হিজিবিজি (২য় পর্ব)

0
920

গল্পঃ #হিজিবিজি (২য় পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার

যাদের দুইজনের পরিচয়ই হলো আমার প্রাক্তন। আর আম্মুর কথা অনুযায়ী আগে থেকেই চেনাজানা!
ওহহো আসলেই বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে? এখানে জাবের কোনো পেঁচ লাগাচ্ছেনা তো আবার?

এএ আল্লাহ তুমি জানো আমার সাথে কি হচ্ছে। আমার হাত, হাঁটু কাঁপছে। নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা৷
আচ্ছা জাবের কি বিয়ে করবে না বলে আহানকে ধরে নিয়ে আসছে বিয়ের জন্য?
কিন্তু জাবের তো জানেনা আহানের সাথেও আমার এখন কোনো যোগাযোগ নেই।
আর তাই বিয়ের জন্য আহানকেও এখন আমি মানতে পারবোনা,আর জাবেরকে তো একদমই না।

জাবেরের মা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন
___ এতো বিমর্ষ কেন তুমি? আমার দিকে তাকাও,হাসো একটু।

তখনই দেখলাম তিনি আমার ছবি তুলতে ক্যামেরা অন করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করতেই আড় চোখে খেয়াল করলাম জাবের ঠোঁট বাকিয়ে পাশ কেটে বসেছে।

মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো৷ এতো ভাব থাকলে নাচতে নাচতে বিয়ে করতে চলে আসলো কেন? এখন আবার আমার সাথে ঢং দেখানো হচ্ছে!
সে তো চাইলে পারতো বিয়ের কথাবার্তা থামিয়ে দিতে নাকি??
আচ্ছা সে অন্য কোনো মতলব নিয়ে আসে নাই তো? নাহলে আহানকে নিয়ে আসলো কেন?
জাবের আহানকে ভালো করেই চিনে৷
উফফ! আমার সারা শরীর ঘামছে।
এখন যদি কোনো চক্করে আহানের সাথে আমার সম্পর্কের কথা ব্রাস্ট হয়ে যায়? তাহলে তো বাবা আমাকে মেরেই ফেলবে! একটা নয় দু দুটো সম্পর্ক। যাদের কাউকেই কিনা আমি বিয়ে করতে পারবোনা।

হঠাৎ বাবা বলে উঠলো
___ এই আমার শাশুড়ী ফোন দিছে,তিনি আসবেন সন্ধ্যায়! তাহলে আংটি পরানোর কাজ সন্ধ্যা বেলাই হোক।

নানু আসবে শুনে আম্মু তো খুশিতে গদগদ!

আজকে ঘরোয়া কার্যক্রম হওয়ার কথা ছিল, কাউকেই দাওয়াত দেওয়া হয়নি৷ তবে বাবা বলেছে আমার বিয়েতে বড় করে অনুষ্ঠান করবেন। কিন্তু বিয়ে পাকাপোক্ত হবে ঘরোয়াভাবে!

নানুর আসার কথা শুনে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক অন্তত এর ভেতর দেখি কোনো সমাধান করা যায় কিনা।

আমাকে রুমে পাঠানো হলো। আর ওরা খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত। কিছুক্ষণের মধ্যে আম্মু এসে বলতেছে ছাদে তালা লাগানো, চাবি দিতে!
আম্মুকে দেখে মনে মনে একটা সাহস আনলাম। ওদেরকে কিছু বলার আগে আম্মুকে কিছু তো বলা লাগবে। নাহলে আমি একদম শেষ হয়ে যাবো! গলা ঝেড়ে বললাম।
___ আম্মু কিছু কথা ছিল।

___ হা বল তারাতাড়ি, অনেক কাজ আমার ৷

___ বিয়েটা এখন না হলে হয়না? আমার অনার্স…

এটা বলার আগেই আমার মুখ থেকে আম্মু কথাটা কেড়ে নিয়ে জবাব দিলো..
___যখন প্রেম করছিলা, রঙঢঙ কইরা ঘুরাঘুরি করতা তখন অনার্স শেষ করার চিন্তা কোথায় ছিলো? এই বিয়ে হবে, আর যতো তারাতাড়ি সম্ভব হবে!

___ ছেলেটা কে আম্মু?

আমার কথা শুনে আম্মু ভ্রু কোচকে তাকিয়ে বললো..
___ কে আবার যার সাথে লুকাইয়া প্রেম করতি৷ সারাশহর টইটই করে ঘুরতি! রাতে পাখার ফুল স্পিড দিয়ে ফিসফিস করে কথা বলতি! সেই-ই তো ছেলে, মানে তোর জামাই হবে!

এইটুকু বলেই আম্মু হনহন করে চলে গেলো। কি বললাম আর কি জবাব দিলো। মনে মনে বললাম, আরে মা জিজ্ঞাসা করেছিলাম আসলে দুইজন থেকে কার সাথে বিয়ে হচ্ছে। তুমি যে জবাব দিলে সেটা দিয়ে কিয়ের ছা-তা উপকার হইলো,হুসস!
এদের দুইজনের সাথেই তো রাতে লুকিয়ে কথা বলেছি,দেখা করেছি আর প্রেম করেছি । কিন্তু বিয়ে কার সাথে ঠিক হচ্ছে সেটা বলতে পারলা না?
ওহহো মাথা ব্যথা করছে আমার!

কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে বিরাট আকারে গোলমাল হতে যাচ্ছে। এতোদিন আদুরের দুলালি হয়ে পায়ের উপর পা রেখে আরাম আয়েসের জীবনকে হয়তো ফালা ফালা করে ফেলবে এই জাবের।
আমার কোনো দোষের কারণে যদি বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে বাবার কাছে আমি ছোট হবো। আবার বিয়ে হলে তো আমি সারাজীবনের জন্য খতম।
জাবের যদি বিষয়টা বুঝতো,আমার প্রতি অনুগ্রহ করে বিয়েটা ভেঙে দিতো তাহলে আমি মুক্তি পেতাম৷

কিন্তু আমি সারাজীবন ওর সাথে টক্কর দিয়েছি, নিজে জিততে চেয়েছি, তার কাছে কখনোই হার মানিনি। যার জন্য আমাদের আজকের এই বেহাল দশা। তার কাছে ছোট হতে হবে ভাবতেই কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। এতো ইগো আমার , মনে হচ্ছে যা হবার হবে তাও তার কাছে নিজেকে হার মানতে দিবোনা।

রুমের ভেতর পায়চারি করতে করতেই বেলা গড়িয়ে গেলো, নাহ আর পারছিনা। অতিরিক্ত টেনশনে বুকে ব্যথা করছে। বাংলা সিনেমার কিছু কাহিনীর কথা চোখে ভাসছে, হার্ট অ্যাটাক না করে ফেলি আবার!
হাহাহাহা, সত্যি মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার। আমি হার্ট অ্যাটাক করতে যাবো কেন!
হঠাৎই বাইরে জানালা দিয়ে দেখলাম আহান আর জাবের এদিকে কি যেন করছে। আমি বিছানার উপর উঠে ডাকলাম..
___ এই শুনুন আপনারা, আমার কিছু কথা ছিল!

বলেই কেমন জানি লাগলো, দুটো মানুষ একসাথে। যারা দুজনেই কিনা আমার প্রাক্তন৷ আজকে প্রথম দুজনকেই একসাথে আপনি করে সম্বোধন করলাম।
ভাবছি ওরা এদিকে আসবে,কিন্তু তাকিয়ে দেখি ওরা হাত ধরাধরি করে চলে যাচ্ছে৷
অহ শিট! এতো বড়ো অপমান!
মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

যা-তা হোক। আজকে নিজেকে উৎসর্গ করে দিলাম। হয়তো সারাজীবনের জন্য ফাঁসবো,নয়তো বাবার আদর থেকে ছিটকে যাবো। যা হওয়ার তাতো হবেই। আল্লাহ ভরসা!

মাগরিবের কয়েক মিনিট আগেই নানু মামা,মামানি,ছোট খালা,ফুফি কাছের প্রায় সব আত্মীয়রা এসে বাসায় উপস্থিত। বুঝলাম না, বাবা বলল শুধু নানু আসবে,এদিকে ওরা আসলো কেন। তাজ্জব ব্যপার!

বড় মামার এক মেয়ে আছে আমার বয়সী , সে এসেই আমাকে উল্টা পাল্টা বলতে লাগলো। হঠাৎ বলে উঠলো,
___ রিতা আপু….আমাদেরকে তো কিছু জানালো না আগে,,নাহলে মোটামুটি একটা শপিং দিতাম, আর মেইন অনুষ্ঠানের সময় বড় করে দিতাম!
হঠাৎ নাকি ডিসিশন হয়েছে আজকেই বিয়ে হবে, আর সেটা নাকি তুমি নিজেও জানতেনা?

___ মানে কি? আজকে বিয়ে মানে! আমি জানতাম না কে বললো? আমি তো এখনো সেটা জানিনা! আশ্চর্য।

আম্মুউউউ আম্মুউউউ এদিকে আসো, কি হচ্ছে এসব! তোমরা কি শুরু করে দিছো। এদিকে আসো বলছি,তারাতাড়ি আসো।

আমার চিল্লাচিল্লিতে আম্মু দৌড়ে আসলো। এসেই রাগী চেহেরায় জিজ্ঞাসা করলো,
___ এতো চিৎকার চেঁচামেচি কেন হ্যাঁ? বাড়ি ভর্তি মেহমান সেটা মাথায় নেই?
কি হয়েছে বল,বিয়ে আজ হচ্ছে কেন এটা নিয়েই জিজ্ঞাসা তো? শুন নিজের ইচ্ছেমতো এতদিন বহু উড়েছিস। এবার আমরা দড়ি বেঁধে দিবো। আর এখন থেকে সেই আবদ্ধ জীবনই তোমার কাটাতে হবে। হ্যাঁ এটাই মানতে হবে! নেক্সট যেন একটা জোরে আওয়াজ না শুনি। এখন বিয়ে হবে, আর পরে অনুষ্ঠান হবে। গেলাম আমার অনেক কাজ আজ!

___ আম্মুউউহ! এটা করো না প্লিজ!
আম্মু চলে গেলো। আমার দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সবাই মিলে আমাকে এ কোন ধাঁধায় ফেলেছে! বিয়ে হলে হোক,কিন্তু গোলকধাঁধার সমাধান তো হোক নাকি!

এরপর মামাতো, খালাতো বোনরা আমাকে জোর করে সাজালো। লাল বেনারসি পরালো। অতঃপর আমাকে নিয়ে গেলো বিয়ে পড়ানোর আসনে!
কাজী সাহেব ডাকলো, জামাই কই তারাতাড়ি আসেন। আমি তাকিয়ে দেখলাম জাবের আর আহান দুজনেই জামাইয়ের বেশ ধারণ করে করে আছে। এটা কোন ধরনের ফাজলামো, বিয়ে হলে তো একজনের সাথে হবে, কিন্তু দুজন কি শুরু করছে। আজব কান্ডকারখানা চলছে এখানে! কোন পাপের শাস্তি এগুলো!

ঠিক তখনই দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে কিছু মেহমান আমাদের ঘরে প্রবেশ করেছে। এদের সবাই সাজসজ্জায় পরিপূর্ণ, এর মধ্যে একজন বউ সাজে। ও মাগো এটা তো সেই মেয়ে, যে মেয়ের সঙ্গে জাবেরের ২য় বার সম্পর্ক হয়েছিল। যার সাথে ছবি আমাকে পাঠিয়ে প্রতিনিয়ত ত্যক্ত বিরক্ত আর রাগান্বিত করতো।
এই মেয়ে এখানে আসলো কেন,তাও আবার বউ সাজে! তারও কি আজ বিয়ে! তার মানে দুইজন জামাই সেজেছে, দুজনেই বিয়ে করবে বলে!

জাবের বিয়ে করবে এই মেয়েকে? আমার বিয়ে কি তাহলে আহানের সাথে হচ্ছে! তাহলে জাবেরের পরিবার আমাদের বাসায় আসলো কেন? জাবেরের বিয়ের জন্য তারা ওই মেয়ের বাড়িতে যেতে পারতো! আর এখানে আহান যদি বিয়ে করে তার পরিবারের কেউ নাই কেন?
আর জাবেরের প্রেমিকার সাথে আহানের বিয়েটা সম্ভব না,কারণ আহান এই মেয়েকে ভালো করে চিনেনা।
তবে আমার বিয়ে…মাথা ঘুরছে,বেহুশ হয়ে যাবো এবার!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here