হাই সোসাইটির ললিতা-১৬,১৭
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম
১৬
“কী ভাবছ?”
ঘুম থেকে ওঠে ঋষি উদ্বিগ্ন, চিন্তিত আমাকে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ল। একই চাদরের নিচে ঋষির শরীরের উষ্ণ উত্তাপে অন্যান্য দিনের মতো আজ কোনপ্রকার প্রভাব ফেলল না আমার ওপর। আগে যদিওবা এমনতর উষ্ণতায় রাতের মতোই আরেক রাউন্ড আদিমতায় মেতে ওঠতাম দু’জনে। কিন্তু আজকের সকালটা অন্যরকমই হলো। কারণটা ঋষির হাতের রিং বলা চলে এনগেজমেন্ট রিং সেটা।
“কবে হলো?”
“তোমাকে তো জানালামই।”
“না তো। জানাওনি।”
“এনগেজমেন্টের বিষয়ে না। তোমাকে জানালাম না, আমার সাথে দেখা করার কথা। তুমি-ই তো বললে, আপাতত সময় নেই পড়ে।”
“এই বিষয়ে যে বলবে, বুঝিনি তো। ফোনেই বলতে পারতে।”
“সেটাও ঠিক। তবে সামনা-সামনি বলার প্ল্যান করেছিলাম।”
“বাড়ি থেকে, এরেঞ্জ বোধহয়?”
“হুম।”
“মেয়ে কেমন? আমার মতো না কি আরো সুন্দরী?”
এতক্ষণ যাবত দু’জনে মুখোমুখি অবস্থানে ছিলাম। আমার জিজ্ঞাসা করার বদলে ঋষি এগিয়ে আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে তার বুকে আমার পিঠ ঠেকিয়ে ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ করতে করতে অস্ফুটস্বরে বলল,
“উহুম, তোমার উপমাতে তুমি-ই সেরা।”
“হা হা, কবি-সাহিত্যিক।”
হেসে ফেললাম আমি। জানি আমাদের যে রিলেশন চলছে, এতে বাঁধাধরা নিয়ম নেই। যে যার যার লাইফ লিড করতে পারবে। সেখানে ভালোবাসাবাসি, অন্যের লাইফে ইন্টারফেয়ার করে নাক গলানোর মতো বিষয়গুলো বাধ্যবাধকতা নয়। যার যার পার্টনার নিয়ে কোনো কৌতুহলের বিষয় নেই। এখানে শুধু আনন্দ-মজা বলতে বিয়ে ছাড়া লিভ ইন রিলেশনশিপের মতো অবস্থা।
“উহু রে। হা হা, আর না প্লিজ।”
কাতুকুতু দিচ্ছে ঋষির, হাসিতেই দম ফেটে যাচ্ছে আমার। কখন যেন বুকের ওপরে থাকা চাদর সরে গেল। ঋষির সুড়সুড়ি দেওয়া হাত থমকে গেল। বুকের মাঝে ঋষি নাক ডুবিয়ে নিশ্বাস নিতে লাগল, মুখ ঘষতে লাগল এলোপাতাড়ি। ফের একবার মেতে ওঠা হলো রতিক্রিয়ায়।
____
“তখন মন খারাপ ছিল দেখলাম। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।”
“হয়তো একসাথে থাকার কারণে মায়া পড়ে গিয়েছিল।”
“হয়তো। আমার-ও তো হয়েছিল, সেদিন তোমার শাশুড়ির শ্রাদ্ধের দিন।”
“উচিত না। কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। বিছানাতেই আমাদের ভালোবাসার সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।”
ঋষি মাথা নেড়ে সায় দিলো। ড্রেস পরতে লাগলাম। তখন ঋষি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল আমাকে। হঠাৎই বলে উঠল,
“জানো শারথি অতটা এক্সপার্ট না।”
“শুয়েছিলে?”
অবাকতা ছাড়িয়ে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তরের আশায় রইলাম। মিললো তখনই ঋষির থেকে জবাব।
“হুম, বুঝোই তো। আমার মতো অত হ্যান্ডসাম ছেলে বলে…”
ওপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটের কোণ কামড়ে চোখ টিপ দিলো ঋষি। বুঝলাম কী বলতে চেয়েছে, আর সে-ও আমাকে ওভাবেই বুঝিয়ে দিলো। আমি-ও আরেকটু নির্লজ্জ হয়ে প্রশ্ন করলাম। অবশ্য তার কাছে সলজ্জে ছিলামই বা কবে?
“তাই বলে কি আর শোওনি?”
“দুয়েকবার হয়েছিল আমাদের মাঝে। মজা পাইনি সরাসরি বলে দিয়েছি। সে তো কথায় মারাত্মক। বলে কি না শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে।”
ঋষির কথা শুনে অট্টহাসিতে ঝরে পড়লাম। আমাদের মাঝে কথাবার্তায় লাগাম নেই। অনায়াসে বলে ফেলি, এসব স্বাভাবিক কথার মাঝেই রাখি।
“তাই বলে বাগদত্তাকে সরাসরি বলেই ফেলবে। মেয়েটার সাথে ক’দিন পরেই তো বিয়ে হচ্ছে। একটু তো সবুর করতে পারতে।”
বলেই ফের হাসির ফোয়ারা ছুটলো আমার। ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিকর নিশ্বাস ছেড়ে ঋষি বলল,
“আরে শারথি’ই তো আগ বাড়িয়ে কামোত্তেজিত করছিল আমায়।”
“আর তুমি থাকতে না পেরে বিছানায় নিয়ে নিলে তাই তো?”
“কী আর করতাম? তখন তো তুমি ব্যস্ত ছিলে।”
সেটাও ঠিক। পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল এ-ই প্রথম আমাকে। নেশার জিনিসের ট্রাক ভর্তি মালামাল পুলিশের হাতে পৌঁছালো কীভাবে? বিষয়টা নিয়ে বেশ হাঙ্গামা হয়েছে। পোহাতে হয়েছিল অনেক। একদিকে শেয়ার ডাউন এরপর সহায়সম্পদের মালিকানার বিষয় নতুন অশান্তি হিসেবে ট্রাক পুলিশের কাছে ধরা পড়া। এসবে টিকে আছি এই বেশ। উপরন্তু ঋষিকে সময় দেওয়া তো দূরে থাক বাড়ির লোকদেরই ফিরে তাকাতে পারিনি। হঠাৎই শুনতে পেলাম ঋষির নমনীয় গলার স্বরে বেশ অবাক হলাম বটে।
“তোমাকে কিছু বলতে চাই?”
অন্যমনস্ক থাকা আমি ধ্যানচ্যুত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“হুম, বলো। কী বলবে?”
“ফ্ল্যাটে আসতে গেলে মনে হয় কেউ আমাদের ফলো করছে।”
“মনের ভুলও তো হতে পারে। কারণ ফ্ল্যাট’টা তোমাকে দিয়ে কিনিয়েছি। আমি আসার সময় সকল প্রকার সেফটিতে লুকিয়ে আসি।”
হোটলে থাকা সেফ ছিল না আমাদের জন্য আর এমনিও কতদিন হোটেলে ঋষির সাথে রাত কাটাতে পারতাম। সবার নজরে এসে পড়তাল এভাবে চলতে থাকলে। সেজন্য ঋষিকে দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলাম আমরা শহর থেকে বেশ দূরে মফস্বল এড়িয়ার দিকে।
“জানি না তবে আমার যেটা মনে হলো বললাম।”
“আচ্ছা, তাহলে ক’দিন আমাদের গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। এমনিতেও আমি ভাবছি কয়েকদিন আমাদের দূরে দূরে থাকাই ব্যাটার।”
“চলো না আমরা দু’জন দূরে কোথাও পালিয়ে যাই।”
বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঋষির অনাকাঙ্ক্ষিত আকস্মিক আবদার আমাকে হতভম্ব করে দিয়েছে। ভাবিনি একদমই না, ঋষি এমনকিছু বলবে বা চাইবে। আমাদের রিলেশনশিপে তো কোনো বাঁধাধরা নিয়ম ছিল না। বিছানা পর্যন্তই নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার গণ্ডি। সেখানে অহেতুক চাওয়া মেজাজ খারাপ করে দিলো। বিগড়ানো মেজাজেই বললাম,
“কী বললে?”
হয়তে আমার রাগিত কণ্ঠের আভাস পেয়েছে ঋষি। তবুও ঠাট বজায় রেখে ফের শুধালো,
“তুমি বেশ ভালো করেই শুনেছ। তবুও বলি, আমাদের উচিত অপছন্দের মানুষ ছেড়ে পছন্দের মানুষ নিয়ে লাইফ লিড করা।”
সরাসরি একবার বলে, এখন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলল ঋষি কথাটা। আমি যে বুঝেছি সেটাও সে বুঝে গেছে।
“আমাদের মাঝের সম্পর্ক বিষয় কিছু জানো না না কি?”
“সো জানলেই বা কী?আমরা আমাদের পার্টনার নিয়ে তো খুশি নই। তাই যাদের নিয়ে খুশি তাদের সঙ্গে বাকি লাইফ কাটানো পছন্দ করতেই পারি।”
“করছিই তো। তাতে তো কোনো সমস্যা দেখছি না। সম্ভবত আমার সঙ্গ বাজে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কয়েকদিন আলাদা থাকি কেটে যাবে।”
“নো, তুমি বুঝতে পারছ না বিষয়টা। আলাদা হলেও, কেটে গেলেও আবার মিলিত হবে। আবার শরীরের স্বাদ, গন্ধ নেব৷ আবারো একসাথে সারাক্ষণ থাকার ইচ্ছা জোরালো হবে। তখন?”
মাথা আমার কাজ করছে না। ঋষি চাচ্ছেটা কী? যদিও সেটা আমার কাছে স্পষ্ট। তবুও তাকে তো আর বলতে পারি না সবকিছু। তাই তাকে আপাততের জন্য শান্ত করতে বললাম,
“দেখ ঋষি, তোমাকে ভালো লাগে এজ লাইক অ্যা সেক্স পার্টনার। তোমার সঙ্গ আমাকে আনন্দিত করে, উত্তেজিত করে। তবে হাসবেন্ড হিসেবে কখনোই ভাবিনি। তাই আপাতত মাথা ঠান্ডা করে শারথির সাথে বিয়েটা করে নাও। সমস্যা কী এরপরেও আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হবে। বলিনি তো আমি তখন পালিয়ে যাচ্ছি।”
বিছানায় মাথার চুল মুঠো করে নত হয়ে থাকা ঋষির দিকে এগিয়ে গেলাম। মুখ উঁচিয়ে তুলে গভীর চুম্বনে দু’জনার অধর সিক্ত করলাম। ভেজা স্পর্শে কামুকতা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা হলেও এবারের স্পর্শ ভালোবাসার মতো ছিল। হয়তো কয়েক দিন দু’জনার বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে।
চলবে…
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম
হাই সোসাইটির ললিতা |১৭|
“ম্যাম!”
“ম্যাম!”
“কী হচ্ছে কি মনি? আমি কালা না কি যে এমন চিৎকার করে ডাকছ?”
“সেই কখন থেকেই তো ডাকছি। শুনছেন না দেখেই তো একটু জোরে ডাকলাম।”
“আবার তর্ক করছ দেখি? কী বলবে বলে বিদায় হও।”
“আপনাকে খুঁজতে একজন একজন লোক এসেছিল।”
“তাই, কখন এলো? জানালে না যে আমাকে।”
“আপনি তখনও অফিস থেকে আসেননি।”
“আচ্ছা, তা কিছু কি বলেছে?”
“হুম, বলেছে। উনার নাম বললেই না কি আপনি চিনবেন উনাকে।”
“স্ট্রেঞ্জ! কী নাম বলল?”
“সুব্রত সেন।”
নামটা বলে চলে গেল মনি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কয়েক পল মূহুর্তে ধরে নামটা আমার কর্ণকুহরে বাজতে লাগল। মুহূর্তেই ঘুরিয়ে আনলো ফেলে আসা অতীতের অলিগলি থেকে। এই নামটাই আমার অধপতনের মূল কারণ। আজ এতটা বছর পর কী মনে করে সে আমার জীবনে পদার্পণ করল, করতেও বা চাচ্ছে কেন? আমার সাথে তার কী এমন কথা? বাড়ির ঠিকানাই বা পেল কোথায়? এতএত প্রশ্ন যার উত্তর নেই বর্তমানে আমার কাছে। ভারি অদ্ভুত, অন্যরকম ঠেকছে সকল বিষয়বস্তু। সাথে মন কু গাইছেও। অপেক্ষা কেবল সুব্রতর মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা!
______
বেশ কয়েকদিন হলো ঋষির খবর পাওয়া যাচ্ছে না। না কোনো ফোনকল, না দেখা করার তাগাদা। সম্ভবত শারথির সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। সেটা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। মস্তিষ্কে বললেও মনের মধ্যে সূক্ষ্মাগ্র চিত্তের ব্যথা অনুভূত হলো। সে তো এতদিন বেড পার্টনার ছিল। একটুও তো খারাপ লাগা স্বাভাবিক, না লাগাটাই অস্বাভাবিক। এদিকে সুব্রতর অপেক্ষা করেও কোন ফলাফল পেলাম না। তার না দেখা পেলাম আর না সে আমার সাথে দেখা করতে এলো। অগত্যা আমার স্থগিত করা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কাজগুলো পুনরায় গোছগাছ করতে লেগে পড়লাম। সর্ব প্রথম শান্তনুর নামের সকল স্থাবর-অস্থাবর নিজের নামের দলিল তৈরি করলাম। অতঃপর স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য অফিসের অন্যসব ফাইলের কাগজের সাথে নিয়ে নিলাম।
“ম্যাডাম!”
“কাম ইন চয়ন।”
“আপনার সাথে দেখা করতে সুব্রত সেন নামের লোক এসেছে।”
যাক অবশেষে এসেছে তাহলে। দেখি তার কোন নিয়ত, শয়তানি নিয়ত ছাড়া ভালো হবার লোক সে নয়।
“অকে, পাঠিয়ে দাও।”
বেশকিছু ক্ষণের পরে সুব্রতর দেখা মিলল। আগের চেহারার সৌন্দর্য স্নান হয়ে গেছে। আমার রুমের ডোর খুলে তার প্রবেশপথে প্রথমেই চোখাচোখি হয় দু’জনার। আমি কোন হাসি মুখ করে রাখিনি। বর্তমানের গাম্ভীর্যের খোলস দিয়ে ঢাকা আমার মুখমণ্ডল। তাকে দেখে আমার ভালো লাগা বা খারাপ লাগার অনুভূতি সে ধরতে যে না পারে, তারই জন্যে এই রূপ।
“বসতে পারি?”
“অফকোর্স।”
আমার মুখোমুখি রাখা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। আর কিছুক্ষণ অপলক চোখে চেয়ে রইল আমার দিকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলে আজকে মাইগ্রেনের জন্য চোখে চশমা লাগানো। তাই সে অনুমানে ব্যর্থ আমার চোখে হাহাকার কিংবা সুখের আভাস, কোনটা হতে পারে।
“চিনতে পেরেছ আমায়?”
এবার একটু মুচকি হেসে উঠলাম।
“গাল ভর্তি দাঁড়ি কিংবা শুঁকিয়ে কাঠ হলেও কী? নামের তো আর তোমার মতো পরিবর্তন আসেনি?”
“হুম, তাও ঠিক। এই নামের তো অনেকেই হতে পারত, পারত না কি?”
“অনেকে হলেও আমার কাছে এমন আগত ব্যক্তি একজনই। তাই অচেনার কথা না।”
“বাহ, বেশ বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান হয়ে গেছ দেখছি। ওহ্হো, আফটার অল বিজনেস ওমেন।”
“রাইট। তা কী নিবে? চা, কফি অর…”
“নেশা কর এখনো? সেগুলোই দেও।”
অবাক হলাম বেশ। ত্বরান্বিত ভাবে মুখের এক্সপ্রেশন বদলে ফেললাম। সুব্রতর এখানে আসার কারণ আমার কাছে সুবিধার ঠেকছে না। বিনয়ীভাবে কথাবার্তা শেষ করতে চাইলেও সে পুনরাবৃত্তি করছে অবিনয়ী, ধৃষ্টতার। পুরোনো কথার রেশ টানছে কেন জানা নেই আমার। তবে সেখানে ভালো কিছু যে নিহিত নেই বুঝা হয়ে গেছে। কী চাইছে সে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,
“কী চাচ্ছ তুমি? কেন এসেছ?”
“ওয়েল, ওয়েল ভেরি ইমপ্রেসিভ। তোমার কথার ধাঁচে মনটা নাচে। এই নাহলে বিজনেস ওমেন। সোজাসুজি মোদ্দা কথায় চলে এলে। আমি যে কিছু চাওয়ার জন্যেই এসেছি, সেটাও বেশ বুঝে গেলে।”
কথাগুলো বলার মাঝে সুব্রত চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। যদি-ও অফিসে সে আমার কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। আর করলেও বাইরে তো সাউন্ড যাবে না, সাউন্ড প্রুফ রুম। এতসব চিন্তা দুশ্চিন্তা হয়ে আমার মুখমণ্ডলে ঘাম হয়ে ঝরছে। সুব্রত তখন আমার খুব সন্নিকটে এসে ঘামন্ত আমাকে পরখ করতে ব্যস্ত।
“কী ব্যাপার এত ঘামছ কেন?”
এতক্ষণ ধরে গাম্ভীর্যের খোলস ঢিলে হয়ে আসছে। জবাব সব গলাতে দলা পেকে আছে, মুখ নির্গত হতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎই দমকা হাওয়ার বেগে শরীরে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়ার মতো গলায় সুব্রত আমার কানের কাছে ফিলসফি বলল,
“তুমি এখনো আগের মতোই সুন্দরী রয়েছ। মনে হয় চিরযৌবনা ধারণ কারী। তোমার একটা জন্মদাগ যেটা *** সেটা কি সেখানে এখনো রয়েছে?”
বিস্ফোরিত দৃষ্টি মেলে চেয়ে রইলাম সমুখের শূন্যতে। বুক দুরুদুরু করে কাঁপতে লাগল অজানা ভয়ে। ফের বলল,
“বলতে হবে না। আমারটা আমি-ই দেখে নিই।”
বলেই আমার গলার ও ঘাড়ের মাঝে দন্তপাটি দিয়ে কামড়ে দিলো সুব্রত। ঘটনার আকস্মিকতায় বুঝে ওঠার আগেই শরীরে পরা শার্টের বোতামে হাত দিয়ে কয়েকটা বোতাম খুলে ফেলল। কী হচ্ছে আমার সাথে মনস্থ করে সম্বিত ফিরে আসা মাত্রই জোরে ধাক্কা দিলাম তাকে। ডেস্কে থাকা ফাইলসহ নিচে পড়ে গেল।
“সাহস তো কম বড়ো নয়। এখনই চলে না গেলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।”
কিছু পল মূহুর্তে ওঠে দাঁড়িয়ে আমার সমুখে অবস্থান করে সুব্রত বলল,
“কাজটা তো ঠিক হলো না। মেরি বিল্লি মুঝে পে হি মেউ।”
“ভালোয় ভালোয় এবারের মতো ছেড়ে দিচ্ছি। পরেরবার ছাড় দেব না।”
আমার কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সুব্রত। মনে হলো হাস্যরসাত্মক ফানি জোকস শুনালাম তাকে। তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“পরেরবার ছেড়ে না দেওয়ার ব্যবস্থা আমি-ই করব।”
বাক্যতে শক্তপোক্ত ঘুর্ণিঝড়ের আভাস ছিল। কাঠিন্যের ছাপ ছিল সুব্রতর মুখমণ্ডলে। বেরিয়ে গেল তখন। আমি ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়লাম। দুশ্চিন্তারা পিছু ছাড়ছে না কোনোমতেই। একের পর এক বাঁধায় জর্জরিত হয়ে আমার লক্ষ্যপথ হচ্ছে, দুর্গম, কণ্টকাকীর্ণ। মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো পূর্বেই শত বাঁধার ফেরে পিছু হটতে হচ্ছে বারংবার। নাহ, এবার সবকিছু ঠিকঠাক ও দ্রুত গতিতে করতে হবে। ঝামেলা আসবেই তবে সবচেয়ে বড়ো যেটা দলিলে শান্তনুর স্বাক্ষর, সেটা আগে হাসিল করতে হবে। তারপরের প্ল্যানের জন্য ঋষিকে প্রয়োজন। কিন্তু ঋষির খবরই তো পাওয়া যাচ্ছে না। উফ! রুমের ডোর লক করে, নিচে পড়ে থাকা সকল ফাইল গোছাতে লাগলাম। দলিলের পেপারস একত্র করে নিলাম। এবার রুম থেকে বের হওয়ার পালা। পরিধানকৃত পোশাক ও এলোমেলো থাকা চুল ঠিক করে নিলাম লাগোয়া ওয়াশরুমে থেকে। যাত্রা শুরু করলাম বাড়ির দিকে। কিন্তু জানা ছিল না নতুন কোনো প্রলয়ঙ্কর ঝড়ের আগমনী বার্তা।
_____
চলবে…
লেখাঃ Mannat Mim – মান্নাত মিম