হাই সোসাইটির ললিতা-১২,১৩

0
394

হাই সোসাইটির ললিতা-১২,১৩
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম
১২

ছোটবেলা থেকে আদরে আদরে বড়ো হয়েছি। আদরে বাঁদর হওয়া যাকে বলে। উচ্ছনে চলাফেরা, বখে যাওয়া আমি কলেজ থেকে ঘুরতে গিয়ে আরো যেন অন্ধকারের অন্ধত্ব বরণ করি তখন। সেবারে ট্যুরে যাওয়ার স্থান নির্বাচন করল সিনিয়র ছাত্ররা। তারা ভার্সিটির রাজনৈতিক দলের ছাত্র ছিল। কারণ তাদের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল নিউ কামার ইন্টারের স্টুডেন্ট’দের গাইড করার। প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া নিয়ে সকলের সাথে বেশ মৌজ-মস্তি করে যাত্রা শুরু করি। কটেজ বুক করা ছিল প্ল্যান অনুযায়ী। মেয়েদের সাথে শেয়ারে রুমে থাকতে হলো। সেই অভিজ্ঞতাও প্রথম ছিল আমার জন্য। ট্যুরের সময়সীমা ছিল পাঁচ দিনের জন্য। গাড়ি থেকে নেমে যে যার যার মতো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রাত হয়ে যাওয়াতে সকলের রুমে ডিনার দিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই খাওয়াদাওয়া শেষে ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা শুয়ে পড়ি।

গইড়ি গাঁও। দার্জিলিংয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। ধুপি আর পাইনে ঘেরা, এমনই বহু প্রকৃতি প্রেমীদের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এর মুগ্ধতায়। এই গ্ৰামের সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে নিতে হারিয়ে যাওয়ার জোগাড়। যত দেখি ততই মুগ্ধতার ঘোর, রেশ কাটে না। এটা যেন সুখের খোঁজ পাওয়া কোন অজানা আস্তানা। আমরা উঠেছি কাঠের তৈরি কটেজে। কটেজটা দোতলার মতো। তবে কাঠের তৈরি কটেজ। যার চারদিকে বারান্দা ঘেরাও করা। চারটি করে রুম। ডাবল বেড বিধায় তিনজন, তিনজন করে মোট ছয় মেয়ে দু’রুম নিয়েছি। বাকিগুলোতে আট জন ছেলে। রুমগুলো খুবই সুন্দর এবং দামী। আমরা দোতলার অংশ নিয়েছি বিধায় বুঝতে পারি ফ্লোরও কাঠের তৈরি। বারান্দাতে ছোটো-ছোটো টবে ফুল গাছ ঝুলানো, তাতে কিছু ফুলও ফুটে রয়েছে। ডানপাশের করিডোর জুড়ে দু’রুম মেয়েদের, আর ছেলেদের রুম বামপাশে। তবে মুখোমুখি করে নয়৷ চওড়া বারান্দা পেরিয়ে ঘুরে যেতে হয়।

গ্রামটি শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার মত। সেটি সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের প্রান্তে অবস্থিত। ভারত ও নেপাল সীমান্তের নিকটে অবস্থিত। এটি পর্বতমালার রেঞ্জ এবং চা বাগানে ঘেরা দেহাতি লোকেশনের সাথে একটি খুব প্রত্যন্ত অঞ্চল। সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্ক এবং সান্দাকফু হলো বিখ্যাত এবং ব্যস্ততম রুট এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সেরা ট্রেক। এই গন্তব্যটি সিকিম থেকে বাংলায় প্রবাহমান রাম্মাম নদীর তীরবর্তী একটি পাহাড়ে অবস্থিত। এটি পশ্চিম দিকের সর্বশেষ প্রধান শহর এবং নেপাল ও সিকিম বর্ডারের নিকটবর্তী এলাকায়। (সংগৃহীত)

যখন আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে ব্যস্ত চারিদিকের থোকায় থােকায় ধরা ফুলেল বাহার। তখনই ক্লিক শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে ফেছনে ফিরতেই ফের একটা ছবি তুলল অজানা লোক।

“হাও ডেয়ার ইউ?”

“ভেরি মাচ। ইউ অনা সি?”

মুচকি হাসিতে জবাব আগন্তুকের। সাথে সাথে আমার রাগান্বিত হওয়ার মুখের ফটো তুলে নিলো। হাতে প্রাতঃপানের জন্য থাকা গরম ধোঁয়া ওঠা কফি ছুঁড়ে মারলাম আগন্তুকের দিকে। গায়ে থাকা আঁটসাঁট সাদা টি-শার্ট ভিজে জবজবে অবস্থা হলো। রাগান্বিত হয়ে প্রায় চেঁচিয়ে আগন্তুক বলল,

“হাও ডেয়ার ইউ?”

আমি নির্বাক অঙ্গ-ভঙ্গির সাহায্য নিরলসভাবে বললাম,

“ডোন্ট ইউ সি দ্যাট?”

বলেই পগারপার হলাম সেই লোকের সম্মুখ হতে। তবুও পিছু মোড়ে খেয়াল করলাম, লোকটার শকুনি দৃষ্টি নিয়ে আমার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে। তাতে কী আগে ভাগি। জীবন বাঁচানো মূখ্য বিষয়। “শয়তান লোক কোথাকার।” বিড়বিড় করতে করতে কটেজে ঢুকে গেলাম।
______

“কীরে ললিতা, কোথায় গিয়েছিলি এমন আগেভাগে?”

“আগেভাগে বলতে?”

“আরে, আগেভাগে বলতে আমি সবার আগে আগেই ঘুরে-ফিরে গ্রামটি দেখার কথা বলছি। বুঝে না আহাম্মক মাইয়া!”

আমার ক্লাসমেট শ্রীময়ী লাস্ট কথাটা বিড়বিড়িয়ে বলাতে সেটা শুনতে পাইনি আমি। তবে আগের বক্তব্য শুনে বললাম,

“নাহ, আর আগেআগে ঘুরাঘুর। এই তো কফি হাতে নিয়ে নিচে নেমে পাশের টিলার হলদে ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখছিলাম। যদি বলতে পারতাম, দু’মিনিট শান্তিতে থাকতে পেরেছি। কোথা থেকে এক অজানা শয়তান লোক এসে ফটাফট করে আমার কয়েক ছবি তুলে নিলো।”

মলিন হওয়ার আভাসে আফসোস কণ্ঠে রাগ ঝরে পড়ল। নিশ্বাস ছাড়লাম ফোঁস করে। আমার কথাগুলো শুনে শ্রীময়ী বলল,

“বলিস কীরে? কোত্থেকে এলো রে?”

“ব্যাঙ! আমি জানব কী করে? বললাম না আচানাক আক্রমণ।”

“আচানাক আক্রমণ বলতে কী বললি? কিসটিস না কি রে?”

শ্রীময়ীর কথা শুনে আমার চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তার অদ্ভুত ভাবনা শুনে চিরায়ত চিৎকার করে বললাম,

“শ্রীময়ী! তুই এত পাগল ক্যান রে? চেনা নেই জানা নেই কিসে চড়ে গেলি!”

“আরে আমি আচানাকে ওটাই বুঝি। আচ্ছা, আচ্ছা রাগ না করে পরের কথা বল। ছেড়ে দিলি না কি ছবি তুলে নিয়ে গেলো যে?”

“হাহ্! এতই না? গরম কফি ছুঁড়ে মেরেছি।”

“কিহ্! হায় ভগবান! এই মেয়ে করছেটা কী!”

বিস্ময়াহত ভূত দেখার মতো চমকে গিয়ে ভড়কানো গলাতে উচ্চস্বরে বলল শ্রীময়ী। তার সেই শব্দে অপরপাশের রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো বাকি ক্লাসমেট। যুক্ত হলো ঘটনাটার ব্যাখ্যান শুনতে। ঘটনা এক কান থেকে দশ কানে চাওড় হতে বেশি সময় নিলো না।

চলবে…

লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম

হাই সোসাইটির ললিতা |১৩|

“আশেপাশের দর্শনীয় স্থান— শ্রীখোলা ব্রিজ, রামমাম ভিউ পয়েন্ট, ফেরিখোলা, পুরাতন মঠ, জোরায়া লেক, ব্ল্যাক ফরেস্ট, নামলা গ্ৰাম ইত্যাদি। তবে যে সমস্ত ভ্রমণপ্রেমী’রা সাইটসিনের দৌড়ঝাপ পছন্দ করে না, শুধুমাত্র প্রকৃতির নির্জনতাকে উপলব্ধি করতে চান একান্তে, নিরালায় তাদের জন্য সেরা ঠিকানা গইড়ি গাঁও।”

সিনিয়র ছাত্র প্লাস গাইড রঞ্জন দাস। ছেলেটা ভারি গম্ভীর গোছের। মুখে হাসি থাকা যেন গুরুতম পাপ। তাই পাপিষ্ঠ না হওয়ার লক্ষে হাসতেও দেখি না তাকে। ছোট্ট একটা টিলায় দাঁড়িয়ে বিকেলের হলদেটে আভা ছড়ানো আকাশের বুকে সাদা মেঘের পাল ভেসে বেড়ানো দেখছি। তখনই গাইড সবাইকে গ্রামে আরো ঘুরে দেখানোর স্থান সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছিল।

“হেই। ডিয়ার স্টুডেন্ট।”

আচমকা ট্যুরের ভেতরের মানুষের মাঝে বাইরের কয়েকজন মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পাই সবাই। পিছু ফিরে তাকালে তিন জন ছেলেদের দেখতে পাই। সেখানে সকালের কফি ছুঁড়ে ফেলা ছেলেটাকেও দেখা যায়। ভীত হরিণীর মতো আশেপাশের সবাইকে একনজর দেখে নেই। ছেলেটা কি আমার নামে বিচার দিতে আসলো? ভাবতেই ভয়ে কাঁপতে থাকি। সেটা বোধহয় শয়তান ছেলেটার চক্ষুতে আটকালো। দেখেই বাঁকা হাসি ছুঁড়ল আমার দিকে। বিস্ময়ে বিমূঢ়তা নিয়ে ঢোক গিললাম। মন চাচ্ছে, তখনই একছুটে চলে যাই ট্যুর-ফ্যুর বাদ।
____

“কীরে ব্যাপারটা কী? এই বদ ছেলেগুলো আমাদের সাথে কেন?”

“তখন তো সেখানেই ছিলি। শুনিসনি কিছু?”

বিরক্তে চোখ-মুখ কুঁচকে এলো। ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

“শুনলে কি আর জিজ্ঞেস করি? উত্তর দে জলদি।”

আমার খিঁচে থাকা তপ্ত মেজাজ দেখে শ্রীময়ী জিজ্ঞেস করল,

“তোর কী হয়েছে বল তো? সকাল সকাল থেকে মেজাজ কড়াইয়ের মতো গরম করে রেখেছিস। এখনো গরম হয়ে আছে। কী হয়েছে?”

অতঃপর কাঁদো কাঁদো মুখে সবটা খুলে বললাম। শুনে শ্রীময়ীর উত্তর,

“যদি-ও ভয় হচ্ছে, ছেলেটা রাগ পুষে রূখেনি তো তবে আমাদের সাথে জয়েন হওয়ার কারণ ছেলেগুলোও ট্যুরে এসেছে। তাই একসাথেই ঘুরাফেরা করতে চাচ্ছে। ট্যুরের মজা তো এখানেই। মানুষ যত বেশি, মজাও তত বেশি হয়।”

সবটা শুনে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললাম। মনে খটকা রয়ে গেল যদি-ও। মনে হলো, ছেলেটা আমার কারণেই আমাদের দলে যোগ দিয়েছে। এখন এসব বলতে যাবেই বা কে? দেখা যাবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে।
_____

“কি মন খারাপ?”

পাশ ফিরে সেদিনের ছেলেটাকে দেখে ভাবাবেগ হলো না। আসলেই আমার মন খারাপ। সময় ফুরিয়ে এসেছে আর মাত্র দুদিন আছে হাতে। এত সুন্দর জায়গা ছেড়ে যেতে চায় না মন। শূন্য দৃষ্টি ফেলে আকাশের পানে চেয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরমধ্যেই ছেলেটা হাতে দু’টো কফি মগ নিয়ে এলো পাশে দাঁড়িয়ে কথাটি বলল। আমার উত্তর না পেয়েও মন খারাপ করল না কেন জানি। উলটো হাতে থাকা একটা কফি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“নিন। ভালো লাগবে।”

আমার কেন জানি ছেলেটার কথা অগ্রাহ্য করতে মন চাইল না আর না তার সাথে রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি। কারণ সে আমার নামে এপর্যন্ত তো কোন কমপ্লেন করেনি আমার দলের লোকদের কাছে। আর না এপর্যন্ত ডিস্টার্ব করেছে।

“কি হলো নিন। কিছু মিশাইনি।”

আমি তার কথা শুনে হেসে ফেললাম। সেটা দেখে সে-ও হেসে বলল,

“মিষ্টি হাসি। সকালটা ভালো হয়ে গেল।”

” ফ্লার্ট করছেন?”

“যাহ, ভালোর কদর নেই দেখি আজকাল। ম্যাডাম, সুন্দরকে সুন্দর বলতে জানি।”

“থ্যাংকস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট।”

ফের মিষ্টি হাসি উপহার দিলাম। তাতে যেন তার কথার বান ছুটলো।

“বায় দ্য ওয়ে আ’ম সুব্রত সেন।”

“ললিতা মুখার্জি।”

“বাহ, ইউনিক নেইম।”

“তাে কোন ক্লাস?”

“নিউ ইন্টার।”

“হোয়াট! সিরিয়াসলি?”

ভ্রু কুঁচকে এলো কথা শুনে। ব্যাটা তোর সাথে আমার মিথ্যা বলে লাভ কী? মনের কথা মুখে আনলাম না। ঝগড়া বাঁধার মুড নেই। তাই মুখে বললাম,

“হুম।”

ফের বিষাদে ছেয়ে এলো মুখমণ্ডল, মনের ঘরেসহ। বুঝতে পারল বোধহয় সুব্রত। তাই বলল,

“প্লিজ ডোন্ট গেট আপসেট। আমি মাস্টার্স পড়ছি। সে হিসেবে তুমি অনেক ছোটো তাই অবাক হলাম। তুমি করে বলায় আমার মাইন্ড করলে না তো?”

দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্মতি প্রদান করে কথার ইতি টানতে বললাম,

“আচ্ছা, আসি। ইনজয় করুন।”

চলে আসবে এমন সময় পেছন থেকে সুব্রত বলে উঠল,

“তোমাদের পাশের কটেজে উঠেছি। মন খারাপ থাকলে চলে এসো। আর বিকেলে এক জায়গায় যাব। তুমি যাবে?”

ঘুরে সুব্রতর উদ্দেশ্যে বললাম,

“সবাই তো যাবে। আলাদা যাওয়ার কী হলো?”

“উহুম, যাবে না। আজ বনফায়ার করবে, বারবিকিউ পার্টি হবে। তাই সেসব জোগাড়ে ব্যস্ত থাকবে সকলে। এমনিতেও গত দুদিনের ঘুরাঘুরিতে না কি ক্লান্ত তারা।”

“আচ্ছা, যাব নে।”

সকলের সাথে অনেক ঘুরাঘুরি হয়েছে। একান্তে একটু সময় কাটানোর ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দেওয়ার লক্ষেই সুব্রতের সাথে যেতে রাজি হওয়া।
____

“ওয়াও। জায়গাটা তো বেশ সুন্দর।”

বেশ উঁচুও না আমার নিচুও না। মধ্যসারির ধরা যায় টিলাটা। হরেক রঙের প্রজাপতি এদিক-সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি-ও তাদের অনুসরণ করে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছি। চেনা-জানা ফুলেল বাহার ও ঘ্রাণে ম-ম করছে চারিদিক। আর আমার দিকে অপলক দৃশ্যমান নিয়ে তাকিয়ে পাইন গাছের সাথে হেলান দিয়ে সুব্রত। তার মুখ দিয়ে অনুচ্চস্বরে বেরিয়ে এলো,

“ইয়েস সো বিউটিফুল।”

তবুও আমি শুনে ফেললাম কথাটা। আঁড়চোখে তাকিয়ে বললাম,

“ধরুন তাহলে।”

আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো আমার কাছে। সুব্রতর গরম নিশ্বাস আমার মুখমণ্ডলে আছড়ে পড়ছে। বোধগম্য হলো না। আমি তো তাকে প্রজাপতি ধরার কথা বলছি। সে করছেটা কী? বিব্রতভাব নিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ খুলব। সে আচমকাই আমার দু-ঠোঁটের ওপর আলতো করে তার আঙুল চেপে ধরে বলল,

“হুসস! ডেন্ট টক।”

কিছু মুহূর্ত কেটে গেল সেভাবেই। তখন দেখলাম। আমার তীক্ষ্ণ নাকের ওপর প্রজাপতি বসেছে। দু-চোখ ত্যাড়া করে সেটাকে দেখলাম। খুশিতে ফের চিৎকার করতে যাব, তখন দুই আঙুলের সাহায্য সুব্রত আমার ঠোঁট দু’টো চেপে ধরল। অপর হাতে আস্তে আস্তে নাকের ওপরে থাকা প্রজাপতিটা আলতো করে তার আঙুলে নিয়ে নিলো। অতঃপর আমার ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে, আমার সমুখ থেকে সরে গিয়ে প্রজাপতির পাখায় থাকা হলুদ রঙ আঙুলের ডগায় আলগোছে নিলো। তারপরে প্রজাপতিটা ওড়ে চলে গেল। আমি আনন্দ আত্মহারা হয়ে নির্বাক মুখে দেখতে লাগলাম সকল কিছু। সুব্রত তন্মধ্যে আমার সামনে এসে রঙ মাখা আঙুলের ডগা আমার নাকে স্পর্শ করিয়ে দিলো। সম্বিত ফিরে নাকে হাত দিয়ে আঙুল সামনে এনে হলুদ রঙ দেখে হেসে ফেললাম। সময়টা কাটল খুবই উল্লাসে মেতে থেকে। এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে। পাইন গাছের নিচে সবুজ ঘাসের বাগিচায় শুয়ে রইলাম দু’জনে। বেঝার উপায় নেই যে, আমরা দু’জন অসমবয়সী।

“মন ভালো?”

উত্তর দিলাম না সময়টা উপভোগ করতে লাগলাম চোখ মুদে। আচমকাই নিজের ওপর কারো তপ্ত নিশ্বাসের যাতনায় মুদে রাখা চক্ষু উন্মোচিত করলাম। বিহ্বলিত চোখে আমার প্রশ্ন খেলা করছে বিধায় সুব্রত আমার ওপর ঝুঁকে থাকা অবস্থাতেই উত্তর দিলো,

“এড়িয়ে চলা আমার পছন্দ না।”

“এড়িয়ে গেল কে?”

“তাহলে জবাব দিলে না যে?”

“সময়,পরিবেশ দু’টো উপভোগ করছিলাম।”

“আমাকে?”

হকচকানো দৃষ্টি আমার। তাকে উপভোগ করার কথা বলছে? এ-ও কি সম্ভব? সুব্রত বুঝতে পারল বোধহয়। তাই সহজ সাবলীল ভাষায় আমাকে বলল,

“আমাকে উপভোগ করা যায় তো। দেখবে?”

ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন আমার মাথা-মোটায় তখন ঢুকল না। স্কুলের নবম-দশম শ্রেণিতে থাকতে প্রেম করতাম। প্রেম বলতে তখন বুঝেছিলাম, লুকিয়ে-চুরিয়ে কথা বলা। চিঠি আদান-প্রদান করা। লাজলজ্জায় লাল নীল হয়ে যাওয়া। সুব্রতের কথার বোধগম্য হলো না বিধায় তার দিকে তাকিয়ে উপভোগ করা দেখতে চাওয়ার জন্য মাথা নেড়ে সায় দিলাম। সেখানেই দমবন্ধকরা অনুভূতি হয়েছিল প্রথমবারের মতো। অনুভূতি একে তো নতুন সাথে মানুষটা-ও। ভয়ে না কি প্রথম প্রথম দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। শেষে জ্ঞান ফিরে নিজেকে কটেজের বিছানায় আবিষ্কার করলাম। রুমে তখন কেউ ছিল না।

চলবে…

লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here