কাল রূপ আসেনি।তনয় এগুলো কি হয়ে গেল?আমি রূপের বাচ্চাকে মারতে চাইনি।কিভাবে কি হয়ে গেল কিছু বুঝতে পারছিনা।আমি এখন কি করবো?রূপ আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।

তনয় কুঞ্জকে শান্তনা দিয়ে বললো,
—টেনশন করবেন না ভাই আগে দেখি ডাক্তার কি বলে।ভাবির বাড়ির লোকদের জানানো হয়েছে?

কুঞ্জ বললো,
—না তুমি ফোন করে বলো রূপ এক্সিডেন্ট করেছে।

তনয় তাই করলো।রূপের বাবাকে ফোন করে বললো রূপ বাড়ি যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে।তারা এ খবর শোনা মাত্র হাসপাতালে চলে আসলেন। এসে থেকে না প্রশ্ন করে যাচ্ছেন কিভাবে কি হলো?কেন রূপ একা একা বাইরে বের হলো?ইত্যাদি, ইত্যাদি।কিন্তু তনয় আর কুঞ্জ কোনো কথারই তেমন একটা উত্তর দিচ্ছে না।এর মধ্যে ডাক্তার এসে বললেন তারা এখন রূপের সাথে দেখা করতে পারেন।

হাসপাতালের ছোট্ট বেডে চুপচাপ শুয়ে আছে রূপ হাতে স্যালাইন দেওয়া।রূপের কেবিনে এসেছে রূপের মা,বাবা,রূপের ভাই আর তনয়।কুঞ্জ আসেনি ও তনয়কে বলে বাড়িতে চলে গিয়েছে।আসলে রূপের সামনে সে দাঁড়াতে পারবেনা।সে সবকিছু শেষ করে দিলো।এমন অপরাধ করার পর সে তার প্রিয়তমার চোখে তার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই দেখবে না।যা সে সহ্য করতে পারবে না।
রূপের মা মেয়ে এই অবস্থায় দেখে কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন।মিলন নিজের মাকে সামলাতে সামলাতে রূপকে বললো,
—আপু এসব কিভাবে হলো?

রূপ কি বলবে বুঝতে পারছে না।কুঞ্জের নামে নিজের পরিবারের কাছে নালিশও দিতে পারছেনা।কেন যেন কোথাও বেঁধে যাচ্ছে। এদিকে সত্য কথা বলে দিতে পারে ভেবে তনয় দ্রুত বলে উঠলো,
—আব.. ভাবি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখন একটা মোটরসাইকেল এসে মেরে দিয়েছে।

রূপ চোখ তুলে তাকালো তনয়ের দিকে।তনয় কাচুমাচু করে হাত দিয়ে দয়ার মতো করে বোঝালো যাতে কুঞ্জের নামে কিছু না বলে।রূপ তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
—আমি আর এখানে থাকতে পারছি না।

রেজা সাহেব বাইরে যেতে যেতে বললেন,
—আমি দেখছি।

রূপ ওর মা আর ভাইয়ে দিকে তাকিয়ে বললো,
—তোমরা একটু বাইরে যাও আমার তনয়ের সাথে কিছু কথা আছে।

ইমামা বেগম ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করলেন কি হচ্ছে। তারপর বের হয়ে গেলেন কেবিন থেকে।তার মনে হচ্ছে এখানে অন্যকিছু চলছে।কিন্তু কি চলছে তা তার বোধগম্য হচ্ছে না।

রূপ তনয়কে তার পাশে বসতে নললো।তনয় রূপের পাশে চেয়ার টেনে বসলো।তনয়ের কাছে রূপকে অনেক গম্ভীর লাগছে।তনয় গলাটা হালকা ঝেড়ে বললো,
—এখন কেমন লাগছে ভাবি?

রূপ হঠাৎই বলে উঠলো,
—ভাবি কেন ডাকো আমাকে?আমি কি তোমার ভাবি?তোমার কোন ভাইয়ের বউ?

তনয় থতমত খেয়ে গেল।রূপ এসময়ে এমন প্রশ্ন করতে পারে তা তার ধারণার বাইরে ছিল। তনয় আমতা আমতা করে বললো,
—আব.. মানে আপনাকে দেখলে কেমন যেন একটা ভাবি ভাবি ফিলিংস আসে তাই আরকি ভাবি ডাকি।

রূপ বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
—মজা করো না।

তনয় জোর দিয়ে বললো,
—সত্যি বলছি ভাবি।

রূপ অন্যদিকে তাকিয়েই বললো,
—কুঞ্জ কোথায়?

তনয় চমকে গেল।রূপের কথাবার্তা শুনে সে কিছু বুঝতে পারছে না।রূপের তো এখন কেঁদে কেটে সারা পৃথিবী ভাসানোর কথা তাহলে রূপ এতো শান্ত কেন?আবার কুঞ্জ ভাইয়ের খোঁজ নিচ্ছে।তনয়ের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রূপ আবার বললো,
—তোমাকে পাঠিয়েছে নিজের সাফাই দেওয়ার জন্য?

তনয় বললো,
—না না ভাই আসলে অনেক গিল্টি ফিল করছে তাই আপনার সামনে আসতে চায়ছে না।

কুঞ্জ নিজেরে ঘরে দরজা আটকে বসে আছে।দেয়ালে টানানো রূপের চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে সে।হাতের কাছে থাকা একটা গ্লাস ছুঁড়ে মারলো কুঞ্জ। লেউসি দেওয়ান কুঞ্জের ঘরের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন। কুঞ্জের এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে সে থেমে গেলেন এগিয়ে এসে ডাক দিলেন কুঞ্জকে।
কুঞ্জর পাশে গিয়ে বসতেই কুঞ্জ তার মাকে জরিয়ে ধরলো।কত বছর পর তাকে এভাবে জরিয়ে ধরলো তার ছেলে।ফুঁপিয়ে উঠলো কুঞ্জ। চমকে উঠলেন লেউসি দেওয়ান।সে যখন নিজের ক্যারিয়ারের জন্য তার ছেলেকে ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়েছিলেন তখন তার ছেলের বয়স ছিল পাঁচ বছর।তখনও তার ছেলে কেঁদেছিল। তবে তারপর আর কখনো সে তার ছেলে কাঁদতে দেখেনি।রূপ চলে যাওয়ার পর তার ছেলেটা আরও একা হয়ে যায়। তখন থেকে ছেলেটা একাকিত্বকে নিজের সঙ্গী করে।তখন থেকে কারও থাকা না থাকা ছেলেটার জীবনে বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলে না।লেউসি দেওয়ান নিজের ছেলের মাথায় হাত বুঁলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
—কি হয়েছে বাবা?

কুঞ্জ কোনো উত্তর দিলো না।তা দেখে উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন,
—বলো বাবা, মাকে কি হয়েছে?

কুঞ্জ চোখ মছে নিলো।বললো,
—অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি আমি মা।কি করবো এখন আমি?

লেউসি দেওয়ান বললেন,
—কি হয়েছে?

কুঞ্জ বললো,
—আমি খুন করেছি মা।

লেউসি দেওয়ান চমকে গেলেন কি বলছে এসব তার ছেলে?তিনি অবাক হয়ে বললেন,
—কিহ্?কি বলছো এসব?কাকে খুন করেছো?

কুঞ্জ বললো,
—একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে।

লেউসি দেওয়ান বললেন,
—মানে?

কুঞ্জ উঠে বাথরুমে চলে গেল।লেউসি দেওয়ান কিছুই বুঝতে পারছেন না।কুঞ্জ এসব কি বলে গেল?

রূপের রুমে বসে আছে রূপ আর ওর বাবা।বাবাকে ও নিজেই আটকে রেখেছে কি কথা আছে বলে।কিন্তু তখন থেকে কিছু বলছে না চুপচাপ বসে আছে।রেজা সাহেব এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,
—কিছু বলবে?নাকি চলে যাবো?

রূপ নড়েচড়ে বসলো।তারপর বললো,
—আমি কুঞ্জকে বিয়ে করতে রাজি!

রেজা সাহেব অবাক হয়ে গেলেন।সে ভাবতেও পারিনি রূপ কুঞ্জকে বিয়ে করতে কখনো রাজি হবে। এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে।স্ক্রিনে কুঞ্জের নম্বার দেখে খুশি হন এইমাত্র কুঞ্জের নাম নিলো আর এখন কুঞ্জ ফোন দিলো।কল তুলতেই কুঞ্জ বললো,
—হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।কেমন আছেন?

রেজা সাহেব হেসে বললেন,
—জ্বী বাবা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

কুঞ্জ বললো,
—জ্বী আঙ্কেল ভালো।আঙ্কেল বলছিলাম কি রূপ যখন বিয়েটা করতে চায়ছে না।তখন নাহয় থাক এ নিয়ে আর কথা না বাড়ায়?!

চলবে…

(কাল একটা পার্ট দিবো বলেও দিইনি তার জন্য সবার কাছে সরি।রিচেক করিনি।তাই ভুল থাকতে পারে।আর আজকে রাতেও এক পার্ট আসবে। অনেক রাত হলেও গল্প আসবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here