হারিয়ে_খুঁজে_ফিরি #শেষ_পর্ব

1
2218

#হারিয়ে_খুঁজে_ফিরি
#শেষ_পর্ব

মুনীর ও তার নতুন বউ এর সঙ্গে মায়াদের বাসায় এসেছে ফারদিন। ওকে দেখে মায়া অবাক হলেও খুশি হয় মীরা।
মীনারা জান্নাতও ফারদিনকে সাদরে বাসায় প্রবেশ করান। মুনীর বলল, ফারদিন বাসায় এলো মামী। ভাবলাম সঙ্গে নিয়ে আসি।
-বেশ ভালো করেছ। ফারদিন তুমি ভালো আছ?
-জি। আপনাকে কষ্ট দিতে আসলাম।
-এসেছ ভালো হয়েছে। সেই তো ব্যস্ত হয়ে যাবে কিছুদিন বাদে।

মায়া খুব একটা কথা বলল না। ওর মন বেশ খারাপ। ও চলে যায় নিজের রুমে। এদিকে ড্রয়িংরুমে বসে নাস্তা খেতে খেতে সবাই আড্ডায় মেতে উঠে। কিন্তু মায়া নিজেকে করে রাখে রুম বন্দী । এখন হামজার সঙ্গে খুব একটা কথা ও বলতে পারে না। মা এর বারণ রয়েছে। তাই চ্যাট করে ওরা। রাত হলে লুকিয়ে ফোনে কথা বলে। ওদিকে হামজা এসব মানতে নারাজ। এই নিয়ে মায়াকে ও অনেক কথা শুনিয়েছে। এদিকে মীনারা জান্নাতও মায়াকে উঠতে বসতে বকাবকি করে চলেছেন। মন তো খারাপ হবেই!
আজ মীনারা জান্নাত মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত বলে রুমে এসে হামজাকে ফোন দেয় মায়া। হঠাৎ মীনারা জান্নাত এসে ওর দরজায় কড়া দিয়ে বললেন, মেহমান রেখে এখানে কী করছিস?
মায়া তাড়াহুড়ো করে ফোনের লাইন কেটে সেয়
দরজা খুলে ও বলল, যাচ্ছি মা।
এদিকে হামজা ওর মা এর কথা শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে। কে এসেছে মায়ার বাসায়! এই প্রশ্ন করে ও মেসেজ করে মায়াকে।

মায়া ড্রয়িংরুমে আসলো। ফারদিন ওর দিকে আড়চোখে চেয়ে রয়েছে। মায়ার চোখ, মুখ ফোলা দেখা যাচ্ছে। ফারদিন বলল, ঘুম হয়নি নাকি? না মানে চোখ ফুলে আছে।
-ঘুম না হলে চোখ ফুলে থাকে কে বলল আপনাকে?

এই বিষয়টি এড়িয়ে ফারদিন বলল, আমাকে চিনেছেন?
-হুম।

মায়া চুপ হয়ে যায়। বকবক করতে থাকে মীরা। মায়া হামজার মেসেজের রিপ্লাই করলো, মুনীর ভাইয়া ও ভাবী এসেছেন।
-আর?
-মুনীর ভাইয়ার কাজিন।
-ছেলে?
-হু।
-সে এখানে কী করে?
-ওদের বাসায় ছিল, নিয়ে এসেছে।
-বিবাহিত?
-নাহ। স্টুডেন্ট।
-কিসে পড়ে?
-বুয়েট স্টুডেন্ট। চান্স পেল এইবার।

এই কথা শুনেই অস্থিরতা কাজ করে হামজার মনে। ও শোয়া থেকে উঠে বসে লিখলো-
দূরে থাকবে ওর থেকে।

মেসেজটি দেখে মায়ার মেজাজ খারাপ হলেও লিখলো-
আছি দূরে।

ফারদিন ভেবেছিল আজ এখানে এসে মায়ার সাথে সময় কাটাতে পারবে। কথাবার্তার মাধ্যমে ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারবে। কিন্তু মায়া সারাক্ষণ ওর ফোনেই ব্যস্ত রয়েছে। তার মানে কী মায়ার পছন্দের কেউ রয়েছে?

এই প্রশ্নটি মায়াকে করা হয়নি। এর উত্তরও ফারদিনের জানা হয়নি। কেটে যায় একটি বছর।

নিজেকে রুম বন্দি করে রেখেছে মায়া। এত বড়ো একটা সত্যি ওর সামনে আসবে কখনো ভাবেইনি! হামজা ওকে এভাবে ঠকাবে তা কল্পনাও করেনি ও।
মায়া জানতো, হামজা প্রাইভেট ভার্সিটতে পড়াশোনা করছে। অথচ হামজা নাকি কোনো ভার্সিটিতে ভর্তিই হয়নি! এই সত্যিটা মায়া আজ অন্য জনের কাছে জানতে পারে। সন্দেহ মায়ার অনেকদিন ধরেই হয়েছিল। আর তাই ও খবর নিতে শুরু করে৷ পরিচিত এক বোনের মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পারে, হামজা ওখানে ভর্তি হয়নি। সত্যিটা জেনে অনেক ভেঙে পড়ে মায়া। এই বিষয়ে হামজাকে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব স্বীকার করে৷ ও জানায়, ভবিষ্যতে ওর বাইরের দেশে যাওয়ার ইচ্ছে। ওখানে জব করবে। আর তাই পড়াশোনা করেনি। কিন্তু মায়ার পরিবার এমন ছেলের সাথে ওর সম্পর্ক মেনেই নেবে না, যে কি না ভার্সিটিতে ভর্তিই হয়নি! তারা যে পড়াশোনাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন। এমনকি মায়ার বাবা দুবাইয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি এসব শুনে কখনোই রাজি হবেন না। গত এক বছর ধরে হামজার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে মায়ার খুব সমস্যা হচ্ছে। মায়া ওকে এখনো ভর্তি হতে বলে। কিন্তু ও ওর সিদ্ধান্ত তেই অটল থাকে। কথাটি মায়ার মায়ের কানেও যায়। তিনিও হামজাকে বোঝান। হামজা উলটো তার সঙ্গে বেয়াদবি করেন। সেই থেকে
মায়া ও হামজার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মায়া এই সম্পর্কটাকে একটা অসুস্থ সম্পর্ক মনে করতে থাকে। কিন্তু এটা বুঝতে ওর দেরী হয়ে যায়। এই সম্পর্ক থেকে ও বেরুতে পারছে না।
হামজার কাছে থাকা ওদের কিছু ছবি ছিল। এসব নেট পাড়ায় ছড়িয়ে দেবে বলে মায়াকে ভয় দেখাতে শুরু করে। এসব নিজের মা কেও বলতে পারেনি মায়া। এদিকে মীনারা জান্নাত মায়ার উপর বিরক্ত, কেন ও হামজার কাছ থেকে দূরে সরে আসছে না।
সব মিলিয়ে মায়া নিজের জীবনের মায়াই যেন হারিয়ে ফেলে।
মায়ার ফোনে আবারও হামজার মেসেজ আসলো-
বিয়ে করবে নাকি বলো আমাকে? আমার বিদেশ যাওয়ার তারিখ ঘনিয়ে আসছে। এর আগেই বিয়েটা করতে চাই। হোক লুকিয়ে।

ক’দিন ধরে বিয়ের বাহানা শুরু করেছে হামজা। এদিকে মায়া সম্পর্কটা নিয়েই বিরক্ত। বিয়ে নিয়ে ভাববে কিভাবে! আস্তেধীরে যে মায়ার মন থেকে হামজা সরে যাচ্ছে! যেদিন থেকে মায়াকে ভয় দেখিয়েছে সেদিনই হামজার প্রতি রাগ হয় ওর। এরপর মায়ার মা এর সঙ্গে বেয়াদবি করার পর আরও বেশি রাগ হয় হামজার উপরে।
পড়াশোনা না করেই মিথ্যে বলা, মায়াকে ইমোশনাল করে ঘনিষ্ঠ ছবি তোলা, জোরপূর্বক বাইরে ঘুরতে যাওয়া, নানা কারণে মানসিক অত্যাচার করা, কারণে অকারণে গায়ে হাত অবধি তোলা সব মিলিয়ে হামজার প্রতি যেন ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে মায়া। কয়েকবার হামজাকে জানিয়েছিল, এই সম্পর্ক ও রাখতে চায় না। ফলস্বরূপ হামজা ওকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে।
বাধ্য হয়ে মায়া সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন রিসিভ করে মায়া। ওপাশ থেকে হামজা বলল, কী ভাবলে বিয়ে নিয়ে?
-বিয়ে তো আমি তোমাকেই করব। কিন্তু এখন না। সব তোমার মনমতো হতে পারে না হামজা। আগে তুমি দেশের বাইরে যাও৷ কয়েক বছর থেকে এসো৷ এরপরেই হবে যা হওয়ার।
-কিন্তু তুমি যদি আমায় ধোঁকা দাও?
-তোমার হাতে অস্ত্র তো আছেই। এখন যেভাবে দমিয়ে রেখেছ তখনো রাখবে।

এই কথা শুনেই হামজা রাজি হয়ে যায়। এবং সে কাতার চলে যায়। ওখানে যাওয়ার পরে মায়ার সঙ্গে কথোপকথন চলতে থাকে। কিন্তু হামজার প্রতি মায়ার আগের মতোন সেই টানটা নেই যা হামজা বুঝতে পারে।
এভাবে আরও বছর খানেক কেটে যায়। মায়া হামজার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। কিন্তু হামজা পরিবর্তন হয় না। ওখান থেকেই মায়ার সঙ্গে খবরদারি করতে থাকে। এইতো সেদিন! মায়া ও কাজিন বোনদের সঙ্গে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। এটা নিয়েও হামজা ওর সঙ্গে রাগারাগি করেছে। ও কোনোমতেই বিশ্বাস করছিল না যে, ওখানে কেবল ওরা মেয়েরাই ছিল।
মায়া ভেবেছিল হামজা ওখানে গেলে বোধহয় ঠিক হবে, দুরত্বে থেকে ওর মধ্যে বোঝার ক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু এমন কিছু হলো না। মায়া হামজার এসব কারণে খুব বেশি ভেঙে পড়ে। এদিকে বাসায় মা এর কটু কথা তো আছেই!

আজ মায়া ও মীরা ওদের মা এর সঙ্গে শপিং এ এসেছে। হঠাৎ এখানে ওদের দেখা হয়ে যায় ফারদিনের সঙ্গে। ফারদিন নিজ থেকেই ওদের সঙ্গে কথা বলতে আসে। প্রায় দুই বছর পর মায়াকে দেখলো ও৷ অবশ্য প্রায়শই মায়াকে ফোন করে ফারদিন। কিন্তু পরিচয় দেয় না। কণ্ঠ শুনেই ফোন রেখে দেয়। দুই বছর আগের মায়ার সঙ্গে এই মায়ার বিস্তর তফাৎ যেন খুঁজে পায় ফারদিন। চোখের নিচে কালি জমে গেছে মেয়েটার। বেশ শুকিয়েও গেছে। হয়তো কোনো দু:শ্চিন্তায় বিভোর রেখেছে নিজেকে।
মায়ার মা ফারদিনকে একদিন ওদের বাসায় আসতে বলল। মীরা বুয়েটে পড়তে আগ্রহী। এই বিষয়েই বিস্তারিত আলাপের জন্য ফারদিনকে তিনি আসতে বলেন। সেও রাজি হয়ে যায়।
কথামতো পরের দিনই ফারদিন ওদের বাসায় আসে। কিন্তু সেদিন মীনারা জান্নাতের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাই এসব নিয়ে আর কথা বলতে পারেন না তিনি। ফারদিন সেদিন কিছু সময় বসেই চলে যায়। দু’দিন বাদে মীনারা জান্নাতের খবর নেওয়ার অজুহাতে না বলেই বাসায় আসে।
সেদিন তিনি বাসায় ছিলেন না। এটা জেনেই ফারদিন বেশিক্ষণ বসেনি। এর কিছুদিন পর ও আবার আসে। মীনারা জান্নাত ও মীরার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলে। সে সময়ে মায়া কেবল একবারই এসেছিল। মিনিট খানেক থেকেই ও ভেতরে চলে যায়। অথচ ফারদিন যে ওকে দেখতেই এসেছে!

এদিকে ফারদিনের মায়ার বাসায় এতবার আসার খবর পেয়ে যায় হামজা। অবশ্য ও এসব খবরাখবর পাওয়ার জন্যে মানুষ ঠিক করে রেখেছিল। ওরাই এসব খবর হামজাকে দেয়।
হামজা মায়ার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে মায়া সত্যিটাই জানায়। কিন্তু এসব হামজা বিশ্বাস করে না। ও ফারদিনের সঙ্গে কথা বলতে চায়। মায়া ওকে তামাশা না করতে বললে অনেক বেশি রেগে যায় হামজা। মায়া বাধ্য হয়ে মীরার কাছ থেকে চেয়ে ফারদিনের ফেইসবুক আইডি হামজাকে পাঠায়। আইডি পেয়ে শান্ত হয় হামজা। মায়া ওকে অনুরোধ করে, যাতে ফারদিনকে ও কিছু না বলে। কেননা ফারদিন ওর আত্মীয়। বিষয়টি আত্নীয়দের মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে। হামজা ওকে কিছু বলবে না জানালেও মন থেকে ওর সন্দেহ যায় না।
ক’দিন বাদে মায়ার বাসায় আবারও আসে ফারদিন। ওর হাত ঘড়িটা এখানে থেকে যায় এটি নিতেই আসা। অবশ্য ফারদিন এটি ইচ্ছেকৃত ভাবেই করেছে। ফারদিন যে এখানে এসেছে এই খবরটি আবারও চলে যায় হামজার কাছে। এইবার হামজা মায়াকে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই, ফারদিনের কাছে মায়া ও নিজের কিছু ছবি দেয়। এবং অকথ্য ভাষায় ফারদিনকে গালাগাল করে ভয়েস রেকর্ড পাঠায়। এসব দেখে ফারদিন হতভম্ব হলেও মায়ার এমন চুপচাপের কারণ ও বুঝতে পারে। ফারদিন হামজাকে কিছু বলে না। ব্লক করে দেয় ও। এরপর অনেক ভেবে ফোন দেয় মায়াকে। মায়া প্রথমে ফারদিনের ফোন পেয়ে অবাক হয়। সেই অপরিচিত নাম্বার থেকেই ফারদিন ওকে ফোন করে যেটা থেকে প্রায়শই মায়াকে ফোন দিতো ও৷ ফারদিনের পরিচয় জেনে মায়া বলল, এতদিন পরিচয় দেননি কেন?
-সাহস হয়নি। শুধু তোমার কণ্ঠ শুনেই শান্তি পেতাম।
-মানে?
-মানে তুমি বুঝেছ। আমি তোমাকে পছন্দ করি। প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই।

মায়া হকচকিয়ে উঠলো। ও বলল, কিন্তু আমি আসলে আপনাকে কোনো আশাই দিতে চাই না।
-আমি জানি কেন।
-কেন?
-কারণ তুমি হামজা নামের কাউকে ভালোবাসো। যদিও আমি মাত্রই জানলাম।
-কিভাবে?

হামজা যা করেছে সবই মায়াকে বলে ফারদিন। সাথে আরও বলল-
তুমি একটা অসুস্থ সম্পর্কে আছ মায়া। তুমি কতটা ভালো মেয়ে হামজা না বুঝলেও আমি বুঝেছি। হামজা তোমাকে আমাকে নিয়েও সন্দেহ করেছে। অথচ আমি জানি তুমি আমার সামনে কেমন থাকতে! নিশ্চয় হামজার স্বভাবই এমন! ওর এই কাজেই এটা স্পষ্ট। বিশ্বাস করো, হামজার এসবে তোমাকে পছন্দ করি বলার সাহসটা আমি পেয়েছি। আমি চাইনা আমার পছন্দের মানুষটি এভাবে একটা অসুস্থ সম্পর্কে নিজেকে জড়াক। আমি চাই সে সবসময় হাসি খুশিতে থাকুক আর সেটাই ওর প্রাপ্য। আমি তোমাকে তোমার প্রাপ্য সম্মানটা দিতে চাই মায়া৷ নেবে না তুমি বলো?

মায়া কিছু বলতে পারে না। ফোন বন্ধ করে চোখের পানি ফেলতে থাকে৷ এক পর্যায়ে নিজেকে শান্ত করে ও ফোন চালু করে কল দেয় হামজাকে।
হামজা রিসিভ করে বলল, আমি জানতাম তোমার ফোন আসবে। ফারদিন সব বলেছে তাইনা? নিশ্চয় এসব দেখে তোমায় ঘৃনা করে বলেছে?

মায়া হাসে। হামজা অবাক হয়। মায়া বলল, সবাইকে তোমার মতন ভাবো নিশ্চয়!
-মানে?
-ফারদিন এমনটা করেনি। বরং ওর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমার প্রতি।
-সব জানার পরেও?
-সব জানার পরেই এমনটা ও করেছে। আগে নয়। এতে কী বুঝলে তুমি?
-কী?
-তোমার মতো কাপুরষও যেমন আছে, ফারদিনের মতো হৃদয়বান ব্যক্তিও তেমন আছে পৃথিবীতে। যে তোমার মতো অসভ্যদের কাছ থেকে অসহায় মেয়েদের নিজেদের কাছে আশ্রয় দেয়।

হামজা ধমকে বলল, মায়া!
-একদম চুপ! ফারদিন যদি আমায় ফোন করে শুধু বলতো, তুমি এসব করেছ। আমি হয়তো লজ্জায় অপমানে, আত্মীয়দের কাছে জানাজানি হবে এই ভয়ে নিজেকে শেষ করে দিতাম। কিন্তু ও আমার চোখ খুলে দিয়েছে। যেই ভয়ে আমি নিজেকে তোমার কাছে দমিয়ে রেখেছিলাম সেই ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছে। ও আমাকে বুঝিয়েছে, আমার জন্যেও সুন্দর একটা ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।

হামজা ঘাবড়ে যায়। ও মায়ার কাঁপা কণ্ঠ শুনে বলল, শান্ত হও। আমি দু:খিত!
-আমি দু:খিত! দু:খিত এইজন্যই যে, তোমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক আমি রাখতে চাই না।

এইবার আবারও কর্কশ কণ্ঠে হামজা বলল, ফারদিনের কাছে যাবি?
-যার কাছেই যাই! তোমাকে জবাবদিহি করব না।
-ভালো হচ্ছে না মায়া।
-আর খারাপ কী হবে! পোস্ট করবে আমাদের ছবি? করো। সবাইকে পাঠাও। যা খুশি করো। তবে মনে রাখো, আমি এসবে আর ভয় পাই না।

গলার স্বর বদলে হামজা বলল, স্যরি বলেছি না!
-আর না হামজা! আর না। আজ লিমিট ক্রস হয়ে গেছে। তুমি যে আসলেই কী কী করতে পারো দেখিয়ে দিয়েছ। এইবার আমি কী করতে পারি সেটাই দেখো।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় মায়া। এবং সেই থেকে হামজার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক ও রাখেনি। হামজা পাগলপ্রায় হয়ে যায়। মায়াকে নিজের করে রাখার জন্য ও যে পথ অবলম্বন করেছিল তা যে সঠিক ছিল না এখন বুঝতে পারে। অতি শাসনে কাউকে আঁটকে রাখা যায় না। যায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে। যেটা এখন বুঝেও কিছু করার নেই হামজার। কারণ মায়া এখন ওকে আর ভালোই বাসে না। অবশ্য নিজের কারণেই এই ভালোবাসাটা হারিয়েছে হামজা। আফসোস করা ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই! কারণ মায়া ওর সিদ্ধান্তে অটল থাকবে জানিয়েছে।

এদিকে ফারদিনকে ধন্যবাদ জানায় মায়া। ওর জন্যেই এতবড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিতে সাহস মায়া পেয়েছে। কিন্তু মায়া ওর প্রস্তাবে রাজি হয় না।
ফারদিন এর কারণ জানতে চাইলে মায়া বলল, আমি আপনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে আমার উপরে দেওয়া অপবাদ যে সত্যি হয়ে যাবে! হামজা ভাববে সত্যিই আমি আপনার জন্য ওকে ছেড়েছি। তাছাড়া প্রেম ভালোবাসা আমার দ্বারা আর সম্ভব নয়। এখন শুধু ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে চাই।
-এখনো তুমি হামজা কী ভাবছে না ভাবছে তা ভাবছ!
-এমনটা নয়। হামজার জন্য নয়। নিজের জন্যই আর কোনো সম্পর্কে আমি জড়াতে চাই না।

ফারদিন একটু থেমে বলল-
তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে আর কিছু বলব না আমি। কিন্তু তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করব। কখনো যদি ভালোবাসার দুনিয়ায় আবার প্রবেশ করতে মনে চায় একটু জানিও আমায়! একটা সুযোগ দিও তোমাকে বোঝাতে যে, কতটা ভালোবাসি তোমাকে!

মায়া মৃদু শব্দে ‘হুম’ বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো।

এতগুলো বছর নষ্ট হলো ওর হামজার জন্য। আবেগের বশে অল্প বয়সে ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে নিজের অনেক বড়ো ক্ষতি করলো মায়া। এখন আর তাড়াহুড়ো নয়! জীবন সাথী নির্বাচন ভাগ্যের উপরেই ছেড়ে দেয় ও। জানে না সামনে কী অপেক্ষা করছে ওর জন্যে। কিন্তু বর্তমানে নিজেকে সুখী মনে হচ্ছে ওর। অনেক সুখী!
.
(সমাপ্ত)

বি:দ্র: এই গল্পটি একটি সত্য ঘটনার অবলম্বনে লেখা ছিল। গল্প শেষে তা জানানোর কথা ছিল। গল্পের সারমর্ম ছিল, আবেগের বশে অসুস্থ সম্পর্কে জড়িয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। কাহিনী ভালো লাগায় অনেকদিন পর একটা সত্য ঘটনা লিখতে রাজি হই। কিন্তু কয়েক পর্ব পরেই যে সমস্যার সম্মুখীন হব এমনটা ভাবিনি।
যে আপুটা লিখতে বলেছিলেন, তার আইডি ডিজেবল। তার ব্যাখ্যা ছাড়া আমি গল্প এগুতে পারছিলাম না। অন্য আইডি থেকে নক করলো নাকি ভেবে ইদানীং এর অনেক মেসেজ রিকোয়েস্টও চেক করেছি। কিন্তু তাকে খুঁজে পাইনি। ফলস্বরূপ গল্পটা আগানোর আগ্রহও আমি হারিয়ে ফেলি। তাছাড়া যেহেতু এটি তার গল্প ছিল, তাকে ব্যতীত আগানোও যাচ্ছিল না।
কিন্তু এভাবে আমি এটি ফেলে রাখতেও পারছি না। অনেকদিন হয়ে গেল! তাই আজ সারমর্ম যতটুক তার কাছ থেকে জেনেছিলাম, তা লিখেই গল্পটি শেষ করলাম।
এভাবে একটা গল্পের সমাপ্তি পর্ব দেওয়ার জন্য আমি দু:খিত। সেই সাথে অনুরোধ, আর কেউ আমাকে সত্যি ঘটনা লেখার জন্য নক করবেন না প্লিজ! বারবার সত্য ঘটনা লিখতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আর লিখতে আমি চাই না।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here