#হলুদ_বসন্ত
#পর্ব_০৪,০৫
#Eshika_Khanom
পর্ব_০৪
আয়াত তখনই আদ্রাফের কথার মাঝে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠল,
“আমি বাবার সাথে দেখা করবো!”
আদ্রাফ সরু চোখে আয়াতের দিকে তাকালো। মেয়েটাকে খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে হাজারো চিন্তা মাথায় খেলছে তার। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আদ্রাফ দুষ্টুমি স্বরে বলল,
“যদি যেতে না দেই?”
আয়াত আদ্রাফের কাছে থেকে এই উত্তর আশা করেনি। মুখ ভার করে নিল সে। কোথা থেকে যেন আদ্রাফের প্রতি কিছু অভিমান এসে ভর করল আয়াতের মনের মধ্যে। আদ্রাফ কিছুটা আন্দাজ করল বিষয়টি।
আদ্রাফ মুচকি হেসে আয়াতের বরাবর দাঁড়ালো। আলতো করে স্পর্শ করল আয়াতের কপোলদ্বয়। মৃদু কেঁপে উঠলো আয়াত এক শীতল স্পর্শে। আদ্রাফ বলতে লাগলো,
“তুমি যদি হও অভিমান
আমি হব বৃষ্টি
ভিজিয়ে দিব তোমার কষ্ট যত,
বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় অনুভব করবে আমার মনে আছে ভালোবাসা যত।”
আয়াত বিস্ময়ের সহিত তাকালো আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফের এই আলতো স্পর্শে ইতস্তত করতে থাকলো। আদ্রাফের বুঝতে পারলো আয়াতের অস্বস্তির কারণ। দূরত্ব বাড়িয়ে দিল নিজেদের মধ্যে।
মাথা আরও নিচু করে নিল আয়াত। আদ্রাফ বললো,
“আজকেই নিয়ে যাব তোমায়, রেডি হয়ে থেকো বিকেলে।”
এক চিলতে হাঁসি ফুটে উঠলো আয়াতের গালে। টোল পড়ল গালের এক কোণে। আদ্রাফের চোখ এড়ালো না দৃশ্যটি। অন্তরে গেঁথে গেল সেই স্নিগ্ধ মূহুর্ত। আয়াত বলল,
“আজ সত্যি যাব? কখন?”
আদ্রাফ বললো, “বিকেলে ইনশাআল্লাহ।”
আয়াত খুশি হয়ে তাদের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে আদ্রাফকে জড়িয়ে ধরতে নিল। ঠিক জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই খেয়াল হলো সে কি করতে যাচ্ছিল। নিজেকে দমিয়ে নিল সে। আদ্রাফ প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আয়াত পড়লো এক অস্বস্তিকর অবস্থায়। ছুটে পালাতে মন চাইলো তার। আদ্রাফ বললো,”সময়মতো তৈরি থেকো কিন্তু।”
আয়াত বলল, “হুম।”
আর এক মূহুর্ত দাঁড়ালো না আয়াত। দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে গেল সে। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। লজ্জার গুটিয়ে নিল নিজেকে।
অপরদিকে আদ্রাফ ফোন বের করে কল দিল নুহাশকে। নুহাশ সাথে সাথেই রিসিভ করল। বলল,
“কি ভাই? আমায় তলব যে?”
আদ্রাফ বলল,”শোননা।”
নুহাশ বলল, “বলনা।”
আদ্রাফ বলল, “আমি না আজ তোর সাথে দেখা করতে পারবো না।”
নুহাশ অপরপাশ থেকে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল, “কেন?”
আদ্রাফ বলল, “জরুরী কাজ আছে ভাই।”
নুহাশ প্রশ্ন করল, “কি কাজ?”
আদ্রাফ বলল, “এমনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।”
নুহাশ রেগে বলল, “বলা যায় না?”
আদ্রাফ বলল, “আসলে একটা জায়গায় যাব।”
নুহাশ বলল, “গার্লফ্রেন্ড নিয়ে? লং ড্রাইভ নাকি আদ্রাফ? কিরে আগে বলিস নাই তো।”
আদ্রাফ বলল, “আর লং ড্রাইভ? কাজ আছে ভাই।”
নুহাশ বলল, “বুঝি বুঝি কি কাজ আমি বুঝি আদ্রাফ৷
আদ্রাফ বিরক্তি নিয়ে বলল, ” ধুর!”
নুহাশ হেসে বলল, “মেয়েদের মতো লজ্জা পাস কেন?”
আদ্রাফ বলল, “ফোন রাখলাম। আল্লাহ হাফিজ। ”
নুহাশ পকেটে হাত গুজে বলল, “খোদা হাফিজ।”
.
.
.
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সাথে নিজেদের গন্তব্যে চলছে আয়াত আর আদ্রাফ। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন ড্রাইভার। পিছনে বসে আহ আয়াত আর আদ্রাফ। দুইজনের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে বেশখানিক। গাড়িতে নীরবতা বিরাজমান। প্রত্যেকে যেন আলাদা আলাদা গ্রহের প্রাণী। আয়াত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে, আর আদ্রাফ তাকিয়ে রয়েছে আয়াতের দিকে। দুইজন ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য দেখতেই ব্যস্ত। সময়ের সাথে সাথে তারা পৌছে গেল আয়াতের বাবার বাড়িতে। তবে বাবার বাড়ির চেয়ে আয়াতের সৎ মায়ের বাড়ি বলাই বেশ ভালো। গন্তব্যে পৌছে গাড়ি থেকে নেমে গেল দুইজন। আয়াত স্থির হয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল, আর নড়লো না বিন্দুমাত্র। আদ্রাফ পিছনে দাঁড়িয়ে একজনের সাথে কথা বলছিল। তার মধ্যেই সে আয়াতকে ডাক দিয়ে বলল,
“আয়াত তুমি ভিতরে যাও, আমি একটু কথা বলে আসছি।”
আয়াত পিছে ঘুরিয়ে সম্মতি জানিয়ে বাড়ির মেইন গেটের দিকে হাঁটা ধরল। দরজার সামনে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার কলিংবেল বাজালো। ভিতর থেকে প্রশ্ন ছুড়লো,
“কে?”
আয়াত কিছু উত্তরে বলতে চাইলেও গলায় সব দলা পাকিয়ে আসলো। পরিচয় দিতে পারলো না যে কে সে? দরকার লুকিং গ্লাস দিয়ে বাড়ির কাজের লোক টুম্পা দেখলো আয়াত এসেছে। সে দরজা খুলে খুশিমনে এক চওড়া হাসি নিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেমন আছেন গো আপামনি?”
আয়াত ধীরে বলল, “হুম ভালো আলহামদুলিল্লাহ। তুই? ”
টুম্পা বলল, “আমি ভালা আছি বেশ আপামনি। ভিতরে আসেন, ভিতরে।”
টুম্পা আয়াতকে ভিতরে ডেকে জোরে জোরে আয়াতের সৎমাকে ডাকতে থাকে,
“ও খালা আয়াত আপামনি আসছে, আয়াত আপামনি আসছে।”
টুম্পার ডাক শুনে ঘরের ভিতর থেকে আয়াতের বাবার চোখে এক খুশির রেশ ফুটে উঠে। মুখ বাঁকিয়ে ফেলেন রাহেলা। চুলটায় খোপা বেধে বাহিরে বেরিয়ে আসেন। আয়াতকে দেখে একটু উঁকিঝুঁকি মারেন তার চারপাশে। তারপর বিলাপ করতে লাগলেন,
“হায় হায় হায়, মাইয়া তুই একদিনও সংসার করতে পারলি না? জামাই ভাগায়ই দিল তোরে।”
আয়াতের চোখে মুখে থেকে রাগ যে উপচে পড়ছে। তবুও সে নিজের রাগ সংযত করে বলল,
” বাবা কোথায়?”
তিনি বললেন, “ও মুখপুড়ী এখন বাবাকে ইশারা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার ঘাড়ে চাপবি? তা হবেনা।
এরপর আয়াতের সৎ মা রাহেলা আউয়াতের বাহু ধরে বলল,
“তুই দূর হ আমার বাড়ি থেকে।”
আয়াত আর নিজেকে সংবরণ করতে পারলো না। বাহু ঝাকিয়ে নিজেকে রাহেলার কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিল সে। রাহেলাকে বলল,
“কি বললে তোমার বাড়ি? হ্যাঁ অবশ্য বাড়িটাকে তো দোযখ খানার মতোই বানিয়ে রেখেছ। এবং দোযখখানা তোমার বাড়ি হিসেবে উপযুক্ত।”
রাহেলা হতভম্ব হয়ে গেলেন আয়াতের আচরণে। শান্তশিষ্ট মেয়েটার এমন অগ্নিমূর্তি তিনি প্রথম দেখলেন। আয়াত টুম্পাকে প্রশ্ন করল,
“বাবা কই টুম্পা।”
টুম্পা ভয়ার্ত চোখে বলল, “খালু নিজের ঘরে আপামনি।”
আয়াত আর কিছু তোয়াক্কা না করে রাহেলার পাশ কাটিয়ে চলে গেল বাবার রুমে। পিছন থেকে আয়াতকে পর্যবেক্ষণ করছিল আদ্রাফ। মেইন গেট টুম্পা আর লাগায়নি বলে ঘরের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ বাহিরে থেকে শুনা যাচ্ছিল। আর তাই আদ্রাফ জলদি ঘরের মধ্যে চলে আসে। এসে প্রথমে যেমন রাহেলার আচরণে তার রাগ উঠছিল তেমনই পরবর্তীতে আয়াতের প্রতিবাদ করাটা দেখে বেশ খুশি হল আদ্রাফ। আদ্রাফ সোজা রাহেলার সামনে এসে বলল,
” আদ্রাফের মৃত্যুর পরও আয়াতের গায়ে কেউ কোনো আঁচ দিতে পারবেনা। আর আয়াতকে তাড়িয়ে দেওয়ার সাধ্য আদ্রাফের নেই।”
রাহেলা বললেন, “তা তুমি মরবা কবে তা তো হয়তো জানি, এই আয়াতরে কবে নিয়া মরবা?”
আদ্রাফ বিনিময়ে শুধুই একটা হাসি দিল। রাহেলা আদ্রাফের হাসির বিনিময়ে আদ্রাফকে আয়াতের বাবার রুম দেখিয়ে দিল। তারপর আদ্রাফ চলল আয়াতের বাবার ঘরে। সেখানে আয়াত বসে আছে তার বাবার কোলে মাথা রেখে। আয়াতের বাবা পরম আয়েশে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। পৃথিবীর খুবই সুন্দর দৃশ্য যেন এটি। আদ্রাফ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলো বাবা মেয়ের ভালোবাসা। আয়াত তার বাবার কোলে মাথা গুজে চোখ বন্ধ করে আছে। আদ্রাফকে দেখতে পেলেন আয়াতের বাবা। তখনই তিনি মোচড়া মোচড়ি শুরু করে দিলেন। চমকে উঠলো আয়াত, ঠাওড় করতে পারলো না বাবার এই অস্বস্তির কারণ। আয়াতের বাবা একদৃষ্টে আদ্রাফের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। হাঁসফাঁস শুরু করে দিয়েছেন তিনি। আয়াত উঠে বসে বাবার গাল ধরে বলল,
“বাবা কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছ কেন??”
তবে বিনিময়ে আর উত্তর পেল না আয়াত।
#চলবে
#হলুদ_বসন্ত
#পর্ব_০৫
#Eshika_Khanom
আয়াতের বাবা একদৃষ্টে আদ্রাফের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। হাঁসফাঁস শুরু করে দিয়েছেন তিনি। আয়াত উঠে বসে বাবার গাল ধরে বলল,
“বাবা কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছ কেন??”
তবে বিনিময়ে আর উত্তর পেল না আয়াত। পাবেই বা কিভাবে? তার বাবা কি কথা বলতে পারে? আয়াতের বাবা শুধু নিজের মেয়ের দিকে করুণ চাহুনিতে তাকিয়ে রইল। আয়াতের বুকে তীরের মতো বিঁধলো বাবার সেই করুণ দৃষ্টি। নিজের মুখটাকে সরিয়ে নিল সে। আদ্রাফ আয়াতের বাবার সামনে আসলো। তারপর বলল,
“আপনাকে বাবা বলে ডাকতে পারি?”
ভিতরে ভিতরে অবাক হয়ে গেলেন আয়াতের বাবা। আদ্রাফ বলল,
“শুধু মাথা নাড়িয়ে বোঝালেই হবে।”
আয়াতের বাবা না করেননি, মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিয়েছেন আদ্রাফকে। আদ্রাফ আয়াতের বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
” বাবা আমি এটা বুঝতে পারছি আপনি জানেন আমি এইডস আক্রান্ত। ”
আয়াত অবাক চোখে তাকায় বাবার দিকে। সে জানতে দিতে চায়নি তার বাবাকে এই বিষয়টি।
আদ্রাফ বলে,
“বাবা আপনার মেয়ের আমার দ্বারা কোনো ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনার মেয়েকে আমি কোনোদিন স্পর্শ করব না।”
কথাটা শোনামাত্রই আয়াত মাথা নিচু করে ফেলল। আয়াতের বাবাও মাথা নিচু করে ফেললো। আদ্রাফ বলল,
“আমি জানি আমার আপনার মেয়েকে বিয়ে করা উচিত হয়নি। কিন্তু আপনার মেয়ের সকল স্বপ্ন পূরণ যে এখানে থেকে হতো না বাবা।”
আয়াতের বাবার চোখ ভিজে আসতে থাকে। আদ্রাফ আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে ,
“আমি আয়াতের বন্ধু হয়ে শেষ সময়টুকু বাঁচতে চাই বাবা।”
আয়াতের চোখের কোণে অশ্রু জমতে থাকলো। কি কারণে তারা চোখেতে জমা হচ্ছে তা জানা নেই আয়াতের। নিজের অনুভূতিগুলোকে আটকাতে পারছে না আয়াত। দৌড়ে বেরিয়ে গেল সে। আদ্রাফ আর আয়াতের বাবা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। আয়াত দৌড়ে নিজের রুমে চলে গিয়ে নিজেকে রুমে বন্দী করে নেয়। রাহেলা রান্না করার সময় এই দৃশ্য দেখতে পায়। টুম্পাকে প্রশ্ন করে,
“কিরে টুম্পা এর আবার কি হলো?”
টুম্পা শিলনড়া চালাতে চালাতে বলে,
“কি জানি খালা।”
রাহেলা পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। অপরদিকে ঘরবন্দী আয়াতের অশ্রু যেন কোনো বাঁধা মানছে না। আয়াত কেন এতো কাঁদছে তা সে নিজেও বুঝতে পারছে না। আদ্রাফের কথা শুনে কি সে এতো কাঁদছে? কেনই বা কাঁদছে? উত্তর খুঁজে পায়না আয়াত। কেঁদে কেঁদেই নিজেকে শান্ত করতে থাকে সে। আদ্রাফ আয়াতের রুমের বাহিরে থেকেই আয়াতের কান্না শুনতে পারছিল। একবার ধাক্কা দিতে যায় আদ্রাফ, দিতে যেয়েও দেয়না। অদৃশ্য এক বাঁধা আকঁড়ে ধরে যেন তাকে। মন বলতে থাকে,
“থাকুক আয়াত, কাঁদুক নিজের মতো। তারও আদ্রাফের উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, ভালোবাসা বুঝতে হবে। বুঝতে হবে তার বসন্তের বায়ুর মতো স্নিগ্ধ প্রেমকে।”
.
.
.
“হঠাৎ এতো চুপচাপ কেন তুমি?” আয়াতকে প্রশ্ন করল আদ্রাফ। আয়াত কিছু বলল না। আদ্রাফ প্রশ্ন করল,
“আমি কি ভুল কিছু করেছি আয়াত?”
আয়াত আদ্রাফের কথার উত্তর না দিয়েই প্রশ্ন করল,
“আপনি কি সত্যিই এইডস আক্রান্ত আদ্রাফ?”
আদ্রাফ হাসলো। প্রশ্ন করল, “কেন?”
“বলুননা প্লিজ।”
“তুমি তো জানোই আমি আক্রান্ত এই রোগে। এখনো হয়তো রোগটা আমায় তীব্রভাবে আঁকড়ে ধরছে না। তবে জানো আয়াত আমার মনে হয় আমার হায়াত আর কয়েক মাস।”
কথাটা শুনেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আয়াত। আজ সে কেন আদ্রাফকে নিয়ে এতো কষ্ট পাচ্ছে সে জানেনা। আয়াত প্রশ্ন করল,
“এই রোগের কি কোনো প্রতিকার নেই?”
আদ্রাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “নাহ!”
আয়াতের কান্নার বেগ বেড়ে গেল। আদ্রাফ ড্রাইভারকে গাড়িটা এক সাইডে পার্ক করতে বলল। গাড়ি থামার পর আদ্রাফ দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর আয়াতের পাশের দরজা খুলে আয়াতকে বলল,
“বের হও গাড়ি থেকে।”
আয়াত প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আদ্রাফের দিকে। আদ্রাফ বলল,
“নামো আয়াত!”
নেমে গেল আয়াত গাড়ি থেকে। আদ্রাফ আয়াতের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে বলল,
“তোমার হাতটা ধরতে পারি?”
আয়াত কিছু না ভেবেই নিঃশব্দে হাত রাখলো আদ্রাফের হাতের উপর। আদ্রাফ শক্ত করে আয়াতের হাত ধরল, এমনভাবে যেন হাতটা ছাড়লেই আয়াত ছুটে পালিয়ে যাবে। তারপর বলল,
“চলো আয়াত।”
আয়াতের উত্তর আশা না করেই আদ্রাফ আয়াতকে নিয়ে হাঁটতে থাকল। হাঁটতে হাঁটতে তারা একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে পৌছলো। আদ্রাফ আয়াতকে প্রশ্ন করল,
“চা খাবে?”
আয়াত বলল, “মন্দ হবেনা বোধহয়।”
আদ্রাফ আয়াতকে দোকানের সামনে থাকা বেঞ্চিতে বসতে বলে দোকানদারের কাছে গিয়ে দুই কাপ দুধচা বানাতে বলল। তারপর আবার আয়াতের পাশে এসে বসল। প্রশ্ন করল,
“আজ ক্ষণে ক্ষণে এতো কাঁদছে কেন আয়াত?”
আয়াত চোখ মুখ কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“প্রশ্নটা কি আমায় করলেন?”
“যাকে করেছি, সে নিশ্চিত ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছে।”
“উফফ, আপনি সোজাভাবে কথা বলতে পারেন না।”
“কি করব? বউটাই আমার একটু বাঁকা।”
“কি আমি বাঁকা?”
“তুমি কি নিজেকে আমার বউ মনে কর?”
আয়াত কতক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর আবার বলল,”হুম”
আদ্রাফ অবাক হলো তবে প্রকাশ করল না। আয়াতকে প্রশ্ন করল, “কি হুম?”
“যেটা প্রশ্ন করলেন?”
“উত্তরটা দিতে এতো সময় লাগলো কেন?”
“নিজেকে মন প্রশ্ন করছিলাম।”
আদ্রাফ তখন আয়াতের দিকে একটু ঝুকে বলল,
“তবে মন কি শুধুই হুম উত্তর দিল?”
“না অনেক কিছুই উত্তর দিয়েছে।”
আদ্রাফ সোজা হয়ে ঠিকঠাকমতো বসে অতি উৎসুক ভাব নিয়ে প্রশ্ন করল,
“তবে বল বল কি উত্তর দিয়েছে আমার বউয়ের মন?”
আয়াত হাসিমুখে বলল, “বলব না।”
আদ্রাফ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল, “কেন বলবে না?”
আয়াত উত্তর দিল, “আমার ইচ্ছে জনাব।”
কিছু সময় অতিবাহিত হল। দুইজনেই সেই সময়টুকু চুপ ছিল। আদ্রাফ পুনরায় বলতে শুরু করল,
“আয়াত আমাকে ভালোবাসো?”
আয়াত তটজলদি উত্তর দিল, “জানিনা।”
“কেন?”
“আদ্রাফ আমার আপনার প্রতি এক মায়া কাজ করা শুরু করেছে। তবে সেটা ভালোবাসা নাকি আমি জানিনা।”
আদ্রাফ বলল, “আমায় ভালোবেসো না আয়াত।”
অবাক হল আয়াত আদ্রাফের কথা শুনে। বলল,
“ভালোবাসা তো পাপ নয়। তবে আমি আপনাকে ভালোবাসবো না কেন?”
“কারণ ভালোবাসার মানুষটা তো আর বেশিদিন তোমার পাশে থাকবে না।”
“মন থেকে তো পাশে থাকবে।”
আদ্রাফ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল আয়াতের দিকে। আয়াত মিষ্টি হেসে বলল,
“বাসায় চলুন।”
এটা বলে আদ্রাফের অপেক্ষা না করেই সে উঠে গেল। আদ্রাফ বিল মিটিয়ে নিতে গেলে দোকানদার প্রশ্ন করল,
“চা খাবেননা?”
“না থাক।”
এটা বলেই আদ্রাফও চলে গেল সেখানে থেকে এবিং গাড়িতে উঠে পড়ল।
.
.
.
“দাদী কই তুমি?” বাড়িতে ঢুকেই দাদীকে খুজতে থাকল আয়াত। সবাই খুব অবাক হলো। আয়াত তো সহজে নিজের মুখটাই খুলতো না। এমন ভাব ছিল তার যেন সব বিষন্নতা তার উপর ভর করেছে। তবে হঠাৎ করে কিভাবে যেন খুব প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে সে। হঠাৎ এতো পরিবর্তন! আয়াত ডাকতেই থাকলো দাদীকে। দাদী এসে বললেন,
“কিরে আমার সতীন ডাকিস কেন?”
আয়াত দৌড়ে এসে দাদীকে জড়িয়ে ধরল। আর বলল,
“তোমায় খুব মিস করেছি দাদী।”
“তাই নাকি রে?”
“হুম।”
“আদ্রাফ তোকে বকেনি তো?”
আদ্রাফ মাঝ দিয়ে বলল, “ওমা আমি আবার ওকে বকব কেন?”
দাদী বললেন, “তোকে বিশ্বাস নেই।”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আয়াত। আদ্রাফ করুণ স্বরে বলল,
“সতীনকে পেয়ে আমায় ভুলে গেলে?”
“তোকে আমার আবার কবে মনে ছিল রে?”
আদ্রাফ কান্না কান্না স্বরে বলল,
“এই ছিল তোমার মনে?”
আয়াত বলল, “আপনি একটা ছিঁচকাদুনে।”
পিছন থেকে একজন বলল,
“কিরে আদ্রাফ? তুই না বললি তুই বাহিরে যাবি?”
আদ্রাফ পিছনে ঘুরে দেখলো নুহাশ এসেছে। অপরদিকে নুহাশের চোখ পড়লো এক রমণীর উপর। পলক আটকে গেল তার। আদ্রাফ দৌড়ে নুহাশের কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। আদ্রাফ একসময়ের জন্যে ভুলেই গেল তার সকল জড়তা। নিজের অজান্তেই তার জড়তা আবার কাটিয়ে ফেললো। জিজ্ঞেস করল,
“কিরে কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তোর বাসার সামনে দিয়েই আসছিলাম তাই ভাবলাম দাদীর সাথে দেখা করে যাই। আসসালামু আলাইকুম দাদী।”
দাদী দূর থেকে উত্তর দিল, “ওয়ালাইকুম আসসালাম নুহাশ।”
“ও বাবা মনে আছে দেখি আমায়।”
“তোকে মনে থাকবে না?”
নুহাশ বলল, “তুই না বাহিরে যাবি?”
আদ্রাফ বললো, “গিয়েছিলাম তো।”
নুহাশ আদ্রাফকে কানে কানে প্রশ্ন করল,
“মেয়েটা কে রে?”
আদ্রাফ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো, “কোন মেয়ে?”
নুহাশ ইশারা করে আয়াতকে দেখিয়ে দিল। আদ্রাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর নুহাশকে বলল,
“ও হলো আয়াত, আমার কাজিন।”
#চলবে