হাই সোসাইটির ললিতা-২১ শেষ

0
867

হাই সোসাইটির ললিতা-২১ শেষ

পুলিশকে ফোন করতে চেয়েছে শান্তনু। খুব কষ্টে থামিয়েছি। কথাও দিতে হয়েছে, যত দ্রুত পদক্ষেপে মেয়েকে উদ্ধার করে দিতে হবে। নাহলে সে পুলিশকে দ্বিতীয়বার ফোন দেওয়া থেকে বিরত থাকবে না। পঙ্গুত্ব বরণ করায় নাহলে সে-ই তার মেয়েকে উদ্ধার করতে যেত, আমার কাছে না কি এভাবে বারবার অনুরোধ করত না? কখনোই না। আরো নানান কথা। আমি তখন চিন্তায় পড়ে যাই। একা সেখানে যাওয়া রিস্কি। কাকে নেওয়া যায়? পুলিশ নেওয়াও রিস্কি হয়ে পড়ে। কারণ সেখানে আমাকে জড়িত মাদক ব্যবসার সাথে আরো নানাকিছু পরিচালনার কাহিনি উন্মোচিত হয়ে যেতে পারে, সুব্রতর বিশ্বাস নেই। তখন আমার বাইরে যাওয়া আঁটকে দিবে পুলিশ। অন্যদিকে আমার জীবন নিয়ে টানাটানিও রয়েছে। এখন আমি ঝুলন্তাবস্থায় পড়লাম। মহাযন্ত্রণা তো!
_______

“সবই তো শুনলে কী করতাম বলো তো?”

ঋষির সাথে ফ্ল্যাটে দেখা করতে আসা। অবশ্য এনজয়িং মুডে নয়। আপাতত চিন্তা-চেতনায় কেবল সুব্রতর হুমকি ঘুরছে।

“আমি যেতে চাই তোমার সাথে।”

“পাগল না কি?”

হকচকিয়ে দ্রুত বলে উঠি। মাথা ঠিক আছে না কি এই ছেলের? যেখানে আমার লাইফ রিস্কে, তাকে নিয়ে তার জীবনও জড়িত হোক এটা কখনোই আমি চাইব না। কারণ ঋষিকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। সেটা তাকে বুঝিয়েও বললাম। কিন্তু সে দৃঢ়তার সঙ্গে মাথা নেড়ে বলল,

“চিন্তা করো না। তোমাকে একা ছাড়া যাবে না। আমি লুকিয়ে থাকব। তুমি তাদের ফেস করবে৷ যখন দেখব কোন সমস্যা বা তোমার ওপর হামলা চালানোর কোন প্রক্রিয়া শুরু হবে, তখন বেরিয়ে উদ্ধার করব তোমাকে। সিম্পল প্ল্যান।”

প্ল্যানটা আমার-ও ভালো লেগেছে। তবে ওখানে কতজন গুন্ডাপান্ডা থাকতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তিত স্বরে বললাম,

“একা তুমি এতগুলোর সাথে আমাকে , সায়ন্তিকাকে কীভাবে উদ্ধার করবে?”

“আমার ওপর ছেড়ে দেও। ওখানে গিয়ে আগে পরিস্থিতি দেখে ও বুঝে নেই। তারপরে প্রয়োজনে পুলিশ ফোর্স ডাকব।”

শুনে আঁতকে উঠলাম, আতংক গ্রাস করে কলিজা শুঁকিয়ে এলো আমার। তবে পরক্ষণেই মাথা ঠান্ডা করে ভাবলাম, সেখানে তো আর ফোর্স নিয়ে যাব না। শেষে পরিস্থিতি বুঝে তাঁদের ডাকব, তখন আমি ধরা তো পড়ব না। যাক বাঁচলাম। আসলেই ঋষি আমার মানসিক শান্তি সাথে শারীরিকও।
______

দু’দিনে নিজেকে একটু একটু তৈরি করেছি সামনের ঝড়ের কবল হতে রক্ষার জন্য। নিজের লাইসেন্স করা পিস্তলটা নিয়ে নিলাম। ভাবছি, ঋষিকে কি একটা দেব না কি? পরক্ষণেই আবার ভাবতে হলো, সে তো তখন জিজ্ঞেস করবে কোথা থেকে পেলাম এটা। আমারটা নাহয় লাইসেন্সকৃত। তাকে যেটা দেব সেটা তো অবৈধ হবে। অবৈধ অস্ত্রপাচারও করে থাকি। সেসব কিছু জানানো যাবে না তাকে। আমাকে তো আর সেখানে পিস্তল হাতে যেতে দিবে না। তাই চিন্তা করলাম, পিস্তলটা ঋষির কাছে রেখে যাব। যেই ভাবা সেই কাজ। গাড়িতে করে রওনা দেওয়ার সময় পিস্তলটা ঋষিকে ধরিয়ে দিলাম।

“রাখ এটা।”

“না, আমাকে দিচ্ছ কেন?”

“খালি হাতে যুদ্ধে হার নিশ্চিত।”

“তাই বলে আমি এসব নেব না।”

“আরে টেনশন করো না। শত্রুরা তো আমাকে চ্যাক করে তারপরে ভেতরে যেতে দিবে। সেখানে তখন শুধু শুধু ধরা পরে এটা খুইয়ে লাভ আছে? তারচেয়ে ভালো তোমার কাছে থাক। কাজে লাগবে। লাইসেন্স করা।”

কাজে দিলো কথায়। ঋষির কাছে পিস্তল গচ্ছিত রেখে এগিয়ে গেলাম জঙ্গলে ঘেরা বাংলো বাড়িতে। পঁচা শ্যাওলা, লতাপাতায় আচ্ছাদিত বাংলোটা। ভুতুড়ে দেখতে হওয়ায় এই জায়গাটাই বেছে নিয়েছে শত্রুপক্ষ। বাইরে দাঁড়িয়ে দু’জন পাহারাদার দেখা গেল। ঋষির দিকে তাকালাম। গাড়ি পার্ক করা আরো বহুদূরে, বেশখানিক পথ পায়ে হেঁটে এসেছি আমরা। নার্ভাসনেস, ভয়ে গায়ের সফেদ রঙের শার্ট ভিজে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃশ্যমান। সেদিকে অবশ্য ঋষির খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার আশ্বস্ত করছে ভয় না পাওয়ার। সাবধানী বাক্য শুনাচ্ছে, সাহস হিম্মত সহিত যাওয়ার।
_______

“ওয়েলকাম সেক্সি লেডি মিসেস ললিতা মজুমদার।”

কারো কথায় চকিতে তাকালাম সমুখের পানে সিঁড়ি বেয়ে নিম্নে এগিয়ে আসা সুব্রতর দিকে। ঘৃণায় মুখ কুঁচকে এলো। যাকে কি না একসময় ভালোবেসে ছিলাম। ক্ষণিকের ভুল যে এখন হুল হয়ে বিষ ফোটাবে ভাবনায় আসেনি কখনো। এভাবে ফাঁসাবে বাস্টার্ডটা জানলে খু/ন করতাম। আপাতত মাথা শান্ত রাখার চেষ্টা করতে লাগলাম। কারণ সবার ঋষি বলেছে, মাথা গরম না করতে। অথচ এখানে এসে হচ্ছে উলটো। সুব্রতকে দেখেই মন চাচ্ছে একদলা থুতু তার মুখে ছিটিয়ে দিতে। আমার বানানো খেলা বিগড়াতে চলে এসেছে। কারণ কিছুক্ষণ পরেই আমাকে এখানে আসার পেছনের মোটিভের কথাটা বলল সে। সেদিন ডেস্কে থাকা শান্তনুর সকল প্রোপার্টি আমার নামে ট্রান্সফারের কাগজ দেখে ফেলে, ফলে লোভ জাতীয় বস্তু তাকে ঘিরে ধরে। আর তার বদৌলতে এতকিছু। এখন আমি পড়েছি গ্যাঁড়াকলে। সম্পত্তির জন্য এতকিছু সেটা তো তাকে দেব না। এমন মন-মানসিকতার আমি নই। আমি হাই সোসাইটিতে বড়ো হওয়া এবং সেখানেরই উচ্চ-বিত্তবানের সহধর্মিণী ললিতা। জীবনকে উপভোগ করা, আর অঢেল টাকা,ধনসম্পদের মালিক হওয়া যার নেশা। সেই আমি কি না এত সহজে সুব্রতর হাতে সবকিছু ছেড়ে দেব? কক্ষনোই না।

“তাহলে মেয়েকে হারাও।”

“এজ ইউর উইশ।”

নাহ, আমাকে টলাতে পারছে না সে। এদিকে বাংলোতে ঢোকার মুখে গার্ড দু’টোই আমার ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। উপায়ও নেই ঋষিকে ফোন করার। উদ্বেগ ধরা দিচ্ছে মুখে আস্তে আস্তে করে।

“তাহলে তোমার বেঁচে থেকে কী লাভ বলো?”

“ম…মানে?”

“মানে খুব সহজ। তোমাকে তো বাঁচিয়ে রেখে মৌজমাস্তিতে ঘুরে-ফিরে বেড়াতে দেব না। দ্যাট মিনস মরতে হবে।”

মুহূর্তে রাগে থমথমে মুখে আমার মেদুর ছায়ায় ঘনঘটা হয়ে গেল। চিৎকার করে বললাম,

“ইউ বাস্টার্ড। তোর সাহস কি করে হয়, আমাকে মারতে চাওয়ার?”

ঠাস করে একটা গুলি এসে কাঁধে বিঁধায় জ্বলে উঠল পুরো গা, নিচে বসে পড়লাম আকস্মিক। মনে মনে ঋষিকে খুব করে চাইছি যে, সে এসময়ে এসে পরুক। কিন্তু গুলির শব্দেও ঋষির কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। তাকে কি সুব্রতর লোকেরা ধরে ফেলল না কি? ভয় হলো এবার নিজের চেয়েও যাকে ভালোবেসেছি তাকে নিয়ে, তার জীবন নিয়ে।

“এভাবেই। এভাবেই মারতে চাওয়ার সাহস হয়।”

এতক্ষণ যাবৎ সোফায় বসে আরামে মৌজে থাকা সুব্রত ওঠে দাঁড়ালো। আমার সমুখে এগিয়ে এলো। ঝুঁকে গিয়ে নতমস্তকে বসে থাকা আমার ঝুঁটি করা চুলের মুঠি ধরল শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে। তীব্র ব্যথায় মুখ বিকৃত হয়ে ব্যথাতুর শব্দ বেরিয়ে এলো। সেই মুখ খেলা অবস্থায় সুব্রত তার হাতে থাকা পিস্তলের মাথা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। সকল ব্যথা ভুলে গিয়ে হকচকিয়ে চোখ বড়ো হয়ে এলো আমার। কী করতে চাইছে সুব্রত? সত্যিই কি মৃত্যুর যমদূত দাঁড়িয়ে সামনে? ঋষিকে একবার দেখার ভাগ্য হতো যদি!

“শালি, তোর ফরফরানি এখনো কমেনি। এতো তেজ? সেদিন অফিসের তেজ দেখে যথেষ্ট বুঝে গিয়েছি। শরীরে যে এখনো বারুদ ভরা। আমার লোক দিয়ে সব তেজ বের করে দিতে চেয়েছিলাম একবার। কিন্তু নাহ, তোর প্রোপার্টি আগে নিজের নামে করে নেই৷ তারপর তোকে নিয়ে খেলাব অনেক, এখন সেই সময় নেই।”

অতঃপর কাকে যেন ডাকল। ফাইল নিয়ে এলো সেই ছেলে। বুঝে গেলাম জোর করে স্বাক্ষর নিবে তারা। হলোও তাই। মুখের মধ্যে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে স্বাক্ষর দিতে বলে। রাজি হলাম না। তীব্রভাবে মাথায় আঘাত করে। চোখে ধু ধু দেখি শুধু। এমন সময় বাইরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেল।

“শালি-মা* কারে নিয়া আসছোস সাথে করে?”

মৃদু হাসলাম। মুখে বন্দুক দেখে বলতে পারলাম না, আমার ভালোবাসাকে তোদের যমকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু তা আর বলা হলো না। এর আগেই আমার কাঁধ চেপে দাঁড় করে টেনেহিঁচড়ে তার সাথে নিয়ে যেতে লাগল। চুল খুলে গেছে হ্যাঁচকা টানে। চিৎকার করে ঋষির নাম নিলাম। কপাল বেয়ে এমনিতেই অঝোরে রক্ত ঝরছে তারউপর চিৎকার করে ডাক দেওয়া আরো এক ঘা পড়ল সেখানেই। শুনতে পেলাম, পুলিশ এসেছে না কি। ব্যথা ভুলে অবাক হয়ে বিমূঢ় রইলাম স্পল্পক্ষণ। কে ডাকল তাঁদের? চেতনা হারাচ্ছি বোধহয় এবার। এতকিছুর ধকল শরীর, মনমস্তিষ্ক আর নিতে পারছে না। অবশ শরীর নুইয়ে যেতে লাগলে ফের হ্যাঁচকা টানে উঠিয়ে সোজা করে দাঁড় করায়। বাড়ির নিচে সিঁড়ি বেয়ে বেসমেন্টে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। অন্ধকার কানাগলির মতো লাগল৷ যেভাবে হাঁটিয়ে নিলো, সেভাবেই চললাম সুব্রতর পিছুপিছু। বাচ্চাদের চিৎকার-চেঁচামেচি শুনতে পেলাম সেখানে। মৃদু আলোয় আবছায়ার মতো অনেক বাচ্চার সমাহার। পাচার করার জন্যই আনা, দেখে যা বুঝলাম। আমার বাচ্চাটা কোথায়? হঠাৎই কলিজাতে মোচড় দিলো। মাতৃত্বের স্বাদের অনুভবের ইচ্ছে হলো। মেয়েটাকে তো কোনদিন আগ বাড়িয়ে কোলে নেইনি, ভালোবাসিনি। দায়ভার মনে করে দায়সারা আচরণ করেছি। এখন মৃত্যুমুখী হয়ে যদি শেষবার একটু আদর করতে পারতাম! অশ্রু অনুভব করলাম চোখের কোণে। নিজেই নিজেকে দেখে অবাক হলাম। বিপদে পড়লে সজ্ঞান হয়, বিবেকের দরজা খোলে বোধহয়। আমার-ও তাই হলো, তবে হাতে যে সময় নেই। নিজে যে বাঁচতে পারব না জানি। তবে আমার মেয়েটাকে নিজের জীবন উৎসর্গ করে হলেও শত্রুর হাত থেকে রেহায় দিব। ফিরিয়ে দেব তার বাবার কোলে।

“আমি স্বাক্ষর করতে রাজি।”

হঠাৎ আমার মুখে এমনতর কথা শুনে যারপরনাই অবাক হতে দেখা গেল সুব্রতকে। হওয়াও জায়েজ। কারণ এত মার খেয়েও যাকে কি না রাজি করানো গেল না। সে হঠাৎ করেই রাজি হয়ে যাবে!

“ব্যাপার কী হঠাৎই রাজি?”

“স্বাক্ষর চাই নিয়ে নেবে। তবে শর্ত আছে।”

সুব্রত এক ভ্রু উঁচু করল। দৃষ্টিতে তার জিজ্ঞাসা।

“এখানের সব বাচ্চাদের ছেড়ে দিতে হবে।”

“হাহ্! এতো বড়ো শর্ত!”

“মানলে রাজী হও নইলে আরকিছু বলার নেই।”

খানিক ভাবল সুব্রত। কী ভাবছে সেটা আমি-ও জানি। কারণ এমন খেলা আমি খেলে এসেছি। তবে মোহরা ছিল অন্যকিছু। অবৈধ কাজে জড়ালে বিভিন্ন মোহরা নিয়ে খেলতে হয়, তাদের গুটি বানাতে হয়। তা যাইহোক, এখন এতগুলো বাচ্চা নিয়ে সুব্রত বাইরে বেড়োতে পারবে না। কারণ বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে। তারচেয়ে আমার প্রস্তাবটা লোভনীয় বেশি। সুতরাং ফলাফল একদম, যেটা ভাবছি সেটাই বেরুলো।

“আগে তোমার লোক বাচ্চাদের পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তারপর আমি সই করব।”

আমি পালাতে পারব না। সুব্রতর হাতে বন্দি, সেই সুযোগ নেই। অগত্যা সে রাজি হলো বাচ্চাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। একে একে বাচ্চাদের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে বলল। আমাদের সাথে হ্যাংলা-পাতলা গড়নের সুব্রতর একটা লোকও এসেছিল। সে-ই এগিয়ে একএক করে সব বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। বেসমেন্টটা নিচে হওয়ায় সম্ভবত পুলিশ বুঝতে বা ধরতে পারেনি, এখানে লুকানোর বিষয়টা। অবশেষে একটা বারো বছরের বাচ্চার কোলে দেখতে পেলাম আমার সায়ন্তিকাকে। এগিয়ে যেতে নিলাম একটু কোলে নেওয়ার জন্য, আদর করার জন্য। কিন্তু পিছন থেকে আমার একহাত টেনে রাখল আরেক কালো হাত। অবশ্যই কালো হাত, আমাদের মতো নোংরা কাজের লোকদের হাত সবসময় ময়লা, রক্তে মাখা কুচকুচে কালো হয়ে থাকে, যা গায়ের ফর্সা আবরণে দেখা মেলা ভার। নিজের হাতও তো তেমন৷ তাই মনের ইচ্ছেটাকে মনেই মাটি দিলাম। ওপরের দরজা খোলায় ক্ষীণ আলো দেখতে পেলাম নিম্নে। অতটুকুই ফাঁকা আর ততটুকুই আলোর খেলা। সকল বাচ্চারা বেরিয়ে গেলে আমাকেও ধরে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে স্বাক্ষর দেওয়াও শেষ। সুব্রত নিজে বাঁচার তাগিদে এখানে মোহরা হিসেবে আমাকে ব্যবহহৃত করল। বাচ্চাদের ওপরে পাঠানোর পরে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বেসমেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। প্রাণ কণ্ঠদ্বারে নিয়ে বাইরের আলোতে এলাম। সেখানে এসে দেখা গেল ঝড় বয়ে গিয়েছে কিয়ৎক্ষণ পূর্বে। সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার শ্বাস আঁটকে মরার পালা। সুব্রতর আগে ঋষির হাতেই মৃত্যু কাম্য তাকলে? পুলিশের পোশাকে তাকে দেখতে অপূর্ব লাগলেও মাথা আমার শূন্য প্রায়। এলোমেলো জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার পানে। তবে কোন হেলদোল দেখতে পেলাম না।

“আমাকে যেতে দাও। নাহলে এটাকে মে/রে ফেলব।”

“লাভ নেই। এমনিও তার বিরুদ্ধে পুলিশের গ্রেফতার নামা জারি করা, জীবিত হোক কিংবা মৃত।”

আমার আজ বিস্ময়ে মৃত্যু নির্ধারিত। এতএত শকিং নিউজ যে আমার জন্য আজই বের হওয়া জানতে পেরে অত্যাধিক পরিমাণের শকে হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার জোগাড়। তারচেয়ে বেশি কষ্টের ছিল ঋষিকে অন্যরকম দেখার দৃশ্য। সবকিছুই তাহলে ধোঁকা, ছল? ভালোবাসা বলে সত্যিই কি কিছু নেই, ছিল না? দুচোখ বন্ধ করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলাম, এ যেন মিথ্যে হয়। কিন্তু নাহ, কিছু হওয়ার আগেই সুব্রত গুলি ছুড়ল। মাথার এফোঁড়ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেল। আহা! মৃত্যু বোধহয় এত আরামদায়ক হয় বুঝি? শেষান্তে কোন জ্বলুনির প্রভাব ছিল না। ওদিকে ঋষিকে দেখলাম গুলি ছুড়ে ততক্ষণে সুব্রত-ও মাটিতে আমার পাশেই ধরাম শব্দে পড়ে গেল। মৃত্যু মুখেও ঠোঁটের কোণে স্মিথ হাসি খেলে গেল। ইচ্ছে ছিল একটা, শুধুই একটা। জানতে, আমার মৃত্যুতে ঋষির মুখাবয়ব কেমন?

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here