হাই সোসাইটির ললিতা-১৪,১৫
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম
১৪
কটেজের রুম ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের লনে দেখতে পেলাম, সবাই মিলে বনফায়ার করছে। বারবিকিউ হচ্ছে সাথে। ট্যুর এই অনুভূতিটা ছিল বেশ। আচমকাই চোখ গেল অগ্নিশিখায় সমুখে দাঁড়ানো সুব্রতের দিকে। বিকেলকার ঘটনা মনে পড়ল। মনে পড়ল দু’জনে একসাথে কাটানো মুহূর্তঘন ক্ষণ। লাজুকতায় গাল ভারি হয়ে এলো। প্রথম কিস ছিল তার সেটা। অল্পক্ষণের হলেও বেশ মধুরতা মিশানো ছিল।
“এ্যাই ললিতা, নিচে আয়।”
শ্রীময়ীর চিৎকার করে ডাক দেওয়াতে সুব্রত ওপরে তাকাল। সেই বিকেলের নেশাক্ত দু’জোড়া চোখ দেখতে পেলাম। সরে গিয়ে নিচে নামার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম বনফায়ারের দিকে। তখনই সিঁড়ির কাছে দেখি সুব্রত দাঁড়িয়ে। আবার কেন যেন লজ্জা ভর করল তনু মনে। গাল ভারি হয়ে এলো। নিছক অনুভূতি না কি সত্যতার বাকি কিছুই অভিভূত হলো বিধায় কেটে পড়তে চাইলে পথ আগলে দাঁড়ায় সুব্রত। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে অভাবনীয় কাণ্ড করে বসে। টুপ করে অল্পসময়ে তবে গভীর চুম্বনে সিক্ত করে আমায়। পারিপার্শ্বিক সবকিছু ভুলে যখন তার গলা আগলে ধরতে যাব তখনই সরে দাঁড়ায়। কী করতে যাচ্ছিলাম ভেবে চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে আসে শরমের মরমে। কিন্তু সুব্রত আমার কানের কাছে এগিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
“রাত্রে রেডি থেকো, বাকিটার জন্য।”
ভালোগালাটুকু টুপ করে ওড়ে যায় সুব্রতর কথা শুনে। ভীত হওয়া পাখির ন্যায় গুটিয়ে তার দিকে তাকালে সে অভয় দিয়ে বলল,
“ভয় পেয় না। আমি আছি না।”
ব্যস! মনে মনে ভাবলাম, আমি তো ভয় পাওয়ার মানুষ না। জীবনের আনন্দ তো এখানেই। আনন্দ-ফুর্তি না করে লাইফ এনজয় করা যায় না কি? আসলে কেউ দেখলে শরমের পড়ার ভয়ে ছিলাম। পরক্ষণেই মত পাল্টালাম, আমার জীবন অন্যের দেখা না দেখায় চলবে না। অতঃপর দু’জনে এগিয়ে গেলাম বাইরের লনে।
_____
গান-বাজনা, একে-অপরের সাথে নাচের তালে, খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে বারবিকিউ পার্টি শেষ হয়। যে যার মতো তাদের রুমে চলে যায়। তবে যারা এখানে এসে প্রেমানন্দের সুখ পেয়েছে কেবল সেই কাপলরা রয়ে যায় আর প্রেমঘন মুহূর্ত উপভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারণ তারা নিজেদের তাবু জোগাড় করে নিয়েছিল। আমি ওপরে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি। ওপর থেকে লনের দিকে আবছা আলোয় কাপল’দের একে-অপরের ঘনিষ্ঠতা দেখে মৃদুমন্দ হেসে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেই অন্যদিকে। চোখ গিয়ে পড়ে পাশে থাকা টিলায় কয়েকজন নড়াচড়া পরিলক্ষিত হয়। মনের ভুল না কি জীবজন্তুর আগমনের আভাসে ভেবে ফের চোখ ফিরিয়ে নেই। কৌতুহলী মন আবারো সেখানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আকর্ষণিত হয়ে ঝুঁকে স্পষ্ট দেখতে গেলে সুব্রতর মুখমণ্ডলের আবছায়া দেখা যায়। মনের ভুল ভেবে বিব্রত হই। কিন্তু নাহ, হতেও পারে সুব্রতই সেটা; মন বারবার সেটাই নির্দেশনা দিচ্ছে। দ্বিধাদ্বন্দে থাকতে না পেরে নিচে নামার সিধান্তে পৌঁছাই। নিচে নেমে টিলার দিকে এগিয়ে যাই। রাত হবে একটার মতো। ওপরে ওঠে আমার আশংকাই ঠিক হয়। সুব্রত তো আছেই সাথে তার বন্ধু ও আমাদের গাইড করার সিনিয়র’রা। সকলে মিলে ইয়াবা, কোকেন নিচ্ছে। চকোলেটই গন্ধে ভরপুরে ফুলের সুবাস ম্লানতা পাচ্ছে। অবাক হওয়ার পর্যায় গিয়ে ঠেকেছে অক্ষিকোটর। সুব্রত কি আমাকে দেখে একটুও বিব্রত হলো না? সুব্রতর নেশাক্ত জিনিসের একেকটা টান দেওয়ার আগ্রহের দৃশ্য ঝলকে ঝলকে চোখের দৃষ্টিপটে দৃশ্যমান হচ্ছে।
“ল..ললি..তা।”
আমার নামটাও ভালোভাবে নিতে পারছে না নেশারঝোঁকে সুব্রত। পাশে থাকা বাকি ছেলেগুলোও তাকালো আমার দিকে। সকলের রক্তজবার মতো লাল চক্ষু দেখে বেশ ভয় পেলাম। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম তবুও। কারণ ওই যে সুব্রত নামক নতুন হওয়া অনুভূতি। সুব্রত এগিয়ে এলো আমার নিকটে হেলেদুলে।
“এ..খানে কী, হু?”
কথাটাও ঠিক মতো বলতে পারছে না। আমি বলার জন্য কিছু খোঁজে পেলাম না। নতুন হওয়া অনুভূতি থেকে তো আর অধিকার ফলাও করতে পারি না তার ওপর। আমাকে চুপ থাকতে দেখে কী হলো তার কে জানে। হঠাৎই আমার কটিদেশে সুব্রতর শক্ত হাতের থাবা অনুভব করলাম। বেশ জোরে চাপ দেওয়ায় ব্যথায় কুঁকড়ে গেলাম। এদিকে সুব্রত ঝুঁকে এসে আমার ওষ্ঠে ডুব দিতে যাবে, তখন হকচকিয়ে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দু-হাতে বাঁধা দেই। কে শোনে কার কথা। পুরুষালী শক্তির সাথে পেরে ওঠার কথা না।
“শালি বেশি হাতা পাই করতাছে দোস্ত।”
বন্ধুদের উদ্দেশ্যে সুব্রতর স্পষ্ট বাক্য ছিল এবার। আমাকে বাগে আনতে না পেরে বন্ধুদের কাছে হেল্প চাওয়ায়, তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল,
“এটা খাওয়ায় দে। দেখ কেমন নিজেই পাগল হইয়া যায় বিছানায় যাওনের লেগা।”
ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমাকেও ইয়াবা সেবন করালো সুব্রত ও তার বন্ধুরা জোর করে ধরে। এই ইয়াবা ছিল শরীরের যৌনতা বা কামপ্রবৃত্তি বৃদ্ধির জন্য।
____
নিজেকে বিধস্ত অবস্থায় পাই বিছানায়। কতটুকু সময় হবে আন্দাজে আসলো না তখনো। রুমটা ছিল বেজায় আঁধারে ঢাকা। বাইরের আলো না আসার জন্য ভারি, মোটা পর্দা টানানো। বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টায় যেন সারা শরীরে হাতুড়ি মারার তীব্র ব্যথা উপলব্ধি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কোমরের নিচের দিকের ব্যথা জানান দিচ্ছে কিছু একটা। চাদরে ঢাকা নগ্ন দেহ,, পায়ের মাঝে ভেজা চটচটে ভাব আভাস সতীত্ব হারানোর। এখানে এসব কেবল বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড’দের জন্য। সুব্রত যদি-ও বলেনি আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমার বুঝার মতে অন্তত বোধটুকু আছে, আমার প্রতি তার একধরনের আসক্ততা কাজ করে যে। ভালো তো বেসে ফেলেছি। এখন সুব্রতের সঙ্গ পাওয়া আমার মনের মধ্যে হানা দিবে যেমন স্বাভাবিক তেমনিও স্বাভাবিক সে-ও আমাকে কাছে পেতে চাইবে। তাই বিষয়টা অতটা কঠোরভাবে দেখলাম না। চাদর জড়ানো অবস্থায় ওঠে দাঁড়াব এমন সময় দরজা খুলে সুব্রত আগমন ঘটল। হকচকিয়ে যাই কারণ ভেবছিলাম হয়তো তার বন্ধুদের মধ্যে কেউ হবে। কিন্তু নাহ৷ সুব্রত এগিয়ে এলো আমার নিকটে। ঘুমঘুম সাথে ব্যথিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালে সে বলল
“ব্যথা করছে?”
মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মনে হলো এই বুঝি চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়াবে। সুব্রত এগিয়ে আমার পাঁজা কোলে তুলে নিলো। ফের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম তার বুকেই। লাগোয়া ওয়াশরুমের ভেতরে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে বলল,
“ফ্রেশ হয়ে বের হও। আমি খাবার, মেডিসিন দিচ্ছি।”
সন্তপ্ত, পীড়িত শরীরে পানি ঢালতে নিদারুণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে হয়েছিল। বেরিয়ে এসে দেখি বিছানায় খাবার দেওয়া সুব্রত নেই। চারিদিকে খোঁজেও পাওয়া গেল না। খাবারের সমুখে এগিয়ে দেখি প্লের চাপা দিয়ে রাখা চিরকুট।
“খাবার খেয়ে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে এসো। সকলে তোমার খোঁজ নিচ্ছে।”
খাবার কোনোমতে গলাধঃকরণ করে ওষুধ খেয়ে নিলাম। সুব্রতদের কটেজের রুমে আমি। সে ও তার বন্ধুদের এই রুম। না জানি বেচারা’রা কাল রাত কোথায় কাটালো। আমি ও সুব্রত তো একসাথে এখানে রাত কাটিয়ে ছিলাম। তাহলে ছেলেগুলো কোথায় রইল রাতে? সম্ভবত বাইরে কাটিয়েছে রাত। নিজ মনে স্বগতোক্তি করলাম। তখনো জানতাম না আমি,
“মুখোশের আড়ালে,
লুকায়িত কিছু তো রয়ে।
ধরা-ছোঁয়ার বাইরে,
তোমাকে ক্ষত-বিক্ষত করতে।”
চলবে…
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম
হাই সোসাইটির ললিতা |১৫|
“কীরে দোস্ত কিছু দেখি মনে নাই?”
আমি পিটপিট করে সুব্রতর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ছুঁড়লে সুব্রত হাসার চেষ্টা করে বলল,
“ওহহো তুমি জানো না?”
এবার বিরক্তিকর কণ্ঠে বলেই ফেললাম,
“জানব কী করে? মাত্রই তো উঠলাম।”
“ও হ্যাঁ, তাই তো। আসলে তোমাদের দলের সিনিয়ররা বলেছে আরো দু’দিন থাকবে এখানে।”
তা শুনে আমার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে আনন্দের আভাস ভেসে উঠে। কিন্তু শরীরের দূর্বল ভাবের কারণে সেটা প্রকাশে অক্ষম হই। যার ফলে সুব্রত আমার অসহায়তা বুঝতে পেরে তার হাত দিয়ে আমার হাত মুঠো করে চাপ দিয়ে হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকায়। আমি মনে করি, এটা তার ভালোবাসা, ভরসার প্রকাশের তরিকা। কিন্তু ভুলে হুল ফুটাই স্বইচ্ছায়। তবুও না বুঝলাম, লুকায়িত আড়ালের আস্ত শয়তান।
____
রুমমেটরা জেঁকে ধরল রুমে আসতেই। তাও আবার গতকাল রাতে আমাকে না পাওয়ার ঘটনা জানার ইচ্ছা ব্যক্ত করল। ফলস্বরূপ জানাতে বাধ্য হই সুব্রতর সাথে আমার প্রেম গাঁথা। সকলেই প্রসন্ন তাতে। ছেলেটা না কি বেশ কেয়ারিং যতটুকু তারা দেখেছে। রিলেশনে যাওয়া যায়। তবে কথা হলো দু’জনের পথ তো ভিন্ন। সমাধানে শ্রীময়ী বলল,
“ভিন্ন হলে কী হয়েছে? ডিজিটাল যুগে বসবাস করেও একথা বলছিস তোরা সকলে?”
আসলেই তো মােবাইল, ইন্টারনেট, ইমো এসব থাকতে যোগাযোগ রাখার কষ্ট কম। আগের যুগের কথা ভাবতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ভালোই হলো শ্রীময়ীর কথাতে মনে পড়ল, সুব্রতের নম্বর নেওয়া হয়নি এখনো।
সকলে রুমে বসে খাওয়াদাওয়া এবার সেরে নেই। যেহেতু সময় বেড়েছে আর দু’দিন, সেহেতু বিশ্রাম নেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছি আজ সারাবেলা। যা তুফান গিয়েছে না কাল। সেই হিসেবে বিছানায় গা মেলতেই ঘুমের রাজ্যে হানা দিলো আমার চোখের তারায়। ঘুম শেষ হলো দুপুরে কারো ডাকার শব্দে। বহুত কষ্টে চোখ মেলে তাকালে সমুখে সুব্রতকে আমার মুখের ওপর ঝুঁকে থাকতে দেখতে পাই। মুচকি হেসে স্বপ্ন ভেবে ওড়িয়ে দেই। যখন ঠান্ডা শীতল হাতের স্পর্শ পাই গালে তখন ধড়ফড়িয়ে ওঠে বসি বিছানায়। চোখ কচলে, হাই তুলে বললাম,
“কী হচ্ছে? একটু ঘুমোতে দেও না কেন কেউ? জ্বালাচ্ছ কেন?”
“কত ঘুমাবে? আর তোমার মুখে ‘তুমি’ ডাক বেশ আদুরে শোনায় তো!”
ঘুম কেটে গিয়েছে পুরোপুরি ততক্ষণে। যতক্ষণে সুব্রত ব্যস্ত আমার ঘুম কাটানোর উদ্দেশ্যে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম কাছ থেকে।
“উহুরে! ব্যথা পাই তো। ভরদুপুরে কীসব লাগিয়েছ?”
আমি-ও তুমিতেই সম্মোধন শুরু করলাম। যেহেতু শয্যা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বে চলে গিয়েছি দু’জন।
“কী করব বলো তো? তোমার ঠোঁটের স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি যে?”
“একদিনেই! স্ট্রেঞ্জ!”
“আহত হলাম তোমার কথায়। এভাবে বলতেও পারলে তুমি? আমার মনের অন্তঃকোণের অনুভূতি কতটুকুই বা জানো? গাঢ় অনুভূতিতে ভিজতে সময় নেয়নি বলেই স্পর্শগুলো এত গভীর, প্রগাঢ়।”
“আচ্ছা, আপাতত যাও। তোমার সাহিত্যিক ভাষা বোঝা আমার কর্ম নয়।”
হাত উঁচিয়ে সমর্পণ ভঙ্গি করে বেরিয়ে গেলো সুব্রত। যাওয়ার সময় আমাকে দ্রুত নিচে যেতে বলল। আমি-ও তাগাদা পেয়ে নিচে যাওয়ার জন্য দ্রুতই বিছানা ছাড়লাম। উপরন্তু ক্ষিধেয় পেটে চোঁ-চোঁ শব্দ বেরোচ্ছে। সকলে কি আমায় রেখে খেয়েদেয়ে নিলো না কি আবার?
_____
“না, প্লিজ।”
“উহুম, কোনো শব্দ নয়।”
“কেউ দেখে ফেললে?”
“আরে বোকা মেয়ে কেউ দেখবে না আর না বুঝবে।”
পাইন গাছের আড়ালে ইয়াবা নেওয়ার ব্যস্ততায় সুব্রতকে সঙ্গ দিতে গিয়ে আমারও কৌতুহলী মন সেসব নেশা নেওয়ার ইচ্ছাবোধ প্রকাশ করছে। তাই আগ্রহ প্রকাশ করলে সুব্রত বিনাবাক্য বেয়ে আমায়-ও ধরিয়ে দেয়। জিজ্ঞেস করলাম,
“এসব কোত্থেকে পেলে?”
“নেপালের বর্ডার কাছেই। রমরমা দামে বেচা চলছিল। দিলাম কয়েক থাবা।”
“যেভাবে নিচ্ছো, আগে থেকে অভ্যাস আছে?”
“হবে বোধহয়, ভার্সিটি থাকাকালীন সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে শুরু এসব নেওয়ার৷ রেগুলার নেওয়া হয় না শুধু মাঝেমধ্যেই।”
এখনো নেশা ধরেনি আমাদের। তাই কথা চালিয়ে যেতে পারলাম। গতকালের রাতের ঘটনা বলতে আমার মুখের ওপর সুব্রতর ঝুঁকে থাকা, অতটুকু মনে আছে। আর সুব্রতর নেশা ধরা লাল চক্ষুযোগল। তার বন্ধুদের দৃশ্যও মানসপটে আবছা ভাসে। আজ তাদের দেখা পেলাম না। সম্ভবত ভ্রমণে ব্যস্ত তারা। আর আমরা এদিকে মজে নেশাতে, ঘোরলাগা অবস্থা পর্যন্ত নেশাক্ত ছিলাম। অতঃপর ফের একবার তাণ্ডবলীলা কিংবা আদিমত্তায় মেতে উঠলাম।
______
নেশা করার ঝোঁক দিনকে দিন বেড়ে চলেছে আমার। কিন্তু আমার হুঁশ জ্ঞানের কোনো ইয়ত্তা নেই। কখন যে একের অধিক সেক্সে পার্টনারে লিপ্ত হয়ে পড়লাম, উপলব্ধি করার সামর্থ্য তখন সম্ভবত হারিয়ে ফেলায় সেই বিষয়ে রুচিবোধের প্রয়োজন পড়েনি। এমনিতেও নেশায় চুর হয়ে থাকা আমার সাথে কিংবা আমি কার সাথে যৌনসংগমে লিপ্ত হতাম, চেতনায় আসতো না। সকালে নিজেকে বিবস্ত্র পেতাম কটেজে সুব্রত’দের বিছানায়। ঘুরাফিরার স্বাদ তখন চুলোতে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে ইনজেকশনও ইনজেক্ট করতাম শরীরে। যখন ট্যুরের সময় ফুরিয়ে এলো, তখন আমার মাথা পাগলপ্রায় অবস্থা। ফিরে গেলে নেশা করার জিনিস কোথা থেকে পাব? আর সুব্রতকে? তখন সুব্রতের বিষয় ক্লিয়ার হয়ে গেলো। সুব্রতই করল ক্লিয়ার। আমি যতটুকু ভালোবাসা অনুভব করেছি তাকে, সে তার সিকিপরিমাণ ভালোলাগা অনুভব করেনি আমার প্রতি। এমতাবস্থায় আমার মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা হওয়ার কথা ছিল। কিংবা আত্মহত্যা করে যমে টানাটানি। অথচ কিছুই অনুভব হলো না, শুধু মুড অফ হওয়া ছাড়া। কিন্তু সবচেয়ে যেটা অনুভব করলাম, সেটা হলো নেশার প্রতি আসক্তিকর বিষয়টা আমার মাথায় চলছে। চিন্তায় আমার ত্রাহিত্রাহি অবস্থা। নেশার জিনিসগুলো পাব কোথায়? কে-ই বা দিবে? সেটারও ব্যবস্থা হয়ে গেলো ট্যুর থেকে ফিরে যাওয়ার দিন। সুব্রতর থেকে চওড়া দামে নেশার জিনিসগুলো কিনতে হয়েছিল।
_____
ট্যুর শেষে ফিরলাম অবশেষে বাড়ি। কলেজ যাওয়া চলল কোনোমতে। টেনেটুনে পাস করলাম কলেজ লেভেল। ভার্সিটি ওঠে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলাম। ছেলেদের মতো দাপুটে চলাফেরা চলল আমার। কারণ ভার্সিটিতে নেশার জিনিস অনায়াসে বেচা-কেনা চলে। যা আমার জন্য বেশ সুবিধাজনক। এসব কেবল রাজনীতিতে যোগদানেই সম্ভব হয়েছিল। বিশাল দল লিড করতাম আমি। একসময় নেশার জিনিস সেবনের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর কাজ শুরু করলাম। মোটা অংকের টাকা পেতাম। স্বাধীনচেতা থেকে অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের মতো হয়ে পড়লাম। ভালোবাসা এলো। তবে তার কাছে ছিলাম অন্য জগতের ললিতা। দুই সত্তা তার কাছে প্রকাশ পেল না। কিন্তু মাঝেমধ্যেই আমার উধাও হয়ে যাওয়া রূপ তাকে বিচলিত করত। ভগবানের নাম নিতাম কখন তার বি.এ. কমপ্লিট হবে। অবশেষে শেষ হলো। ভার্সিটি থেকে বিদায় নিলো আর আমি-ও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। বিয়ের আশা অত তাড়াতাড়ি করিনি। কিন্তু হাতের নাগাল ছেড়ে বাইরে চলে গেল বিধায় বিয়েটা হয়ে গেল শান্তনু মজুমদারের সাথে। অত বড়ো বাড়িঘর, অর্থসম্পদের বিশালতা দেখে পুরোনো প্রেম হাওয়ায় মিলিয়ে গেল হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোন।
“হও তুমি আসমানের চান্দ,
আমি যে নিঝুম রাত।
হও তুমি সুন্দরের মেলা,
আমার কাছে পাবে কেবল অবহেলা।
হও তুমি গোলাপের সুগন্ধি,
আমি যে কাঁটার উৎপত্তি।”
চলবে…
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম